ঋতু পরিবর্তন কিংবা অন্য যেকোনো সময়ে হালকা জ্বর বা সর্দি-কাশিকে মানুষ মৌসুমি অসুখ বলে ধরে নিলেও অনেক সময় এটা ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণ হতে পারে। ইনফ্লুয়েঞ্জা মূলত একটি ভাইরাল সংক্রমণ, যা হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। বছরের যেকোনো সময়ই ইনফ্লুয়েঞ্জা হতে পারে। তবে শীতকালে এর প্রকোপ বাড়ে।
ইনফ্লুয়েঞ্জা কীভাবে ছড়ায়
সাধারণত ইতিমধ্যেই সংক্রমিত হয়েছে, এমন ব্যক্তির হাঁচি-কাশি, কথা বলা কিংবা তার ব্যবহৃত কিছু ব্যবহারের মাধ্যমে ইনফ্লুয়েঞ্জা ছড়ায়। এ ছাড়া ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস আছে, এমন কিছু স্পর্শ করার মাধ্যমেও ইনফ্লুয়েঞ্জা ছড়াতে পারে। এ ভাইরাস প্রতিনিয়ত নিজেকে পরিবর্তন করে থাকে, যাকে বলা হয় মিউটেশন।
ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণ
প্রাথমিকভাবে ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণ হলে সাধারণ ঠান্ডা লাগার মতোই লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন জ্বর, গলাব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া, সর্দি, কাশি ইত্যাদি। সাধারণ ঠান্ডা লাগার সঙ্গে ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের পার্থক্য হচ্ছে, এটি দ্রুত বেড়ে যায়। পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে অন্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণের লক্ষণগুলো—
- হঠাৎ ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি জ্বর
- গলাব্যথা
- সর্দি-কাশি
- মাথাব্যথা
- ডায়রিয়া
- শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া
- নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
- বমি-ভাব হওয়া কিংবা বমি হওয়া
ইনফ্লুয়েঞ্জা নির্ণয়
শরীরে ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। চিকিৎসক তার শ্বাসনালি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পলিমেরেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) এবং র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে পারবেন যে তিনি ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়েছেন কি না।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
- ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণ হলে প্রথমেই আক্রান্ত ব্যক্তির পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে।
- শরীরে যেন পানির ঘাটতি দেখা না দেয়, সে জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি ও ফলের রস পান করতে হবে।
- ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে এবং নিজেকে উষ্ণ আবহাওয়ার ভেতর রাখতে হবে।
- ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত প্লেট, গ্লাস ও অন্যান্য জিনিস যেন আর কেউ ব্যবহার না করে সেটি খেয়াল রাখতে হবে।
- ফ্লুর টিকা দেওয়া হলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। টিকাটি প্রতিবছর একবার করে নিতে হয়।
তথ্য
- ইংরেজি ভাষায় ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা’ শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৭০৩ সালে।
- ইনফ্লুয়েঞ্জায় প্রতিবছর সারা বিশ্বে ২ লাখ ৯০ হাজার থেকে ৬ লাখ ৫০ হাজার লোক মারা যায়।
- চার ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জার মধ্যে টাইপ এ, টাইপ বি, টাইপ সি—এই তিন ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা মানুষকে আক্রান্ত করে। টাইপ ডি মানুষকে আক্রান্ত করে বলে কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।