অফ টপিক অভিজ্ঞতাঃ
আমার কন্যার জন্মের আগে শেষবার বেগমের সাথে দেখা হয়েছে কন্যার জন্মের মাস খানেক আগে। সেবার আমার শ্বশুর মশায়ের সাথে একখান মজার চ্যালেঞ্জ হল। তার আগে বলে নেই এই সময় পেটের ভেতর আগত শিশু খুবই নড়াচড়া করে। মজার ব্যাপার হল, আমি যখনই আমার বেগমের পেটের উপর হাত দিয়ে ডাকতাম "বাবা" বলে। আমার কন্যা লাফালাফি শুরু করে দিত পেটের উপর যায়গায় যায়গায় উঁচু-নিচু হয়ে যেত। পেট কেমন যেন কিম্ভূত কিমাকার হয়ে গেলেও যে আনন্দটা লাগত তা যে এমনটি করেনি সে বুঝবে না। বাচ্চা নড়াচড়া শুরুর পর থেকেই আমি বাড়ী গেলেই এমন করে আসতাম, ওর ছোট ভাই বোন দেখত। আমরা অনেক মজা করতাম। তো সেবার আমার শ্বশুর চ্যালেঞ্জ করল সে পেটে হাত দিয়ে ডাকলেও এমন করবে, যেটা বেগমের মা, বোন বা ভাই যেইই হাত দিক আমার কন্যা রেসপন্স করত না। শুধু আমি হাত দিয়ে ডাকলেই এমনটি করত। তো আমি হাত দিয়ে স্বশুর সহ সবাই দেখলাম, যদিও আমার বেগম বেশ লজ্জা পাচ্ছিল বাবার সামনে পেট বের করে থাকতে। তো এবার আমার শ্বশুরের পালা। উনি খুবই স্টাইল নিয়ে পেটে হাত দিয়ে আপুনি, ডারলিং, গিন্নি আরো হরেক রকম ডাক ডাকলেন কিন্তু কোন সাড়া পাওয়া গেল না। উনি বললেন বোধহয় ঘুমিয়ে গেছে তাই সাড়া দিচ্ছে না। এবার আমি আবার পেটে হাত দিয়ে ডাকতেই লাফালাফি শুরু। সবাই তো আনন্দে কেঁদেই দিল। আর আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম মহান আল্লাহর ভালোবাসার বন্ধন তৈরীর কারিশমা দেখে। আরন মামা মনেহয় এই সুখের কথাই বলেছেন।
আমার কন্যা যখন হয়, দায়িত্বের ভারে সেই সময়টিতে আমি আমার বেগমের পাশে থাকতে পারিনি। অথচ ইচ্ছে ছিল ওটিতে আমিই থাকব। ডাক্তারের সাথে কথাও তেমনটিই ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমি থাকতে পারিনি। কন্যার জন্মের ঘন্টা তিনেক পর তাকে প্রথম দেখি। প্রথম কোলে নিই। এ এক অন্য সুখ। আরন মামা মনেহয় এই সুখের কথাই বলেছেন।
সাধারনত শিশু জন্ম নিলে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরাই তার সাথে থাকেন। তার কারন, শিশুর কোমলমতি শরীর, আসুস্থ মাতা আর শিশুর ঘন ঘন প্রস্রাব পরিবর্তন। কিন্তু আমার বেগমের পাশে অন্য কেও থাকতে পারেনি। হাসপাতালের দুইটি বেড এক করে নিয়ে আমার কন্যার পাশে আমাকেই থাকতে হয়েছে। কারন আমি রুম থেকে বের হলেই কান্না কাটি। সারা রাত ঘুম দিয়ে ভোরের দিকে আমার কাছেও কান্নাকাটি করে। বুঝলাম এবার খুধায় কিন্তু সিজারিয়ান মায়েদের কাছে সন্তানের খাবার একটু দেরি করে আসে। এখন কি করি? সারা দুনিয়ার সবই আছে কিন্তু আমার কন্যার খাবার নেই। সহ্য করতে না পেরে ভোর রাতে ডাক্তারের প্রেস্ক্রাইব করা একটা কৃত্তিম দুধ এক ড্রপার তৈরী করে চার ফোটা খাওয়ালাম। কন্যার মুখ টেপা হাসি দেখে আমার পেছনের সকল দুঃখ ভুলে গেলাম। আরন মামা মনেহয় এই সুখের কথাই বলেছেন।
যা হোক আরো বেশি বলে বিরক্তির কারন হতে চাচ্ছি না।