গর্ভাবস্থায় মুখ ও দাঁতের কিছু সমস্যা বেশি লক্ষ করা যায়। গর্ভধারণের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে কিছু স্বাস্থ্যগত বিষয়, যেমন চেকআপ ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হয়। ঠিক তেমনিভাবে মুখের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতেও মুখের চেকআপ জরুরি।
গর্ভাবস্থায় শারীরিক ও হরমোনাল পরিবর্তন মুখ, দাঁত ও মাড়িকে প্রভাবিত করে। এ সময়ে শরীরে প্রজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেনের মতো কিছু হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। আবার এ সময় নারীর খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আসে। এদিকে গর্ভকালে নারীরা দাঁত ব্রাশ, ফ্লসিং আগের তুলনায় কমিয়ে দেন। কারও কারও ক্ষেত্রে বমি ভাব থাকায় ঠিকঠাক দাঁত ব্রাশও করতে পারেন না। এসব কারণে মুখের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে।
ক্যাভিটি: দাঁতের উপরিভাগে ছোট গর্ত ও দাঁত ক্ষয়ের ঝুঁকি এ সময় বেড়ে যায়। ক্যাভিটি সৃষ্টিকারী কিছু ব্যাকটেরিয়া জন্মের পর শিশুর মধ্যেও সংক্রমিত হতে পারে।
জিনজিভাইটিস: গর্ভাবস্থায় মাড়িতে প্রদাহ একটি সাধারণ সমস্যা। ৬০ থেকে ৭৫ শতাংশ নারী গর্ভাবস্থায় এ সমস্যায় আক্রান্ত হন। মাড়ি লালচে ও ফোলা ভাব, মাড়ি কোমল ও চকচকে হতে পারে এ রোগে। মাড়ি থেকে রক্তপাতও হতে পারে।
দাঁত পড়া: গর্ভাবস্থায় উচ্চ স্তরের হরমোন প্রজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন সাময়িকভাবে দাঁতের চারপাশের টিস্যু ও হাড় আলগা করে দিতে পারে। এতে দাঁত হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়।
মাড়ির রোগ: জিনজিভাইটিসের চিকিৎসা না করালে মাড়ির রোগ হতে পারে। এর ফলে মাড়িতে মারাত্মক সংক্রমণ হয় এবং দাঁত রক্ষাকারী হাড়ের ক্ষতি করে। দাঁত আলগা হয়ে যেতে পারে এবং ফেলে দিতে হতে পারে। পিরিওডোন্টাইটিস ব্যাক্টেরেমিয়া বা রক্তপ্রবাহে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও হতে পারে।
ইপুলিস: গর্ভাকালীন একধরনের ইপুলিস মাড়িতে ও দাঁতের মাঝখানে হয়। দেখতে লালচে ও মাংসপিণ্ডের মতো। এ থেকে সহজেই রক্তপাত হয়। দাঁতে অতিরিক্ত প্লাকের কারণে গর্ভকালীন ইপুলিস হয়ে থাকে। প্রসবের পর এ সমস্যা এমনিতেই সেরে যায়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এগুলো অপসারণের প্রয়োজন হতে পারে।
দাঁত ক্ষয়: গর্ভাবস্থায় বমি ভাব হওয়ায় স্টোমাক অ্যাসিডের সংস্পর্শে দাঁতের এনামেলের ক্ষতি হতে পারে। গর্ভাবস্থায় দাঁতের চিকিৎসা কতটুকু নিরাপদ গর্ভাবস্থায় যেকোনো সময় আপনি মুখ ও দাঁতের চিকিত্সা করাতে পারেন। তবে মাঝের তিন মাস যেকোনো চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে তুলনামূলক নিরাপদ।
* লেখক: ডা. শারমীন জামান, ওরাল অ্যান্ড ডেন্টাল সার্জন, ফরাজী ডেন্টাল হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, বনশ্রী, ঢাকা