হোম ডেলিভারি
by - avi5774
মনটা খারাপ হয়ে যায়। বর্ষার শেষে আকাশে সোনা রোদ, পুজোর গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, তবুও শম্পা খুব একা, নিজের তো কেউ নেই। হাত ধরে হাটার কেউ না থাকলে কিসের পুজো। আনন্দ যদি ভাগ না করি তাহলে কিসের আনন্দ!!
মশলা কষতে কষতে চোখে জল চলে আসে, ঝাঁজের দোহায় দিয়ে কিছুটা চোখের জল ফেলে নেয়। এইভাবেই মনের ভিতরে গুমরানো কষ্টটাকে প্রতিদিন একটু একটু করে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে।
সেই স্কুলে যাওয়ার সময় থেকে পার্থর সাথে প্রেম। বন্ধুরা হিংসে করতো সুপুরুষ পার্থকে দেখে, শম্পার গর্ব হোতো। ধিরে ধিরে সেই প্রেম ঘিরে দুই পরিবারের বিবাদ সঙ্ঘর্ষ। আজকে সেইদিন গুলোর কথা মনে পরলে বুক কাঁপে।
এই কে খবর দিয়ে দিয়েছে পার্থর সাইকেলের পিছনে করে ওকে যেতে দেখে। সেই নিয়ে বাড়িতে তুমুল অশান্তি। কতরাত ভাত পর্যন্ত খাইয়নি ওরা দুজন।
কলেজে ওঠার আগেই বাবা ওর জন্যে সন্মন্ধ দেখতে শুরু করে দিলো। সুন্দরি মেয়ে নিমত্তন্নে গেলেই যেন একের পর এক সন্মন্ধ আসতে থাকে। শম্পার নিখুত সৌন্দর্য্য, ছেলের মায়েদের শিকারি চোখ এড়াতে পারেনা। কেউ বলে এক কাপরে নিয়ে যাবো, কেউ বলে আমার মেয়ের মতন করে রাখবো, কেউ বলে ছেলে বলে দিয়েছে ওকে ছাড়া আর কাউকেই বিয়ে করবেনা।
বাউন্ডুলে পাড়ার ছেলে পার্থর কি আর দর তখন। সদ্য কলেজে উঠেছে, টিউশানি করে যা রোজগার তা লুকিয়ে চুরিয়ে প্রেম করতেই শেষ। বাড়িতে চার ভাই ওরা। মা বাবা চার ভাইকে বড় করে তুলতে গিয়েই হিমসিম তো যাদবপুর, শিবপুর আর খরগপুর এদের কাছে যায়গারই নাম।
কিন্তু শম্পার মনের খবর কে রাখে। সে যে তার শিবঠাকুর স্থাপন করে ফেলেছে মনের মন্দিরে।
বাবা মায়ের অনবরত চাপ, ওই বাড়ির ছেলেকে কিছুতেই জামাই করা যাবেনা। সন্মন্ধ অনেক আসছে এর মধ্যেই তোমাকে পছন্দ করতে হবে।
নিম্নমধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়ের আবার নিজের মতামত। ধুর্*।
প্রচন্ড চাপের মধ্যেই সেজেগুজে পাত্রপক্ষের সামনে চা মিষ্টি নিয়ে উপস্থিত হতে হোলো। মা মাসি, মেয়ের নানা গুনগান করছে, হাতের কাজ, রান্না করার ক্ষমতা জাহির করছে, বাবা খুজে বের করার চেষ্টা করছে দেশের বাড়ির দিক থেকে যদি কোন পুর্বপরিচয় বেরোয়।
বোনটা সারাক্ষন ওকে গার্ড করে রেখেছে যাতে করে ও বেচাল করতে না পারে। ছেলের মনে হোলো হবু জীবনসঙ্গিনীর সাথে একান্তে কথা বলা দরকার। সেটা বুঝতে পেরে মাই প্রস্তাবটা পেরে দিলো ‘উপরে গিয়ে রাহুলকে তোর বানানো বাগানটা দেখিয়ে আন না’ সাথে বোনের দিকেও ইঙ্গিত দিলো যাতে আমাদের একেবারে একা ছেরে না দেয়, তাতে যদি আমি পার্থর কথা বলে দি।
বাগান শম্পা কোনদিনই করেনি। তবুও মা সেটাই রঙ চরিয়ে বলে দিলো যে ওই করেছে। বহুমুখি প্রতিভা না হলে যেন পাত্রির বাজারে দাম নেই।
গরমে তেঁতে থাকায় খালি পায়ে ছাদে দাড়ানো যাচ্ছেনা। তাও ছেলেটা স্মার্ট দেখানোর জন্যে একটা সিগেরেট ধরালো।
শম্পার চোখে জল চলে এলো প্রায়। এই সিগেরেট খাওয়া নিয়ে পার্থর সাথে কত ঝগড়া। শম্পার বকা খেয়ে সিগেরেট ফেলে দিলেও আবার পরের দিন যেই কে সেই। এখন কেমন যেন সেই ঝগড়াগুলোও কত ভালো লাগছে। আর কি কোনদিন দুজন পাশাপাশি বসতে পারবে?
‘আসলে অনেকক্ষন সিগেরেট খাইনি। সেই বাড়ী থেকে এতদুর এলাম সুজোগই পেলাম না।’
শম্পা চুপ করে রইলো।
ছেলেটা আবার বললো ‘খুব সুন্দর বাগান হয়েছে, আপনার রুচি আছে বলতে হয়... আসলে প্রতিটা মানুষেরই কিছু সখ থাকা দরকার, নাহলে অবসর কাটেনা।’
ছেলেটা মনে হয় বোনকে ইশারা করলো, বোন দিদি আমি একটু আসছি বলে নিচে চলে গেলো।
‘আপনার কিছু বলার নেই?’ রাহুল জিজ্ঞেস করলো।
শম্পা কোন উত্তর দিলো না। মনের মধ্যে একটা কষ্ট চাঁপ বাধছে, ক্রমশঃ চাপ বেড়ে চলেছে। এই ছেলেটাকে বিয়ে করে চলে গেলে পার্থ কি করবে? সেও কি আরেকজন কে খুজে নেবে না দেবদাস হয়ে যাবে।