পায়ুপথ থেকে ওপরের দিকে যে পাঁচ ফুট লম্বা বৃহদান্ত্র রয়েছে, তার যেকোনো জায়গায় ক্যানসার হলে তাকে কলোরেক্টাল ক্যানসার বলে। নারীদের চেয়ে পুরুষেরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। যদিও বয়স্কদের এই ক্যানসার হওয়ার প্রবণতা বেশি, তবে আমাদের দেশে ইদানীং কম বয়সীদের মধ্যেও এতে আক্রান্ত হওয়ার হার বেড়েছে।
অনেকেই বৃহদান্ত্রের যেকোনো সমস্যাকে পাইলস মনে করেন। ফলে, চিকিৎসকের কাছে আসতে দেরি করেন। এতে রোগ শনাক্ত হতে দেরি হয়ে যায়, চিকিৎসা কঠিন হয়ে পড়ে।
আমাদের জীবনাচরণের সঙ্গে কলোরেক্টাল ক্যানসারের সম্পর্ক রয়েছে। খাদ্যাভ্যাস, যেমন লাল মাংস (গরু, ছাগল ইত্যাদির মাংস), প্রাণিজ চর্বি যাঁরা বেশি খান এবং শাকসবজি, আঁশযুক্ত খাবার এবং ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবার কম খান, তাঁদের এই ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া যাঁদের ওজন বেশি, কায়িক পরিশ্রম কম করেন, ধূমপান ও মদ্যপান করেন, ইতিমধ্যেই যাঁরা বৃহদান্ত্রের রোগ আলসারেটিভ কোলাইটিস ও ক্রন্স ডিজিজে আক্রান্ত এবং পরিবারের কারও এই ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকলেও ঝুঁকি বেশি।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ, ওজন কমানো, ধূমপান বর্জনের মাধ্যমে কলোরেক্টাল ক্যানসার প্রতিহত করা সম্ভব।
কলোরেক্টাল ক্যানসারের লক্ষণ নির্ভর করে তার পর্যায় ও বৃহদান্ত্রের কোন জায়গায় হয়েছে, তার ওপর। প্রাথমিক পর্যায় তেমন কোনো লক্ষণ না-ও থাকতে পারে। পায়ুপথ দিয়ে রক্ত পড়া, কোষ্ঠ ঠিকভাবে পরিষ্কার না হওয়া, হঠাৎ মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন, যেমন কিছুদিন নরম, কিছুদিন শক্ত, পেট ফাঁপা, পায়খানা বন্ধ হয়ে যাওয়া, পেটব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ হতে পারে। এ ছাড়া রক্তশূন্যতা, অবসাদ, অরুচি ও ওজন কমে যাওয়ার মতো উপসর্গগুলোকেও গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। ক্যানসার পেটের ভেতরে বা যকৃতে ছড়িয়ে পড়লে পেটে পানি আসা বা জন্ডিসের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
ডিআরই, প্রক্টোস্কপি ও কোলনোস্কপির মাধ্যমে কলোরেক্টাল ক্যানসার নির্ণয় করা হয়। এ ছাড়া রোগটি কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা নির্ণয়ের জন্য এমআরআই, সিটি স্ক্যান ও অন্যান্য পরীক্ষা করা হয়। অস্ত্রোপচার এই রোগের প্রধান চিকিৎসা। কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি সহযোগী চিকিৎসা হিসেবে কাজ করে। তবে রেক্টাল ক্যানসার বা মলাশয়ের ক্যানসারের ক্ষেত্রে স্টেজের ওপর নির্ভর করে প্রথমে রেডিও ও কেমোথেরাপি দিয়ে তারপর অস্ত্রোপচার করা হয়।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ, ওজন কমানো, ধূমপান বর্জনের মাধ্যমে কলোরেক্টাল ক্যানসার প্রতিহত করা সম্ভব। ক্যানসার স্ক্রিনিং, অর্থাৎ লক্ষণ প্রকাশের আগেই কোলনোস্কপি পরীক্ষাও এই ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
* ডা. এম এ বি সিদ্দিক, সহকারী অধ্যাপক (সার্জারি), শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ