করোনার মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে নতুন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের (মিউকরমাইকোসিস) সংক্রমণ। ভারতের দিল্লিতে ইতিমধ্যেই একে মহামারি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশেও সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তবে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নতুন কিছু নয়। এ রোগ আগেও ছিল। বর্তমানে করোনায় সংক্রমিত রোগীদের মধ্যে এর সংক্রমণ বেশি হতে দেখা যাচ্ছে। এর অন্যতম একটি কারণ রোগীর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া। এ নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সুস্থ ব্যক্তিদের শরীরে এ সংক্রমণের আশঙ্কা নেই বললেই চলে।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আমাদের পরিবেশে সব সময়ই থাকে। এমনকি মানুষের শরীরেও থাকে। মিউকর নামের একধরনের ছত্রাকের কারণে এই রোগ হয়। সাধারণত আর্দ্র ও উষ্ণ আবহাওয়ায় এর বংশবিস্তার বেশি হয়। এই ছত্রাক পাওয়া যায় মাটি, গাছপালা, সার, পচন ধরা ফল ও সবজিতে। সাধারণত শ্বাসের সময়ে বা শরীরে কাটাছেঁড়া অংশের মাধ্যমে এটি মানবদেহে প্রবেশ করে। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা অনেক কমে গেলে এটা রোগ হিসেবে দেখা দেয়।
রোগটি ছোঁয়াচে নয়। তবে সংক্রমণ নাক, চোখ, কখনো কখনো মস্তিষ্কেও ছড়ায়। যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে তাঁদের শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস প্রবেশ করলে ফুসফুস ও সাইনাস আক্রান্ত হতে পারে। পরে শরীরের অন্য অংশেও ছড়িয়ে পড়ে।
করোনায় সংক্রমিত সংকটাপন্ন রোগীদের জীবন বাঁচাতে ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়। এ রোগীদের একটা বড় অংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলে বিভিন্ন তথ্য–উপাত্তে জানা গেছে। করোনায় আক্রান্ত ডায়াবেটিস রোগীদের অবস্থা গুরুতর হলে তাঁদের শরীরে স্টেরয়েড প্রয়োগ করা হয়। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা অনেক বেড়ে যায় এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। প্রস্রাবে সংক্রমণ, ক্যানডিডিয়াসিস, দাঁতে বা কানে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ অনেকেরই হচ্ছে।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ও প্রতিরোধ
প্রথম কথা হলো করোনা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। করোনা–পরবর্তী জটিলতা হিসেবে নানা ধরনের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। কাজেই করোনার জটিলতা কমাতে হলে করোনার ঝুঁকিই কমাতে হবে আগে।
ধুলাবালু ও স্যাঁতসেঁতে জায়গা এড়িয়ে চলুন। অবশ্যই পরিষ্কার মাস্ক পরুন। একই মাস্ক বারবার ব্যবহার করবেন না। ডায়াবেটিস থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। জ্বর বা করোনা পজিটিভ হলে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করবেন না। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার, ভিটামিন এ, বি, সি, ডি, ই–সমৃদ্ধ খাবার খান। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকুন।
করোনায় সংক্রমিত রোগীর মাথাব্যথা বা মুখের এক পাশে ব্যথা ও ফোলা ভাব কিছুতেই না কমা, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে কালো অথবা বাদামি রঙের পানি পড়ার মতো উপসর্গ দেখলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
* অধ্যাপক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ