What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

চক্রব্যূহে শ্রীতমা (সমাপ্ত) (2 Viewers)

খুবই রসালো একটা গল্প হবে বলে মনে হচ্ছে। ধন্যবাদ।
 
গল্পের নামটা বেশ ইনটারেস্টিং।
 
XjKL2QQ.jpg


[HIDE]সবশেষে সোমা প্রকাশ করলো ইন্সপেক্টর খানের জীবনের শেষ রাতের কথা ..

সেই রাতে ইনিস্পেক্টর খান সোমা'কে মোবাইলে মেসেজ করে ডেকে পাঠায় এবং সে উনার বাড়ি গেলে একদম অন্যরকম খান সাহেবকে দেখতে পায়। লোকটা যেন কথাবার্তায়, আচার-ব্যবহারে এক দিনেই সম্পূর্ণ পাল্টে গিয়েছে। ধূর্ত খুদে খুদে চোখগুলোতে সব সময় লোলুপ দৃষ্টি, গুরুগম্ভীর গলার স্বর, রুক্ষ মেজাজ .. এই সবকিছু উধাও। সোমাকে ডেকে তার পাশে খাটে বসতে বলেছিল খানসাহেব।

"ভয় পাস না, আজ রাতে নোংরামি করার জন্য তোকে ডাকি নি। প্রথমেই বলি অফিস ক্যান্টিনে ক্যাশ ভাঙার ওই মিথ্যে কেস থেকে থানায় বলে তোর অব্যাহতির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এই নে .. তার হলফনামা। তোর বৌদিমণি শ্রী'কে বলিস ওর প্রতি অনেক অবিচার করেছি আমি .. ওকে যে কাগজটা দিয়েছি সেটা যেন ও ছিঁড়ে ফেলে দেয় .. তাহলেই 'জুট পাচারের' ওই মিথ্যে কেস থেকে ওর স্বামী অরুণ নিষ্কৃতি পেয়ে যাবে .. কথাটা ওর সামনে বলার আমার সাহস হয়নি .. তাই তোকে বলে দিলাম। আর তোর প্রতি তো আমার অন্যায়-অবিচারের শেষ নেই। যাক আর পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটতে চাই না .. আমার ইচ্ছা তুই এখানে আর থাকিস না, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফ্যাক্টরিতে ক্যান্টিনের কাজ ছেড়ে দিয়ে তোদের গ্রাম কুসুমপুরে চলে যা। শুনেছি তোদের তো আগে হোটেলের ব্যবসা ছিলো, যেটা বন্ধ হয়ে গেছে বহুবছর। ওই ব্যবসাটা আবার শুরু কর .. তোদের ওখানে রমরমিয়ে চলবে বলে দিলাম। তবে অত বড় একটা ব্যবসা শুরু করতে প্রচুর মূলধন লাগে। আমার সামর্থ্য অনুযায়ী তোকে পঞ্চাশ হাজার টাকা নগদ দিলাম .. টাকাটা ব্যাঙ্ক একাউন্টে ডাইরেক্ট ট্রান্সফার করতে পারতাম .. কিন্তু এসব করলে পুলিশের চক্করে পড়ে যাবি, তাই নগদ দিলাম। এবার আর একটাও কথা না বাড়িয়ে এখান থেকে সোজা বাড়ি চলে যা।" সোমার হাতে সবকটি ৫০০ টাকার নোটের পঞ্চাশ হাজার টাকার একটি বান্ডিল আর থানার হলফনামা গুঁজে দিয়ে বলেছিল ইন্সপেক্টর খান।

কথাগুলো শুনে প্রথমে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিল সোমা। ভাবছিল নিজেকে চিমটি কেটে দেখবে কি না সে কোনো স্বপ্ন দেখছে নাকি ঘোর বাস্তব! তারপর খান সাহেবের ধমক শুনে আর দ্বিরুক্তি না করে টাকার বান্ডিলটা চাদরের তলায় জড়িয়ে নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। পরের দিন সকালে তাকে পুলিশ থানায় তুলে নিয়ে যায় উনার মৃত্যুরহস্য তদন্তের স্বার্থে। যদিও টাকার কথা কেউ জানেনা একমাত্র শ্রীতমাকেই সে বিশ্বাস করে বললো।

শ্রীতমার নরম-সরম চারিত্রিক গঠন সম্পর্কে সোমার যেরূপ ধারণা তাতে করে কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলার পর সে ভাবলো এবার হয়তো তার বৌদিমণি ভেঙে পড়ে কান্নাকাটি শুরু করে দেবে কিংবা প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়ে বাক্যশূন্য হয়ে যাবে।

কিন্তু এরমধ্যে কোনোটাই হলো না। সোমাকে অবাক করে দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে শ্রীতমা চোয়াল শক্ত করে 'ট' এর জায়গায় 'ত' উচ্চারণ করে বললো "বুঝলাম .. তবে কাগজতা আমার কাছে আর নেই .. স্বামীর মৃত্যুর কারণ হয়তো তুমি আগে জানতে না, সেদিন জানতে পেরেছো .. কিন্তু স্বামী মারা যাওয়ার পর কিছু কাঁচা পয়সা এবং চাকরিতা বজায় রাখার জন্য ওই বিকৃতকাম দুর্বৃত্তদের দিনের পর দিন, রাতের পর রাত শয্যাসঙ্গিনী হয়েছো তুমি .. সবকিছুই কি ভয়? তা বোধহয় নয় .. নিজের শরীরের চাহিদা মেতানোর জন্য এগুলো করোনি বলতে চাও! তবে শুধু তোমাকে দোষ দিয়ে তো লাভ নেই .. ওই একই দোষের দোষী আমিও .. পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে হাতের থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ ছিল আমার কাছেও .. কিন্তু আমি সেতা করিনি .. শুধু কি লোকলজ্জার ভয়? তা বোধহয় নয় .. তবে এ'কথা অনস্বীকার্য এতদিন ধরে ওই মহাপাতক গুলো সুতো ধরে তেনে আমাদের পুতুলনাচ নাচাচ্ছিলো .. কিন্তু এবারের খেলাতা আমি খেলবো নিজের নিয়মে .. আর তোমার তো এখনই গ্রামের বাড়ি চলে যাওয়া হবে না বাপু .. যতদিন না প্রয়োজন ফুরচ্ছে তোমাকে আমার পাশে থাকতে হবে। শুধু কালকে রাতে শোনা দু'তো কথাতে খটকা লাগছে .. সেই দু'তো মিলে গেলেই .."

এতক্ষণ তার বউদিমণির পায়ের কাছে উবু হয়ে বসেছিলো সোমা। শ্রীতমার এই নতুন রূপ এবং তার মুখে এই সমস্ত কথা শুনে ভীষণ রকম ভাবে চমকে গিয়ে সে থপ করে মাটিতে বসে পড়লো।

তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে শ্রীতমাকে বললো "একটা কথা মনে পড়ে গেলো বৌদিমণি.. খান সাহেব বলছিলো একবার আমাদের বড় সাহেব অর্থাৎ জেনারেল ম্যানেজার সুধীর যাদবের সঙ্গে পারলে যদি তুমি একটু দেখা করতে, তাহলে হয়তো .." এ'টুকু বলেই থেমে গেলো সোমা।

পুনরায় একই রকম ভাবলেশহীন মুখে চোয়াল শক্ত করে শ্রীতমা উত্তর দিলো "হুমম ..‌ জানিনা উনি কেমন মানুষ .. বাচ্চা যাদবের দাদা এদের মতই নারীমাংস লোভী পাষণ্ড .. নাকি একেবারে অন্যরকম .. তবে কয়েকতা হিসেব মেলাতে ওনার সঙ্গে দেখা করাতা আমার পক্ষে অত্যন্ত জরুরী।"

ওইদিকে তখন দীনেশ আগারওয়ালের চেম্বারে ..

"রাজু ড্রাইভারের কাছ থেকে যে'টুকু খবর বের করতে পারলাম তাতে করে এটা স্পষ্ট আমার প্রয়াত বন্ধু আদিল খান নিশ্চয়ই বৌমার মাতৃদেবীর সঙ্গে কিছু হাঙ্কি-প্যাঙ্কি করেছে ওখানে আর প্যান্টিটা যে ওর এই ব্যাপারে আমি ১০০% নিশ্চিত। শুধু দরকার ফোন করে একটা কনফার্মেশনের। কিন্তু মাগীর ফোন নম্বর পাবো কোথা থেকে! বৌমার কাছ থেকে তো কোনোমতেই চাওয়া যাবে না .. তবে ভাই তোমরা কিন্তু এটা ঠিক করলে না, আমি দু'দিনের জন্য দেশের বাড়ি গেলাম আর তার মধ্যে দীনেশ জি'র বাগানবাড়িতে আমার বৌমাকে তোমরা সবাই উল্টেপাল্টে, চেটেপুটে ভোগ করলে .. আমি ফিরে আসার অপেক্ষাটুকু করলে না .. মনে মনে খুব দুঃখ পেয়েছি ভাই।" কপট রাগ দেখিয়ে আক্ষেপ করে বললো তারক দাস।

"চিন্তা করিস না .. খুব তাড়াতাড়ি আরেকদিন বসাবো আমাদের আসর .. সেদিন তুই প্রথমেই চান্স পাবি .. কথা দিলাম .. আর ওই দেবযানী ম্যাডামের নম্বর আমি অরুণের কাছ থেকে নিয়ে নিচ্ছি এখনই .. বলবো কেসের জন্য লাগবে.. আমাকে যমের মত ভয় পায় মালটা, আমি বললেই দিয়ে দেবে .. ফেসবুকে ছবিতে যা দেখেছি তাতে করে ভালোভাবেই বোঝা যায় মাগীর শরীরে এখনো বিশাল যৌনখিদে আছে .. শুধু একটু আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অপেক্ষায় .. একদিনের মধ্যে যদি মাগীটাকে ল্যাংটো করে দীনেশ জি'র বাগানবাড়ির বিছানায় না ফেলতে পারি তাহলে আমার নাম পাল্টে দিস.." টেবিল চাপড়িয়ে উত্তর দিলো মিস্টার ঘোষ।

মা এবং মেয়ের সম্বন্ধে এই ধরনের অশ্লীল এবং আদিরসাত্মক কথাবার্তা চলার মাঝেই মিস্টার ঘোষ ফোন করে অরুণের কাছ থেকে তার শাশুড়ির ফোন নম্বরটা নিয়ে নিলো এবং আশ্বাস দিলো খুব তাড়াতাড়ি তাকে এখানে ফিরিয়ে এনে কাজে যোগদান করানো হবে।

"keep quiet .. ফোনটা তাহলে আমিই করছি" এই বলে শ্রীতমার মাতৃদেবীর মোবাইল নম্বরে ফোন করলো মিস্টার ঘোষ ..

দেবযানী - হ্যালো .. কে বলছেন?

ঘোষ বাবু - আপনার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী এবং ইন্সপেক্টর খানের খুব কাছের বন্ধু বলছি ..

দেবযানী - কি ..কি .. কিন্তু .. আ.. আ.. আমাকে কি দরকার?

ঘোষ বাবু - (গলাটা যথাসম্ভব গম্ভীর করে) দরকার না থাকলে কি আর এমনি এমনি ফোন করেছি .. ইন্সপেক্টর খানের মৃত্যুসংবাদ নিশ্চয়ই আপনি শুনেছেন। উনি মারা যাওয়ার আগে উনার খুব কাছের বন্ধু দীনেশ আগারওয়ালকে আপনার আর ওর মধ্যে গড়ে ওঠা সম্পর্কের কথা সবকিছু খুলে বলেছে। দীনেশ জি এখানকার একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি, উনার কথায় পুলিশ প্রশাসন ওঠেবসে। পুলিশ সন্দেহ করছে হয়তো প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আপনি লোক লাগিয়ে উনাকে খুন করিয়েছেন। যেকোনো দিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আপনার বাড়িতে পুলিশ যেতে পারে। যদিও এই কথা দীনেশ জি বিশ্বাস করেন না। তবুও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য আপনাকে একটা অ্যাপয়নমেন্ট করতে হবে মিস্টার আগারওয়ালের সঙ্গে আর তার সঙ্গে আপনাদের রতিক্রিয়ার সাক্ষী হিসাবে নিয়ে আসা আপনার অন্তর্বাসটাও ফেরত নিয়ে যাবেন, বলা তো যায় না কখন পুলিশের হাতে পরে যায় ওটা। আমরা চাই আপনি দু-একদিনের মধ্যেই আসুন .. রূপনারায়ণপুর স্টেশনে গাড়ি পাঠিয়ে দেবো আপনি আসার দিন। চিন্তা করবেন না এই অ্যাপোয়েন্টমেন্টের ব্যাপারে আপনার মেয়ে কিছু জানতে পারবে না। মিটিং শেষ হলে আপনি আবার ফিরে যাবেন।

অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো সম্পুর্ন অনুমানের ভিত্তিতে কথাগুলো বললো মিস্টার ঘোষ। কিন্তু ঘোষ বাবুর বাক্যবাণ যে একেবারে সঠিক জায়গায় বিদ্ধ করেছে, সেটা বোঝা গেল দেবযানী দেবীর পরবর্তী কথাতেই।

দেবযানী - বিশ্বাস করুন এই খুনের ব্যাপারে আমি বিন্দুবিসর্গ জানি না। আপনাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে আপনারা হয়তো ভালোই চান আমার। ঠি .. ঠিক আছে .. আ .. আমি আজ রাতের মধ্যেই জানিয়ে দেবো কবে যেতে পারবো .. একটু দেখবেন যেন মৌ কিছু না জানতে পারে।

"বাব্বা .. এ যে মেঘ না চাইতেই জল .." দীনেশ জি'র কথায় ঘরে উপস্থিত বাকি সদস্যরা হো হো করে হেসে উঠলো।
★★★★

"নমস্কার স্যার .. আসতে আজ্ঞা হোক .. আপনিই তাহলে সিআইডির তরফ থেকে আমাদের খান সাহেবের কেসের জন্য অ্যাপয়েন্টেড সিনিয়র ইন্সপেক্টর দেবাংশু সান্যাল!" করজোড়ে নমস্কার করে জানতে চাইলেন ইন্সপেক্টর খানের মৃত্যুর পর তার জায়গায় থানার চার্জে আসা নতুন অফিসার ইনচার্জ প্রবীর ঘোষাল।

"উঁহু উঁহু .. বুঝতে কোথাও একটু ভুল হচ্ছে আপনার .. আমি দেবাংশু .. খান চাচার কেসের দায়িত্বে এসেছি .. ইনি আমার বন্ধু অরুণাভ মৈত্র .. ওরফে বুম্বা .. ওর সঙ্গে আমাদের ডিপার্টমেন্টের দূর-দূরান্তের কোনো সম্পর্ক নেই" দৃঢ় ভঙ্গিমায়, গম্ভীর গলায় দেবাংশু বলে ভুল করা অরুণাভকে পাশে সরিয়ে, পিছন দিক থেকে আসা একজন মধ্যতিরিশের দীর্ঘকায়, সৌম্যকান্তি ভদ্রলোক কথাটা বললেন।

ঘোষাল বাবু কিছুক্ষণ হাঁ করে তাকিয়ে থাকলেন আগন্তুকের দিকে। দীর্ঘকায়, গৌরবর্ণ এবং সুদর্শন চেহারার অধিকারী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেবাংশুর মুখমন্ডলের যে জিনিসটা সব মানুষকে আকর্ষণ করে, তা হলো তার একজোড়া বুদ্ধিদীপ্ত চোখ। কেউ একদিন তাকে বলেছিলো "you have a pair of bright eyes .. মনে হয় যেন ওই চোখ দুটো'তে আমি হারিয়ে যাই.."

যাক সে কথা, দেবাংশুর পরিচয় পাওয়ার পর তাকে সমাদর করে ওসির ঘরের পাশে অনেক দিন বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা একটি স্টোররুম কে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নতুন রূপে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা ঘরটিতে নিয়ে যাওয়া হলো .. এবার থেকে এখানে বসেই তিনি এই তদন্তের অফিশিয়াল কাজকর্ম করবেন।

"আজ্ঞে আপনার পরিচয় তো পেলাম .. কিন্তু আপনার এই বন্ধুটি .. মানে .. হে হে .. উনি এখানে কি জন্য.." কুণ্ঠিত হয়ে প্রশ্নটা করেই ফেলেন ইন্সপেক্টর ঘোষাল।

"বললাম না ও আমার বন্ধু .. আমাদের ডিপার্টমেন্ট এবং এই কেসের সঙ্গে ওর কোনো সম্পর্ক নেই .. উনি একজন চাকুরীজীবী .. লেখালেখি করার অভ্যাস আছে .. অনেক অল্প বয়সে বাবা-মাকে হারিয়েছে .. তারপর যথাসময়ে যৌবনের ডাকে সাড়া দিয়ে প্রেমে পড়ে একটি সুলাক্ষণা, সুন্দরী কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন বটে .. কিন্তু এক দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে পত্নীবিয়োগের পরে বেচারা ধর্মে-কর্মে মন দিয়েছে .. আর সময় সুযোগ হলে কোনো রোমাঞ্চকর কেসে আমার লেজুড় হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায় লেখার খোরাক যোগানোর আশায় .. চিন্তা করবেন না ও আমাদের কেসে অযথা নাক গলিয়ে কোনো ক্ষতি করবে না বরং উপকার করলেও করতে পারে" ঘোষাল বাবুকে আশ্বস্ত করে বললো দেবাংশু।

রাতে থানা থেকে নিজের নামে বরাদ্দ হওয়া বেশ বড়সড় একটি পুলিশ বাংলোতে ফিরে ভালো করে ফ্রেশ হয়ে নবনিযুক্ত পুলিশের খানসামা রসিকলালের হাতে তৈরি গরম গরম রুটি, অড়হর ডাল আর অত্যন্ত সুস্বাদু দেশি মুরগির ঝোল দিয়ে রাতের আহার সমাপ্ত করে কলকাতা থেকে সুন্দরনগর ভ্রমণের ধকল, তার উপর সারাদিন এই কেস নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে করতে শারীরিক এবং মানসিকভাবে পরিশ্রান্ত হয়ে যাওয়া দেবাংশু তার বন্ধুকে "শুভরাত্রি" বলে বিছানায় শুয়ে নিদ্রামগ্ন হওয়ার চেষ্টা করলো। বেচারা অরুণাভর ইচ্ছা ছিল রাতে খাওয়ার পর কিছুক্ষণ গল্পগুজব করার। কিন্তু কি আর করা যাবে .. যস্মিন দেশে যদাচার।

"আমাকে তো কিছুই বললে না বড় সাহেবের সঙ্গে এতক্ষণ কি কথা হলো তোমার .. যাগ্গে, বলতে হবে না .. তোমাকে তো এখন বেশী কিছু বলতেও ভয় লাগে আমার .. আমাদের নতুন বাঙালী দারোগাবাবু শুনেছি খুব ভালো .. দাদাবাবুর কেসটার ব্যাপারে কিছু সাহায্য করলেও করতে পারে .. আর তাছাড়া শুনলাম গতকাল নাকি কলকাতা থেকে এক মস্ত বড় পুলিশ অফিসার এসেছে খান সাহেবের মৃত্যু রহস্য তদন্তের জন্য .. ভাগ্য ভালো থাকলে তার সঙ্গেও তোমার দেখা হয়ে যেতে পারে" বিকেলের দিকে সুধীর যাদবের কোয়ার্টার থেকে শ্রীতমা বেরোনোর পর নিচে বুকানকে কোলে নিয়ে অপেক্ষারতা সোমা তাকে কথাগুলো বলতে বলতে স্টাফ ক্যাম্পাসের মূল ফটকের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো।

"উঁহু .. এখন বাড়ি যাবো না .. একবার থানা থেকে ঘুরে আসতে হবে .. একটা অতো (অটো) ডিজার্ভ করো" সোমার কথায় বিশেষ কর্ণপাত না করে তাকে নির্দেশ দিলো শ্রীতমা।

কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা নিয়ে অটোরিকশাটি সুন্দরনগর পুলিশ স্টেশনের সামনে এসে থামলো। সোমাকে কনস্টেবল রুমের পাশের বেঞ্চটিতে বুকানকে সঙ্গে নিয়ে বসতে বলে শ্রীতমা ভেতরে ঢুকে জানতে পারলো আর্জেন্ট কল আসায় কোনো একটি কাজে দারোগা বাবু বেরিয়েছেন। বিফল মনোরথ থানার মেইন দরজা দিয়ে বেরোতে যাওয়ার মুহূর্তে ভিতরে আগত একজন পুরুষের সঙ্গে বেশ জোরেই ধাক্কা খেলো শ্রীতমা।

"I'm extremely sorry madam .. তাড়াহুড়োয় ছিলাম তাই লক্ষ্য করিনি" কথাটা বলে শ্রীতমার দিকে চোখ পড়তেই কিছুক্ষণ নিষ্পলক তাকিয়ে থাকলো দেবাংশু।

ওদিকে শ্রীতমাও দেবাংশুকে দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে প্রথমে কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো .. তারপর সামলে নিয়ে বললো "তুই মানে তুমি এখানে?"

অধঃস্তন কর্মচারীদের সামনে কোনরূপ ব্যক্তিগত আলোচনা যাতে না হয় তাই খাটো সে গলায় শ্রীতমাকে বললো "আমার চেম্বারে আয় .. ওখানেই কথা হবে" দেবাংশু নিজের চেম্বারে ঢুকে যাওয়ার পর তাকে অনুসরণ করলো শ্রীতমা।

প্রায় সাত বছর পর দেবাংশুর সঙ্গে দেখা হলো শ্রীতমার। হ্যাঁ ইনিই সেই ভদ্রলোক বিবাহের আগে যার সঙ্গে শ্রীতমার একটি সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। বলা ভালো এরা পরস্পর পরস্পরকে নিঃস্বার্থভাবে ভালবেসে ছিলো। তাই তো বিচ্ছেদের পরেও এরা কেউই পুনরায় দেখা করে বা কোনোরকম যোগাযোগ করে পরস্পরের জীবন কণ্টকময় করে তুলতে চায় নি। বিশেষ করে দেবাংশু চেয়েছিল তার ভালোবাসার মানুষটি সুখে থাকুক শান্তিতে থাকুক। আসলে ভালোবাসা তো ত্যাগের প্রতীক।

নিজের ফোন নম্বরটিও বদলে ফেলেছিলো দেবাংশু। বিবাহের পর থেকে এই ঘটনাবহুল জীবনেও প্রতিটা মুহুর্তে সে অনুভব করতো দেবাংশুর অনুপস্থিতি। অনেকবার চেষ্টা করেছে তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার কিন্তু..

"কেমন আছিস .. আছো? তুমি পুলিশে আছো সেতা তো তখনই জানতাম .. কিন্তু এখানে কি ভাবে?" আস্তে আস্তে বিস্ময়ের ঘোর এবং মুগ্ধতা কাটিয়ে প্রশ্ন করলো শ্রীতমা।

"হাহাহা .. তোর এখনো ট আর ত-এর দোষ কাটেনি দেখছি .. বাইরে তোর বেবিকে দেখলাম, ভীষণ কিউট .. পরে যাওয়ার সময় ওকে খুব চটকু-পটকু করবো কেমন .. আরে এতো hesitate করছিস কেনো .. you can call me তুই .. আমাদের সম্পর্কটা তো তুই-তুকারির ছিলো .. আমি এখন সিআইডির একজন সিনিয়র ইন্সপেক্টর .. একটা কেসের investigation করতে এখানে এসেছি .. কিন্তু তার আগে তুই বল .. তুই এখানে কি করছিস? তোকে দেখে তো আমি চমকে গেছিলাম প্রথমে" মুচকি হেঁসে বললো দেবাংশু।

আসলে দূর সম্পর্কের আত্মীয় হলেও সম্পর্কে এরা দুজন পিসতুতো-মামাতো ভাই বোন। প্রথমে ভালো লাগা তারপর আস্তে আস্তে ভালোবাসা .. এর মধ্যে দিয়েই এদের দু'জনের মিষ্টি-মধুর একটি প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু এই সম্পর্ক দেবাংশুর বাড়ির লোকজন মেনে নিলেও শ্রীতমার দাদা, মা এবং বাবা একেবারেই মানতে চায়নি। তারই ফলস্বরূপ দুজনের বিচ্ছেদ ঘটেছিলো।

যাই হোক, পুলিশ কনস্টেবলের এনে দেওয়া কোলড্রিংস খেতে খেতে শ্রীতমা নিজের সতীত্ব হরণের ঘটনা এবং পরবর্তীকালে যৌন বিলাসে লিপ্ত হওয়ার ঘটনাগুলো বাদ দিয়ে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ঘটনা ব্যক্ত করলো দেবাংশুর সামনে। তবে তার সঙ্গে এটাও যোগ করলো তার শরীরের প্রতি লোভ আছে এবং বারবার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে/করে যাচ্ছে ওই পাষণ্ডগুলো।

সম্পূর্ণ অন্য একটি কেসের তদন্ত করতে আসার পরে শ্রীতমার কাছ থেকে এই ধরনের একটি ভিন্নধর্মী ঘটনার কথা শুনে প্রথমে কিছুটা আশঙ্কিত এবং চিন্তিত হয়ে পড়লো দেবাংশু .. কি করে সে তার এক্তিয়ার বহির্ভূত এই কেসটি তে নাক গলাবে এই ভেবে .. তারপর শ্রীতমা কে আশ্বস্ত করে বললো "চিন্তা করিস না, I'll try my best .. কথা দিচ্ছি দু'দিনের মধ্যে তোর husband কে এই সুন্দরনগরে ফিরিয়ে আনবো অপরাধীরা শাস্তি পাবে। গোড়া থেকে আবার তদন্ত শুরু করার অনুরোধ করবো নতুন দারোগাবাবু প্রবীর ঘোষালকে। এছাড়াও তাকে যতটুকু সাহায্য করার আমি অবশ্যই করবো।"

"তুই কিন্তু আগের থেকে অনেক বেশি হ্যান্ডসাম হয়েছিস .. আমি তো চোখ ফেরাতেই পারছি না .. এসব কি তোর বউয়ের হাতের জাদু? বিয়ে করেছিস নিশ্চয়ই .." আগের থেকে নিজের মনের ভার অনেকটা কমে যাওয়ায় মুচকি হেসে প্রশ্ন করলো শ্রীতমা।

"তাই? হ্যান্ডসাম? কি জানি হতেও পারে হাতের জাদু" চোখগুলো ছোটো করে ইঙ্গিত পূর্ণভাবে কথাটি বললো দেবাংশু।

"ও .. তার মানে বিয়ে করেছিস .. ভালোই তো .. একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? তোর বউ খুব ভালোবাসে তোকে, তাই না? আচ্ছা ও কি দেখতে আমার থেকে সুন্দর? কথাগুলো খুব বোকা বোকা শোনাচ্ছে তাই না?" নিজের কৌতুহল চাপতে না পেরে প্রশ্নগুলো এক নিঃশ্বাসে করে ফেলে কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেলো শ্রীতমা।

"না না বোকা বোকা হবে কেনো .. তোর সব কথা যখন বললি .. আমার কথাও জানার অধিকার আছে তোর .. একদিন তোকে সামনাসামনি দেখিয়ে দেবো আমার better half কে .. সেদিন মিলিয়ে নিস কে বেশি সুন্দরী .. তবে একটা কথা বলবো আগের থেকে অনেক বেশি beautiful এবং attractive হয়েছিস তুই" হাসি মুখে জবাব দিলো দেবাংশু।

দেবাংশুর কথায় বলা ভালো স্বামী ছাড়া এই প্রথম কোনো পরপুরুষের প্রশংসায় নিজের প্রতি গর্ব বোধ হলো শ্রীতমার এবং পরমুহূর্তেই লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠলো তার মুখ .. কিন্তু কেনো সে নিজেও জানে না তার বুকের ভেতরে একটা অদৃশ্য দলাপাকানো কষ্ট অনুভব করলো দেবাংশুর বিবাহের কথা শুনে।

পুলিশ স্টেশনে ঢোকার আগের বৌদিমণি এবং পুলিশ স্টেশন থেকে বেরোনোর পরের বৌদিমণির স্বভাব এবং আচার-ব্যবহারের আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করলো সোমা। থানায় ঢোকার আগে গোমরা মুখো শ্রীতমা এখন গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে অটোয় উঠলো। তবে কি তার বউদিমনির মাথাটা একেবারেই গেলো!! কিন্তু ভয় কোনো প্রশ্ন করার সাহস পেলো না সোমা।

সোমা নিজের বাড়ি চলে যাওয়ার পরে সন্ধ্যে থেকে নিজের কোয়ার্টারে বেশ ভালো সময় কাটলো শ্রীতমার। মনটা যে আজ তার বেশ ফুরফুরে .. এর একটা বড়ো এবং অবশ্যম্ভাবী কারণ তো দেবাংশুর সঙ্গে আচম্বিতে এতদিন পর দেখা হয়ে যাওয়া .. কিন্তু আর একটা কারণও আছে .. ক্রমশ প্রকাশ্য।

বাড়ি যাওয়ার আগে সোমা একবার মিনমিন করে জিজ্ঞাসা করেছিল রাতের খাবার সে বানিয়ে দিয়ে যাবে না কি .. তার উত্তরে ব্যঙ্গাত্মকভাবে শ্রীতমা বলেছিল "এতদিন কোথায় ছিলে বাপু তুমি? তাছাড়া আমার প্রেমিকেরা যখন আমাকে ফ্রিতে সকাল-দুপুর-বিকেল-রাতে খাবার সাপ্লাই দিয়ে যাচ্ছে তখন আমি কেনো সেটা পরিত্যাগ করবো শুধু শুধু!"

রাতে অফিস ক্যান্টিন থেকে আসা ফ্রী অফ কস্ট এর মহাভোজ খাওয়ার পর আজ অনেকদিন বাদে বুকানকে নিয়ে সুখনিদ্রায় গেলো শ্রীতমা।

পরের দিন ভোর হলো .. সূর্য উঠলো .. কুড়ি থেকে ফুল প্রস্ফুটিত হলো .. ফ্যাক্টরির সাইরেন বাজলো .. পুলিশ স্টেশনে গিয়ে পুনরায় দেবাংশুর সঙ্গে দেখা করার আশায় শ্রীতমার গুনগুন করে গাওয়া এই গানে "দিবস রজনী আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি" সারা ঘরময় মুখরিত হয়ে উঠলো ..

সবকিছুই ছন্দ মিলিয়ে হতে থাকলেও .. সেই সময় চার কিলোমিটার দূরে সাদার উপর কাজ করা একটি বুটিকের শাড়ি এবং সাদা স্লিভলেস ব্লাউজ পড়ে রুপনারায়নপুর স্টেশনে মোজাফফরপুর এক্সপ্রেস থেকে নামলো এক বিগতযৌবনা কিন্তু অসম্ভব আঁটোসাঁটো শরীরের আকর্ষণীয়া এক নারী .. দেবযানী ব্যানার্জি।[/HIDE]

(ক্রমশ)

ভালো লাগলে লাইক . রেপু . কমেন্ট করবেন .. না লাগলে নয়...
 
aDPNDKH.jpg


[HIDE]রূপনারায়ণপুর স্টেশন থেকে দেবযানী দেবীকে receive করে একটি কালো রঙের অ্যাম্বাসেডর গাড়ি তাকে মিস্টার আগারওয়ালের বাগান বাড়িতে নিয়ে এলো।

যদিও মিটিং/অ্যাপয়েন্টমেন্ট দুপুরবেলাতে ছিলো কিন্তু ওখানে পৌঁছে দেবযানী দেবী জানতে পারলেন উনার সঙ্গে যে বা যারা কথা বলবেন তারা সবাই একটি অন্য অ্যাসাইনমেন্টে ব্যস্ত তাই উনার অ্যাপোয়েন্টমেন্ট সন্ধ্যেবেলায় reschedule করা হয়েছে। তিনি যেন ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে দেয়ে ততোক্ষণ বিশ্রাম করেন।

কথাটা শুনে স্বভাবতই কিছুটা হতভম্ব এবং চিন্তিত হয়ে পড়লেন দেবযানী দেবী, কারণ আজকে সন্ধ্যার ট্রেনেই তার শ্রীরামপুর ফিরে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু একটি আত্মহত্যা এবং তার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ কেসে ফেঁসে যাওয়ার ভয় থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য বাধ্য হয়ে অপেক্ষা করাই যুক্তিযুক্ত মনে করলেন।

★★★★

কালো রঙের স্লিভলেস ব্লাউজটা পড়তে গিয়েও সেটা আবার রেখে দিলো শ্রীতমা। অত্যন্ত revealing বলে বেশ কয়েক মাস আগে কেনা হলেও ব্লাউজটি এর আগে কোনোদিন পড়েনি সে। ভেবেছিলো মেটালিক ব্ল্যাক কালারের পিওরসিল্ক শাড়ির সঙ্গে বগলের কাছে অনেকটা কাটা কালো স্লিভলেস ব্লাউজটা পড়ে এবং তার সঙ্গে চড়া মেকআপে চমকে দেবে একজনকে .. পরমুহুর্তেই সমগ্র মুখমন্ডল লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠলো তার। মনে মনে ভাবলো .. 'ছিঃ, সে নিজে একজন বিবাহিতা নারী হয়ে আকর্ষণীয় পোশাক পড়ে একজন বিবাহিত পর-পুরুষকে চমকে দেওয়ার কথা ভাবছে! ও‌ নিশ্চয়ই আমাকে হ্যাংলা ভাববে।'

তারপর পুনরায় ব্লাউজটি হাতে নিয়ে মুখে এক চিলতে দুষ্টু হাসি ফুটে উঠলো শ্রীতমার -- 'হ্যাংলা ভাবলে আমার বয়েই গেলো .. আমি তো নিজের জন্য পড়ছি .. কারোর জন্য নয় .. এইভাবে আজ আমার সাজুগুজু করা ইচ্ছে হয়েছে .. তাই করছি .. কেউ আড়চোখে দেখলে দেখুক .. কিছু ভাবলে ভাবুক।'

আধঘণ্টার মধ্যে সেজেগুজে, ফিটফাট হয়ে বেরোনোর জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলো শ্রীতমা। প্রথমে ভাবলেও চড়া মেকআপ সে করলো না .. কারণ সে ভালো করেই জানে হাল্কা মেকআপে তার সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র .. তবে কারোর অনুরোধ বা প্ররোচনামূলক কথা ছাড়াই শাড়িটা আজ সে নাভির অনেকটা নিচেই পড়েছে। প্রসাধনীর সময় নিজেই প্রতিটা মুহূর্তে শিহরিত হচ্ছিলো শ্রীতমা।

শ্রীতমার মুখমন্ডলের ক্রমান্বয়ে অভিব্যক্তির পরিবর্তন এবং তার প্রসাধন দরজার পাশে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টে দেখছিলো সোমা। দেখতে দেখতে অভিজ্ঞ সোমার মনে হচ্ছিলো যেনো 'সখি হাম মোহন অভিসারে যাঁউ'‌.. কিন্তু কোথায় যাচ্ছে সে .. কার অভিসারে .. কার কথা ভেবে সে বেশভূষায় এইরূপ আকর্ষণীয়া হয়ে ওঠার কথা ভাবছে .. তার সতীত্ব হরণকারী ওই মাঝবয়সী কামুক পুরুষদের মধ্যে কোনো একজনের .. না কি প্রায় সাত বছর পর দেখা হওয়া তার পূর্ব পরিচিত ভালোবাসার মানুষ পুলিশ অফিসার দেবাংশুর (আজ সকালে শ্রীতমাকে বারবার জিজ্ঞাসা করে কিছুটা জানতে পেরেছে সে) .. নাকি বড় সাহেব .. উনার কোয়ার্টার থেকে বেরিয়ে শ্রীতমাকে অনেকটা নিশ্চিন্ত লাগছিলো কাল বিকেলে .. কিন্তু তার তো অনেকটা বয়স হয়েছে এবং শোনা যায় সেও মানুষ হিসেবে খুব একটা সুবিধার নয় .. তার সঙ্গে কি করে সম্ভব ..

"আমি বেরোলাম .. বুকানকে সামলে রেখো .. আমি মাঝে মাঝেই ফোন করে খবর নেবো .. বেশ কয়েকতা কাজ আছে মিতিয়ে ফিরতে দেরী হবে .. কেউ আমার খোঁজ করতে এলে বলো দোকানে গেছে" শ্রীতমার কথায় চমক ভাঙলো সোমার।

আজ সোমাকে বাড়িতে রেখে বুকানের দায়িত্ব দিয়ে শ্রীতমার একাই বেরোনোর কথা। ঠিক হয়েছে সে ফিরে এলে আজ সন্ধ্যেবেলা সোমা কুসুমপুরে তার গ্রামের বাড়িতে যাবে, কাল সকালেই আবার ফিরে আসবে। যদিও এই দু'দিনে শ্রীতমার অনুগত হয়ে পড়া সোমা তাকে ছেড়ে প্রথমে যেতে চাইছিল না.. পরে শ্রীতমা যখন তাকে বলে ইন্সপেক্টর খানের দেওয়া টাকাটা গ্রামে গিয়ে তার মায়ের কাছে নিরাপদ ভাবে রেখে আসাটা যুক্তিযুক্ত হবে, তখন সোমা রাজি হয়।

"গতকাল প্রথমে দেখেই আমার সন্দেহ হয়েছিলো এই বাড়িতে মেয়েমানুষের হাতের ছোঁয়া নেই .. তারপর তো সব শুনলাম আপনার কাছ থেকে .. যাই হোক, শুধুমাত্র চাকর-বাকর দিয়ে ঘর পরিষ্কার করা যায় .. ঘর গোছানো যায় না .. বুঝলেন কিছু .. ও আপনি তো আবার 'রামগরুড়ের ছানা হাসতে তাদের মানা' .. দশ'তা কথা বললে একতা কথার উত্তর দেন .. যাগ্গে ঘরের মাঝখান থেকে সরে সোফায় গিয়ে বসুন .. আজ আপনার বৈঠকখানার ঘর আমি সাজিয়ে দেবো" কলিংবেল টেপার পর বুড়ো চাকর এসে দরজা খুলে দিয়ে যাওয়ার পরে সুধীর যাদবের বিলাসবহুল কোয়ার্টারের ড্রইংরুমে ঢুকে তার ফ্যাক্টরির একজন অধঃস্তন কর্মচারীর স্ত্রী এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলো বাড়ির মালিককে।

"তুমি আবার এসেছো .. গতকাল তো যা বলার বলেই দিয়েছি, যে কথা কোনোদিন কাউকে বলিনি .. তাহলে আবার কি জানতে চাও .. আর একটা কথা, তুমি বোধহয় আমার ওজনটা ঠিক বুঝতে পারছো না .. তাই এই ভাবে কথা বলছো আমার সঙ্গে .. আমি এই কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার .. তাছাড়া বাইরে আমার অনেক বদনাম আছে .. আমি একা থাকি সঙ্গে আমার বুড়ো চাকর দেবীপ্রসাদকে নিয়ে .. তুমি হঠাৎ করে এভাবে চলে এলে পাঁচ জনে পাঁচ কথা বলবে .. তুমি এখন যাও এখান থেকে" ছ'ফুটের উপর লম্বা, গৌরবর্ণ, দাড়ি, গোঁফ এবং মাথা সম্পূর্ণরূপে কামানো, গলা থেকে পা পর্যন্ত লম্বা একটি সাদা রঙের আলখেল্লা জাতীয় পোশাক পরিহিত পঞ্চাশোর্ধ সুধীর যাদব গুরুগম্ভীর গলায় কাটা কাটা বাংলায় কথাগুলি তার অধঃস্তন কর্মচারীর স্ত্রী শ্রীতমাকে উদ্দেশ্য করে বললো।

"এই যে শুনুন এতা আপনার অফিস নয় আর আমি আপনার কর্মচারী নই .. এতদিন সত্যিই বাচ্চা ছিলাম .. কিন্তু আপনাদের এই থার্ডক্লাস জায়গায় এসে আমি মানুষ চিনতে শিখেছি .. তাই কে ভালো লোক আর কে দুষ্তু লোক আমি কিছুতা হলেও বুঝি .. উফ্, বারো'তা বেজে গেছে দেখছি .. সেই সকালে ব্রেকফাস্ত করেছি .. খিদে পাচ্ছে আমার .. একটু পরেই লাঞ্চের সময় হয়ে যাবে .. বাড়িতে কেউ এলে তাকে খেতে বলার ভদ্রতাতুকুও তো জানেন না .. ও আপনি তো আবার হুঁকোমুখো হ্যাংলা .. ঠিক আছে আমি আজকে এখানে দুপুরের খাবার খাবো .. বুড়োতা তো কিছুই বানাতে পারে না মনে হয় .. তাই সারাদিন তো মদ আর মাংসের উপর থাকেন .. এখানকার কাজ সেরে কিচেনে গিয়ে আমি দু'তো ভাতে ভাত ফুতিয়ে নিয়ে একসঙ্গে দুজনে খাবো .. কেমন .. এখন আপনি চুপ্তি করে ওই সোফাতে গিয়ে বসুন" শ্রীতমার হুঙ্কারে কার্যত রণেভঙ্গ দিয়ে এবং কিছুটা চমকে গিয়ে সোফার উপর থপ করে বসে পড়লো সুধীর যাদব।

তারপর গলা অনেকটা নরম করে কম্পিত স্বরে তিনি বললেন "দেখো .. তু .. তুমি কিন্তু জোরজুলুম করছো আমার উপর .. এ .. এভাবে কেউ কোনোদিন কথা বলার সাহস পায়নি আমার সঙ্গে .. আরে আমি এই কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার .. আর তুমি আমার সঙ্গে এইভাবে .. আবার বলছো আজ দুপুরে খাবে .. কি মুশকিলে পড়লাম আমি .. ঠিক আছে তোমাকে রান্নাঘরে গিয়ে কিছু করতে হবে না .. দেবীপ্রসাদ রান্না করেছে .. ভালোই রান্না করেছে .. তুমি খেয়ো .. কিন্তু একটা কথা খেয়েদেয়েই চলে যাবে .. আমাকেও বেরোতে হবে ফ্যাক্টরিতে .. তুমি কেনো বুঝতে পারছো না এখানে বারবার আসাটা আমাদের দু'জনের পক্ষে ঠিক নয়"

"কোনতা ঠিক আর কোনতা বেঠিক আমি বুঝবো .. আপনাকে কেউ কোনোদিন শাসন করেনি বলে এতা মনে করবেন না সেই সাহস আর কেউ দেখাতে পারবে না .. ঠিক আছে বাবা ঠিক আছে আমি খেয়েদেয়ে চলে যাবো .. তবে যাওয়ার আগে ওই ব্যাপারে কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা আলোচনা করে নেবো আপনার সঙ্গে .. আর হ্যাঁ .. আজ আপনি আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন তো .. কিন্তু একতা কথা বলে রাখলাম .. আমার মতো মিষ্তি মেয়েকে কেউ ভালো না বেসে পারেই না .. আমি চলে গেলে আমার জন্য নিশ্চয়ই মন খারাপ হবে আপনার .. মন খারাপ হওয়ার পর যদি আমাকে ডাকেন তখন বয়েই যাবে আমার আসতে" অভিমানী সুরে ভাব ব্যক্ত করলো শ্রীতমা।

জিরা রাইস, ডাল মাখানি, পনির বাটার মশালা আর ডেজার্ট সহযোগে মধ্যাহ্নভোজ সেড়ে সুধীর যাদবের বিলাসবহুল কোয়ার্টার থেকে বিদায় নিলো শ্রীতমা।

শ্রীতমাকে দোর পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে ফিরে আসার পর বৃদ্ধ চাকর দেবীপ্রসাদ দেখলো তখনও তার মালিক সোফার উপর বসে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আর তার চোখে জল টলটল করছে।

"আসতে পারি মহামান্য পুলিশকর্তা দেবাংশু বাবু?" বাইরের দেওয়ালে মেটালের ফলকে দেবাংশু সান্যালের নামাঙ্কিত চেম্বারের ভেজানো দরজা ঠেলে মুখ বাড়িয়ে প্রশ্ন করলো শ্রীতমা।

"আরে আরে .. কি সৌভাগ্য আমার .. মহারানী ক্লিওপেট্রার পদধূলি পুনরায় পড়লো আমার চেম্বারে .. তবে গোস্তাকি মাফ .. আমি পুলিশকর্তা নই .. পুলিশের একজন সাধারণ কর্মচারী মাত্র .. আর পাঁচ মিনিট দেরিতে এলেই আমাকে দেখতে পেতিস না .. আজকের মতো কাজকর্ম সমাপ্ত হয়েছে এখানে .. লাঞ্চ করে নিয়েছি .. বাংলোতে গিয়ে রেস্ট করবো একটু .. তোর কথা বল .. এখন এখানে .. কিছু দরকার?" এইরকম লাস্যময়ী ভঙ্গিতে পোশাক পরিহিতা তার প্রাক্তন বান্ধবী তথা মামাতো বোনের দিকে প্রথমে কিছুক্ষণ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে তারপর তাকে ভেতরে ডেকে নিয়ে সহাস্যে বললো দেবাংশু।

"আজ এ কি হচ্ছে আমার সঙ্গে .. যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই লোকজন বলছে কেনো এসেছো .. কি দরকার .. কেতে (কেটে) পরো .. দরকার ছাড়া বুঝি আসতে নেই!" কপট রাগ দেখিয়ে বললো শ্রীতমা।

"ছিঃ ছিঃ আমি কি সেই কথা বলেছি .. তোর সঙ্গে কি আমার সেই রকম সম্পর্ক .. যখন খুশি আসবি আমার কাছে .. কে কি বলে আমি দেখে নেবো .. দেব যুক্ত অংশু নামের কোনো অর্বাচীন যদি বাধা দেয় তাহলে তার কপালেও দুঃখ আছে বলে দিলাম" মজা করে বললো দেবাংশু।

"থাক .. আর বাতারিং (buttering) করতে হবে না দেবু'দা .. সব বুঝি আমি .. অন্য মহিলার সঙ্গে কথা বলার সময় যদি বউ ফোন করে সেই ভয় আমাকে কাতিয়ে দিচ্ছো তুমি .. by the way আদিল খানের মতো ঐরকম একতা নিকৃষ্টতম দুর্বৃত্তের মৃত্যু রহস্যের কেস'তা তুমি কেনো নিলে? লোক'তা মরেছে ভালো হয়েছে" অনুযোগ করে বললো শ্রীতমা।

"এইভাবে বলিস না মৌ .. খান চাচার চারিত্রিক দোষের কথা আমি জানি .. যদিও তুই কীভাবে এই ধারণার সঙ্গে ওয়াকিবহাল হয়েছিস সেটা বুঝতে পারছিনা .. দুষ্কৃতীদের হাতে আমার মা-বাবার মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা তো তুই জানিস .. আমি তখন ক্লাস ইলেভেনে পড়ি .. সেদিন কোনো একটা বিশেষ দরকারে বাড়ির বাইরে গিয়েছিলাম .. তাই প্রাণে বেঁচে গিয়েছি .. তোকে বলেছিলাম আমার মা-বাবার মৃত্যুর পর আমার বাবার একজন সহকর্মী আমার পড়াশোনা থেকে শুরু করে যাবতীয় দায়িত্ব নেয় .. এটাও বলেছিলাম তার সঙ্গে একদিন তোর পরিচয় করিয়ে দেবো .. কিন্তু আমাদের সম্পর্কটা তো আর এগোলো না তাই আর সেটা সম্ভব হলো না .. তিনি আর কেউ না আমার খান চাচা ইন্সপেক্টর আদিল খান .. উনি তো বিপত্নীক ছিলেন .. সন্তানাদিও কেউ ছিল না .. আমাকে নিজের সন্তানের মতোই দেখতেন .. চলে যাওয়ার দিন সন্ধ্যে সাত'টা নাগাদ আমাকে ফোন করে বললো -- 'বেটা দেবাংশু, আমার পাপের ঘড়া পূর্ণ হয়েছে, এবার যে যেতে হবে আমাকে, তুমি কিন্তু ভেঙে পড়বে না, আমি তো পারলাম না, কিন্তু তোমাকে একজন মস্ত বড়ো সৎ পুলিশ অফিসার হয়ে তোমার বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করতে হবে' .. আমি নিজেও জানি খান চাচা আত্মহত্যাই করেছে .. কিন্তু এর পিছনের কারণটা খুঁজে বার করতেই আমি এখানে এসেছি" কথাগুলো বলতে বলতে চোখে জল এসে গিয়েছিলো দেবাংশুর।

তার দেবুদা'র মুখে কথাগুলো শোনার পর স্তম্ভিত হয়ে গেলো শ্রীতমা। বিচিত্র এই পৃথিবীতে কত রকমের বিচিত্র মানুষের বসবাস। একজন নির্দয়, পাষণ্ড, কামুক মানুষের যে এইরকম একটা মানবিক দিকও থাকতে পারে খানসাহেবকে না দেখলে সেটা বোধহয় তার জানাই হতো না।

নিজেকে সামলে নিয়ে গলাটা পরিষ্কার করে অপলক দৃষ্টিতে দেবাংশুর দিকে তাকিয়ে শ্রীতমা বললো "কারণ তা বোধহয় তুমি .."

"আমি? মানে? ঠিক বুঝতে পারলাম না তোর কথা" চিন্তিত হয়ে জানতে চাইলো দেবাংশু।

"শুনেছি তুমি একজন দুঁদে সিআইডি অফিসার .. কারণ তা তুমি খুঁজে বের করো .. আমিও খোঁজার চেষ্তা করছি শুধু কয়েকতা হিসেব মিলছে না .. এইসব কথা বাদ দাও .. তুমি বলেছিলে তোমার বউয়ের ছবি দেখাবে .. কই দেখাও, তোমার মোবাইলে নিশ্চয়ই আছে .." উৎসুক হয়ে বললো শ্রীতমা।

"আচ্ছা আমার যে বউ আছে সে কথা কি আমি একবারও বলেছি? তবে হ্যাঁ আমার একজন মনের মানুষ আছে যাকে আমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি .. তবে তার ছবি কেনো .. তোকে সামনাসামনি দেখিয়ে দেবো না হয় একদিন .. আমি সঙ্গে করেই তো এনেছি তাকে এখানে" কৌতুকমিশ্রিত স্বরে জানালো দেবাংশু।

"এখানে সঙ্গে করে এনেছো মানে? আমি যে শুনেছিলাম তোমার সঙ্গে কে একজন পুরুষ বন্ধু এসেছে। যিনি আবার লেখালেখিও করেন। কিন্তু তোমার বান্ধবীর কথা তো শুনিনি। তিনি বুঝি সব জায়গায় তোমার সঙ্গে ভ্রমণ করেন। আসলে সেতাই তো স্বাভাবিক, এতো হ্যান্ডসাম বয়ফ্রেন্ড যার, তাকে কে আর একা একা ছাড়ে বলো, যদি কোনো কুহকিনীর পাল্লায় পড়ে। তুমি তো বাড়িতেই যাচ্ছো তাহলে চলো এখনই দেখা করে আসি তার সঙ্গে" উৎসাহ দেখিয়ে বললো শ্রীতমা।

"আজকে থাক .. অন্য একদিন নিয়ে যাবো .. আজ আমার বন্ধুটি তার অফিসের কাজে দুদিনের জন্য কলকাতায় গেছে .. ও ফিরে আসুক তারপর না হয় .." আমতা আমতা করে বললো দেবাংশু।

"মানে তা কি? তোমার বন্ধু ফিরে আসার সঙ্গে আমার ওখানে যাওয়ার কি সম্পর্ক? আমি তো তার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি না, আমি তোমার মনের মানুষের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি, যার সঙ্গে তুমি লিভিং রিলেশনে আছো এবং আজকেই যাবো, আমার জেদ সাংঘাতিক, তুমি ভালো করেই জানো সেতা। ভয় নেই তার কাছে আমাকে বান্ধবী বলে পরিচয় না দিয়ে মামাতো বোন বলে পরিচয় দিও।" শ্রীতমার অকাট্য যুক্তির কাছে হার মেনে শেষ পর্যন্ত তাকে নিজের বাংলোতে নিয়ে যেতে রাজি হলো দেবাংশু।

পুলিশ স্টেশন থেকে বাংলো .. গাড়ি করে মাত্র মিনিট পাঁচেকের পথ। তবে হঠাৎ করেই মুষলধারে বৃষ্টি নামার জন্য গাড়ি থেকে নেমে বাংলোতে ঢোকার ওইটুকু রাস্তাতে দুজনেই কাক-ভেজা ভিজে গেলো। গন্তব্যে পৌঁছে কলিংবেল টেপার পর খানসামা রসিকলাল এসে দরজা খুলে দিয়ে সন্ধিগ্ধ দৃষ্টিতে কয়েক মুহূর্ত শ্রীতমার দিকে তাকিয়ে, তারপর দেবাংশুর দিকে তাকিয়ে বললো "বেটি কি তাবিয়াৎ হঠাৎ করেই খারাপ হয়ে গেছে হুজুর .. হসপিটালে ভর্তি আছে .. আপকে আনে কা ইন্তেজার মে থা .. আভি মুঝে নিকালনা পারেগা .. সন্ধের মধ্যে ফিরে আসবো।" এই বলে সে হন হন করে বেরিয়ে গেলো বৃষ্টির মধ্যেই। ঘড়িতে তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল তিন'টে।

"কই গো ভালো মানুষের মেয়ে .. তুমি কোথায়? ও হো, তোমার নামটাই তো জানা হয়নি.. তোমার সঙ্গে আলাপ করতে এলাম। তোমার প্রেমিক তো আমাকে নিয়েই আসতে চাইছিলো না প্রথমে। আমি নিজেই জোর করে এলাম। কি গো দেবু'দা তোমার মনের মানুষ কোথায়? কোনো সাড়া শব্দ পাচ্ছি না।" শ্রীতমার প্রশ্নে শোয়ার ঘরের দিকে নির্দেশ করে দেবাংশু বললো হয়তো সে বিশ্রাম করছে।

এই কথা শোনা মাত্র শ্রীতমা গুটি গুটি পায় বেডরুমে ঢুকে গিয়ে তারপর ভেতরে অনেক খোঁজাখুঁজি করে সেখান থেকে চিৎকার করে বললো "কোথায়? এখানেও তো দেখছি না .. তুমি একবার ভেতরে এসে দেখো, বাথরুমে গেছে হয়তো"

"ধুর বোকা মেয়ে,ওই তো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে .. যা, ওখানে গিয়ে ভালো করে দেখ .. নিশ্চয়ই দেখতে পাবি" বেডরুমে ঢুকে ড্রেসিং টেবিলের দিকে দেখিয়ে বললো দেবাংশু।

"সত্যি বাবা, তোমার চোখে ন্যাবা হয়েছে মনে হয় .. দেখি তো কোথায় .. কোথায় আছে এখানে? এখানে তো কেউ নেই .. এখানে তো শুধু আমি আছি .. তোমার মনের মানুষতি উবে গেল নাকি?" অধৈর্য হয়ে জানতে চাইলো শ্রীতমা।

"সত্যিই তুই এখনো বোকাই রয়ে গেলি মৌ .. তোর দেবুদা'কে এখনো চিনতেই পারলি না .. এই তো আমার মনের মানুষ" আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শ্রীতমার ঠিক পেছনে এসে তার চিবুক'টা তুলে ধরে মৃদু হেসে বললো দেবাংশু।

আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে এবং তার দেবুদা'র মুখে এইরূপ মন্তব্য শুনে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারলো না শ্রীতমা।

পিছন ঘুরে দেবাংশুর বুকে আছড়ে পড়ে ডুকরে কেঁদে উঠে বলতে শুরু করলো "you are a liar .. তুমি কেনো তাহলে এতক্ষণ মিথ্যে বলছিলে আমাকে? তুমি জানো তোমার ভালবাসার মানুষের কথা শুনে আমার বুকের ভেতরে ভীষণরকম কষ্ত হচ্ছিলো! হয়তো তুমি বলবে আমি স্বার্থপর .. আমি নিজে বিবাহিতা তাও তোমার জীবনে কেউ এসেছে এতা শুনলে কেনো জানিনা রাগে অভিমানে আমার ভেতর তা জ্বলে যায়। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি বিবাহিতা এবং এক সন্তানের মা হয়েও প্রতিতা মুহূর্ত শুধু তোমাকেই খুঁজে গেছি। তুমি কেনো সেদিন একটু শক্ত হতে পারোনি দেবু'দা? কেনো সবার কথা অগ্রাহ্য করে আমাকে নিয়ে সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে চলে যেতে পারোনি? তাহলে আজ হয়তো আমাদের দুজনের জীবনতাই অন্যরকম হতো।"

"ঠিক আছে ঠিক আছে .. cool down মৌ .. আমার জীবন না হয় থেমে গেছে .. কিন্তু তুই তো বিবাহিতা এক সন্তানের জননী .. আর কিছু না হোক বাচ্চাটাকে মানুষের মতো মানুষ করে তুলতে হবে .. তবে এসব কথা পরে হবে .. তুইতো জবজবে ভিজে গেছিস দেখছি .. এই মুহূর্তে চেঞ্জ না করলে জ্বর অবশ্যম্ভাবী .. কিন্তু আমার ঘরে তো একটাও মেয়েদের পোশাক-আশাক নেই .. তোকে কি পড়তে দিই বলতো!" শ্রীতমাকে সান্ত্বনা দিতে দিতে কথাগুলো বললো দেবাংশু।

"এমনকিছু ভিজে যাইনি .. জামাকাপড় কিছু দিতে হবে না .. তুমি বরং আমাকে একতা তাওয়েল দাও .. আমি ওয়াশরুমে গিয়ে একটু মাথা আর গা, হাত, পা মুছে আসি।" নিজেকে সামলে নিয়ে বললো শ্রীতমা‌।

দেবাংশু আলমারি থেকে একটা নতুন সাদা রঙের টাওয়েল বের করে দিলো শ্রীতমাকে। সেটা নিয়ে দ্রুতপায়ে বেডরুম সংলগ্ন বাথরুমে ঢুকে গেলো সে।

দেবাংশু নিজেও যথেষ্ট ভিজে গেছে, তাই ড্রইংরুম সংলগ্ন কমন বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে একটা বারমুডা আর টি-শার্ট পড়ে বেডরুমে ঢুকতে গিয়ে ভীষণ চমকে দু'পা পিছিয়ে গেলো।

এক অপরূপ সুন্দরী, আকর্ষনীয়া, যৌবনবতী নারী শরীরে শুধুমাত্র তার দেওয়া সাদা রঙের টাওয়েলটি জড়িয়ে বাথরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সেই মুহূর্তে তার দূর সম্পর্কের মামাতো বোন তার মনের মানুষ শ্রীতমাকে শুধুমাত্র গ্রিক দেবী আফ্রোদিতির সঙ্গে তুলনা করতে ইচ্ছা করছিলো। কিন্তু পরমুহুর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে দেবাংশু বললো "তু .. তুই .. এইভাবে? I mean তোর শাড়ি এবং other জামা কা .. কাপড়গুলো কোথায়? বাথরুমের ভি .. ভিতরে?"

"আরে এতো তোতলাচ্ছো কেনো? take it easy ইয়ার .. হ্যাঁ গো, বাইরে থেকে কিছু বোঝা না গেলেও ভেতরে গিয়ে সবকিছু খুলে বুঝতে পারলাম আমার সমস্ত জামাকাপড় ভিজে গেছে .. এই দেখো শাড়ি আর পেটিকোট ঘরেই মেলে দিয়েছি তোমার খাতের ছত্রির উপর .. এমনকি আমার ব্রা আর প্যান্তি ভিজে সপসপ করছে .. ওগুলো ওয়াশরুমে মেলে পাখা চালিয়ে দিয়ে এসেছি।" কথাগুলো শ্রীতমা এমনভাবে বললো যেনো এমন কিছুই হয়নি, প্রায় সাত বছর পর দেখা হওয়া একজন পরপুরুষের সামনে শুধুমাত্র টাওয়েল পড়ে ঘোরা এবং নিজের অন্তর্বাস নিয়ে এরকম অবলীলায় কথা বলা যেনো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।

প্রচন্ডরকম ভাবে আরষ্ঠ হয়ে নিজের জড়তা পুরোপুরিভাবে না কাটাতে পেরে কম্পিতকন্ঠে দেবাংশু বললো "হ্যাঁ বুঝলাম, কি .. কিন্তু তুই এইভাবে তো থাকতে পারবি না বেশিক্ষণ .. আচ্ছা দেখছি দাঁড়া আমার কোনো ভালো লম্বা পাঞ্জাবি গোছের কিছু আছে কিনা .. সেটা পড়লে তুই comfortable হবি.."

প্রথমে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে পাঞ্জাবি এনে দেওয়ার কথা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে তারপর ফিসফিস করে শ্রীতমা উত্তর দিলো "আমাকে দেখে কি আদৌ মনে হচ্ছে আমি কমফর্তেবল নই!! কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তুমিই যেনো কিরকম আরষ্ঠ হয়ে আছো। আচ্ছা দেবু'দা মনে আছে সরস্বতী পুজোর দিন বিকেলে আমাদের চিলেকোঠার ঘরে তুমি আমাকে সম্পূর্ণরূপে নিরাবরণ দেখতে চেয়েছিলে একবারের জন্য। আমি সেদিন খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি যদি ভয় পেয়ে চিৎকার না করতাম তাহলে আমাদের কথা কেউ জানতে পারতো না, তোমাকেও ওরা বের করে দিতো না বাড়ি থেকে। সব দোষ আমার .. actually I was the spoiler .. ওই দিনটার কথা ভাবলে এখনো ভেতরটা কুরে কুরে খায় আমার .. দেখবে আজকে আমাকে?"

শ্রীতমার কথায় প্রমাদ গুনলো দেবাংশু "এই না .. প্লিজ এটা করিস না মৌ .. তখনকার আমরা আর এখনকার আমরা কিন্তু এক নয় .. আমাদের সামাজিক অবস্থানের পরিবর্তন ঘটেছে .. তোকে আমার স্বপ্নের রানী হয়েই থাকতে দে.."

"just shut up .. আমার মতো একজন beautiful charming and attractive যুবতী নারী তোমাকে আহ্বান করছে আর তুমি ধর্মের বাণী শোনাচ্ছো? actually I think you are an impotent person .. তুমি শারীরিকভাবে অক্ষম একজন মানুষ .. তাই এড়িয়ে যাওয়ার নাতক করছো .. পাছে ধরা পড়ে যাও" ব্যঙ্গাত্মকভাবে শ্লেষে ভরা কথাগুলো চিবিয়ে চিবিয়ে বললো শ্রীতমা।

"আমার ভালোবাসাকে এইভাবে অপমান করিস না মৌ .. আমি শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সক্ষম .. কিন্তু তোর এই রূপে আমি জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছি .. আমি দুর্বল হয়ে যাচ্ছি .. আমাকে দুর্বল করে দিস না" কাতর কন্ঠে বললো দেবাংশু।

"আচ্ছা তাই!! তাহলে প্রমাণ দাও তুমি আমাকে ভালোবাসো" এই বলে মুহুর্তের মধ্যে পরনের টাওয়েলটা খুলে ঝপ করে মাটিতে ফেলে দিলো শ্রীতমা।

উন্মুক্ত হলো কুমারটুলিতে বানানো দেবী প্রতিমার কন্ঠের মতো অনেকগুলো ভাঁজ যুক্ত শ্রীতমার লম্বা গ্রীবা, নির্লোম চওড়া কাঁধ ও মসৃণ বাহুদ্বয়, ভারি স্তনযুগল .. অত্যাধিক ভারে যা কিঞ্চিৎ নিম্নগামী এবং শরীরের বাকি অংশের থেকে ফর্সা .. এটা সারাক্ষণ ব্লাউজ এবং ব্রা এর নিচে থাকার জন্য সূর্যের আলো থেকে বঞ্চিত হওয়ার দরুন হতে পারে বা অন্য কোনো কারণেও হতে পারে, তার মাঝে উদ্ভাসিত-স্ফীত স্তনবৃন্ত এবং অসংখ্য দানাযুক্ত বলয়দ্বয় .. যার ব্যাসার্ধ তো মেপে বলা সম্ভব নয় তবে আন্দাজে বলা যায় এক একটা বড়ো চাকতির মত হবে, ঈষৎ চর্বিযুক্ত তলপেট এবং তার মাঝখানে বিদ্যমান একটি গভীর উত্তেজক নাভি, তার নিচে প্রকট হয়েছে মাতৃত্বের চিহ্ন অর্থাৎ সেলাইয়ের দাগ .. বুকান সিজারিয়ান বেবি, তার ঠিক নিচ দিয়ে শুরু হয়েছে একটু লালচে, কোঁকড়ানো যোনিকেশ যার মাঝখানে যৌনাঙ্গের চেরাটা স্পষ্টতই দৃশ্যমান। ভারী স্তনযুগলের অধিকারিণী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রীতমা গুরু নিতম্বিনীও বটে .. মনে হয় ঠিক যেন দাগহীন উল্টানো কলসির মতো ভীষণরকম মোলায়েম ও তুলতুলে অথচ জমাট মাংসল নিতম্বজোড়া তার পেছনে কেউ প্রতিস্থাপন করেছে।

অতীতের সমস্ত তিক্ত স্মৃতি ভুলে, বর্তমানে পরস্পরের সামাজিক অবস্থান ভুলে এবং ভবিষ্যতে এর পরিণতি কী হতে পারে সেটা পর্যন্ত ভুলে গিয়ে সম্পূর্ণ নিরাবরণ শ্রীতমাকে নিবিড় আলিঙ্গনে আবদ্ধ করলো দেবাংশু।

সে এই মুহূর্তে ভাঙতে চাইছে .. সে তার মৌয়ের স্নিগ্ধতা ও সারল্য ভাঙতে চাইছে .. সে চাইছে ঝড় এবং অগ্নিবৃষ্টি।[/HIDE]

(ক্রমশ)

ভালো লাগলে লাইক . রেপু . কমেন্ট করবেন .. না লাগলে নয়
 

Users who are viewing this thread

Back
Top