What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review ভারতীয় সিরিজ পর্যালোচনা (পর্ব ১০): Mirzapur: সংঘাত,প্রতিশোধ আর ক্ষমতার অগ্নিস্নান (1 Viewer)

907jtdy.jpg


‘পতন ঘটছে, সর্বত্র পতন ঘটছে। অর্থনীতি, মূল্যবোধ, নীতি সব কিছুরই।‘

সন্ত্রাসই যার কাছে যার নীতি, তার মুখে সমাজ সংস্কারের বাণী মানায় না। কিন্তু বিনা বাক্য ব্যয়ে সকলেই মেনে নিচ্ছে সেটা। কেন বলুন তো? কারণ লোকটা কালীন ভাইয়া, দ্য কিং অফ মির্জাপুর।

দীর্ঘ দুটি বছর বাদে এলো দ্বিতীয় কিস্তি, ২২ অক্টোবর ২০২০। এরও সপ্তাহ দুয়েক পর লেখাটি দেখে তাবৎ পাঠকের কপাল নির্ঘাত কুঁচকে উঠছে ।

অনিচ্ছুক কালহরণে জনতা জনার্দন আমার গর্দান আবদার করতেই পারেন। আমার কি দোষ বলুন? উত্তর প্রদেশের বিস্তৃত কালবিন্যাস আর ফিকশন-নন ফিকশনের ঘেরাটোপে এতটাই বুঁদ ছিলাম, ফাঁক গলে যে সপ্তাহ পেরিয়ে গেল- টেরই পাইনি!

২০১৮ সালের ১৬ নভেম্বর অ্যামাজন প্রাইমের প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পায় ‘মির্জাপুর: সিজন ১’ । টানা দুই বছর ফের একই নদীতে তীর ভেড়ায় এর দ্বিতীয় কিস্তি।

প্রথম সিজনে ৯ পর্বে এবং দ্বিতীয় সিজনে ১০ পর্বে বিভক্ত ক্রাইম ড্রামা থ্রিলার জনরার সিরিজটি। পর্ব প্রতি দৈর্ঘ্য ৩৮-৬৫ মিনিট।

২০১৮ এর নভেম্বর থেকে বিশের অক্টোবর। ২৩ মাসের দীর্ঘ প্রতীক্ষায় ফ্যানবেজ একবিন্দুও ভুলেনি দোর্দণ্ড প্রতাপধারি এই অ্যাকশন থ্রিলারকে। এক্ষেত্রে এক তোড়া প্রশংসা পেতেই পারেন মির্জাপুর প্রচারণা দল। কেননা এই ব্যস্ত উন্মুক্ত বাজারে টানা দুই বছর উন্মাদনা জিইয়ে রাখা-কম কম্ম নয়। এক বছর আগে থেকেই ঘোষণা, চরিত্র অনুসারে ট্রেইলার, অ্যামাজন সাইটে নিরন্তর বিজ্ঞাপন- আগ্রহের আগুনে ঘিই ঢেলেছে প্রতিদিন।

কাহিনী সংক্ষেপ

ঘোড়ার পিঠে বর, নিচে গানের তালে নেচে চলেছে যাত্রী দল। তরুণ বরের চোখ খুঁজলে নিশ্চয়ই ঠাওর করা যেতো লাজ আর প্রেমের লয়। সেই ব্যান্ড দলের সাথেই পথ মিলে গেল চার যুবকের। যোগ দিলো তারাও।

ঢিসিয়া ঢিসিয়া ঢিসিয়া ঢিসিয়া…

একতাল আওয়াজ শোনার পর সংবিৎ ফিরলো দলের। সাদা ঘোড়ায় রক্তের ছোপ। যেই চোখে নবপরিণয়ের স্বপ্ন ছিল খানিক আগে, সেটা এখন… ফুটো। মুন্নার ভাষায় বলতে গেলে ‘ইস কি তো ব্যান্ড বাজ গ্যায়ি।‘

প্রথম দৃশ্যেই দর্শককে চুম্বকের মতো আটকে ফেলে মির্জাপুর। যেখানে রাজা আর রাজপুত্রের রাজত্ব টিকে আছে এই একবিংশ শতকেও।

ভারতের উত্তর প্রদেশের শহর মির্জাপুর। আশেপাশের জৌনপুর, গাজীপুর, লক্ষনৌ, রায়বারেলিতেও আছে এর সদর্প প্রভাব। প্রভাবের পেছনের গল্পটাই হলো ত্রিপাঠি পরিবারের- তিন প্রজন্ম ধরে যারা শাসন –শোষণ- সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে। সত্যানন্দ- অখণ্ডানন্দ আর ফুলচন্দ; তিন ত্রিপাঠিই নৈরাজ্যের সগর্ব মদদদাতা। কার্পেট ব্যবসার আড়ালে যাদের চলে অস্ত্র আর মাদকের ধুন্ধুমার কারবার।

প্রথম ঘটনার বিস্তৃতি থেকেই শুরু হয় মূল প্রবাহ। বিচারের আশায় সেই তরুণের পিতা দ্বারস্থ হয় আইনজীবী রমাকান্ত পণ্ডিতের। তদন্ত চলাকালীন খুনি ফুলচন্দ ওরফে মুন্নার হুমকির মুখে পড়তে হয় তাঁকে। কিন্তু সেই ভীতির রাশ টেনে ধরে তাঁরই দুই পুত্র- গুড্ডু পণ্ডিত ও বাবলু পণ্ডিত।

gjTAN1X.jpg


শারীরিক গঠন থেকে অভিনয়ের ধাঁচ- নিজেকে ভেঙে গড়েছেন আলী ফজল; Photo: Instagram

পণ্ডিত পুত্রেরা যোগ দেয় অখণ্ডানন্দ অর্থাৎ কালীন ভাইয়ের দলে। স্বল্প সময়েই মেধা আর কৌশল খাটিয়ে ফুলিয়ে দেয় ব্যবসাকে। আর তখনই বাঁধে বিপরীত সংঘাত।

রাজ্যের লোভে অন্ধ হয়ে উঠতে থাকে মুন্না অর্থাৎ ‘প্রিন্স অফ মির্জাপুর’। সাইকোপ্যাথিক স্বভাবের জন্য সমাদৃত ছিল সে আগেই। পণ্ডিত ভাইদের তলে খেই হারিয়ে এবার বেপরোয়া হয়ে ওঠে সে। ইতিহাসের অজস্র উদাহরণের মতোই পিতৃ হত্যাই এখন একমাত্র লক্ষ্য।

পুত্রের কুমতি টের পেয়ে দাবার চালে ভুল করেন না কালীন ভাই। পুত্রকে লেলিয়ে দেন পণ্ডিত ভাইদ্বয়ের দিকে। রক্তক্ষয়ী, নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়েই সমাপ্তি ঘটে প্রথম কিস্তির।

দ্বিতীয় কিস্তির সাথে একমাত্র আহত সিংহের গর্জনকেই তুলনা দেয়া চলে। গর্জনের রূপকটা শুধু মুন্না ও গুড্ডুর জন্য প্রযোজ্য নয়। সিরিজের প্রতিটি চরিত্রই এবার ফুঁসে ওঠে প্রতিশোধ, ক্ষমতা আর রক্তপাতের লালসায়। কূটনীতির চালে কে কাকে হারাবে? আর কেই বা হবে মির্জাপুরের নব্য রাজা?

খোল বদলে খোলাসা

রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থ আর ক্ষমতার বিস্তৃত ঝংকার চোখে পড়ে বাণিজ্যিক এই সিরিজে। নেটফ্লিক্স কন্টেন্ট নির্বাচনে সমালোচনার মুখে পড়তে না পড়তেই চমক অ্যামাজন প্রাইমের।

ফ্লিক্সের ‘স্যাক্রেড গেমস’ যেই অগ্নিমূর্তি সহকারে শুরু হয়েছিল, দ্বিতীয় সিজনে তার ফল সজোর ভূপতন। তবে এও মানতে হবে, নওয়াজউদ্দিন-সাইফ আলী খানের সেই ওয়েব সিরিজের হাত ধরেই পরবর্তী সিরিজগুলো এসেছে। উপমহাদেশের সিরিজ দেখার অভ্যাসে একটা বিপুল বদল এনে দেয় এটি।

মির্জাপুরের হাঁকডাক সে তুলনায় কমই ছিল আরম্ভে। রাডারের তল দিয়েই চলে গিয়েছিল অনেকের। তবে ভালো কন্টেন্টের কদর সবসময়ই। তাই ওয়ার্ড অফ মাউথ আর মার্কেটিং মুনশিয়ানায় জনপ্রিয়তায় পায় সহজেই। কেউ কেউ একে ওয়েবের ‘গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর’ আখ্যা দেন।

3OTG1fn.jpg


অনিন্দ্য অভিনয়ের অপর নামই পঙ্কজ ত্রিপাঠি; Photo: Instagram

পুনিত কৃষ্ণাণ ও বিনীত কৃষ্ণানের লেখায় ফিকশন জগত উঠে এলেও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন। পুনিত বলেন, ‘ উত্তর প্রদেশেই আমার বেড়ে ওঠা। অস্ত্রের ঝনঝনানি তাই নতুন নয়। কলেজের ছেলেদের হাতেই বন্দুক দেখতাম, নির্বাচনের দিন তো আরও বেড়ে যেতো এসব। এক্সেল এন্টারটেইনমেন্টের সাথে যখন সিরিজের কথা চলে, এই অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরে আমি। ব্যস! শোয়ের গল্প তৈরি হয় তখনই।‘

বাবলু খ্যাত ভিক্রান্তও সেই সুরে তাল মেলান, ‘এখন ফিকশন- নন ফিকশনের সীমানা ভেঙে যাচ্ছে। মির্জাপুরকে ফিকশনাল শহর ভাবলেও দেখবেন এর সাথে বাস্তব পৃথিবী মিলে যাচ্ছে।‘

কেন সেরা মির্জাপুর?

ক্ষমতা রদবদলের চিরায়ত রূপের বদলে এর কোষ বিশ্লেষণ করেছেন নির্মাতারা। মাফিয়া গল্পের বহুমাত্রিক রূপ এসেছে ত্রিপাঠি, শুক্লা, ত্যাগী, লালা প্রতিটি নবাবিতেই। সঞ্জয় কাপুরের দুর্ধর্ষ সিনেমাটোগ্রাফি ও জন স্টুয়ারটের আইকনিক সুরায়োজনে দর্শক ‘গুজবাম্প’ পেয়েছে বারবার।

চিরাচরিত স্টার কাস্ট ছাড়াই শুধুমাত্র প্রতিভাধর অভিনেতাদের নিয়ে কাজ করবার সাহস দেখিয়েছেন পরিচালক করণ অংশুমান। যখন এই সিরিজের যাত্রা শুরু হয় পঙ্কজ ত্রিপাঠি, ভিক্রান্ত মাসি, আলী ফজল, দিব্যেন্দু শর্মা, রাসিকা দুগাল, শ্বেতা ত্রিপাঠি, শ্রিয়া পিল্গাওঙ্কার, শিবা চাড্ডা, রাজেশ তাইলাং, অভিষেক ব্যানার্জি প্রমুখ- কেউই নামের পাশে তারকা পদবীটা তখনও যুক্ত করতে পারেননি। ক্রাইম থ্রিলার সিরিজটা সে সুযোগই এনে দিলো।

পঙ্কজ ত্রিপাঠির জন্ম হয়েছে কালীন ভূমিকায় অবতীর্ণের জন্য, নাকি কালীন চরিত্রটি লেখাই হয়েছে পঙ্কজকে ভেবে? এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে ভক্তকুলের মাঝে।

এর ভেতরেই দু ছত্র বলতে হয় তাঁর স্রেফ গলা, কাঁধে আর চোখের অভিব্যক্তি নিয়ে। এবারের প্রথম দুই পর্বে সংলাপ ছিল হাতে গোনা। অথচ স্পটলাইট পুরোধাই কেড়ে নিয়েছিলেন এতেই।

দিব্যেন্দু শর্মার মুন্নার রূপান্তর ছিল সিরিজের প্রাণভোমরা। প্রথম দিকের উন্মত্ততায় রাশ টানলেও বেশ কিছু সময়ে তাল হারিয়েছে সে। তবে মাধুরীর সাথে প্রণয়- পরিণয়ে অন্যরকম এক স্বাদও মিলেছে। ধীর স্থির মুন্নার মধ্যবিত্ত হতে চাওয়া কিংবা পিতার সাথে বিবাদের অবসান- অশ্রুসজল হতে বাধ্য করেছে দর্শককে।

ইন্ডিয়ান ফিল্ম ইন্সটিটিউট থেকে শিখে আসা অভিনেতা দিব্যেন্দু, বিজয়, রাসিকা প্রমুখ- তাই দলগত কাজটাই ছিল বলিষ্ঠতার মূল কারণ। ওদিকে ইশা তালওয়ার মালায়লাম ইন্ডাস্ট্রিতে তারকা হলেও বলিউডে এসেছেন বছর দুই। ‘ Article 15’, ‘Kaamyaab’ এ ছোট চরিত্রে দ্যুতি ছড়াতে পারেননি। তবে তেইশে অক্টোবরের পর ইশা বন্দনাই চলছে সর্বত্র।

YD8s18n.jpg


প্রিয়াংশু তথা রবিনের ‘ইয়ে ভি ঠিক হ্যায়’ সংলাপ পেয়েছে বিপুল জনপ্রিয়তা; Photo: Youtube

নারী শক্তির প্রকরণ

দ্বিতীয় সিজনের অন্যতম উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, নারী শক্তির বিভিন্ন মাত্রার প্রকাশ। গতানুগতিক প্রেমময়, শোভাধারির বাইরে এসে শক্তিরূপে পরিণত হয়েছে প্রতিটি নারী চরিত্রই। প্রথম সিজনে গুরুত্বের পাল্লা কম ছিল রাসিকা দুগাল তথা বীণা ত্রিপাঠির। ভোল বদলে সেই চরিত্রই রুদ্র মূর্তিতে পরিণত হয় দ্বিতীয় কিস্তিতে।

‘আমার কাছে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে শক্ত একটা চরিত্র মনে হয় বীণাকে। তিন তিন জন পুরুষ যখন তাদের উত্তরাধিকারী হিসেবে সন্তান চাইছে, সেখানে একমাত্র বীণাই জোর গলায় বলতে পারে ‘সন্তানটা আমার’।‘

মাধুরী চরিত্রে ইশা অনেকটাই স্পটলাইট কেড়ে নিয়েছেন। রাজনৈতিক গুরুত্ব, আত্মসম্মানবোধের প্রশ্নে মাধুরীকে আদর্শও মানছেন কেউ কেউ। বিধবা হওয়া সত্ত্বেও নতুন সম্পর্কে জড়ানোর সাহস ও নারীর যৌন আকাঙ্ক্ষা যে কোন অবদমিত বিষয় হতে পারে না তাও দেখা গেছে এতে।

গজগামিনীর অহিংস জীবনাদর্শে মুগ্ধ ছিল বাবলু। কে জানতো বাবলুর মৃত্যুর হাত ধরেই সহিংসে পরিণত হবে সেই গোলু? গুড্ডু পণ্ডিতের ডান হাতে পরিণত হয় এবার সে, হাতে তুলে নেয় অস্ত্র, নামে বিষধর মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার কোন্দলে।

ডিম্পিকে আমরা দেখতে পাই ভিন্ন রূপে। একই ঘটনার পৃথক ফলাফল সে। গুড্ডু- গোলু যখন প্রতিশোধের মরণ নেশায় উন্মাদ প্রায়, তখন এই রাস্তা থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলে সে। নারীর নিজ জীবনের সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতার ছোট্ট উদাহরণ হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেশ গুরুত্ববহ।

রাজনৈতিক রক্ষিতা থেকে সহকারীতে পরিণত হওয়া জারিনার চরিত্রেও ছিল ভিন্ন আঙ্গিক। স্বার্থের সংঘাতে তার ব্যক্তিত্বের বিকাশ ছিল অনির্বচনীয়। অথচ প্রথম সিজনে মনে হয়েছিল স্রেফ শোভা বাড়াতেই তার আগমন!

কুলভূষণ খারবান্দা ছিলেন বাউজি চরিত্রে। ঘরের গৃহিণী থেকে কর্মী সকলের প্রতিই তার লোলুপ দৃষ্টি, ধর্ষণও সেই চার দেয়ালে ছিল স্বাভাবিক। সিরিজের ক্লাইম্যাক্সে আমরা দেখতে পাই, বাউজির অত্যাচারের বিরুদ্ধে কালী মূর্তি ধারণ করে ঘরের প্রতিটি নারী। সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমাসাময়িকতার নির্দেশ পাওয়া যায় এই ঘটনায়।

vOinwdo.jpg


মুন্না-মাধুরীর প্রেম ছিল প্রীতিকর অভিজ্ঞতা; Photo: Instagram

চাচা কাহিনী

প্রথম কিস্তির ফাইনাল পর্ব ছিল একেবারে ফুল প্যাক বিনোদন। দাবার চালই উল্টে যায় সেই পর্বে। তখন থেকেই প্রতীক্ষার পাল্লা ভারি হয়ে ছিল দর্শকদের। সিংহভাগের পছন্দনীয় চরিত্র বাবলু পণ্ডিত আর সুইটির আকস্মিক অন্তর্ধানে চমকে উঠেছিল সিরিজ প্রেমীরা।

সেই পর্বের আরেক আলোচিত চরিত্র ‘বোসড়িওয়ালে চাচা’। হিন্দিতে এটা প্রকাণ্ড গালাগাল, তাই অর্থ নিয়ে ঘাঁটছি না। সোজা কথায় যাই। সেই পর্বেই পটল তোলার কথা বিখ্যাত চাচার। পুরো শুটিং ইউনিট প্রস্তুত। এর মাঝেই বেঁকে বসলেন ওরফে চাচা। পরিধেয় শেরওয়ানিটা তাঁর নিজের, ওতে একটা কালির আঁচড়ও বসাতে দেবেন না। রক্তের রং তো দূর কি বাত!

ব্যস! এভাবেই বেঁচে গেল চাচা। দ্বিতীয় সিজনে তাই ‘ইজ্জতের প্রশ্নে’ হেমন্ত কাপাডিয়ার আগমনটাও হলো বেশ সাড়ম্বরে।

ইন্ডাস্ট্রিতে ১৬ বছর ধরে কাজ করছেন সাজি চৌধুরী। প্রতাপশালি মকবুল চরিত্রে প্রথমে আগ্রহীই ছিলেন না তিনি। সাপোর্টিং রোলে কাজ করে শ্রান্তি চেপে ধরেছিল একসময়। শেষমেশ গুরমিত সিংয়ের প্ররোচনায় রাজি হন।

দের আয়ে দুরস্ত আয়ে

সমালোচনার চাপ থাকবেই। প্রথম সিজনে কালীন ভাইয়ের প্রতি বীণার অভিযোগ ছিল বিস্তর। সেই সংলাপকে পুঁজি করে অনেকেই বলছেন এই সিজন তেমনি ‘তৃষ্ণার্ত’ রেখে দিয়েছে দর্শকদের। তবে একেবারে যে নিরাশ করেছে তা ঘুণাক্ষরেও বলবে না কেউ।

বহুবার মনে হয়েছে সাব প্লটের বাহুল্যে মূল কাহিনী খেই হারিয়েছে । তবে শেষতক দেখলে বোঝা যায় নির্মাতারা পরবর্তী সিজনে চমক আনছেন আরও। চিত্রনাট্যের শুরুতে সেট আপ লেখার মতই অনুভূতি হয়েছে এই কিস্তিতে।

0SFqVZY.jpg


শারদ শুক্লার চরিত্রকে রিয়েক্টিভ মানছেন আঞ্জুম; Photo: Instagram

পঙ্কজ ত্রিপাঠি সকল সমালোচনাই মাথা পেতে নিচ্ছেন, ’দেখুন সিজন ২ এ গভীরতা বেড়েছে। দর্শক অনেক রকম চরিত্রের সাথে পরিচিত হচ্ছে। ক্ষমতার খেলা মির্জাপুরে বাইরেও বিস্তৃত হচ্ছে। পুরো আনন্দটা পেতে হলে একটু ধৈর্য ধরতেই হবে।‘

রাজনৈতিক বাতাবরণ আনলেও নির্বাচন ও দলীয় মনোনয়নের বিষয়গুলোর সুস্পষ্ট কোন চিত্র আসেনি। এমনকি বিরোধী দলের উপস্থিতিও টের পাওয়া যায়নি। ভিজুয়াল ইফেক্টের দুই দৃশ্যে অবাস্তব দৃশ্যায়ন ছিল দৃষ্টিকটু। তবে লালার বাড়িতে হামলার ওয়ান টেক শটে শিহরিত হওয়াই স্বাভাবিক।

সিরিজের চরিত্রায়নে রূপান্তর লক্ষণীয় ভূমিকা রেখেছে। সরল গুড্ডুর নিষ্ঠুর খুনে হয়ে ওঠা, মুন্নার পরাবাস্তবতার সংঘাত, গোলুর সহিংস পন্থা অবলম্বন এবং বীণার দ্বান্দ্বিক কৌশল- চতুর্মাত্রিক কাহিনী বিন্যাস একসূত্রে গেঁথেছে পুরো সিরিজকে।

DEpPLtR.jpg


যমজ ত্যাগী ভ্রাতা চরিত্রে মেধার সাক্ষর রেখেছেন বিজয় ভার্মা; Photo: The Indian Express

অর্থ, ক্ষমতা ও যৌনতা- তিন ধাপে বিশ্লিষ্ট হয়েছে কালীন ভাইয়াও। ত্রিপাঠি পরিবারের ব্যবসা নিয়ে প্রথম থেকেই সচেতন থাকি আমরা। বীণার সাথে শীতল সম্পর্ক এবং নিজেকে Non performing asset হিসেবে দাবি করায় যৌনজীবনে বিফল ছিল সে। তবে এবার ক্ষমতার সম্প্রসারণে মনোযোগী হয় সে। মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য পরিবর্তন ঘটায় নিজের ভেতর। যার প্রকাশ দেখা যায় পোশাকেও। কালো কোটি থেকে ক্রমে হালকা রং ও শেষ অঙ্কে সাদা কাপড়ে তাঁকে আবিষ্কার করি আমরা। অর্থাৎ অন্ধকার থেকে আলোর প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকে সে।

প্রশংসা করা যায় এর প্রতিটি চরিত্র নির্মাণে যত্নের প্রতি। মূল গল্পের পাশাপাশি মকবুল-বাবর, রবিন, ত্যাগী ভ্রাতৃদ্বয়ের সাবপ্লট গুলো মন জয় করে নিয়েছে অনায়াসে। অল্প স্ক্রিন টাইমেও শারদ শুক্লা ও মায়ের রসায়ন চমক দেখিয়েছে।

প্রথম সিজনে মকবুলের চরিত্র একমাত্রিক থাকলেও এবার তা ছড়িয়ে গেছে বহুদূর। পারিবারিক সম্পর্কে বাবর ও মায়ের প্রতি আবেগের সমান্তরালে আমরা দেখতে পাই আনুগত্যের নিদর্শন।

TZa9Lc1.jpg


তাণ্ডবের ঠিক পূর্বে ; Photo:IMDb

‘ব্যক্তিজীবনে মুন্নার মতো কারুর মুখোমুখি হতে চাই না। ও একটা বদ্ধ উন্মাদ, পাগল। ওর ভালোবাসার ধরণ ভয়াবহ, এমন হওয়াই উচিত না।‘ আইকনিক চরিত্র হিসেবে পরিচিত হলেও মুন্নাকে বাস্তবে দেখতে চান না খোদ দিব্যেন্দু।

‘আজ অব্দি যত চরিত্রে কাজ করেছি সবচেয়ে জটিল এই গজগামিনী গুপ্তা অর্থাৎ গোলু। মাঝে মাঝে মনে হতো বাস্তবে ওকে পেলে জড়িয়ে ধরতাম, বোঝাতাম নিজের প্রতি এতটা অবিচার করা ঠিক নয়।‘ ‘মাসানে’র স্নিগ্ধ শ্বেতা এভাবেই নিজের অনুভূতি তুলে ধরেন।

লং শটের সংখ্যা প্রচুর হলেও বিরক্তির জন্ম দেয়নি। বিশেষত দ্বিতীয় সিরিজের আরম্ভে যেই বৃশ্চিকের দেখা পাই তাকে তুলনা করা যায় কালীন ত্রিপাঠির পরিণতির সাথে।

নিপাট সত্যি বললে মির্জাপুরের মূল সূত্রই হলো- খুনের বদলে খুন। সিজনের পর সিজন আসলে হয়তো সেই মৃত্যুর মিছিলই বাড়বে-অবস্থা দৃষ্টে তাই মনে হচ্ছে। রাজা, রাজ্যপাট, কূটনীতি ও নির্দয় রক্তপাতের অবিশ্রান্ত ওয়েব মহাকাব্য রচনাই হয়তো গুরমিত, করণ, মিহির দেশাইয়ের লক্ষ্য।
 
কালিন ভাইয়া আর গুড্ডু পন্ডীত এই দুই চরিত্র আমার ভীষণ প্রিয়
 

Users who are viewing this thread

Back
Top