ইনডোর প্ল্যান্ট কি ও কেন –
দিন দিন মানুষের জীবন হয়ে উঠছে যান্ত্রিক। ইট, কাঠ, পাথর আর কংক্রিটে বন্দী হয়ে পড়ছে জীবন। এক মুঠো শুদ্ধ বাতাস নেওয়া যেন কঠিন। তাই ঘরকে প্রাণ দিতে ইনডোর প্ল্যান্ট বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
যেসব গাছ ঘরে রাখলে বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় না, মূলত সেগুলো ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইনডোর প্ল্যান্টের মধ্যে আছে মানিপ্ল্যান্ট, স্নেক প্ল্যান্ট, স্পাইডার প্ল্যান্ট, লাকি ব্যাম্বু, পিস লিলি, ফার্ন, অ্যারিকা পাম, এলোভেরা এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যাকটাস ও ফুলগাছ। এই গাছগুলো কেবল ঘরের সৌন্দর্যই বাড়ায় না, বরং মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যেও ভালো।
জেনে নিন কীভাবে ইনডোর প্ল্যান্টের যত্ন নেবেন –
শখ করে অনেকেই ইনডোর প্ল্যান্ট এনে ঘর সাজান। কিন্তু কিছুদিন পর গাছ দুর্বল হয়ে পাতা ঝরতে শুরু করে। অনেক সময় গাছ মরে যায়। অনেকে এর কারণ বুঝে উঠতে পারেন না। মূলত গাছের পরিচর্যায় যারা নতুন তাদের এই সমস্যা হয়। তবে শুধু চারাগাছ লাগানো মানেই কাজ শেষ হয়ে যাওয়া নয়, গাছ লাগানোর পর তার যথাযথ যত্ন নেয়াও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ গাছের তুলনায় ইনডোর প্ল্যান্টের বেশি যত্নের প্রয়োজন। তাই ঘরে থাকা গাছের যত্ন নিতে কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখুন। চলুন জেনে নিই কিভাবে ইনডোর প্ল্যান্টের যত্ন নিলে গাছ ভালো থাকবে:
- ঘরের যে কোনো স্থানেই ইনডোর প্ল্যান্ট রাখা যায়। গাছ বারবার নড়াচড়া করবেন না। ডেকোরেশনের প্রয়োজনে বারবার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর গাছের জন্য ভালো নয়। তবে পারলে মাঝে মাঝে স্থান পরিবর্তন করে দিতে হবে। এছাড়া রুমের হিউমিডিটি বাড়ানোর চেষ্টা করুন।
- গাছ কখনোই এসির নিচে রাখবেন না চেষ্টা করুন এসি থেকে দূরে রাখতে। এতে গাছ ঠিকঠাক বৃদ্ধি পাবে। তবে গাছের জন্য বাতাস দরকার।
- গাছ কখনোই অল্প আলো বা কড়া রোদে রাখবেন না। গাছ এমন জায়গায় রাখুন যেন সবসময় পর্যাপ্ত আলো-বাতাস পায়। সৌন্দর্যের পাশাপাশি খোলা বাতাস যেন পায় সেদিকটাও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। সপ্তাহে বা ১৫ দিনে একবার রোদে দেওয়া প্রয়োজন হয়।
- ঘরে আছে বলে নিয়মিত পানি দেবেন না, তা কিন্তু নয়। গাছে নিয়মিত পানি দিতে হবে। রোজ অল্প অল্প করে পানি দিন। পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, তবে নজর রাখবেন পাত্রে যেন পানি জমে না থাকে।
- খেয়াল রাখতে হবে পানি দেওয়ার পর মাটির উপরিভাগ কিংবা গাছের গোঁড়ায় যেন পানি জমে না থাকে। অতিরিক্ত পানি জমলে তা ফেলে দিতে হবে।
- অতিরিক্ত পানি গাছকে মেরে ফেলে, তাই পানি দেবার আগে মাটি হাত দিয়ে পরীক্ষা করে নিতে হবে। মাটির অবস্থা বুঝে পানি দিতে হবে। আঙুলের উপরিভাগ মাটির ভেতর আলতো করে ঢুকিয়ে দিন। আঙুলে মাটি লেগে থাকলে বুঝতে হবে মাটির অবস্থা ভালো। এমন না হলে অর্থাৎ শুকনো মনে হলে পানি দিতে হবে।
- গাছে সব সময় রুম টেম্পারেচারের পানি ব্যবহার করবেন। গরম কিংবা ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করবেন না। এতে গাছের ক্ষতি হতে পারে।
- পাতায় ধুলো পড়লে গাছের ক্ষতি হয়। এক্ষেত্রে নিয়মিত পাতা থেকে ধুলো পরিষ্কার করুন। পানিতে কাপড় ভিজিয়ে মাঝেমধ্যে গাছের পাতাগুলো মুছে দিতে হবে। কিংবা কাঁচা দুধ তুলায় ভিজিয়ে গাছের পাতা মুছে দিন। এ উপায়ে অনেকদিন তরতাজা থাকবে গাছ।
- মরা ডাল-পাতা নিয়মিত কেটে দিতে হবে।
- বছরে একবার জৈবসার মিলিয়ে মাটি পরিবর্তন করে দিলে গাছ ভালো থাকবে অনেকদিন। মাঝে মাঝে মাটিকে আলতো খুঁচিয়ে নরম করে দিতে হবে।
- লক্ষ্য রাখুন গাছের টবে যেন পোকামাকড় না আসে। গাছে পোকার আক্রমণ প্রতিকারে ব্যবস্থা নিন। কাঁচা দুধের সাথে কিছুটা হলুদ মিশিয়ে গাছের গোড়ায় দিয়ে দিন, এতে পোকামাকড় হবে না।
- পাতায় ছত্রাকের আক্রমণ হলে গাছটি সরিয়ে ফেলে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
ইনডোর প্ল্যান্ট এর উপকারিতা –
এসব গাছ ঘরের আলো-বাতাসকে যেমন দূষণমুক্ত রাখে, তেমনি ঘরের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করে। আসুন একে একে জেনে নিই, ইনডোর প্ল্যান্টের আরও কী কী উপকারিতা রয়েছে:
- বিশুদ্ধ বাতাস সরবরাহ: নাসার গবেষণায় দেখা গেছে যে ইনডোর প্ল্যান্ট ক্ষতিকারক পদার্থ যেমন কার্বন মনোক্সাইড, ফর্মালডিহাইড, অ্যামোনিয়া, কার্বন ডাই অক্সাইডসহ আরও অনেক কিছু দূর করে। এগুলো মূলত মাথাব্যথা, ক্লান্তি, অসুস্থতা ও অ্যালার্জির কারণ হিসেবে পরিচিত। ঘরে কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট যুক্ত করা হলে বাতাসের গুণমান বাড়বে এবং বাতাস আরও পরিষ্কার হবে।
- মানসিক চাপ কমায়: সবুজ রঙ দেহ ও মনে প্রশান্তি আনে। ঘরে থাকা সবুজের সমারোহ আপনাকে মানসিক প্রশান্তি এনে দিতে পারে। তাছাড়া মনের চাপ কমাতে, রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে ইনডোর প্ল্যান্ট ।
- চোখের সুস্বাস্থ্য: চোখের দৃষ্টির প্রশান্তি ও যত্নের জন্য সবুজ রং অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ব্যস্তময় জীবন থেকে হঠাৎ একটু বিশ্রামের জন্য ও চোখের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে ইনডোর প্ল্যান্ট দারুণ কাজ করে।
- পজিটিভ এনার্জি: বাস্তুশাস্ত্র মতে, কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট রয়েছে যেগুলো ঘরে রাখলে পজিটিভ এনার্জি সহজে ঘরে প্রবশে করতে পারে। যেমন, লেমন গ্রাস, ইউক্যালিপটাস, অ্যালোভেরা ইত্যাদি।
- মশা তাড়ায়: মশার যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে কিংবা ঘরে কীট পতঙ্গের উপদ্রব বন্ধ করতে চাইলে সাইট্রোনেলা, ল্যাভেন্ডার, রোজমারির মতো ইনডোর প্ল্যান্ট লাগাতে পারেন।
- ঘর ঠান্ডা রাখে: অনেক ইনডোর প্ল্যান্ট আছে যেগুলো ঘর ঠান্ডা রাখতে পারে। ঘরকে প্রাকৃতিকভাবে শীতল রাখতে মানি প্ল্যান্ট, স্নেক প্ল্যান্ট, রাবার ফিগ, অ্যারিকা পাম লাগাতে পারেন।
- গভীর ঘুম: ঘরে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়াতেও মানি প্ল্যান্ট, স্নেক প্ল্যান্ট, রাবার ফিগ, অ্যারিকা পামের মতো ইনডোর প্ল্যান্ট দারুণ কাজ করে। তাই গভীর ঘুমের জন্যও বেশ কার্যকরী এসব গাছ।
- গৃহসজ্জা: যদি গৃহের একঘেয়েমি সাজসজ্জা দূর করতে চান, সেক্ষেত্রে ইনডোর প্ল্যান্টের জুড়ি মেলা ভার। কারণ ইনডোর প্ল্যান্টের রঙ আর আকারে রয়েছে বৈচিত্র্য। বইয়ের শেলফের এক কোণায় ছোট ক্যাকটাস, কিংবা ঘরের কোনো ছোট অংশ ফাঁকা লাগলে বড় সাইজের একটা পাম গাছ ঘরের সৌন্দর্যই বদলে দেবে।
- অর্থ সাশ্রয়: গাছপালা আপনার আয়ের একটি ছোট অংশ বাঁচাতে পারে। সাজসজ্জার বাইরেও ব্যবহারিকতা আছে এমন প্রচুর উদ্ভিদ রয়েছে। যেমন, রোদে পোড়া ও চুলের যত্নে ঘৃতকুমারী, রান্নার জন্য অরিগ্যানো, মশা তাড়ানোর জন্য সিট্রোনেলা, খাওয়ার জন্য টমেটো ইত্যাদি। এয়ার ফ্রেশনারের বদলে ল্যাভেন্ডার, রোজমেরি বা পুদিনা লাগাতে পারেন।
(তথ্যসূত্র: বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সংগৃহিত ও সংকলিত)
আপনার মূল্যবান সময়ের জন্য ধন্যবাদ। আশাকরি ফোরামের সাথে থাকবেন এবং একে অন্যকে উৎসাহ যোগাবেন।
Last edited by a moderator: