[HIDE]অলিভারকে সিটে বসিয়ে চোখেমুখে পানির প্রথম ছিটা দেওয়ার সাথে সাথেই রিশান শুনতে পেল রাত্রির আর্তচিতকার শুনতে পেল । অলিভারকে রেখে ছুটল ককপিটে । গিয়ে দেখল রাত্রি হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । পাশেই ফার্স্ট এইড বক্স হাত থেকে পড়ে জিনিস পত্র সব ছড়িয়ে আছে । কি হয়েছে আন্দাজ করার চেষ্টা করল রিশান । জ্যাগোকে দেখল কন্ট্রোলের উপর মাথা দিয়ে পড়ে আছে । কাছে গিয়ে জ্যাগোর বাম হাতটা তুলে নিলো, ঠাণ্ডা স্পর্শ পেলেও তিনটে আঙ্গুল রাখল কব্জির নিচে । কোন সাড়া নেই । অনেক আগেই মারা গেছে সে ।[/HIDE][HIDE][/hide]
[HIDE]
রাত্রির পাশে গিয়ে কাঁধে হাত রেখে দাঁড়াল রিশান । মুখে কিছু বলার ক্ষমতা নেই তার । নীরবেই সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করল । রাত্রির এই মানসিক অবস্থায় এটাই অনেক ।
কেবিন থেকে ভেসে এলো গোঙানোর আওয়াজ । অলিভারের জ্ঞান ফিরেছে বোধহয় ।
ককপিট থেকে কেবিনে চলে এলো দু’জনে । কেবিনে ঢুকতেই দেখল অলিভার তাদের দিকে তাকিয়ে হাসার ব্যর্থ চেষ্টা করছে । তারা কাছে আসতেই বলল তোমাদের কিছু হয়নি দেখে ভালো লাগল । তোমাদের দুজনের কিছু হলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না আমি ।
রিশান বলল, দেখুন আপনার শরীর এখন অনেক দুর্বল । একটু চুপ করে বিশ্রাম নিন ।
তা না হয় নিলাম । আচ্ছা জ্যাগোর কি খবর ? ওর জ্ঞান ফিরেছে ? এখন নিশ্চই রেডিও নিয়ে বসে আছে ? চিন্তা করো না । ও এ ব্যাপারেও এক্সপার্ট । ঠিক যোগাযোগ করে ফেলবে কারো সাথে, আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে যাবে ।
ছেলেমেয়েদের মুখের দিকে ভালো করে তাকাতেই বুঝল জ্যাগোর কিছু হয়েছে । আবার প্রশ্ন করল জ্যাগো ভালো আছে তো ? কি হয়েছে ওর কথা বলছ না কেন ?
রিশান বেশ শক্ত, মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে । তাকে দেখে বোঝার কিছু নেই । কিন্তু রাত্রির মুখের দিকে তাকিয়ে যা বোঝার বুঝে নিলো সে । অলিভার জীবনে পোড় খাওয়া মানুষ । সহকর্মীর মৃত্যুতে দুঃখ পেলেও ভেঙ্গে পড়ল না । হালকা মাথা নাড়িয়ে বলল, জ্যাগোর সৎকারের ব্যবস্থা করা দরকার । কিন্তু উঠতে গিয়েও উঠতে পারল না । আবার শুয়ে পড়ল ।
রিশান বলল, হ্যাঁ, তার আগে আমাদের প্লেন থেকে বের হওয়া দরকার । প্লেনে আগুন লেগে যেতে পারে ।
নাহ্* সে চিন্তা নেই । ভাগ্য আমাদের কিছুটা হলেও ভালো । আগুন ধরার হলে নামার সময় ধাক্কা যখন লেগেছে তখনই লেগে যেত ।
আচ্ছা আমরা কোথায় নেমেছি জানেন ?
হ্যাঁ, কলাম্বিয়ার বর্ডার থেকে দূরে, ইয়াপুরার কাছে কাল রাতে ক্রাশ-ল্যান্ড করেছিল জ্যাগো । এখন আমরা আমাজন এলাকার মধ্যে রয়েছি, সভ্যতা এখান থেকে অনেক দূরে, চারপাশে শুধু গহীন অরণ্য ।
অলিভারকে প্লেনে রেখে জ্যাগোর দাফনের জন্য জায়গা খুঁজতে বের হলো রাত্রি আর রিশান ।
চারপাশ দেখে স্তব্ধ হয়ে গেল ওরা । এমন জঙ্গল আর কখনো দেখেনি । অনেক বড় বড় গাছ আর এতো ঘন যে সূর্যের আলো ঢুকছে না ঠিকমতো । পায়ের তলায় নরম আর ভেজা মাটি । তার উপর সবুজ শ্যাওলা । কাদায় পা দেবে যাচ্ছে ।
সামনে একটা টিলা দেখতে পেল । গাছপালার মাথা ছাড়িয়ে বেশ সামান্যই উপরে উঠেছে । টিলার উপরে উঠলে চারপাশের জায়গা সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে বলে ওরা টিলাটির উপরে ওঠার চেষ্টা করল ।
বিশেষ কষ্ট করতে হলো না উঠতে । আর চূড়াটাও চোখা নয়, সমতল । দাঁড়ানো যায় বেশ ভালোভাবেই । নিচে তাকিয়ে অবাক হয়ে না পারল না ওরা । মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো অস্ফুট শব্দ । ঠিক তাদের নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে ইয়াপুর নদী, পুবে । নদীর দুই তীরে চওড়া চরা, হলুদ বালি চিকচিক করছে রোদে । তিন কিলোমিটার মত উঁচু উঁচু পাথরের চাইয়ের মাঝে ঢুকে হারিয়ে গেছে নদীটা । তার পরে ছড়িয়ে রয়েছে পাহাড় শ্রেণী, মহান আন্দিজের বিশাল পার্বত্য এলাকা ।
এতো বিপদের মধ্যেও এই অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ওদের মন ভালো হয়ে গেল । ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিল এই ভেবে যে তাদের অন্তত কোন মরুভূমিতে এনে ফেলেনি । অনেক কষ্টেই চোখ ফিরিয়ে নিলো প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য থেকে । একে অন্যের দিকে তাকালো দুজনে । আশেপাশে লোকালয়ের চিহ্নমাত্র নেই । চারপাশে গাছপালার বিস্তারের মাঝে পথ খুঁজে পাওয়া শুধু মুশকিল নয় অসম্ভব ও বটে ।
নেমে এলো ওরা পর্বত থেকে । প্লেনে ফিরে গেল ওরা । গিয়ে দেখল অলিভার ততোক্ষণ বসে ছিল না । দুর্বল শরীর নিয়েই সে সহকর্মীর মৃতদেহের রক্ত মুছে, পরিষ্কার করে একটা সাদা কাপড় দিয়ে মুড়ে রেখেছে । সেটার দিকে তাকাতেই আবার বুকের ভেতর ফাঁকা হয়ে গেল দুজনের ।
রাত্রি প্লেনে থেকে গেল অলিভারের সাথে । রিশান জ্যাগোর মৃতদেহ একটা হুইল চেয়ার জাতীয় জিনিসে করে নিয়ে গেল দাফনের জন্য । যেতে যেতেই চিন্তা করল, সে কি কখনো ভেবেছে যে তাকে কারো মৃতদেহ বয়ে নিয়ে গিয়ে দাফন নিজ হাতে দাফন করতে হবে ? সে তো এমন শক্ত মনের ছেলে ছিল না । ছিল বাবা-মা আর বোনের আদরের । পরিস্থিতিই তাকে এরকম করে ফেলেছে । অবশ্য এখানে টিকে থাকতে হলে তাকে এমনটাই হওয়া প্রয়োজন ।
প্লেন থেকে বেশ দূরে একটা গাছের নিচে মাটি খুঁড়ল রিশান । কাদামাটি হওয়ায় বেশি কষ্ট করতে হল না । কিন্তু লাশটা নামানোর সময় বেশ ভয় করল তার । এমন একটা নির্জন জায়গায় একা একা, সাথে লাশ, ভয় পাওয়াই স্বাভাবিক । তাড়াতাড়ি মাটি চাপা দিয়ে ফিরে এলো রিশান ।
[/HIDE]