What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

অনেক ধৈর্যের দরকার পড়তে গেলে কেউ যদি পড়ে শোনাতো তো ভালো তাই এত বড় গল্প থ্যাঙ্ক ইউ
 
অনেক ধৈর্যের দরকার পড়তে গেলে কেউ যদি পড়ে শোনাতো তো ভালো তাই এত বড় গল্প থ্যাঙ্ক ইউ
হুম, তবে বিশ্বস্ত পার্টনার না থাকলে একা একা পড়াই ভালো।
 
বনেদি বাড়ির কেচ্ছা ও একটি অদ্ভুত খুন
-কথকদা

[HR=3][/HR]



মুখবন্ধ

সব মানুষের মধ্যেই নাকি একজন ডক্টর জেকিল আর একজন মিস্টার হাইড থাকে। কখনো ডক্টর জেকিল আধিপত্য বিস্তার করে তার উপরে, কখনো মিস্টার হাইড। কথাটা যে চরম সত্যি তা নিজেকে দিয়েই টের পাচ্ছি আমি। আমার ভিতরের চিরচেনা ভাল মানুষ ডক্টর জেকিলকে গত কয়েকদিন ধরে কুপোকাত করে রেখেছে কুৎসিত চিন্তার কুলাঙ্গার মিস্টার হাইড। তার কুমতলবে এবং কুমন্ত্রণায় গত কয়েকদিন ধরে কয়েক কোটি কুচিন্তা মাথায় নিয়ে কালরাত্রি কাটাচ্ছি আমি। সেইসব কুচিন্তার কুফলই হচ্ছে এই কু-গল্পটা।

বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ – এই গল্পের সকল চরিত্রই অবাস্তব। জীবিত বা মৃত কোন মালের লগে ইহার কোন মিল নাই। কোন মিল পাওয়া গেলে তা একান্তই কাকতালীয় বা লেখকের বদমাইশি বলে ধরে নিতে হবে।





পূর্ব কথা

রায়পুর, আগে বর্ধিষ্ণু গ্রাম ছিল। এখন এটি একটি ছোট শহর। অনেককাল আগে এই অঞ্চলের জমিদার যোগেন্দ্রনারায়ণ রায় ব্রিটিশদের তাঁবেদারি করে রায় বাহাদুর খেতাব পায়। আগে এই অঞ্চলের নাম বাসন্তি ছিল। এই জমিদার পরিবারের প্রতাপে জায়গাটার নাম বাসন্তির থেকে রায়পুর হয়ে যায়।

জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির সময় শেষ জমিদার ছিলেন দর্পনারায়ন রায়। তার দুই পুত্র দেবনারায়ন ও রুপনারায়ন। রুপনারায়নের যখন চোদ্দ বছর বয়স তখন বিষধর সাপের কামড়ে তার মৃত্যু ঘটে। দেবনারায়ন ছিল অত্যন্ত বিচক্ষন ও ঝানু ব্যবসায়ী প্রকৃতির। জমিদারি চলে যাবার পরে দেবনারায়ন প্রথমে ছোট নাগপুরের একটি কলিয়ারি লিজে নেন। এরপরে নানাধরণের ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন।

পিতা দর্পনারায়নের মৃত্যুর পরে দেবনারায়ন তাদের আদি জমিদার বাড়িটি সরকারকে স্কুল করার জন্য দান করে দেন। আর শহর থেকে একটু দূরে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে হাই ওয়ের ধারে তাদের প্রায় দু বিঘা জমি ছিল। থাকার জন্য এই জমির উত্তর দিকে একটা সুন্দর দ্বিতল বাড়ি তৈরি করেন। বাড়িটি উত্তর দিশায় ছিল বলে বাড়িটির নাম উত্তর মহল রাখেন। সদর দরজা দিয়ে ঢুকেই বিশাল ড্রয়িং কাম ডাইনিং রুম যেটি বাড়ির শেষ প্রান্ত পর্যন্ত চলে গেছে। ড্রয়িং রুমটির বাঁ পাশে শুরুতে এটাচ বাথরুম সহ একটা বড় বেডরুম, এর ঠিক পাশেই একটা কমন বাথরুম। তার পাশে রান্নাঘর। আর এর পাশেই একদম শেষে একটা ছোট রুম। এটি স্টোররুম বা চাকর-বাকরদের থাকার জন্য যে কোন পারপাসে ব্যবহার করা যেতে পারে। ড্রয়িং রুমটির একদম শেষদিকে একটা সিঁড়ি দোতলায় উঠে গেছে। ড্রয়িং রুমটির ঠিক ডানপাশে এটাচ বাথরুম সহ দুটো বড় বেডরুম। সিঁড়ি দিয়ে উঠেই একটা লম্বা প্যেসেজ দোতলার এমুড়ো থেকে ও মুড়ো চলে গেছে। প্যাসেজটির বাম পাশে এটাচ বাথরুম সহ দুটো বড় বেডরুম আবার ডান পাশেও একি রকম এটাচ বাথরুম সহ দুটো বড় বেডরুম।

পুরো জমিটাই দেবনারায়ন প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দিয়েছিলেন। ঊর্মিলার বাগানের সখ ছিল তাই দেবনারায়ন খুজে পেতে একজন ভাল মালি নিয়োগ করেন। তার নাম রমাকান্ত। ঊর্মিলা ও রমাকান্ত দুজনের যৌথ প্রচেষ্টায় খালি জমিতে অতি মনোরম এক ফুলের বাগান তৈরি হয়। দেবনারায়ন রমাকান্তের কাজে খুশি হয়ে পাকাপাকিভাবে তাকে মালির কাজে নিযুক্ত করেন। আর তার থাকার জন্য বাগানের পাশে একটা ঘর তৈরি করে দেন। রমাকান্ত এখানে একাই থাকত, তার পরিবার দেশের বাড়ি ভাগলপুরে থাকত। রমাকান্ত কিছু দিনের মধ্যেই তার সুমিষ্ট ব্যবহার ও কাজের মাধ্যমে সকলের মন জয় করে নেয়।

এই দেবনারায়ণ ও ঊর্মিলার দুই সন্তান, বড়টির নাম বিরেন আর ছোটটির নাম সুরেন। বিরেন সুরেনের থেকে মাত্র দু বছরের বড় ছিল। দেবনারায়ন কিন্তু তার ছোট ছেলেকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসত। এর পেছনে এই পরিবারের একটা ইতিহাস আছে।

অনেককাল আগে এই জমিদার পরিবারের এক কনিষ্ঠ সন্তান এক তান্ত্রিককে সিঁড়ির থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। তান্ত্রিক গুরুতর আহত হয় এবং মৃত্যুর পূর্বে অভিশাপ দিয়ে যায় যে পরবর্তী প্রজন্ম থেকে এই পরিবারের সমস্ত কনিষ্ঠ সন্তানের অপঘাতে মৃত্যু ঘটবে। আর সাতদিনের মধ্যেই তান্ত্রিকের অভিশাপের ফল ফলবে। আশ্চর্য ভাবে সাতদিনের মাথায় সেই কনিষ্ঠ সন্তানটির বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু ঘটে। সেই থেকে আশ্চর্যজনক ভাবে পুরুষানুক্রমিকভাবে এই পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তানদের অপঘাতে মৃত্যুর ধারা চলে আসছে।

এই কারনে দেবনারায়ন ও তার স্ত্রী ঊর্মিলা আতঙ্কিত ছিল পরিবারের অভিশাপ নিয়ে। এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবার জন্য দেবনারায়ন ও ঊর্মিলা দুজনেই মন্দিরে মন্দিরে গিয়ে মানত করত। বাড়িতে পুজা আচ্চা, যাগ যজ্ঞ, সাধু সন্তদের আনাগোনা লেগেই থাকত। কিন্তু সুরেনের যখন বারো বছর বয়স তখন দুদিনের জ্বরে ভুগে এক অজানা রোগে ঊর্মিলা দেবি আচমকা মারা যান। দেবনারায়ন বাবু মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়লেও ছেলেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে নিজেকে সামলে নেন।




বিরেন ও সুরেন এই দুই ভাইয়ের চরিত্র একদম বিপরীতধর্মী ছিল। সুরেন ছিল সরল, সাদাসিদে আর বিরেন ছিল ততটাই চতুর। বিরেন নিজের আখেরটা খুব ভাল বুঝত। এই কারনে সুরেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেবনারায়নের মনে একটা চিন্তা ছিল।

দুই ছেলে বড় হতে থাকে। বিরেনের যখন কুড়ি বছর বয়স তখন দেবনারায়ন তাকে কিছু ব্যবসার দায়িত্ব দিয়ে রানিক্ষেত পাঠিয়ে দেয়।

এই রানিক্ষেত দেবনারায়নের বাল্যবন্ধু নিখিল থাকত। নিখিল ও তার স্ত্রী মিনাক্ষির সাথে দেবনারায়নের খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। তাদের একমাত্র কন্যা ঋতম্ভরাকে দেবনারায়ন খুব স্নেহ করতেন। ঋতম্ভরার যখন দশ বছর বয়স তখন হঠাৎ তার মা মিনাক্ষি মারা যান। এর ঠিক তিন বছর পরে নিখিল আবার বিয়ে করেন। বন্ধুর এই দ্বিতীয় বিয়ের কথা কানে যেতে দেবনারায়ন অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হন, রানিক্ষেতে আসেন বন্ধুর সাথে দেখা করতে। নিখিলের দ্বিতীয় পক্ষ হেমাঙ্গিনী দেবিকে দেখে অবাক হয়ে যান। একটা হাঁটুর বয়সী মেয়েকে বিয়ে করেছে দেখে বন্ধুর সাথে দেবনারায়নের ভাল মতন মনোমালিন্য হয়। প্রথম পক্ষের মেয়ে আছে তার উপর বয়সের এত তফাৎ তাও হেমাঙ্গিনী দেবির মত সুন্দরি কি কারনে নিখিলকে বিয়ে করতে রাজি হল সেটা দেবনারায়নের মাথায় ঢোকে না। এর পর থেকেই নিখিলের সাথে দেবনারায়নের সম্পর্ক কেটে যায়।

বিয়ের দু বছর পরে নিখিল ও হেমাঙ্গিনীর একটি পুত্র সন্তান হয়, নাম সব্যসাচী। সত ভাই বোন হলেও দুজনের মধ্যে ভাব ভালবাসা ছিল অসম্ভব। বয়সে অনেকটা বড় হবার দরুন ঋতম্ভরার মধ্যে দিদির থেকে মায়ের রোলটাই বেশি প্রকাশ পেত। ভাইকে সব সময় আগলে আগলে রাখত। আর সব্যসাচীও ছিল অসম্ভব দিদি ন্যাওটা।

এতদিন পরে বড় ছেলে রানিক্ষেত যাচ্ছে দেখে দেবনারায়ন ছেলেকে নিখিলের সাথে যোগাযোগ করতে বলে। বাবার কথামত বিরেন একদিন সময় করে বাবার বাল্যবন্ধুর বাড়িতে হাজির হয়।
এখানে এসে বিরেন জানতে পারে বাবার বাল্যবন্ধু নিখিল বছর দুয়েক আগে মারা গেছেন। বিরেন নিখিলের বাল্যবন্ধুর ছেলে শুনে হেমাঙ্গিনী ও ঋতম্ভরা দুজনেই খুব খাতির যত্ন করে। ক্ষনিকের আলাপে ঋতম্ভরাকে বিরেনের মনে ধরে যায়। ঋতম্ভরা তখন আঠারো আর বিরেন কুড়ি, প্রেম হতে সময় নেয় না। দুবছর পরে দুজনের ঘটা করে বিয়ে হয়ে যায়।




আবার সুরেনের যখন কুড়ি বছর বয়স হয় তখন দেবনারায়নের ধারনা হয় ছেলের উপর থেকে অভিশাপ কেটে গেছে। ছেলের বিয়ের জন্য পাত্রি খুজতে থাকেন। সুরেন খুব ভালমানুষ টাইপের ছিল। সেই কারনে দেবনারায়নের ধারনা ছিল বিরেন তার ছোট ভাইকে সম্পত্তির ভাগ থেকে ঠকাতে পারে। মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলেন সুরেনের জন্য চালাক চতুর একটা মেয়ে নিয়ে আসবেন। দেবনারায়ন সেই সময় কলিয়ারির কাজ দেখতে কিছুদিনের জন্য ছোট নাগপুর অঞ্চলে যান। সেখান থেকে ফিরে এসে ঘোষণা করেন সুরেনের জন্য তিনি পাত্রি ঠিক করে ফেলেছেন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি সুরেনের বিয়ে দেবেন।

এরপরেই দেবনারায়ন তার খালি জমির একদম দক্ষিণ দিকে এই বাড়িটির অনুরুপ আর একটি বাড়ি তৈরি করতে শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যেই বাড়িটি তৈরি হয়ে যায়। এই বাড়িটির নাম দেন দক্ষিণ মহল।

কিছুদিন পরে দেবনারায়ন তার পছন্দ করা পাত্রি বিনোদিনীর সাথে সুরেনের বিয়ে দিয়ে দেন। ঋতম্ভরাও সুন্দরি ছিল কিন্তু বিনোদিনীর সৌন্দর্যের মধ্যে আলাদা একটা চটক ছিল। চোখ মুখ বলে দেয় মহিলা ভীষণ বুদ্ধিমতি। কিন্তু বিনোদিনীর পরিবার সম্পর্কে কিছু জানতে পারা যায় না। অদ্ভুতভাবে এই বিষয়ে দেবনারায়নও মুখে কুলুপ এঁটে থাকে। দেবনারায়ন অসম্ভব রাশভারি মানুষ ছিল, তাই কেউ সাহস করে তাকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে পারে না।

এরপরে দেবনারায়ন উত্তর মহলটা বড় ছেলেকে দিয়ে আর নিজে সুরেন ও বিনোদিনীকে নিয়ে দক্ষিণ মহলে চলে আসেন। সময় বয়ে চলে। বিরেন ও ঋতম্ভরার পরপর তিনটি পুত্র সন্তান হয়, মনোজ, সরোজ ও ধিরজ। বিনোদিনীরও একটি ছেলে হয়, দেবেন্দ্র। ধিরজ আর দেবেন্দ্রর মধ্যে মাত্র এক মাসের বয়সের তফাতে ছিল।
দেবেন্দ্রর বয়স যখন দুই তখন হঠাৎ সুরেন এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যায়। ছোট ছেলের মৃত্যুতে দেবনারায়ন শোকে পাথর হয়ে যান। অভিশাপ যে পিছু ছাড়েনি সেটা দেখে দেবনারায়ন মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। কিন্তু বিনোদিনী অদ্ভুতভাবে শোক সামলে শক্ত হাতে সংসার ও ব্যবসার হাল ধরেন। বিনোদিনীর এই কর্তব্য নিষ্ঠা দেখে লোকে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়। ধীরে ধীরে দেবনারায়নও বিনোদিনীর উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। বাড়ির থেকে আর তিনি বেরতেন না, ব্যবসার দায়িত্ব বিনোদিনীর হাতে ছেড়ে দেন। কিছুদিনের মধ্যে বিনোদিনী তুখোড় ব্যবসায়ী বুদ্ধির পরিচয় দেন আবার দেবনারায়নের হাতে যেসব ব্যবসা ছিল তার প্রধান হয়ে যান। যথারীতি একজন মহিলার এই উত্থানে অনেকের চোখ টাটায়। শ্বশুর বৌমাকে নিয়ে নানা ধরণের রসাল গল্প লোকের মুখে কানা ঘুসোয় ঘুরতে থাকে। দেবনারায়ন এই বিষয়ে কিছু জানতে না পারলেও বিনোদিনীর কানে সবই যায়। কিন্তু অদ্ভুতভাবে বিনোদিনী এসব গল্পে পাত্তা দেয় না।



ছোট ছেলের মৃত্যুর ঠিক দু বছর পরে দেবনারায়ন আচমকা আত্মহত্যা করে বসেন। হত্যা না আত্মহত্যা এই নিয়ে সেই সময় বিশাল সোরগোল পড়ে যায়। বিশেষ করে দেবনারায়নের বড় ছেলে বিরেন দাবি করতে থাকে এটা হত্যা বলে। যথারীতি তার অভিযোগের আঙ্গুলটা বিনোদিনীর দিকে থাকে।

এই সময় জানতে পারা যায় রায় পরিবারের ব্যবসার সত্তর ভাগ বিনোদিনী তার শ্বশুর দেবনারায়নকে দিয়ে নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছেন। রাগে, অন্ধে বিরেন দিশেহারা হয়ে দেবনারায়নের মৃত্যুটাকে হত্যা বলে প্রমান করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। কিন্তু কোন এক অজানা কারনে তদন্ত এগোয় না। ধীরে ধীরে সময় বয়ে যায়, কেসটা ধামাচাপা পড়ে যায়। সেই থেকে বিরেন ও তার পরিবারের সাথে বিনোদিনীর মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়।

দেবনারায়নের মৃত্যুর দু বছর পরে আবার একটা বিপর্যয় রায় পরিবারের উপর নেমে আসে। বিরেনের স্ত্রী ঋতম্ভরাও আত্মহত্যা করে বসেন। বিরেন সেই সময় ব্যবসার কাজে বাইরে ছিল। তদন্তের প্রথমে পুলিশ এটাকে হত্যা বলে। পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী বালিস চাপা দিয়ে দমবন্ধ করে তারপরে শাড়ির ফাঁস লাগিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে ঋতম্ভরাকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুদিন পর থেকে পুলিশ এটাকে আত্মহত্যা বলতে শুরু করে। সেই নিয়ে বিরেন প্রথমে লম্ফঝম্প করে কিন্তু কিছুদিন পরে হঠাৎ করে চুপ মেরে যায়। কি কারনে বিরেন চুপ মেরে যায় সেই বিষয়ে কিছু জানা যায় না। কিন্তু এর ফলে যেটা হয় বিরেনের সাথে তার শ্বশুরবাড়ির লোকেদের সম্পর্ক একেবারে নষ্ট হয়ে যায়।

সময় বয়ে যায়, বিরেনের তিন ছেলে মনোজ, সরোজ ও ধিরজ আর বিনোদিনীর ছেলে দেবেন্দ্র বড় হয়ে ওঠে।

এখান থেকে আসল গল্প শুরু।

পাঠকদের জানাই, এই গল্পের সময়কাল সত্তর দশকের। সেই সময় জন সাধারনের হাতে মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট কিছুই ছিল না। ল্যান্ড ফোন দেখা যেত তাও সেটা মোটামুটি ধনিদের বাড়িতে শোভা পেত। তাই এই গল্পে কোন মোবাইল, কম্পিউটারের কোন ব্যবহার পাওয়া যাবে না।

আরও একটা বিষয়ে পাঠকদের অবগত করাই, গল্পটিতে দুটি ভাগ আছে, প্রথমটিতে কেচ্ছা আর দ্বিতীয়টিতে খুন ও খুনের তদন্ত। কেচ্ছা সংক্রান্ত ঘটনাগুলি অতীতে ঘটে গেছে আর এগুলি পরিবারের সদস্যদের মুখ থেকে শোনা যাবে। খুন ও খুনের তদন্ত বর্তমান ঘটনা, সেটি সাধারন গল্পের আকারে আসবে। আর একই সাথে দুটি চলবে।
Golpo ta onk valo lagse, onek joss
 
নুপুরের জবানবন্দি চলছে...



খুন ও খুনের তদন্ত


কয়েকজন কনস্টেবলকে নিয়ে থানার ইন্সপেক্টর রতিকান্ত ঘরে প্রবেশ করে। ইন্সপেক্টরকে দেখে সকলেই দাড়িয়ে যায়। রতিকান্ত সবার উপরে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। ডক্টর ঘোষাল এগিয়ে এসে রতিকান্তের সাথে করমর্দন করে বলে, ‘ইন্সপেক্টর সাহেব, আমাকে আবার হসপিটালে যেতে হবে। তাই আমাকে একটু তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিলে ভাল হয়।’

‘হ্যা, হ্যা, নিশ্চয় ডক্টর ঘোষাল। আপনি বলুন, কে আপনাকে খবর দিল আর আপনি এসে কি দেখলেন?’

‘হু, সাতটার দিকে বিরেন বাবু আমার বাড়িতে আসেন, আমি তখন খবরের কাগজ পড়ছিলাম। বিরেন বাবুর মুখে ব্যাপারটা শোনার পরে আর দেরি না করে যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে চলে আসি। ঘরে ঢুকে দেখি প্রচুর ব্লিদিং হয়েছে, মেঝেতে চাপ চাপ রক্ত আর উনি প্রায় রক্তে মাখামাখি হয়ে শুয়ে আছেন। দেখেই মনে হয়েছে প্রান নেই। যাইহোক প্রথমেই নাকের কাছে হাত নিয়ে যাই, দেখি নিঃশ্বাস পরছে না। তারপরে স্টেথোস্কোপ লাগিয়ে দেখি হার্টবিট নেই, পালস পাওয়া যাচ্ছে না। আর কয়েকটা পরিক্ষা করে নিশ্চিত হই, শি ইজ নো মোর।’

‘কটা নাগাদ মারা গেছেন?’

‘আমি সোয়া সাতটা নাগাদ এখানে আসি। তার পাঁচ থেকে দশ মিনিট আগেই মারা গেছেন। মানে সাতটা পাঁচ থেক দশের মধ্যে উনি মারা গেছেন। যে পরিমান রক্ত বেরিয়েছে তাতে উনি আহত হয়েছেন অনেক আগে।’

‘ডক্টর ঘোষাল আপনার কি মনে হয়, কিভাবে মারা গেছেন?’

‘ওনার বুকে গভীর ক্ষত আছে, আমার মনে কোন ধারাল অস্ত্র দিয়ে স্ট্যাব করা হয়েছে....’

‘মানে খুন, ছুরি মারা হয়েছে বলছেন!’

‘হ্যা, আমার দেখে তাই মনে হয়েছে। পোস্টমর্টেম করলেই ব্যাপারটা পরিস্কার হয়ে যাবে। হ্যা, আর একটা কথা, ওনার বাঁ হাতের কব্জিতেও ইনজুরি আছে, মনে হয় শিরা কাটা হয়েছে।’

ডক্টর ঘোষালের কথা শুনে সকলেই হকচকিয়ে যায়, একে অপরের মুখ চাওয়া চায়ি করে।

এরপরে রতিকান্ত ডক্টর ঘোষালের সাথে হাত মিলিয়ে বলে, ‘ঠিক আছে, ডক্টর ঘোষাল, আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। আপনি এখন আসতে পারেন। দরকার পরলে পরে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করে নেব।’
ডক্টর ঘোষাল একবার বিরেন বাবুর দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে বেরিয়ে যান। রতিকান্ত একবার সকলকে দেখে নিয়ে বলে, ‘আপনারা সকলে এখানে অপেক্ষা করুন। আমি একবার জায়গাটা দেখে আসি।’





রতিকান্ত ইশারায় রামদিনকে ডেকে নেয়। সাথে দুজন কনস্টেবলকে ডেকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে রামদিনকে পুরো ঘটনাটা বলতে বলে। রামদিন প্রথম থেকে এক এক করে পুরো ঘটনাটা বলতে থাকে। বিনোদিনী দেবির ঘরের সামনে এসে রতিকান্ত কোনায় একটা চায়ের কাপ প্লেট দেখতে পায়। চোখে পড়ে দরজার পাল্লা দুটোর বেশ কয়েক জায়গা চটা উঠে গেছে। কাঠের গুড়ির আঘাতেই এটা হয়েছে সেটা বোঝা যায়।

দরজার হুকটা খুলে রতিকান্ত ঘরে প্রবেশ করে। সামনেই কাঠের গুড়িটা পড়ে থাকতে দেখতে পায়। অদুরে ছিটকিনিটাও দেখতে পায়। রতিকান্ত দরজার পাল্লা দুটো নেড়েচেড়ে দেখে, বেশ মজবুত পাল্লা। ছিটকিনিটা খুলে না গেলে এই পাল্লা ভাঙ্গা সহজ ছিল না। রতিকান্ত এরপরে দরজার যেখানে ছিটকিনিটা লাগান ছিল সেই জায়গাটা লক্ষ্য করে। বুঝতে পারে কাঠের গুড়ির আঘাতে ছিটকিনির স্ক্রুগুলো আলগা হয়ে খুলে যেতেই দরজাটা খুলে আসে। মেঝেয় স্ক্রুগুলো পড়ে থাকতে দেখতে পায়।

এরপরে রতিকান্ত ঘরের ভেতরটা ভাল করে লক্ষ্য করে। দরজাটা ঠিক ঘরের মাঝ বরাবর অবস্থিত। বিশাল বেডরুম, রুম না বলে ছোটখাট হল বলা চলে। ঘরটার সাইজ পনের ফুট বাই পঁচিশ ফুট হবে। রতিকান্ত লক্ষ্য করে ঘরটিতে লাগোয়া কোন ব্যালকনি নেই। ঘরটিতে ঢোকা ও বেরোনোর একটিই মাত্র পথ সেটি এই দরজা দিয়ে।

দরজার ঠিক উল্টোদিকে দুটো বড়সড় কাচের জানালা। জানালার উপরে পেলমেটে দামি পর্দা লাগান আছে, কিন্তু পর্দাগুলো দু পাশে সরান তাই কাচের জানলা দিয়ে ঘরটা সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। জানালাগুলোর সামনে একটা সিঙ্গল আর দুটো ডবল সাইজের সোফা আর এদের মাঝে একটা সেন্টার টেবিল।

ঘরের বাম দিকের দেওয়াল ঘেঁষে কিং সাইজের খাট, খাটের মাথার বাম দিকে একটা ছোট এক পাল্লার দেরাজ, এর উপরে অর্ধেক জল ভর্তি কাচের গ্লাস প্লেট দিয়ে ঢাকা দেওয়া রয়েছে। পাশে একটা রিডিং ল্যাম্প, কয়েকটা ওষুধের স্ট্রিপ, আর কয়েকটা ম্যাগাজিন চোখে পড়ে। খাটের এই পাশেই মেঝেতে বিনোদিনী দেবির ডেড বডিটা চোখে পড়ে। বেডের অপর পাশে এটাচ বাথরুমের দরজা।

রতিকান্ত ঘরের ডান দিকে চোখ ফেরায়, দেখতে পায় দেয়াল ঘেঁষে বিশাল সাইজের ছ’পাল্লার কাঠের আলমারি। পাল্লাগুলো সব খোলা, বুঝতে পারে এটা রামদিনের কীর্তি। আলমারির ঠিক পাশেই বড় সাইজের ড্রেসিং টেবিল, তার উপরে চিরুনি, প্রসাধন সামগ্রি চোখে পড়ে।

ইশারায় সবাইকে দরজার কাছে দাড়িয়ে থাকতে বলে রতিকান্ত দু হাতে গ্লাভস পরে নেয়। প্রথমেই রতিকান্ত বিনোদিনী দেবির ডেড বডিটার সামনে গিয়ে দাড়ায়। ঝুঁকে পড়ে ভাল করে বডিটা দেখে। গলায় সোনার চেন, কানে দুটো দুল আর দু হাতে বেশ মোটা দুটো সোনার বালা অক্ষত অবস্থায় দেখতে পায়।

ঠোঁট দুটো একটু ফাঁক হয়ে রয়েছে, পাশ দিয়ে ফ্যানার মত কিছুটা গ্যাজলা বেরিয়ে আছে। গায়ে রাতের পোশাক নাইটি,হাঁটুর কাছ অবধি নাইটিটা উঠে গেছে। হাত দুটো বুকের কাছে জড় করা, ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কব্জিটা ধরে আছে। ডক্টর ঘোষালের কথা যাচাই করার জন্য রতিকান্ত বাম হাতটা তুলে ধরে, দেখে কব্জির কাছটা গভীর ক্ষত, ধারাল কিছু দিয়ে রক্তের শিরা কাটা হয়েছে। বুকের ক্ষতটা দেখে রতিকান্ত বুঝতে পারে বুকে ছুরি মারা হয়েছে। লাশের শরীর থেকে রক্ত গড়িয়ে খাটের নিচে চলে গেছে। নিচু হয়ে খাটের নিচটা ভাল করে দেখে নেয়।

এরপরে উঠে দাড়িয়ে বিছানাটার দিকে তাকায়, বিছানার চাদরে বেশ কয়েক জায়গায় চাপ চাপ রক্ত, চাদরটাও কুঁচকে রয়েছে। যেদিকে লাশটা আছে সেদিকের চাদরটা অনেকটা নিচের দিকে নেমে গেছে। বোঝা যায় বিনোদিনী দেবি বিছানার থেকে ঘষটে এদিকে পড়েছেন।
এরপরে রতিকান্ত খাটের পাশের ছোট দেরাজটার কাছে গিয়ে দাড়ায়। দেরাজের উপরে প্রেসারের, এন্টাসিড আর ভিটামিনের কয়েকটা ওষুধের স্ট্রিপ দেখতে পায়। জলের গ্লাসটা তুলে ধরে দেখে অর্ধেক ভর্তি। ম্যাগাজিনগুলো উল্টে পাল্টে দেখে সবই সিনেমার। এরপরে দেরাজের নিচের পাল্লাটা খুলে দেখে ভেতরে দুটো বড় দামি হুইস্কির বোতল। একটার সিল ভাঙ্গা হয়নি, অপরটি প্রায় খালি। দেরাজের ভেতরে আর কিছু নেই।





রতিকান্ত ডেড বডিটার সামনে স্থির হয়ে কিছু সময় দাড়িয়ে থাকে। পুলিশি অভিজ্ঞতায় বুঝতে পারে এটা খুনের কেস। কিন্তু ভেতর থেকে দরজা বন্ধ ছিল, তাহলে খুনি ঘর থেকে বেরোল কিভাবে। আর মার্ডার অয়েপনটা বা গেল কোথায়। মনে মনে ব্যাপারটা ছকে নিয়ে রতিকান্ত তল্লাসি শুরু করে।

রতিকান্ত এরপরে বাথরুমের দরজার কাছে হাজির হয়। দরজার ছিটকিনিটা খুলে বাথরুমে প্রবেশ করে। বাথরুমটা বেশ বড়সড়। বাথরুমটা দেখলেই বোঝা যায় বিনোদিনী দেবি বেশ সৌখিন ছিলেন। বেসিন, শাওয়ার, বাথটব, কমড সব দামি কোম্পানির লাগান। বাথরুমে একটিই জানালা, সেটাও ভেতর থেকে বন্ধ।

বাথরুম থেকে বেরিয়ে রতিকান্ত জানালাগুলোর কাছে গিয়ে দাড়ায়। জানালার ফ্রেমে বেশ মজবুত গ্রিল বসান। গ্রিলগুলো একটু ঝাকিয়ে দেখে নেয়। জানলার পাল্লাগুলো সব বাইরের দিকে খোলে। কিন্তু সবকটাই ভেতর থেকে বন্ধ। জানালা দিয়ে পেছনের বাগানটা চোখে পড়ে। গ্রিলগুলো ভাল করে পরিক্ষা করে কিন্তু কোথাও রক্তের ছিটে দেখতে পায় না। জানালাগুলোর ছিটকিনি খুলে আবার বন্ধ করে দেয়।

ওখান থেকে রতিকান্ত আলমারির কাছে চলে আসে। ছ’পাল্লার আলমারিটা হাট করে খোলা আছে। আলমারির বাম দিকের পরশনে তিনটে তাক, উপরের তাকে ডাই করা শিতের পোশাক, মাঝের তাকে লেপ, কম্বল। আর নিচের তাকে নানা ধরনের লেডিস জুতো। প্রত্যেকটা তাকের জিনিশ পত্র সরিয়ে রতিকান্ত ভাল করে তাকগুলো পরিক্ষা করে নেয়। আলমারির মাঝের পরশনে দুটি তাক। উপরের তাকে সার দিয়ে হ্যাঙ্গারে শাড়ি ঝোলান রয়েছে। নিচের তাকে লন্ড্রির থেকে কেচে আসা শাড়ি থাক দিয়ে রাখা আছে। শাড়িগুলো সব একটা একটা করে সরিয়ে তাকটা ভাল করে পরিক্ষা করে। এখানে লকারের চাবিটা দেখতে পায়। নিচের তাকটাও ভাল করে চেক করে নেয়। আলমারির শেষের পরশনে তিনটে তাক, উপরের তাকে মেয়েদের যাবতীয় প্রসাধন সামগ্রী। মাঝের তাকে লকার, চাবি দেওয়া আছে। নিচের তাকে মেয়েদের অন্তর্বাস, ব্লাউজ, ব্রা এইসব। রতিকান্ত প্রথমে উপরের আর নিচের তাক দুটো ভাল করে পরীক্ষা করে নেয়। এরপরে চাবি দিয়ে মাঝের লকারটি খুলে ফেলে। অনেকগুলো গয়নার বাক্স দেখতে পায়। প্রত্যেকটা বাক্স খুলে দেখে সোনার গয়না মজুত আছে। শুধু একটা বাক্স খালি দেখে। একটা কাপড়ের ব্যাগ দেখতে পায়, খুলে দেখে টাকা ভর্তি। গুনে দেখে পঁচাত্তর হাজার টাকা আছে। টাকা, গয়না সব অক্ষত আছে দেখে রতিকান্ত পরিস্কার বুঝতে পারে খুনের সাথে চুরির সম্পর্ক নেই।

এরপরে রতিকান্ত আলমারির পাশের ড্রেসিং টেবিলটা পরিক্ষা করে। শুধু মেয়েলি প্রসাধন সামগ্রিতে ঠাসা, সন্দেহ জনক কিছুই চোখে পড়ে না।

রতিকান্তের ভুরু কুঁচকে যায়, পুরো ঘরটা আরও একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। এরপরে রতিকান্ত রামদিন আর কনস্টেবল দুজনকে ঘর আর বাথরুমের দেওয়াল ও মেঝে লাঠি দিয়ে ঠুকে ঠুকে দেখতে বলে। আর রতিকান্ত খাটের তোষক, গদি তুলে পরিক্ষা করে। সন্দেহজনক কোন কিছুই পায় না। ইতিমধ্যে কনস্টেবলরা জানিয়ে দেয় ঘর আর বাথরুমের দেওয়াল ও মেঝেতে কোন গণ্ডগোল নেই।

বুকের ক্ষতটা দেখে রতিকান্তের পুলিশি অভিজ্ঞতায় বলে ছোরা জাতিয় কোন ধারাল অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু পুরো ঘরটা তন্নতন্ন করে সার্চ করে ধারাল অস্ত্র তো দুরের কথা একটা সামান্য ব্লেড পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। পুরো ঘটনাটায় রতিকান্ত বেশ অবাক হয়ে যায়। মাথায় দুটো প্রশ্ন ঘুরতে থাকে। খুনি ঘর থেকে বেরোল কিভাবে? আর অস্ত্রটা গেল কোথায়?
ইতিমধ্যে ফটোগ্রাফার, ফরেন্সিক আর ফিঙ্গার প্রিন্টের ডিপার্টমেন্টের লোকজন এসে হাজির হয়। রতিকান্ত তাদের সাথে কিছু কথা বলে নেয়। এরপরে রতিকান্ত ঘরে কনস্টেবলদের একজনকে রেখে দিয়ে বাকিদের নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।





নিচে নেমে কারুর সঙ্গে কোন কথা না বলে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসে। বাড়িটার পেছন দিকে যাবার রাস্তা ধরে। একটু যেতেই একটা কালো রঙের এম্বাসেডর গাড়ি দেখতে পায়। এরপরে বিনোদিনী দেবির ঘরের জানলার নিচে হাজির হয়। সেখানে একটা ফুলের বাগান দেখতে পায়। বাগানের পাশেই একটা ভাঙ্গা চরা ঘর দেখতে পায়। কিন্তু সেটায় যে কেউ থাকেনা সেটা দেখেই বোঝা যায়। তাও রতিকান্ত ঘরটার ভেতরে ঢুকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। ফিরে আসে বিনোদিনী দেবির ঘরের নিচে। তাকিয়ে সামনের বাগানের হাল দেখে বোঝা যায় খুব একটা পরিচর্যা হয় না। গতকাল রাতের বৃষ্টিতে মাটি ভিজে রয়েছে। রতিকান্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বাগানটা লক্ষ্য করে। না কোন পায়ের ছাপ না কোন অস্ত্র কোন কিছুই চোখে পড়ে না। রতিকান্তের ভুরু কুঁচকে যায়, নানা রকম চিন্তা মাথায় ঘুরতে থাকে। রতিকান্ত আর দেরি না করে বাড়ির ভেতরে চলে আসে।

ড্রয়িং রুমে এসে দেখে সবাই উৎকণ্ঠা নিয়ে বসে আছে। বিরেন বাবু উঠে এগিয়ে এসে বলে, ‘ইন্সপেক্টর সাহেব কিছু পেলেন?’

বিরেন বাবুর কথায় রতিকান্তের চিন্তায় বাধা পড়ে, একটু রুক্ষ হয়ে বলেন, ‘দেখুন বিরেন বাবু, তদন্ত সবে শুরু হয়েছে। এখনি কিছু বলা সম্ভব নয়। ঠিক সময়ে সব জানতে পারবেন।’

রতিকান্তের জবাবে বিরেন বাবু একটু মিইয়ে যান। এরপরে রতিকান্ত সবার সাথে প্রাথমিক আলাপটা সেরে নেয়।

কনস্টেবলটিকে খাতায় নোট করার ইশারা করে জেরা শুরু করেন। রতিকান্ত একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে সবার মুখের উপর একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। সকলের মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। রতিকান্ত ইশারায় বৃহন্নলাকে কাছে ডেকে নেয়। বৃহন্নলা এগিয়ে এসে ভয়ে জড়সড় হয়ে দাড়িয়ে থাকে। রতিকান্ত বেশ রুক্ষ স্বরেই জিজ্ঞেস করে, ‘নাম কি?’

‘বৃহন্নলা।’

‘হুম, কতদিন হল এই বাড়িতে আছ?’

‘আজ্ঞে, প্রায় মাস ছয়েক হবে।’

‘আগে কোথায় কাজ করতে?’

‘আজ্ঞে, মধুপুরে ত্রিবেদি নার্সিংহোমে আয়ার কাজ করতাম।’

‘এখানে এলে কি করে?’

‘আজ্ঞে, মাস ছয়েক আগে মেমসাব ব্যবসার কাজে মধুপুরে গিয়েছিলেন। সেখানে মেমসাব খুব অসুস্থ হয়ে ত্রিবেদি নার্সিংহোমে ভর্তি হন। আমি ওনার আয়া হিসাবে দায়িত্ব পাই। আমার কাজে খুশি হয়ে উনি আমাকে এখানে কাজের কথা বলেন। আমি ওই নার্সিং হোমে সব মিলিয়ে মাসে তিন হাজার টাকা মত পেতাম। মেমসাব আমাকে মাসে পাঁচ হাজার টাকা দেবেন বলেন আর থাকা খাওয়া ফ্রি। আমার ওখানে হাজার দুয়েক টাকা থাকা খাওয়ার পেছনে খরচ হয়ে যেত। কাজেই মেমেসাবের কথাটা ফেলতে পারিনি। তাই ওনার সাথেই আমি এখানে চলে আসি।’

‘উনি নার্সিং হোমে ভর্তি হয়েছিলেন কেন?’

‘স্যার, আমি ঠিক বলতে পারব না, তবে শুনেছিলাম ওনার শরীরের জল কমে গিয়েছিল, সেই কারনেই ভর্তি হয়েছিলেন। তবে উনি তিনদিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যান।’

‘গতকাল রাতে তুমি ওনাকে শেষ কখন দেখেছিলে?’

‘আজ্ঞে, রাত সাড়ে নটার সময় মেমসাব ডিনার করেন। ডিনার শেষ করে উনি ঘরে চলে যান....’

‘ঠিক আছে, কাল সারাদিন উনি কি কি করেছেন, ওনার সাথে কেউ দেখা করতে এসেছিল কিনা সব বল। কিছু গোপন করার চেষ্টা করবে না, তাহলে বিপদে পড়বে।’

‘স্যার, অন্যান্য দিনের মত সকাল ছটা নাগাদ চা দিই। মেমেসাব নটা নাগাদ রেডি হয়ে নিচে নামেন। ব্রেকফাস্ট খান। এই খাবার টেবিলে উনি অফিসের কাগজপত্র দেখছিলেন। পৌনে দশটা নাগাদ ম্যানেজারবাবু আসেন। উনি ম্যানেজারবাবুকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ি চালিয়ে...’

রতিকান্ত বৃহন্নলার কথার মাঝে জিজ্ঞাসা করে, ‘ড্রাইভার নেই?’

মৃন্ময়ী উত্তরটা দেয়, ‘না, মা কোন ড্রাইভার রাখেননি। উনি নিজেই ড্রাইভ করতেন।’

রতিকান্ত বৃহন্নলাকে ইশারা করেন বাকিটা বলার জন্য।

‘হ্যা, স্যার, মেমসাব ম্যানেজারবাবুকে সঙ্গে নিয়ে দশটা নাগাদ বেরিয়ে যান। বিকেল তিনটে নাগাদ মেমেসাব বাড়িতে ফিরে আসেন। মেমেসাব আসার পরে পরেই বেশ জোরে বৃষ্টি নামে। মেমসাব আমাকে কফি বানিয়ে দিতে বলেন। কফি খেতে খেতে মেমসাব আমাকে ওনার চুল বেঁধে দিতে বলেন। বাইরে সেই সময় তুমুল জোরে বৃষ্টি পড়ছিল। পাঁচটা নাগাদ বৃষ্টিটা ধরে আসে। মেমসাব ফোন করে ম্যানেজার বাবুকে আসতে বারন করেন আর আমাকে একটা প্যাকেট দিয়ে বলেন যে এতে এক লাখ টাকা আছে তুই এটা নিয়ে আমার অফিসে ম্যানেজারবাবুর হাতে দিয়ে আয়। আমি রেডি হয়ে নিয়ে ছটা নাগাদ বেরিয়ে পড়ি। বাস স্ট্যান্ড থেকে সাড়ে ছটার বাস ধরে অফিসে পৌছাই সাড়ে সাতটা নাগাদ। ম্যানেজারবাবুর হাতে টাকাটা দিয়ে আটটার বাস ধরে ফিরে আসি। যখন বাড়ি ফিরি তখন প্রায় সোয়া নটা বাজে। মেমসাব তখন ড্রয়িং রুমে বসে কাগজপত্র দেখছিলেন আর ইয়ে খাচ্ছিলেন।

রতিকান্ত বেশ কড়া সুরে জানতে চান, ‘ইয়ে মানে কি?’

একটু ইতস্তত করে বৃহন্নলা বলে, ‘আজ্ঞে, ইয়ে মানে হুইস্কি।’

ধমক লাগায় রতিকান্ত, ‘তো সেটা বলতে কি হয়েছে। উনি কি প্রায়ই ড্রিঙ্ক করতেন?’

‘না, স্যার, মাঝে মাঝে।’

‘হুম, তারপর?’

‘মেমসাহেব আমাকে রাতের খাবার দিতে বলেন। আমি তাড়াতাড়ি কয়েকটা রুটি বানিয়ে সব্জিটা গরম করে মেমসাবকে খেতে দিই। আমি ইত্যবসরে মেমসাহেবের বিছানাটা ঝেড়ে পরিস্কার করে দিয়ে খাবার জলের গ্লাসটা ভর্তি করে রেখে দিয়ে আসি। মেমসাব খাওয়া দাওয়া সেরে কাগজপত্র নিয়ে উপরে চলে যান। একটু পরে মেমসাবের ঘরে দরজা বন্ধ করার আওয়াজ পাই। এরপরে আমি রাতের খাবার সেরে বাসনপত্র মেজে রান্নাঘর পরিস্কার করে সদর দরজা লাগিয়ে শুতে চলে যাই। আমার অনিদ্রা রোগ আছে তাই আমি প্রতিদিন দুটো করে ঘুমের ওষুধ খাই। যাইহোক মেমসাহেব প্রতিদিন ভোর ছটার সময় চা খান বলে আমি সাড়ে পাঁচটা পৌনে ছটা নাগাদ উঠে পড়ি। বৌদি বাড়ি ছিলেন না, বৌদির ফেরার কথা ছিল সাড়ে সাতটার দিকে কিন্তু বৌদি পাঁচটা নাগাদ ফিরে আসেন। বৌদি নিজের ঘরে চলে যান। ছটা বাজতে মেমসাহেবের চা নিয়ে আমি দোতলায় যাই। এরপরে....’

রতিকান্ত হাত তুলে বৃহন্নলাকে থামিয়ে দেয়। রতিকান্ত গভীর চিন্তায় ডুবে যায়।



************************************************

..........................................তদন্ত চলছে
Onk valo lagse, amon golpo porte onk valo lage
 

Users who are viewing this thread

Back
Top