সকাল সকাল একটা বিষয় অবতারনা করি;
আমার নাম কেন "ছোটভাই"?
অনেকেই এই প্রশ্ন করেন, আমি মুচকি হেসে এড়িয়ে যাই। এখন হয়তো বলার একটা সময় এসেছে।
একটা সময় বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা চালু ছিল। যেখানকার সাধারন মানুষ বিচক্ষন, শিক্ষিত, ভদ্র মানুষদের তাদের গ্রাম সরকার নির্বাচন করত। সমাজের মাথা বলাহত তাদেরকে। সকল কাজে তাদের পরামর্শ গ্রহন করা হত। আমার দাদার বাবা ছিলেন সে সময়ের গ্রাম সরকার প্রধান। কিন্তু তার প্রয়ানের পর আমার মরহুম দাদা সেই দায়িত্বে আনাগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু মানুষ তাকে ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে অপারগতা প্রকাশ করে। আর তাই তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে যান। যখন তিনি ফিরে আসেন সাথে আমাদের অঞ্চলের সবচেয়ে কালো মহিলাকে বিয়ে করে নিয়ে আসেন। কিন্তু সেই কালো মহিলাই সকলের প্রিয় পাত্রীতে পরিনত হন। তখন দাদা গ্রামের মানুষদের ডেকে নতুন করে গ্রাম সরকার গঠন করে দেন যেখানে তিনি প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত থাকবেন না। ভালো কথা দাদার নাম বলা হয়নি, তার নাম ছিল "ঈমান আলী প্রামানিক"। প্রামানিক কথাটা হচ্ছে, পরামানিক (মোড়ল, শাসন কর্তা)। দাদার ছয়জন সন্তান ছিলেন বলে জেনেছি, কারন বাবা, দাদাকে দেখলেও মনে করার বয়সে তাকে পাননি, তার আগেই দাদা ইহলোক ছেড়ে গেছেন। বাবা তার দুইজন বোনকে শুধু দেখেছিলেন বাঁকিরা ১৪ বছর পেরুনোর আগেই ইন্তেকাল করেছিলেন। যে পরিবার একসময় এলাকা শাসন করেছিল সেই পরিবারকেই বাবার ছোট বয়সে নির্যাতন সইতে হয়েছিল বলে জেনেছি। কিন্তু বাবা কোনদিন কারো বিরুদ্ধাচরণ করেননি। বাবার পুর্ন বয়সে বাবা যখন সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে মেট্রিক পাশ করে বসেন তখন সাধারন মানুষের অগাধ আস্থা আর্জন করেন। শিক্ষকতা শুরু করেন আর সাধারন মানুষের সাথে মিশে যান, কিন্তু তাকে সবাই পরামানিক হিসেবেই মান্য করেন। তিনি বাংলাদেশ টেলিফোন শিল্প সংস্থাতে (টেলিফোন এন্ড টেলিগ্রাফ) বিভাগীয় প্রধান থাকা অবস্থায় অবসরে যান। তার সুদীর্ঘ কর্ম জীবনে তিনি বাংলার পাশাপাশি, ইংরেজি, আরবী, উর্ধু, ও ফারসি তে দক্ষতা দেখিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় বৃটিশ, পাকিস্থানী এবং বাংলাদেশি মানুষদের মাঝে দোভাষী হিসেবে কাজ করেছিলেন। তার কর্মজীবনে তিনি ৬২ টি জেলাতেই অন্তত এক দিনের জন্য হলেও চাকুরি করেছেন কিন্তু কোন অন্যায়ের সাথে আপোস করেন নি, এমনকি তার উপার্জনে কোন অংশ অসৎ উপায়ে অর্জন করা নয় হিসেবে চাকুরী থেকে অবসরের সময় পবিত্র আল কোরান উপহার পান। তার কর্মজীবনে তিনি যেখানেই গেছেন সেখানকার মসজিদের অঘোষিত ঈমামের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাড়িতে থাকা কালীন তাকে সাধারন মানুষ তার দাদার মতই সম্মান করে গেছেন, তিনি মারা যাবার আগ পর্যন্ত পরামানিকই ছিলেন।
আমি আমার বাবার ছোট সন্তান, স্বভাব বাবার মত হওয়ার কারনে ছোট বেলা থেকেই সবাই আমাকে ছোট পরামানিক (প্রামানিক) ডাকত। অনেকছোট বেলাতেও কেও আমার কোন কথার বর্খেলাপ করত না। যার ফলশ্রুতিতে ছোট পরামানিক থেকে সবাই আমাকে ছোটভাই বলে ডাকতে শুরু করে। একসময় ছোটভাই নামটাই আমার একটা ব্র্যান্ড হয়ে যায়। আমি বেশ পছন্দ করে ফেলি, এমনকি আমার আপন ভাইয়েরাও আমাকে ছোট ভাই বলে ডাকে। আমি সবার ছোট ছিলাম বলে ছোটভাই হয়েছিলাম। আমার ভাইদের সবারই দুইটি করে সন্তান কিন্তু আমি ছোটই বড় আর হতে পারলাম না। আমারও আজ দুটি সন্তান, এখানকার অনেকেই আমার প্রথম সন্তান গুডগুডি (২৬/১০/২০১১) কে দেখেছেন, গত ২৬/১০/২০২১ তারিখে আমার দ্বিতীয় সন্তান পৃথিবীর আলোতে এসেছে আর তার আসার পর থেকেই আমার ছোট পরামানিক খেতাব টি চলে গেছে। যদি আমাদের পরিবারে আর কোন সন্তাননা আসে তবে সেইই ছোট পরামানিক।
আর আমি সেইই ছোটভাই।
মনোযোগ দিয়ে প্যাঁচাল পড়ার জন্য ধন্যবাদ।