What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other কবিতা থেকে গান (1 Viewer)

zokeYNV.jpg


যাঁরা গান লেখেন, সাহিত্যে তাঁদের নামডাক আছে—এমন দৃষ্টান্ত বিরল। বিশ্বকবি বা জাতীয় কবির উদাহরণ টেনে এর উল্টো গীতও গাওয়া যায়। তবে তাঁরা দুজনেই প্রথমে কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। ২০১৬ সালে বব ডিলান সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ায় সাহিত্যাঙ্গনে উঠেছিল সমালোচনার ঝড়। অথচ গানের কথায় কাব্যিক অভিব্যক্তির স্বীকৃতি হিসেবে ডিলানের এই নোবেল জয় স্পষ্ট করে তোলে গান ও কবিতার প্রগাঢ় বন্ধন! তবে কবিতা কিন্তু বরাবরই সংগীতজগতে দারুণ সমাদৃত। কখনো কবি নিজেই সুর বসান গানে, কখনো আবার বহু বছর পর কবিতানুরাগী গায়ক বা সুরকার প্রিয় কবিতাকে গানে রূপান্তর করেন। কবিতা থেকে অনুপ্রাণিত গানের তালিকাও তো বেশ বিশাল! ‘কবিতা থেকে গান’–এর এমন কিছু জানা-অজানা নিয়েই এই আয়োজন।

‘একুশের গান’ থেকে প্রভাতফেরির গান

২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে রাজপথে নেমে আসা ছাত্রদের ওপর গুলি চালাল পুলিশ; সালাম-রফিক-বরকতসহ বহু তরুণ সেদিন শহীদ হলেন। কবি আবদুল গাফফার চৌধুরী তখন ঢাকা কলেজের ছাত্র। আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেলে ছুটে গিয়ে দেখতে পেলেন আউটডোরে পড়ে আছে ভাষাসংগ্রামী রফিকের রক্তমাখা লাশ। তীব্র আবেগে-প্রতিবাদে উত্তাল সে সময়ে তিনি লিখলেন কালজয়ী কবিতা ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’। ভাষা আন্দোলনের প্রথম প্রকাশিত লিফলেটে এটি ‘একুশের গান’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে যুবলীগের তৎকালীন সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবদুল লতিফ এতে সুরারোপ করলে গানটি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাওয়া শুরু হয়। ঢাকা কলেজের কিছু ছাত্র কলেজ প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার স্থাপনের চেষ্টা করার সময়ও গানটি গেয়েছিলেন। সে সময় গানটি গাওয়া ও লেখার অপরাধে ঢাকা কলেজ থেকে ১১ ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ১৯৫৪ সালে সুরকার আলতাফ মাহমুদ নতুনভাবে এ কবিতায় সুরারোপ করেন, সে বছরই প্রথম এটি প্রভাতফেরিতে গাওয়া হয়।

VdHVbJn.jpg


কবি শামসুর রাহমানের অনুমতি নিয়ে ‘উত্তর’ কবিতাটি গানে রূপান্তর করেন জেমস ও আনন্দ

‘উত্তর’ থেকে ‘তারায় তারায়’ এবং ‘প্যারিসের চিঠি’ থেকে ‘প্রিয় আকাশী’

ষাট-সত্তরের দশক থেকে রেডিও, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের জন্য গান লিখেছেন কবি শামসুর রাহমান। রোমান্টিকতা আর দেশপ্রেম তাঁর গানের পরিচিত অনুষঙ্গ। তবে যৌবন পেরোনোর পর গীতিকার নয়, বরং ‘কবি’ পরিচয়টিই বেছে নিয়েছিলেন তিনি।

১৯৯৫ সালে গানের কথায় আবারও শামসুর রাহমানের ফিরে আসা। তবে এ প্রত্যাবর্তন খানিকটা ভিন্ন! কবির অনুমতি নিয়ে ‘উত্তর’ কবিতাটি গানে রূপান্তর করলেন বাংলা ব্যান্ড সংগীতের অন্যতম কিংবদন্তি শিল্পী জেমস। সেই সময় নগরবাউল অ্যালবামের ‘আমি তারায় তারায় রটিয়ে দেব তুমি আমার’ পেয়েছিল ভীষণ জনপ্রিয়তা! ভালোবাসার স্পষ্ট ঘোষণা হয়ে পাড়া-মহল্লায় তখন তরুণদের মুখে মুখে উঠে এসেছিল গানটি।

এর আগেও কবিতায় সুর বসিয়ে গান করেছেন জেমস। লতিফুল ইসলাম শিবলীর লেখা ‘প্যারিসের চিঠি’ কবিতা থেকে তৈরি গান ‘প্রিয় আকাশী’ জেমসের অন্যতম জনপ্রিয় গানগুলোর একটি।

আমি যদি গান গাইতে পারতাম, কখনো কবিতা লিখতাম না। গান যেভাবে যোগাযোগ করে, কবিতা কি তা পারে? - শহীদ কাদরী

প্রিয়তমাকে অভিবাদন জানালেন কবি ও গায়ক

কবি শহীদ কাদরীর ঝলমলে বিশ্বনাগরিকবোধ ও গভীর স্বাদেশিকতার মিশেলে সৃষ্ট শব্দ আর উপমা সাধারণ পাঠকের পাশাপাশি মুগ্ধ করেছিল ‘গানওয়ালা’ কবীর সুমনকেও। শহীদ কাদরী ও কবীর সুমন—দুজনই গতানুগতিকতার বাইরের মানুষ। এ মিল আর মুগ্ধতাই বোধ হয় কবীর সুমনকে এক শীতের বিকেলে ছুটিয়ে নিয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে। সেবার নিভৃতচারী কবির কাছে তিনি চাইলেন ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’ কবিতাটিকে গানে রূপান্তর করার অনুমতি। নিজেই গানের কথায় আংশিক পরিবর্তন এনে, সুর বসিয়ে, কণ্ঠে তুলেছিলেন কবীর সুমন। ১৯৯৪–এ গানওয়ালা অ্যালবাম দিয়ে ‘অভিবাদন’ শিরোনামে গানটির প্রকাশ।

পরবর্তী সময়ে কবি শহীদ কাদরী নিজেও বলেছেন, ‘আমি যদি গান গাইতে পারতাম, কখনো কবিতা লিখতাম না। গান যেভাবে যোগাযোগ করে, কবিতা কি তা পারে?’ সুমনের গানকে নিজের কবিতার চেয়ে শক্তিশালী আখ্যা দিয়েছেন কবি, আবার বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে এ কবিতাকে গানে রূপান্তরের গল্পটি বলেছেন গায়ক নিজেও।

4GRUz6u.jpg


সলিল চৌধুরীর সুরে সুকান্ত ভট্টাচার্যের বিখ্যাত কবিতা ‘অবাক পৃথিবী’-তে কন্ঠ দিয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সংগৃহীত

WEZhfQT.jpg


সলিল চৌধুরীর সুরে সুকান্ত ভট্টাচার্যের বিখ্যাত কবিতা ‘রানার’-এ কন্ঠ দিয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর, সংগৃহীত

সুকান্তের কবিতা, সলিল চৌধুরীর সুরে হেমন্ত–লতা

কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের বিখ্যাত কবিতাগুলোর মধ্যে ‘রানার’ ও ‘অবাক পৃথিবী’ উল্লেখযোগ্য। জনমানুষ আর বিদ্রোহের ইতিহাস বলে যাওয়া কালজয়ী এ কবিতা দুটির সঙ্গে পরে যুক্ত হন বাংলার আরও দুই কিংবদন্তি। প্রসিদ্ধ সুরকার সলিল চৌধুরীর সুনিপুণ সুরের মূর্ছনা আর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের দক্ষ গায়কীতে গান দুটো হয়ে উঠেছিল সবার প্রিয়। ‘রানার’ গানটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকরও।

এছাড়াও সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাকেও পাওয়া গেছে এ সময়ের সুরকারদের সুরে ও শিল্পীদের কণ্ঠে। প্রথম আলোর ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই কবিতা নিয়ে দুটি গান তৈরি করা হয়েছে। একটি করেছেন গুণী শিল্পী ও সংগীত পরিচালক বাপ্পা মজুমদার। অন্যটি করেছেন তরুণ সংগীত পরিচালক প্রীতম।

রুদ্রের কবিতা থেকে গান

সত্তরের টালমাটাল সময়কে যাঁরা শব্দে ধরে রেখেছেন, ধ্বংস আর সৃষ্টি যাঁদের কবিতায় পাশাপাশি বহমান, তাঁদের মধ্যে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ এক অবিস্মরণীয় নাম। কবির মৃত্যুর পর তাঁর কবিতা নিয়ে প্রথম গান বাঁধে সে সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড ফিডব্যাক। গানটির শুরুতেই ভাস্বর বন্দোপাধ্যায় আবৃত্তি করেন রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বিখ্যাত পঙ্‌ক্তি ‘চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়’। কবিতাটির শেষ লাইন ‘এমনি করে সবাই যাবে’কে মূল ভিত্তি ধরে পুরো গানটি রচনা করা হয়। ফিডব্যাক কবির আরও একটি কবিতাকে রূপান্তর করেন গানে। ‘পালকি ২’ নামের এ গানও ‘এমনি করে সবাই যাবে’ গানের সঙ্গে যুক্ত হয় ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত ১৪০০ বঙ্গাব্দ অ্যালবামে।

তরুণদের কাছে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর আবেদন চিরন্তন। তাই গায়ক নীলও ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে অ্যাকুয়াস্টিক আর পিয়ানোর সুরে সুরে গেয়ে যান রুদ্রের শব্দমালা। কবির ‘খুঁটিনাটি খুনসুটি-১৭’ থেকে ‘এখনো আলো আসে’ শিরোনামের গানটি গেয়েছেন নীল, যা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শ্রোতাদের কাছে বেশ প্রশংসিত হয়।

কবির ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ শিরোনামের কালজয়ী গানটিও এখনো গেঁথে আছে সবার মনে।

TBEKWAv.jpg


লোপামুদ্রা মিত্রের একটি পুরো অ্যালবাম রয়েছে কবিতা থেকে গান নামে, সংগৃহীত

পালকির গান যখন গান

ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতায় গ্রামবাংলার অনুষঙ্গগুলো নানা উপমায় উপস্থিত। এমনই এক অনুষঙ্গ, পালকিবাহকদের কথা ‘পালকির গান’ কবিতায় ছন্দে ছন্দে বলেছেন কবি। আর এখানেও সলিল চৌধুরী-হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের যুগলবন্দীতে অসাধারণ কবিতাটি হয়ে উঠেছে দারুণ এক গান।

কবিতা–গানের পথচলা নিরন্তর

এগুলো ছাড়াও বহুবার আমাদের গায়ক–সুরকারেরা শব্দ ধার করেছেন কবিতা থেকে। আধুনিক কালে ওপার বাংলার জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্রের একটি পুরো অ্যালবাম রয়েছে কবিতা থেকে গান নামে। জয় গোস্বামীর ‘মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয়’–এর মতো অসাধারণ কিছু কবিতাকে গানে রূপান্তর করেছেন তিনি। বাংলাদেশের প্রথম থিয়েট্রিক্যাল রক ব্যান্ড শহরতলীর বিভিন্ন গানেও উঠে আসে কবিতার পঙ্‌ক্তি। সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শামসুর রাহমানের কাব্য নতুন প্রাণ পায় তাঁদের গানে। কবিতা আর গান বারবার মিশেছে একই ধারায়।

* তাবাসসুম ইসলাম, ঢাকা
 
অনেক সুন্দর কালেকশন আপনার। ধন্যবাদ।
 
লেখাটা পড়ে অনেক অজানা তথ্য জানতে পারলাম। কিছু অংশ জানতাম তাও বিস্তরিত না।
 
কবিতা থেকে গান ভালো লাগল, সুন্দর লিখেছেন
 

Users who are viewing this thread

Back
Top