আমাদের শৈশবের নায়ক কারা? এক কথায় বললে, বাবা-মা। কারণ আমাদের জীবনের শুরুতে সব ইচ্ছাপূরণের দায় যে তাঁরাই মাথা পেতে নেন। কোনো নির্দিষ্ট চকলেট-চিপস থেকে শুরু করে চোখের জল মুছে দেওয়া—বাবা-মায়েরা কী করে না বলুন? কিন্তু সেই বটগাছ একদিন বুড়ো হয়, তার পাতা ঝরে। এভাবেই বটবৃক্ষ একদিন জীর্ণ হয়, সে আর সবুজ থাকে না। সেই তামাটে দিনগুলোয় এককালের শৈশবের নায়কেরা কী খোঁজেন? নতুন পাতা, নাকি মাথার ওপর ছায়া?
ফরাসি চিত্র পরিচালক ফ্লোহিয়াঁ জেল্যা ঠিক তেমনই এক গল্প নিয়ে বানিয়েছেন ‘দ্য ফাদার’। একসময়ের নবীন ও পরিণত গাছের সবুজ পাতা হারিয়ে ফেলার গল্প এ ছবি। বাবা ও মেয়ে এর মূল দুটি চরিত্র। বাবা হয়েছেন অ্যান্থনি হপকিন্স, মেয়ে অলিভিয়া কোলম্যান। এ দুটি নাম শোনার পর ছবির দুনিয়া সম্পর্কে নিছক জানাশোনা থাকা ব্যক্তিও শিহরিত হতে পারেন। দুজনেই যে রুপালি পর্দাকে নিজের ঘরের উঠোন বানাতে জানেন। সেই উঠোনে চলে আপনমনে সৃষ্টি, অভিনয় তখন উপমামাত্র।
এবারের অস্কারে লড়ছে ‘দ্য ফাদার’ ছবিটি, সংগৃহীত
পরিচালক নিজের লেখা গল্প ধরেই তৈরি করেছেন চিত্রনাট্য। ছবিটি দেখতে গিয়ে মঞ্চনাটকের আবহও টের পাওয়া যায়। শুরুতে বেশ ধীর-স্থির, ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ ফ্র্যাঞ্চাইজির এ যুগে বড্ড বেমানান। কিন্তু যতই সময় যায়, ধীরে ধীরেই দর্শকেরা ঢুকে যেতে থাকেন বয়সের হিসাবে প্রবীণ এক ব্যক্তির অগোছালো মনোজগতে, যেখানে ক্রমেই বদলে যাচ্ছে চারপাশের চরিত্র। বদলাচ্ছে তাদের চেহারা, কখনো কখনো সম্পর্কও। একসময় পর্দার অ্যান্থনির মতোই প্রশ্ন জাগে, ‘আমি আসলে কে?’
প্রশ্নের প্রতিক্রিয়ায় মাথার ভেতর থেকে কোনো উত্তর আসে না। স্মৃতি যে প্রতারক রূপ নিয়েছে! বাবার চরিত্রে থাকা অ্যান্থনি শুধু বুঝতে পারেন, তাঁর একটা মেয়ে আছে। আর আছে কিছু পাতা, যেগুলো ক্রমেই ফ্যাকাশে হয়ে ঝরে পড়ছে মাটিতে। বৃষ্টির জলেও সেগুলো আর সজীব হচ্ছে না।
৯৭ মিনিটের ছবি ‘দ্য ফাদার’। বাবা চরিত্রে অ্যান্থনি হপকিন্স আবারও বুঝিয়ে দিয়েছেন, বয়স ৮০ বছরের বেশি হলেও, তাঁর অভিনয় ‘বুড়ো’ হয়নি। মেয়ের ভূমিকায় থাকা অলিভিয়া কোলম্যান এটা-সেটা লাগলে হাতের কাছে এনে দিয়েছেন, আর মূল রন্ধনশিল্পী হপকিন্সই।
স্যার অ্যান্থনি তাই এগিয়ে গেছেন সাহসী ব্রিটিশ নাইটদের মতোই। তাঁর চরিত্রের কারণে এই ভুরু কোঁচকাচ্ছে, তো পরমুহূর্তেই চোখ ছলছল। ছবির শেষটায় মায়া ও দুঃখবোধের জড়াজড়ি। বেশ কটি পুরস্কারের মঞ্চ এরই মধ্যে জয় করেছে ‘দ্য ফাদার’। এই তো, কিছুদিন আগেই বাফটায় প্রশংসার তুবড়ি ছুটল। কোনো পুরস্কার যাচ্ছে মেয়ের ঘরে, কোনোটা বাবার। চিত্রনাট্যের রূপকার ও পরিচালকও খালি হাতে বসে নেই।
বাবা চরিত্রে অ্যান্থনি হপকিন্স আবারও বুঝিয়ে দিয়েছেন, বয়স ৮০ বছরের বেশি হলেও, তাঁর অভিনয় ‘বুড়ো’ হয়নি। মেয়ের ভূমিকায় থাকা অলিভিয়া কোলম্যান এটা-সেটা লাগলে হাতের কাছে এনে দিয়েছেন, আর মূল রন্ধনশিল্পী হপকিন্সই।
এবার পালা অস্কারের। ছয়টি বিভাগে মনোনয়ন জুটে গেছে। অ্যান্থনি হপকিন্স ও অলিভিয়া কোলম্যান দুজনেই আছেন তালিকায়। অ্যান্থনির শোকেসে দ্বিতীয় সোনালি ট্রফি যোগ হলে কিন্তু বেশ হয়। পুরস্কার যে তুখোড় নায়কের হাতেই মানায়!
তবে তা জানতে আর কিছুদিন অপেক্ষা করতেই হচ্ছে। সেই ফাঁকে কি ছবিটি দেখে নেবেন? ভেবে দেখতে পারেন।