একটা বছরের আক্ষেপ। বেঁচে থাকলে তাঁর বয়স হতো ৭৫ বছর। কিংবদন্তিতুল্য সংগীতশিল্পী এস পি বালাসুব্রামানিয়াম গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। রেখে গেছেন জনপ্রিয় সব গান। সংগীতপ্রেমীদের কানে আজও বেজে চলে।
বালাসুব্রামানিয়াম নিজেই ছিলেন সংগীতের একটা জগৎ। তামিল, তেলেগু, কন্নড়, মালয়ালম, হিন্দিসহ ১৬টি ভাষায় গেয়েছেন ৪০ হাজারের বেশি গান। তাঁর গান শুনে শিল্পী হয়েছেন অনেকে। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম ওঠে তাঁর। বলিউডের সালমান খান ঠোঁট মিলিয়েছেন তাঁর বহু গানে। সহশিল্পী হিসেবে ছিলেন লতা মঙ্গেশকরের মতো শিল্পীরা।
আজ তাঁর ৭৫তম জন্মদিন। চলুন ঘুরে আসি তাঁর গাওয়া বলিউডের ১০ জনপ্রিয় গান থেকে—
এস পি বালাসুব্রামানিয়াম, সংগৃহীত
হাম বানে তুম বানে, এক দুজে কে লিয়ে
হিন্দি সিনেমা ‘এক দুজে কে লিয়ে’–এর গান ‘হাম বানে তুম বানে, এক দুজে কে লিয়ে’। কমল হাসান ও রাতি অগ্নিহোত্রী অভিনয় করেছেন এই ছবিতে। তাঁরা ঠোঁট মিলিয়েছেন এস পি বালাসুব্রামানিয়াম ও লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে। সে সময় গানটি ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পায়। দক্ষিণি ছবির ইন্ডাস্ট্রি ছাড়িয়ে বালাসুব্রামানিয়াম হয়ে ওঠেন হিন্দি ছবির ভক্তদেরও পছন্দের গায়ক।
‘লাভ’ সিনেমার দৃশ্য, সংগৃহীত
সাথিয়া তুনে কেয়া কিয়া
গান দিয়ে যদি কোনো সিনেমাকে চিনতে হয়, তবে ‘সাথিয়া তুনে কেয়া কিয়া’কে রাখতে হবে তালিকায়। একটা গান কী করে একটা ছবিকে জনপ্রিয় করে তোলে, তার বড় উদাহরণ ছিল গানটি। এস পি বালাসুব্রামানিয়াম ও কে এস চিত্রার কণ্ঠের এই গান তরুণদের কাছে অসম্ভব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তাঁদের কণ্ঠে ঠোঁট মিলিয়েছেন সালমান খান ও রেবতী। সিনেমার নাম ‘লাভ’।
রোজা জানেমান
‘রোজা’ সিনেমার গান মানেই ইতিহাস। মণিরত্নম তাঁর দীর্ঘদিনের সঙ্গী ইল্লায়ারাজার বাইরে নতুন কারও সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। এ আর রহমান তখন তরুণ। বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল বানান। মণিরত্নমের পছন্দ হয় রহমানকে। তরুণ রহমান এবার মণির মতো এত বড় মাপের পরিচালকের কাছে নিজের অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া করলেন না। শুরু হলো ‘রোজা’র কাজ। এরপরের ইতিহাস সবার জানা। অভিষেকেই বাজিমাত রহমানের। ছবির পুরো অ্যালবাম জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ওঠে। এই অ্যালবামের জনপ্রিয় একটি গান ‘রোজা জানেমান’। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন এস পি বালাসুব্রামানিয়াম ও সুজাতা মোহন।
রোজা সিনেমার দৃশ্য, সংগৃহীত
আতে যাতে হাসতে গাতে
এস পি বালাসুব্রামানিয়ামের বেশ কিছু গানে ঠোঁট মিলিয়েছেন সালমান খান। বিশেষ করে ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’ ছবির সিংহভাগ গানেই বালাসুব্রামানিয়াম কণ্ঠ দিয়েছেন। আর তাঁর সঙ্গী ছিলেন লতা মঙ্গেশকর। রোমান্টিক গান হিসেবে ‘আতে যাতে হাসতে গাতে’ সে সময় বেশ সাড়া জাগায়। শুধু তা–ই নয়, একসময় মনো হতো সালমান খানের ঠোঁট মেলানো মানেই বালাসুব্রামানিয়ামের কণ্ঠ।
পেহলা পেহলা পেয়ার
সালমান খান ও মাধুরী দীক্ষিতের রসায়নের সঙ্গে এস পি বালাসুব্রামানিয়ামের রোমান্টিক কণ্ঠ হৃদয়ে ঝড় তুলেছিল তরুণদের। নব্বইয়ের দশকের রোমান্টিক কমেডি ছবির মূল উপাদান গানের পেছনের রাজা ছিলেন এস পি বালাসুব্রামানিয়াম কিংবা লতা মঙ্গেশকররা। ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’ ছবির গানগুলো এর বড় উদাহরণ।
হাম আপকে হ্যায় কৌন ছবির দৃশ্য, সংগৃহীত
দিদি তেরা দেবার দিওয়ানা
এ কথা অনেকে বলেন, সালমনের সিনেমাগুলোকে বালাসুব্রামানিয়ামের ব্যতিক্রম বক্স অফিসে বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’ ছবির ‘দিদি তেরা দেবর দিওয়ানা’ গানটি এর বড় উদহারণ।
দিল দিওয়ানা বিন সাজনা
১৯৮৯ সালে ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’ ছবির মাধ্যমে নায়ক হিসেবে বলিউডে আত্মপ্রকাশ সালমানের। আগেই বলা হয়েছে, ওই ছবিতে সালমনের ঠোঁটে সব কটি গানই বালাসুব্রামানিয়ামের গাওয়া, যার মধ্যে ‘দিল দিওয়ানা’ গানটির কথা আলাদা করে বলতেই হয়। ছবিতে লতা মঙ্গেশকর ও বালাসুব্রামানিয়াম আলাদা করে গানটিতে একক কণ্ঠ দিয়েছেন। আসলে ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’র প্রতিটি গান চরিত্রে আলাদা। ‘মেরে রং মে’র শিহরণ, লতার সঙ্গে ‘দিল দিওয়ানা’য় স্যাড রোমান্টিক পরিবেশনা বা ‘আ জা শাম হোনে আয়ি’র মধ্যে ‘ধ্যাত্তেরিকি’র নাটকীয় উপস্থাপনা আলাদা করা গেছে শিল্পীকে।
পাত্থর কে ফুল’ ছবির দৃশ্য, সংগৃহীত
কাভি তু চালিয়া লাগতা হ্যায়
১৯৯১ সালেই ‘পাত্থর কে ফুল’ ছবিতে সালমানের হয়ে সাতটি গানে গলা দেন বালাসুব্রামানিয়াম। এর মধ্যে ‘কাভি তু ছালিয়া লাগতা হ্যায়’ এবং ‘তুমসে জো দেখতে হি পেয়ার হুয়া’ গান দুটি সুপারহিট হয়।
দেখা হে পেহলি বার
একসময় বলিউডে অভিনেতার পাশাপাশি গায়কদেরও সমান গুরুত্ব ছিল। কোন নায়কের গলায় কার গান বসালে ভালো লাগবে, তা বাছাই করার জন্য আলাদা টিম পর্যন্ত নিয়োগ করতেন প্রযোজক-পরিচালকেরা। সে সময়ে সালমন খান আর এস পি বালাসুব্রামানিয়াম যেন সমার্থক ছিলেন। বলা হতো, সালমানের রোমান্টিক ইমেজের সব ম্যাজিক শিল্পীর কণ্ঠজাদুর জোরে। ১৯৯১ সালে ‘সাজন’ ছবিতে সালমানের গলায় বালাসুব্রামানিয়ামের গাওয়া ‘বহুত পেয়ার করতে হ্যায়’, ‘তুমসে মিলনে কী তামান্না হ্যায়’, ‘পেহলি বার মিলে হ্যায়’ গানগুলো সুপারহিট হয়। এসব ছাড়িয়ে ‘দেখা হে পেহলিবার’ গানটি সিগনেচার সং হয়ে ওঠে ওই সময়ের।
সাজন ছবির দৃশ্য, সংগৃহীত
পেহলা পেহলা পেয়ার হ্যায়
১৯৯৪ সালে ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’ ছবিটি মুক্তি পায়। তাতেও সালমনের গলা হিসেবে বালাসুব্রামানিয়ামকে বেছে নেন পরিচালক সুরাজ বরজাতিয়া। ছবিতে ‘মৌসম কা জাদু’, ‘দিদি তেরা দেবর দিওয়ানা’, ‘জুতে দো প্যায়সে লো’, ‘পেহলা পেহলা পেয়ার হ্যায়’, ‘ধিক তানা’, ‘মুঝসে জুদা হো কর’, ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’, ‘ওয়াহ ওয়াহ রাম জি’র মতো সুপারহিট গান গেয়ে বলিউডে পাকাপাকি জায়গা করে নেন বালাসুব্রামানিয়াম।