What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ছিন্নমূল /কামদেব (2 Viewers)



ত্রয়োষষ্টিতম অধ্যায়




কিছুক্ষন কাত হয়ে শুয়ে থাকে কিন্তু ঘুম আসেনা। সুখ উঠে লাইব্রেরী ঘরে গিয়ে আলমারিতে বই দেখতে থাকে।মোমো মনে হল অসন্তুষ্ট হয়েছে।সুন্দরী বিদুষী চাকরি করে এমন মেয়েকে অপছন্দ হবার কোনো কারণ নেই।কিন্তু এই ফ্লাটের লোকজন কলেজের সহকর্মীরা এতদিন যে চোখে দেখে আসছে তাদের চোখে কোথায় নেমে যাবে ভেবে মোমোর এই আবেগকে মন থেকে প্রশ্রয় দিতে পারেনি।কারো দুর্বল মুহূর্তের সুযোগ নেওয়াকে ঘৃণা করে। সুখ জানে এক সময় নিজের কাজের জন্য মোমোর আফশোসের সীমা থাকবে না।নিজের কাছে নিজেই ছোটো হয়ে যাবে।একজন মহিলার সরলতার সুযোগ নিয়ে এতবড় অন্যায় করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।মোমোর কাছে তার যা ঋণ কখনো শোধ হবার নয়। বই ঘাটতে ঘাটতে বুঝতে পারে বিভিন্ন বিষয়ের বই পড়তে ভালবাসে মোমো।একটা বই নিয়ে পাশের ছোটো খাটে কাত হয়ে শুয়ে চোখ বোলাতে থাকে।
মনে মনে গড়া কল্পনার প্রাসাদ এভাবে ভেঙ্গে পড়বে ভাবেন নি।এরকম একজন বয়স্ক মহিলাকে রাজী না হওয়াটা দোষের নয়।সরাসরি না বলে সামাজিক সম্মানের দোহাই দিয়ে এড়িয়ে যেতে চাইছে।ছেলেটি ভদ্র তাই মুখের উপর না বলেনি। যেখানে যেতে চায় যাক দীপশিখা বাধা দেবে না।আসলে এরা পেশাদার এদের কাছে অন্যরকম কিছু প্রত্যাশা করাই ভুল হয়েছে।আবার আরেকটা ভুল করলেন ভেবে নিজেকে মনে মনে ভর্ৎসনা করেন।একের পর এক ক্লাস শেষ করে দীপশিখা কলেজ থেকে বেরিয়ে বাস স্টপেজে এসে দাড়ালেন।অতসীর কথা মনে পড়তে কেমন এক গ্লানিবোধ তাকে জড়িয়ে ধরে।যে লোকটা তাকে উপভোগ করেছে সে তার চোখের সামনে থাকবে ভেবে অস্বস্তিবোধ করেন।কি বলছিল মেসের কথা,যত তাড়াতাড়ি যায় ভাল।ওকে এখনই কিছু বুঝতে দেওয়া ঠিক হবে না।বাস আসতে উঠে পড়লেন।কি করছে বাসায় কে জানে।বাইরে থাকে তালা দেওয়া আছে ভেবে স্বস্তি বোধ করেন।
তিন তলায় উঠে দরজা খুলতে গিয়ে কিছুটা দ্বিধান্বিত। ওর চোখের সামনে দাড়াতে হবে ভেবে অস্বস্তি বোধ করেন।মনে মনে হিসেব করলেন মাঝে আর তিনদিন তারপর চেকআপের জন্য হাসপাতাল যেতে হবে।সেখান থেকে মেসে পাঠিয়ে দেবেন। দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে মনে হল ঘুমোচ্ছে।নিজের ঘরে গিয়ে শাড়ি বদলে রান্না ঘরে গিয়ে চায়ের জল চাপালেন।চায়ের জল ফুটছে।কমল যে কাজ করেছিল তিনিও তো সেই কাজই করেছেন।কমলের সঙ্গে তার ফ্যারাক কি রইল।ড.কাঞ্জিলাল না বললে এইসব লেজার-টেজার দীপশিখা কিছুই জানতেন না।ভেবেছিলেন স্বামী-স্ত্রী হয়ে গ্লানিমুক্ত হবেন।দু-কাপ চা ঢেলে বাকীটা ফ্লাক্সে রেখে বসার ঘরে এসে এক কাপ নামিয়ে রেখে আরেককাপ লাইব্রেরী ঘরে টেবিলে রেখে বললেন,চা রেখে গেলাম।
বসার ঘরে এসে টিভি চালিয়ে চায়ে চুমুক দিতে থাকেন।টিভি চলছে দীপশিখার সেদিকে মনোযোগ নেই।তার ডেস্কটপ সারাতে কমল এসেছিল। দীপশিখা নিজের ঘরে শুয়েছিলেন।বেশ কিছুক্ষন পর সারানো হল কিনা দেখার জন্য এসে দেখলেন ঘরে কেউ নেই, কম্পিউটার চলছে স্ক্রিনে দুই উলঙ্গ ছেলে মেয়ে।মেয়েটি ছেলেটার পেনিসটা ধরে ছালটা খুলছে আবার বন্ধ করছে।এক সময় মুখে পুরে নিল। দেখতে দেখতে সারা শরীর ঝিন ঝিন করতে থাকে।সারা শরীরে অদ্ভুত এক জ্বালা অনুভুত হয়।আচম্বিতে কোথা থেকে এসে কমল ঝাপিয়ে পড়ল তার উপর।সোফায় ফেলে বুকের উপর উঠে মুখে মুখ চেপে ধরল।বাধা দেবার সামর্থ্য ছিল না।কমল বলেছিল তাকে বিয়ে করবে।সেই থেকে একসঙ্গে থাকতো।কমলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বিয়ে তো তার হয়নি।দীপশিখা ভাবেন মনুর আর দোষ কি?
এখন মনে হয় বাবার অবাধ্য হওয়ার জন্য হয়তো তার আজ এই পরিণাম।সেদিন যদি শহুরে মোহে গ্রাম ছেড়ে--।ফোন বাজতে কানে লাগালেন।
হ্যা দীপুদি...ঠিক সময়ে যাবো...তুই কি সবাইকে এভাবে রিমাইণ্ডার দিচ্ছিস...আমি আলাদা? কতটুকু জানিস তুই আমাকে...আচ্ছা যাব...রাখছি?
ফোন বন্ধ করে মনটা অতীতে বিচরণ করতে থাকে।খেয়াল করেন মনু পাশে এসে বসেছে।এক্টু সরে গিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে বসেন দীপশিখা। মনুর দিকে খেয়াল নেই টিভির পর্দায় এমনভাবে চোখ রাখেন যেন কি গুরুত্ব বিষয় দেখছেন।
মোমোর আচরন লক্ষ্য করে সুখ।তার ব্যবহারে মোমো কি ব্যথিত ভেবে কষ্ট পায়। এরকম চুপচাপ বসে থাকতে দেখে সুখ বলল,মোমো তুমি কি আমার উপর রাগ করেছো?
কেন তোমার উপর রাগ করব কোন অধিকারে?তাছাড়া তুমি তো কোনো অন্যায় করো নি।বরং আমিই কলঙ্ক মোচনের জন্য অন্যায় প্রস্তাব দিয়েছি।
কলঙ্ক মোচন?
তুমি কে তুমি আমাকে উপভোগ করো নি?আমি কি হারলট?একজন নারীর এর চেয়ে বড় কলঙ্ক আর কি হতে পারে?
মোমো তুমি বিশ্বাস করো তুমি-আমি ছাড়া কেউ এসব কোনো দিন জানবে না।
কেউ জানুক না জানুক সত্যি তো আর মিথ্যে হতে পারে না।অন্ধ সূর্যকে দেখতে পায় না তাহলে কি সূর্যোদয় হয় না। যাক এসব নিয়ে কথা বলতে আমার ভাল লাগছে না।
সুখ কিছুক্ষন গুম হয়ে বসে থাকে।দীপশিখা উঠে রান্না ঘরে চলে গেলেন।ভাত চাপিয়ে দিলেন কাল অনেক কাজ কলেজ আছে কলেজ থেকে ফিরে ওর জন্য রান্না করে শুক্লার বিয়েতে যেতে হবে মনে মনে হিসেব করেন।সোমবার হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে তারপর মেসে পাঠিয়ে দিয়ে শান্তি।
রান্না শেষ হলে দীপশিখা ডাইনিং টেবিলে দুজনের খাবার সাজিয়ে ডাকলেন,রাত হয়েছে খাবে এসো।
অপরাধীর মত মুখ নিয়ে সুখ ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসল।একটু আগে বলা মোমোর কথাগুলো নিয়ে মনে মনে নাড়াচাড়া করতে থাকে।এই অবৈধ সম্পর্ক দীর্ঘকাল চালিয়ে নেওয়া যায়না।ভাত নাড়াচাড়া করতে দেখে দীপশিখা বললেন,কি হল?
মোমো আমার আপত্তি নেই।
মাথার মধ্যে চিড়িক করে উঠল ভ্রু কুচকে দীপশিখা বললেন,তুমি কি আমাকে অনুগ্রহ করছো?
না না মোমো বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ভালোবাসি--তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
মনুর কথাগুলো শুনে দীপশিখার মন নরম হয় বললেন,শোনো বিয়ে কোনো ছেলে খেলা নয়। অনেক দায়-দায়িত্ব--যা বলছো ভেবে বলছো তো?
আমি জানি ছেলে খেলা নয়।আমি তোমাকে বিয়ে করবো তোমার ভরণ পোষণ সব দায় আমি নেবো।কিছুদিন সময় আমাকে দেও একটা চাকরি ঠিক জুটিয়ে নেবো--।
চাকরি তোমাকে জোটচ্ছি।দীপশিখা মনে মনে নিজেকে শক্ত করেন।আবেগে গা ভাসিয়ে দিলে চলবে না।বললেন,ঠিক আছে রাত হয়েছে এবার খেয়ে নেও।কাল আমার আবার অনেক কাজ।
হঠাৎ মত বদলের কারণটা বুঝতে পারেন না।সোমবার ওর চেকআপ এখনই কোনো সিদ্ধান্তে পৌছাতে চান না।আগু পিছু সবটা ভাল করে ভেবে দেখতে হবে।খাওয়া শেষ হলে লাইব্রেরী ঘরে মনুর বিছানা করে দিয়ে দীপশিখা নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লেন।কাল শুক্লার বিয়ে প্রেজেণ্ট কেনা হয়ে গেছে।সোমবার ওর চেকআপ করিয়ে মেসে পাঠিয়ে দেওয়া তাহলেই কাজ শেষ।শুক্লার ভাই বাড়ী বাড়ী গিয়ে নেমন্তন্ন করেছে।এখন মনে হল কার্ডে মি এয়াণ্ড মিসেস বোস লেখানোটা ঠিক হয়নি।ব্যাপারটা কার্ডেই সীমাবদ্ধ থাকলে সমস্যা নেই যদি চাউড় হয়ে যায় আরেকটা সমস্যা।একটা যায় নতুন একটা এসে সামনে দাঁড়ায়।
 
চতুঃষষ্টিতম অধ্যায়



সাজগোজে কোনোদিনই দীপশিখার তেমন মনোযোগ ছিল না।একটা সিল্কের শাড়ি সেইমতো জামা পরলেন।হাতে কয়েক গাছা চুড়ি আর গলায় একটা হার।প্রস্তুত হয়ে আয়নার সামনে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে দেখলেন।বসার ঘর থেকে জুলজুল চেয়ে চেয়ে মনু তাকে দেখছে নজরে পড়ল।আমার আপত্তি নেই।কেতাত্থ করেছে।রাগতে গিয়ে হেসে ফেললেন দীপশিখা।বেরোবার আগে মনুকে শুনিয়ে বললেন,আমার ফিরতে কতরাত হবে ঠিক নেই।টেবিলে ভাত চাপা দেওয়া রইল খেয়ে নিও।
মোমো তোমাকে বেশ লাগছে।সুখর চোখে মুগ্ধতা।
তোমার কাছে কেউ শুনতে চেয়েছে মনে মনে বললেন দীপশিখা।মনুর কথায় আমল না দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
পিছন হতে লক্ষ্য করে সুখ দীর্ঘ দেহী গোড়ালী পর্যন্ত চন্দন রঙের শাড়ী।মোমো তাকে উপেক্ষা করছে বুঝতে পেরেও রাগ হয়না।বরং মোমোর জন্য বুকের মধ্যে অজান্তে জমে আছে একটা কষ্ট।রূপ গুণ কিইনা আছে সেই তুলনায় কিইবা পেল জীবনে। খারাপ লাগে তার কতটুকু সামর্থ্য যে মোমোকে একটু সুখের আস্বাদ দেবে।বুকে চাপা সুপ্ত বেদনার ভার নিয়ে মোমো গেল সহকর্মীর বিয়েতে।সুখ ঘড়ি দেখল এত তাড়াতাড়ি খাওয়ার অভ্যেস নেই।পিঠের দিকে হাত বাড়িয়ে ক্ষতস্থানে হাত দিয়ে চেপে বোঝার চেষ্টা করে।কিছুই বোঝা যায় না।মনে হচ্ছে শুকিয়ে গেছে।মেসের সবাই হয়তো তাকে নিয়ে ভাবছে কোথায় গেল ছেলেটা।একটা কিছু বানিয়ে বলতে হবে যাতে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।
বাস থেকে সিথির মোড়ে নেমে জিজ্ঞেস করতে দেখিয়ে দিতে পিছনে হাটতে থাকে দীপশিখা।আলোয় ঝলমল করছে সম্পূর্ণ বাড়ীটা গেটে লেখা সুজিত শুক্লার নাম।গেটের মুখে নজরে পড়ে মিসেস সেন সঙ্গে ভদ্রলোক সম্ভবত ওর হাজব্যাণ্ড।তাকে দেখতে পেয়ে ওরা দাঁড়িয়ে পড়ল।কাছে যেতে মিসেস সেন সঙ্গের ভদ্রলোককে বললেন,তুমি বলছিলে না আলাপ করবে।এই সেই দীপশিখা মিত্র,মিস মিত্র ইনি আমার বেটার হাফ।মিসেস সেনের ঠোটে হাসি।
দীপশিখা দুহাত জোড় করে নমস্কার করলেন।ভদ্রলোকও প্রতিনমস্কার করে বললেন,আমি রাজীব সেন।তিনজনে ভিতরে ঢুকে গেল।
আপনার সঙ্গে আলাপ হয়ে খুব ভাল লাগল।রাজীব বললেন।
আলাপ আর হল কই দীপশিখা ভাবলেন।বউ আগে রাজীব পিছিয়ে পড়ছেন।দীপশিখার মনে হল চোখ দিয়ে তার সারা শরীর লেহন করছে।মিসেস সেন পিছন ফিরে বললেন,কি হল দাঁড়িয়ে পড়লে কেন?
আসছি,চলুন মিস মিত্র।রাজীব বললেন।
দীপশিখা অস্বস্তি বোধ করেন।ভিতরে ঢুকতে বেশ কয়েকজন সহকর্মী ওকে ঘিরে ধরে ওদের স্বামীর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিল।তারপর চলল অপ্রয়োজনীয় আলাপ।স্বামীদের আগ্রহ দেখে ওরা টেরিয়ে টেরিয়ে দেখতে থাকে।অতি কষ্টে ওদের এড়িয়ে এগোতে যাবে একভদ্রলোক এগিয়ে এসে বলল,আপনি দীপশিখা মিত্র--রাইট?আমি সুকেশ অতসী আমার ওয়াইফ।
দীপশিখা হাসলেন।
এই বিয়ে বাড়ীতে কথা বলা যায় না।একদিন আসুন না আমাদের বাড়ি জমিয়ে গল্প করা যাবে।
দীপশিখা চোখ তুলে দেখলেন ইঙ্গিতবহ দৃষ্টি।নিরীহ হেসে বললেন,অতসীকে বলবেন কেন যাবো না।দীপশিখা এগিয়ে গেলেন।দূরে মঞ্চের উপর বসে শুক্লা।দীপশিখা কাছে যেতেই শুক্লা বলল,ওরা ঠিকই বলেছে।
কারা কি বলেছে?
দীপুদি তোমার চেহারায় বেশ জেল্লা এসেছে।
দীপশিখা ব্যাগ থেকে বাক্সটা বের করে এগিয়ে দিল।শুক্লা বাক্স খুলে অবাক হয়ে বলল,দারুণ! তুমি পরিয়ে দাও।
তোর পছন্দ হয়েছে?
হবে না?তুমি দিয়েছো এটাই বড় কথা।
দীপশিখা চেনটা ওর গলায় পরিয়ে দিলেন।শুক্লা বলল,এত দেরী করলে?
আর বলিস না।সবাই স্বামীদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিচ্ছিল।ওদের স্বামীরা নাকি আমার সঙ্গে আলাপ করার জন্য মুখিয়ে আছে।অতসীর স্বামী তো বাড়ীতে যাবার আমন্ত্রণ করে বসল।হেসে বললেন দীপশিখা।
একটা কথা বলব দীপুদি কিছু মনে কোর না।
মনে করব কেন?কি কথা?
আমাদের সমাজে একা মহিলাদের সবাই মনে করে খুব সস্তা।
বাদ দে ওসব কথা।বর কখন আসবে?
একটু রাতে লগন তাই হয়তো দেরী করছে।শুক্লা একটু ভেবে বলল,দীপুদি তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
দীপশিখা ভাবে এখন আবার কি জিজ্ঞেস করবে,তার সম্পর্কে কিছু শুনেছে নাকি?মৃদু হেসে তাকালেন।
মোটুকে তোমার কেমন মনে হয়েছে?
তুই সুজিতের কথা বলছিস?দেখ শুক্লা একবার দেখে একজন সম্পর্কে কতটুকুই বা জানা যায়।তবু বলছি ডাক্তার ছেলেটাকে আমার খারাপ লাগেনি।শোন শুক্লা তুই একজন অধ্যাপিকা যদি সেরকম কিছু মনে হয় তারও প্রতিকার আছে।
দীপুদি রাত হচ্ছে তুমি খেয়ে নেও।
রাত হয়েছে সুখ আর দেরী করে না।টেবিলে ঢাকা দেওয়া ভাত নিয়ে বসে গেল।মোমো নেই একা একা খেতে বসেছে এই প্রথম।মোমো বলছে কত রাত হবে ঠিক নেই।বিয়ে বাড়ীতে ভালমন্দ খাওয়া হয়।মাও একদিন জোর করে নেমন্তন্ন বাড়ীতে পাঠিয়েছিল মনু একটু ভালমন্দ খেয়ে আসুক।সে এক রাত গেছে।কেমন আছে বৈচিমাসী কে জানে।নিজের সংসার ছাড়া অন্যের সংসারে কেমন থাকে মানুষ সুখর মোটামুটি একটা ধারণা আছে।
খাওয়া শেষ হলে বাসন ধুয়ে টিভি দেখতে বসল।টিভি চলছে কিন্তু সুখর মন হারিয়ে গেছে অন্য চিন্তায়।মোমো না আসা পর্যন্ত শুতেও পারছে না।একা মহিলা সেজন্য চিন্তা হচ্ছে।
দীপশিখা দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখলেন মনু টিভি খুলে বসে আছে।নিজের ঘরে যেতে গিয়েও দাঁড়িয়ে পড়লেন।টেবিল পরিস্কার তাও জিজ্ঞেস করলেন,খাওয়া হয়েছে?
সম্মতি সূচক ঘাড় নাড়ে সুখ।
সন্ধ্যে বেলার খবর শুনেছো?
এইমাত্র খুলেছি।
সোমবার বিএ বিএসসির ফল প্রকাশ হবে।দীপশিখা গভীরভাবে ওর প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেন।
তাহলে কি হবে?
তুমি বলছো পরীক্ষা দিয়েছো তুমি জানো।
আমি সেকথা বলছি না।রেজাল্ট কেমন হবে জানি না তবে পাস করে যাবো।
দীপশিখার অবাক লাগে জিজ্ঞেস করেন,তাহলে আবার কি হবে?
না ঐদিন তো আবার হাসপাতালে যাবার কথা।
ঠিক আছে এখন শুয়ে পড়ো,রাত হয়েছে।
দীপশিখা ঘরে ঢুকে শাড়ী বদলাতে থাকেন।মনু তাহলে মিথ্যে বলেনি।আবার নিশ্চিত পাস করবেই।দীপশিখার ঘোর কাটে না।ম্যাক্সি গায়ে দিয়ে আয়নার সামনে দাড়ালেন।শুক্লা বলছিল চেহারায় জেল্লা এসেছে।নিজেকে মুগ্ধচোখে দেখতে থাকেন।যাবার সময় মনুও বলছিল বেশ লাগছে।আরক্তিম হন দীপশিখা।
লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়লেন।কাল আবার কলেজ আছে।সোমবারের কাজ গুলো মনে মনে সাজিয়ে নিলেন।
 
এত ছোট আপডেট! তাও আবার এতদিন পরে! মন ভরে না!
 



পঞ্চষষ্টিতম অধ্যায়




কদিন হয়ে গেল মোমো তার সঙ্গে দুই-একটা দরকারী কথা ছাড়া কোনো কথা বলছে না।সকাল বেলা হঠাৎ বলল,কদিন ধরে একটা জামা গায়ে তোমার অস্বস্তি হচ্ছে না?পিচেশের হদ্দ!
কি করব তুমি তো আমাকে মেসে যেতে দিলে না।
তর্ক করবে না জামা-প্যাণ্ট খুলে দেও।
প্যাণ্ট খুলে দেব মানে?
একটা শাড়ি এগিয়ে দিয়ে দীপশিখা বললেন,এইটা লুঙ্গির মত পরে খুলে দাও।
মোমো জামা প্যাণ্ট কাচতে যেতে "আমি কাচছি" বলে বাধা দিতে গেলে এমন চোখে তাকালো সুখ আর কথা বাড়ায় না।মোমো কারো শোনার পাত্রী নয় তারপর ওর মাথায় জল দিয়ে গরম জল দিয়ে সারা শরীর স্পঞ্জ করে দিলেন।রাতে শুয়ে শুয়ে এইসব কথা ভাবতে থাকে সুখ।মোমোর মনে কি আছে কে জানে।কালই সে চলে যাবে এই একদিনের জন্য কেন এইসব করছে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল।
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়লেন দীপশিখা।আজ কলেজ যাবেন না বলে এসেছেন।বাসি কাপড় বদলে লাইব্রেরীতে উকি দিয়ে দেখলেন,মনু গুমোচ্ছে।ঘুমোচ্ছে ঘুমোক দীপশিখা রান্না ঘরে ঢুকলেন।চা করে নিজের জন্য এক কাপ নিয়ে বাকীটা ফ্লাক্সে ঢেলে রাখলেন।গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে চা খেতে খেতে রান্না করতে থাকেন।ফোন বাজতে কানে লাগিয়ে বললেন,হ্যা বলছি...নটা নাগাদ এলেই হবে...হাসপাতালে কতক্ষন লাগবে জানিনা, তা ধরুন খুব বেশি হলে চারটে বেজে যাবে...আচ্ছা রাখছি।
সুখর ঘুম ভেঙ্গে গেছে।মোমো রান্না করছে সে ঘুমোচ্ছে বলেই হয়তো চা দেয়নি।বেসিনে গিয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে ফিরে আসতে দেখল মোমো চা নিয়ে দাঁড়িয়ে, হাতের থেকে চায়ের কাপ নিতে মোমো বলল,আমরা নটার সময় বেরোব।
একবার ভাবে বলে,আমি একাই যেতে পারব তোমার কলেজ আছে কিন্তু মুখের চেহারা দেখে সুখর সেকথা বলতে ভরসা হল না।মনে মনে ভাবে এখান থেকে বেরোতে পারলে বাচা যায়। চা শেষ করে বারান্দায় গিয়ে দেখল মেলে দেওয়া জামা প্যাণ্ট নেই।রান্না ঘরে গিয়ে বলল,আমার জামা প্যাণ্ট?
আমার ঘরে খাটের উপর আছে।
মোমোর ঘরে ঢুকে সুখ অবাক বিছানার উপর পাট করে রাখা জামা প্যাণ্ট।খাটের উপর ইস্ত্রি করা জামা প্যাণ্টের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।হাতের তালুতে চোখ মুছে ভাবে এক দিন কে কোথায় হারিয়ে যাব জানি না কিন্তু যতদিন বাচবো মোমোকে ভুলতে পারবো না।জামা প্যাণ্ট নিয়ে লাইব্রেরী ঘরে ফিরে এল।আত্মীয় স্বজন হতে বিচ্ছিন্ন একাকী জীবন মোমোর জন্য কষ্ট হয়।ডমিনেটিং টাইপ চরিত্রের জন্য মোমোর এই অবস্থা।নিজে যা ভাল বুঝবে করবে।বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই ওর ভিতরে চলছে কত ভাঙ্গাগড়া।সবদিক ভেবে সুখর মনে হয়েছে, মোমোকে মোটেই স্বার্থপর বলা চলে না।
সুখ মনে মনে ভেবে নেয় হাসপাতালের কাজ মিটলে মেসে গিয়ে কাগজপত্র নিয়ে কলেজে যাবে।আজ আর সময় হবে না কাল যাবে প্লেজারে।একমাস হয়ে গেছে বেতনটা নিয়ে বলে আসবে আর কাজ করবে না।
খেতে এসো।
খেতে দিয়েছে সুখ উঠে ডাইনিং টেবিলে বসল।কেউ কোনো কথা বলে না চুপচাপ খেতে থাকে।মোমো এরকম কেন করছে বুঝতে পারে না।মোমোর রান্নার হাত ভালো। মায়ের কথা মনে পড়ল।মায়ের রান্নার সকলে প্রশংসা করতো। আবার সেই পুতুলদির হাতের রান্না খেতে হবে ভেবে মনে মনে হাসে সুখ।ফোন বাজতে দীপশিখা কানে লাগিয়ে বললেন,দশ মিনিট।ফোন রেখে বললেন,তাড়াতাড়ি খেয়ে জামা প্যাণ্ট পরে রেডি হয়ে নেও।
এমন গম্ভীর শীতল কণ্ঠস্বর সুখ কোনো কথা না বলে খেয়ে মুখ ধুয়ে জামা প্যাণ্ট পরতে থাকে।মোমোর দেরী হয় না,সাধারণ মেয়েদের মতো সাজগোজের বাতিক নেই।তাতেই তাকে সুন্দর লাগে।দুজনে নীচে নেমে আসতে সুখ দেখল একটা সাদা রঙের গাড়ী দাড়িয়ে।বুঝতে পারে মোমো গাড়ী ভাড়া করেছে।
গাড়িতে উঠে দীপশিখা বললেন,ন্যাশনাল।
মোমো কথা বলছে না সুখও উল্টোদিকের জানলা ঘেষে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে।কাছেই হাসপাতাল গাড়ী থামতে ওরা নেমে ভিতরে চলে গেল। মোমো কথা বলছে না সুখও উল্টোদিকের জানলা ঘেষে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে।কাছেই হাসপাতাল গাড়ী থামতে ওরা নেমে ভিতরে চলে গেল।
ভিতরে গিয়ে কাগজ প্ত্র জমা দিতে বাইরে অপেক্ষা করতে বলল।অনেকেই অপেক্ষা করছে।ফাকা জায়গা দেখে ওরা বসল।একজন ঢুকছে প্রায় পনেরো-কুড়ি মিনিট পর বের হচ্ছে ।দীপশিখার কেমন গা গোলাতে থাকে।উঠে বাইরে বেরিয়ে এসে ভাবলেন একটা কোল্ড ড্রিঙ্কস খাওয়ার কথা।হাটতে হাটতে রাস্তায় চলে এলেন।মিনিট তিন দূরে একটা দোকান নজরে পড়ল। দোকানে গিয়ে একটা কোল্ড ড্রিঙ্কস নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পান করলেন।একটা বড় ঢেকুর বেরিয়ে এল।ঘড়ি দেখলেন দশটা বাজে প্রায়।আবার হাসপাতালের দিকে হাটতে থাকেন।নটা নাগাদ বেরিয়েছেন প্রায় এক ঘণ্টা হয়ে গেল।সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে দেখল মনু নেই।তাহলে কি ভিতরে গেছে?দীপশিখা একটা চেয়ারে বসলেন।
উপুড় করে শুইয়ে একজন নার্স ব্যাণ্ডেজ কেটে দিয়ে ক্ষতস্থান এবং চারপাশ স্পিরিট দিয়ে মুছে দিল।দুই-একবার টিপে জিজ্ঞেস করল ব্যথা আছে কিনা। একটা অয়েনমেণ্ট লিখে দিল ক্ষতস্থানে লাগাবার জন্য।সপ্তা খানেক সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়ে সুখকে ছেড়ে দিল।সুখ উঠে বসল,পিঠে হাত বুলিয়ে বেশ হালকা লাগে।বাইরে বেরিয়ে এক কোনে বসে থাকা মোমোকে দেখে অবাক হয়।মোমো তাহলে চলে যায়নি?তাকে দেখে উঠে দাড়িয়েছে।সুখ জামা তুলে দেখালো।দীপশিখা মুখ ঘুরিয়ে নিলেন।মনুটা একেবারে ছেলে মানুষ।বাইরে বেরিয়ে এলেন।
সুখও বেরিয়ে কাছে গিয়ে বলল,মোমো তুমি যাওনি?খালি খালি তোমার কলেজ কামাই হয়ে গেল।
দীপশিখা একবার তাকিয়ে বললেন,নীচে চলো।কোনো অসুবিধে হচ্ছে নাতো?
না না একেবারে ফিট।
দীপশিখা নামতে থাকেন সঙ্গে সুখ।বুঝতে পারে তাকে মেস পর্যন্ত পৌছে দেবে।নীচে নেমে ওরা গাড়ীতে উঠে বসতে গাড়ী ছেড়ে দিল।গাড়ী মৌলালী পৌছে যখন ধর্মতলায় ঢুকছে সুখ বলল,এদিকে কোথায়?
আজ তোমার রেজাল্ট বেরিয়েছে না?
সুখ বুঝতে পারে কলেজে যাচ্ছে কিন্তু কাগজপত্তর তো সব মেসেই পড়ে আছে।সুখ বলল,কিন্তু এ্যাডমিট কার্ড তো মেসে।
মেস কোথায়?
হ্যারিসন রোডে গ্রেস সিনেমার কাছে।
ধর্মতলার মোড়ে গিয়ে সেন্ট্রাল এ্যাভিনিউ ধরবেন।
সুখ ধন্দ্বে পড়ে যায় মোমো কি করতে চাইছে।খুলে বলছে না কিছুই,খুলে বললে কি হয়েছে।তার জন্য কলেজ কামাই করল সুখ সেজন্য কঠোর হতে পারেনা।
গ্রেস সিনেমার কাছে গাড়ী দাড়াতে মোমো নেমে পড়ল।সুখ নামতে দিপশিখা বললেন,মেসে তোমার যা আছে সব নিয়ে এসো।
সুখর ধৈর্যচ্যুতি ঘটে বলল,তুমি এমনভাবে অর্ডার করছো যেন দিদিমণি।আমি কি তোমার ছাত্র?
বলে আসবে মেসে আর আসবে না।
সুখ অসহায় বোধ করে অথচ মুখের উপর কিছু বলতেও পারে না।রাস্তা পার হয়ে মেসে ঢুকে গেল। মনু চলে যেতে দীপশিখা গাড়িতে উঠে বসলেন।কোথায় ঢুকলো দেখলেন।মনে হচ্ছে মনু পরীক্ষা দিয়েছে কথাটা মিথ্যে নয়।তাহলে এইসব করতো কেন?ওর চোখে লালসা নজরে পড়েনি যত জানছেন অবাক হচ্ছেন।ফেরার পথে কয়েক প্রস্থ জামা প্যাণ্ট কিনে দেবেন।বলছে পাস করবেই।এত দেরী করছে কেন?অনেক মালপত্তর আছে নাকি ডিকিতে ধরবে তো?
একবার মনে হল অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে যাবার রাস্তা নেই তো?একবার নেমে দেখার কথা মনে হল।নজরে পড়ল একটা তোবড়ানো স্যুটকেশ হাতে ঝুলিয়ে আসছে মনু।মিথ্যে সন্দেহ করছিলেন।
এতদেরী হল?
স্যুটকেশ ভিতরে ঢুকিয়ে পায়ের কাছে রাখতে রাখতে বলল,ছাড়তে চাইছিল না।অনেক উল্টোপাল্টা বলে আসতে হয়েছে।দীপশিখা দেখলেন বাড়ীটার দরজায় মোটামত একজন মহিলা দাঁড়িয়ে এদিকে লক্ষ্য করছে।দীপশিখা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেন,ওই মহিলা কে?
উনিই তো মিসেস শেখোয়াত।
কলেজের সামনে গাড়ী দাড়াতে সুখ নেমে ঢুকে গেল।দীপশিখা স্যুটকেশটা কোলে তুলে খুললেন।কয়েকটা জামা প্যাণ্ট টুথ ব্রাশ আয়না চিরুণী তার মাঝে একটা ফাইল।ফাইলটা খুলে চোখ বোলাতে থাকেন।স্কুল ফাইন্যাল উচ্চ মাধ্যমিকের এ্যাডমিট কার্ড রেজাল্ট সব সাজানো।রেজাল্ট দেখে বিস্ময়ের ঘোর কাটেনা।দীপশিখা ছাত্রী হিসেবে ভাল ছিলেন কিন্তু তারও রেজাল্ট এত ভালো হয় নি।ছাত্রী পড়ানো কাজ মানুষ চিনতে পারার অহঙ্কার চুরচুর ভেঙ্গে পড়ল।এতদিন মনুর সম্পর্কে কিইনা ভেবেছেন মনে করে লজ্জিত বোধ করেন।পাস করবেই এত নিশ্চিত কিভাবে হল বুঝতে পারেন।
চারপাশে তাকিয়ে হারিয়ে যান অতীতে।দীপশিখা স্কটিশে পড়তেন তারপর কলকাতা ইউনিভার্সিটি তখন এই কফি হাউসে কত আড্ডা দিয়েছেন। সেইদিনগুলো যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে।ইশারা ইঙ্গিত কম পান নি কিন্তু অহঙ্কারের জন্য বেশীদূর গড়াতে পারেনি।সেদিন কিছু একটা হলে হয়তো জীবনের গতিপথ বদলে যেতো।একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।
 
You are a master storyteller . Read upto 25th chapter. Wonderful background. Eventful progression, everything in realistic way.
 


ষটষষ্টিতম অধ্যায়



মিস শেখোয়াত মানে অবাঙালী,বিয়ে হয়নি।মনুকে ছাড়তে চাইছিল না।সেও তো মনুকে ছাড়তে চাইছে না।মনু তাকে খুব ভালবাসে।তার ভালমন্দ তার সম্মানের কথা সব সময় ভাবে মনু। টুকটাক কিছু কেনাকাটা করে আবার উল্টোদিকে হাটতে থাকেন।টিনের স্যুটকেশে বিষয় সম্পত্তি দেখে বুঝেছেন আর্থিক অবস্থা ভাল নয় সেজন্যই কি এই পথে?অবশ্য এইপথে না এলে তার সঙ্গে দেখাই হতো না। একটা কথা মনে হতে স্বার্থপরতা আর বিবেকের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।মনু জীবনে বাবা হতে পারবে না।সামনে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দীপশিখা আর ভাবতে চায় না।গাড়ীর দিকে তাকিয়ে দেখলেন।মনে হচ্ছে মনু এখনো ফেরেনি।একটু কাছে আসতে নজরে পড়ে কলেজের গেটের কাছে কিছু ছেলেমেয়ের জটলার মধ্যে মনু।মনে হচ্ছে ভালভাবেই পাস করেছে।
দীপশিখা হাটার গতি বাড়িয়ে দিলেন।রাস্তার দিক থেকে দরজা খুলে দীপশিখা গাড়িতে উঠে বসলেন।তাকে দেখে উল্টোদিক হতে মনুও গাড়িতে উঠে বসে।সঙ্গের ছেলেমেয়েরা হাত নেড়ে বিদায় জানায়।
ঐ মেয়েটি কে?
কোন মেয়ে?
জিন্সের প্যাণ্ট পরা তোমার সঙ্গে কথা বলছিল?
ও ওর নাম আয়ুষী,সাউথে থাকে।বলছিল অনেকদিন পর দেখা হল চল আড্ডা মারি।
ধর্মতলা ধরে গাড়ি মৌলালীর দিকে চলতে শুরু করে।দীপশিখা ঘড়ি দেখলেন সাড়ে তিনটের মত।সুখর মনে ধন্দ্ব বুঝতে পারেনা মোমোর মনে কি আছে।মেসে ছেড়ে দিয়েছে তাহলে কি মোমোর কাছেই থাকতে হবে।ইউনিভার্সিতিতে ভর্তি হতে টাকার দরকার।প্লেজারে তার অনেক টাকা পাওয়ানা।সিআইটিতে ফ্লাটের নীচে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ল।গাড়ী থেকে নেমে চাবি দিয়ে বলল,তুমি তোমার স্যুটকেশ নিয়ে উপরে উঠে যাও।
কত ঘণ্টা চলেছে হিসেব করে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে দীপশিখা উপরে উঠে এলেন।একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে সুখকে বললেন,এটা রাখো বাড়িতে পরবে।
দীপশিখা নিজের ঘরে চলে গেলেন।সুখ প্যাকেট খুলে দেখল,দুটো হাফ প্যাণ্ট।মনে মনে ভাবে এরপর মোমোকে ছেড়ে যাবার কথা কেউ ভাবতে পারে।একটা প্যাণ্ট পরে দীপশিখার ঘরে উকি দিতে দেখল কাপড় বদলাচ্ছে দ্রুত সরে আসে।ভিতর থেকে দীপশিখা ডাকলেন,ভিতরে এসো।
সুখ ভিতরে ঢুকতে জিজ্ঞেস করলেন,রেজাল্ট কেমন হল?
ফার্স্ট ক্লাস।আমাদের সাব্জেক্টে কলেজে সব চেয়ে বেশী নম্বর পেয়ে পাস করেছি।
ওই মেয়েটা?
কোন মেয়ে?ও তুমি আয়ুষির কথা বলছো?ওর অন্য সাবজেক্টে অনার্স।
ওর সঙ্গে তোমার কেমন সম্পর্ক?
কেমন আবার এক কলেজে পড়ি--তুমি যা ভাবছো ওসব কিছু নয়।
তুমি আমাকে ভালবাসো?
ভালবাসি--ভালোবাসি--ভালোবাসি।এক কথা কতবার বলতে হবে?
একটা কথা ভেবে দেখেছো?আমাকে বিয়ে করলে কোনোদিন সন্তানের বাবা হতে পারবে না।
সুখ চুপ করে থাকে।মনে পড়ল বৈচিমাসীর সেই মহিলার কথা নামটা মনে নেই।সন্তানের জন্য তার সঙ্গে মিলিত হয়েছিল।শুনেছে সেই মহিলা মা হয়েছে এবং তার স্বামি বিয়ের বায়না ত্যাগ করেছে।
কি হল কিছু বলছ না?তুমি যাই সিদ্ধান্ত করো আমি কিছু মনে করব না।
দেখো মোমো দেব দ্বিজে আমার তেমন বিশ্বাস নেই।তবে নিয়তি বলে একটা ব্যাপার আমি উড়িয়ে দিতে পারিনা।মায়ের মৃত্যুর পর সামনে আমার ঘোর অন্ধকার।শেষে ভাসতে ভাসতে কোথায় হারিয়ে যেতাম কে জানতো। তোমার সঙ্গে দেখা হবার পর নতুন করে বাচার আশ্বাস ফিরে পেলাম।আরও কত মহিলাকে সার্ভিস দিয়েছি কই তাদের দেখে ত এমন মনে হয়নি।কোথায় তুমি কলেজের অধ্যাপিকা আর কোথায় আমি এক বেকার যুবক নিয়তি না হলে কি আমাদের পরস্পর দেখা হতো? অদৃষ্টে কি আছে জানি না কিন্তু তোমার ভালোবাসাকে উপেক্ষা করার মত শক্তি বিধাতা আমাকে দেয় নি।
ঠিক আছে আমার কাছে এসো।
সুখ কাছে এগিয়ে গেলে দীপশিখা ক্ষতস্থানে হাত বোলতে বোলাতে বললেন,এখন ব্যথা নেইতো?
একদম ব্যথা নেই।
তা হলেও আজকে চোদাচুদি নয়।
মোমোর মুখে এই শব্দ শুনে সুখ বলল,এ সব কি বলছো?
তুমি তো বলেছে এইসব শব্দে জোশ আসে।
মোমো তুমি না--তুমি ভীষণ দুষ্টু।
বোসো চা করে নিয়ে আসছি।
বসার ঘরে সোফায় গিয়ে বসল সুখ।মোমো কাল কলেজ যাবে এই ফাকে প্লেজার হতে ঘুরে আসবে।দীপশিখা দু-কাপ চা নিয়ে টেবিলে রেখে পাশে বসলেন।সুখ চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবে কথাটা মোমোকে বলা দরকার।কিভাবে বলবে ভাবছে।
মোমো এবার তো ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে হবে।
ভর্তি হবে নাতো কি চাকরি করবে?
তা বলছি না।ভাবছি কাল প্লেজারে গিয়ে আমার পাওনা টাকাটা নিয়ে আসবো।
তুমি একদম ওদিকে যাবে না।দীপশিখা কঠিণ গলায় বললেন।
তুমি আমাকে দিদিমণির মত ধমকাবে নাতো।আমি এখন গ্রাজুয়েট ভুলে যেও না।
দীপশিখা হেসে ফেললেন হাত বাড়িয়ে সুখর গলা জড়িয়ে ধরে বললেন,তোমাকে ছাড়া কাকে ধমকাবো বলো।আমার তুমি ছাড়া আছেই বা কে?শোনো মনু তোমার-আমার সম্পর্ক তুমি-আমি ছাড়া কারো জানার দরকার নেই।বাইরের লোকের কাছে তুমি আমার ছাত্র।একটা অনাথ ছেলেকে আশ্রয় দিয়েছি।
সুখ উদাস চোখে কি যেন ভাবে।দীপশিখা বললেন,অনাথ বলেছি বলে রাগ করলে?
রাগ করব কেন? আমার তো কেউ নেই, আমি তো অনাথই।
কেউ নেই?আমি তোমার কেউ নই?খবরদার বলছি আর কখনো যেন একথা নাশুনি।তোমাকে কোথাও যেতে হবে না আমার স্বামীর সব দায়িত্ব আমার।মাথাটা ধরে সুখর ঠোট জোড়া মুখে নিয়ে চুষতে থাকেন দীপশিখা।সুখর মুখ লালায় মাখামাখি।দীপশিখা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,যাই আমার আবার অনেক কাজ।যেতে গিয়ে ফিরে এসে বললেন,শোনো তুমি বরং কাল বেরিয়ে ভর্তির ব্যাপারে খোজ-খবর নিয়ে এসো।
দীপশিখা রান্না করতে থাকেন।কেমন হবে জীবন সঙ্গী সেকথা ভেবে মনে মনে কল্পনার আলপনা আকতে থাকেন।বাড়ীতে এমনি কেউ আসেনা মাঝে মধ্যে পলি আসে।ছেলেটি লেখাপড়ায় ভালো তিনকূলে কেউ নেই।তিনি একা থাকেন একটা সিকিউরিটির কথা ভেবে আশ্রয় দিয়েছেন এরকম কিছু বলে দিলেই হবে।বুঝতে পারেন মনু ঢুকেছে।সেদিকে না তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলেন,কিছু বলবে?
মোমো আজ রাতে আমরা একসঙ্গে শোবো?
কেন চুদতে ইচ্ছে হচ্ছে?
ঝাঃ আমি কি তাই বলেছি?
শোনো মনু কাল আমরা বিয়ে করব।আগে যা করেছি করেছি বিয়ের আগে আর ওসব নয়।
তুমি কলেজ যাবে না কাল?
আমি কলেজ যাবো তুমি বেরিয়ে ভর্তির ব্যাপারে খোজ খবর নিয়ে আসবে।সন্ধ্যে বেলা আমাদের বিয়ে হবে।
সুখ লাইব্রেরীর ঘরে ফিরে এল।কাল বিয়ে হবে মানে একটা বন্ধনে জড়িয়ে যাবে।নিয়তি কে ন বাধ্যতে।মোমোর মনে অনেক অশান্তি সুখ স্থির করে সর্বতোভাবে চেষ্টা করবে মোমোর মনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে।আর কোনো কষ্ট যেন মোমোকে স্পর্শ করতে না পারে।মোমো কলেজ যায় আর বাড়ী,সে মোমোকে নিয়ে ঘুরতে বেরোবে রেস্টুরেণ্ট খাওয়া দাওয়া করবে সিনেমা দেখবে। ভাবতে ভাবতে মন ভরে যায় খুশিতে।
 


সপ্তষষ্টিতম অধ্যায়



সেই ভোরে চা দিয়ে গেছে এতবেলা হল টিফিন দেবার সময় হল না।সুখ এগিয়ে গিয়ে রান্না ঘরে উকি দিয়ে অবাক।গ্যাস বন্ধ রান্না ঘরে কেউ নেই।মোমো কি বেরিয়েছে?কিছু আনতে হলে তাকে বলতে পারতো।কোথাও গেলে বলে গেলে কি হয়।তাহলে এত চিন্তা করতে হয়না।আজ আসুক এভাবে চলতে পারে না।বাথরুমে জল পড়ার শব্দ শুনে সচকিত হয় কাছে গিয়ে বুঝতে পারে মোমো বাথরুমে।দরজায় মুখ লাগিয়ে মৃদু স্বরে বলল,মোমো আজ কলেজ যাবে না?
হ্যা যাবো।
যাবে মানে?কখন রান্না করবে কখন যাবে,আজ কি না খেয়েই কলেজ যাবে?
দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন দীপশিখা বললেন,লক্ষ্মীসোনা একবেলা উপোস করতে পারবে না?
মোমোর গলায় আকুতি শুনে সুখর মায়া হয়।মাথায় খেলে গেল আজ তাদের বিয়ে।সুখ বলল,তুমি কি পুরোহিত দিয়ে মন্ত্র পড়িয়ে বিয়ে করবে?তার থেকে রেজিস্ট্রি করলে ভাল হয়না?
রেজিস্ট্রি করলে সারা পাড়া ময় হয়ে যাবে।তুমি কি তাই চাও?
একথাটা তো মনে হয়নি।সুখ বলল,ঠিক আছে তুমি যা ভাল বোঝো করো।উপসের জন্য ভেবো না।আমার অভ্যেস আছে।
কলেজে বেরোবার আগে দীপশিখা রিং থেকে একটা চাবি খুলে মনুকে দিয়ে বললেন, শোনো ইউনিভার্সিটি যাবে খোজ নিয়ে চলে আসবে।কোথাও গ্যাজাতে বসে যেও না।আর শোনো ফেরার পথে কিছু মিষ্টি কিনে আনবে।দীপশিখা একটা একশো টাকা এগিয়ে দিলেন।
সিড়ি দিয়ে নীচে নেমে এসে মনটা খুত খুত করে।আজ প্রথম চাবি দিল মনুকে।অনেকবার আগে সন্দেহ করেছে প্রতিবারই ভুল প্রমাণিত হয়েছে ভেবে মনে মনে হাসলেন।
দীপশিখা বেরিয়ে যাবার পর সুখ স্নানে ঢুকলো।বাথরুমে আয়নায় ঘাড় ঘুরিয়ে কোমরের কাছে ক্ষতস্থানটা দেখার চেষ্টা করে।একবার ইচ্ছে ছিল প্লেজারে গিয়ে জানার কেন তার উপর এই হামলা?মোমো নিষেধ করেছে যখন যাবে না।অনুমান করতে পারে মোমোই কারণ।ওরা বার বার জিজ্ঞেস করছিল কোথায় রাত কাটিয়েছে।
বাথরুম হতে বেরিয়ে বেরোবার উদ্যোগ করতে থাকে।সকালে এক কাপ চা ছাড়া কিছু খায়নি।বেরিয়ে আরেক কাপ চা খাওয়া যেতে পারে।দরজায় ল্যাচ ঘুরিয়ে ঠেলে দেখল বন্ধ হয়ে গেছে।আচ্ছা বিয়েতে তো ধুতি পরতে হয় তার তো ধুতি নেই।মোমো নিশ্চয় কিছু ব্যবস্থা করবে।সব দিকে খেয়াল আছে ওর।
শুক্লা গতকাল কাজে যোগ দিয়েছে।দীপশিখাকে দেখে বলল,দীপুদি তুমি কাল আসোনি কেন?
একটু কাজ ছিল রে।তুই কবে জয়েন করলি?
কালই জয়েন করেছি।কলেজে না আসলে হাপিয়ে যাই।
দীপশিখা ক্লাসে চলে গেলেন।একটার পর একটা ক্লাস করতে থাকেন মনের মধ্যে চিন্তা কি কি করতে হবে।মনুটা কি করছে।যখন কেউ ছিল না একরকম এখন আবার সারাক্ষন ওকে নিয়ে চিন্তা।অবশ্য এই চিন্তা এই উদবেগ ভালো লাগে।মানুষ স্বাধীনতার জন্য ছটফট করলেও অজ্ঞাতসারে কোনো এক বন্ধনে বাধা পড়তে চায়।ছুটির পর শুক্লার সঙ্গে বেরিয়ে দেখলেন রাস্তার ওপারে একটা গাড়ী দাড়িয়ে।শুক্লা বলল,দীপুদি চলো না ওর সঙ্গে একটু কথা বলবে। রাস্তা পেরিয়ে গিয়ে দেখলেন গাড়ির পিছনে বসে ড চৌধুরী।শুক্লা বলল,দীপুদি ওঠো না আমরা তো ওদিক দিয়েই যাবো।এই তুমি সামনে গিয়ে বোসো।
দীপশিখা বললেন,তুই বলছিস আজ উঠছি রোজ রোজ কিন্তু সম্ভব নয়।
ড সুজিত স্বস্তির শ্বাস ফেলেন পিছন থেকে নেমে বলল,দিদি আজ কিন্তু আপনাকে চার্মিং দেখতে লাগছে।
দীপশিখার গালে লাল ছোপ পড়ে বললেন,আজ মানে?
সামনের সিটে বসে ড সুজিত বলল,সেদিন আপনার বাসায় গিয়ে আপনাকে কেমন বিষণ্ণ লাগছিল।
পিছনে উঠে বসতে ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দিল।দীপশিখা বললেন,বউ কেমন হয়েছে?
টিপিক্যাল দিদিমণি।
শুক্লা চোখ পাকায়।দীপশিখা হেসে বললেন,তুমি দিদিমণির অবাধ্য ছাত্র হবে।
দীপুদি তুমি আর ওকে নাই দিও নাতো।
দেখেছেন ম্যাডাম পান থেকে চুন খসার জো নেই।
মৌলালীর কাছে মাংসের দোকান দেখে দীপশিখা বললেন,এখানে আমাকে নামিয়ে দে।
দীপশিখা নামতে গাড়ী পার্ক সার্কাসের দিকে চলতে শুরু করে।এতক্ষনে মনু মনে হয় ফিরে এসেছে। দোকানে গিয়ে মাংস কিনে দীপশিখা ফুলের দোকানের দিকে এগিয়ে গেলেন। রাস্তায় পথ চলতি মানুষের ভীড় বাড়তে থাকে।সুর্য এখন গঙ্গার দিকে ঢলে পড়েছে।এতক্ষনে মনে হয় মনু ফিরে এসেছে।একা মহিলা থাকেন নিরাপত্তার জন্যও একজন থাকা দরকার দীপশিখা একটা সাফাই আকড়ে ধরতে চান। ফ্লাটের দিকে চলতে চলতে থাকেন, ভাল মন্দ নানা চিন্তা মনের মধ্যে নড়া চড়া শুরু করেছে।তিনতলায় উঠে দরজার কাছে গিয়ে বুঝতে পারেন ভিতরে লাইট জ্বলছে।ল্যাচ ঘুরিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখলেন টিভি খুলে বসে আছে মক্কেল।সেদিকে না তাকিয়ে সোজা নিজের ঘরে চলে গেলেন।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পোশাক বদলাতে বদলাতে ড সুজিতের চার্মিং কথাটা মনে পড়ে গেল।ভালো করে নিজেকে দেখেন আয়নায় নতুন কিছু নজরে পড়ে না।মাংস নিয়ে রান্না ঘরে ঢুকলেন।টিভি দেখতে দেখতে সুখ ভাবে কেমন গম্ভীর মনে হচ্ছে।কলেজ থেকে ফিরে বিশ্রাম না করে একেবারে রান্না ঘরে।মেয়েরা পারে বটে।মাকে দেখেছে ক্লান্তি বলে কিছু নেই।সকাল থেকে শুরু করে একেবারে রাত পর্যন্ত।তাকে কিছু বললে সাহায্য করতে পারে।
দু-কাপ চা নিয়ে তার পাশে এসে বসল।সুখ হাত বাড়িয়ে কাপ নিতে দীপশিখা জিজ্ঞেস করলেন,কিছু জানতে পারলে?
টেবিল হতে তুলে সুখ একটা ফর্ম এগিয়ে দিল।ভর্তির আবেদন পত্র দীপশিখা চোখ বোলাতে থাকেন।নাম ঠিকানা প্রাপ্ত নম্বর ইত্যাদি।সুখ বলল,ফরম জমা দিলে কদিন পর তালিকা প্রকাশ হবে।
তোমার নাম তালিকায় থাকবে।এই ফ্লাটের নম্বর জানা আছে তো?দেরী নাকরে তাড়াতাড়ি ফর্ম জমা দিয়ে এসো।তুমি টিভি দেখো।দীপুশিখা উঠে আবার রান্না ঘরে চলে গেলেন।সারাদিন কিছু খায় নি সে ব্যাপারে কিছু বলল না।নিজের যা জানার জানবে অন্যকে কিছু জানাবে না এই হচ্ছে মোমোর দোষ।মোমোও কিছু খায়নি নিশ্চয়ই।সুখ টিভি দেখায় মন দিল। সেই একঘেয়ে বাসী সংবাদ।সামনে টিভি চলছে সুখর মনে অন্য চিন্তা।আজকের ঘটনা মোমোকে বলা হয়নি।বলবে কি শুনলে তো।কলেজ থেকে ফিরে কথা বলার সময় হয়েছে।ভদ্রমহিলার নামটা সম্ভবত উষা না উমা বলেছিলেন।বদ মেজাজী ফোন ধরেছিলাম বলে রেগে গেছিলেন।ইউনিভার্সিটি চত্বরে দেখে চমকে উঠেছিল সুখ।যা বয়স তাতে ছাত্রী মনে হয় না তাকে দেখে চিনতে পেরেছেন না হলে অমন দ্রুত দোতলায় উঠে গেলেন কেন?হয় কোনো অভিভাবিকা অথবা কলেজের স্টাফ মনে হল।সুখ দেখল মোমো বাথরুমে চলে গেল।মনে হচ্ছে রান্না শেষ।মাংস হয়েছে মিস্টি আনা হয়েছে ভেবে ক্ষিধে মোচড় দিয়ে উঠল।বিয়ের কথা কিছু উচ্চবাচ্য করছে না,সুখও আগ বাড়িয়ে কিছু বলবে না ঠিক করল।
হঠাৎ মনে সারা বাড়ি আলোয় আলোকিত।বাথরুম হতে বেরিয়েছে মোমো।গায়ে একটা সুতো মাত্র নেই।নিরাবরন দেহ বিস্ময়ে চোখ ফেরাতে পারে না। কলা গাছের মত উরু যুগল।বড় বড় পা ফেলে রান্না ঘরে যেতে গিয়ে ডাড়িয়ে বললেন,আমাদের বিয়ে শুরু হবে,তৈরী হয়ে নেও।
সুখ বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে জল দিল।আয়নায় দেখল নিজেকে।পরণের প্যাণ্টটা খুলে বেরিয়ে এসে দেখল মোমো অপেক্ষা করছে হাতে দু-গাছা রজনী গন্ধার মালা।একটা মালা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,যা বলব তুমিও বলবে।এসো মালাটা পরিয়ে দাও।
সুখ মালা পরাতে দীপশিখাও তার মালাটা পরিয়ে দিল।তারপর বাহু মেলে মনুকে জড়িয়ে ধরে বললেন,আমার হৃদয় তোমার হোক।
আমার হৃদয় তোমার হোক।
দীপশিখা যেভাবে ধরেছে যেন দুটো শরীর একসঙ্গে মিশে যাবে।নরম শরীরের স্পর্শ ভাল লাগে সুখর।
আমি আমাকে তোমায় দিলাম,তোমার তোমাকে আমার করলাম।
মোমোর কাধে মুখ রেখে সুখ বলল,আমি আমাকে তোমায় দিলাম,তোমার তোমাকে আমার করলাম।
আমার আগের জীবন থেকে বেরিয়ে তোমাকে নিয়ে নতুন জীবন শুরুর অঙ্গীকার করলাম।
সুখর গা ছম ছম করে বলে,আমার আগের জীবন ত্যাগ করে তোমাকে নিয়ে নতুন ভাবে বাচার অঙ্গীকার করলাম।
সুখে দুখে একজন আরেকজনের পাশে থাকব।দীপশিখা বুকে চেপে ধরলেন মনুকে।
সুখে দুখে বিপদে আপদে সব সময় তোমার পাশে থাকব।
কখনো অসময়ে দুর্দিনে তোমাকে ছেড়ে পালাবো না অঙ্গীকারাবদ্ধ হলাম।
মোমো আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না শপথ করছি।
দীপশিখা দুহাতে মনুর গাল ধরে নীচে হয়ে ঠোট জোড়া মুখে নিয়ে চুষতে শুরু করলেন।সুখ হাত বাড়িয়ে মোমোর পাছা চেপে ধরল।
এক সময় দীপশিখা বললেন,এবার বসে পড়ো।সারাদিন তোমার খুব কষ্ট হয়েছে।
রান্না ঘরে গিয়ে দুটো প্লেটে ভাত নিয়ে টেবিলে রাখলেন ফ্রিজ থেকে মিষ্টি বের করলেন।খাবার সাজানো হলে দীপশিখা খেতে বসলেন।উলটো দিকে সামনে প্লেট নিয়ে মনুকে ইতস্তত করতে দেখে দীপশিখা জিজ্ঞেস করলেন,কি হল খাচ্ছো না কেন?
সুখ বলল,আমি তোমার পাশে বসবো?
এসো।দীপশিখা হেসে বললেন।
প্লেট নিয়ে টেবিলের এপাশে এসে মোমোর ডানদিকে বসল।দীপশিখা আড়চোখে লক্ষ্য করেন।সুখ বলল,তোমার কোমরটা একটু ধরবো?
বিরক্ত হয়ে দীপশিখা বললেন,অমন ভিখারীর মত করছো কেন?আমি আমাকে দিয়ে দিয়েছি জিজ্ঞেস করার কি আছে?
বা হাত বাড়িয়ে মোমোর কোমর ধরে সুখ খেতে শুরু করল।দীপশিখা মনে মনে ভাবেন ভগবান সেই তো দিলে কিন্তু অনেক দেরী করে দিলে কেন?
সারা দিন উপোসের পর হাপুস হুপুস খেতে থাকে।দীপশিখা ভাবেন কাল আবার কলেজ আছে।বেশী রাত করা ঠিক হবেনা।
জানো মোমো আজ ইউনিভার্সিটিতে একজন মহিলাকে দেখলাম যাকে সার্ভিস দিয়েছিলাম।
আমরা শপথ নিয়েছি অতীত জীবন ত্যাগ করেছি।
আমি কি তাই বললাম?
আজকাল ছাত্রীরাও এইসব করছে।
না না বয়স্কা মহিলা।
যাক ওসব নিয়ে চর্চা নয়।তাড়াতাড়ি খেয়ে নেও কাল তো আমাকে বেরোতে হবে।দীপশিখা খেতে খেতে কি মনে হতে বললেন,একটা কথা সত্যি করে বলত।
সুখ মুখ ফিরিয়ে মোমোর দিকে তাকালো।
আমার মতো বয়স্কা মহিলাকে বিয়ে করে তোমার মনে কোনো খেদ নেইতো?
সুখ ঠোট ফুলিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে তারপর বলল,শোনো মোমো আমি তোমাকে ভালোবেসেছি তোমার বয়স কত তোমার চাকরি এসব আমার কাছে তুচ্ছ।বারবার এরকম বললে আমার ভাল লাগে না।আমার কি আছে বলো তুমি আমাকে গ্রহন করেছো এতো আমার ভাগ্য।
আচ্ছা আর বলব না।রাতে কি চুদবে?
তুমি যা বলবে।
তুমি চুদবে কি চুদবে না আমি বলে দেব?তোমার নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছে বলে কিছু নেই?
আমার ইচ্ছে হলেই হবে?দুজনের ইচ্ছে হতে হবে।বউ বলে কি যা খুশি তাই করা যায়?
ঠোটে ঠোট চেপে দীপশিখা নিজেকে দমন করেন।এমন একজন জীবন সঙ্গী অনেক ভাগ্য করে মেয়েরা পায়। সুখ বা হাতটা দুই উরুর ফাকে ঢুকিয়ে যোনীর উপর বোলায়।খাওয়ার সময় অসুবিধে হলেও দীপশিখা কিছু বলেন না।সুখ বলল,খোচা খোচা লাগছে আবার কামিয়ে দেবো।
এখন খাও পরে ওসব ভাবা যাবে।
খাওয়া দাওয়া শেষ হলে দীপশিখা বললেন,ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়।আমি গুছিয়ে আসছি।
কোন ঘরে তোমার ঘরে?
তোমার আমার কি?এখন সব আমাদের।
সুখ ঘরে ঢুকে সুন্দর গন্ধ পেল।লাইট জ্বালতে দেখতে বিছানার উপর ফুলের পাপড়ি ছড়ানো।মাথার দিকে পাশাপাশি দুটো বালিশ। মোমো এইসব করেছে।সত্যি পরিশ্রম করতে পারে বটে।পা মুছে বিছানায় উঠে শুয়ে পড়ল।কিছুক্ষন পর দীপশিখা এসে নাইট ল্যাম্প জ্বেলে লাইট নিভিয়ে দিলেন।সারা ঘরে এক স্বপ্নালু পরিবেশ।দীপশিখা বিছানায় উঠে শুয়ে পড়তে সুখ উঠে বসে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখতে থাকে।সারা গায়ে আলতো হাত বোলাতে থাকে।দীপশিখা পাগলের কাণ্ড লক্ষ্য করতে থাকেন।সুখ একসময় যোনীতে চুমু খেয়ে তলপেটের উপর গাল রাখে।এইভাবে শরীর ঘাটতে ঘাটতে সুখ লক্ষ্য করে মোমো ঘুমিয়ে পড়েছে।ঘুমোক বেচারী সারাদিন খুব খাটাখাটনী গেছে।মোমোকে জড়িয়ে ধরে সুখও শুয়ে পড়ল।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top