আলোর গতিতে ছুটতে পারে এরকম বাহন আবিস্কারের দ্বারগোড়ায় আছে নাসা... কয়েকদিনের মাঝেই আবিস্কার হইয়া যাইতে পারে। সে পর্যন্ত চিটাগাঙ্গের মিলনমেলা না হয় পিছাইয়া দ্যান, মামা !
প্রায় একই রকম একটা ঘটনা আমার বয়সকালে ঘটেছিলো। স্থানীয় ফুটবল লীগে ঐ বছর প্রতিটি ক্লাব থেকে দুটো করে টিম ডাকা হয়েছিলো লীগে অংশগ্রহণ করার জন্য। ক্লাবের নামের পাশাপাশি ঐ দুটো দলের জন্য আলাদা নাম জমা দিতে হয়েছিলো। কেউ ক্লাবের নামের পরে লাল, সবুজ, কিংবা অন্য কিছু যোগ করে নাম দিয়েছিলো। আমাদের ক্লাবের সদস্যরা চিন্তা করলো জাতীয় লীগের সেরা দুই দলের নাম যোগ করে দিবে। সেমতে আমাদের ক্লাবের নামের পরে এক দলের নাম হলো মোহামেডান আর আরেক দলের আবাহনী। দল সংখ্যা বেড়ে যাবার কারনে সরাসরি লীগ না হয়ে সে বৎসর রাউন্ড রবীন লীগ পদ্ধতিতে খেলা হয়েছিলো। সেমিতে আমাদের ক্লাবের দুদলের মুখোমুখি হতে হয়েছিলো। খেলা চলছিলো হাড্ডাহাড্ডি... খেলা শেষের মিনিট দশেক আগে ঘটলো ঘটনাটা। ডি-বক্সের ঠিক বাইরে কোনাকুনি জায়গায় একটা ভালো পাস পেলাম আমি। বলটা সাইড ভলির জন্য খুবই চমৎকার ছিলো। শুধু একটু লাফিয়ে উঠতে হবে এইযা। রিসিভ করে শুট করলে ডিফেন্স এগিয়ে এসে কভার করে ফেলতে পারে ভেবে আমি সরাসরি সাইড ভলির মাধ্যমে বারে শুট করে দিলাম। বলের এঙ্গেল দেখে ডিফেন্স বুঝে গেছে বল ফাস্ট বার দিয়ে ঢুকে যাবে। মাখন (গোল রক্ষক) তখন সেকেন্ড বারে। আবাহনীর স্টপার ছিলো লিখন (আমার খুব প্রিয় বন্ধু )উপায়ান্তর না দেখে সে মাখনের ভুমিকায় অবতীর্ণ হলো। সরাসরি হাত প্রসারিত করে ড্রাইভ মেরে হাত দিয়ে বল আটকানোর চেস্টা করলো সে। চেস্টা বিফল হলেও একেবারে বিফল সে ছিলো না। বলে হাত সে ঠিকই লাগিয়েছিলো। কিন্তু বলকে জালে জড়ানো থেকে রুখতে পারলো না। রেফারী বাঁশি বাজালো ঠিকই, কিন্তু গোলের সেই লম্বা বাঁশি না। ছোট্ট বাঁশি... উল্লাস করে পিছনে তাকাতেই দেখি রেফারী বাম হাত উপরে তুলে ডান হাত দিয়ে পেনাল্টি স্পটের দিকে ইশারা করছে। মানে তার দৃস্টিতে এটা গোল হয়নি। রেফারীকে উদ্দেশ্য করে দৌড়ে আসলো আমাদের সব টিম মেম্বার। প্রতিপক্ষেরও অনেক খেলোয়াড় ছুটে এলো রেফারীর দিকে। যদিও তারা আজ আমাদের প্রতিপক্ষ আসলে তো আমরা একই ক্লাবের সদস্য। লিখনকে দেখলাম মাথা নীচু করে বসে আছে। তার জন্য মায়া হলো কিছুটা। টুর্ণামেন্ট খেলতে আসার কারনে তার বিপক্ষে খেললেও মূলত আমাদের দুজনার মাঝে খুব ভালো একটা সমঝোতা ছিলো। যখনই টুর্ণামেন্টে একসাথে খেলতে যেতাম তার আমার মাঝে কখনোই ভুল বুঝাবুঝি হতো না। আমার ব্যাক পাসগুলো সে ঠিকই রিড করতে পারতো। বিশেষ করে বারের সামনে দেয়া ব্যাকহিল গুলো পর্যন্ত। মনে মনে ভাবছি গোল নাকচ হলেও আমি আপত্তি করবো না। ইতিমধ্যে রেফারীকে ঘিরে উত্তেজনা বেড়েই চলছে। আমি আর লিখন জটলার বাইরে। লিখন তখনো মাথা নিচু করে বসে আছে আর আমি কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এক পর্যায়ে টূর্ণামেন্ট কমিটির লোকজন মাঠে প্রবেশ করলো। চন্দন দা বলছে এটা গোল হবে। ওনি আমাদের সিনিয়র খেলোয়াড়। কিছুদিন আগেও ঢাকার ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে খেলতেন। আদমজীর গোল রক্ষক হিসাবে খেলতেন তপনদা, ওনার আর রেফারীর মতে এটা পেনাল্টি হবে। যুক্তি হিসাবে ওনাদের বক্তব্য হচ্ছে, ডি-বক্সের ভিতরে ডিফেন্ডারের হাতে আগে বল লেগেছে পরে গোল হয়েছে। সেই হিসাবে আগে যেটা হয়েছে তারই ভিত্তিতে পেনাল্টি হবে। তর্ক চলছে পুরোদমে। একফাঁকে আমার নামটাও ওখানে আলোচনা হচ্ছে দেখে আমি এগিয়ে গেলাম। টুর্ণামেন্ট কমিটির সেক্রেটারি আমানুল্যাহ ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করলো ফুটবল বাইলজ সম্পর্কে তুমি সব থেকে ভাল জানো। তুমি বলো, এটা কি হবে ? তখন আমি নিয়মিত " ক্রীড়া জগত " ম্যাগাজিন পড়তাম। আমি ক্রীড়া জগতের নিয়মিত গ্রাহক ছিলাম। বুক পোস্টের মাধ্যমে ডাকে এটা সহ আরো কিছু ম্যাগাজিন যে আমার বাড়িতে আসত সেটা সবারই জানা। আর সে থেকেই তাদের ধারনা আমি ফুটবল বাইলজ সম্মন্ধে সব থেকে বেশী জানি। ভেবেছিলাম গোল নাকচ হলেও আমি কিছু বলবো না। এবার তো আসল কথাটা বলতেই হবে। বাইলজের ব্যাপারে তো আর মিথ্যা তথ্য দেয়া যাবে না। বললাম- এটা গোলই হবে। বাইলজে তাই লেখা আছে। সেই আইনের ব্যাখ্যা হিসাবে বলা আছে, ডি-বক্সের ভিতর কোনরূপ ফাউল কিংবা নিয়ম বহির্ভুত কোনো আচরণ করা হলে তার বিরুদ্ধে পেনাল্টি ডাকা হবে। এবং সেটি পেনাল্টি স্পটে বল বসিয়ে শুটআঊটের মাধ্যমে সেই আইন প্রয়োগ করতে হবে। তবে কোনো কারনে যদি ডি-বক্সের ভিতরে প্রতিপক্ষের কোনো খেলোয়াড়ের হাতে বল লাগার পরও সে বল বারে ঢুকে যায় তবে সেটি গোল হিসাবে বিবেচ্য হবে। কেননা, পেনাল্টি আরোপই হয় গোল আদায়ের জন্য আর যার জন্য এই শাস্তি আরোপ হয়, সেটিই যখন সম্পন্ন হয়ে যায় তখন আর নতুন করে শাস্তির বিধান থাকে না। আমার কথার উপর আমানুল্যাহ ভাই সহ অপরাপর অনেকেরই হয়তো আস্থা ছিলো, শেষ পর্যন্ত ওটা গোল হিসাবেই দিয়ে দেয়া হয়। আসলে আমাদের দুপক্ষের কারোরই তেমন জোড়ালো আপত্তি ছিলো না। যেহেতু আমরা একই ক্লাবের মেম্বার ছিলাম। প্রতিবাদটা শুধু হয়েছিলো রেফারীর নিয়ম না জানার কারনে, সঠিক নিয়মটা প্রতিস্থাপনের উদ্দেশ্যে...
ঐদিন পেনাল্টি আগে হলেও শেষ পর্যন্ত পরে ঘটে যাওয়া গোলটাই ঘটনাটাই প্রাধান্য পেয়েছিলো। আর এখানে ডাক না পেলেও আপনি @fer_prog মামার কাছ থেকে নগদে ঠিকই পেয়ে গেছেন। তারমানে যার জন্য আপনি ডাক পেতেন সেটাই আপনি পেয়ে গেছেন !! হে হে হে...