What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other দ্য টার্গেট থেকে পাসওয়ার্ড - কোথায়, কতটুকু মিল? (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,441
Pen edit
Sailboat
Profile Music
4ZweGIX.jpg


এবারের ঈদে সর্বাধিক হলে মুক্তি পাওয়া “পাসওয়ার্ড” ছবিটি নিয়ে উঠেছে গল্প চুরির অভিযোগ। যমুনা টেলিভিশন তাদের একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, “পাসওয়ার্ড” ২০১৪ সালের কোরিয়ান থ্রিলার মুভি “দ্য টার্গেট” এর হুবহু নকল।

ভাবলাম, অন্যের কথার ওপর বিশ্বাস করার চেয়ে নিজে একবার যাচাই করে নেওয়া উচিত। এর আগে “পোড়া মন ২”, “আয়নাবাজী” নিয়েও এমন অভিযোগ উঠেছিল। সেগুলো দিনশেষে মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে, দুয়েকটা সিন নকল থাকলেও অধিকাংশ নকল পাওয়া যায়নি। আবার এর উল্টোটাও হয়েছে। এই ছবির পরিচালক মালেক আফসারীর সবশেষ দুই ছবি “অন্তর জ্বালা” এবং “ফুল এন্ড ফাইনাল” এর গল্পের পুরোটাই নকল হিসেবে অতীতে সনাক্ত করা গেছে। তো এই বিখ্যাত অমৌলিক নির্মাতা দানে দানে তিন দান দিলো কিনা, মানে টানা তিনখানা নকল ছবি দিতে পারলো কিনা সেটা যাচাই করার জন্যই “দ্য টার্গেট” দেখা..

প্রথমেই বলে রাখি, আমি এছবির কোনো ইসাব কিংবা বিসাব পাইনি। তাই যতটুকু বুঝতে পেরেছি ঠিক ততটুকুই উল্লেখ করলাম। এর বাইরেও কিছু মিল/অমিল থাকতে পারে।
আর লেখাটিতে ভরপুর স্পয়লার আছে। সুতরাং, “পাসওয়ার্ড” না দেখে থাকলে এই লেখা আপনার জন্যে না।

⭐ অমিল আছে যেসব জায়গায়ঃ

১. “পাসওয়ার্ড” ছবিতে শবনম বুবলীর রূপ দেওয়া ডাক্তারের চরিত্রটি “দ্য টার্গেট” ছবিতে হলো একটি পুরুষ চরিত্র। কোরিয়ান মুভিটিতে ডাক্তারের অন্তস্বত্বা স্ত্রী কে অপহরণ করা হয় এবং বলা হয় একজন রোগীকে তার হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে আনতে হবে। আর “পাসওয়ার্ড” এ শবনম বুবলীর অন্তস্বত্বা বোন কে অপহরণ করা হয় এবং বলা হয় একজন রোগীকে তার হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে আনতে হবে।

২. “পাসওয়ার্ড” ছবিতে অমিত হাসানের ‘কবির খান’ চরিত্রটি “দ্য টার্গেট” ছবিতে হলো একটি নারী চরিত্র। কোরিয়ান ছবিটিতে এই পুলিশ অফিসার পুলিশের ছদ্মবেশে থাকা খলনায়কের আসল রূপ জানার সাথে সাথেই গুলিবিদ্ধ হন, “পাসওয়ার্ড” এও তাই!

৩. “দ্য টার্গেট” ছবিতে নায়কের অতীত জীবনের ওপর তেমন একটা ফোকাস করা হয়নি, শুধু বলা হয়েছে তিনি একজন ভাড়াটে খুনি ছিলেন, কিন্তু এখন এসব ছেড়ে দিয়েছেন।
অন্যদিকে “পাসওয়ার্ড” ছবিতে শাকিব খানের জীবন অন্য ৫/১০ টা মানুষের মতোই স্বাভাবিক দেখানো হয়েছে। কিন্তু তার প্রকৃত পেশা কি, কীভাবে তিনি প্রফেশনাল ট্রেইনিং প্রাপ্তদের মতো আত্মরক্ষার কৌশল জানেন, কীভাবে জানালার ফাকঁ গলে ১৮-২০ তলা ভবন বেয়ে নিচে নামতে পারেন, সেরকম কোনো যথাযথ কারণ এছবিতে দেখানো হয়নি।

৪. “দ্য টার্গেট” ছবিতে মিলিয়নিয়ার সেই ব্যক্তি খুন হওয়ার পর তার কিছু ফুটেজ একটি ইউএসবি ড্রাইভ/পেনড্রাইভে সেইভ হয়ে যায়, যেটিকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে এতো কাহিনী। অন্যদিকে “পাসওয়ার্ড” ছবিতে পেনড্রাইভে থাকে মিলিওনিয়ারের ধন-সম্পত্তি কোথায় কোথায় রাখা আছে সেটার বিস্তারিত খবরাখবর।

৫. “দ্য টার্গেট” ছবিতে রাস্তায় খেলতে থাকা বাচ্চাদের ফুটবল ফুটো করে নায়ক গাড়ির লকার খুলেন। “পাসওয়ার্ড” ছবিতেও শাকিব খান একই কাজ করেন। তবে বাংলাদেশের বাচ্চারা গরীব বিধায় তারা শাকিব খানের কাছে নতুন ফুটবল চায়। শাকিব খান তাদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে টাকা দিয়ে দেন।

৬. “পাসওয়ার্ড” ছবিতে জোর করে ৪টি গান বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। “দ্য টার্গেট” ছবিতে কোনো গান নেই।

⭐ মিল আছে যেসব জায়গায়ঃ

উল্লেখিত ৬ টি পার্থক্য ছাড়া আর কোনো পার্থক্য দুইটি ছবির মধ্যে নেই। “দ্য টার্গেট” সিনেমার প্রায় ৮৫% ফ্রেম টু ফ্রেম নকল করে “পাসওয়ার্ড” এ বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছবির একদম শুরুতে শাকিবের গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বৃষ্টিভেজা রাতের আঁধারে দৌড়াদৌড়ি, গাড়ির সামনে ধাক্কা খেয়ে চিত হয়ে শুয়ে পড়া, পরবর্তীতে হাসপাতালে স্থানান্তর হওয়া, এসব কিছু “দ্য টার্গেট” ছবির শুরুতেও রয়েছে।

হাসপাতালে দেখানো ২০-২৫ মিনিটের থ্রিলার সিক্যুয়েন্সের পুরোটাই “দ্য টার্গেট” ছবিতে রয়েছে। শাকিব খান একটি সিক্যুয়েন্সে বুবলীকে সুকৌশলে দু’পা দিয়ে পেঁচিয়ে আটকে ফেলেছিল, হলভর্তি দর্শক সেই সিন টি দারুণ উপভোগ করেছিল। আফসোস, সেটি এই “দ্য টার্গেট” থেকে নকল করা।

“পাসওয়ার্ড” ছবিতে ছোট জাহাজে করা সিক্যুয়েন্সটি, যেখানে অমিত হাসান মারা যায়। “দ্য টার্গেট” ছবিতেও সেই সিক্যুয়েন্সটি ছোট জাহাজের ওপরই করা। এছাড়াও “দ্য টার্গেট” ছবিতে গুলিবিদ্ধ নায়ককে পিঠের ওপর উঠিয়ে জাহাজের করিডরে নিয়ে আসা, তার ক্ষত সেলাই করে দেওয়া, তাকে ট্যাবলেট গুঁড়ো করে খাইয়ে দেওয়া.. এসব কিছু “পাসওয়ার্ড” ছবিতে দেখতে পাওয়া যায়।

“দ্য টার্গেট” এর পরিত্যক্ত পার্কের সিনটিও বাদ যায়নি। “পাসওয়ার্ড” ছবিতে নায়কের ভাইকে সেই পার্কেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো! আর ইমনের অভিনয় এবং “দ্য টার্গেট” ছবির ইয়ো জুন-স্যাঙ এর অভিনয় পুরো কার্বন কপি! মালেক আফসারী যেন তার হাতে স্ক্রিপ্ট না ধরিয়ে এছবির এক কপি ডিভিডি হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন, যার দরুণ এতো মিল।

এছবির শেষ ফাইটের ক্লাইম্যাক্সটি, যেটির কোরিওগ্রাফির জন্য সবাই “পাসওয়ার্ড” টিমকে বাহবা দিয়েছে, আফসোস সেটিও এই “দ্য টার্গেট” দেখে দেখেই করা। পরিচালক মালেক আফসারী, প্রযোজক শাকিব খান তাদের টিমের প্রত্যেকের হাতেই এক কপি করে ডিভিডি ধরিয়ে হয়তো বলেছেন, আমার ক্যামেরাওয়ার্ক হুবহু এমন হওয়া চাই, আমার ফাইট সিনগুলি হুবহু এমন হওয়া চাই।

পরিশেষে বলতে চাই, রিমেক সারা বিশ্বব্যাপৗ একটি সুষ্ঠু চলমান প্রক্রিয়া। একজন পরিচালক/প্রযোজক চাইলেই পৃথিবীর যেকোনো দেশের গল্প তার নিজের ভাষায় দেখাতে পারেন। সেক্ষেত্রে কিছু ক্ষুদ্র কাজ করতে হয়। গল্পের রাইট কিনতে হয়,কাহিনীকারকে সিনেমায় ক্রেডিট দিতে হয় ইত্যাদি। আপনি যেখানে কোটি টাকার সিনেমা বানাচ্ছেন, সেখানে এই জায়গায় কিছু টাকা খরচ করা কোনো বড় ব্যাপার না। যে কোরিয়ার ছবিটি নিয়ে কথা বলছি, সেটিও কিন্তু মৌলিক গল্পের না। এটি ২০১০ সালের ফ্রেঞ্চ ছবি “পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক” এর অফিসিয়াল রিমেক। তারা রাইট কিনে তবেই এছবি বানিয়েছে। এছাড়া এছবি সামনে বলিউডে রিমেক হচ্ছে, শবনম বুবলীর নারী চরিত্রটিকে সেখানে প্রধান চরিত্র হিসেবে রাখা হয়েছে সেখানে, মূল ভুমিকায় আছেন কৃতি স্যানন। সাউথেও এছবি সামনে রিমেক হচ্ছে, “কাদারাম কোন্দান” নামে। শাকিব খানের চরিত্রে সেখানে আছেন তামিল সুপারস্টার চিয়ান বিক্রম।

সেহিসেবে এরকম একটি ভালো গল্প উপমহাদেশে প্রথম আনার ক্রেডিটটা আমরাই নিতে পারতাম। বলিউড, সাউথের ছবিগুলো ভবিষ্যতে মুক্তি পেলে বাঙালিরা বাইরের দুনিয়ায় বলতে পারতো, এছবির গল্প আমরা অলরেডি জানি। কারণ, আমাদের দেশে আগে রিমেক হয়েছে এবং খুব কম সময়ে কাজ শেষ করা হয়েছে। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডের ছবি বানাতে গিয়ে আর বাইরের বিশ্বের সামনে নিজেদের মুখ রাখা হলো কই? এভাবে কাউকে কিছু না জানিয়ে গল্প তুলে আনা নির্ঘাত চুরির সামিল! এমন চুরির কোনো মূল্য নেই, কোনো দাম্ভিকতা নেই। ফ্রেঞ্চ ছবির সেই প্রযোজক চাইলে শাকিব খানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে বিশাল অঙ্কের জরিমানা চেয়ে মামলা করতে পারবেন। আর সেই মামলা করলে টাকার গচ্ছা তো যাবেই, তার চেয়ে বড় বিষয় দেশের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি হবে। ২০০৭-০৮ এর দিকে সালমান খানের “পার্টনার” ছবিটি নিয়ে এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল, বলিউডের নামের পাশে “কপিক্যাট” ট্যাগটি তখনই স্থায়ীভাবে বসে গিয়েছিল। শাকিব খান অনেক বড় একজন সুপারস্টার, তার জনপ্রিয়তা এখন দেশ ছাড়িয়ে কোলকাতাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। তবে প্রযোজক হয়ে তার গন্ডমূর্খের মতো এমন কাজ করা মোটেও উচিত হয়নি, অন্তত এই ২০১৯ এ এসে।

আর আব্দুল্লাহ জহির বাবুর কথা আর কি বলবো, ওনাকে কেউ ভালো নাম ধরে ডাকে না, সবাই “নকল বাবু” বলেই ডাকে। উনি এবছর আরো একখানা ছবিতে গল্প দিয়েছেন, “আমার প্রেম আমার প্রিয়া”। এখন দেখতে হবে এই ছবির গল্প কোথা থেকে তুলে আনা।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top