দুনিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়া আসর বিশ্বকাপ ফুটবল প্রথমবারের মতো রাশিয়ার মাটিতে শুরু হবে আর মাত্র ১২ দিন পর। এবার টেলস্টার-১৮ বল দিয়ে রাশিয়ার ১২টি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে। লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা বিশ্বকাপে না থাকলেও এ দেশের হাটে মাঠে ঘাটে, বাড়ির ছাদে, উঠানে পত পত করে উড়ছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, স্পেন, জার্মানি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্সসহ অনেক দেশের পতাকা। চলছে জার্সি কেনার ধুম। তরুণ-তরুণী তো বটেই শিশু কিংবা মধ্যবয়সীরাও বাদ থাকতে নারাজ বিশ্বকাপ উন্মাদনার এই রঙিন ছোঁয়া থেকে। ঘরে-বাইরে চলছে কোন দল সেরা এ নিয়ে তর্কযুদ্ধ। অফিস কি ক্যাম্পাস, বন্ধুদের আড্ডা বা চায়ের দোকান সবখানেই চলছে বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে আলোচনা।
১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনা একক নৈপুণ্যে বিশ্বকে মুগ্ধ করে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপের শিরোপা জিতিয়েছিলেন। এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, পর্তুগাল, বেলজিয়ামে বেশ কয়েকজন স্বপ্ন সারথি রয়েছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন- লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, কিলিয়ান এমবাপ্পে, ফিলিপে কুতিনহো, নেইমার, লুইস সুয়ারেজ, মেসুত ওজিল, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, হ্যারি কেন, ইডেন হ্যাজার্ড, টনি ক্রুস, টমাস মুলার, গ্রিজম্যান ও দিবালা। এরা পায়ের নান্দনিক নৈপুণ্য ঝলকে দলকে শিরোপা এনে দিতে অগ্রণী ভ‚মিকা রাখার ক্ষমতা রাখেন।
সম্প্রতি যারা ভালো করছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন আর্জেন্টাইন ফুটবলের জীবন্ত কিংবদন্তি লিওনেল মেসি। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ পাঁচবার ব্যালন ডি’অর জেতেন বার্সেলোনার এ ফুটবলার। ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন আর্জেন্টিনার এক শ্রমজীবী পরিবারে জন্মগ্রহণকারী এ ফুটবলার গতবার আর্জেন্টিনাকে শিরোপার কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিলেন। এবার আর্জেন্টাইনদের স্বপ্নের সারথি তিনি।
ব্রাজিলিয়ান ফুটবল তারকা নেইমার এবং রোনালদোর জন্ম তারিখ একই। দুজনই ৫ ফেব্রæয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তবে জন্ম সাল ভিন্ন। রোনালদোর জন্মের ঠিক আট বছর পর নেইমারের জন্ম। ব্রাজিলের মোগিদাস কুজেস শহরে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ২৬ বছর বয়সেই ফুটবল মাঠে নিজের পায়ের জাদুতে সবার মন কেড়েছেন তিনি। ২০১০ সালে ব্রাজিল দলে যোগ দেয়ার পর ৮৩টি ম্যাচ খেলে ৫৩টি গোল করতে সক্ষম হন। এ পর্যন্ত খেলেছেন তিনটি ক্লাবে। তার প্রথম ক্লাব সান্তোস। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনার হয়ে ১২৩টি ম্যাচ খেলে ৬৮টি গোল করেন। বর্তমানে রয়েছেন ফরাসি ক্লাব পিএসজিতে।
ফুটবলে বর্তমানে আরেক বিস্ময়কর নাম হ্যারি ক্যান। ইংলিশ ফুটবল লিগের দল টটেনহ্যামের হয়ে করছেন গোলের পর গোল। নিজ ক্লাবের হয়ে ১২০ গোল করে ফেলেছেন ইতোমধ্যে। বয়সভিত্তিক দল পেরিয়ে ইংল্যান্ড জাতীয় দলে হ্যারি ক্যানের অভিষেক ২০১৫ সালে। জাতীয় দলের হয়ে ২৩ ম্যাচে ইতোমধ্যে ১২ গোল তার। এবার বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের নেতৃত্বে রয়েছেন এ ফুটবলার।
বার্সেলোনার ফরোয়ার্ড লুইস সুয়ারেজ ১৯৮৭ সালের ২৪ জানুয়ারি উরুগুয়ের সাল্টো শহরে জন্মগ্রহণ করেন। দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা ব্রাজিল বিশ্বকাপে খুব একটা ভালো করতে না পারলেও সম্প্রতি দারুণ ফর্মে রয়েছেন তিনি। ২০০৭ সাল থেকে উরুগুয়ে জাতীয় দলের হয়ে মাঠে খেলে আসছেন। এই তারকার বয়স এখন ৩১ বছর। এ তারকাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে উরুগুয়ে।
৩৩ বয়সী রিয়াল মাদ্রিদ সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো পর্তুগালের ফুনচাল শহরে ১৯৮৫ সালের ৫ ফেব্রæয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তারকা ক্লাবের হয়ে এমন কোনো শিরোপা নেই যা তিনি জেতেননি। পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এ তারকা সর্বশেষ ইউরো কাপে পর্তুগালকে জিতিয়েছেন। তবে দুঃখ তিনি বিশ্বকাপ জিততে পারেননি। পর্তুগালের স্বপ্ন সারথি এবার তার দেশকে কতদূর নিয়ে যেতে পারেন তাই দেখার বিষয়।
জার্মানির ফুটবল কিংবদন্তি মেসুত ওজিল ১৯৮৮ সালের ১৫ অক্টোবর পশ্চিম জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন। গতবার বিশ্বকাপ জয়ে তার অবদান ছিল অসামান্য। ব্রাজিল বিশ্বকাপে দলের হয়ে দুটি গোল করার পাশাপাশি চারটি গোলে অবদান ছিল তার। রাশিয়া বিশ্বকাপেও মিডফিল্ডের প্রধান অস্ত্র তিনি। ব্রাজিলিয়ানদের আরেক স্বপ্ন সারথি গ্যাব্রিয়েল জেসুস। ম্যানচেস্টার সিটির এই সুপারস্টার ফরোয়ার্ড বর্তমান বিশ্বে তরুণ তারকাদের মধ্যে অন্যতম। ২০১৬ অলিম্পিকে ব্রাজিলের পরম আরাধ্য অলিম্পিক সোনা জয়ী দলের সদস্য ছিলেন জেসুস।
মোনাকো থেকে চলতি মৌসুমের শুরুতে ১৮০ মিলিয়ন ইউরোতে প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ে (পিএসজি) পাড়ি দেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। আক্রমণভাগে সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। ফরাসিদের স্বপ্নের সারথি তিনি। বর্তমানে তৃতীয় সর্বোচ্চ দামি খেলোয়াড় ফিলিপে কুতিনহোকে ঘিরেও স্বপ্ন রয়েছে ব্রাজিলিয়ানদের। ইডেন হ্যাজার্ডকে তুলনা করা হয় মেসি-রোনালদোর সঙ্গে। চেলসি কোচ তো বলেছিলেন এ তারকা একদিন মেসি-রোনালদোকেও ছাড়িয়ে যাবেন। তবে তিনি সেটা পারেননি। মেসি-রোনালদোকে ছাড়িয়ে যেতে না পারলেও চেলসির হয়ে বেশ উজ্জ্বল হ্যাজার্ড। গত কয়েক বছর ধরে টানা পারফর্ম করে যাচ্ছেন।
লুকাকুকে নিয়ে স্বপ্নের শেষ নেই বেলজিয়ামবাসীর। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে খেলেন তিনি। গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে পারফরমেন্স করে যাচ্ছেন তিনি। ২০১০ সালে অভিষেকের পর দেশের হয়ে ৬৬ ম্যাচে ৩৩ গোল করেছেন এই স্ট্রাইকার।