তখন পাবনা পলিটেকনিকে পড়ি ২০০০-২০০১ সালের দিকের ঘটনা।
যেহেতু হলে না থেকে মেসে থাকি, সেহেতু শুধু পলিটেকনিকের ছাত্ররাই নয় আরো দুতিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররাও আমাদের সাথে থাকত। আর মৌসুমি কিছু ছাত্র আসত যাদের বয়স ওই সময় আমাদের থেকে অন্তত দশ-পনের বছরের বেশি। কারো কারো মাথায় আবুল হায়াতের অর্ধেক স্টেডিয়াম। আসলে উনারা ছাত্র নয়, উনারাও শিক্ষক, এসেছে বিএড করতে। কিন্তু আমাদের মত বিটকেলদের সাথে থাকতে থাকতে শিক্ষকতা ভুলে যেতেন, মেতে উঠতেন নতুন ছাত্রত্য পাওয়ার আনন্দে। সন্দ্যার পর বিদ্যুৎ চলে গেলে আসর যখন জমজমাট তখন তাদের হেড়ে গলার দুঃখের গানও শোনা যেত মজা করে। ভুমিকা তো দিলাম, এখন এই পোস্টের বিপরিতে কেন এসব লিখছি, সেটাও তো বলতে হবে নাকি?
আমাদের যাদের বাড়ী জেলার ভেতরে তারা মোটামুটি সপ্তাহের শেষ দিন ক্লাস শেষ করতে শুধু বাঁকি থাকত বাড়ী যেতে দেরি হত না। যারা এমন করে চলে যেত তাদের আমরা আধা মেয়ে মানুষ বলতাম। কিন্তু এই মৌসুমি ছাত্ররা আসার পর আর সেই আধা মেয়ে মানুষ বলা সম্ভব ছিল না, কারন এরা প্রকৃত পুরুষ ছিল। বৃহস্পতিবার আসলেই এরা চলে যেত আপন বৌএর সাথে ইটিস পিটিস করতে। শনিবার সকালে ইনাদের ঘুমহীন ক্লান্ত চেহারায় তৃপ্তির পরশ দেখে হিংসেই হত।
তো এমনই এক বৃহস্পতিবার ... নামের এক শিক্ষক ভাই দুপুরের খাওয়া নাকে মুখে ঢুকিয়ে, আতর সুরমা লাগিয়ে মিটিমিটি হাসতে হাসতে মেস ত্যাগ করল শনিবার দেখা হবে বলে। আমরাও পেছন থেকে শীষ বাজালাম উনার ঘুমহীন আগামী রাতের শুভ কামনায়।
সন্ধার পর আমাদের অল্প কয়েকজনের আসর। ভাত-তরকারীর পাতিল, পুরনো বদনা আর পয়সার ব্যাঙ্ক নিয়ে চলছে আসর জমানো গান।
যাইছি... মাক্ষি গিরা গরম ত্যাল মে
হো... এইছা রেহনা পাড়েগা সেন্ট্রাল জেল মে।
হো... এইছা রেহনা পাড়েগা সেন্ট্রাল জেল মে।।
এরশাদ শিকদারের ওই সময়ের জনপ্রিয় গান...
আমিতো মরে যাব চলে যাব
রেখে যাব সবি
আছোস কী কেউ সঙ্গের সাথী
সঙ্গে নি কেউ যাবি
আমি মরেই যাব।
হঠাৎ অন্ধকারে ভুত দেখার মত চমকে উঠলাম, পেছনে আমাদের ... ভাই দাঁড়িয়ে। কি ব্যাপার ভাই কি হইছে? বাড়ি যেতে পারেন নি? পথে কোন সমস্যা হয়েছে? কোন দুর্ঘটনায় পড়েন নি তো? ভাই আমার নিশ্চুপ! কথা কয় না!
ঘন্টা খানিক পর আবিষ্কার হল, উনি ঘরের দরজায় লাল পতাকা দেখে আর কাল-বিলম্ব না করে সেই চাটমোহর থেকে আবার পাবনায় ফিরে এসেছেন।
আমাদের বটবৃক্ষ @monipuri মামার পোষ্টখানা সকাল সকাল দেখে আমার সেই প্রায় ২০ বছর আগের মজার স্মৃতি মনে পড়ে গেল। আমাদের সেই ভাই দরজায় তালা দেখে ফিরে এসেছিলেন আর এদিকে মনিমামা। ওইদিন যদি ওই ভাইও ঘুমাতে যাবার আগে আরেকবার ট্রাই মারতেন তাহলে হয়তো মনি মামার মত দরজা খোলাও পেতে পারতেন!!
পরের পংতিতে শুধু এটাই বলব, দোয়া জারি রাইখেন। মহান আল্লাহ্র ঘর তাওয়াফ করে এসেছেন, আমরা যেন বঞ্চিত না হই।
মসজিদের ব্যাপারে আমি কোন মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। কিন্তু নাস্তিকরা বসে আছে কখন মসজিদে যাওয়ায় করোনা হয়েছে সে সংবাদের আশায়।
আল্লাহ সবাইকে হেফাজতে রাখুন।