বয়সের আগে চুল ধূসর হয়ে যায় কেন? কোনো রোগের প্রভাবে কি চুল সাদা হতে পারে? করোনাকালের পরিবর্তিত পরিস্থিতি কি চুল দ্রুত ধূসর হয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী? ধূসর বা সাদা হয়ে যাওয়া চুল নিয়ে এমন নানান প্রশ্ন থাকতে পারে অনেকের মনে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে একসময় চুল ধূসর বা সাদা হয়ে আসবে। এই সত্য মেনে নিতেই হবে। কিন্তু সেই বয়সে যাওয়ার আগেই যদি চুল ধূসর হয়ে আসে, তার পেছনে থাকতে পারে নানান কারণ। যদিও নির্দিষ্ট কোনো একক কারণকে এমন সমস্যার জন্য দায়ী করা চলে না বলেই জানালেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্মরোগ বিভাগের অধ্যাপক হরষিত কুমার পাল।
সম্ভাব্য কারণ
ত্বকের রঙের তারতম্যের কারণ যেমন মেলানিন নামক একটি রঞ্জক পদার্থ, তেমনি চুলের রঙের তারতম্যের কারণও এই মেলানিন। চুলের ফলিকল পর্যন্ত মেলানিন পৌঁছাতে গন্ডগোল হলে চুল ধূসর হয়ে আসতে পারে। বংশগত কারণেও এ রকম হতে পারে। আবার পরিবেশগত কারণ, বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের অভাব (বিভিন্ন ভিটামিন, আয়রন, জিংক, কপার, সেলেনিয়াম প্রভৃতি), শরীরের জন্য ভালো কোলেস্টেরলের (এইচডিএল কোলেস্টেরল) কমতি, থাইরয়েড হরমোনের কমতি (ঘাটতি নয়, অর্থাৎ হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক পরিসরে থাকলেও তা একটু কমের দিকে থাকা) হতে পারে এমন কিছু বিষয়। মানসিক চাপও চুল পাকার (সাদা হওয়া) পরোক্ষ কারণ হতে পারে। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি কোনো রোগে ভুগলে, মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে কোনো কোনো ব্যক্তি এমন সমস্যায় পড়তে পারেন। কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও চুলের বর্ণ বদলে যেতে পারে। তবে চুল ধূসর হওয়ার নির্দিষ্ট কারণ এখনো জানা যায়নি। তাই এসব কারণের কোনো একটি কারণকে সম্পূর্ণভাবে দায়ী করার সুযোগ নেই। করোনাকালের পরিবর্তিত জীবনধারাও যে একটা সম্ভাব্য কারণ হতে পারে না, তা নয়। তবে এ–সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান এখনো শোনা যায়নি।
কিছু কথা জানা থাক
নির্দিষ্ট বয়সের আগে চুল ধূসর হয়ে যাওয়ার সংজ্ঞাটি কি নির্ধারিত? ইউরোপীয় জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে ২০ বছর বয়সের আগে চুল সাদাটে হয়ে গেলে ধরে নেওয়া হয় আগেভাগেই চুল পেকে গেল। এশীয় জনগোষ্ঠীর জন্য অবশ্য এ রকম কিছু নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। বয়সের কারণে ধূসর হওয়া চুল আর আগের বর্ণে ফিরে আসে না। তবে বয়সের আগেই ধূসর হয়ে যাওয়া চুল অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা নিলে আবার আগের বর্ণে ফিরে আসে।
প্রতিরোধ হতে পারে
যেহেতু বয়সের আগেই চুল সাদা হয়ে যাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই, তাই এ সমস্যা সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ করার সুযোগ কম। চুলের স্বাভাবিক রং বজায় রাখতে কিছু বিষয় মাথায় রাখা যেতে পারে। সুষম খাদ্যাভ্যাসের বিকল্প নেই। সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে সব কটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। কোনোটিকে গ্রহণ করে কোনোটিকে বর্জন করার সুযোগ নেই। যেমন অতিরিক্ত মাত্রায় স্নেহ পদার্থের নানান ক্ষতিকর দিক রয়েছে বলে তা একেবারে বাদ দিয়ে দেওয়া যাবে না। বরং কিছু কিছু স্নেহ পদার্থ পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা আবশ্যক। প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল খেতে হবে। পানি পান করতে হবে পর্যাপ্ত। শারীরিক পরিশ্রম আবশ্যক। চাই ঠিকঠাক বিশ্রাম। তবে মাথায় রাখুন, জেনেটিক কারণে চুল সাদাটে হয়ে যাওয়ার বিষয়টা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।