করোনায় আক্রান্ত সারা বিশ্ব। কোভিডের বিরূপ প্রভাব পড়েছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও। সবকিছুতেই প্রতিনিয়ত মানতে হচ্ছে সতর্কতা, স্বাস্থ্যবিধি ও পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা। ছোঁয়াচে এই ব্যাধি থেকে বাঁচতে মাস্ক পরা এবং কিছুক্ষণ পরপর নিয়ম মেনে হাত ধুতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। ঘর, অফিস বা চারপাশ পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি প্রতিদিনের পরিধেয় কাপড় ধোয়াও বেশ জরুরি।
বলা হচ্ছে, করোনাভাইরাস সাধারণত হাঁচি, কাশি ও স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। তাই হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু, কাপড় বা কনুই দিয়ে মুখ ঢাকার পাশাপাশি নিয়ম মেনে হাত ধুয়ে নেওয়া জরুরি। কারণ, এক গবেষণায় দেখা গেছে পৃষ্ঠতলে করোনাভাইরাস কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কাপড়ের তুলনায় কঠিন পৃষ্ঠে করোনাভাইরাস বেশি সময় টিকে থাকে।
বিভিন্ন সারফেস খুব সহজেই অ্যালকোহল দিয়ে পরিষ্কার করা সম্ভব হলেও যেকোনো কাপড়ে বেশ কয়েকটি স্তর থাকায় নিজের এবং পরিবারের সুস্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালোভাবে কাপড় ধুয়ে নেওয়া প্রয়োজন। ফলে, কোন ধরনের কাপড় কীভাবে পরিষ্কার করতে হবে, সে বিষয়ে সচেতনতা জরুরি।
যাঁরা সরকারি বিধিনিষেধ মেনে বাসায় অবস্থান করছেন, তাঁদের চেয়ে যাঁরা হাসপাতাল, নিরাপত্তা সংস্থা, ব্যাংকসহ জরুরি সেবাদান কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত এবং যাঁদের কাজের প্রয়োজনে বাইরে যেতে হয়, তাঁরা বেশি ঝুঁকিতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তাঁদের প্রতিদিনের কাপড় একবার পরার পরেই ধুয়ে ফেলা উচিত। ব্যবহারের পরপর ধোয়ার সব কাপড় একটি বদ্ধ ঝুড়িতে বা বিনে রাখা উচিত এবং আলাদাভাবে ডিসপোজেবল লাইনারের ভেতরে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং ঘরের বাইরে ব্যবহৃত কাপড় বেশি গুরুত্বসহকারে ধুতে হবে। এসব কাপড় ধুতে পারেন হাতের স্পর্শ ছাড়া। এ জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করা।
ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোয়ার সময় গরম পানির অপশনটি যদি থাকে, তবে তা অন রাখতে হবে। গরম পানি জীবাণু সংক্রমণ কমায়। আবার অ্যান্টি-জার্ম টেকনোলজি–সমৃদ্ধ ডিটারজেন্ট পাউডার ব্যবহারেও জীবাণু মারা যায়। তাই, অ্যান্টি-জার্ম টেকনোলজি–সমৃদ্ধ ডিটারজেন্ট পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে। ওয়াশিং মেশিনে বা হাতে যেভাবেই হোক না কেন, বাইরে পরার কাপড়, ঘরে ব্যবহারের কাপড় এবং বাচ্চাদের কাপড় আলাদা ধোয়া উচিত। কারণ, শুকনো কাপড়ের থেকে ভেজা কাপড়ের মাধ্যমে জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি থাকে। আবার অনেক কাপড় একসঙ্গে ধোয়া উচিত নয়। অল্প কাপড়ে ডিটারজেন্ট সব অংশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
কাপড় শুকাতে ওয়াশিং মেশিনের ড্রায়ার বা সরাসরি সূর্যের তাপ ব্যবহার করা উচিত। তাপ জীবাণু নিষ্ক্রিয় করতে সাহায্য করে।
ডিটারজেন্ট কখনো সরাসরি কাপড়ের ওপর ঢেলে দেওয়া উচিত নয়। প্রথমে কাপড়, তারপর পানি এবং এরপর ডিটারজেন্ট দেওয়া উচিত। অতিরিক্ত ময়লা কাপড়ের সঙ্গে কম ময়লা কাপড় একসঙ্গে ভেজানো ঠিক নয়। এতে এক কাপড়ের দাগ অন্য কাপড়ে লেগে যেতে পারে।
সাদা কাপড় সব সময় অন্য কাপড় থেকে আলাদা ভেজাতে হবে। অন্য কাপড় থেকে রং না উঠলেও ধোয়ার সময় রং উঠতে পারে এবং সাদা কাপড় নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা অনেক।
জিনস, শার্ট, প্যান্ট ইত্যাদি ভারী কাপড় উল্টো করে ধুয়ে নেওয়া উচিত। এতে করে কাপড়ের অভ্যন্তরীণ ময়লা ভালোভাবে পরিষ্কার হবে।
সাদা সুতির কাপড় ধোয়ার জন্য গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। গরম পানিতে ডিটারজেন্ট মিশিয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ কাপড় ডুবিয়ে রেখে তবেই ধুতে হবে।
রঙিন কাপড় কখনো কড়া রোদে শুকাতে দেওয়া উচিত নয়। বাতাস চলাচল করে, এমন ছায়াযুক্ত স্থানে শুকাতে দেওয়াই ভালো। অনেকে মনে করেন, ডিটারজেন্ট পাউডারে রঙিন কাপড় পরিষ্কার করলে এর রং নষ্ট হয়ে যায়। এটি একেবারেই ভুল ধারণা।