What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

দিনে রাজা, রাতে প্রহরী (1 Viewer)

বাড়ির শিশুরা তাঁকে ‘রাজামশাই’ বলে সম্বোধন করে। তাঁর স্ত্রীকেও ডাকে ‘রানি’। শুধু বাড়ির শিশুদের কথাই বলছি কেন, বাইরের মানুষও দেখেন কটিতে তলোয়ার, পিঠে তির-ধনুক নিয়ে লোকটি ঘোড়ায় চড়ে চলেছেন। দেশ থেকে রাজতন্ত্র উঠে গেছে। নেই রাজা। তারপরও রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় এ রকম একজন মানুষ আছেন, ৫০ বছর ধরে যিনি রাজার পোশাক পরে ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়ান।

NsZYffx.jpg


‘রাজা’ আবদুল কাদের

মানুষটির নাম আবদুল কাদের মোল্লা। বয়স প্রায় ৭০ বছর। বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চৌপুকুরিয়া গ্রামে। পেশায় নৈশপ্রহরী। বাড়িতে গিয়ে বোঝা গেল, নিম্নবিত্ত মানুষটি আসলে মনের ধনে ধনী। তিন ছেলে ও এক মেয়েরও বাবার শখের প্রতি পূর্ণ সমর্থন আছে। এত দিন তলোয়ার নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। এবার ছেলেদের কাছে বায়না ধরেছেন, তাঁর একটা বন্দুক চাই। ছেলেরা রাজি, বাবাকে খুশি করতে তাঁরা বন্দুকই কিনে দেবেন।

দূর থেকেই লোকজন ‘রাজা’ আবদুল কাদেরের বাড়ি চিনিয়ে দিল। বাড়ি গিয়ে জানা গেল, রাজামশাই একটু বাইরে গেছেন। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বসতে বললেন। পৌনে এক ঘণ্টার মধ্যেই রাজা এলেন। ঘোড়ার গদি সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। এ জন্য সাধারণ পোশাকে ছিলেন। পারিবারিক ব্যস্ততার মধ্যেও রাজার পোশাক পরতে রাজি হলেন। শুধু নিজের পোশাক নয়, রাজার ঘোড়ারও আছে রাজকীয় পোশাক। ৫০ বছরে ১৫টি ঘোড়া পরিবর্তন করেছেন। এখনকারটা ১৬ নম্বর।

প্রথমে ঘোড়াকে সাজাতে বসলেন। ঘোড়ার একেকটি পায়ে তিনটি করে ঝালর লাগালেন, ঘুঙুর বাঁধলেন। পিঠে চড়ালেন গদি। তার ওপরে মখমলের কাপড়। মেজ ছেলে হাশেমের স্ত্রী তানিয়া বেগম একে একে সবকিছু শ্বশুরের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন। ঘোড়াকে সাজাতে সাজাতে আবদুল কাদের নিজের ঘরদোরের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আমার কিছু না থাক, যখন ঘোড়ায় চড়ে বাইরে বের হব, তখন সবাই আমাকে রাজা ডাকবে। আমি নিজেও মনে করি আমি রাজা।’

কাদেরের ছোট ভাইয়ের বউ সুবেলা বললেন, রাজা বলে কথা। তাঁর তো রাজ্য নিয়ে অনেক ভাবনাচিন্তা। তাই রাগও বেশি।

রাজার সাত রঙের জরির পোশাক। কোনটা পরবেন, সে সিদ্ধান্ত জানার জন্য ছেলের বউ তানিয়া দাঁড়িয়ে আছেন। রাজা চাইলেন লাল রঙের পোশাক। বোতাম লাগিয়ে দিলেন মেজ ছেলের বউ কিন্তু মুকুট তিনি আর পরালেন না। বললেন, বড় ছেলের বউ থাকতে তিনি মুকুট পরাবেন কী করে। রান্নাঘর থেকে ছুটে এলেন বড় ছেলে আল আমিনের বউ রাজিয়া সুলতানা। তিনি এসে অনেক যত্ন করে দেখেশুনে মুকুটটা পরিয়ে দিলেন। কটিতে তলোয়ারটা বেঁধে দিলেন। তির-ধনুকটা পিঠে ঠিকমতো ঝুলিয়ে দিলেন। পোশাকের রঙের সঙ্গে মিল করে তানিয়া বেগম চশমা নিয়ে এলেন। হোক রবারের জুতা, তবু তানিয়া যত্ন করে মুছে দিলেন। এই পোশাক পরতেই প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগল।

yMhOXqJ.jpg


আবদুল কাদেরের মাথায় মুকুট পরিয়ে দিচ্ছেন বড় ছেলের বউ সুলতানা রাজিয়া

ঘোড়া নিয়ে বাইরে আসতেই আবদুল কাদেরের বড় নাতনি আলপনা একটি প্লাস্টিকের চেয়ার নিয়ে দৌড়ে বাইরে এল। আবদুল কাদের বললেন, ‘বয়স হয়েছে। আগের মতো লাফ দিয়ে ঘোড়ায় চড়তে পারি না। তাই চেয়ারে পা দিয়ে ঘোড়ায় চড়তে হয়।’

রাস্তায় উঠেই ঘোড়াকে কষে চাবুক মারলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলেন ‘রাজা’। গ্রামের চা–দোকানি বাবুল সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বললেন, ‘আপনারা কি কাদের রাজার বাড়িত আইচেন?’ কথায় কথায় বললেন, ‘আমার বয়স ৪০ হতে যাচ্চে। বুদ্ধি হওয়ার পর থাইকি দেখতিচি। আবদুল কাদের রাজার পোশাক পইরি ঘোড়ায় চইড়ি বেড়ায়। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও যায় রাজা সাইজি। এলাকার সব মানুষ তাকে রাজা বুলিই ডাকে।’

একটু পরই আবার ফিরে এলেন। ঘুঙুরের শব্দ পেয়েই বাড়ির লোকজন আবার ছুটে বের হলো।

lca0NsB.jpg


রাজার পোশাক পরে এভাবে ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়ান আবদুল কাদের

দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়ার সুযোগ পাননি আবদুল কাদের; ছেলেমেয়েদেরও করাতে পারেননি। বাড়িঘরের অবস্থা শোচনীয়। ইটের দেয়ালের ওপরে কোনোরকমে টিনের ছাউনি দিয়ে রেখেছেন। তার মধ্যেই নিজের ঘরটা যেন একটা জাদুঘর। দেয়ালে সারি সারি ঘোড়ার চাবুক, তলোয়ার, বেল্ট, ঘোড়ায় চড়া ছবিসহ নানান জিনিস সাজিয়ে রেখেছেন।

আবদুল কাদের স্থানীয় কাঁঠালবাড়িয়া বাজারের একজন নৈশপ্রহরী। মাসিক বেতন ছয় হাজার টাকা। স্বভাবতই সংসারে টানাটানি। তার মধ্যেই তাঁর কর্মকাণ্ড দেখে মনে হলো, তাঁর মতো সুখী মানুষ আর হয় না। ধনের নয়, তিনি মনের রাজা।

কেন তাঁর এই রাজা হওয়ার নেশা, জানতে চাইলে আবদুল কাদের বলেন, ‘রূপবান যাত্রায় দেখেছিলাম, জরির পোশাক আর তাজি ঘোড়া ছাড়া তাজেলকে স্কুলে যেতে দিচ্ছিল না। তখন বনরাজ উসমান বাদশার কাছ থেকে জরুরি পোশাক আর ঘোড়া এনে দিল। তাজেলের রাজকীয় পোশাক আর ঘোড়া সেই যে আমার মন কেড়ে নিল, তার পর থেকেই মনে হয় আমিও রাজা।’

ফেরার সময় প্রায় দুপুর হয়ে হলে এল। আবদুল কাদের আর না খেয়ে আসতে দেবেন না। বললেন, রাজার বাড়ি থেকে না খেয়ে যাবেন!

[FA]pen[/FA] লেখক: আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ
 

Users who are viewing this thread

Back
Top