What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ইসলামী গান ও কবিতায় ভ্রান্ত আক্বীদা (1 Viewer)


৭. নূরুন আলা নূর মুহাম্মাদ নূরের খাজিনা
তোমার নূরের বদন দেখতে আমি দেওয়ানা।
তোমার নূরে জগৎ জাহান সৃজিয়াছেন আল্লাহ মহান
........
তোমার নূরের লোভে লোভী তামাম দুনিয়া।
তোমার নূরে পয়দা হয়ে ফেরেশতাদের সিজদা লয়ে
পাইল তাজীম আদম নবী তারই উছিলায়
তোমার নূরের তাজাল্লীর ঐ ইশকে দেওয়ানা। (শাহী গযল বা হিযবুল্লাহ জাগরণী, পৃঃ ২৭; ছারছীনা দারুচ্ছুন্নাত লাইব্রেরী, নেছারাবাদ, পিরোজপুর। )
-মাওলানা আ.জ.ম. অহিদুল আলম।
৮. মরণকালে দিও গো দেখা হে প্রিয় রাসূল আমায়

হৃদয় মাঝে তোমারি নাম জপি সারাক্ষণ। (শাহী গযল বা হিযবুল্লাহ জাগরণী, পৃঃ ২৭; ছারছীনা দারুচ্ছুন্নাত লাইব্রেরী, নেছারাবাদ, পিরোজপুর। )
 

৯.
নবী রাসূলকে মুর্দা বলে কোন সে অবুঝ দল

......
নবী রাসূলগণ কবর শরীফে জিন্দা আছেন হায়
মূসা নবীকে একদা রাসূল নামাজ হালে পায়।
মোদের নবী হায়াতুন্নবী আছেন জিন্দা হালে
মোদের লাগি দোয়ায় রত আছেন সাঁঝ সকালে।
উম্মতেরা করছে কি কাজ নবী দেখতে পায়
সেই নবীকে মুর্দা বলা কাদের শোভা পায়।
......
মাযহাব মানা ফরজ বলে সঠিক আলেমেরা
মাযহাব যারা ছাড়িবে তারা হবে যে গোমরা
কোন বাতিল দল মাযহাব মানে না মোদের জামানায়
সত্য আলোর রশ্নি ছেড়ে অাঁধারে কাতরায়। (শাহী গযল বা হিযবুল্লাহ জাগরণী, পৃঃ ৪৭; ছারছীনা দারুচ্ছুন্নাত লাইব্রেরী, নেছারাবাদ, পিরোজপুর।)
.... মাঃ হায়দার হুসাইন

 

১০. ও গো নবী সরোয়ার তুমি হাবীব আল্লার
.......
সৃষ্টি করে নূরকে তোমার অতি তাজীমে
সবার আগে রাখেন খোদা আরশে আজীমে
সে পাক নূরেতে তোমার
গড়েন তামাম সংসার

সৃষ্টি হল আরশ, কুরসি, জমিন ও আসমান।
.....
পেলে দিদার প্রভুর
নূরে মিলে গেল নূর। (শাহী গযল বা হিযবুল্লাহ জাগরণী, পৃঃ ৬৭; ছারছীনা দারুচ্ছুন্নাত লাইব্রেরী, নেছারাবাদ, পিরোজপুর। )
-মাওলানা কবি রুহুল আমীন খান।

 

১১. সব নবীদের সেরা তুমি আখেরী রাসূল,
........
পয়দা হল নিখিল জাহান তোমারি পাক নূরে
ধরা হতে আঁধার কালো পালিয়ে গেল দূরে। (শাহী গযল বা হিযবুল্লাহ জাগরণী, পৃঃ ১৬২; ছারছীনা দারুচ্ছুন্নাত লাইব্রেরী, নেছারাবাদ, পিরোজপুর। )
- মাওলানা আ.জ.ম. ওবায়দুল্লাহ

 

১২. নূর মুহাম্মাদ ছল্লাল্লাহু সব নবীর সুলতান
তুমি লাহুতের মেহমান,
.............
চাঁদ-সুরুজে তোমার দ্যুতি
গ্রহ তারায় তোমার জ্যোতি
আরশ ফালাক সকল তোমার
নূরেতে রৌশন। (শাহী গযল বা হিযবুল্লাহ জাগরণী, পৃঃ ৭০; ছারছীনা দারুচ্ছুন্নাত লাইব্রেরী, নেছারাবাদ, পিরোজপুর। )
-মাওলানা কবি রুহুল আমীন খান।

জনৈক কবি লিখেছেন,
আকার কি নিরাকার সেই রববানা
আহমদ আহাদ বিচার হলে যায় জানা
আহমদ নামেতে দেখি
মিম হরফে লেখেন নবী
মিম গেলে আহাদ বাকী
আহমদ নাম থাকে না।
আরেকজন কবি লিখেছেন,
আহমদের ঐ ‘মিম’-এর পর্দা
উঠিয়ে দেখরে মন
দেখবি সেথা বিরাজ করে

আহাদ নিরঞ্জন। (মোঃ আবু তাহের বর্ধমানী, অধঃপতনের অতল তলে, পৃঃ ৬৪। )
 

একজন মুসলিম গীতিকারের রচিত কথিত ভক্তিমূলক গান দেশের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পীরা সরকারী প্রচার মাধ্যমে সর্বদাই গেয়ে থাকেন। যার কথাগুলি খুবই আপত্তিজনক। কথাগুলি হ’ল-

ছায়া বাজি পুতুল রূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি পুতুলের কি দোষ
তুমি হাকিম হইয়া হুকুম কর,
পুলিশ হইয়া ধর
সর্প হইয়া দংশন কর
ওঝা হইয়া ঝাড়।
তুমি মার তুমি বাঁচাও
তুমি খাওয়াইলে আমি খাই, আল্লাহ...
এই যে দুনিয়া কিসের লাগিয়া
এত যত্নে গড়াইলেন সাঁই

এই যে দুনিয়া......।
 

হিন্দু ধর্মাবলম্বী পন্ডিত শ্রীমৎ শংকরাচার্য্য অদ্বৈতবাদ মতবাদ প্রচার করেছেন। যার সারকথা হ’ল সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টি অভিন্ন বস্ত্ত। জগতে যা কিছু বিদ্যমান তার সবকিছুই স্রষ্টার অংশ বিশেষ। যার আরেক নাম সর্বেশ্বরবাদ। যার অর্থ সব জড় ও জীব জগতের মধ্যেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে। এই বিশ্বাস থেকেই হিন্দুরা সকল সৃষ্ট বস্ত্তর পূজা করার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের উপাসনা করার দাবী করে।
খৃষ্টানরা দাবী করে যে, ঈশ্বর সর্বপ্রথম তার নিজের ‘যাত’ বা সত্তা থেকে ‘কালেমা’ বা পুত্র যীশু খৃষ্টকে সৃষ্টি করেন এবং তার থেকে সকল সৃষ্টিকে তিনি সৃষ্টি করেন। খৃষ্ট ধর্মের ‘সৃষ্টিতত্ত্বের’ আদলে সপ্তম হিজরী শতকের ছূফী মহিউদ্দীন ইবনুল আরাবী (৫৬০-৬৩৮ হিঃ) বলেন, ‘আল্লাহ সর্বপ্রথম ‘নূরে মুহাম্মাদী’ সৃষ্টি করেন এবং তার থেকে সকল সৃষ্টি জগতকে পয়দা করেন। জাবির (রাঃ)-এর নাম জড়িয়ে- ‘সর্বপ্রথম আল্লাহ তোমার নবীর নূরকে তার নূর থেকে সৃষ্টি করেন’- এই মিথ্যা কথাটি সর্বপ্রথম ইবনুল আরাবী তার রচিত বই-পুস্তকে ‘হাদীছ’ নাম দিয়ে উল্লেখ করেন। (ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, হাদীসের নামে জালিয়াতি, পৃঃ ২৫৯ তৃতীয় প্রকাশ : সেপ্টেম্বর ২০০৮।)
আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পাই যে, হিন্দু ধর্মের ‘অদ্বৈতবাদ’, খৃষ্টান ধর্মের ‘বহু ঈশ্বরবাদ’ এবং ইবনুল আরাবী উদ্ভাবিত মুসলমানদের ‘নূরে মুহাম্মাদী তত্ত্ব’-এর মধ্যে কোনই প্রভেদ নেই। বরং চমৎকার মিল রয়েছে। তিন ধর্মের তিনটি মতবাদের মৌলিক কথা একটিই। আর তা হচ্ছে জগতের সকল সৃষ্টিই হিন্দুর ‘ঈশ্বর’, খৃষ্টানের ‘খোদা’ এবং মুসলমানের ‘আল্লাহর’ সত্তা থেকে সৃজিত হয়েছে।
‘আল্লাহর নূরে নবী পয়দা, নবীর নূরে জগত পয়দা’ যার সংক্ষিপ্ত রূপ ‘নূরনবী’, এই বচন যারা হাদীছ নামে প্রচার করেন এবং এ আক্বীদা পোষণ করেন তাদের কথার অর্থ দাঁড়ায় যে, ‘আল্লাহর সত্তা’ বা ‘যাত’ একটি ‘নূর’ বা নূরানী বস্ত্ত এবং আল্লাহ স্বয়ং নিজের সেই যাতের বা ‘সত্তার’ অংশ থেকে তাঁর নবীকে পয়দা করেছেন (নাঊযুবিল্লাহ)। অথচ আল্লাহ তা থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র।
গুরুত্বের সাথে বিবেচনার দাবী রাখে যে, কোন হাদীছ গ্রন্থেই ছহীহ, যঈফ, হাসান কোন সূত্রেই রাসূল (ছাঃ) থেকে তিনি ‘নূর নবী’ বা ‘নূর দ্বারা তৈরী’ এমন একটি হাদীছও বর্ণিত হয়নি। হিজরী সাতশত শতাব্দীর পূর্ব পর্যন্ত ছাহাবী, তাবেঈ, তাবে তাবেঈ, সালাফে ছালেহীন, চার ইমাম সহ কোন মুসলিম আলেম ‘নূরনবী’ সংক্রান্ত কিছুই জানতেন না। যদি তাঁরা জানতেন তাহ’লে অবশ্যই ইতিহাস ও সীরাত গ্রন্থে তা লিপিবদ্ধ করে যেতেন। কিন্তু তা নেই। এমনকি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম পাঁচশত বছরে কোন দল-উপদল বা বাতিল ফের্কার পক্ষ হ’তেও ‘নূর নবী’ বিষয়ক কিছু আলোচিত হয়নি।
কিন্তু বিচিত্র এই দেশ। বিচিত্র এ দেশের মানুষ। কবির ভাষায়- এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাক তুমি...। সব সম্ভবের এই দেশে কে শোনে কার কথা। প্রমাণবিহীন বাংলা বই-পুস্তক আর ওয়ায-মাহফিলে বক্তাদের মুখে শোনা কথার উপর নির্ভরশীল হয়ে কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী, গীতিকার সকলেই বিভ্রান্ত আক্বীদায় বিশ্বাস স্থাপন করে বা না করে অভ্যাসগত শিরকের পঙ্কিলে আটকে গেছে। যার শেষ পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। কারণ আল্লাহ শিরকের ফলাফল সম্পর্কে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘যদি তারা শিরক করে তাহ’লে তাদের আমল সমূহ নষ্ট হয়ে যাবে’
(আন‘আম ৬/৮৮)।
 

সঠিক আক্বীদা :

ইহুদীরা ওযায়ের (আঃ), খৃষ্টানরা ঈসা (আঃ) ও আরবের মুশরিকরা হযরত ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আঃ) সম্পর্কে অতি ভক্তি ও বাড়াবাড়ি করে শিরকে নিপতিত হয়েছিল। এজন্য পবিত্র কুরআন ও হাদীছে আবদিয়াত (বান্দা), বাশারিয়াত (মানবত্ব), গায়েবি খবর সম্পর্কে না জানা প্রভৃতি বিষয়ে বারবার আলোচনা করা হয়েছে। যাতে ঈমানদারগণ রাসূলের আনুগত্য ও ভালবাসার পাশাপাশি তাঁর প্রতি অতি ভক্তি থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারে। মহান আল্লাহ তাঁর প্রেরিত রাসূলের পরিচিতি বর্ণনা করে বলেন, ‘বল, আমি তোমাদের মতই মানুষ; আমার প্রতি অহী হয় যে, তোমাদের ইলাহ একমাত্র ইলাহ’ (হামীম সাজদা ৪১/৬)।

রাসূল (ছাঃ) নিজেই নিজের বৈশিষ্ট্য পেশ করে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমি ভুলে যাই, যেমনভাবে তোমরা ভুলে যাও। সুতরাং আমি ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিবে’। (ছহীহ বুখারী হা/৪০১। ) সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘সকল ফেরেশতা নূর থেকে এবং জ্বিন জাতিকে আগুন থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর আদমকে (মানব জাতি) সৃষ্টি করা হয়েছে সেই সব ছিফাত দ্বারা, যে ছিফাতে তোমাদের ভূষিত করা হয়েছে (অর্থাৎ মানব জাতিকে মাটি ও পানি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে)। (মুসলিম; মিশকাত হা/৫৭০১। ) এ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কেবলমাত্র ফেরেশতাগণ ‘নূর’-এর তৈরী। মানব জাতি কিংবা তার মধ্য হ’তে নবী-রাসূলগণ নূরের তৈরী নয়।

আলেমগণের উচিত, পবিত্র কুরআনের আয়াত ও ছহীহ হাদীছগুলির উপর নির্ভর করা এবং সেই মুতাবিক সঠিক ও বিশুদ্ধ আক্বীদা গ্রহণ ও প্রচার করা। সঠিক আক্বীদা গ্রহণের কথা বলা হ’লে যদি আপনি বলেন, ‘এগুলি ওহাবীদের কথা। ওহাবীদের নিকট থেকে আক্বীদা শিখতে হবে না। এদেশে ইসলাম প্রচার করেছে ওলী-আউলিয়াগণ। এতদিন পর ওহাবীরা এসেছে নতুন করে আক্বীদা শিখাতে’? এসব উক্তি করে আপনি নিজেকে দলীয় সংকীর্ণতার কুটিল পঙ্কিলে নিমজ্জিত করলেন। পবিত্র কুরআনের আয়াত ও রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ ‘ওহাবী’ অথবা ‘সুন্নী’ এ রকম বিভাজন করে বর্ণিত হয়নি। এক্ষেত্রে আপনি ঈমানদার কি-না সেটাই বিবেচ্য বিষয়। বিদ‘আতী ও কুফরী আক্বীদা-আমল সমর্থন করা হ’লে তিনি পাক্কা ‘সুন্নী’। আর তার বিরোধিতা করলে কা‘বা মসজিদের ইমাম ছাহেব হ’লেও তিনি ওহাবী। কি চমৎকার অভিধা! এসব গোঁড়ামি ছেড়ে পরকালীন নাজাতের লক্ষ্যে সকলকে কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত ছহীহ আক্বীদা গ্রহণ করতে হবে। ভ্রান্ত আক্বীদা ও শয়তানী পথ ছাড়তে হবে। এছাড়া কোন গত্যন্তর নেই।
 
উপসংহার :

বাংলা ভাষায় রচিত কাব্য ও কবিতায়, গযল ও গানে আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে ভ্রান্ত আক্বীদা আবহমান কাল থেকে প্রচার হয়ে আসছে। প্রচলিত শত শত গযল ও ইসলামী সঙ্গীতের মধ্য থেকে কয়েকটি মাত্র দৃষ্টান্ত স্বরূপ উল্লেখ করা হয়েছে। সকল দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে থেকে পরকালীন মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে অতীতের ভুল সংশোধন করে নেওয়া মুমিনের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

আসুন! সে লক্ষ্য সামনে রেখে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি আমাদের দায়-দায়িত্ব পালন করি। নির্ভুল আক্বীদা প্রতিষ্ঠায় পারস্পরিক সহযোগিতা দান করি। আল্লাহ তাওফীক দান করুন- আমীন!
 

Users who are viewing this thread

Back
Top