যেকোনো মানুষের মতো একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীও যক্ষ্মায় আক্রান্ত হতে পারেন। যেকোনো অবস্থাতেই এর সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন। গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে কোনো ব্যতিক্রম নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রায় সাত লাখ নারী যক্ষ্মা (টিবি) রোগে মারা যান ও ৩০ লাখের বেশি এই রোগে আক্রান্ত হন। ১৫-৪৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে যক্ষ্মা মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ।
যক্ষ্মায় আক্রান্ত নারীদের অকালে বা কম ওজনের সন্তান হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ এবং গর্ভস্থ শিশু পরে জন্মগতভাবে যক্ষ্মা নিয়ে জন্ম নিতে পারে। গর্ভাবস্থার নানা জটিলতা বৃদ্ধি পেতে পারে চার গুণ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জটিলতাগুলো হলো, গর্ভপাতের উচ্চ হার, প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ, প্রি-একলাম্পসিয়া। বাংলাদেশে জরায়ু ও ফেলোপিয়ান টিউবে যক্ষ্মার কারণে প্রতিবছর অসংখ্য নারী বন্ধ্যত্বের শিকার হয়ে থাকেন।
গর্ভবতী নারীরা যখন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন, তখন রোগ নির্ণয় করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সরকারের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা রয়েছে। যক্ষ্মায় আক্রান্ত মায়ের গর্ভধারণ হয়ে থাকলে ভ্রূণ নষ্ট করার প্রয়োজন নেই। ওষুধ শুরু করার পর অবশ্যই নিয়মিত ছয় মাস খেতে হবে।
গর্ভাবস্থায় চিকিৎসা কি নিরাপদ
যক্ষ্মা চিকিৎসার প্রথম সারির ৪টি ওষুধ (আইসোনিয়াজিড, রিফামপিসিন, ইথামবিউটল ও পাইরাজিনামাইড) গর্ভাবস্থায় সম্পূর্ণ নিরাপদ। যক্ষ্মা রোগের প্রাথমিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধগুলো প্ল্যাসেন্টা বা অমরা অতিক্রম করে, তবে সেগুলো ভ্রূণের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে বলে মনে করা হয় না। এসব ওষুধের মাতৃকালীন সুরক্ষা রেকর্ড রয়েছে ও এরা মানবভ্রূণের জন্মগত ত্রুটির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
নবজাতকের ঝুঁকি
নবজাতকের সংক্রমণ সাধারণত জন্মের পর মায়ের কাছ থেকে হয়। যক্ষ্মায় আক্রান্ত মায়ের যদি চিকিৎসার অন্তত দুই মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর সন্তানের জন্ম হয়, তবে তিনি বুকের দুধ পান করাতে পারবেন এবং সন্তানকে কাছেও রাখতে পারবেন। তা না হলে মায়ের কাছ থেকে সন্তানকে আলাদা রাখতে হবে।
বুকের দুধ খাওয়ানো কি নিরাপদ
নতুন মায়েরা যাঁরা বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন ও যক্ষ্মার জন্য চিকিৎসা চলছে, তাঁরা নিরাপদে তা করতে পারেন। যক্ষ্মার চিকিৎসার ওষুধ বুকের দুধে খুব অল্প পরিমাণে নিঃসরিত হয়, পরিমাণে যা ক্ষতিকারক বলে ধরা হয় না। মনে রাখা দরকার, যক্ষ্মা ফুসফুসে না হয়ে শরীরের অন্য যেকোনো জায়গায়ও হতে পারে।
[FA]pen[/FA] লেখক: ডা. নওসাবাহ্ নূর, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, পপুলার মেডিকেল কলেজ