ঝামেলায় থাকার কারনে আজকের রম্যটা দেয়া হয়নি।
রম্য রচনা: লকডাউন ও আমার বৌএর বেগুনভাজা
সকালে ঘুম থেকে উঠে মনটা লুচি আর বেগুনভাজার জন্য উতলা হয়ে উঠল। মনে হল পৃথিবীর সবচেয়ে উপাদেয় জলখাবার হল লুচি আর বেগুনভাজা। আহা কতদিন খাইনি! আজ জরুর খায়েগা।
বউকে বলতে বউয়ের চোখ কপালে উঠে গেল! মনে হল বউয়ের কাছে কোহিনুর হিরে গচ্ছিত আছে আর সেইটে চেয়েছি।
বলল, "সাদা তেল বেশি নেই আর বেগুনও মাত্র দুটো আছে। আজ ঢ্যাঁড়শ বেগুন আলুর তরকারি করব আর ডাল-ভাত। আচ্ছা লুচি ভেজে দিচ্ছি। কালকের আলুছেঁচকি ফ্রিজে আছে, গরম করে দিচ্ছি, খেয়ে নাও।"
আমি বললাম, "সামান্য বেগুনভাজাও করা যাবে না?"
বউ বলল, "না। কারণ ঘন ঘন বাজার যাবে না তুমি। এখন লকডাউন চলছে। গোটা দেশ কৃচ্ছ্রসাধন করছে। আর আমরা রোজ ভূরিভোজ করব এটা হয় না, বুঝলে?"
আমার মাথা গরম হয়ে গেল। লোকে ডালগোনা কফি খাচ্ছে আর আমি বেগুনভাজা খেতে পাব না? এ হতেই পারে না। এমনিতে আমি শান্তশিষ্ট টাইপের কিন্তু রেগে গেলে আমি বাপের কুপুত্তুর!
ফোন নিয়ে সোজা ছাদে চলে গেলাম। মানিককে ফোন করলাম। ও বাজারে আনাজ নিয়ে বসে। আমাকে ফোন নম্বর দিয়ে বলেছিল, "কিছু লাগলে একটু ফুনিয়ে দেবেন ব্যাস! বাড়িতে মাল পৌঁছে যাবে।"
ওকে ফোন করতে বলল, "বলেন দাদা কী লাগবে?"
আমি বললাম, "ভাল বেগুন দিয়ে যাও তো।"
মানিক বলল, "বেগুন? খুব ভাল মাল আছে। একটু বেশি করে দিয়ে দেব?"
হ্যাঁ তাই ভাল! আর যেন না বউ বলতে পারে বেশি নেই। বললাম, "তাই দিও।"
মানিক উত্তেজিত হয়ে বলল, "আচ্ছা দাদা দিয়ে আসছি। আমার কাছে যা আছে সবই তাহলে কিছু কিছু দিয়ে আসছি।"
আমি বললাম, "শোনো তুমি বলবে তোমার গাছে হয়েছে তাই দিয়ে গেছ, বুঝেছ? আমি কিনছি এ কথা ঘুণাক্ষরেও বলবে না।"
মানিক হেসে বলল, "সব বুঝে গেছি দাদা কিচ্ছু চিন্তা করতে হবেনি। আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।"
আমি সোজা বাথরুমে ঢুকে গেলাম। অনেকক্ষণ পরে বাথরুম থেকে বেরোলাম। ততক্ষণে মানিকের ডেলিভারি হয়ে গেছে।
বউ বলল, "ওহ্ তুমি এতক্ষণে বেরোলে? জানো একজন এসেছিল, মানিক নাম বলল, ওরে বাবা কত্ত আনাজ দিয়ে গেল! বলল, সব ওর গাছের। কে গো এই মানিক? কোনও দিন শুনিনি তো এর কথা?"
আমি হেসে বললাম, "ও মানিক এসেছিল? বড় ভাল ছেলে। সেই কবে ওর উপকার করেছি ভোলেনি দেখছি।"
মনে মনে বললাম, শালাকে বেগুন দিয়ে যেতে বললাম, আর ব্যাটা মনে হয় যা ছিল ওর কাছে সব দিয়ে গেছে।
একটু পরেই মানিকের ফোন এল, "দাদা বউদিকে সব বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি। মোট দু হাজার ছশো পঁচাত্তর টাকার মাল।"
আমার আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেল, বললাম, "বলো কী! এত টাকা? এত্ত টাকার আনাজ?"
মানিক বলল, "আরে দাদা সওব দিয়েছি। ধরুন গিয়ে আটটা মোচা, দশটা এঁচোড়, চার কেজি পটল, পাঁচ কেজি বেগুন, আট কেজি টম্যাটো, পাতি লেবু..."
আমার মাথা ঘুরছে! বললাম, "প-পরশু বাজার যাব তখন তোমার টাকা দিয়ে দেব।"
মেজাজ খিঁচড়ে গেল। ইস এতগুলো টাকার আনাজ! যাকগে জম্পেশ করে খাওয়া তো যাবে কদিন ধরে! নেই নেই আর শুনতে হবে না।
বিকেলে বউকে ভুরু নাচিয়ে বললাম, "তাহলে কাল থেকে রোজ সকালে বেগুন ভাজা খাব। আর তো বলতে পারবে না যে বেশি নেই!"
বউ বলল, "বেশি নেইই তো। দুটো-চারটা করে রেখে দুপুরবেলা গিয়ে মিত্তিরবাড়ি, ঘোষদের বাড়ি, মন্ডলদের বাড়ি আর বোসেদের বাড়ি সব ভাগ করে দিয়ে এসেছি। এই দুঃসময় বিনে পয়সায় পাওয়া জিনিস একা একা খেতে নেই, বুঝলে মশাই? ওহ্ সবাই কী খুশি হয়েছে!"
আমি চেঁচিয়ে উঠলাম, "তুমি? তুমি..."
রাগে-দুঃখে আমার কথা বন্ধ হয়ে গেল। আর কিছু বলতে পারলাম না।