ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে, ‘ইয়োর মাউথ: আ গেটওয়ে টু ইয়োর বডি হেলথ’, অর্থাৎ মুখই স্বাস্থ্যের প্রবেশদ্বার। আমরা যা কিছু খাই, তা-ই আমাদের পাকস্থলীতে যায়। সুতরাং মুখ ও দাঁতের সুস্থতার ওপরই দেহের সুস্থতা নির্ভর করে। তাই মুখ ও দাঁতের যত্ন নেওয়া খাবার খাওয়ার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বে দাঁতের যত্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলেও বাংলাদেশে সাধারণত এই বিষয়ে চিন্তা তুলনামূলক কম মানুষই করে থাকে। তবে সময়মতো সঠিক নিয়মে দাঁতের প্রতি যত্নশীল না হলে ভবিষ্যতে ভোগান্তির শেষ থাকে না।
প্রাথমিকভাবে দাঁতের যত্ন বলতে বোঝায় দিনে অন্তত দুবার সঠিক নিয়মে দাঁত ব্রাশ করা। বিশেষ করে সকালে ও রাতে খাওয়ার পর। এ জন্যে প্রয়োজন ভালো মানের টুথপেস্ট ও টুথব্রাশ ব্যবহার করা। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত প্রাকৃতিক বা হারবাল উপাদানের মাধ্যমে দাঁতের যত্ন নেওয়া যেমন কার্যকর, তেমন দীর্ঘ মেয়াদে দাঁতের জন্য উপকারী। দাঁতের যত্নে যেসব উপাদান অধিক কার্যকর তার মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে লবঙ্গ, পুদিনা, আদা, পিপুল, গোলমরিচ, দারুচিনি, নিম ইত্যাদি।
বলা হয় দাঁত ও মাড়ির যত্নে সবচেয়ে ভালো উপাদান হচ্ছে লবঙ্গ। এতে রয়েছে ইউজিনল নামক উপাদান, যা মুখের দুর্গন্ধ দূর করে, নিশ্বাসে সজীবতা আনে। উপাদানটিও ন্যাচারাল অ্যান্টিসেপটিকের কাজও করে। এ জন্য মুখের ক্ষত, মাড়ির ঘা সারাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। অনেকে লবঙ্গ তেলও ব্যবহার করে থাকে।
পুদিনা জিব ও দাঁতকে সুস্থ রাখে। ব্যাকটেরিয়ার কারণে মুখে যে দুর্গন্ধ হয়, পুদিনাপাতা সেই দুর্গন্ধ দূর করে। অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব টুথপেস্টে পুদিনার উপাদান নেই, সেসব টুথপেস্ট ব্যবহারের পর পুদিনাপাতা দিয়ে দাঁত মাজা প্রয়োজন। কয়েকটি পুদিনাপাতা থেঁতো করে তা দাঁত ও মাড়িতে ঘষলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে। পাশাপাশি দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়াও মরবে। দাঁতের অন্যান্য সমস্যাও দূর হবে। দাঁতের হারিয়ে যাওয়া শুভ্রতাও ফিরবে।
খাবার খাওয়ার ফলে মুখের ভেতর নানা ধরনের রোগজীবাণু বাসা বাঁধে। দারুচিনির বা এর রস সেই রোগজীবাণু সহজেই ধ্বংস করে। নিয়মিত এক টুকরো দারুচিনি মুখে রেখে দিলে তা মুখের সুগন্ধি বজায় রাখে। গবেষণায় প্রমাণিত এটি ব্যথানাশক ও জীবাণু প্রতিরোধক গুণাগুণসম্পন্ন। বিশেষ করে যারা ধূমপায়ী, তাদের মুখের পরিচর্যায় এটি বেশ কার্যকর। দারুচিনির সঙ্গে লবঙ্গের ব্যবহারে স্পর্শকাতর দাঁতের জন্য সবচেয়ে ভালো প্রতিকার। দারুচিনি ও লবঙ্গ পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি দিনে দুবার কুলকুচি করলে দ্রুত দাঁতের ব্যথা দূর হয় এবং ক্ষয় প্রতিরোধ করে।
নিয়মিত দাঁতের যত্ন নিলেও কখনো কখনো দাঁতে ব্যথা হতে পারে। এ ধরনের ব্যথা উপশমে আদা উপকারী। এক টুকরো আদা কেটে যে দাঁতে ব্যথা করছে, সে দাঁত দিয়ে চিবোতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে অন্য দাঁত দিয়ে চিবিয়ে যে রস এবং আদার পেস্ট তৈরি হবে, সেটা ওই আক্রান্ত দাঁতের কাছে জমিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যথা উপশম হবে।
দাঁতের ব্যথা বেশি হলে তার ওপরে বা পাশে একটা লবঙ্গ রেখে দিন বা সেখানে এক ফোঁটা লবঙ্গ তেল দিয়ে দিন। এতে ব্যথার উপশম হবে। তবে লবঙ্গের তেল দু-এক ফোঁটার বেশি ব্যবহার করা উচিত হবে না। আবার লবঙ্গগুঁড়ার সঙ্গে পানি বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করেও ব্যবহার করা যাবে।
দাঁত পরিষ্কার রাখার উদ্দেশ্যই হচ্ছে দাঁতের আবরণে ও ফাঁকা জায়গায় অবস্থানরত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূরে রাখা। তাই প্রতিদিন খাদ্য গ্রহণের পর সকালে ও রাতে দুবার নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা জরুরি। সবার পক্ষে এত সব উপাদান একসঙ্গে জোগাড় করে দাঁতের যত্ন নেওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার হতে পারে। তাই আমাদের উচিত কমপক্ষে এসব উপাদান আছে—এমন সব টুথপেস্ট ব্যবহার করা।
দেশে যেসব ন্যাচারাল টুথপেস্ট পাওয়া যায়, তার মধ্যে ডাবর রেড টুথপেস্ট অন্যতম। এতে লবঙ্গ, পুদিনা, আদাসহ ১৩টি প্রাকৃতিক উপাদান থাকায় দাঁতব্যথা, ক্যাভিটি, মুখের দুর্গন্ধ, প্ল্যাক, মাড়ির রক্তক্ষরণ, ব্যাকটেরিয়া উৎপাদন, জীবাণুর আক্রমণ থেকে দাঁতকে সুরক্ষা দেয়। এ ছাড়া এটি হালাল সার্টিফায়েড টুথপেস্ট। তাই দাঁতের যত্নে এখন থেকে শুধু প্রাকৃতিক টুথপেস্ট ব্যবহার হয়ে উঠুক পরিবারে নিয়মিত ব্যাপার।