What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ইসলামি বিধিবিধানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (1 Viewer)

9SSEsXE.jpg


মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুল কায়েনাত সৃজন করেছেন ভালোবেসে। মানুষ সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। তাই মানুষ ‘আবদুল্লাহ’ তথা আল্লাহর বান্দা, দাস বা গোলাম, যে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জিন ও ইনসানকে আমি আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা-৫১ জারিয়াত, আয়াত ৫৬)। মানুষ খলিফাতুল্লাহ বা আল্লাহর প্রতিনিধি, যে সৃষ্টির সেবায় আত্মনিয়োগ করে, সৃষ্টির লালন ও সংরক্ষণে খোদা প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করবে।

এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি দুনিয়াতে খলিফা বা প্রতিনিধি পাঠাচ্ছি।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত ৩০)। মানুষ ‘ওয়ালিউল্লাহ’ বা আল্লাহর প্রিয় বন্ধু। ওই ‘আবদুল্লাহ’ ও ‘খলিফাতুল্লাহ’র দায়িত্বসমূহ পালন করে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’-এর মর্যাদা সমুন্নত হতে পারলে আল্লাহ তাআলা তাকে বন্ধুরূপে বরণ করবেন।

মানুষ যেন তার লক্ষ্যে সফল হতে পারে, সে জন্য আল্লাহ তাআলা যে বিধান দিয়েছেন, তার নাম ইসলাম, যার অর্থ আনুগত্য ও শান্তি স্থাপন। ইসলামি বিধিবিধান শরিয়াহ নামে পরিচিত। শরিয়তের সব বিধানের দর্শন বা অন্তর্নিহিত রহস্য মৌলিকভাবে পাঁচটি, যাকে পরিভাষায় মাকাসিদুশ শরিয়াহ বা শরিয়তের উদ্দেশ্যাবলি বলা হয়। তা হলো জীবন সুরক্ষা, সম্পদ বা জীবিকা তথা জীবনোপকরণ সুরক্ষা, জ্ঞান সুরক্ষা, বংশ বা প্রজন্মধারা সুরক্ষা, ধর্ম-কর্ম বিশ্বাসের সুরক্ষা।

ইসলামি দণ্ডবিধির প্রথমে রয়েছে বিনা অপরাধে বিনা বিচারে হত্যার প্রতিবিধান হলো মৃত্যুদণ্ড। এর উদ্দেশ্য হলো জীবনের সুরক্ষা। আল্লাহ তাআলা কোরআন কারিমে বলেন, ‘আর তোমাদের জন্য জীবনের সুরক্ষা রয়েছে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার মধ্যে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত ১৭৯)। ইসলামি দণ্ডবিধির দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে পরধন হরণ করলে হাত কর্তন। এর উদ্দেশ্য হলো সম্পদের সুরক্ষা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এটি তাদের পাপের ফল এবং দৃষ্টান্তমূলক দণ্ড (যাতে অপরাধীরা সতর্ক হয়)।’ (সুরা-৫ মায়িদা, আয়াত ৩৮)।

ইসলামি দণ্ডবিধির তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে মাদকের নিষিদ্ধতা। এর উদ্দেশ্য হলো জ্ঞান বা বিবেকের সুরক্ষা। সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক জ্ঞান সুরক্ষিত না হলে মানুষ আর হিংস্র প্রাণীর মধ্যে ব্যবধান থাকে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দ্বারা তারা উপলব্ধি করে না, তাদের চক্ষু আছে কিন্তু তা দ্বারা তারা দেখে না, তাদের কর্ণ আছে কিন্তু তা দ্বারা তারা শোনে না। তারা পশুর ন্যায় বরং তারা অধিক বিপথগামী। তারাই (কর্তব্যকর্ম সম্পর্কে) উদাসীন।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত ১৭৯)।

ইসলামি দণ্ডবিধির চতুর্থ পর্যায়ে রয়েছে পরনারী নিষিদ্ধ বা সংযত যৌন আচরণ তথা সুশৃঙ্খল দাম্পত্য জীবন। এর উদ্দেশ্য হলো বংশধারার পবিত্রতা ও মানব প্রজন্মের ক্রমবিকাশের ধারা অব্যাহত রাখা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানব! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো। যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন, আর তিনি তা হতে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের দুজন থেকে বহু নর–নারীর বিস্তার ঘটিয়েছেন। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর নামে তোমরা তোমাদের অধিকার আদায় করো। আর সতর্ক থাকো জ্ঞাতিবন্ধন সম্পর্কে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত ১)।

ইসলামি বিধিবিধানের পঞ্চম পর্যায়ে রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু ইবাদত, যা মানুষের আকিদা তথা চিন্তাচেতনা, ইমান বা বিশ্বাস এবং ইবাদত বা আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম।

যেহেতু সব উপলক্ষের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ ও নৈকট্য অর্জন, তাই সব বিধানই ইবাদত। অর্থাৎ আদেশসমূহ প্রতিপালন ও বাস্তবায়ন এবং নিষেধসমূহ বর্জন ও মূলোৎপাটন। এ অর্থে পুরো ধর্মই ইবাদত আর সব ইবাদত ধর্ম। কিন্তু মুজতাহিদ ফকিহ ও মুসলিম দার্শনিকেরা সাধারণের সহজবোধ্য করার জন্য এই স্তরবিন্যাস ও শ্রেণিবিভাজন করেছেন। যেহেতু ধর্ম ও শরিয়ত প্রায় সমার্থক, ধর্মীয় বিধানসমূহই শরিয়াহ, তাই ওই চার প্রকারের সঙ্গে পঞ্চম প্রকার উল্লেখ না করলেও হয়। কারণ, যা বিভাজন করা হয়, তা বিভাজিত অংশসমূহের শ্রেণিভুক্ত হয় না। তবু ব্যতিক্রম নিয়ম হিসেবে অংশের পরে মূল উল্লেখ করা হয়েছে। (মাকাসিদুশ শরিয়াহ)।

আমাদের কর্তব্য হলো শরিয়তের বিধানসমূহের উদ্দেশ্য অনুধাবন করে লক্ষ্যপানে এগিয়ে যাওয়ার নিমিত্তে আমল করা। আমলের মাধ্যমে যদি লক্ষ্য অর্জন না হয়, তবে সে আমল যে ব্যর্থ, তা বলাই বাহুল্য।

● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top