What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

গুণধর শ্বশুর [লেখক- কথকদা] [বড় গল্প] (3 Viewers)

এদিকে চৌবেজির থানায় তখন, সেকেন্ড অফিসার রায় তার সামনে চেয়ারে বসা মহিলাটিকে দেখছিল। সে অনেকদিন আছে এই থানায়। বয়স বেশী নয়,কাজে খুব বেশী উৎসাহ দেখায় না, তবে উপরওয়ালা যা নির্দেশ দেয় তা শোনে। তার বাড়ি বেশী দুরে নয়, বাড়ির কাছে পোস্টিং, এতেই সে খুশী। বেশী ভালো কাজ বা খারাপ কাজ কোনোটাই করে সে এখান থেকে অন্য জায়গায় যাবার ব্যবস্থা করতে রাজী নয়। এই মহিলাকে দেখে কেমন চেনা লাগে তবে মনে পড়েনা, চেষ্টাও করেনা মনে করার। মহিলার বয়স হয়েছে প্রায় আশির কাছেই হবে, চেহারায় খুব মোটা না, রং ফরসা টুকটুক করছে, মাথার সাদা চুল ছোট ছোট করে ছাঁটা। পরণে ঢোলা মত কামিজ আর রঙিন পাজামা, হাতে একটি ওয়াকিং স্টিক।
ভদ্রমহিলাও চশমার ফাঁক দিয়ে রায়কে জরিপ করছিলেন। রায়ের কথাবার্তা এমনিতে ভদ্র,ব্যবহার সভ্য। সে একটু অপেক্ষা করল ও তরফের মুখ খোলার জন্য। কিন্তু দেখল ইনি এনার বয়সী অন্যান্য মহিলার মত বলিয়ে টাইপের নয়। উনিও যেন রায়েরই শুরু করার অপেক্ষায়।
-"আমাদের ইন চার্জ চৌবে সাহেব এখন একটু কাজে বেরিয়েছেন। আপনার যা বলার আমাকে বলতে পারেন, আমিও এ থানার একজন অফিসার। আপনার পরিচয়টা?"
মহিলাটি এবার একটু সোজা হলেন, তারপর আশপাশ দেখলেন। তাদের আশেপাশে কেউ ছিলনা, শুধু কনস্টেবল মঙ্গল ছাড়া। বাকি কনস্টেবলরা বাইরে গুলতানী করছিল, বড় সাহেব নেই। আরো দু একজন এদিক সেদিক ছিটিয়ে ছিল।
গলা একটু সাফ করে বললেন,
-" আমি বেটা, মিসেস কাপুর, জেনি কাপুর। এখানে ঐ রিটা অ্যাপার্টমেন্টসে থাকি, একশ বারো নম্বরে। আমি একাই থাকি, মেয়ে দিল্লিতে থাকে। যে মেয়েটী নিখোঁজ হয়েছে, চম্পা, ওর মা আমার মেয়ের বন্ধু ছিল। আগে আমাদের অ্যাপার্টমেন্টই থাকত ওরা, ওকে আমি জন্মাতে দেখেছি।"
রায় খুব একটা উৎসাহিত হলনা, কেসটা মূলত চৌবেজি নিজে দেখছে। সে এব্যাপারে খুব কিছু জানেটানে না। তবু কিছু না বললে এই ভদ্রমহিলা হয়ত তাকে সারাদিন বসিয়ে ঐ মেয়েটীর ছোটবেলার গল্প শোনাবে। সে বুঝে নিল একা বয়স্ক মহিলা, জীবনে কোনো রকমফের নেই। এসময়ে এরকম একটা ঘটনা যার কুশীলবরা মহিলার একদা পরিচিত। উনি বোধহয় ভেতরে ভেতরে উত্তেজনা অনুভব করে আর ধৈর্য্য ধরতে পারেননি, থানায় ছুটে এসেছেন সব জানার জন্য।
সে মুখটাকে নীরস করে উৎসাহে জল ঢালা গলায় বলল,
-"আপনি কি কিছু দেখেছেন বা শুনেছেন এ ব্যাপারে? যা বলার একটু চটপট বলুন, আমি নোট করে রেখে দেব, বড় সাহেব এলে তাকে দিয়ে দেব। তারপর তিনি যদি মনে করেন আপনার সঙ্গে কথা বলে নেবেন। ঠিকানাটা কী যেন?"
মিসেস কাপুর এখানেই স্কুলে পড়াতেন, সারাজীবন অনেক ছাত্রছাত্রী ও তাদের গার্জিয়ানদের চরিয়ে মনুষ্য চরিত্র সম্বন্ধে জ্ঞান অসীম। উনি রায়ের ইঙ্গিতগুলো বুঝতে ভুল করলেন না। মুখটাকে শক্ত করে উঠে পড়লেন চেয়ার থেকে,
-"অফিসার, আপনি যখন এ কেস সম্বন্ধে কিছু জানেন না তখন আপনার সঙ্গে কথা বলার কোনো মানে হয়না। এক কাজ করুন, আমার বক্তব্যের জায়গায় শুধু আমার নাম জেনি কাপুর ও ঠিকানা একশ বারো রিটা অ্যাপার্টমেন্ট লিখে রেখে দিন। ও আর তার সাথে এও লিখুন যে আমি নিখোঁজ চম্পার পরিবারকে অনেক দিন ধরে ভালোভাবে চিনতাম, তাই তাদের সম্বন্ধে কোনো জিজ্ঞাস্য থাকলে পুলিশ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। এবার আমি আসি।"
উনি আর কোনোদিকে না তাকিয়ে একহাতে স্টিকটাকে শক্ত করে ধরে আর অন্যহাতে কাপড়ের ঝোলাটা নিয়ে আস্তে আস্তে বেরিয়ে গেলেন। রায় এই আকস্মিক ব্যবহারে একটু হতভম্ব হয়ে গেল। কনেস্টেবল মঙ্গল পুরো ঘটনাটা দেখে বলে ওঠে,
-"এই মেমসাব তো খুব ভালো, অনেককাল এলাকায় আছেন। টীচার ছিলেন, লোকে খুব শ্রদ্ধা করে। কোনো ব্যাপার না হলে এমনি এমনি উনি সময় বরবাদ করতে থানায় আসবেনা।"
রায় এমনিতে সহজে বিচলিত হয়না, পুলিশের চাকরিতে তার উচ্চাশা কিছু নেই, যতটুকু না করলে নয় ততটুকু করে। তবু আজকের এই ব্যাপারটা তার একটু কেমন কেমন লাগল, মুখটায় একটা তেতো ভাব! সে চিন্তা করতে থাকল ঘটনাটা চৌবেজিকে বলা ঠিক হবে কিনা।
চৌবে যখন ফিরল তখন সেকেন্ড অফিসার রায় সকালের ঐ বয়স্ক মহিলার কথা পুরো চেপে যায়।


একটু পরেই থানায় রজতের ফোন আসে চৌবেজির কাছে, রজত একটু ভাবনার স্বরে বলে,
-" আমি কালকে একটু ঐ মন্দির এলাকাটা ঘুরে দেখতে চাই। আপনি আসতে পারবেন?”
-"স্যার, কালকে আমাকে একটু বড় সাহেবের কাছে যেতে হবে, তাই কালকে আমার সময় হবে না। আপনি কিছু চিন্তা করবেন না। এক কাজ করি,আমার থানার কনস্টেবল মঙ্গল, লোকাল ছেলে, সব চেনে জানে ভালো, ওকে বলে দেব ও আপনাকে ঘুরে সব দেখিয়ে দেবে।"
রজতের প্রস্তাবটা ভালো লাগল। ওতো এটাই চাইছিল, ঐ মন্দিরের মেয়েটির সঙ্গে কথা বলবে নিজের মত করে, পুলিশ থাকবে না।
কনস্টেবল মঙ্গল সি.আই.ডি অফিসার রজতের জন্যে অপেক্ষা করবে মন্দিরের মুখে, চৌবেজি সেরকমই বলে দিয়েছিল। রজত নিজে গাড়ি চালিয়ে আসেনি, এদিকটা খুব ঘিঞ্জি, কোথায় পার্কিং পাবে না পাবে তাই রেন্টাল থেকে একটা গাড়ি নিয়ে এসেছে। মন্দিরের কাছে এসে গাড়িটাকে বাঁ দিকে দাঁড় করিয়ে রজত নেমে পড়ে, ড্রাইভারকে বলে মন্দিরের সামনে গাড়ি পার্ক করে অপেক্ষা করতে। সামনেই একটি লম্বা মত বছর তিরিশের লোক দাঁড়িয়েছিল, লোকটা এগিয়ে এল,
-"স্যার, চৌবে সাহেব আমাকে পাঠিয়েছেন।"
রজত হাসল অল্প, লোকটির চেহারাটা পেটানো, টানটান, তবে মুখটা বেশ বাচ্চা বাচ্চা, হাসিখুশি।
-"মঙ্গল? নমস্তে, বুঝতে পেরে গেছেন? চলুন মন্দিরের ভেতরে যাওয়া যাক।"
মন্দিরটা পাঁচিলঘেরা, অনেকটা জায়গা জুড়ে, রাস্তার ধারেই। রাস্তা আর মন্দিরের মাঝের জায়গাটা সিমেন্ট বাঁধানো, একটা কৃষ্ণচূড়া আর দু তিনটে দেবদারু, একটা অমলতাস এরকম কয়েকটা গাছগাছালিতে জায়গাটা বেশ ছায়াঘন চারধার। সকাল নটা থেকে এগারোটা ভোগ নিবেদনের জন্যে সামনের গেট এখন বন্ধ, এখন দশটা বাজে,আবার এগারটায় খুলবে। তবু কিছু মানুষের আনাগোণা দেখা গেল হয়ত কাজে এসেছে, দর্শনার্থী নয়। পাশের জুতো রাখার স্টলটাও বন্ধ। একদিকে একটা আধখোলা সাইড গেট, সেখান দিয়ে অনেকে দরকারে যাতায়াত করে, এছাড়া পেছনের দিকেও গেট আছে আশ্রমিক দের চলাফেরার জন্য। রজত মঙ্গলকে নিয়ে সাইডগেটটা দিয়ে ঢুকে পড়ে, এই মন্দির রজত বাইরে থেকেই দেখেছে, কোনোদিন ভেতরে ঢোকেনি। বাইরের গেট দিয়ে ঢুকলে মূল মন্দিরের পাঁচিল ও বড় কাঠের তৈরী কারুকার্য করা দরজা, সেটা এখন বন্ধ। দুই পাঁচিলের মধ্যিখানের চত্বরে দু চারটে দোকানদানি, সিকিউরিটীর কুঠরি, হাত পা ধোবার জায়গা ও পানীয় জল ইত্যাদির ব্যবস্থা। অনেক গাছপালাও আছে আর একেবারে শেষে একটা ছোট কাঠের দরজা আছে, ভেতরের লোকেদের ব্যবহারের জন্য। একজন গিয়ে সে দরজায় ধাক্কা দিতে দরজা অল্প খুলে তাকে ঢুকিয়ে আবার বন্ধ হয়ে গেল। একটা দোকান খোলা ছিল, সেখানে নানান মূর্তি, ধুপ ও দানী, ঘন্টা প্রদীপ, ধর্মীয় বই সিডি এরকম নানা সামগ্রী রাখা আছে। খদ্দের নেই, দোকানী একজন ফরসা মতন বৃদ্ধ, পরণে ধুতি ও ফতুয়া, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একটি ডাস্টার নিয়ে জিনিসগুলো মুছে মুছে রাখছে। মঙ্গলের কাছে জানা যায় এই দোকান থেকেই চম্পাদেবি পূজা দেবার সামগ্রি কিনত। রজত গিয়ে দোকানটার সামনে দাঁড়ালো। দু একটা জিনিস হাতে নিয়ে দাম করতে করতে কথাটা পাড়ে,
-"আচ্ছা, এই মন্দিরের বাইরে একটা পাগলি মেয়ে বসে থাকে, তাকে কোথায় পাওয়া যাবে?"
ভদ্রলোক প্রশ্নটা শুনে প্রথমে ঠিক বুঝতে পারেনা, চশমার পুরু কাঁচের মধ্যে দিয়ে অবাক চোখে তাকায়। রজত আবার বলতে, বলেন,
-"পাগল মেয়ে? কোন পাগল মেয়ে?"রজত ঘাবড়ায়, সেরেছে, এই মন্দিরে কখানা পাগলি মেয়ে আছে রে বাবা! সে আবার কিছু বলার আগেই মঙ্গল তাড়াতাড়ি বলে ওঠে,
"ঐ যে, ঐ মেয়েটা যে রোজ বাইরের চাতালে বসে ভিক্ষা করে। ও আসেনি আজকে?"
লোকটি এবার একটু সহজ স্বাভাবিক,
-"ও রানি? ওতো ঠিক পাগল নয়, পাগলামি কিছু করেনা। আসলে ওর বয়স অনুপাতে বুদ্ধি পাকেনি, অনাথ মেয়ে। বাবা মার সঙ্গে ফুটপাথে থাকত, দুজনেই কী একটা অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়। সেই শকেই বোধহয় একটু অদ্ভুত হয়ে গেছে। এখানেই মন্দিরের বাইরে থাকে। মন্দির থেকে দুবেলা খেতে দেয়, রাতে এই শেডের নীচে শুয়ে থাকে। তা ওর সঙ্গে কী দরকার?"
রজত ভদ্রলোকের দিকে তাকালো, মনে হল নেহাতই কৌতুহলের প্রশ্ন, কোনো কিছু সন্দেহ করে নয়। লোকটি বোধহয় মঙ্গলকে চেনেনা। রজত মঙ্গলকে ইশারায় চুপ থাকতে বলে একটু মিথ্যার আশ্রয় নেয়,
-"না, আসলে এর আগে একদিন এসেছিলাম, তখন ও জামা চেয়েছিল। সেদিন সঙ্গে ছিলনা, পয়সা দিয়েছিলাম। আজ এদিকে আসার কথায় তাই ওর জন্যে পুরনো জামা নিয়ে এসেছিলাম। আমার কাজে দেরী হয়ে গেল, মন্দিরেও দর্শন হলনা। অন্তত মেয়েটাকে জামা দিয়ে যাই, নাহলে আবার কবে আসা হয়।"
কথা বলতে বলতে একটা প্রদীপ পছন্দ করে ভদ্রলোকে হাতে দিল, উনিও প্যাক করতে করতেই উত্তর দিলেন,
-"আছে কোথাও, একটু এদিক ওদিক দেখুন। এখন তো মন্দির বন্ধ হয়ে গেছে, দর্শনার্থী আসবেনা, তাই অন্য কোনোখানে গেছে। দুপুরে প্রসাদ খাওয়ার সময় ঠিক এসে পড়বে।"
কেনা শেষ হয়ে গেলে ওরা বেরিয়ে এল। বাইরে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল, যদি মেয়েটা আসে।
-"স্যার, আপনি কি মন্দিরের ভেতরে যেতে চান। আমি তাহলে বলে দরজা খোলাতে পারি।"
মঙ্গলের প্রশ্নে রজত একটু ভাবে, মন্দিরের ভেতরে গিয়ে কিছু করার নেই। সেদিন ঐ মেয়েটি চম্পাকে দেখেছে মন্দিরের বাইরে। তার ঐ মেয়েটিকে দরকার।
-"না, মঙ্গল, আমি মন্দিরে ঐ মেয়েটির সঙ্গেই কথা বলতে এসেছি। একটু অপেক্ষা করে দেখি, না হলে আর কী করা যাবে।"
-"স্যার, একটা কথা ছিল, আমি চৌবে সাহেবকেই বলতাম, কিন্তু সাবের সঙ্গে কথা বলার সময় একদম ভুলে গিয়েছিলাম।"
রজত রানিকে না পেয়ে খুবই আশাহত হয়েছে, কোনো কিছুই ভালো লাগছিলনা, তবু মঙ্গলের এ কথায় একটু কৌতুহলে তাকায়,কিছু না বলে। মঙ্গল একটু আমতা আমতা করে বলে,
-"না, মানে হয়ত সেরকম কিছু দরকারী নয় তবু। এখানে একজন বুড়ি মেমসাব আছেন, মিসেস কাপুর, আগে ইস্কুলের খুব বড় ম্যাডাম ছিলেন এখন রিটায়ার করে গেছেন অনেক দিন হোলো। তা তিনি একদিন থানায় এসেছিলেন এই নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মেয়েটার ব্যপারে কী যেন বলার ছিল বলে। সেই সময় বড় সাব ছিলেন না, তা ছোটোসাব আমাদের ঐরকমই, একটু গাছাড়া, যেটুকু না করলে নয়। সে তো মেম্সাবকে কী বলতে মেমসাব একেবারে রেগে কিছু কথা না বলেই চলে গেলেন। যাওয়ার সময় বলে গেসলেন পুলিশের কিছু জানার থাকলে যেন তারা ওঁর কাছে যায়, উনি আর থানায় আসবেন না। আসলে স্যার, ছোটসাব হয়ত ভাবছেন, বুড়ি মানুষ মাথার ঠিক নেই, কাজ নেই, তাই থানার সময় নষ্ট করতে চলে এসেছিল। কিন্তু স্যার, ঐ কাপুর মেমসাব ওরকম আর পাঁচটা বয়স্ক মহিলার মত নয়,খুব ব্যক্তিত্বময়ী, এখানে লোকে খুব শ্রদ্ধা করে। উনি যখন এসেছিলেন নিশ্চয়ই কোনো কারণ ছিল। তা আমি বলি কী আপনি যখন এসেছেন, ওর সঙ্গে দেখা করুন না একবার। কাছেই, সময়ও কেটে যাবে, ততক্ষণে ঐ মেয়েটা এসে যাবে।"
যেহেতু আগে এই বৃত্তান্ত শোনা ছিলনা, রজতের একটু ধন্দ জাগে। কে মিসেস কাপুর, কী বলতে চান! সে মঙ্গলের মত অত উৎসাহী হতে পারেনা, থানার ছোট সাহেবের মত তারও মনে হয় যে মহিলা হয়ত চেনা মেয়ের কেস দেখে বেশী উত্তেজিত হয়ে থানায় ছুটেছিলেন। আজকে তার রানির সঙ্গে দেখা করাটা বেশী জরুরী মনে হয়। তবু মঙ্গলকে নিরাশ করতে চায়না, তাই বলে,
-"বেশ তো, কাছেই যখন একবার যাওয়া যাবে নাহয় মিসেস কাপুরের কাছে। কিন্তু আগে রানি আসুক, ওর সাথে কথা বলি তারপর। নাহলে ও যদি এসে আবার কোথাও চলে যায়।"
মঙ্গল আর কিছু বলেনা। সেও অপেক্ষা করতে থাকে রজতের সঙ্গে। প্রায় ঘন্টাখানেক হয়ে গেলে,শেষে আশা ছেড়ে দিয়ে রজত মিসেস কাপুরের ওখানে যাওয়াই স্থির করে। তাকেও ঘরে পাওয়া যাবে কিনা কে জানে, অবশ্য মঙ্গলের কথা অনুযায়ী তিনি সচরাচর বাইরে বেরোন না। বেলা হয়ে এসেছে, ওরা উল্টোদিকে রাস্তায় দাঁড় করানো গাড়ীতে উঠে বসে, মঙ্গল ড্রাইভারের পাশে বসে বুঝিয়ে দেয় কোথায় যেতে হবে। এটা ডাবল রোড,তাদের মন্দিরের দিকের রাস্তা ধরতে হবে। সামনেই সিগন্যাল, সেখান অবধি গিয়ে ইউ টার্ণ নিয়ে আবার গাড়ীটা মন্দিরের পাশ দিয়ে যাচ্ছে, রজত অন্যমনস্কভাবে পথের ধারে চোখ রেখেছে, মনে মনে রানির কথাই ভাবছে, কিভাবে ধরা যায় মেয়েটাকে। মন্দিরটা পেরিয়ে কিছুটা গেলে রাস্তার ধারে একটা নতুন বিল্ডিং তৈরী হচ্ছে, সামনে অনেকটা জায়গা জুড়ে বালি জমা করা আছে সেখানে কতগুলো রাস্তার ছেলেমেয়ে মলিন পোশাক, রুক্ষ চেহারায়, কাঞ্চা বা গুলি খেলছে। সামনেই তেমাথার সিগন্যাল তাই গাড়ী দাঁড়িয়ে পড়েছে, রজতের মন ভার,চোখ বন্ধ। গাড়ীটা ডানদিকে সবে ঘুরেছে, কানে এল,"এ রানি, এবার তোর চাল"।
রানি, রানি, নামটা খুব চেনা মনে হচ্ছে, কোথায় শুনল যেন, বিদ্যুতের ঝিলিকের মত মাথায় আসতেই "রোকো রোকো" করে গাড়ীটা থামাতে বলল হুড়মুড় করে। বিরক্তিতে ড্রাইভারের মুখ্চোখ বিকৃত হয়ে এল আর একটা বিকট আওয়াজ করে ব্রেক কষল সে, মঙ্গল অবাক হয়ে পিছনে তাকালো। ভাগ্যিস শনিবারের দুপুরে এ অঞঅলে ট্র্যাফিক তেমন নেই, নাহলে নির্ঘাত পেছনে থেকে অন্য গাড়ি এসে ঠুকে দিত। রজত নেমে পড়ে, সঙ্গে মঙ্গলও।


-"তুই রানি, মন্দিরে থাকিস?" ডাক শুনে উঠে দাঁড়িয়েছে, পরনে একটা ময়লা ঘাঘরার মত স্কার্ট আর একটু কম ময়লা কুর্তা। ঘন ছোট ছোট লালচে কোঁকড়া রুক্ষ চুলে মুখখানা ঘেরা, গড়ন দেখে মনে হয় বয়স তের চোদ্দ বছরের মতো হবে তবে ঠিক বলা যায় না, বেশীও হতে পারে। দৃষ্টিও চুলের মতই, রুক্ষ, চ্যালেঞ্জের ভঙ্গীতে এক হাত কোমরে আর অন্য হাতে কাঁচের গুলি নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে।
-"হাঁ, তো কী হল?" সব ব্যাপারেই রজত যতটা সম্ভব সোজাসুজি পরিস্কার কথা বলতে পছন্দ করে সে সামনে যেই হোক না কেন, এখানেও তার অন্যথা হলনা। সে রানিকে জানালো, যে দিদি হারিয়ে গেছে, যার জন্য পুলিশ এসেছিল মন্দিরে, সে ঐ দিদির বন্ধু, দিদিকে খুঁজে বার করতে চায়। প্রথমে বুঝতে একটু সময় নিল মেয়েটা তারপর চোখে মুখে হাল্কা আগ্রহের আভাস। তাই দেখে রজত ওকে একটু সরে অন্য দিকে আসতে বলল, অন্য খেলুড়েরা খেলা থামিয়ে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। রানি আপত্তি করে না, ওরা সরে গাড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। রজত একবার মঙ্গলের দিকে দেখে নিল, সে উদাস ভঙ্গীতে গাড়ির পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
-"রানি, ঐ দিদি যেদিন হারিয়ে গেছিল সেদিন তুই ওকে মন্দিরের কাছে দেখেছিলি রাত্তিরবেলায়?"
-"তুমি পুলিশ?"
-"না তো। কেন? আমি ঐ দিদির বন্ধু।"
-"আমি তো পুজারিকে বলেছিলাম সব। সেদিন আমি ভেতর থেকে প্রসাদ নিয়ে এখানে এসে দেখি পীপল এর তলায় কে দাঁড়িয়ে আছে। একটু ঠাহর করে দেখে মনে হল দিদি। এমনিতে দিদি মন্দিরে এলেই আমাকে পয়সা প্রসাদ বা কোনো জিনিস দেয় । সেদিন রাস্তার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আশপাশ কেউ ছিলনা, দিদি বলে ডাকলাম,ঠিক তখনই একটা কালো গাড়ি এল আর দিদি তাতে উঠে চলে গেল।"
রজত দুরে মন্দিরের দিকে দেখল। ওরা যে জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছে সেখান আর মন্দিরের মাঝামাঝি জায়গায় উল্টোদিকে পার্কের পাঁচিল ঘেঁসে একটা পীপল গাছ। ও হাত বাড়িয়ে রানিকে ঐ গাছটা দেখাল,
-"কোন গাছ? ঐ গাছটার কথা বলছিস?"
-"হ্যাঁ।"কল্পনা করতে চেষ্টা করল রজত, মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে ঐ গাছতলায় দাঁড়ানো ব্যক্তিকে সঠিকভাবে চেনা সম্ভব কিনা। বাচ্চা মেয়ে, ওর দৃষ্টিশক্তি ভালোই হবে, তবু মনে হয় হলফ করে বলা যায়না। চম্পার আদলের কাউকেও দেখে থাকতে পারে।
-"তুই কালো গাড়িটা ঠিক দেখেছিলি? কী করে বুঝলি গাড়িটা ঐ দিদিদেরই গাড়ি?"
রানি এখন অনেক সহজ, প্রচুর উৎসাহ নিয়ে বোঝাতে আরম্ভ করল,
-"হাঁ তো, দিদি তো অনেকবার আসত মন্দিরে। আমি ওদের গাড়ি দেখলেই চিনতে পারি।"
-"তাও, একইরকমের গাড়ি অন্য কারুর ও তো হতে পারে, তাছাড়া দিদি হলে তোর কাছে আসবে না কেন? তুই ডেকেছিলি না?" এবার রানি একটু দ্বিধায় পড়েছে মনে হল। তারপরে আমতা আমতা করে বলল,
-"না মানে আমি ঠিক জোরে ডাকিনি, মন্দিরের ওখান থেকেই "দিদি" "দিদি" বলেছিলাম। মনে হয় দিদি শুনতে পায়নি।"
-"কতক্ষণ দাঁড়িয়েছিল দিদি ওখানে?"
-"সে জানিনা। আমি তো মন্দিরের ভেতরে প্রসাদ নিতে গেছিলাম। বেরিয়ে এসে দেখলাম দিদিকে। যখন দিদি গাড়ির দিকে যাচ্ছে তখন ডাকলাম, তো দিদি শুনল না, গাড়িতে উঠে পড়ল।"
রজত এবার একটু ভাবনায় পড়ল। মেয়েটি সেঅর্থে পাগল নয়, হয়ত অপরিণতমনস্ক হওয়ার দরুন শিশুর মতই কল্পনাপ্রবণ, চম্পার নিরুদ্দেশের খবর শুনে নিজের দেখাকে মিলিয়ে কাহিনী তৈরী করছে! রানির কাছ থেকে এর বেশী কিছু খবর আশা না করেই রজত মানিব্যাগের ভেতর হাতড়াচ্ছিল মেয়েটাকে কিছু দেবে বলে।
-"গাড়ি কে চালাচ্ছিল তুই দেখেছিলি, ড্রাইভারই ছিল না অন্য কেউ?"
-"না, পরিস্কার দেখিনি, তবে ড্রাইভারই হবে?"
রজত এবার খুব জোরেই বলে ওঠে,
-"তুই পুলিশকে বলেছিস তো ঠিক দেখিসনি? এখন আবার বানিয়ে বলছিস? অন্য আর কেউ ছিল গাড়িতে?"
-"পুলিশ তো আমায় শুধু গাড়ি কেমন ছিল পুছেছিল। গাড়িটা খুব জোরে বেরিয়ে গেল, মন্দিরের সামনে অত জোরে কেউ গাড়ি চালায় না, ঐ দিদির ড্রাইভারই প্রত্যেক সময় অমন জোরে গাড়ি ঘোরাত। আর কাউকে তো দেখিনি, গাড়ি পুরো বন্ধ ছিল, কাঁচ তোলা।"
রজত আবার মন্দির থেকে জায়গাটা দেখল যেখানে রানির কথা অনুযায়ী গাড়িটা থেমেছিল। রজতের হাতে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট উঠে আসে। মেয়েটা স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারেনা, দুই হাতে ঘাগরার দুদিকের খুঁট ধরে নাচের ভঙ্গীতে অর্ধবৃত্তাকার ভাবে ঘুরে ঘুরে কথা বলছে। কথা শুনে পাগল মনে হয়না আবার যে খুব বুদ্ধিসুদ্ধি তাও বোধহয় না, অপরিণত। খুঁটিয়ে দেখল রজত, বানিয়ে বলছে মনে হচ্ছে না। ও যা বলছে তা ও হয় দেখেছে নয় ও ভাবে ও দেখেছে।
মঙ্গলকে ডেকে নিয়ে গাড়িতে উঠল। আজ আর মিসেস কাপুরের ওখানে যাওয়া হবেনা, মঙ্গল একটু হতাশ হয় শুনে, রজত ওকে আশ্বস্ত করে কাল আসবে বলে, মঙ্গলকে ফোনে সময় জানিয়ে দেবে, ও মিসেস কাপুরের সাথে কথাও বলে রাখতে পারবে সেই মত। গাড়ি বাড়ির পানে বাঁ দিকের রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে একবার পিছন ফিরে কাঁচের মধ্যে দিয়ে তাকিয়ে দেখল রানি আবার ফিরে গেছে ঐ বালির ঢিবির পাশে, ওর ক্ষুদে সঙ্গীদের সাথে খেলায় যোগ দিয়েছে।
 
দুদিন ধরে সি.এম ভিজিটের ব্যপারে ব্যস্ত থাকায় চৌবে সি.আই.ডি অফিসার রজতকে কোন সময় দিতে পারে না, আজ সময় পেতেই চৌবে রজতের অফিসে ফোন লাগায়,
-“স্যার, দুদিন ব্যস্ত থাকায় আপনাকে একদম সময় দিতে পারিনি। স্যার, এই দুদিনে কেসটার কোন ডেভেলপমেন্ট হয়েছে?”
-"হ্যাঁ, কিছুটা হয়েছে। যাইহোক, চৌবেজি, আমি ভাবছি দেরি না করে কাল সকালেই চম্পাদেবির মা বাবার সঙ্গে দেখা করব। আপনি কাল যেতে পারবেন তো?”
ওপারে চৌবের গলাটা একটু কেমন শোনাল, অন্যরকম,
-"সে ঠিক আছে, কী ব্যাপার বলুন তো স্যার। আপনার সঙ্গে তো পরশু ফোনে কথা হল, ঐ মন্দিরের মেয়েটির কথা নিয়ে। তারপরে আর কি কিছু হয়েছে? চম্পাদেবির মা বাবার সঙ্গে দেখা করাটা কি খুব জরুরী।"
-"আমি গতকাল মঙ্গলের সাথে একজন মিসেস কাপুরের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আপনাকে বললাম না সেদিন চম্পার এক প্রতিবেশীর খোঁজ পেয়েছি যার সাথে চম্পার মার বন্ধুত্ব ছিল।"
-"হ্যাঁ বলেছিলেন বটে, তবে দুদিন খুব ব্যস্ত থাকায় বেশী গুরুত্ব দিতে পারি নি, সরি স্যার?"
-"আরে না, আমিও তো প্রথমে তেমন গুরুত্ব দিইনি, তাই সেভাবে বলিনি আপনাকে। মঙ্গল বলেছিল ভদ্রমহিলা থানায় গিয়েছিলেন, কিন্তু আপনার সেকেন্ড অফিসার ওঁকে পাত্তা দেননি, অথচ উনি এখানকার খুব শ্রদ্ধেয় একজন ব্যক্তিত্ব, প্রাক্তন স্কুলটীচার। আমি ভেবেছিলাম চম্পার মা বাবার কাছ থেকে তো তেমন কিছু জানা জায়নি তাই এনার কাছেই ওদের বাড়ীর দিক সম্বন্ধে একটু খবর যদি পাই।"
-"তা উনি কী বললেন স্যার? নতুন কিছু, দরকারী খবর?"
-"ফোনে বলবনা চৌবেজী, বুঝিয়ে বলা যাবেনা সবকথা। আজ বিকালে আপনি আমার এখানে আসুন তারপর প্রোগ্রাম ঠিক করা যাবে। তবে একটা কথা, চম্পার বাবা মাকে কোনোরকম আগে থেকে খবর দেবেননা বা ফোন করবেন না, আমরা হঠাৎ করে গিয়ে পড়ব। হ্যাঁ, আর একটা কাজ আপনাকে করে দিতে হবে, চৌবেজি।”
-“কি কাজ, স্যার।”
-“আপনার থানায় আজ থেকে ঠিক আঠার বছর আগে সুলেখাদেবি নামে এক মহিলার মিসিং ডায়রি হয়েছিল, সেই ফাইলটা একটু খুঁজে নিয়ে আসতে হবে।”
-“আঠার বছর আগের ফাইল? দেখি পাই নাকি? কিন্তু এই সুলেখাদেবি কে স্যার?
-“এই মহিলাও নাকি একইভাবে মন্দিরের সামনে থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। ফাইলটা যেমন করেই হোক খুঁজে আনতে হবে চৌবেজি, ফাইলটা খুবই দরকারি। ঠিক আছে চৌবেজি বিকেলে দেখা হচ্ছে।”
রজত ফোন রেখে দিল, এদিকে চৌবে পুরো হতবাক। চৌবে মনে মনে রজত স্যারের কথাগুলোই ভাবতে লাগল। কিছু গুরুতর ব্যাপারের হদিশ পাওয়া গেছে, রজত স্যারের মত শান্ত চুপচাপ লোকও বেশ উত্তেজিত হয়েছেন তা উনি যতই গলায় স্থির ভাব ফোটানোর চেষ্টা করুন না কেন।


চৌবেজীর সঙ্গে ফোনে কথা বলার কিছুক্ষন পরে রজতের কাছে একটা ফোন আসে।
-"হ্যালো।"
-"হ্যাঁ, আমি কুমুদিনি রাইস মিলের মালিক জয়কৃষ্ণ বলছি।"
-“হ্যাঁ, অমি সি.আই.ডি অফিসার রজত বলছি। কী ব্যাপার, বলুন?”
-"আপনার একটু সাহায্য চাই।"
-“বলুন কীরকম সাহায্য, আমি চেষ্টা করব?”
জয়কৃষ্ণ প্রথমে চুপ থাকে, তারপর জিজ্ঞেস করে,
-“নিখোঁজ চম্পার সম্পর্কে কথা বলতে চাই। আপনার সাথে দেখা করা যাবে?”
রজত একটু ভাবে,
-“কখন? কোথায়?”
-“কাল সন্ধ্যায় দেখা করলে আপনার অসুবিধা হবে?”
-"ঠিক আছে, আপনি নাহয় কাল সন্ধ্যেয় আমার বাড়িতে চলে আসুন। মেট্রোতেও আসতে পারেন, স্টেশন থেকে রিক্সা করে মিনিট পাঁচেক লাগবে। অথবা সিটি ক্যাব নিয়ে চলে আসুন। আমি ঠিকানাটা বলে দিচ্ছি, লিখে নিন।"
ফোন রাখার পরে রজত মনে মনে জয়কৃষ্ণ নামটা আওড়াতে থাকে। হঠাৎ মিসেস কাপুরের মুখটা রজতের মনে ভেসে ওঠে। এটা ভেবে রজতের আফসোস হয় যে ফোনে জয়কৃষ্ণের আরও ডিটেলস নেওয়া উচিত ছিল তার। এখন কাল সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

পরেরদিন সকালে রজত ও চৌবে গেট ঠেলে ঢুকতেই গ্যারাজের পাশের ঘরের জানালায় একজোড়া চোখ দেখা গেল। ওরা কিছু না বলে বাড়ির মেন গেটের দিকে হাঁটা দিল, ঘরের ভেতরের মানুষটি বাইরে বেরিয়ে এল।
-"কাকে চাই, কোথায় যাচ্ছেন?" বয়স্ক লোকটি এককালে বেশ লম্বাই ছিল, এখন বয়সের ভারে ইষৎ নুয়ে আছে তবে এমনিতে বেশ সবল, পরনে খাকি বারমুডা আর একটা ময়লা কুর্তা। লোকটির মুখ দেখে রজতের মনে হল এ উত্তর ভারতের লোক।
চৌবে পুলিশী চালে উত্তর দিল,
-"আমি থানা থেকে আসছি, মি: শিশিরের সাথে দরকার আছে।"
এই প্রথম রজত একজনকে দেখল, একটি সাধারণ লোক যে পুলিশের নামে ঘাবড়াল না, উল্টে বেশ ডাঁটেই বলল,
-"আপনি ফোন করে এসেছেন? আমাকে তো ওরা বলেনি কেউ আসবে বলে। আপনি কোথাকার পুলিশ?" শেষ কথাটা বেশ একটু তাচ্ছিল্যের সাথেই বলল রজতকে আপদমস্তক দেখতে দেখতে। চৌবে প্লেন ড্রেসে আছে, প্রশ্ন আসারই কথা কিন্তু সেটা এর মত কারুর কাছ থেকে আসবে রজত বা চৌবে কেউই আশা করেনি।
চৌবে অবশ্য জাত পুলিশ, কোনো কিছুতেই বিচলিত না হয়ে নিজের হাতে কনট্রোল তুলে নিতে ভালোই পারে। সোজা উত্তর না দিয়ে, গর্জন করে বলল,
-"তুই কে, এখানে কী করিস? বাড়িতে পুলিশ কেন আসে, বাড়ির মালকিন নিখোঁজ হলে পুলিশ আসবে না তো কী ব্যান্ড পার্টি আসবে, হাঁ? পুলিশকে খবর দিয়ে চিঠি লিখে আসতে হবে, তাই না? তা এখনি দিচ্ছি খবর, যা গিয়ে খবর দে বাবুকে। তারপরে তোদের সবার খবর নেব আমি।"
রজত তো চৌবের বুলি শুনে অবাক, লোকটার কিন্তু খুব কিছু হেলদোল নেই, সেও জবাবে সমান তেজে কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় বাড়ির মেন গেট খুলে একজন লোক এসে দাঁড়ায়,
-"কী হয়েছে বাবুরাম? কারা এসেছে?"
বাবুরামের দৃষ্টি অনুসরণ করে ভদ্রলোকের চোখ গেল চৌবের দিকে, গেট খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করে,
-"একী, আপনারা? কী ব্যাপার?"
চৌবে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে,
-"আপনার সঙ্গে আর ম্যাডামের সঙ্গে একটু কথা ছিল, চলুন ভেতরে গিয়ে বলছি।"
রজত চৌবেকে অনুসরণ করতে করতে বাবুরামের দিকে তাকায়, সে তখন তার ঘরে ঢুকছে, বাবুরাম কী একাই থাকে? লোকটাকে বেশ জাঁদরেল মনে হল।
চম্পার বাবা শিশিরের মুখের ভাব বেশ অপ্রসন্ন, বোঝা গেল সে একেবারেই খুশী হয়নি ওদের দেখে, বসতেও বলল না। চৌবে অবশ্য নিজেই বসে পড়ল চেয়ারে, দেখাদেখি রজতও। শিশির চৌবের দিকে তাকিয়ে বেশ কড়াভাবে বলে,
-"আমার স্ত্রী খুবই আপসেট, বিছানা থেকে উঠছেনা। ওর সঙ্গে কথা বলা কি খুব দরকার? আমরা তো যা বলার আপনাদের বলেছি।"
চৌবেও জবাবে গলাটাকে মধুর কঠিন করে বলে,
-"দরকার না হলে কি আর এসময় এসে আপনাদের বিরক্ত করি সাব? আপনি যা বলেছেন তারপরেও কেসটার কিছু ডেভেলপমেন্ট হয়েছে সেসব নিয়ে আমরা কথা বলতে এসেছি। তা ম্যাডাম অসুস্থ হলে আপনার যদি আপত্তি না থাকে আমরা ঘরে গিয়ে কথা বলতে পারি ওনার সঙ্গে।"
টোটকায় কাজ হল, ওর কথা শুনে শিশিরের তেরিয়া ভাবটা কমল মনে হল, একটু বিভ্রান্ত হয়ে তাড়াতাড়ি ঘরের দিকে যেতে যেতে বলে,
-"দেখি জিজ্ঞেস করে, যদি উঠে আসতে পারে একবার।"



চৌবে রজতের দিকে তাকিয়ে হাসে। কয়েক সেকেন্ডেই ফিরে এসে শিশির জানায় ওর স্ত্রী শুভা আসছে তৈরী হয়ে। কেউ কোনো কথা বলে না, সবাই অপেক্ষায়। শুভা এসে ওদের দুজনকে নমস্কার করে একটা চেয়ার টেনে বসে। মুখটা ঈষৎ বিষন্ন দেখালেও এমনি চলাফেরা বা চেহারায় অসুস্থতা বা শোকের তেমন লক্ষণ নেই। চৌবে একবার রজতের দিকে তাকিয়ে যেন সম্মতি নিয়ে শুরু করল,
-"সরি, আপনি অসুস্থ তাও আপনাদের বিরক্ত করতে হচ্ছে। আসলে আমরা তদন্তের মাঝে জানতে পারি নিরুদ্দেশ হবার কিছুদিন আগে চম্পাদেবির সাথে ওনার এক কাজিনের যোগাযোগ হয়েছিল। এই কাজিনের সঙ্গে আমরা কথা বলতে চাই। ওর যোগাযোগের ঠিকানা ফোন নাম্বারটা চাই।"
শিশির ও শুভা দুজনেই পরস্পরের দিকে দেখে একবার বিস্ময়ে। তারপর শুভা বলে ওঠে,
-" কাজিন? চম্পার কোনো কাজিন নেই তো।" তারপরেই আবার কি ভেবে বলে ওঠে,-"অবশ্য আমার বড় ভাই থাকে বিদেশে, ওর স্ত্রী বিদেশী, ওদের এক মেয়ে আছে। কিন্তু তাদের সাথে চম্পার তেমন কোনো যোগাযোগ ছিলনা, আমারই যোগাযোগ খুব অল্প। ভাই আসে দেশে কাজেকম্মে, ওর বৌ মেয়ে তো আসেও না।"
রজত এবার শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে,
-"আপনার মেয়ের এই কাজিন একজন পুরুষ। কে হতে পারে বলে মনে হয় আপনার? আপনার ওদিকের কোনো আত্মীয়স্বজন?"
শিশির একবার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে নেয়, তারপর বলে,
-"সেরকম কোনো কাজিন নেই চম্পার। আমি এক ছেলে, আমার বাবাও এক ছেলে ছিলেন। আমার ওদিকে আত্মীয়স্বজন, আমার মায়ের তরফের কিছু আছে, তাদের মধ্যে কেউ চম্পার বয়সী বা কাছাকাছি বয়সের নেই, সবাই হয় অনেক বড় বা বেশ ছোট। চম্পাও ওদিকের সবাইকে সেরকম চেনেনা, ঘনিষ্ঠ হওয়া তো দুরের কথা। এরকম কোনো কাজিনের কথা আমরা জানিনা, আপনাদের কিছু ভুল হচ্ছে।"
শুভাও ঘাড় নেড়ে সায় দিল স্বামীর কথায়।
এবার রজত মুখ খোলে, ধীরে, শান্তভাবে, শিশিরের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে,
-"আপনার কেউ নেই, আপনার স্ত্রীরও কেউ ছিলনা, ঠিক জানেন আপনি?"
শিশির একটু বিরক্ত হয়ে বলে,
-"আগেই শুনলেন তো, শুভার তরফেও সেরকম কেউ নেই।"
-"তাতো শুনলাম, কিন্তু আমি যে আপনার প্রথম স্ত্রী অর্থাৎ চম্পার মায়ের তরফের কথা জিজ্ঞেস করছি মি: শিশির।"
শিশির আর শুভা দুজনেই এ কথা শুনে ভীষণ চমকে কেমন একটা হয়ে গেল, মুখ দেখে মনে হল যেন কোনো বিস্ফোরণ ঘটেছে বা মাথায় বাজ পড়েছে। রজত আর চৌবে চুপ করে একদৃষ্টে ওদের প্রতিক্রিয়া দেখতে থাকে। শুভাই প্রথম সামলে নিয়ে মুখ খোলে, চোখটোখ তুলে একখানা নাটকীয় ভঙ্গী করে,
-"না, আমিই চম্পার মা। চম্পা আমারই মেয়ে। আপনারা এসব কী আজেবাজে কথা বলছেন, কেন এসেছেন আপনারা, কী মতলবে?" বলে আঁচলে মুখ ঢেকে কান্নার ভাব করে বসে রইল।
শিশিরের মুখটা প্রথমে ছাইয়ের মত ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল, স্ত্রীর কথা শুনে সম্বিত ফিরে পেয়ে একেবারে বেগুনি হয়ে উঠল। চেয়ার থেকে উঠে শুভার পাশে গিয়ে তাকে সান্ত্বনা দিতে দিতে চৌবের দিকে চেয়ে চেঁচিয়ে বলে,
-"এসব কী আজেবাজে কথা বলছেন? চম্পা আমার আর শুভার মেয়ে। আপনারা খোঁজ নিন এখানে, সবাই সাক্ষী দেবে। এসব আজেবাজে কাহিনী বানিয়ে আপনারা আমাদের ফাঁসাতে এসেছেন?"
রজতও এবার নিজের মূর্তি ধরল। শিশিরের থেকেও জোর গলায় বলে,
-"আপনারা শান্ত হয়ে বসুন। পুলিশের সঙ্গে বেশী চালাকি করার চেষ্টা করবেন না, লাভ হবেনা। আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমরা সব খবর নিয়েই এসেছি।"
শুভার মুখের আঁচল সরে গেছে, চোখে জলের জায়গায় ভয়ের ছায়া। শিশির উত্তেজিত হয়ে আবার কী বলতে যাবে, রজত হাত তুলে থামিয়ে দেয়,
-"মি: শিশির, চম্পাদেবি আপনার প্রথমা স্ত্রীর মেয়ে, ইনি আপনার দ্বিতীয়া স্ত্রী, একথাটা আপনি আগে বলেননি কেন?”
শুভা চুপ করে আছে, শিশির এখনও তড়পাচ্ছে,
-"সেটা আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। চম্পাকে শুভা জন্ম না দিতে পারে কিন্তু ঐ চম্পার মা, ছোট থেকে ঐ ওকে এতবড় করেছে, আর আজ মেয়ের নিখোঁজে কিরকম আপসেট সেটা তো আপনারা দেখছেনই! আমার প্রথম স্ত্রী সুলেখা যখন মারা যায় তখন চম্পা দু বছরের, চম্পা শুভাকেই মা বলে জেনেছে চিরদিন। আমরা তাকেও কখনো কিছু বলিনি এ নিয়ে। কিন্তু তার সঙ্গে এ কেসের কী সম্বন্ধ?"


এবার রজত আর চুপ থাকতে পারেনা,
-"আপনার প্রথম স্ত্রী সুলেখাদেবি মারা গেছিলেন, আপনি শিওর? উনি নিখোঁজ হয়ে যাননি তো?"
শিশির হতবাক, রজতের দিকে তাকিয়ে কেমন যেন কিছু বলতেও ভুলে যায়। রজত বলে,
-"আপনি তো সেইসময় সবাইকে বলেছিলেন আপনার স্ত্রী মন্দিরের থেকে হারিয়ে গিয়েছিল, আর ফেরেনি। ঠিক আপনার মেয়ে চম্পার মত। ব্যাপারটা কী হয়েছিল আসলে বলুন তো মি: শিশির?"
শিশির এবার হাল ছেড়ে দিয়ে মাথা নীচু করে বসে পড়ে, কিছুই বলেনা। শুভারও মাথা নীচু, এদের দিকে তাকায়ও না, জড়ভরতের মত বসে থাকে একভাবে, নিস্পন্দ। রজত আবার বলে,
-"আমরা অপেক্ষা করছি, আপনি আমাদের আপনার স্ত্রীর কথা সব বলুন। কবে হয়েছিল, কোথায়, সব কিছু। আপনি না বললে যেভাবে আপনার প্রথম স্ত্রীর কথা জেনেছি, বাকীটুকুও জেনে নেব কোনো না কোনো ভাবে, তাই কিছু না লুকিয়ে সব বলুন।"
শিশির খুব যেন কষ্ট হচ্ছে এভাবে মাথাটা তুলে বলে,
-"আমরা তখন রিটা অ্যাপার্টমেন্ট এ থাকতাম। চম্পার তখন দু বছর বয়স। তাকে বাড়িতে আয়ার কাছে রেখে আমার স্ত্রী সুলেখা মন্দিরে গিয়েছিল বিকেলে, একাই যেত। অনেকসময় মন্দির থেকে হেঁটেই বাড়ি চলে আসত, কখনো আমি অফিস থেকে ফেরার পথে গাড়িতে তুলে নিয়ে আসতাম। সেদিন আমি বাড়ি এসে শুনি ও মন্দির থেকে ফেরেনি। তখন আমি আবার বেরিয়ে মন্দিরে খুঁজলাম, চতুর্দিকে খুঁজলাম, কোথাও পেলাম না। পরদিন লোক্যাল থানায় খবর দিলাম, তারাও খুঁজল অনেক। পাওয়া গেলনা।"
-"তাহলে উনি মারা গেছেন এমন কোনো প্রমাণ আপনার কাছে নেই?"
শিশির রজতয়ের এ প্রশ্নে ঘাড় নাড়ল,
-"তা নেই, তবে আর কী হবে? বেঁচে থাকলে তো খবর পেতাম।"
-"কিন্তু কীভাবে? কতদিন খোঁজাখুঁজি করা হয়েছিল? পুলিশ কিছুই বার করতে পারেনি?"
-"না, আমি তখন বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। আত্মীয়স্বজন কেউ নেই কাছে। শুভার দাদা আমার বন্ধু ছিল, সেই সময় ও খুব সাহায্য করেছিল। কিছুদিন পরে চম্পাকে সামলানোর জন্যে শুভাকে আমি বিয়ে করি। পরে রিটা অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে শুভা আর আমি চম্পাকে নিয়ে আমাদের এই বাড়িতে চলে আসি। আজ এতদিন পরে আবার সব গোলমাল হয়ে গেল।"
-"চম্পা কিছুই জানত না এসব কথা?"
-"না, আমরা কেউ কিছু বলবনা ঠিক করেছিলাম, আমরা চাইনি ওর জীবনে এটা নিয়ে কোনো গোলযোগের সৃষ্টি হোক। এখানে নতুন জায়গা, সেখানে সবাই চম্পাকে শুভার কোলেই দেখেছে।"
রজত ভাবল সেই রিটা অ্যাপার্টমেন্টর মিসেস কাপুর সব জানত, চম্পার নিজের মা তার মেয়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধবি ছিল। মিসেস কাপুরের কাছ থেকে জানা তথ্য সব মিলে যাচ্ছে।
চৌবে রজতের দিকে তাকালো, আর কী জিজ্ঞাস্য আছে। রজত শিশিরকেই জিজ্ঞেস করে,
-"তাহলে আপনার প্রথমা স্ত্রীর দিকেও চম্পার কোনো কাজিন নেই?"
-" সুলেখার এক ভাই ছিল বটে, কিন্তু তার ছেলেদের সঙ্গে আমাদের কোন যোগাযোগ ছিল না। আর চম্পা যখন সুলেখার কথাই জানত না তখন সেই কাজিনদের কথাই বা জানবে কী করে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগই বা হবে কোথায়!"
-"সুলেখাদেবির ভাই বাবা এরা খোঁজ করেনি, এখানে আসেনি?”
শিশির এবার একটু অসহিষ্ণু ভাব দেখায়,
-"এইসব পুরোনো কথা এখন উঠছে কেন? আমার মেয়ের নিখোঁজের কিনারা না করে আপনারা আঠার বছর আগে কী ঘটেছিল তা নিয়ে এত পড়ছেন কেন?"
এবার চৌবে বলে,
-"আমরা কী করছি না করছি সেটা তো আপনাকে বলা যাবেনা, আপনি শুধু আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিন ঠিকঠাক। আপনার প্রথমা স্ত্রীর বাবা ভাই এরা এসেছিলেন?"
-সুলেখার বিয়ের আগেই ওর মা মারা গিয়েছিল, আর বিয়ের কয়েক মাস পরেই ওর বাবা মারা যায়। ভাইয়ের সঙ্গে ওর ভাল সম্পর্ক ছিল না। শুধু এক ভাইপোর সাথে সুলেখার ভাল সম্পর্ক ছিল। সেই ভাইপোকেই চিঠি দিয়ে সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসিনী হয়ে যাবার কথা জানিয়ে ছিল। সেই ভাইপো এই চিঠি পাবার পরে একবার এসেছিল পিসির খোঁজ নিতে, সেখান থেকেই আমি জানতে পারি আমার স্ত্রির সন্ন্যাসিনী হয়ে যাবার কথা। এরপরে ওরাও কেউ আমার সাথে যোগাযোগ রাখেনি আর আমিও ওদের কারো সাথে যোগাযোগ রাখিনি।"
রজত জিজ্ঞেস করে,
-"ওদের বাড়ি কোথায় তা তো আপনার জানা আছে নিশ্চয়ই, তাদের ঠিকানাটা?"
শিশির বেশ অনিচ্ছার সাথে বলে,
-"সুলেখাদের পৈত্রিক বাড়িতে এখন কেউ নেই, সুলেখার ভাই বেশ কিছুদিন আগে মারা গেছেন বলে শুনেছি, সুলেখাদের পৈত্রিক বাড়ি বেচে দিয়ে সুলেখার ভাইপোরা এখন কোথায় আছে তা আমি জানি না।"
রজত একটু গল্পের সুরে শিশির আর শুভা দুজনের দিকেই বলে,
-"আচ্ছা চম্পার নিখোঁজের পেছনে কী কারন থাকতে পারে বলে মনে হয় আপনাদের?"
শিশির আবার উত্তেজিত,

-"কয়েক মিনিটে চম্পা হারিয়ে গেল, এ সম্ভবই নয়। আমরা ভর দুপুরে মন্দির থেকে কাউকে তুলে নিয়ে যেতে কোনোদিন শুনিনি। কারন জানিনা, সে আপনারা খুঁজে বার করুন।"
রজত ওর উত্তেজনা দেখে মৃদু হেসে শুভাকে বলে,
-"আচ্ছা, চম্পার নিজের মায়ের গয়নাগাঁটি তো সব আপনার কাছে, তাই না?"
এতক্ষনে শুভার কথা ফোটে, বেশ একটু তীব্র স্বরে বলে,
-"হ্যাঁ, ওর লকার নেওয়া হয়নি তাই আমার লকারেই সব আছে। মেয়েই রইলনা, তার গয়না নিয়ে আমরা কী করব!"
রজত পাত্তা দিলনা,-"আচ্ছা, চম্পার নামে কোনো সম্পত্তি ছিলনা?"
স্বামী স্ত্রীর মুখ আবার ছাই পানা। ওদের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে চলতে চলতে রজত অজান্তেই বোধহয় কোনো ব্যথার জায়গায় হাত দিয়ে দিয়েছে। চৌবেও ওদের অবস্থা দেখে কৌতূহলী, রজত প্রশ্ন করে উন্মুখ ভাবে তাকিয়ে আছে। শিশির যেন বুঝে নেয় যে জবাব না দিলে রেহাই নেই, তাই আবার বেশ অনিচ্ছাপূর্বক বলে,
-"চম্পা আমাদের একমাত্র সন্তান, আমাদের যা কিছু তার সবই তো চম্পাই পাবে।”
চৌবে বলে,
-"আপনারা আমাদের না বলে এখান থেকে যাবেন না। আমরা আরও কিছু জানার হলে ভবিষ্যতেও আসতে পারি।"
ওদের পায়ের আওয়াজেই বোধহয় বাবুরাম বেরিয়ে আসে তার বারান্দায়। তার দৃষ্টি বেশ রুক্ষ, বিশেষ করে চৌবের দিকে তো একেবারে জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে। চৌবে অবশ্য খেয়াল করে না, আগে আগে এগিয়ে যায়। রজত শিশিরকে জিজ্ঞেস করে,
-"এই বাবুরাম আপনাদের এখানে কতদিন আছে? ওর তো বেশ বয়স হয়েছে, ও পারে আপনাদের বাড়ির দেখাশোনা করতে?"
-"ও আসলে আমাদের অনেক পুরনো আমলের লোক। গ্রামে ওর বাড়ি, পরিবার আছে, কিন্তু ও এখানে একাই থাকে। বাবুরাম এখন আমাদের বাড়ির সদস্যের মতই।"
রজত যেতে যেতে বাবুরামের কথা ভাবে, পুলিশকে ওর এত অপছ্ন্দ কেন! পুলিশের সঙ্গে ওর দুশমনী কী, তাদের ভয়ই বা করেনা কেন ও?
 
অনেক সুন্দর গল্প। যার ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়। এত ক্লাইম্যাক্স কোন গল্পে পাই না। দাদাকে ধন্যবাদ এরকম একটা গল্প দেওয়ার জন্য। আশা করি গল্পের বাকি আপডেট দ্রুতই পাবো।
 
অনেক সুন্দর গল্প। যার ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়। এত ক্লাইম্যাক্স কোন গল্পে পাই না। দাদাকে ধন্যবাদ এরকম একটা গল্প দেওয়ার জন্য। আশা করি গল্পের বাকি আপডেট দ্রুতই পাবো।

আপনাকেও ধন্যবাদ ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্য।
 
সম্ভবত গল্পটির আরো খানিকটা আছে । তবে যেটুকু রয়েছে তা-ও অসামান্য ।
বাকিটুকুও পড়ে নিন। আপডেট দেয়া হয়েছে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top