বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কয়েক বন্ধু ভেবে দেখল চারপাশে অনেকেই আছে বই পড়তে চায় কিন্তু অজুহাত দেখায় যে বই কেনার টাকা নেই। অথচ চাইলেই বই ধার নিয়ে পড়া যায়। সমস্যা হচ্ছে- কে দিবে ধার? কার কাছে চাইবো? কার কাছে কী বই আছে তা যদি জানা থাকতো তাহলে কতই না সুবিধা হত। এই সমস্যার সমাধান করতেই একটি মোবাইল এপ্লিকেশন তৈরি করে ফেললো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শাহরিয়ার বিন আমিন, হাসিবুল হক মুন, শাহীন আলম শুভ, আজাদ রহমান মুন্না, আব্দুল্লাহিল বাকি আরিফ আর আসিফ জামান।
এপ্লিকেশনটির প্রথমে নাম দেওয়া হয়েছিল ‘কমিউনিটি লাইব্রেরি’ – নিজেরা নিজেদের বই দিয়ে একদল মানুষ একটা লাইব্রেরি ব্যবস্থাপনা করবে। ভার্চুয়াল লাইব্রেরি, যার জন্য আলাদা লাইব্রেরি রুম, বুক শেলফ- এসবের দরকার হবে না। পরবর্তীতে নামের শুরুতে বুকস (bookS) যুক্ত করা হয়, বুক-শেয়ারিং কথাটাতে জোর দেওয়ার জন্য। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ থেকে গুগল প্লে স্টোরে সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে এটি। ফোন থেকে প্লেস্টোরে গিয়ে ‘Community Library’ লিখলেই প্রথমে চলে আসবে এটি। অথবা এই লিংকে ক্লিক করলেও অ্যাপটি পাবেন।
এপ্লিকেশন বিষয়ক যেকোন তথ্য আপডেট জানানোর জন্য এবং ব্যবহারকারীদের সাথে সহজে যোগাযোগ রাখার জন্য খোলা হয়েছে একটি ফেসবুক পেজও।
শাহরিয়ার বিন আমিনদের নিজেদের মুখেই শোনা যাক তাদের এপ্লিকেশনটি কী এবং কেন মানুষ ব্যবহার করবে।
“আমাদের অনেকেরই বই পড়ার অভ্যাস আছে কিন্তু হাতের কাছে হয়ত সবসময় বই নেই। ঠিক আরেক প্রান্তে কারও কাছে অনেক বই আছে – তার পড়া শেষ, অন্য কাউকে পড়তে দিলেও তার ক্ষতি নেই। ‘কমিউনিটি লাইব্রেরি’ হচ্ছে এই দুইজনের মধ্যে বই আদান প্রদান করার একটা সুযোগ। যার মূল কথা হচ্ছে আপনি বা আপনারা কয়েকজন একটা ভার্চুয়াল লাইব্রেরি খুললেন, সেখানে আপনি যে বইটা কাউকে পড়তে দিতে চান, ছবি তুলে, একটা বর্ণনা দিয়ে আপলোড করে রাখবেন। আপনাদের লাইব্রেরিরই অন্যকেউ আগ্রহী হলে আপনার কাছে বইটা রিকোয়েস্ট করবে। তারপর – অনলাইনে তো সম্ভব না, দেখা করে বইটা দেওয়া নেওয়া করবেন।”
“তো, এই কাজে মোবাইল এপ্লিকেশনটা কেন দরকার? কোন বই কাকে দিলেন, কবে দিলেন, কবে ফেরত পাওয়ার কথা ছিল সেগুলা মেইন্টেন করার জন্য। বই ধার নেওয়ার ক্ষেত্রেও একই। হতে পারে আপনি এমন একটি বই খুঁজছেন যেটি আপনার কাছের কোন বন্ধুর কাছে আছে অথচ আপনি জানেন না। কমিউনিটি লাইব্রেরি আপনাদের মধ্যে এই Information Gap টা পূরণ করবে। স্বীকার করবেন নিশ্চয়ই যে এই সুবিধাটুকু আপনার দরকার। তার উপর, আপনার প্রোফাইলের রেটিং থাকবে। আপনি ভালো পাঠক না হলে, যত্ন নিয়ে বই না পড়লে কেউ আপনাকে ধার দিবে না, নেগেটিভ রেটিং দিবে। আর ‘আমি যে-কাউকে বই পড়তে দিতে চাই না’ – তার জন্য তো পুরো নিয়ন্ত্রণ আপনার কাছেই। আপনার কাছে যে বইটা আছে সেটা আপনি শুধুমাত্র যে লাইব্রেরির গ্রুপে আপলোড দিয়ে জানাবেন সেখানকার সদস্যরা দেখতে পারবে। বাইরের কেউ জানবেও না, রিকোয়েস্টও করবে না।”
“আমাদের শখের বসে ডেভেলাপ করা একটি মোবাইল এপ্লিকেশন, তবে আমরা চাই মানুষজন এটা ব্যবহার করুক। তাদের কাজে লাগুক। আমরা আমাদের সময় আর পরিশ্রম দিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু এর পিছনে বাড়তি খরচ করার মত অবস্থা নেই। আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে মানুষকে জানানো। তবে ইউজার বাড়ার সাথে সাথে এপ্লিকেশনের স্টোরেজ খরচ আর মেইন্টেনেন্স খরচ বাড়বে। সেই মিনিমাম খরচটুকু কীভাবে যোগাড় করব সেটা এখনো জানিনা। আশা করি কোন না কোন উপায় বের হবে। মানুষের আগ্রহ থাকলে এটা থেমে থাকবে না।“
এপ্লিকেশনটি প্লে স্টোরে রিলিজ করার আগে, কয়েক দফা টেস্ট করা হয়েছে বলে জানায় ডেভেলপার টিম। তবুও ছোট ছোট আরো ফিচার যুক্ত করাসহ অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। যেমন লোকেশন এর উপর নির্ভর করে যদি কেউ বই এর গ্রুপ খুজতে চায় তাকে সেই সুযোগ করে দেওয়া। তার বাইরে, কম্পিউটার বিজ্ঞানের নতুন নতুন টেকনোলজি শিখে সেগুলোরও যথাযথ প্রয়োগ করতে চায় তারা। গ্রুপে কেউ যেন ফেইক বইয়ের ছবি আপলোড করতে না পারে, বা ভুল ছবির সাথে ভুল তথ্য যুক্ত করতে না পারে, এমনকি নিষিদ্ধ বই/অযাচিত বইয়ের আদান-প্রদান যেন না হয় সেজন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ নিয়ে ভাবছে এই তরুণ দল।