What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ঘোড়ার আড়াই চাল (বড় গল্প) (1 Viewer)

Son Goku

Expert Member
Joined
Nov 20, 2018
Threads
125
Messages
1,627
Credits
73,289
Billed Cap
Rose
Lipstick
Red Apple
Laptop Computer
Euro Banknote
[***গল্পটির লেখক কে বলতে পারছি না, নেট থেকে সংগৃহীত গল্পটি । গল্পের লাইনগুলোর মাঝে একটু বেশী গ্যাপ থাকার কারণে দুঃখিত । ]
*****আপনাদের ভালো লাগলে আপডেট দেওয়া হবে ।


ঘোড়ার আড়াই চাল




বার বার পর পর তিন দিন ধরে একই জিনিষ হলে কারই বা মাথা ঠিক থাকে?






মৃদুলের মাথাটাও এইবার গরম হয়ে উঠলো আর সে তার হাতের ফোনটা ভালো করে দেখে নিয়ে তাক করেই বসে রইলো ফোন আসার।






একে মৃদুল তার নতুন এডিটারের জ্বালায় জ্বলছে তার উপর গত তিন দিন ধরে এই নতুন উৎপাত,






মাঝে মাঝে মৃদুলের মনে হয় ভগবান যেন তার জন্যই নিত্যনতুন সব সমস্যা ভেবে বার করেন।






তার এই বত্রিশ বছরের জীবনে মৃদুলের কোন একটাও মাস মনে পড়েনি যখন তার জীবনে পর্যাপ্ত শান্তি থেকেছে।






একে তার নতুন এডিটার তাকে পনেরো দিন আগেই জানিয়ে দিয়েছে যে তার চ্যানেলে তিনি একটি নতুন প্রোগ্রাম শুরু করতে চাইছেন,






অনেকটা জি নিউসের

”মুজরিম কৌন ?”

ধাচের যেখানে প্রতি সপ্তাহে একটা একটা করে পুরনো কিন্তু কুখ্যাত আর অমীমাংসিত সব কেস গুলো কে নতুন ভাবে ক্রাইম রিপোর্টার তার মত করে অনুসন্ধান করে তার আসল রহস্য উদঘাটন করার চেষ্টা করবে।






সেইদিনের মিটিঙে আইডিয়াটা শুনেই মৃদুল আর তার পুরো টিম যেন বমকে গেছিলো।






একেই যা দিনকাল তাতে তাজা ক্রাইমই সব কভার করা যাচ্ছেনা তার উপর আবার কবর থেকে মড়া তুলে তার অনুসন্ধান করা।






যখন সি কে বোস , তাদের নতুন এডিটার তার ল্যাপটপ খুলে বকে যাচ্ছিলো যে শুধু এই প্রোগ্রামের জোরেই জি নিউসের কত টি আর পি ,






তখন মৃদুলের পাস থেকে তার ডানহাত শঙ্কর আস্তে করে বলে উঠে






”ডি কে বোস সালে ,জি নিউস বালে কা তনখা ভি তো কভি কভি বোল দিয়া কর, ফির সালে কমপেয়ার করনা”






শঙ্করের মুখে” ডি কে বোস” শুনে মৃদুল আর হাসি থামাতে না পেরে কেশে ফেলে।






তার কাশির আওয়াজে যখন সি কে বোস মৃদুল কে কড়া দৃষ্টিতে দেখে তখন শঙ্কর কিন্তু একেবারে ভাবলেশহীন মুখে বসে গভীর মনযোগ দিয়ে মীটিং শুনে যাচ্ছিলো।






মীটিং শেষ হওয়ার পরে রাজু আর সোনালি এনেক কষ্টেই শঙ্করকে মৃদুলের হাত থেকে মার খাওয়ার থেকে বাচায় অবশ্যই হাসতে হাসতে কারন ততক্ষণে শঙ্কর তাদেরকে নিজের মোবাইলে






”ভাগ ডি কে বোস ভাগ”

গানটা সুনিয়ে দিয়েছিল আর সি কে বোস কে নতুন নামে ডাকার কারণটাও। মৃদুলের জীবনে মনে হয় যদি ভাগ করতে বসা হয় তবে তার সবচেয়ে পছন্দ হবে মনে হয় তার এই সাত বছরের অফিস জীবন।






মৃদুল ছোট থেকেই খুব ডানপিটে ছিল তাই সে যে বড় হয়ে হয় গুন্ডা, পুলিশ, বা নেতা হবে সেটার ব্যাপারে তার বাবা অতুলবাবুর কোন সন্দেহ ছিলনা।






কিন্তু মৃদুল যখন উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞানএ সব বিষয়ে স্টার পেয়েও মাস কমিউনিকেশন পরে রিপোর্টার হয়ে গেল তিনি খুব একটা আনন্দিত হননি।






তবে যখন প্রায়দিনই তার ছোট ছেলেকে টিভিতে দেখতে পেতে লাগলেন আর তার বিকেলের আড্ডায়ও এটা একটা চর্চার বিষয়ে দাঁড়ালো তখন অতুল বাবু মনে মনে খুশী হলেও মুখে তা আজও প্রকাশ করেননি।






মৃদুল ঘরের ছোট বলেই হয়তো সবারই প্রিয় ।






এমনকি তার অত ব্যাস্ত বড়দা যে নিজের চেম্বার আর নার্সিংহোম ছাড়া কিছু বুঝতো না সেও এখন মৃদুলের প্রোগ্রাম থাকলে বসার ঘরে বসে বাড়ীর বাকি তেরজন মেম্বারের মতই উত্তেজিত আর একই সঙ্গে পুলকিত হয়ে টিভিতে নিজের অতিপ্রিয় ছোটকু কে যেন অবাক হয়েই দেখে।






মৃদুলের খুব ছোট বেলাতেই অতুলবাবুর স্ত্রী , মানে তার মা মারা যান।






তখন বড়দা ডাক্তারি পাস করে সবে বেরিয়েছেন কিন্তু সংসারের হাল ধরার জন্য বাধ্য হয়েই বিয়ে করে নেন।






সেই থেকে আজও মৃদুল তার বড় বউদিকে মা বলেই ডাকে।






আজ প্রায় চব্বিশ বছর হয়ে গেল মৃদুল তার বড় বউদিকে সব কথা না বলে ঘুমোতেও পারে না।






কিন্তু গত তিন দিন ধরে যে অদ্ভুত ব্যাপারটা তার সঙ্গে হচ্ছে সেটা মৃদুল তার বড় বউদিকেও ভয়ে বলতে পারছে না ।






কারন তার বড় বউদি এমনিতে খুবই শান্ত কিন্তু যদি জানতে পারেন যে মৃদুলের জীবনে কোন ভয়ের কারন আছে তাহলে যেমন করে হোক সেটা বন্ধ করতে উঠে পরে লাগে।






যেমন মৃদুলের নতুন মোটরবাইক কেনার সময় বড় বউদি প্রায় দুদিন জলস্পর্শ প্রয্যন্ত করেননি, শেষে মৃদুলকে তার পায়ে হাত দিয়ে দিব্যি করতে হয়েছিল যে সে হেলমেট ছাড়া ঘর থেকে বের হবেনা তারপরেই বরফ গলে ।






আর বড় বউদি এইবার তাকে এই চাকরি ছাড়ার কথা অনেকদিন ধরেই বলে যাচ্ছে ,






উনি নাকি শুনেছেন যে দিল্লিতে কোন রিপোর্টার কে গুলি করে মেরে দিয়েছে আর মৃদুলও এমন সব ভয়ঙ্কর বিষয় নিয়ে প্রোগ্রাম করে যে তারও এনেক শত্রু তাই এই যুক্তি দিয়েই তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন মৃদুলের চাকরি খেয়ে তাকে পারিবারিক হসিয়ারি কারখানায় জুড়ে দিতে।






এই বারিতে সব কিছুই বড় বউদির হুকুমেই হয় তাই যদি বড় বউদি হুকুম করেন তাহলে মৃদুল কেন দরকারে অতুলবাবুকেও বড় বউদি ক্যাবারে করাতে পারেন।






কিন্তু বড় বউদির মৃদুলের ওপর সন্তান স্নেহের কারনেই বেশী জেদ করতে পারেননি কারন মৃদুলের জেদও সাংঘাতিক।






তবে গত তিন দিন ধরে যা হচ্ছে তাকে প্রথমে মৃদুল কারুর ইয়ার্কি ভেবেই উড়িয়ে দিলে আজ সে একটু চিন্তিত হয়ে পড়েছে।






এই ঘটনাটা প্রথম শুরু হয় ঠিক তিন দিন আগে রাত বারোটা দশের সময়,






মৃদুল তখন তার ছাদের রুমে শুয়ে শুয়ে সেদিনিই তার বসের দেওয়া পেন ড্রাইভটা ল্যাপটপে লাগিয়ে তার নতুন প্রজেক্টের পুরো ঘটনাটা পরে যাচ্ছিলো।






ঘটনাটা নাকি এতটাই রহস্যময় ছিল যে তা লন্ডনের প্যারাসাইকলজি সোসাইটির সরকারি ওয়েব সাইটেও স্থান পেয়েছিল তেমনটাই পেন ড্রাইভে ছিল।






নিস্তব্দ রাতে মৃদুল খুব মন দিয়েই পরছিল যে প্রায় দশ বছর আগে ঘটে যাওয়া সেই রোমহর্ষক ঘটনাটা।






সেই বীভৎস ঘটনাটা ঘটে পুরুলিয়া আর ঝারখণ্ড বর্ডারে একটি জঙ্গল ঘেরা গ্রামে।






গ্রামটির নাম ছিল বীরপুর ।






সেই গ্রামের জমিদার বাড়িতে দেওয়ালির একদিন আগেই একটি রহস্যময় ঘটনাতে বাড়ীর সবারই অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়ে যায় কিন্তু কিছু কিছু অবাক ব্যাপার ঘটেছিল ।






যে জন্যই সেই বীরপুরের ঘটনা আজও একটা দুর্বোধ্য রহস্যই থেকে গেছে।






সেই দিনের ঘটনার সব থেকে বড় রহস্য ছিল যে মৃত কোন ব্যাক্তির শরীরে একফোঁটাও রক্ত ছিল না।






শরীর গুলো যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেছিলো, তার পরের আরেকটা আশ্চর্য বিষয় ছিল যে পুলিশ আর সি আই ডি মিলে তন্ন তন্ন করে খুজেও গোটা বাড়িতে একটাও হাত, পায়ের ছাপ খুজে পাননি শুধু ঘরের বাগানে বিশাল বিশাল মানুষের পায়ের ছাপ দেখতে পেয়েছিলেন, কিন্তু অতবড় ছাপ পৃথিবীর কোন মানুষের হয় তা ও কেউ বলতে পারেনি।






তবে আসল খেলাটা শুরু হয়েছিল ঠিক এই ঘটনার একমাস পর থেকেই ।






যখন তখন গ্রামের বাড়িগুলো থেকে ছোট বাচ্চারা হারিয়ে যাচ্ছিলো আর পরেরদিন তাদের রক্ত শূন্য দেহ গুলো কে সেই জমিদার বাড়ীর বাগানেই পরে থাকতে দেখা যাচ্ছিলো।






গ্রামের মানুষরা ওঝা আর একটা ত্রান্তিকও ডেকে এনেছিল কিন্তু তাদেরও সেই একই অবস্থায় পাওয়া যায় জমিদার বাড়ীর বাগানে রক্ত শূন্য অবস্থায়।






পুলিসের সাহায্যও নিয়েছিল গ্রামবাসীরা কিন্তু পরপর দুটো পুলিসও এই একই ভাবে মৃত্যু বরন করে নেওয়ার পরে বাকি পুলিসেরা হাল ছেড়ে দেয় আর গোটা গ্রামকে গ্রাম একেবারেই ফাঁকা হয়ে যায়।






তাই সেই গ্রামটা কে লন্ডনের প্যারা সাইকলজি সোসাইটি নামই দিয়ে দিয়েছিল ”ঘোস্ট ভিলেজ” বা ”ভূতুড়ে গ্রাম”






তবে মৃদুল কে এইসব গল্পগাথা ভাবাছিল না তাকে ভাবাছিল একটা নাম






”আদিতি” মৃদুল সেই বসের দেওয়া পেন ড্রাইভেই জানতে পারে যে একটা রটনা ছিল যে সেই জমিদার বাড়ীর এক মেয়ে ছিল যার নাম ছিল অদিতি,






সে নাকি পরম সুন্দরী ছিল ।






সে তার গৃহশিক্ষক কে ভালবেসে বিয়ে করতে চেয়েছিলো কিন্তু তার সেই গৃহশিক্ষক নাকি আচমকা হারিয়ে যায়,






সবারই ধারণা যে অদিতির বাড়ীর লোকেরাই এই কাণ্ডের পেছনে ছিল।






এই ঘটনার পর থেকে অদিতি একদমই নাকি পাল্টে যায়, অত হাসিখুশী প্রানবন্ত একটা মেয়ে পাথরের প্রতিমার মত হয়ে যায়।






তবে সবচেয়ে যে ব্যাপারটাই মৃদুল অবাক হয়েছিল যে সেই দিনের বীভৎস হত্য কাণ্ডে নাকি অদিতির লাশ পাওয়া যায়নি।






মৃদুল এই কেসটা হাতে নেবার পরেই এই ব্যাপারে অনেক খোঁজখবর নেয় আর তখনই সেই ঘটনাটা ঘটে।






তিনদিন আগে গভীর রাতে হটাৎই মৃদুলের মোবাইলে একটা অদ্ভুত নম্বর থেকে ফোন আসে, মৃদুল তখন তার এই রিসার্চ নিয়ে ব্যাস্ত ছিল তাই সে প্রথমে নম্বর না দেখেই ফোনটা রিসিভ করে আর একদম চমকে যায়।






ফোনের ওপার থেকে একটা নারী কণ্ঠের আওয়াজ আসে ,সে বলে






” আমি অদিতি মৃদুলবাবু, আপনি আসবেন না দয়া করে আসবেন না এই বীরপুরে না হলে ওই শয়তান আপনাকেও খেয়ে নেবে , এই কেসটা ছেড়ে দেন”






বলেই ফোনটা কেটে যায়।






মৃদুলের চমকে উঠার কারন ফোনটা বা অদিতি নামটা নয়, সে চমকালো কারন যখন ফোনটা আসে তখন যেন আচমকা মৃদুলের মনে হয় কথা গুলো যেন পাতাল থেকে ভেসে আসছে।






তার এই হতভম্ব ভাব কাটিয়েই মৃদুল ঘুরে নম্বরটায় ফোন করে আর একটা যান্ত্রিক আওয়াজ শোনে ” এই নম্বর কা কোই অস্তিত্ব নেহি হ্যায়”
 
Last edited:
ঘোড়ার আড়াই চাল ২




মৃদুল সে রাতে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক চেষ্টা করেও এই নম্বরটা লাগাতে চেষ্টা করে যায় কিন্তু অসফল হয়।






প্রথমে মৃদুল ভাবে এটা ওই শঙ্করের নতুন কোন বদমাইশি কিন্তু তার রিপোর্টার মন যেন এই ঘটানায় অস্বাভাবিক একটা কিছু অনুভব করে ।






এই ঘটনাটা পর পর তিন দিন ধরেই ঠিক রাত বারোটা বেজে দশ মিনিটেই হয় আর মৃদুল যেন আস্তে আস্তে অনুভব করে যে তাকে অদিতি আর বীরপুর টানছে খুব বেশী করেই টানছে।






পরেরদিন অফিসে পৌঁছেই মৃদুল সোজা তার এডিটারের সঙ্গে দেখা করে তার বীরপুর যাবার ব্যাপারে কনফার্ম করে দেয়।






এডিটারের অফিস থেকে বেরোতেই তার সঙ্গে সোনালির আর শঙ্করের সঙ্গে দেখা।






মৃদুল তাদেরকেই খুজছিল কারন রাজু ,সোনালি আর শঙ্কর এই তিনজনই তার টিম আর এই টিম ছাড়া সে কোন স্টোরিই কভার করতে যায় না।






মৃদুল তার নতুন প্রজেক্টের কথা উচ্ছাসের সঙ্গে বলতে গিয়েও নীলকান্ত কর্মকার কে দেখে চুপ করে যায়,






শঙ্কর এইভাবে তার বসের হটাত চুপ করে যাওয়া দেখেই বুঝে নেয় যে নিশ্চয় কোন ব্যাপার আছে






আর চোখ ঘোরাতেই নীলকান্ত কর্মকারের বাঁদরের মত মুখটা দেখেই শঙ্কর তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই কিছু বলতে যাচ্ছিলম কিন্তু মৃদুলের চোখের ইসারাতেই সবাই নীলকান্ত কে পেছনে ফেলে রেখে ক্যান্টিনে চলে গেল।






ক্যান্টিনের ভিড়েই যেন মৃদুল হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো কারন আর একটু হলেই হয়তো নীলকান্তর সামনেই সে তড়বড় তড়বড় করে তার আগামী প্রজেক্ট পাওয়ার আনন্দ প্রকাশ করে ফেলত ।






আর তাহলেই হয়তো ”নিলু কাকু” একটা না একটা ব্যাগরা দেওয়ার চেষ্টা করতই।






”নিলু কাকু”

শুনে অবশ্য কেউ যেন নীলকান্ত কর্মকার কে বয়স্ক না ভেবে বসে, তার এই নামটাও শঙ্কর বাবুরই দান!






নীলকান্ত এতটাই পাকা আর এত বিজ্ঞ তার হাবভাব যে তার এই নামকরণ করেছিলো শঙ্কর আর সেই থেকে এই নামটাই চালু হয়ে গিয়েছে মৃদুলের পুরো টিমের কাছে।






নীলকান্তের খুব হিংসা মৃদুলের উপর আর সে সবসময়ই চেষ্টা করে যাতে সে মৃদুলের থেকে বেশী ফেমাস আর বড় সেলিব্রিটি হয়ে যায় আর এইজন্য সে নোংরামি করতেও একফোটা পিছপা হয়না।






নিলুর এই স্বভাবের জন্যই ওকে এই গোটা অফিসে কেউ সহ্য করতে পারে না।






তবে মৃদুলের মাথায় এখন আর নিলুর চিন্তা ছিল না , সে তার আগামী দিনের প্ল্যানটা এইবার তার টিমের কাছে বললো।






তবে মৃদুল যে রকম উচ্ছাস আসা করেছিল তা কিন্তু সে দেখতে পেলনা তার টিমমেটদের মধ্য।






একমাত্র শঙ্করই উল্লাস করে উঠে বললো






”গুরু এইবার আমরা ভুত ধরবো? সাবাস শুনেই আমি আনন্দে ছটফট করছি যে কবে যাব”






এই উচ্ছাস শঙ্করের স্বাভাবিক আচরণেই পরে তাই মৃদুল খুব একটা মাথা ঘামালো না ।






তবে সে আসা করেছিলো যে অন্তত সোনালি উচ্ছসিত হবে তার সঙ্গে এই ভাবে বাইরে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে কিন্তু সোনালি একদমই চুপ করে ছিল।






এইবার রাজু মুখ খুললো , সে বলে উঠলো






” কিন্তু ছোটকুদা তুমি ওই বীরপুর গ্রামে চলে গেলে আমাদের যে কেসটা নিয়ে এখন তদন্ত করছি তার কি হবে?”






রাজুর কথা শুনে এইবার মৃদুলের সেই কেসটার কথা মনে পরে গেল।






মাস খানেক আগে তাকে একটা নতুন কেস দেওয়া হয়, একটা বাচ্চাদের হোমে তিনটে বাচ্চার মৃত্যু।






সেই মৃতদের মধ্য ছিল একটা ছেলে আর দুটো মেয়ে।






ছেলে মেয়েগুলির কারুরই বয়েস দশ পেরোয়নি ।






কিছুদিন তদন্তের পরে কিছু হদিস না পেয়েই যখন মৃদুল হতাশ হয়ে পড়েছিল আর তার রিপোর্টে এটাই উল্লেখ করতে যাচ্ছিলো যে সবাই মনে হয় অপুষ্টি আর অসুস্থতার জেরেই মৃত ,






তখনই সে একটা বেনামি ফোন পায় আর সেই ফোনের কণ্ঠস্বরের মালিক তাকে দুদিন পরে বিকেলে চায়না টাউন ( ট্যাঙরা) তে দেখা করতে বলে।






কিন্তু সেইদিনই সব পাল্টে যায় কারন বিকেলেই তার এডিটার তাকে ডেকে এই ভূতুড়ে গ্রামের কেসটা দেয় আর সেইদিন রাত থেকেই সেই রহস্যময় ফোনটাও আসা শুরু হয়।






এই দুই মিলেই মৃদুলের মাথা থেকে সেই হোমের কেসটা একদম মুছেই দিয়েছিল।






এখন রাজুর কথায় তার মনে পরে।






মৃদুল উৎসুক ভাবে বলে






”তুই কি কিছু আপডেট পেয়েছিস কেসটার ব্যাপারে?”






রাজু শান্ত স্বরে বলে






” আমি গিয়েছিলাম সেইদিন বিকেলে ট্যাঙরা কিন্তু গিয়ে দেখে একটা লোক রাস্তায় এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে আর জায়গাটা পুরো ভিরে থিকথিক করছে তাই আমি চলে আসি আর নতুন কিছু আপডেট নেই”।






মৃদুলও এইবার বলে






”শোন ওই হোমের ব্যাপারে যে ফোন করেছিল মনে হয় সেই ব্যাপারটাও ফলস, কেউ হয়তো ইয়ার্কি মেরেছিলো না হলে সে ঘুরে ফোন করলো না কেন? ছাড়তো পুরনো ব্যাপার এইবার নতুন কেসটা নিয়ে ভালো করে ভাব”






বলে মৃদুল টেবিল ছেড়ে উঠে পরে।






কিন্তু এতকিছু কথার মধ্য সোনালি যে একটাও কথা বলেনি সেটা মৃদুল তার নতুন প্রজেক্টের উত্তেজনায় খেয়ালও করেনি।






মৃদুল আর শঙ্কর বেরিয়ে যেতে রাজুও বেরিয়ে যায়, সেই ফাঁকা টেবিলে তখন শুধু সোনালি একাই বসেছিল আর নিজের মনেই যেন কি ভেবে যাচ্ছিলো।






যথারীতি সেই দিন রাত বারোটা দশেও সেই ”অদিতির” ফোন আসে আর সেই একই কথার পুনরাবৃত্তি করেই ফোনটা কেটে যায়।






মৃদুল নিজে একটা সর্বভারতীয় নিউস চ্যানেলের রিপোর্টার ,তার পক্ষে একটা মোবাইল ফোনের নম্বর বার করা খুব একটা কঠিন কাজ নয় কিন্তু এই নম্বর ডিটেলস মৃদুল চেষ্টা করেও পায়নি ।






সব জায়গা থেকেই শুধু একটাই জবাব এসে ছিল যে এই নম্বরের কোন অস্তিত্বই নেই।






একমাত্র মৃদুলের ছোটবেলার বন্ধু মনোজ, যে এখন একটা মোবাইল কোম্পানির রিজনাল হেড সে বলেছিল






”দেখ নম্বরটা থেকে ফোন যখন হয় তবে তো সেটা ভূতুড়ে হতে পারেনা, তুই আমাকে কিছুদিন সময় দে আমি ঠিকই খুজে বার করবো এই নম্বরের মালিক কে”






এরপরে মৃদুলের মাথা থেকে সব বেরিয়ে গেছিলো শুধু একটাই জিনিষ তাকে টানছিলো বীরপুর আর অদিতি।






মৃদুল সবচেয়ে মুশকিলে পরে গেছিলো তার বড় বউদিকে রাজী করাতে,






কিন্তু ভগবানের অসীম দয়া যে বড় বউদিও খুব একটা ঝামেলা না করেই অনুমতি দিয়ে দিয়েছিল তবে অবশ্যই একটা শর্তে যে মৃদুল কে এই ট্যুর থেকে ঘুরে এসেই বিয়ে করতে হবে।






বড় বউদি জানতো না যে মৃদুলও মনে মনে এটাই চাইছিল আর সে ভেবেও রেখেছিলো যে এইবারেই সে সোনালি কে তার মনের কথা বলে দেবে।






পরেরদিন থেকে মৃদুল খুব ব্যাস্ত হয়ে পড়েছিলো তাই সে তার টিমমেটদের ভালো করে লক্ষ্য করেনি, করলে দেখতে পেত যে রাজু আর সোনালি যেন কোন গভীর চিন্তায় ডুবে ছিল।






লাঞ্চের টাইমে মৃদুল তার লাস্ট মিনিটের কাজ সেরে নিচ্ছিলো তখনই তার দরজা ঠেলে রাজু ঢোকে আর বলে






”ছোটকুদা একটা ব্যাপার আমি কয়েকদিন ধরেই বলবো বলবো করছিলাম কিন্তু সময় সুযোগ পাচ্ছিলাম ,তুমি কি একটু সময় দেবে? খুবই জরুরী কথা ছিল”






মৃদুল তখন এতটাই ব্যাস্ত ছিল যে সে পুরো কথা না শুনেই বলে






” পরে রে রাজু পরে আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি নাকি? পরে বলিস এখন পারলে আমাকে এই প্রোগ্রাম সেটিঙে একটু হেল্প কর”






বলে নিজের ল্যাপটপের প্রোগ্রাম নিয়ে আবার ব্যাস্ত হয়ে পরে।
 
ঘোড়ার আড়াই চাল ৩




রাজু একটুক্ষণ দাড়িয়ে চুপ করে মাথা নামিয়ে ঘর ছেড়ে চলে যায়।






পরেরদিন ভোরেই একটা স্ক্রপিও গাড়ীতে করে রাজু, সোনালি, শঙ্কর আর মৃদুল তাদের অফিসের পুরনো ড্রাইভার বাপ্পার সঙ্গে বীরপুরের দিকে রওনা দেয়।






শঙ্কর আর মৃদুল একদম উৎসাহে যেন ফুটছিল, আর ততটাই চুপ মেরে ছিল সোনালি আর রাজু।






রাস্তা যত নির্জন হয়ে উঠছিল মৃদুল যেন ততই টান অনুভব করছিল সোনালির প্রতি,






বার দুয়েক ইসারাও করে শঙ্কর কে যাতে সে সোনালি কে মৃদুলের মনের ব্যাপারটা বলে,

কিন্তু শঙ্কর মৃদুলের ছটফটানি দেখে শঙ্কর খুব মজা পেয়ে গেছিলো তাই সে মৃদুল কে আরও জ্বালাবার জন্যই নিজে সোনালির সঙ্গে গল্পে মেতে উঠেছিল আর মাঝে মাঝে মজা পাওয়ার দৃষ্টিতে মৃদুলের দিকে তাকিয়ে শুধু মুচকি মুচকি হাসছিলো।






কিছুক্ষণ পরে তাদের গাড়ীটা একটা ধাবা দেখে থামাতে বলে মৃদুল কারন তারা এনেক্ষনই বেরিয়েছে আর এখনও তাদের কিছু খাওয়া হয়নি ,






গাড়ী থামতেই সোনালি যেন একটু বেশীই তারাতারি গাড়ী থেকে নেমে পাশের জঙ্গলের দিকে চলে গেল আর ফাজিল শঙ্কর সেটা দেখে মুখে হাসি নিয়ে মৃদুল কে দেখে চোখ টিপল।






মৃদুল মাঝে মাঝে ভেবে পায়না যে শঙ্কর এত শয়তানী কোথা থেকে শিখল !






ফাঁকা ধাবার বাইরে একটা দড়ির খাটিয়া তে বসে মৃদুল খাবারের অর্ডার দিতে দিতেই সোনালি এসে পৌছায় ।






সোনালি একদম তার নামের মতই দেখতে, যেন সোনা দিয়ে বানানো।






একটু মেদবহুল হলেও তাকে মোটা বলা যায়না, আর চশমা থাকলেও তার সুন্দর চোখগুলির সৌন্দর্য কিন্তু কমেনা ,






আর তার চুলের সঙ্গে তো একমাত্র তুলনা হয় কালো মেঘের, তার চুলের বহর এতটাই যে সোনালি সবসময় শশব্যাস্ত হয়ে যায় তা সামলাতে সামলাতে ।






তবে সোনালির সবচেয়ে সুন্দর হল তার পরিপূর্ণ চেহারা যেটা তাকে তার এই রূপের সঙ্গেই মানায়।






মুখে জল দিয়ে আসা সোনালির সামনের কিছু চুলের ভেজা অংশ থেকে যখন টপটপ করে জলের ফোটা গুলি পরছিলো তখন মৃদুল যে কিভাবে নিজেকে সংযত করে রেখেছিলো তা বোধহয় ভগবানই জানেন।






খাবার আসতে আর কেউ কিছু কথা না বলে সবাই ক্ষুদার্থের মতই খেতে আরম্ভ করে দেয়।






মৃদুল কিন্তু খেতে খেতেই তার রিপোর্টার স্বত্বাকে আবার জাগিয়ে তোলে আর খাবারের থালা হাতেই উঠে যায় ধাবার মালিকের কাছে যদি গল্পছলে কিছু জানা যায় বীরপুরের জমিদার বাড়ীর সম্বন্ধে।






কারন মৃদুল বীরপুরের জমিদার বাড়ী সম্বন্ধে ততটাই জানে যতটা তার বস তাকে নিজের পেন ড্রাইভে লোড করে দিয়েছিলো।






আর মৃদুল নিজের এই চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতাতে ভালো করেই জানে যে চাওয়ালা আর মুদীর দোকান মালিক বা একদম নিচুস্তরের লোক যতটা খবর রাখে এতটা হয়তো পুলিস বা রিপোর্টাররা ও হয়তো পায়না।






মৃদুল কে উঠে আসতে দেখে ধাবার মালিকটা তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াতে যায় কারন এই জায়গাটা অজ পাড়াগাঁ হলেও টিভি আছে আর টিভির দৌলতে মৃদুল কে মোটামোটি গোটা বাংলায় সবাই চেনে।






মৃদুল হাতের ইশারায় হোটেল মালিক কে বসতে বলে , আর বলে






” তোমার রান্নার হাত তো দারুন”






হোটেল মালিক এইবার যেন একটু স্বস্তি পায় কারন মৃদুল কে উঠে আসতে দেখে সে প্রথমে ভেবেছিলো যে হয়তো তার খাবার সম্বন্ধে কোনও অভিযোগ করতে এসেছেন টিভি বাবু।






মৃদুল ভালো করেই জানে যে কিভাবে একটা মানুষকে নিজের দিকে টানতে হয় তাই প্রথমেই সে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়ে মানুষটার কাছে নিজেকে কাছের লোক হিসাবে প্রতিপন্ন করতে হয় আর মৃদুল খুব সহজেই এই প্রথম কাজটা সম্পন্ন করে ফেলে।






এইবার মৃদুল কথায় কথায় জানতে চাই বীরপুরের জমিদার বাড়ীর সম্বন্ধে আর মৃদুল দেখে যে বীরপুর নামটা শুনেই লোকটা তাড়াতাড়ি নিজের জামার ভেতর থেকে ঠাকুরের ছবি বার করে মাথায় ঠেকিয়ে নিজের মনেই বিড়বিড় করে কি একটা মন্ত্র বলে চলে।






মৃদুলও অপেক্ষায় ছিল তার এই মন্ত্রউচ্চারন থামার, মানুষটি থামলেই মৃদুল এইবার আস্তে করে জিজ্ঞেস করে






” কি হলো দাদা এত ভয় পেয়ে গেলেন যে? কি এমন ব্যাপার যে বীরপুরের নাম শুনেই আপনার মুখ শুকিয়ে গেল?”






লোকটি মৃদুলের প্রশ্নের উত্তরে শুধু মৃদুল কে দেখে বলে






”বাবু আপনিও ও জায়গার নাম নেবেন না ওটা অভিশপ্ত জায়গা, ওটার নাম করলেই অনিষ্ট হয়, ওটা শয়তানের ডেরা”






বলে আবার ঠাকুরের ছবিটা কে নিজের হাতের মুঠোয় ভরে নেয়।






মৃদুল বুঝতে পারে যে এই লোকটি আর কোন কথা বলবে না, যা করার তাকেই করতে হবে তাই আর সময় নষ্ট না করে মৃদুল এইবার বাইরে এসে তাড়া লাগায় সবাইকে আর বলে






”চলো জলদী করো, এইবার বেরোতে হবে” ।






মৃদুলের গলার এই স্বরটা সবারই চেনা, এখন যে মৃদুল আর কারুর বন্ধু নয় সে এখন যে এই টিমের বস তার এই গলা শুনেই সেটা সবাই বুঝে গেল।






এতক্ষণ ধরে মৃদুলের মনে যা কিছু হাল্কা ব্যাপার ছিল তা সবই এখন যেন খিড়কীর দোর দিয়ে বেরিয়ে গেছিলো।






এইবার মৃদুলের মাথায় আর কিছু নেই শুধু বীরপুরের জমিদার বাড়ী আর অদিতির ফোন ছাড়া কারন মৃদুলের শিকারি নাকে রহস্যর গন্ধ পৌঁছে গেছিলো ।






বাপ্পার পাশে বসে মৃদুল এইবার তাকে তাড়া লাগায় জলদি চালাবার জন্য।






ফাঁকা রাস্তায় বাপ্পার এক্সপার্ট হাত স্করপিওটাই যেন ঝড় তুলে দেয় আর একঘণ্টার মধ্যই সবাই পৌঁছে যায় সেই অভিশপ্ত গ্রামের সিমানাতে।






এইবার মৃদুল তার টিমমেটদের নিয়ে গাড়ীর মধ্যই একটা ছোট্ট মীটিং সেরে ফেলে।






এই মিটিঙটাই ঠিক করে দেবে এই মিশনটা তারা কিভাবে হ্যান্ডেল করবে আর সফল হবে।






প্রথমেই মৃদুল বলে






” আপনারা সবাই জানেন যে এই মিশনটা কতটা জরুরী আমাদের কাছে, কারন এখন আমার কাছে যা খবর তাতে হয়তো খুব শিগগিরিই আমাদের সবাইকে ট্রান্সফার করে দেবার কথা চলছে আর এমন জায়গায় যাতে আমরা বাধ্য হয়েই এই কাজটা ছেড়ে দিয়, কিন্তু যদি আমরা এইখান থেকে সফল হয়ে যেতে পারি তাহলে ওই এডিটারের বাবারও ক্ষমতা নেই আমাদের কিছু করার তাই যেমন ভাবেই হোক আমাদের কে সাফল্য পেতেই হবে”






এইবার শঙ্কর উত্তেজিত হয়ে কিছু বলতে যায় এডিটারের বিরুদ্ধে কিন্তু মৃদুল তাকে মাঝ পথে থামিয়ে বলে






” আমাদের এখনই নিজের নিজের কাজ বুঝে নিতে হবে আর আমি আশা করছি যে সবাই আমরা নিজের কাজ দায়িত্ব নিয়েই করবো”






বলে মৃদুল প্রথমেই শঙ্করকে বলে






” তুই নিজের ক্যামেরা বাদ দিয়েও আমাকে একটা হিডেন ক্যামেরা লাগিয়ে দিবি আমার জামার বোতামে কারন অনেক গ্রামবাসীই হয়তো ক্যামেরা দেখে ভয়ে মুখ খুলবে না”






এইবার মৃদুল সোনালি কে বলে






”এখন থেকে তুমি আর রাজু গ্রামের লোকের কাছে স্বামী স্ত্রী হিসাবে পরিচয় দেবে তাতে যদি তোমরা সন্দেহের বাইরে থাকো কারন আমি এই কেসটাকে চারিদিক থেকেই জাল ফেলে গুটিয়ে আনতে চাইছি আর এই কেসটাই হবে আমাদের টিমের সবচেয়ে বিখ্যাত শলভ কেস”






মৃদুলের প্ল্যান যে সোনালির খুব একটা ভালো লাগেনি তা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো আর এটা মৃদুলের সঙ্গে শঙ্কর লক্ষ্য করেছিল,






ফাজিল টা এইবার নিজেকে আর সামলাতে না পেরে বলেই দেয়






” কৃষ্ণের বিরহে রাধা কাঁদে আর সোনালির বিরহে কাঁদে একটা গাধা”






এটা বলেই কিন্তু শঙ্কর ছুটতে লাগে নিজেকে মার খাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে।






মৃদুলের মুখেও এইবার হাসি ফুটে উঠে আর সেও হাসি মুখে তাড়া করে শঙ্করকে।






মৃদুল যদি একবার পেছন ফিরে দেখত, তাহলে সে দেখতে পেত যে তাদের এই ছেলে খেলা দেখেও কিন্তু রাজু আর সোনালির মুখে হাসি ছিলনা।






এইবার রাজু আর সোনালি তাদের নতুন পরিচয়ে গ্রামের দিকে এগিয়ে যায় আর অবাক হয়ে যায় এটা দেখে যে গোটা একটা গ্রাম কিভাবে ফাঁকা হয়ে পড়েছিল।






প্রতিটা বাড়ীই একদম খাঁখাঁ করছিল,






কিন্তু অবাক ব্যাপার হল যে বাড়ী গুলি দেখে কিন্তু মনে হচ্ছিলো না যে সেগুলিতে কেউ থাকে না বরঞ্চ মনে হচ্ছিলো যেন ঘর দোর পরিষ্কার করে এইমাত্র কেউ যেন তার ঘর ছেড়ে চলে গিয়েছে।
 
ঘোড়ার আড়াই চাল ৪



রাজু আর সোনালি এইবার বিরক্ত হয়ে যায় কারন তারা খুজে খুজেও একটা মানুষ পায়না যার কাছে তারা আশ্রয় চাইতে পারে,






সোনালি তো মুখ ফুটে বলেও দেয়






” এটা কি হচ্ছে রাজু, মৃদুল দা তো ভালো করেই জানতো যে এই গ্রামটা ফাঁকা তাহলে আমাদের এইভাবে নতুন রূপ দেওয়ার কি দরকার ছিল? আর আমরা কি তবে এইবার ভুতের ইন্টার্ভিউ নেব নাকি?”






রাজু তাড়াতাড়ি সোনালির দিকে তাকিয়ে চুপ করতে বলে,






আর ইসারায় ওই দুরের দিকে দেখায়।






সোনালিও রাজুর দেখানো দিকে তাকিয়ে দেখে যে একটা মানুষ একটা পাকা বাড়ীর উঠোনে বসে ছিল আর এক দৃষ্টিতে তাদের দিকেই তাকিয়ে ছিল,






রাজু আর সোনালি আস্তে আস্তে সেই বাড়ীর দিকেই এগোয় আর দেখে একটা বৃদ্ধ মানুষ তাদের দিকেই এমন ভাবে তাকিয়ে ছিল যেন মনে হয় এর আগে সে হয়তো মানুষই দেখেনি তার এই চোখে।






তবে সোনালি আর রাজুর যেন হাঁটার গতি বেড়ে গেল এতক্ষণে একটা জ্যান্ত মানুষ দেখে তা সে মানুষ যেমনই হোক।






সোনালি আর রাজু যখন পৌছায় সেই অতিবৃদ্ধ মানুষটির কাছে তখন রাজু যেন অবাক হয়ে দেখে যে মানুষটির চোখগুলি যেন কিরকম অস্বাভাবিক জ্বলজ্বল করে জ্বলছিল






, রাজু যেন একটু আশঙ্কিত হয় এই রকম শ্বাপদের মত চোখ দেখে, কিন্তু সোনালির কোনও ভাবান্তর ছিলনা।






তার আদুরে শরীর তখন হেটে হেটে এতই ক্লান্ত যে কোন দিকে না তাকিয়ে বসে পরে আর ক্লান্ত আর আদুরে স্বরে বুড়ো মানুষটিকে বলে






”দাদু আমরা এনেক দুর থেকে এসেছি আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই , আমরা কি একটু বসতে পারি এইখানে? প্লিস”






বলে সোনালি তার ভুবন ভোলানো হাসিটি হাসে বুড়ো মানুষটির দিকে তাকিয়ে।






রাজু জানতই যে সোনালি তার এই আদুরে হাবভাব দিয়ে অনেক জায়গায় যেভাবে তার কাজ সহজেই হাসিল করে এইখানেও সে তা সফল ভাবেই করবে ,






কিন্তু রাজু এইবার চমকে যায় বুড়োটির চোখ দেখে।






সেই চোখ যেন সত্যি করেই এক শ্বাপদের চোখ,সেই চোখ যেন তার শিকারের অপেক্ষাতেই ছিল।






সোনালি ততক্ষণে তার শাড়ীর আঁচল দিয়ে বারান্দাটা ঝেড়ে জমিয়ে বসে পড়েছিলো।






সোনালি ততক্ষণে নিজের মনেই সেই বুড়োটার সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছিলো, তবে একতরফায় কারন বুড়োটা একদমই চুপচাপ ছিল শুধু তার চোখগুলিই যেন কথা বলে যাচ্ছিলো।






আর রাজুর অস্বস্তিও যেন বেড়ে যাচ্ছিলো কারন রাজুর মস্তিষ্ক তাকে এই গ্রামের মিশনের প্রথম থেকেই বিপদের সিগন্যাল পাঠিয়ে যাচ্ছিলো।






এইবার বুড়োটার গলা শুনে রাজু নিজের চিন্তা ঝেড়ে ফেলে বুড়োটার দিকে মন দেয় আর শোনে বুড়োটা তার সর্দিতে বসে যাওয়া গলাতে বলে






” তোমাদের যতদিন না যাবার ব্যাবস্থা হয় ততদিন তোমরা এই বাড়িতেই থাকতে পারবে”






এইবার সোনালির মুখে একটু হলেও যেন হাসি ফোটে।






বুড়োটা তাদের দুজন কে আরেকবার ভালো করে দেখে নিয়ে বলে






”কিন্তু তোমাদের একটা ব্যাপার মেনে চলতে হবে, তোমরা আমাকে না জিগ্যেস করে কিন্তু ঘর থেকে বেরোবে না কারন এইখানে শয়তানের বাস”






এইবার সোনালিও যেন একটু চমকে যায়।






ততক্ষণে বিকেল প্রায় শেষ হয়ে এসেছে আর রাত নামছে আস্তে আস্তে এই রহস্য মোড়া গ্রামটিতে,






বুড়োটি এইবার কোনরকমে উঠে দাড়ায় আর তার কাঁপা কাঁপা হাতে আস্তে করে ঘরের দরজা ঠেলে খুলে দেয়, আর বলে






”তোমরা এইবার ভিতরে চলে যাও,কারন বিকেল পেরিয়ে গেছে আর সেই শয়তানের এইবার জাগার সময়”






এতক্ষণ ধরে যে সোনালি তার মুখে মোহিনী হাসি ঝুলিয়ে রেখেছিলো এই কথা শুনেই যেন তার হাসি আতঙ্কে বদলে গেল আর তাড়াতাড়ি সে রাজুকে প্রায় ঠেলেই ঘরে ঢুকিয়ে নিজেও তার পেছনে ঘরে ঢুকেই খিল লাগিয়ে দিল।






সোনালির এই রকম অস্বাভাবিক আচরণে রাজু একটু অবাক হলেও মুখে কিছু বললো না,






তবে একটা ব্যাপার রাজু না জিগ্যেস করেও থাকতে পারছিলো না সোনালি কে, এইবার ঘরে ঢুকে রাজু সেই সুযোগটা পেল আর প্রথম সুযোগেই জিজ্ঞেস করে নিল।






রাজু সোনালি কে বলে






” তুমি কিভাবে ওই বুড়োটাকে মানিয়ে নিলে আমাদের এই আশ্রয় পাওয়ার ব্যাপারে?”






রাজুর এই প্রশ্নেই এতক্ষণে যেন সোনালির মুখে আবার হাসি ফুটে ওঠে আর সে ঘর আলো করে দেওয়া হাসি নিয়েই বলে






”শোন এগুলো না আমার কাছে জলভাত বুঝলে, আমি বুড়োটাকে বললাম যে তুমি আর আমি বিয়ের পর প্রথম বার ঘুরতে বেরিয়েছিলাম আর এই গ্রামের জমিদার ছিল আমাদের দূরসম্পর্কের কাকা তাই ওনার সঙ্গে প্রায় বারো বছর পরে আমরা একসঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম কিন্তু গ্রামের যে এই অবস্থা তা তো আমরা জানতাম না তাই আমাদের গাড়ীটাও আমরা তিন দিনের জন্য ছেড়ে দিয়েছি । আমার এই সুন্দর রূপ আর অসহায় অবস্থার কথা শুনেই তো তিনি আমাদের কে থাকতে দিলেন বুঝলে রাজু বাবু”






বলে তার সাফ্যলে সোনালি আবার খিলখিল করে হেসে দেয়।






রাজু সবকথা শুনে পরে ভাবে যে না মেয়েটার বুদ্ধি আছে, তখনই বাইরের দরজায় খট খট করে একটা শব্দ হয় আর রাজু দরজা খুলতেই দেখে যে বুড়োটা হাতে একটা হ্যাজেকের আলো নিয়ে দাড়িয়ে আছে।






রাজুর দিকে ভ্রূক্ষেপও না করে বুড়োটা সোনালি কে বলে






” তোমারা আজকে রাতে একটু শুকনো খাবার খেয়েই কাটিয়ে দিতে পারবে? কারন বাজার তো কিছুই নেই তবে কালকেই সব ব্যবস্থা করা যাবে”






সোনালি জবাব দেওয়ারা আগেই রাজু বলে উঠে






” ঠিক আছে যা আছে আমরা তাতেই কাজ চালিয়ে নেব”






বুড়োর কিন্তু রাজুর এই আগ বাড়িয়ে জবাব দেওয়াটা একদমই ভালো লাগে না আর সে বিরক্ত হয়ে রাজুর দিকে শুধু একটা নীরব দৃষ্টিতে তাকায়।






সেই চোখ দেখে রাজুর যেন আবার বিকেলের স্মৃতি ফেরত চলে আসে কিন্তু রাজু এতদিনের ঝানু সাংবাদিক তাই সে ভালোই জানে যে কিভাবে নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে হয়।






এইবার সোনালি তাদের রাতের খাবার আনার জন্য ঘর থেকে বের হয় আর বুড়োটাও তার পেছনে পেছনে যায়,






কিন্তু রাজুর মনে হটাৎই একটা খটকা আসে আর খটকার নিরসন করার জন্য রাজু তার মোবাইল বার করে মৃদুল কে ফোন করার জন্য সবে রাজু ফোনটা লাগিয়েছে আর তার খটকার কথাটা বলতে গেছে তখনই সে দেখে যে বুড়োটা কখন যেন দরজার সামনে দাড়িয়ে তাকেই দেখছে।






ফোনের ওপর প্রান্তে তখন মৃদুল হ্যালো হ্যালো করে যাচ্ছিলো কিন্তু রাজু ফোনটা কেটে দেয় আর দেখে যে বুড়োটা তার দিকে তাকাতে তাকাতেই আস্তে আস্তে দরজা ছেড়ে বাইরে চলে যায়।






মুখে কিছু না বলেও বুড়োটার ওই ভাবে তাকানোতেই যেন এই শীতেও রাজুর ঘাম চলে আসে।






ঘর ফাঁকা হতেই রাজু আবার তার ফোনটা টেনে বার করতেই সে দেখে যে মোবাইলে একদমই চার্জ নেই, রাজুর মন এইবার কুডাক ডাকে আর তার শুধু মনে হয় দেরি হয়ে গেল না তো?






ওইদিকে শঙ্কর, বাপ্পা আর মৃদুল প্রথমেই সোজা চলে যায় সেই জমিদার বাড়িতে।






এই গ্রামে প্রথম বার এসে মৃদুল ঠিকই খুজে বের করে নিয়েছিলো সেই অভিশপ্ত বাড়ীটা,






শঙ্করও অবাক হয়ে গেছিলো যে কিভাবে বস এখানে একবারও না এসে কিভাবে সোজা বাড়ীটা খুজে পেয়ে গেল!






শঙ্কর নিজের কৌতূহল না চেপে রাখতে পেরে এইবার মৃদুল কে জিজ্ঞেসই করে ফেললো






”বস তুমি যে ম্যাজিক জানো আগে বলোনি তো? নাহলে কি করে বাড়ীটা খুজে পেলে একবারেই?”






এইবার মৃদুল একটু হেসে বলে






”গান্ডু আমি ম্যাজিক জানি এটা তুই জানতিস না এতদিন আমার সঙ্গে থেকে?”






বলে শঙ্করের হতভম্ব মুখ দেখে মৃদুলের মায়া লেগে গেল আর এইবার বাড়ীটা খুজে পাওয়ার রহস্য ভেদ করে দিল।






মৃদুল বলে






” আরে ক্ষ্যাপা আমি আগেই এই জায়গাটার গুগল ম্যাপ দেখে নিয়েছিলাম বুঝলি?”






এইবার শঙ্কর বোঝে যে মৃদুল কেন তাদের বস!






মৃদুল কোনদিনও তার প্ল্যান আগাম খুব একটা খুলে কাউকে বলে না তাই সে যে আজকে সোজা বাপ্পা আর শঙ্করকে নিয়ে ওই অভিশপ্ত জমিদার বাড়িতেই রেকি তে যাবে সেটা কাউকে বলেনি।






এইবার তার প্ল্যান শুনে শঙ্কর উৎসাহিত হলেও বাপ্পার মুখটা যেন একটু শুকিয়ে গেল,

মৃদুল তার মিশনএ কোনরকম আবেগ বা ব্যাক্তিগত ভাল বা মন্দকে খুব একটা পাত্তা দেয়না।






এইবারও সে বাপ্পার ভয়, ভাবনা কে পাত্তা না দিয়েই তাকে গাড়ীটা সোজা সেই জমিদার বাড়ীতেই নিয়ে যেতে বলে।






বিকেল আর রাতের মাঝখানে একটু আলো ছায়ার মধ্য যখন তাদের গাড়ীটা সেই বিশাল বাড়ীটার বাইরে বাগানে দাড়ায় তখন সেই বাড়ীটাকে মনে হচ্ছিলো যেন একটা প্রাগেতিহাসিক কোন বিশাল জন্তু যে দাড়িয়ে আছে তার শিকারের অপেক্ষায়!






তাদের গাড়ী থামার শব্দে ওই বাগানের বিশাল বিশাল গাছ থেকে প্রচুর পাখী উড়ে যেতে থাকে, শঙ্করের যেন মনে হয় সে কোন জঙ্গলে আছে কারন তার চারিদিকে এত গাছ আর এত পাখির আওয়াজ।






মৃদুল ততক্ষণে গাড়ী থেকে নেমে গেছে আর ব্যাগ থেকে তার টর্চ বার করে নিয়ে বাড়ীটার দিকে এগিয়ে যায়, শঙ্কর আর বাপ্পাও এইবার দলছুট হয়ে যাবার ভয়ে মৃদুলের সঙ্গ ধরে।






বাড়ীটার সদর দরজাতে একটা বিশাল, জড়জীর্ণ তালা ঝুলছিল, সেই বিশাল সেগুন কাঠের দরজাটা যেন অনেক কিছুর সাক্ষী, তার সেই বিশাল কালো চেহারাটা যেন অনেক কিছু লুকিয়ে রেখেছিলো তার পেটের ভেতরে।






মৃদুল এইবার বাড়ীটার সামনে দিকে কিছু না করে পেছন দিকে চলে যায়, শঙ্কর আর বাপ্পা তার সঙ্গী হয়ে দেখে যে কীভাবে মৃদুলের মত একটা নামি রিপোর্টার চোরের মত লোকের বাড়িতে ঢোকার জন্য ফাঁক ফোকর খুজে যাচ্ছে।






ভাগ্য আজ মৃদুলের ভালোই মনে হয় কারন সে ততক্ষণে একটা ভাঙা জানলা আবিষ্কার করে নিয়েছিলো সেই বাড়ীটার ঢোকার রাস্তা হিসাবে ।






এইবার মৃদুল ভিতরে ঢুকতে উদ্যাত হলে শঙ্কর আর বাপ্পা যেন শক খায় কারন তারা ভেবেছিলো যে হয়তো আজ বাড়ীটা রেকি করে কাল সকাল থেকে হয়তো তার অনুসন্ধান শুরু করবে কিন্তু মৃদুলের মনে যে এই দুঃসাহসিক প্ল্যান ছিল তাই বা কে জানতো!






শঙ্কর আর বাপ্পার ভ্যাবলার মত মুখ দেখে এইবার মৃদুলের রাগই হয় আর সে তার এই রাগ গোপন না করেই রীতিমত বিরক্ত হয়েই বলে






” তোরা কি এইবার ধ্যান ,যজ্ঞ করবি নাকি তারপরে এই ঘরটায় ঢুকবি?”






শুনে শঙ্কর আর বাপ্পা আমতা আমতা করছে দেখে তার রাগ যেন আরও বেড়ে যায় আর মৃদুল আরও রেগে এইবার বলে






” ছাড় যা তোরা ঘরে গিয়ে দুদু খাগা, আমি একাই চললাম”






এইবার তো আর মৃদুলের সঙ্গী না হয়েও উপায় নেই তাই বাধ্য হয়েই শঙ্কর আর বাপ্পা মৃদুলের সঙ্গী হিসাবে ওই ভাঙা জানলা দিয়েই অভিশপ্ত ঘরটাতে ঢোকে।






তবে কেউ যদি তখন বাপ্পা আর শঙ্করের মুখটা দেখতে পেত তাহলে তার মনে হত যেন পাঁঠা বলির জন্য কেউ দুটো পাঁঠা কে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো হাড়িকাঠে।
 
ঘোড়ার আড়াই চাল ৫
[HIDE]
ঘরের ভেতরে পা দিতেই মৃদুলের মনে হল যেন কেউ আছে এই ঘরে,

তবে সেটা মানুষ না অন্য কিছু সেটা মৃদুল বুঝতে পারে না,

যতই ঘরের ভেতরে দিকে মৃদুল তার দলবল নিয়ে এগোয় ততই যেন তার এই অনুভতিতা আরও স্পষ্ট হয়ে যে এই বাড়িতে তারা ছাড়াও আরও কেউ আছে।

রান্না ঘরের জানলা দিয়ে ঘরে ঢোকার পর থেকেই মৃদুল শঙ্কর আর বাপ্পাকে ফিসফিস করে বলে দিয়েছিলো যেন কোনও অবস্থাতেই টর্চ না জ্বালে।

তারা এইবার রান্নাঘর ছেড়ে হলঘরে ঢোকে, সেই পড়ন্ত বিকেলের গোধূলি আলোতে মৃদুলের মনে হয় সে যেন কোন মায়াবি পুরীতে চলে এসেছে,

কারন এতদিনের অব্যবহারের পরেও সেই বিশাল হল ঘরটা কে দেখে মনে হচ্ছিলো কেউ যেন প্রতিদিন নিয়মিত ভাবেই এই হলঘরটা পরিষ্কার করে,

এতই তকতকে অবস্থায় ছিল সেই ঘরের প্রতিটি জিনিষপত্র।

এইবার মৃদুল ওপরের ওঠার সিঁড়িটা দেখতে পায় আর সেদিকে এগোতেই বাপ্পা এইবার দৌড়ে এসে মৃদুলের হাত ধরে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে

” মৃদুল দা আর না এইবার চলো বেরিয়ে পড়ি, আমার মনটা কেমন যেন কুডাক ডাকছে, প্লিস আজকে ছেড়ে দাও আমরা না হয় কালকে আবার আসবো”

মৃদুল এইবার আবার বিরক্তি বোধ করে আর বলে

”ঠিক আছে বাপ্পা তুই না হয় গাড়ীটা নিয়ে চলে যা, রাস্তার ধারে কোনও ধাবাতে রাতটা কাটিয়ে কাল সকাল বেলায় এসে আমাদের নিয়ে যাবি”

মৃদুলের কথাটা শেষ হতেই বাপ্পা আর দ্বিরুক্তি না করেই চুপচাপ সেই ভাঙা জানলা দিয়েই বেরিয়ে চলে যায়।

মৃদুল আর শঙ্কর একটু পরেই শুনতে পায় বাপ্পার গাড়ী নিয়ে চলে যাওয়ার শব্দ,

এইবার আর তাদের কোনও পিছুটান রইলো না আর শঙ্কর আর মৃদুল দুজনেই একসাথে বহু অ্যাডভেঞ্চার করেছে,

এমনকি ওরা একবার তো মাওবাদীদের ডেরাতেও পৌঁছে গিয়েছিলো,

ভাগ্যিস সেইবার তাদেরকে ওরা কিছু না করে ছেড়ে দিয়েছিলো, তাই শঙ্কর আর মৃদুল এইরকম পরিস্থিতিতে অভ্যাস্ত, তারা না ঘাবড়ে এই বার আস্তে আস্তে উপরের সিঁড়ি ধরে উঠতে লাগলো।

ওপরে উঠে তারা দেখে যে একদমই একই রকম আরেকটা হল ঘর, আর তখনই মৃদুলের মনে পরে যায় যে এই হল ঘরটাতেই নাকি সেই বীভৎস ঘটনাটা ঘটেছিলো।

মৃদুলের ব্যাগে মোটামোটি সব কিছুই থাকে, তাই যে কোন অবস্থাতেই তার কোন অসুবিধা হয়না।

এইবার মৃদুল তার ব্যাগ থেকে একটা ছোট্ট ব্যাটারি লাগানো লাইট বার করে জ্বালিয়ে দেয় আর গোটা হলঘরটায় যেন আলোতে ঝলমল করে উঠে।

ততক্ষণে শঙ্কর সব ঘরের তালা গুলো ভেঙ্গে ঘরগুলো কে ভালো করে দেখে এসেছে তবে সন্দেহজনক কিছুই পায়নি।

মৃদুলের নির্দেশে শঙ্কর এবার একটা ভালো ঘর দেখে তাদের রাতের থাকার ব্যাবস্থা করতে থাকে।

ইতিমধ্যিই মৃদুল তার ব্যাগ থেকে কিছু শুকনো খাবার আর জলের বোতল নামিয়ে রাখে আর নিজের পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে রাজুকে ফোন করার ব্যর্থ চেষ্টা করেই যায় কিন্তু তখন রাজুর অবস্থাও তার ফোনের মতই ছিল, অকেজো।

রাজু তখন সোনালির কাছে বার দুয়েক চেয়েও তার ফোনটা পায়নি, প্রতিবারই সোনালির এক জবাব

” আমার ফোনটার চার্জ নেই”






এইবার রাজু মরীয়া হয়েই বলে উঠলো






”দেখি চার্জ আছে না নেই?”






সঙ্গে সঙ্গে সোনালি যেন ফুঁসে উঠে বললো






” তুমি কি আমাকে অবিশ্বাস করছ নাকি রাজু?আর কিসের এমন দরকার তোমার যে সামান্য একটা ফোনের জন্য তুমি আমাকেও বিশ্বাস করছো না ?”






সোনালির ওই ফুঁসে ওঠা রূপের সঙ্গে রাজু যেন তার এতদিনের পরিচিত হাসি খুশী সোনালির কোনও মিল খুজে পাচ্ছিলো না।






তবে রাজু খুবই শান্ত আর বুদ্ধিমান, তাই সে জানে যে খবরটা ছোটকু দা কে জানাবার জন্য তার এত আকুলি বিকুলি সেটা যদি আর কেউ জেনে যায় তাহলে হয়তো তাকে মরতে হবে,






তাই রাজু ব্যাপারটা খুব সুন্দর ভাবে চেপে গিয়ে সোনালি কে বললো






”তুমি কিছু মনে করনা সোনালি, আমি বিশ্বাস করছিনা এটা ভেবো না, আসলে আমি ছটফট করছি অন্য কারনে। কিছুদিন হল আমি একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেম করছি আর তাকেই আমি খবর দিতে চাইছিলাম যে আমি ঠিকঠাক পৌঁছে গেছি ,বুঝলে ”






বলে রাজু তার মুখে একটি মেকি হাসি ঝুলিয়ে রাখে।






তবে সোনালির মুখ দেখে মনে হয় সে রাজুর এই মিথ্যটা হয়তো ধরে ফেলেছে।






রাজুও আর এই বিষয়ে কথা না বাড়িয়ে ভাবতে থাকে যে কীভাবে সে ওই খবরটা ছোটকু দা কে পৌঁছাবে?






তবে রাজু একটা ব্যাবস্থা অবশ্য করে রেখেছে তার খবরটা পৌঁছানোর জন্য ছোটকুদার কাছে তবে তার আজকে যে খটকাটা লেগেছে সেটা তো জানাতে হবেই।






এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই এইবার সোনালি তার বিছানা থেকে উঠে এসে একদম রাজুর পাশেই বসে আর তার সেই আদুরে গলায় বলে






” রাজু আমার না খুব খিদে পেয়েছে আর দুপুর থেকে হেটে হেটে ক্লান্তও হয়ে গেছি, তাই এইবার খেয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়া যাক কি বলো?”






রাজুও একটু সময় চাইছিলো ভাবার জন্য তাই সোনালির প্রস্তাবটা সহজেই গ্রহণ করে নিয়ে বললো






”ঠিক আছে খেয়ে নেওয়া যাক, আর আমি রাতে মাটিতে কম্বল বিছিয়ে শুয়ে পরবো, তুমি খাটেই শুয়ো”






রাজুর প্রস্তাব শুনে এইবার সোনালি আবার তার খিলখিল হাসি হেসে বলে






”কেন আমি তোমার পাশে শুলে কি তোমার চরিত্র হনন হবে নাকি?”






রাজু আর কথা না বাড়িয়ে সেই বুড়োটার দেওয়া মুড়ি আর মিষ্টি থালায় ঢেলে খেতে আরম্ভ করলো আর তার খিদে তাকে বাকি সব ভুলিয়ে দিল।






খাওয়া শেষ হতে এইবার সোনালি ঘরের কোনায় হাত ধুতে ধুতে বলে






” রাজু এইবার আমি জামাকাপড় ছাড়বো, তুমি কি বাইরে যাবে না এইখানেই মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকবে?”






সোনালির কথাতেই যেন দুষ্টুমি ঝরে পরছিলো।






সোনালির এই প্রগলভ রূপ রাজু আগে কক্ষনো দেখেনি, রাজু একটু অবাকই হয়ে যাচ্ছিলো সোনালি কে দেখে আর তার ভেবেও কেমন লাগছিলো যে এই মেয়েটাকে বিয়ে করার জন্যই ছোটকুদা উঠে পরে লেগেছে।






রাজু এইসব ভাবতে ভাবতেই দেখে যে সোনালি নির্লজ্জের মত নিজের জামাকাপর পাল্টাতে আরম্ভ করে দিয়েছে ওই হ্যাজেকের আলোতেই, রাজুর সামনেই।






নিজের মান সম্মান বাঁচাতে এইবার রাজু সোনালির দিক থেকে পেছন ঘুরে বসলো, আর শুনতে পেল সোনালির খিলখিল হাসি।






সোনালি যেন তার হাসি দিয়েই রাজুকে বিদ্রুপ করছিলো, কিন্তু রাজু ঠিকই করে নিয়েছিল সে সোনালির কোন প্রলোভনে পা দেবে না কারন সে সবসময় সোনালি কে ছোটকুদার বউ হিসাবেই দেখতো।






কিছুক্ষণ পরে সোনালি রাজুকে উদ্দস্য করে বলে






” ঠিক আছে সাধুবাবা এইবার আপনি আমার দিকে ঘুরতে পারেন আর ভয় নেই”






রাজু পেছন ঘুরে সোনালিকে দেখেই যেন ভিরমি খেয়ে যায় কারন শাড়ী আর চুড়িদার পরা সোনালি কে দেখে অভ্যাস্ত চোখে এইভাবে একটা স্বচ্ছ ,হাতকাটা প্রায় উন্মুক্ত একটা সাদা নাইটি পরা অবস্থায় দেখবে তা রাজু স্বপ্নেও ভাবেনি।






সোনালির চোখে মুখে যেন তখন যৌনতার গরম ছোঁয়া লেগে ঝলসে গেছিল।






রাজু এইবার ভালো করেই বুঝতে পেরে গেছিলো যে তাকে আজ যে কোন ভাবেই নিজেকে আটকাতে হবে সমস্ত লোভ আর লালসা থেকে নাহলে আর তার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠবে না ছোটকুদাকে বা নিজেকে সেই লোকদের হাত থেকে বাঁচানোর।






সোনালি এইবার রাজুর সামনেই আড়মোড়া ভাঙ্গতে লাগে আর রাজু আড় চোখেই দেখে যে সোনালির শরীরের বিপদজনক সব বাঁক যেন তাকে হাতছানি দিয়ে আহ্বান করছে,






কিন্তু রাজু ততক্ষণে মনে মনে নিজের মায়ের মুখ ভাবতে আরম্ভ করে দিয়েছিলো আর সোনালি কিছুক্ষণ দাড়িয়ে হতাশ হয়ে নিজের বিছানায় চলে যায়,






তবে যাওয়ার আগে একটা শেষ চেষ্টা হিসাবে রাজু কে বলে






” শোন যদি বেশী শীত করে তাহলে তুমি আমার বিছানায় চলে আসতে পারো”






বলে শুয়ে পরে।






রাজু একটু পরে তার গুরুদেবের জপ করে ওই ঠাণ্ডা মেঝেতেই বুড়োর দেওয়া একটা কম্বল পেতে আর একটা মোটা চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে পরে।






মাঝরাতে ঠাণ্ডা হাওয়ার চোটে রাজুর ঘুম ভেঙ্গে যায় আর অভ্যাস বসেই রাজু তার রেডিয়াম লাগানো হাত ঘড়ীতে দেখে যে তখন রাত বারোটা,






রাজুও একটু অবাক হয় যে এখন এই বারোটার সময়ে বন্ধ ঘরে ঠাণ্ডা হাওয়া আসছে কীভাবে?






তখনই রাজুর চোখ পরে যে দরজার পাল্লাটা যেন একটু খোলা আর সেই খোলা পাল্লা থেকেই ঠাণ্ডা হাওয়াটা ধুকছে।






অন্ধকারে ততক্ষণ রাজুর চোখ সয়ে যায় আর সে দেখে যে বিছানাটা ফাঁকা, সোনালি নেই।






এইবার একটা আতঙ্কের হিমস্রোত বয়ে যায় রাজুর মেরুদণ্ডে যে সোনালি কোথায় ভ্যানিশ হয়ে গেল?






রাজু উঠে সেই অন্ধকারেই গোটা ঘরটা ভালো করে দেখেও সোনালিকে দেখতে পায়না তবে সোনালির ফোনটা রাজুর নজরে পরে আর সঙ্গে সঙ্গেই রাজুর মাথায় একটা প্ল্যান চলে আসে।






রাজু ততক্ষণে সোনালির ফোনটা তে মেসেজটা অলরেডি টাইপ করে দিয়েছিলো আর মৃদুলকে পাঠিয়ে দিয়েই সে সোনালির ফোন থেকে মেসেজটা ডিলিট করে ফোনটা আবার আগের মতই বন্ধ করে রেখে দেয়।






সোনালির ফোন না দেবার বাহানাটা যে মিথ্য ছিল সেটা রাজু অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিল আর তাই,






রাজু ফোনটা রাখতে রাখতে ভালো করেই বুঝে যায় যে সে এইবার একটা গভীর জালে আটকে গেছে আর তার বেরোবার সব পথই আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো।






মানুষ যখন বুঝতে পারে যে সে চারিদিক থেকেই ঘেরা হয়ে গেছে তখনই সে মরীয়া হয়ে উঠে,রাজুও এইবার মরীয়া হয়েই সোনালির খোঁজে বাইরে যায়।






বাইরে বেরোতেই রাজু দেখে যে উঠোনের ওপর প্রান্তে একটা ঘরে যেন একটা হাল্কা আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে,






রাজু নিঃশব্দে সেই ঘরের বাইরে গিয়ে দাড়াতেই একটি অতিপরিচিত শব্দ শুনতে পায়।






সেই শব্দের উৎসের সন্ধানে এইবার রাজু একটা জানলা থেকে উকি মেরে ভেতরে দেখে আর একদমই স্থবির হয়ে যায়।






ঘরের ভিতরে তখন সোনালি অর্ধউলঙ্গ অবস্থাতে সেই বুড়োটার সামনে বসে তার ঠাটানো বাঁড়াটা জিভ দিয়ে চেটে যাচ্ছিলো আর বুড়োটা সোনালির নগ্ন পিঠে সমানে হাত বুলিয়েই যাচ্ছিলো,






এইবার বুড়োটা আচমকা উঠে দাড়ায় আর সোনালিকেও টেনে দাড় করিয়ে দেয়






রাজুর মনে হয় সোনালির যেন খুবই দুঃখ হয়েছে তাকে ওই নোংরা বুড়োটার বাঁড়া না খেতে দিয়ে টেনে দাড় করানোতে,






এইবার বুড়োটা মুখে কিছু কথা না বলে এই শীতেও সোনালিকে টেনে তার কাপড় খুলে উলঙ্গ করে দেয় আর রাজু যেন চোখের সামনে দেখে একটি অপূর্ব সুন্দর দেহ।






বুড়োটা ততক্ষণে সোনালির একটা মাই কে টিপতে টিপতে আরেকটা চুষতে আরম্ভ করে দিয়েছিলো।






সোনালির শরীরেও কামের জোয়ার এসেছিলো আর সে ও বুড়োটার হাতের টেপন খেতে খেতে নিজের জিভ দিয়ে বুড়োটার কানের লতি চুষতে আরম্ভ করে দিল।






সোনালির জিভের জাদুতে বুড়োটা যেন শিউরে শিউরে উঠতে লাগলো আর সোনালি যেন ততই মজা পেয়ে তার জিভের চাটন আরও বাড়িয়ে দিতে লাগলো,






যখন এই সুখ অসহ্য হয়ে উঠলো তখন বুড়োটা সোনালিকে তার কোমর ধরে একটানে খাটে শুইয়ে দিল আর নিজেকে সোনালির দুই পায়ের ফাঁকে বসিয়ে ঠাপ আরম্ভ করে দিল সোনালির রসে ভর্তি সুন্দর গুদে,






ওরা দুজনেই মনে হয় খুবই উত্তেজিত হয়ে ছিল তাই কিছুক্ষণের মধ্যই সোনালির কোমর ঝড়ের বেগে উপর নিচে করতে করতে স্থির হয়ে যায় আর বুড়োটা এইবার নিজের ঠাপের জোর আরও বাড়িয়ে দেয় আর আচমকা সোনালির বুকের উপর ঝুকে তার মাই খামচাতে খামচাতে গুঙিয়ে বলে উঠে






” নে নে আমার ফ্যাদা নে মাগী তোর সোনা গুদে”






বলতে বলতে সেও স্থির হয়ে যায়।






বাইরে রাজুও তখন স্থির হয়ে যায় ”বুড়োটার” গলা শুনে ,






রাজু এইবার তার সন্দেহের ব্যাপারে একদমই কনফার্ম হয়ে যায় আর তখনই রাজুর মনে হয় কি যেন একটা কামড়াল তার ঘাড়ের উপর,






ঘুরে দেখতে গিয়ে রাজু দেখে একটি অতি পরিচিত মুখ






, হাতে ইনজেকশন নিয়ে দাড়িয়ে তার অবস্থা দেখে হাসছিল, রাজু চেষ্টা করে তার হাতটা ধরার কিন্তু তার আগেই সে মাটিতে পরে যায় আর জ্ঞ্যান হারাবার আগে রাজু শুধু ভাবতে থাকে যে আর কে কে আছে এই নোংরা কিন্তু কুটিল খেলাটাতে?






সেই উত্তর কিন্তু আর রাজুর জানা হয় না।






সেই লোকটি এইবার হাত থেকে ইনজেকশন টা রেখে রাজুর প্রাণহীন দেহটার প্রতিটি পকেট,






আর সম্ভাব্য জায়গা খুজেও যখন তার কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা পায়না তখন সে রাগে প্রায় পাগল হয়ে উঠে আর সোনালি আর সেই ”বুড়োটার” লীলা খেলার দরজাতে এক লাথি মারে।






সেই লাথির চোটে সোনালি আর ”বুড়ো” আলুথালু বেশেই দৌড়ে আসে আর রাজুর লাশ দেখেই বুঝে যায় তাঁদের প্ল্যান সাকসেসফুল।






কিন্তু সেই মানুষটির চোখ দেখে আর ভয়ে কেউ কিছু জিগ্যেস করার সাহস পায়না, সেই মানুষটির চোখে তখন যেন একটা জান্তব ক্রোধ খেলে বেরাচ্ছিলো ।




[/HIDE]

চলবে ।
 
লাইনের মাঝে ফাকা কম হয়ে গেসে। আরেকটা ফাকা দিলে ভালো হত
 
লাইনের মাঝে ফাকা কম হয়ে গেসে। আরেকটা ফাকা দিলে ভালো হত

অত্যন্ত দুঃখিত দাদা ।
এজন্য শুরুতেই কথাটা বলে নিয়েছি ।
যেখান থেকে গল্পটি নেয়া সেখানে এভাবেই ছিল, তাই এ সমস্যা হল ।
ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি । :)
 
ঘোড়ার আড়াই চাল ৬

[HIDE]
সোনালি আর ওই ”বুড়োর” বেশে থাকা লোকটি দুজনে এইবার ভয়ে কেঁচো হয়ে যায় কারন তারা দুজনেই এই তিন নম্বর মানুষটিকে খুবই ভয় করতো।


তিন নম্বর মানুষটি এইবার মেঘ ডাকা গলাতে সোনালি কে উদ্দস্য করে বলে


” সেই জিনিসটা কোয়?, যেটার জন্য এত আয়োজন সেটা কোই?”


কথাটা শুনে সোনালি যেন এই শীতেও ঘেমে গেল,


একটু আগে যে সেক্সের পরিতৃপ্তি ছিল সোনালির মুখে চোখে তা এখন বদলে গেছিলো এক অজানা আতঙ্কে।


তিন নম্বর মানুষটি এইবার আর কথা না বাড়িয়ে শুধু একটাই কথা বলে , সে বলে


” যদি ওই জিনিসটা মৃদুলের হাতে পৌঁছে যায় তাহলে আমি তো মরবোই কিন্তু তোমাদের কে নিয়েই মরবো, এটা মনে রেখো আর জিনিসটা ভালো করে খোঁজো”


বলে মানুষটি এইবার রাজুর লাশটা কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে চলে যায়।


সেই মানুষটি চলে যেতেই সোনালি আর পারলো না আর ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে কারন সে ভালো করেই জানে যে ওই মানুষটির কথার নড়চড় খুব একটা হয়না।


”বুড়ো” মানুষটি এইবার এগিয়ে এসে সোনালির মাথায় হাত দিয়ে তাকে আশ্বাস দিতে যায় কিন্তু তারও মুখে কোনও ভাষা জোটে না।


ওইদিকে মৃদুল আর শঙ্কর বসে বসে গল্প করছিলো আর ক্লান্ত হয়ে দুজনেই যে কখন ঘুমিয়ে পরে তা নিজেরাও বুঝতে পারেনি,


মৃদুলের ফোনটা আজ সাইলেন্ট মোডে ছিল কারন সে কোন ভুত বা মানুষ কাউকেই আজ জানান দিতে চাইছিলো না তার আর শঙ্করের উপস্থিতি আজ এই বাড়িতে।


আচমকা মৃদুলের পকেটের ফোনটা ভাইব্রেট করে উঠে আর মৃদুলেরও ঘুমটা ভেঙ্গে যায় ।


আবার আজ সেই নম্বর থেকে ফোন এসেছে,


যবে মৃদুল তার এডিটার কে জানিয়ে দিয়েছিল তার সম্মতি এই বীরপুরে আসার ব্যাপারে তবে থেকে এই ফোন আসা টা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো,


আর মৃদুলও মনে মনে ভেবেছিলো যে সে হয়তো অদিতির ভূতুড়ে ফোন আসাটা বন্ধ হয়ে গেছে,


কিন্তু মৃদুল যে ভুল ছিল এই ফোন কলটাই তার প্রমান।


মৃদুল একটু ইতস্তত করে যে ফোনটা ধরবে কি না,


তারপরেই মৃদুলের তার বাবার একটা কথা মনে পরে যে কোন সমস্যা থেকে পালিয়ে বাঁচা যায় না তার মুখোমুখি হতে হয়।


মৃদুল এই কথাটা ভাবতেই যেন মনে একটা আলাদা জোরই পেল আর ফোনটা রিসিভ করে নেয়।সেই ফিসফিসে স্বর,


যেন পাতালের গভীর থেকে উঠে আসা একটা মেয়েলি গলার আওয়াজ, মৃদুল একটু হলেও এবার ভয় পায়,


কারন কোলকাতা শহরের বুকে বসে একটা ভুতুড়ে ফোন ধরা যে অনেক সহজ এই ভূতুড়ে বাড়ীতে বসে কথা বলার চেয়ে টা মৃদুল এইবার অনুভব করলো।


তবে ফোনের ওপার থেকে যে কথাটা ভেসে এল, তা মৃদুলের মত অকুতোভয় মানুষকেও যেন ভয় ধরিয়ে দিল।


অদিতি তখন ফোনের ওপার থেকে বলছে


” আপনি খুবই ভুল করেছেন এই বাড়ীতে এসে, তার মাশুল আপনাকে চোকাতে হবে, যদি বাঁচতে চান তাহলে কালকেই পালিয়ে যান”


বলেই এইবার ফোনটা কেটে যায়।


মৃদুল হতভম্ব হয়ে পরে, যে ফোনের ভিতর থেকে অদিতি কীভাবে জানলো সব কথা!


মৃদুল এইবার যেন ভাবতে বাধ্য হয়ে পরে যে অদিতি সত্যি করেই কোন অপার্থিব কিছু নয় তো?


মৃদুল এইবার শঙ্করকে ঠেলা দিয়ে ওঠায় আর সব খুলে বলে একদম প্রথম দিনের ফোন আসা থেকে।


শঙ্কর প্রথমে ঘুম চোখে হু হা করে চালিয়ে দিচ্ছিলো কিন্তু পুরোটা শুনেই যেন তার চোখ থেকে ঘুম উড়ে যায়।


এইবার শঙ্করের অবস্থাও মৃদুলের মতই হয় একেবারে হতভম্ব , তবুও শঙ্কর বলে


” গুরু তোমার কি মনে হয় ভুত না অন্য কিছু?”


মৃদুল চুপচাপ মাথা নাড়তে নাড়তে বলে


”আমি নিজেই কি ছাই কিছু বুঝতে পারছি?”


দুজনে চুপচাপ বসে বসে ভাবে যে এই নতুন ঝামেলাটা কি হতে পারে তাঁদের জীবনে?


এই রিপোর্টার জীবনে মৃদুল আর শঙ্কর কম থ্রেটনিং খায়নি ,


তা সে পার্টিই হোক কি লোকাল গুন্ডা কিন্তু এই প্রথম জীবনে ভুতের কাছে থ্রেট এটা ঠিক হজম হয় না।


মৃদুল এইবার তার ফোনটা বন্ধ করে রাখতে যায় আর তখনই একটা মেসেজ ঢোকে তার ফোনে।


এই অসময়ে রাত ১২”৩৫এ সোনালির মেসেজ দেখে মৃদুল একটু টেনসেন এই পরে যায় আর তাড়াতাড়ি মেসেজটা খুলে পরে দেখে,


তবে মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারেনা আর তলায় লেখা প্রেরকের নাম ছিল রাজুর।


মৃদুল এইবারে আরও ধাঁধায় পরে যায় যে সোনালির ফোন থেকে এই মাঝরাতে রাজু মেসেজ পাঠাচ্ছে তাও আবার এত অদ্ভুত একটা মেসেজ ,


মৃদুল এইবার সঙ্গে সঙ্গে রাজুর মোবাইলে ফোন করে কিন্তু তা যথারীতি বন্ধ, আবার মৃদুল সোনালির ফোনে কল করে কিন্তু তাও বন্ধ।


এইবার মৃদুল ঘুমে ঢুলতে থাকা শঙ্করকে ডেকে মেসেজটা পড়ায় আর বলে


”কি বুঝলি আমাকে বল”


শঙ্করও একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় মেসেজটা পরে।


রাজুর পাঠানো মেসেজটা ছিল


”GHOST AND GOLD ARE ALMOST SIMILAR,


ONLY ”OLD”IS DELHI BELLY.


CHILDRENS ARE INNOCENT BUT LEADERS ARE CRIMINALS,


DONT TRUST ANYBODY BUT ”TRUST” IS DANGEROUS.


PLEASE SEARCH THE GOLDMINE. FROM RAJU.12.35AM, BIRPUR”


শঙ্করও একদম বমকে যায় এই মেসেজটা পরে আর বুঝতে পারেনা যে রাজু কি আদৌ সুস্থ ছিল এই মেসেজটা পাঠাবার সময়!


সেই রাতের মত ঘুম উড়ে যায় মৃদুলের আর শঙ্করের রাজুর চিন্তায়।


মৃদুলের মনটা শুধু কুডাক ডাকছিলো কারন মৃদুল আর রাজুর পরিচয় এই অফিস থেকে নয়,


রাজু মৃদুলের পাড়ার ছেলে আর রাজুর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তার মা রাজুকে মৃদুলদের বাড়ীতেই চাকরের কাজে লাগিয়ে দিয়েছিলো,


আর মৃদুলের মায়ের মত বউদিই এই রাজুকে লেখাপড়া শিখিয়ে আজ মৃদুলের সঙ্গেই একসঙ্গে রিপোর্টার বানিয়েছিল।


যখন মৃদুল আর শঙ্কর রাজুকে নিয়ে আলোচনা করছিল ঠিক তখনই আচমকা একটা শব্দ হয় বাড়ীটার ছাদে।


ওই বন্ধ ভূতুড়ে বাড়ীতে ,ওই নিস্তব্দ রাতে হওয়া শব্দে মৃদুল আর শঙ্কর একসঙ্গে ভয়ে কেঁপে যায়।


সেই শব্দটা যে কিরকম তা হয়তো লিখে বোঝানো যাবেনা,


তবুও যদি কেউ একটা হাতুড়ী আর প্লাস্টিকের বলকে একসঙ্গে দেওয়ালে ঠোকে যেমন আওয়াজ হয় এই আওয়াজটা ঠিক সেই রকমই,


এই আওয়াজ চলতে চলতেই এইবার তার সঙ্গে যোগ হল একটা মেয়েলী গলায় কান্নার আওয়াজ,


একসঙ্গে এই দুটো আওয়াজ শুনেই শঙ্কর যে শঙ্করের ডানপিটেমিতে গোটা অফিস জেরবার সেই শঙ্কর অব্দি এইবার ঠাকুরের নাম জপতে শুরু করে দেয়।


এতক্ষণ ধরে যে স্নায়বিক চাপ মৃদুল সহ্য করেছিলো তা এইবার মৃদুলের সহ্যর বাঁধ ভেঙ্গে দেয়,


আর মৃদুল ঝাঁপিয়ে উঠে শঙ্করের একটা হাত ধরে আর নিজের পকেট থেকে রিভলভারটা বার করে সেই শব্দের উৎসের দিকে এগোতে চায়।


শঙ্কর কিন্তু আজ সারাদিন ধরেই অবাক হয়ে চলছে,


একে এত ঘটনার ঘনঘটা তার পরে মৃদুলের হাতে রিভলভার, শঙ্করের মনে হয় যে সে এইবার পাগল হয়ে যাবে।


মৃদুল কিন্তু ততক্ষণে ছাদের সিঁড়ি ধরে উঠতে আরম্ভ করে দিয়েছে তবে সে শঙ্করের হাত ছাড়েনি।


ছাদের দরজাতে তারা পৌছতেই সেই আওয়াজ আর কান্না যেন একদম বন্ধ হয়ে গেল,


আচমকা এই ভাবে সব বন্ধ হয়ে যাওয়াতে মৃদুল আর শঙ্করও একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছিল ,


আর ঠিক তখনই সেই কান্নাটা শুরু হল বাইরের বাগান থেকে,


ততক্ষণে মৃদুলও মরীয়া হয়ে উঠেছিলো এই রহস্য সমাধানে তাই সে এবার তার হাতের বন্দুকের বাঁট দিয়ে ছাদের দরজার তালাটাকে বার দুয়েক বার মেরেই ভেঙ্গে ফেলে আর সোজা শঙ্করকে টানতে টানতে ছাদে হাজির হয়।


সেই পূর্ণিমা রাতে গোটা ছাদ যেন একটা অপার্থিব রূপোলী আলোতে ভরে গেছিলো কিন্তু না মৃদুল না শঙ্কর কেউই তখন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার মত অবস্থায় ছিল না,


মৃদুল তার সজাগ চোখে ফুটবল মাঠের মত ছাদটা কে স্ক্যান করে সন্দেহজনক কিছুই দেখতে না পেয়ে ঠিক ফিরেই আসছিলো,


আর তখনই আবার সেই কান্নার আওয়াজ শোনে নিচের বাগান থেকে,


হটাৎই মেঘ এসে ওই বিশাল চাঁদকে সাময়িক ঢেকে দেয় আর আলো আধারিতে চারিদিক ভরে যায়।


তবে শঙ্করও এতক্ষণে নিজের ঘোর কাটিয়ে উঠে নিজের সেই পুরনো ফর্মে ফিরে গেছিলো,


আর এইবার সেই বেশী তৎপর হয়ে ছাদের কিনারায় গিয়ে কার্নিশে উকি মেরে দেখে যে নিচের বাগানে কি যেন একটা হচ্ছে।


ততক্ষণে মৃদুলও এসে পৌঁছেচ্ছে আর সেও উকি মেরে একই দৃশ্য দেখে,


প্রথমে কিছু বোঝা না গেলেও এইবার মৃদুল ঠাওর করে দেখে যে একটা লাশ পরে আছে আর কালো মত একটা কি যেন ওই লাশটার উপর ঝুকে কি যেন করছে।


এইবার মেঘের আড়াল থেকে চাঁদ বেরিয়ে আসতেই দুতলার ছাদ থেকে মৃদুল আর শঙ্কর দুজনেই পরিষ্কার দেখতে পায় যে মাটিতে পরে থাকা মানুষটি আর কেউ নয় তাঁদের রাজু।


রাজুকে ওই অবস্থায় দেখে মৃদুলের মুখ থেকে একটা আর্তনাদ বেরিয়ে যায় আর সেই কালো রঙের প্রাণীটি এই সামান্য শব্দেও ঘাড় ঘোরায় ,


আর মৃদুল আর শঙ্কর চাঁদের আলোতে স্পষ্ট দেখে যে ওটা কোন প্রানি নয়,


মানুষের মতই দেখতে একটি শয়তান, তার মুখ থেকে দুটো চকচকে দাঁত চাঁদের আলোতে চিকচিক করছিলো আর সেই দাতে কালো মত রক্তও বোঝা যাচ্ছিল,


তবে সেই প্রাণীটি চোখ স্থির হয়ে ছিল মৃদুলের ওপরেই।


তাঁদের এই স্থবির অবস্থার সুযোগেই এইবার প্রাণীটি বা মানুষটি পালাতে লাগে আর তখনই শঙ্করের মুখ থেকে অস্ফুস্টে বেরিয়ে যায়


”ভ্যাম্পায়ার”।


[/HIDE]
 
খুবই সুন্দর গল্প । এইটুক পড়ে আর বসে থাকতে ভালো লাগে না । যদি সম্ভব হয় দ্রুত লিখে ফেলেন ।
 
ঘোড়ার আড়াই চাল ৭[HIDE]

মৃদুল নিজের হতভম্ব ভাবটা কাটিয়েই এবার সেই কালো মূর্তিটার দিকে তাক করে গুলি চালিয়ে দেয় ,


কিন্তু সেটি না থেমেই বাগানের ঘন জঙ্গলে কোথাও হারিয়ে যায়।


শঙ্কর আর মৃদুল এইবার তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে সেই ভাঙা জানলাটা দিয়ে বেরিয়ে বাগানে যায় আর দেখে রাজুর নিথর দেহটা পরে আছে বাগানের ঠাণ্ডা মাটিতে,


মৃদুল তাড়াতাড়ি ঝুকে পরে রাজুর হাতটা টেনে নিয়ে পরে নাড়ি দেখতে চেষ্টা করে ,


কিন্তু রাজুর হাত আর শরীর তখন বরফের মত ঠাণ্ডা,


মৃদুল এইবার মরীয়া হয়ে রাজুর বুক, গলা ,কানের পেছন সব জায়গাতে হাত দিয়ে দেখে কিন্তু সে ব্যর্থ হয় রাজুর গোটা শরীরে কোথাও প্রানের স্পন্দন পেতে।


মৃদুল আর পারেনা আর সে বাচ্চা ছেলের মত হাউ হাউ করে কেঁদে উঠে রাজুর বুকে মাথা রেখে।


শঙ্কর এতক্ষণ দাড়িয়ে চুপচাপ দেখছিলো সে তার ডেয়ার ডেভিল বস কে এইভাবে কাঁদতে সে আগে কক্ষনো দেখেনি,


তাই সেও কিংকর্তব্যবিমুর হয়ে গেছিলো,


কিন্তু এইবার যখন মৃদুল রাজুর শরীরটাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে একদম পাগলের মত করতে লাগলো তখন শঙ্কর আর দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখতে পারলো না,


শঙ্কর অনেক কষ্টেই মৃদুলকে রাজুর শরীর থেকে টেনে আলাদা করে।


মৃদুল এইবার শঙ্করকে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে


”কে মেরে দিল আমার রাজুকে? আমি ওর মা কে কি জবাব দেব তুই বল?”


বলেই আবার কান্নাতে ভেঙ্গে পরে।


মৃদুল এইবার একটু ধাতস্ত হয় আর শঙ্করের সাহায্য রাজুর লাশটা কে তুলে ঘরের ভেতরে নিয়ে আসে,


বুনো জন্তু জানোয়ারের আক্রমণের ভয়ে।


বাগানের সেই শীত থেকে ঘরের উষ্ণতায় এসে যেন শঙ্কর আর মৃদুল জীবন ফিরে পায়,


সারাদিনের স্নায়বিক উত্তেজনা আর মনের দুঃখে একটু পরেই রাজুর লাশটাকে মাটিতে শুইয়ে মৃদুল আর শঙ্কর নিস্তেজ হয়ে ঘুমিয়ে পরে।


সকালে আচমকা একটা আঘাতে মৃদুলের ঘুম ভেঙ্গে যায় আর প্রচণ্ড ব্যাথার চোটে মৃদুল ককিয়ে ঘুম থেকে উঠে পরে,


আর অবাক হয়ে দেখে তাঁদের কে ঘিরে প্রায় দশ বারোজন পুলিশ হাতে বন্দুক উঁচিয়ে দাড়িয়ে আছে,


মৃদুল উঠে দাঁড়াতে গেলে আবার এক পুলিশ কনস্টেবল তার হাতের লাঠিটা দিয়ে মৃদুলের পায়ে আঘাত করতে মৃদুল আবার ব্যাথার চোটে বসে পরে।


ওই পুলিসদের মধ্য থেকে এইবার একটা অফিসার গোছের লোক বেরিয়ে এসে মৃদুলকে বিনা বাক্যব্যায়ে হাতে হাতকড়া পরিয়ে দিয়ে তার কনস্টেবলদের কে বলে


”লাশটা তুলে নিয়ে চলে যা পোস্টমর্টেম করতে আর এই শালাদের কে কোমরে দড়ি পরিয়ে আমার জীপে তোল”


বলে মৃদুল বা শঙ্করের দিকে ভালো করে না দেখেই গটগট করে জুতোতে আওয়াজ তুলে বেরিয়ে যায়।


শঙ্কর আর মৃদুলের মত দেশের নামি রিপোর্টার আর ক্যামেরাম্যান কে পুলিসের জীপে সাধারন আসামীদের মতই তোলা হয়,


বাড়ীর বাইরে আসতেই মৃদুল আর শঙ্কর সবিস্ময়ে দেখে যে পুলিসের গাড়ীটা ঘিরে ধরে লোকে লোকারণ্য,


যে গ্রামটা কাল অব্দি একদম ফাঁকা আর জনমানবশূন্য ছিল সেই গ্রামে এত লোক দেখে মৃদুল আর শঙ্কর শুধু নিজেদের মুখ তাকাতাকি ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না,


মৃদুলের আরও আবাক হবার কারন ছিল যে মানুষগুলো এই জমিদার বাড়ীর সামনে ভিড় করছে দেখে,


কারন মৃদুলের এডিটারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই গ্রামটা একদম ভূতুড়ে আর গ্রামটা একদম ফাঁকা,


আর সাধারন মানুষ কেন এই গ্রামের পুলিশরাও এই অভিশপ্ত জমিদার বাড়ীর সামনেই আসে না,


কিন্তু এখন এই উল্টোপুরান দেখে দেখে মৃদুল যেন আর অবাক হতেও ভুলে গেছিলো,


তাই যখন তাকে টানতে টানতে কোমরে দড়ি পরিয়ে পুলিসের জীপে তোলা হয় তখন মৃদুলও একটা প্রাণহীন শরীরের মত গাড়ীতে গিয়ে বসে।


যখন মৃদুলদের নিয়ে গাড়ীটা বেড়িয়ে যাচ্ছে তখন মৃদুল একবার ওই ভিড়ের মধ্য চোখে শূন্য দৃষ্টি নিয়ে তাকায় আর তার মনে হয় যেন সোনালির মুখটা এক ঝলক দেখা দিয়েই সরে যায়,


কিন্তু মৃদুল ভালো করে দেখার আগেই গাড়ীটা তাদেরকে নিয়ে চলে যায় থানার দিকে।


রাস্তায় মৃদুল বারদুয়েক তার ফোনটা বার করতে যায় কিন্তু কনস্টেবলটা আটকে দেয়,


সারারাস্তা মৃদুল এটাই ভাবতে থাকে যে গোটা ব্যাপারটা ঠিক কি!


যখন মৃদুল আর শঙ্করকে গাড়ী থেকে টেনে নামানো হয় তখন থানায় যেন লোক থিকথিক করছিলো,


আর মৃদুলও অবাক হয়ে ভাবছিল যে এটা কেমন ভোজবাজী যে কাল এই জনশূন্য গ্রাম আজকেই কি করে এত পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো?


মৃদুল বরাবর থানাতে এলেই যে ভি আই পি ট্রিটমেন্ট পেতো তাতেই সে অভ্যাস্ত ছিল,


তাই আজকে যখন সে একটা সাধারন অপরাধীর মত মাটিতে বসলো তার মনে একটা ধাক্কা লাগলো,


কিন্তু সে জানতো যে এখন তার সময় নয় তাই সে চুপ করে মাটিতেই বসলো।


কাল রাতে একটু শুকনো পাউরুটি আর মিষ্টি ছাড়া তারা আর কিছুই খায়নি,


তাই এবার মৃদুল আর শঙ্করের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো।


ঘণ্টা দুই- আড়াই বসার পরে যখন তারা ঝিমিয়ে পড়েছিলো তখন অফিসার এসে পৌঁছান।


এইবার মৃদুল আশায় বুক বাধে কারন এই পাতি কনস্টেবলরা না চিনলেও হয়তো অফিসারটি তাকে চেনে।


কিছুক্ষণ পরেই শঙ্কর আর মৃদুলের ডাক পরে বড়বাবুর চেম্বারে।


মৃদুল আর শঙ্কর ঢুকে দেখে যে ভেতরে অফিসারটা ছাড়াও আরও তিনজন বসে ছিল আর সব চেয়ার গুলোই ভর্তি,


অগত্য মৃদুল আর শঙ্কর দাঁড়িয়েই থাকে,


এইবার অফিসারটা মুখে একটা সিগারেট ধরিয়ে মেজাজ নিয়ে বলে


”শোন কোন নাটক আমার পছন্দ নয় তাই যা জিগ্যেস করবো একদম পয়েন্টে জবাব দিবি নাহলেই রুল বুঝেছিস,”


বলে একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে দেয় মৃদুলের মুখের দিকে।


কালরাত থেকে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছিলো মৃদুলের উপর তা তাকে এইবার রাগে আর দুঃখে প্রায় পাগল করে তোলে আর মৃদুল অফিসারের কথার তীব্র প্রতিবাদ করে বলে


”ভদ্রভাবে কথা বলুন, আপনি কি জানেন যে আমি কে?”


এইবার অফিসারটি একটা ব্যাঙ্গ মেশানো হাসি হেসে বলে


”কে আবার মৃদুল সেন, নামি রিপোর্টার, এইসবই বলবি তো?”


বলে আবার হেসে নিয়ে বলে


” বাবু তুমি রিপোর্টারই হও কি হাতীর গোবরই হও তাতে তো কিছু যায় আসেনা ,কারন আমি তোমাকে লাশ সমেত, পিস্তল সমেত ,সরকারি বাড়ীতে বেআইনি ভাবে ঢোকা অবস্থায় ধরেছি”


এইবার মৃদুল আবার কিছু বলতে যায় আর তখন অফিসারটার পাস থেকে কালো কোট পরা এক ভদ্রলোক বলে উঠেন


”আপনি যা ইচ্ছা বলতে পারেন, কিন্তু তা আপনার জবানবন্দি হিসাবে রেকর্ড করা হবে, তাই যা বলার ভেবে চিন্তে বলুন”


শঙ্কর এতক্ষণ ধরে দাড়িয়ে দেখছিলো,


কিন্তু এই কথা শুনে সে বুঝে যায় যে তারা বড় গাড্ডায় পরে গেছে,


তাই শঙ্কর এবার এগিয়ে এসে মৃদুলের পিঠে হাত রেখে তাকে শান্ত হয়ে থাকতে অনুরোধ করে।


এই দুঃসময়ে শঙ্কর ছাড়া আর কেউই মৃদুলের পাশে ছিল না তাই মৃদুল এবার একটু শান্ত হয়।

[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top