চিকিৎসাবিজ্ঞানের তথ্যমতে, মানবদেহের অনেক রোগের উপসর্গ তৈরি হয় আমাদের ‘ব্যাড মুড’ বা মনখারাপের পরিস্থিতি থেকে। তাই রোগ যাতে শরীরে বাসা বাঁধতে না পারে, সে জন্য মন ভালো রাখার বিকল্প নেই।
আর মন ভালো থাকবে কিসে, সেটারও আছে সহজ সমাধান—হাসি। অবাক হলেও কিন্তু সত্য, সারা দিনে যদি আপনি হাসেন আর মন ভালো রাখেন, তবে অনেকটা সুস্থই থাকবেন। প্রশ্ন করতে পারেন, না এলে হাসি কীভাবে হাসি! হাসির উপকারিতা জানলে এমনি এমনিও হাসবেন। জেনে নেওয়া যাক হাসির উপকারিতা ও কীভাবে আরও বেশি হাসবেন, সেই কথা।
হাসির যত উপকারিতা
* হাসির কারণে আপনার শরীর অধিক বাতাস গ্রহণ করে। ফলে রক্তে বেশি পরিমাণে অক্সিজেন প্রবাহিত হয় এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।
* হাসলে শরীরে স্ট্রেস হরমোন ‘কটরিসোল’ ও ‘অ্যাড্রিনালাইন’ কমে যায়, যা আমাদের দীর্ঘ সময় সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।
* যাঁরা হাসি-খুশি থাকেন, তাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা গোমড়ামুখোদের চেয়ে বেশি থাকে!
* যখন আমরা হাসি, তখন আমাদের শরীর থেকে ‘ফিল-গুড হরমোন’ বা ভালো বোধ করার হরমোন এন্ড্রোফিন নির্গত হয়, যা আমাদের পুরো শারীরিক ব্যবস্থার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
* কেউ যদি এক মিনিট সময় হাসেন, এতে শরীর থেকে যে পরিমাণ ক্যালরি পুড়বে, সেটা ট্রেডমিলে ৬ থেকে ১০ মিনিট হাঁটার সমান।
* হাসির মাধ্যমে পরিবার, কর্মস্থল ও সমাজে আপনার ব্যাপারে সবার ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়।
* হাসির মাধ্যমে ব্যথা দ্রুত উপশম হয়।
* হৃদরোগীদের জন্য হাসি হতে পারে বড় ওষুধ। কারণ, হাসলে ভালো থাকে হৃদযন্ত্র।
* মানবিক সম্পর্ক ও মানুষে মানুষে যোগাযোগ দৃঢ় করে তুলবে আপনার হাসিমুখ।
কীভাবে আরও বেশি হাসবেন
* বেশি হাসতে চাইলে হাসির রুটিন করে নিন। যেমনটা প্রাত্যহিক ব্যায়াম কিংবা খাদ্যাভ্যাসের জন্য আছে, তেমন নির্দিষ্ট সময়ে সেটা হতে পারে। প্রতি সকালে ঘুম থেকে উঠে নিয়ম করে হাসুন। তার জন্য প্রতি সকালে একটি করে কৌতুক পড়তে পারেন। আজকাল অ্যাপস স্টোরে জোকসের বিভিন্ন অ্যাপস পাওয়া যায়, অ্যাপসই প্রতিদিন আপনাকে সকালে কৌতুক সরবরাহ করবে, এমন একটি অ্যাপস ইনস্টল করেই দেখুন না।
* কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা বেশ মজা করে কথা বলেন, কৌতুক করেন, হাসিখুশি থাকেন। এমন কারও বন্ধু হয়ে যান। তাঁদের সঙ্গে থেকে নিজেও হাসিতে মাতুন।
* আজকাল ইউটিউব, ফেসবুকে স্ট্যাডআপ কমেডিয়ানদের মজার মজার প্রচুর ভিডিও পাওয়া যায়। সেগুলো দেখুন। তাঁদের চ্যানেল বা পেজ লাইক দিয়ে রাখুন। প্রতিদিন একটি ভিডিও আপনার মন ভালো করে দেবে নিশ্চিত।
* সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় বন্ধুদের মধ্য থেকে যাঁদের কথা বা স্ট্যাটাস ভালো লাগে বা মজার ব্যক্তিদের ফলোয়ার হয়ে যান। এটাও হতে পারে আপনার হাসির উৎস।
* প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে একবার হলেও কোনো ফানি বা কমেডি সিনেমা দেখুন। এ ছাড়া আজকাল বিভিন্ন ওটিটি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে হরহামেশাই কমেডি সিরিজ প্রচারিত হচ্ছে। সময় করে প্রতিদিন একটি এডিসোড দেখে হাসিতে ভরিয়ে তুলুন সেই সময়গুলো।
* প্রিয় মানুষগুলোর সঙ্গে বেশি সময় কাটান। তাদের সঙ্গে মজার এবং সুখের স্মৃতির রোমন্থন করুন। দেখবেন কেমন মন খুলে হাসছেন আপনি আর কেমন মন ভালো হয়ে যায়।
* মজার মজার হাসির গল্প-উপন্যাসের বই থাকতে পারে আপনার প্রতিদিনের পাঠ্যতালিকায়। তেমন কয়েকজন লেখক হতে পারেন শিবরাম চক্রবর্তী, নরায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, সৈয়দ মুজতবা আলী, হুমায়ূন আহমেদ, আহসান হাবীব। গোপাল ভাঁড় কিংবা নাসিরুদ্দিন হোজ্জার মজার ঘটনাও থাকতে পারে পাঠ তালিকায়।
* ঘরের বা পরিবারের সবচেয়ে ছোট মানুষটির সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলুন। তার সঙ্গে কথা বলে, ঘুরতে গিয়ে বা খেলাধুলা করলে আপনা-আপনিই হাসি পাবে।
* কুকুর বা বিড়ালের মতো মজার কোনো পোষা প্রাণী পালতে শুরু করে দিন। তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড আপনাকে বেশি বেশি হাসতে সাহায্য করবে।
* বন্ধু, পরিবারের সদস্য বা অফিসের কলিগদের সঙ্গে সময় বের করে নিয়ে কোনো ফান গেম খেলতে পারেন। শারীরিকভাবে সম্ভব না হলে অনলাইনেও গ্রুপ তৈরি করে খেলতে পারেন কোনো মজার খেলা।
* মজার কথার বা ছবি দিয়ে স্ক্র্যাপবুক তৈরি করা শুরু করে দিন। এ জন্য পরিবারের সদস্যদের বেছে নিতে পারেন। কারণ, পরিবারের চেয়ে আনন্দের আর মজার জায়গা যে নেই। পরিবারের সদস্যদের কোনো মজার কথা বা ছবি স্ক্র্যাপবুকে লাগান বা টুকে রাখুন। দিনের সেরা মজার কথাও থাকতে পারে সেই স্ক্র্যাপবুকে। পরবর্তী সময়ে সেগুলো দেখলে আপনাই হাসি পাবে।
* নিজেকে নিয়ে ভাবুন। এর আগে কোন কাজে বা ঘটনায় বেশ মজা পেয়ে হেসেছিলেন, সেটার পুনরাবৃত্তি করুন।