What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

অন্তিম উদ্দেশ্য (1 Viewer)

[HIDE]রাহুল মনে মনে ভাবে,"না, আমি ইশিকাকে ধোকা দিতে পারবো না। সব সত্যি কথা বলে দেব ইশিকাকে। তারপর যা হয় হবে। আমি ইশিকাকে সত্যি সত্যি ভালোবেসে ফেলেছি। ভালোবাসার শুরু কখনওই মিথ্যে দিয়ে হতে পারে না।"

রাহুল ইশিকার নিস্পাপ হাঁসি মুখটার দিকে নিস্পলক তাকিয়ে থাকে। ইশিকা বুঝতে পারে রাহুল ওর দিকে তাকিয়ে আছে। রহুলের দিকে ঘূরে তাকিয়ে মুখ নাড়িযে যেন জিজ্ঞেস করে,"কী দেখছ?"

রাহুলও মাথা নাড়িয়ে বলে, কিছু না।

আবার গানের সাথে তাল মিলিয়ে গাইতে শুরু করে...Kyunki Tum Hee Ho..... Ab Tum Hee Ho...zindagi Ab Tum Hee Hooo Chain Bhi...mera Dard Bhi Meri Aashiqui Ab Tum Heee Hoooo........

গান গাইতে গাইতে স্টেয়ারিং হুইলের দিকে চোখ যেতেই দেখে ইশিকার আঙুলগুলো হুইলের উপর নাচছে। যেন রাহুলের গানের সাথে তাল মেলাতে চাইছে।

গান শেষ হয়ে যাওয়ার পরও রাহুল ইশিকার দিকে তাকিয়ে থাকে।

ইশিকা স্তব্ধতা ভেঙে বলে,"রাহুল"

"হুঁ"

"আমি খুব দুঃখিত।"

"কিসের জন্য?"

"এমনিই" বলে ইশিকাও রাহুলের দিকে তাকায়। দুজনের চোখ মিলে যায় একে অপরের সাথে। দুজনেই একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে একে অপরের দিকে। একে অপরের চোখ খুঁজে পায় একান্ত আপন একটি জিনিস...ভালোবাসা।

কিন্তু এই ছোট্টো কথাটি মুখের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারে না। শুধু প্রকাশ ঘটে চোখে চোখে, মনে মনে। বোধ হয় বলবার মতো সঠিক সময় এখনও আসেনি। অপেক্ষা করছে সঠিক সময়ের।

"ইশি আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই,রাহুল সিদ্ধান্ত নেয় আসল সত্যটা ইশিকাকে বলে দেওয়ার।

ইশিকার হৃত্*পন্ড উত্তেজনায় ধক ধক করতে থাকে। কী বলতে চায় রাহুল? যেটা শোনার জন্য এতদিন অপেক্ষা করে রয়েছে সেটাই কি? ইশিকা মুখ দিয়ে শুধু এইটুকুই আওয়াজ বেড়োয়,"হুঁ"

"সামনে দেখে গাড়ি চালাও। এক্সিডেন্ট হয়ে যেতে পারে।" রাহুলে বলতে পারে না আসল সত্য কথাটা। কথাটা শুনে যদি ইশিকা ওকে ছেড়ে চলে যায়, সেই ভয়ে।

ইশিকা এতক্ষন দম বন্ধ করে বসেছিল রাহুলের মুখ থেকে ওর কাঙ্খিত কথাটা শোনার জন্যে। কিন্তু যখন দেখে যে রাহুল ওর সাথে ইয়ার্কি করছে তখন আবার অভিমান করে বসে রাহুলের উপর,"তুমি কোনোদিন সুধরবে না। যাও তোমার সাথে কথা বলবো না।"বলে সামনের দিকে মুখ ঘুড়িয়ে নিয়ে রাগে মুখ ফুলিয়ে গাড়ি চালাতে থাকে।



রাহুল একবার সামনে রাস্তার দিকে তাকায় আর একবার ইশিকার রাগে ফুলে থাকা মুখটার দিকে। "রাগলে ভারি মিষ্টি দেখায় তোমাকে।" ইশিকার ফোলা মুখে এবার লালচে আভা পরে।মনে মনে বলে,"কী অসভ্য দেখো একভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। যেন কোনোদিন দেখেনি। হ্যাঙলা..." ইশিকা আড় চোখে তাকিয়ে দেখে রাহুল ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ওরও চোখ চলে যায় বারবার রাহুলের দিকে।

বৃষ্টি হওয়ার কারনে গাড়ি একটু আস্তেই চলছিল। বৃষ্টি ধারা আরও বাড়াতে থাকায় গাড়ির গতি আরও কমিয়ে দিতে হয়। রাহুল একটু খুশিই হয়।আবার ইশিকার দিকে মুখ করে থাকে।

ইশিকা,"এই, আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন? অন্য দিকে তাকাও..."

রাহুল,"ওফ ইশি, তুমি না..."

আমার সাথে কথা বলতে বারন করেছি।"

রাহুল এবার চুপ করে যায়। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকায় আর বৃষ্টির বড়ো বড়ো ফোঁটা রাস্তায় আছাড় খাওয়া দেখতে থাকে।

কুড়ি মিনিট পার হয়ে যায়। রাহুল চুপ করে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে। এবার ইশিকার একটু অস্বস্থি হতে থাকে। মনে মনে বলে,"এই ডাম্বোটাকে ভালোবেসে রাগ করে একটু চুপ করতে বললাম। এযে পুরোপুরি চুপ করে গেল। আমার ওরকম করে বলা উচিত্* হয়নি। ক্ষমা চেয়ে নেব? না না, আমি কেন ক্ষমা চাইতে যাব? যেটা আমি বলবো সেটাই ওকে শুনতে হবে। দেখি কেমন না শুনে থাকে..."

ইশিকা গলা খাঁকড়ানি দেয়। রাহুল কোনো সাড়া দেয় না। চুপ করে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে।

ইশিকা আদেশের সুরে বলে,"আমি ওই গানটা আমি ওই গানটা আরও একবার শুনতে চাই।"

কোনো উত্তর আসে না।

ইশিকা এবার প্রচন্ড রেগে যায়। জোরে চেঁচিয়ে ওঠে,"আমি ওই গানটা আরও একবার শুনতে চাই।"

এবার রাহুল ইশিকার দিকে না তাকিয়ে বাঁকা সুরে বলে,"কেউ একজন একটু আগে বলছিল কথা বলতে চায় না আমার সাথে।"

ইশিকা রাগের মাথায়"আচ্ছা ঠিক আচ্ছে"বলে জোরে ব্রেক কষে দেয়। বৃষ্টি হওয়ার দরুন রাস্তা পিছল থাকায় গাড়ি পিছল খেয়ে একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে থেমে যায়। রাহুল এটার জন্য তৈরি ছিল না। তাই রাহুলের মাথা কিছুটা এগিয়ে গিয়ে ডাসবোর্ডের সাথে ঠোক্কর খায়।

"আউ" রাহুল ব্যাথা পেয়ে হালকা চেঁচিয়ে ওঠে। ডান হাত দিয়ে মাথা হাত বোলাতে থাকে। ইশিকার খুব খারাপ লাগে। হাত বাড়িয়ে রাহুলের মাথায় হাত বোলাতে যায়।

রাহুল একটু রেগে গিয়ে ইশিকার হাত নিজের মাথা থেকে সরিয়ে দিয়ে বলে,"এটা কী হল? হঠাং করে ব্রেক লাগালে কেন?"



ইশিকার অভিমান এখনও যায়নি। আড় চোখে রাহুলের দিকে তাকিয়ে রাহুলের কথার নকল করে বলে,"কেউ একজন একটু আগে বলছিল কথা বলবে না।"

রাহুল আরও রেগে গিয়ে বলে,"হুঁ, সব মেয়েরাই একরকম।"

ইশিকা চেঁচিয়ে ওঠে,"মুখ সামলে কথা বলো বলছি।"

দুজনের ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। ওদিকে পিছনে গাড়ির হর্ন বাজতে থাকে। রাস্তার মাঝখানে গাড়ি দাঁড় করানো রয়েছে।

রাহুল,"রাস্তার মাঝখানে গাড়ি দাঁড় করানো রয়েছে। তাড়াতাড়ি স্টার্ট করো।"

ইশিকা মুখ ঘুরে বলে,"হুঁ, আমি ওসব জানি না।"

রাহুল,"আচ্ছা বাবা, তুমি যা বলবে তাই শুনবো। এবার তাড়াতাড়ি গাড়ি স্টার্ট করো।"

ইশিকা,"আগে গানটা চালাও।"

রাহুল সঙ্গে সঙ্গে গান চালিয়ে দেয়। ইশিকার মুখে হাঁসি ফুটে ওঠে। রাহুলের দিকে একবার তাকিয়ে যেন বলতে চায়,"দেখলে আমার সাথে কেউ জিততে পারবে না।"

সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালু করে দেয়। গান চলতে থাকে। পুরো রাস্তা রাহুল ইশিকার দিকে তাকিয়ে থাকে। এটা ইশিকার আদেশ, মানতেই হবে।

অবশেষে গাড়ি থেমে যায় একটি বড়ো বিল্ডিং এর সামনে। বৃষ্টি অনেক আগেই থেমে গিয়েছিল।

রাহুল,"এটা রক্তিমের বাড়ি?"

ইশিকা,"ফ্ল্যাট নং 219."

রাহুল "ওহ্" বলে দুজনে গাড়ি থেকে নামে। রাহুল নেমে একপাশে দাঁড়িয়ে পড়ে। ইশিকা গাড়ি থেকে নেমে যেই সামনে এগিয়ে আসে রাহুলের চোখ ধাঁধা লেগে যায়। খুব সুন্দর দেখতে লাগছে আজ ইশিকাকে। একমাথা চুল একটা ক্লিপ দিয়ে আটকানো। লাল রঙের গাউন যেটা পুরো শরীরকে ঢেকে রেখেছে। কিন্তু শরীরের গঠন অবায়ব ফুটে উঠেছে। যেন সর্গ এক অপ্সরী এসে ওর কাছে ধরা দিয়েছে। সোনিয়ার সাথে এই সৌন্দর্যের তুলনা হয় না।

ইশিকা "এসো" বলে বিল্ডিং এর দিকে এগিয়ে যায়।

"ইশি" রাহুল পিছন থেকে ইশিকাকে ডাকে। ইশিকা ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছন দিকে তাকায়।

"আজ মনে হচ্ছে স্বর্গ থেকে কোনো পরি মাটিতে নেমে এসেছে। তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।"

ইশিকার মন অজানা এক আনন্দে নেচে ওঠে। সাথে রাহুলের মনও। দুজনের এই আনন্দে যেন সারা পৃথিবীটা আনন্দে মেতে ওঠে। মেঘ সরে গিয়ে চাঁদ মামা জ্বল জ্জ্বল করে ওঠে মাথার উপরে। দুজনে একে অপরের দিকে তাকিয়ে স্থির হয়ে। সময়ও যেন স্থির হয়ে যায় ওদের স্থিরতা দেখে।

ইশিকা রাহুলের কাছে সরে এসে হাত বাড়িযে রাহুলের কপাল ছোঁয়। হাত বোলাতে বোলাতে বলে,"তোমার বেশি লাগেনি তো..."

ইশিকার নরম কোমল হাতের স্পর্শে কপালের ব্যাথাটুকু নিমেষে গায়েব হয়ে যায়।

[/HIDE]
 
[HIDE]রাহুল ইশিকার হাতের উপর হাত রেখে মাথা নাড়ায়। পরস্পরের হাতের স্পর্শে দুজনেই কেঁপে ওঠে।

ইশিকা নিজেকে সামলে নিয়ে "আচ্ছা চলো.." বলে ইশিকা রাহুলের হাত ধরে রক্তিমের ফ্ল্যাটের দিকে এগিয়ে যায়। রাহুল নিজের হাতে ইশিকার হাতের স্পর্শ হৃদয়ে মেখে নিতে নিতে ইশিকার পাশে পাশে হেঁটে এগিয়ে যায় রক্তিমের ফ্ল্যাটের দিকে।

ইশিকা রাহুলের হাত ধরে রক্তিমের ফ্ল্যাটের দিকে এগিয়ে যায়। দুজনে এমনভাবে হাত ধরাধরি করে থাকে যেন মনে হবে দুই প্রেমিক প্রেমিকা যাচ্ছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে চার তলায় পৌঁছে যায়। প্রতিটা ফ্ল্যাটের সামনে একটি করে নাম্বার লাগানো রয়েছে। চলতে চলতে ইশিকা একটি ফ্ল্যাটের সামনে এসে থেমে যায়। ফ্ল্যাট নং 291. রাহুলকেও থামতে হয়।

রাহুল,"এটা কার ফ্ল্যাট?"

ইশিকা একটু অবাক হয়ে,"কার আবার, রক্তিমের।"

রাহুল,"কিন্তু তুমি তো একটু আগে নিচে বললে যে রক্তিমের ফ্ল্যাট নং 219."

ইশিকা,"তাই?"

রাহুল,"হ্যাঁ, তুমি তাই তো বললে।"

ইশিকা,"ওহ, ভুল করে বলে ফেলেছি। 219 নং ফ্ল্যাটে কোমল থাকে।"

ইশিকা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বেল বাজায়। গেট খোলার আগে রাহুল একবার আশপাশটা তাকিয়ে দেখে। বেশ বড়ো বিল্ডিংটা। সামনে 293 নং ফ্ল্যাটে রাহুলের চোখ আটকে যায়। ওই ফ্ল্যাটটা বাকি ফ্ল্যাটের থেকে কিছুটা আলাদা।

"স্ট্রেঞ্জ" রাহুলের মুখ থেকে বেড়িয়ে আসে।

ততক্ষনে রক্তিম এসে দরজা খুলে দেয়। ওদের দিকে তাকিয়ে বলে,"হাই, ইশিকা, রাহুল, ভিতরে এসো।"

রাহুল ইশিকার সঙ্গে ফ্ল্যাটের ভিতরে প্রবেশ করে। বাইরে থেকে ফ্ল্যাটটা সাধারন মনে হলেও ভিতরটা খুব সুন্দর লাগছিল। দরজা দিয়ে প্রবেশ করেই সামনে একটা বড়ো হল ঘর। যার চারিদিকে নানান ধরনের জিনিসপত্র সাজানো রয়েছে। সামনে একটি সোফা রয়েছে। এককথায় অতি সুন্দর।

"ওয়াও রক্তিম, তোর ফ্ল্যাটটা খুব সুন্দর।" রাহুল ফ্ল্যাটের চারিদিকে দেখতে দেখতে বলে।

রক্তিম হেঁসে বলে থ্যাঙ্কস।

রাহুল সামনে তাকিয়ে দেখে সোফায় বাকি বন্ধুরা বসে রয়েছে। কুবের, কোমল, অজিত, দিক্ষা, এবার ওদের সাথে রাহুল আর ইশিকাও যোগদান করে। রাহুল একটা কালো শার্ট পড়েছিল। যার পিছন দিকে ডিজাইন করা আর নিচে একটা লাল রঙের ট্রাউজার পড়েছিল। রাহুলকে একদম মস্ত দেখতে লাগছিল আজকে।

দিক্ষা,"রাহুল, আজ তোমাকে হেব্বি লাগছে।"

রাহুল দিক্ষার দিকে তাকিয়ে হেঁসে ধন্যবাদ জানায়।



আজ মোটামুটি সবাই ভালো জামাকাপড় পরে এসেছে। আড্ডা চালু হয়ে যায়। সবাই মন খুলে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকে। কারন প্রায় একমাস ভালো করে কথা বলতে পারবে না। হইহই, হাঁসাহাঁসি চলতেই থাকে। ইশিকা রক্তিমকে ডেকে বলে পার্টি শুরু করে দিতে। রক্তিম বলে পার্টি আবার কি শুরু করবে, টেবিলে ড্রিঙ্কস রাখা আছে, খাওয়া চালু করে দিতে। অজিত বলে শুধু মদ খেয়ে কি পার্টি হয়, মিউজিক চালাতে।

রক্তিম একটু রূঢ় হয়ে বলে,"না এখন গান চলবে না।"

সবার মুখ থেকে হাঁসি উড়ে যায়। ইশিকা জিজ্ঞেস করে,"কেন?"

রক্তিম,"এখনও সবাই আসেনি।"

রাহুল আগ বাড়িয়ে বলে,"ও হ্যাঁ, সোনিয়া এখনও আসেনি।"

ব্যাস, ইশিকা রাহুলের দিকে চোখ কটমট করে তাকায়। যেন বলতে চায় সোনিয়ার নাম ওর মুখে কেন..

একটু পরেই দরজায় বেল বেজে ওঠে। রক্তিম "এসে গেছে আমার ডার্লিং" বলে বড়ো লাইটটা অফ করে অন্য একটা লাইট জ্বেলে দেয়। যাতে পুরো ঘরটা নীল হয়ে যায়। ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। সোনিয়া দরজা পেরিয়ে ঘরে ঢুকতেই সবাইয়ের মুখ আরও একবার হাঁ হয়ে যায়। হাই হিল সাথে ওয়ান পিস ড্রেস। যার নিচের অংশ পাছা পর্যন্ত গিয়ে থেমে গেছে। আর উপরে স্তনের ঠিক নিপলের উপর পর্যন্ত। মাঝে পেটের অংশটা কাটা। ছেলেমেয়ে সবাইয়ের নজর ওর দিকে। ঘর পুরে গরম হয়ে ওঠে।

সোনিয়া সবাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,"হাই গাইস"

সব ছেলেরা একসাথে বলে ওঠে হাই।

দিক্ষা অজিতের দাবনায় কুট করে খিমচি কাটে। বেচারা অজিত "আউ" আওয়াজ করে ওখান থেকে সরে দাঁড়ায়। কিন্তু রাহুলকে খিমচি কাটবার কেউ ছিল না।

সোনিয়া চলতে চলতে ঠিক রাহুলের কাছে এসে দাঁড়ায়। রাহুলের সাথে হাগ করে গুড ইভিনিং উইশ করে। রাহুলও বলে গুড ইভিনিং। পাশে দাঁড়িয়ে রক্তিম আর ইশিকা ওদের লক্ষ্য করছিল।

রক্তিম,"ইশিকা তোমার মনে হয় না যে রাহুল সোনিয়ার কাছে আসবার চেষ্টা করছে?"

রক্তিমের কথা শুনে ইশিকার বুকের মধ্যে চিন চিন করে ওঠে। চোখের কোনায় এক ফোঁটা জল চলে আসে। রক্তিমের কথার কোনো উত্তর দেয় না। ওখান থেকে সরে গিয়ে হল ঘর লাগোয়া একটা ব্যালকনি মতো জায়গায় গিয়ে রেলিং এ হাতের ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। কোমল এটা লক্ষ্য করে ইশিকার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।

রাহুলও এটা লক্ষ্য করে। ও নিজেও চাইছিল না সোনিয়ার সাথে মিশতে। কিন্তু বন্ধুত্বের খাতিরে মানা করতে পারছিল না। ওর এই সমস্যার সমাধান করে দেয় রক্তিম।

[/HIDE]
 
[HIDE]রক্তিম,"চলো সবাই, মিউজিক চালু হোক.." বলে সোনিয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে ফ্লোরে নাচতে থাকে। অজিত আর দিক্ষাও যোগ দেয় ওদের সাথে। রাহুল পাশে সরে দাঁড়ায় আর ইশিকার দিকে দেখতে থাকে।

কিছুক্ষন পরে কোমল ফিরে আসে ইশিকার কাছ থেকে। এসে সবাইকে নাচতে দেখে কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়। আর পাশে সরে দাঁড়িয়ে ওদের নাচ দেখতে থাকে। রাহুল দুটো সফ্ট ড্রিঙ্কসের গ্লাস নিয়ে কোমলের পাশে এসে দাঁড়ায়। কোমল রাহুলকে দেখে মুচকি হেঁসে রাহুলের হাত থেকে একটা গ্লাস নিয়ে নেয়। কিছুক্ষন দুজনের মধ্যে কোনো কথা হয় না। চুপচাপ রক্তিমদের নাচ দেখতে থাকে। কিছুক্ষন পর রাহুল যে কারনে কোমলের কাছে এসেছিল সেটা জিজ্ঞেস করে,"আচ্ছা কোমল, তুমি ইশিকার সবচেয়ে ভালো বন্ধু, তাই তো?"

কোমল রাহুলের উদ্দেশ্য বুঝতে না পেরে জবাব দেয়,"হুঁ"

রাহুল,"তাহলে তোমার তো ইশিকার সম্বন্ধে অনেক কিছু জানার কথা, তাই তো?"

কোমল আবারও মাথা নাড়ায়,"হুঁ"

রাহুল,"কিন্তু ওর বন্ধুত্ব করলে কীকরে? সবসময় তো রাগে মুখ গোমড়া করে থাকে।"

কোমল এবার মুখ খোলে,"নারকেল বাইরে থাকে শক্ত লাগে, কিন্তু ভিতরটা নরম। ইশিকারও ভিতরটা খুব নরম।"

কোমলের কথা রাহুলের শুনতে খুব ভালো লাগে। মুখে হাঁসি ফুটিয়ে বলে,"হুঁ কিন্তু আমি তো ওকে এখনও বুঝতে পারলাম না। মানে ও..."

রাহুলের কথা শেষ করতে না দিয়েই কোমল বলে,"মানে ও যেরকম, ওকে দেখলে সেরকম মনে হয় না। তাই তো.."

রাহুল ঘাড় নাড়ায়।

"তোমার কী মনে হয় ইশিকা আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে? না, ও হল নামকরা ব্যবসায়ী মিস্টার গুপ্তর একমাত্র মেয়ে। ওরা ভীষন বড়োলোক। কিন্তু ইশিকাকে দেখলে বোঝা যায় না।"

রাহুল কোনো কথা বলে না। কোমলের কথা শুনতে শুনতে ইশিকার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

কোমল আবার বলতে শুরু করে,"কিন্তু বলে না, টাকা দিয়ে সবকিছু হয় না। ইশিকার সাথে ওটাই হয়েছিল। ওর বাবা মার মধ্যে রোজ ঝগড়া লেগেই থাকতো। কিছুদিন পর ডিভোর্স। বাবা মার ভালোবাসা বলে জিনিসটা ও কোনোদিন পায়নি। ভালোবাসার জন্য বাবা কাছে সময় থাকতো না। এত টাকা পয়সা থাকতেও ও ছিল একা।"

রাহুলের চোখের মধ্যে ইশিকার প্রতি ভালোবাসা কোমলের নজর এড়ায় না। রাহুলের চোখ ইশিকার উপরেই স্থির ছিল।

"তাই ইশিকা বেছে নেয় সাধারন মানুষের জীবন। বাইরে থেকে যতই রাগ করুক ওর মনটা ভারী সুন্দর। ওযে সোনিয়াকে দেখতে পারে না। এটা সোনিয়ার টাকা পয়সা দেখে নয়। ও শুধু সোনিয়ার অশ্লিলতাকে ঘৃনা করে। কারন ওই একই ওর সংসার ভেঙেছিল।"

[/HIDE]
 
[HIDE]এটুকু বলে কোমল থামে। কোমলে কথা শেষ হতে রাহুলের পা নিজে থাকেই এগিয়ে যায় ইশিকার কাছে। ইশিকার কাছে পৌঁছে রাহুল ইশিকার কাঁধে হাত রাখে। ইশিকা একবার ঘুরে রাহুলের দিকে তাকিয়ে আবায় মুখ ঘুড়িয়ে নেয় সামনের দিকে।

এবার রাহুল ইশিকার দুই কাঁধের উপর হাত রেখে ইশিকাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নেয়। দুজনের চোখ পরস্পরের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। রাহুলের ঠোঁট আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে ছুঁয়ে যায় ইশিকার কপালে।

রাহুলের ঠোঁটের স্পর্শে কেঁপে কেঁপে ওঠে ইশিকার শরীর। এরকম অবস্থার জন্য মোটেই তৈরি ছিল না ইশিকা। প্রচন্ড রেগে যায় রাহুলের উপর।

"এটা..." ইশিকা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, রাহুল থামিয়ে দিয়ে বলে,"বন্ধুত্বের খাতিয়ে" বলে মুখে হাঁসি টেনে এগিয়ে যায় হল ঘরের দিকে।

সবাইয়ের নজরে পড়ে এই দৃশ্য। কেউই এর জন্য তৈরি ছিল না। ইশিকা রাহুলের চলে যাওয়ার দিকে নিস্পলক তাকিয়ে থাকে। আজ পর্যন্ত কোনো ছেলে ওর গায়ে হাত দেওয়ার সাহস পায়নি। আর রাহুল সবার সামনে ওয় সাথে...

ইশিকা নিজেই ধন্দে পড়ে যায় কী করা উচিত। শুনতে পায় নিজের হৃদস্পন্দন। কিন্তু এবার রাহুলের উপর যে রাগ ছিল সেটা চলে গিয়ে এক অজানা শিহরনে হাঁসি ফুটে ওঠে ইশিকার ঠোঁটের কোনায়।

পার্টি জোরদার চলছিল। সবাই হই হুল্লোড় মজা মস্তি সব করছিল। প্রায় এক ঘন্টা নাচন কুদন করার পরে সবার পেটের নিচে টান পড়ে। সবাই গোল করে বসে পড়ে খাবার টেবিলে। খাবার তৈরিই ছিল। মেয়েরা হাতাহাতি করে পরিবেশন করে। নীল আলোটা তখনও জ্বলছিল। নীল আলোর রং ঘরটা যেন রহস্যময় হয়ে পড়ে। সবাই খেতে খেতে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল। রাহুল ইশিকার ঠিক উল্টো দিকে বসে ইশিকাকে দেখছিল আর খাবার খাচ্ছিল। খেতে খেতে তৃষ্না পাওয়ায় রাহুল সামনে রাখা গ্লাসের উপর হাত রাখে। হঠাং রাহুলের চোখ ইশিকার পিছনে দেওয়ালের উপরে পড়ে। মসৃন দেওয়ালের উপর চলচিত্রের মতো ভেসে ওঠে একটা দৃশ্য।

একটি লোক আর আর একজন মহিলা, দুজনেরই বয়স কিছুটা বেশি বলেই মনে হয়। দুজনে চলতে চলতে একটি ফ্ল্যাটের সামনে এসে দাঁড়ায়। দরজায় একটা নাম্বার লেখা ছিল। কিন্তু সেটা পরিস্কার ভাবে দেখা যাচ্ছিল না। চাবি ঘুড়িয়ে দরজা খুলে দুজনে ফ্ল্যাটের ভিতরে প্রবেশ করে। দুজনকেই বেশ হাঁসি খুশি দেখাচ্ছিল। সোফার উপরে বসে নিজের মধ্যে কিছু কথা বলছিল। তারপর বুড়ি মহিলা সোফা ছেড়ে উঠে রান্না ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে। ফ্রিজ খুলে একটা জলের বোতল বের করে। স্ল্যাপের উপর একটা গ্লাস রেখে তাতে জল ঢালতে থাকে। জল ঢালতে ঢালতে বুড়ির হাত একটু কেঁপে যায়। যার ফলে জল গ্লাসের ভিতর না পড়ে কিছুটা স্ল্যাপের উপর পড়ে যায়। যতক্ষনে বোতল সোজা করে ততক্ষনে কিছুটা জল স্ল্যাপের উপরে পড়ে যায়। জলের বোতলে ছিপি আটকে স্ল্যাপের উপর রাখা গ্যাস ষ্টোভের পাশে রেখে দেয়।



ওদিকে স্লাপের উপরে পড়া জল গড়িয়ে গড়িয়ে স্ল্যাপের গা বেয়ে নিচে পড়তে থাকে। বুড়ি রান্নাঘরের মেঝেতে পড়ে থাকা একটা কাপড় তুলে নেয় যাতে না ভিজে যায়। কাপড়টা তুলে স্ল্যাপের উপর গ্যাস স্টোভের পাশেই রেখে দেয়।জলের গ্লাসটা হাতে নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।

এদিকে স্ল্যাপের উপর থেকে চুঁইয়ে পড়া জল গড়াতে গড়াতে রান্নাঘরের মেঝে বেয়ে দরজার কাছে এসে গিয়েছিল।

ওদিকে ঘরের মধ্যে গিয়ে বুড়ি মহিলা বুড়োর হাতে জলের গ্লাস ধরিয়ে দেয়। বুড়ো গ্লাসের জল পান করে টেবিলের উপর গ্লাসটা রেখে দেয়। কিছুক্ষন বুড়ো বুড়ি নিজেদের মধ্যে কথা বলে। তারপর বুড়ো সোফার উপর হেলান দিয়ে খবরে কাগজ হাতে নিয়ে বসে পড়ে আর বুড়ি রান্নাঘরে প্রবেশ করে।

রান্নাঘরে গিয়ে একটা আলমারি খুলে তা থেকে একটা কড়াই বের করে আর তার মধ্যে কিছুটা তেল ঢালে। তারপর যেদিকে জলের বোতলটা রাখা ছিল সেদিকের বার্নারের উপর কড়াইটা রেখে গ্যাস চালু করে দেয়।

গ্যাস জোর আঁচে জ্বলছিল। তেল খুব তাড়াতাড়ি গরম হয়ে ওঠে। বুড়ি মিটসেফ থেকে আলু বেড় করে প্যানের উপর রেখে আলুগুলো ভালো করে ধোয়। তারপর আলুর খোসা ছাড়িয়ে একটি পাত্রে রেখে দেয়। তারপর পাশের বার্নারে গ্যাস চালু করে দেয়। তারপর লাইটার বার্নারে ঠেকিয়ে প্ল্যাগ করে।

একবার, দুবার, তিনবার, গ্যাস চালু ছিল, কিন্তু লাইটার জ্বলছিল না। বুড়ি মহিলা কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে আবার প্ল্যাগ করে। কিন্তু এবার জ্বলে না। গ্যাস তখনও চালু ছিল। বুড়ি এবার বার্নারের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে দেখবার চেষ্টা করে কী হয়েছে। কিন্তু কিছু বুঝতে পারে না। শুধু বার্নারের গা থেকে গ্যাস বেড়োনোর সোঁ সোঁ আওয়াজ কানে আসে।

তারপর বুড়ি মুখ সরিয়ে নেয় পাশে। যার ফলে বুড়ির চুল ঢুকে যায় চুলির নিচে। এবার পাশ থেকে বার্নারটিকে বার্নারটিকে দেখতে লাগে। অপর হাতে লাইটার ছিল। আবার বানারের কাছে নিয়ে গিয়ে প্লাগ করতে থাকে।

একবার, দুবার, তাও জ্বলে না। আরও একবার। হঠাং দপ করে আগুন জ্বলে ওঠে। বুড়ির মুখে ফুটে ওঠে। মুখে আগুনের তাপ লাগায় বুড়ি নিজের মুখ সরিয়ে নিতে যায় চুলির কাছ থেকে। কিন্তু তখন বুঝতে পারে যে ওর চুল চুলির নিচে কিছুতে আটকে গেছে। জোরে টান দেয় চুল ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু না, চুল ছাড়ায় না। বরং একটু টাল খেয়ে রেগুলেটরের উপর হাত পরে যায় আর রেগুলেটর ঘুরে গিয়ে সর্ব্বোচ্চ আঁচে চলে আসে। এবার বার্নাল থেকে আগুনের প্রচন্ড তাপ এসে লাগে বুড়ি মুখে। বুড়ি ভয় পেয়ে জোরে চেঁচিয়ে ওঠে।[/HIDE]
 
[HIDE]বাইরে সোফায় বসে থাকা বুড়ো লোকটা বুড়ির চেঁচানোর আওয়াজ শুনে হন্তদন্ত হয়ে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে যায় রান্না ঘরের দিকে।

স্ল্যাপ থেকে চুঁইয়ে পড়া জল গড়িয়ে গড়িয়ে রান্না ঘরের দরজার সামনের মেঝেতে চলে এসেছিল। বুড়ো ছুটতে ছুটতে গিয়ে ঠিক ওই জলের উপরেই পা রাখে আর স্লিপ খেয়ে এগিয়ে গিয়ে বুড়ির ঘাড়ের উপর পড়ে। যার ফলে বুড়ির মুখ বার্নারের উপর চেপে বসে যায় আর বুড়োর একটা হাত গিয়ে আটকে যায় চুলার ভিতরে। হাত টেনে বেড় করার অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হয়।

ওদিকে বুড়ির মুখ বার্নালের উপর পড়ায় বুড়ির মুখ আগুনে পুড়ে ঝলসাতে থাকে। মুখ থেকে মাংস খন্ড গলে গলে পড়তে থাকে চুলার মধ্যে, আর সাথে রক্ত।

বুড়ি করুন স্বরে কাঁদতে কাঁদতে চেঁচাতে থাকে। চুল আর মুখের রক্ত মাংস পুড়তে পুড়তে আগুনের তেজ আরও বেড়ে যায়। আর বুড়োর ফেঁসে থাকা হাতের উপর আগুন এসে লাগে। বুড়োও তারস্বরে চেঁচিয়ে ওঠে। কিন্তু ওদের আওয়াজ কেউ শুনতে পায় না। অপর হাত বাড়িয়ে রেগুলেটর ঘোরায়। কিন্তু রেগুলেটর ততক্ষনে ফ্রি হয়ে গেছে। আগুনের তেজ ক্রমশ বাড়তেই থাকে।

এবার বুড়ো স্টোভের ওপারে একটা জলের বোতল দেখতে পায়। হাতটা আর একটু বাড়িয়ে বোতলটাকে নাগালের মধ্যে নিয়ে আসে। জলের বোতলটা ধরে নিজের দিকে নিয়ে আসতে থাকে। কিন্তু বোতলের উপর ছিপিটা শুধু লাগানো ছিল। ফলে ছিপিটা বোতল থেকে খুলে কড়াইয়ের গরম তেলের মধ্যে পড়ে যায়।

গরম তেলের মধ্যে জল লেগে থাকা ছিপি পড়তেই তেল ছিটকাতে ছিটকাতে বুড়োর হাতে পড়ে। প্রচন্ড তীব্র এক যন্ত্রনায় বোতল বুড়োর হাত থেকে ফসকে কড়াইয়ের উপর পড়ে যায়। যার ফলে কড়াই উল্টে গিয়ে গরম তেল ছড়িয়ে যায় সারা ঘারের মধ্যে। আস্তে আস্তে আগুন গ্রাস করে নেয় তেল ছড়িয়ে পড়া জায়গাগুলোকে। ঘর পুড়ে ছাড়খাড় হতে থাকে প্রকান্ড দাবানলের মধ্যে।

এবার আগুন অগ্রসর হয় গ্যাস সিলিন্ডারের দিকে। নিজের চোখের সামনে সাক্ষাত মৃত্যুকে দেখে প্রানপনে চেঁচিয়ে ওঠে বুড়ো। কিন্তু চেঁচানোতে কোনো কাজ হয় না। ধীরে ধীরে আগুন গ্রস করে নেয় গ্যাস সিলিন্ডার। বুড়ো নিজের অস্রুভরা চোখ দুটো মুদে নেয়।

"দামমম...." প্রচন্ড একটা আওয়াজের সাথে ফেটে যায় গ্যাস সিলিন্ডার। লন্ডভন্ড করে দেয় পুরো রান্না ঘরটাকে। অসংখ্য মাংসের খন্ডে পরিনত করে দেয় দুটো জীবন্ত শরীরকে।

"ফটৃ.." ভেঙে চুড়মার হয়ে যায় রাহুলের হাতের মধ্যে থাকা কাঁচের গ্লাসটা। হাত ভরে ওঠে লাল রঙের তরলে। ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পড়তে থাকে টেবিলের উপর। সবাইয়ের নজর চলে যায় রাহুলের দিকে। রাহুলের চোখ লাল হয়ে উঠেছিল আর ও স্থির দৃষ্টিতে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু কারও কিছু বলার আগেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে প্রানপনে চেঁচিয়ে ওঠে, "নাআআআ..."। রাহুলের কন্ঠ অনুরনিত হতে থাকে সারা ঘরময়। তারপর হঠাং ধুপ করে লুটিয়ে পড়ে মেঝেতে।

"রাহুল..." ইশিকা জোরে চেঁচিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। তারপর দৌড়ে গিয়ে তুলে নেয় রাহুলকে নিজের কোলের উপর। রাহুলের হঠাং এই আচরনে সবাই স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। তারপর সবাই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে রাহুলের কাছে এগিয়ে যায়।



কিছুক্ষন পরে, রাহুল নড়াচড়া করতে করতে চোখ খোলে। প্রথমে তো চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার দেখে। তারপর আরও কিছুক্ষন চোখ বন্ধ রেখে তারপর চোখ খুলতে আস্তে আস্তে সবকিছু পরিস্কার দেখতে পায়। চোখ খুলে ঘরের চারিদিকে তাকিয়ে দেখে সবাই ওকে গোল করে ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তারপর আঁচ করে যে ওর হাত নিয়ে কেউ কিছু করছে। সঙ্গে সঙ্গে মুখ ঘুড়িয়ে হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে ইশিকা ওর হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধছে। কুবের রাহুলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে,"এখন কেমন আছিস?"

কুবেরে গলার আওয়াজ শুনে ইশিকা রাহুলের দিকে তাকিয়ে দেখে যে রাহুল চোখ খুলেছে। যেন ইশিকার ধরে প্রান আসে। রাহুল নিজেকে কিছুটা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসে।

"কী হয়েছিল আমার? আর হাতে কীকরে লাগলো?" রাহুল সবাইয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে।

সবাই রাহুলের দিকে অবিশ্বাসের চোখে তাকায়। রক্তিম বলে,"তোর কিচ্ছু মনে নেই?"

রাহুল না তে ঘাড় নাড়ায়।

দিক্ষা রাহুলকে বুঝিয়ে বলে,"তুমি হঠাং উঠে দাঁড়িয়ে জোরে চেঁচিয়ে উঠলে। তারপর হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ওই গ্লাসটা ভাঙলে। আমরা তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তারপর..."

"তারপর তুই হঠাং মেঝেতে পড়ে গেলি" অজিত দিক্ষার কথাটাকে সম্পুর্ন করে।

রাহুল কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সবাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওর মাথায় ঢুকছিল না যে ওরা কী বলছে।

সোনিয়া রাহুলকে জিজ্ঞাসা করে,"তুমি 'না..' বলে হঠাং চেঁচিয়ে উঠেছিলে কেন? কিছু হয়েছে?"

সোনিয়ার কথায় রাহুলের চোখ যায় সেই দেওয়ারটার দিকে। আর চোখ সামনে ভেসে ওঠে সেই দৃশ্য যে একটু আগে দেখেছিল।

রাহুল হঠাং করে উঠে দাঁড়ায় আর এগিয়ে যায় হল ঘরের দিকে। দাঁড়িয়ে থাকা সবাই হতভম্ব হয়ে দেখছিল রাহুলের ক্রিয়াকলাপ। রাহুলকে চলে যেতে দেখে ওরাও রাহুলের পিছু নেয়।

রাহুল দ্রুত গতিতে সেই দেওয়ালটার সামনে এসে দাঁড়ায় যেখানে সেই ভয়ানক দৃশ্যটা দেখেছিল। তারপর দেয়ালে হাত ছুঁইয়ে যেন কিছু একটা খুঁজতে থাকে।

পিছনে সবাই হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। ওরাও বুঝতে পারছিল না যে কি হচ্ছে। তারপর ইশিকা রাহুলের সামনে এগিয়ে এসে রাহুলের কাঁধে হাত দিয়ে জিজ্ঞাসা করে,"রাহুল কী হয়েছে? কী খুঁজছো?"

রাহুল পিছন ঘুরে,"ইশিকা আমি এখানে..." কিছু একটা কথা বলতে বলতে থেমে যায়। ওর গলা দিয়ে আওয়াজ বেরচ্ছিল না। রাহুল সবাইয়ের দিকে একবার তাকায়। সবাইয়ের চোখে খুঁজে পায় বিষ্ময়। নিজেকে বড়ো অসহায় মনে হয় রাহুলের। মাথা নিচু করে দ্রুত পায়ে ফ্লাট থেকে বেড়িয়ে যায়।

"রাহুল..রাহুল.." ইশিকা চেঁচিয়ে ওঠে।

"রাহুল শোনো" সোনিয়াও ডাকে।

রাহুর ফিরে তাকায় না। ফ্ল্যাট থেকে বেড়িয়ে বারান্দা দিয়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গিয়ে নিচে নেমে যায়।

"তোমরা পার্টি এনজয় করো। আমি দেখছি ওকে।" ইশিকা সবার উদ্দেশ্যে বলে ফ্যাট থেকে দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে যায়।



এদিকে ইশিকা বারান্দা দিয়ে যেতে যেতে রাহুলে নাম ধরে ডাকতে থাকে। এদিক ওদিক তাকিয়ে রাহুলকে খোঁজে। অবশেষে দেখতে পায় রাহুল নিচে নেমে একটা পোষ্টের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ইশিকা দ্রুত পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে পৌঁছে যায় রাহুলের কাছে।

রাহুলের কাঁধে হাত রেখে ইশিকা জিজ্ঞাসা করে,"রাহুল তোমার কী হয়েছে?"

রাহুল থমথমে মুখ নিয়ে ইশিকার দিকে তাকিয়ে বলে,"ইশি আমি বাড়ি যাবো প্লিস।"

ইশিকা ঘাড় নাড়িয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। গাড়ির দরজা খুলে ঢুকে গাড়িতে স্টার্ট দেয়। রাহুর ওর পিছু পিছু গিয়ে পাশের সিটে বসে পড়ে।

বাইরের আবহাওয়া খুব ভালো ছিল। কিছুক্ষন আগে এক পসলা বৃষ্টি হয়ে যাওয়ায় ঠান্ডা বাতাস বইছিল। রাহুল গাড়ির জানালার কাঁচ খুলে দেয় আর দরজার দিকে হেলান দিয়ে ঠান্ডা বাতাস মেখে নিতে থাকে নিজের শরীরে।

প্রায় কুড়ি মিনিটের রাস্তা পার হয়ে যায়। রাত হয়ে যাওয়ায় ট্রাফিকও কম ছিল রাস্তায়। গাড়ি জোরে চালানো যেত। কিন্তু ইশিকা খুব আস্তে গাড়ি চালাচ্ছিল।

এতক্ষন ধরে চুপচাপ বসে থাকতে থাকতে ইশিকা অস্বস্থি বোধ করছিল। অবশেষে রাহুলকে না জিজ্ঞাসা করে থাকতে পারে না,"রাহুল তোমার কী হয়েছে? আমাকে বলো।"

রাহুল ইশিকার দিকে না তাকিয়েই বলে, "কিছু হয়নি।"

ইশিকা রাহুলকে আর ঘাঁটাবার সাহস পায় না। বুঝতে পারে রাহুলের মনের অবস্থা। তাই কথা না বাড়িয়ে গাড়ি চালানোর দিকে মন দেয়।

অবশেষে গাড়ি এসে পৌঁছোয় রাহুলের বাড়ির সামনে। কিন্তু রাহুলের এটা হুঁস ছিল না। অন্যমনস্ক হয়ে কোথায় যেন হারিয়ে ছিল। ইশিকা রাহুলের কাঁধে হাত দিয়ে আস্তে করে ঠেলা দিয়ে ডাকে,"রাহুল তোমার বাড়ি এসে গেছে।"

"ওহ্ সরি আমি বুঝতে পারিনি।" ইশিকার কথায় একটু চমকে উঠে রাহুল বলে। তারপর গাড়ির দরজা খুলে গাড়ি থেকে নেমে যায়। ইশিকা ভেবেছিল রাহুল ওকে আরও কিছু বলবে। কিন্তু রাহুলকে চলে যেতে দেখে ইশিকার মুখ শুকিয়ে যায়। তারপর গাড়ির দরজা বন্ধ করতে যায়।

"ইশি" রাহুল আবার ফিরে এসে ইশিকার কানের কাছে বলে। ইশিকা চমকে উঠে সামনে তাকিয়ে দেখে রাহুল। ইশিকার মন আবার খুশিতে ভরে যায়।

"তোমার যেমন ভালোবাসা চাই, তুমি সেরকমই পাবে। আমি তোমার সাথে আছি চিরকাল। না মানে, আমরা সবাই তোমার সাথে থাকবো।" বলে রাহুল দ্রুত পায়ে গেট পেরিয়ে বাড়ির ভিতর অদৃশ্য হয়ে যায়। ইশিকা কিছুক্ষন ভাবতে থাকে যে রাহুল কী বলে গেল। তারপর মনে পড়ে যায় আজ সকাল থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর কথা। একটা লাজুক হাঁসি বেরিয়ে আসে ইশিকার ঠোঁট চিড়ে। তারপর গাড়ি স্টার্ট করে রওনা দেয় নিজের গন্তব্যে।[/HIDE]
 
[HIDE]আর তারপর সেই দিন এসে যায়, যে দিনটাকে প্রায় সকল ছাত্রছাত্রীই ভয় পায়, মানে পরীক্ষার দিন। বন্ধুদের মধ্যে কথা বার্তা হয় তবে খুব কম। সবাই পরীক্ষা নিয়ে চিন্তায় মেতে ওঠে। একের পর এক পরীক্ষা হতে থাকে। সবাই মোটামুটি ভালোভাবেই পরীক্ষা দেয়।

"ইয়া..হু.." কুবের রেডবুলের ক্যান খুলতে খুলতে চেঁচিয়ে ওঠে। তারপর পুরো ক্যানের পানীয় একবার গলার মধ্যে ঢেলে দেয় আর ক্যানটাকে মাটিতে ফেলে ফুটবলের মতো সট মারে।

"ইয়েস্" সোনিয়া চেঁচিয়ে উঠে বলে,"এখন আমি ফ্রি, পরীক্ষাগুলো দম বের করে দিয়েছিল।"

"ঠিকই বলেছ।" দিক্ষা সোনিয়াকে সায় দেয়।

"শালা আমি যদি শিক্ষামন্ত্রী হতাম, তাহলে এই পরীক্ষাই পুরো বন্ধ করে দিতাম।" অজিত বেশ জোশ নিয়ে বলে।

"হ্যাঁরে শালা তুইতো খালি টুকতে জানিস, মন্ত্রী হতে গেলেও পড়তে হয়।" রক্তিম অজিতের পিছনে লাগে। অজিত কিছু জবাব দিতে যাবে তার আগে ইশিকা চেঁচিয়ে ওঠে,"তোমরা মারামারি বন্ধ করবে? এতোদিন পরে সবাইয়ের সাথে দেখা হল আর তোমরা দুজনে শুরু হয়ে গেল।"

সবাই কে এফ সি তে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। গতকাল ওদের পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। তাই সবাই একসাথে এসে মিলিত হয়েছে।

"আমাদের রাহুল বাবু কী করছে? এখনও কি পড়াশোনা করছে নাকি?" কুবের কথায় সবাই হেঁসে ওঠে। কিন্তু ইশিকার চোখ গেটের ওপরে স্থির হয়ে কারও আসার অপেক্ষা করছিল।

সোনিয়া,"আমি ওকে ফোন করেছিলাম। ও বলেছিল ওর আসতে একটু দেরী হবে।"

সোনিয়ার কথায় ইশিকার কান খাড়া হয়ে যায়।"কখন ফোন করেছিল?"

"সকালে.."

ইশিকার মাথা এবার গরম হতে শুরু করে। ঠিক তখনই, ইশিকার চোখের উপর কেউ হাত চেপে ধরে।

"রাহুল?" ইশিকা হাঁসতে হাঁসতে বলে।

"শিটৃ চিনে ফেললে।" বলে রাহুল ইশিকার পাশেই বসে পড়ে। তারপর আবার শুরু হয়ে যায় হইচই, চিংকার। রাহুল সবার সাথে কুশল বিনিময় করে।

কিছুক্ষন পরে সোনিয়া বলে ওঠে,"গাইস্, আমাদের হাতে এখন দু সপ্তাহ ছুটি রয়েছে। চলো কোথাও থেকে ঘুরে আসে।"

রক্তিম,"হ্যাঁ সোনিয়া ঠিক বলেছে। চলো সবাই মিলে কোথাও থেকে ঘুরে আসা যাক।"

অজিত,"আমি বলি কি, চলো কোথাও নির্জন জায়গায় যাওয়া যাক যেখানে লোকজন বেশি না থাকে।"

রক্তিম আবার অজিতের পিছনে লাগে,"হ্যাঁ হ্যাঁ, তোর তো নির্জন জায়গাই দরকার। তবে তো দিক্ষার সাথে..."

"দেখ রক্তিম.."[/HIDE]
 
[HIDE]ইশিকা বলে,"চলো কোনো পাহাড়ি অঞ্চলে যাওয়া যাক। কী বলো?"

"না, আমি কোনো খোলা জায়গায় যেতে চাই। পাহাড় আমার ভালো লাগে না।" রাহুল বলে ওঠে।

ইশিকা রাহুলের কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে।

"ইউরেকা!" হঠাং সোনিয়ার চেঁচানিতে সবাই ওর দিকে তাকায়।"রাহুলের কথায় মনে পড়ল, আমাদের একটা ফার্ম হাউস আছে। গত বছর বাপি ওটা বানিয়েছিল। চলো তবে ওখানেই যাওয়া যাক। বেশ সুন্দর জায়গা।"

রাহুল জিজ্ঞেস করে,"কোথায় সেটা?"

"বলমগড়"

"বলমগড়!" সোনিয়ার উত্তরে সবাই নিজেদের মস্তিষ্কের অভিধান হাতরাতে থাকে।

কোমল,"হুঁ, বলমগড় খুব সুন্দর জায়গা।" সবাই কোমলের দিকে তাকায়,"কিছুদিন আগে ওই জায়গাটার সংস্কার করা হয়েছে। শুনেছি জায়গাটা অতি সুন্দর।"

"তুমি ঠিকই বলেছ কোমল।" সোনিয়া কোমলের কথায় সায় দেয়। "চলো তবে ওখানেই যাওয়া যাক। আমি বাপিকে বলে সব ব্যবস্থা করবো।"

রাহুল,"তাহলে একটা দিন ঠিক করা যাক, কী বলো?" সবাই মিলে আলোচনা করে ঠিক করে কুড়ি তারিখ রওনা দেবে।

সোনিয়া,"তাহলে আমি বাপিকে বলে প্লেনের টিকিটের ব্যবস্থা করছি।"

"না" রাহুল বলে ওঠে,"আমরা ট্রেনে যাব। ট্রেনে যাওয়ার মজাই আলাদা।"

সবাই রাহুলের কথায় সায় দেয়। ঠিক হয়ে যায় কুড়ি তারিখ সকালে সবাই স্টেশন উপস্থিত থাকবে।

"আমি যাব না।" ইশিকা মাঝপথে বাধ সাধে।

"কেন?" সবাই একসাথে বলে ওঠে।

"এমনি" বলে ইশিকা গটগট করে ওদের পাশ কাটিয়ে ওখান থেকে বেড়িয়ে যায়।

রাহুল বুঝতে পারে পাহাড়ি অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়নি বলে অভিমানিনীর অভিমান হয়েছে। আর এই অভিমান ওকেই ঘোঁচাতে হবে।

"তোমরা সব প্যাকিং ট্যাকিং করে রেডি হও। আমি দেখছি ইশিকাকে।" বলে রাহুল বেড়িয়ে যায়।

বিশে অক্টোবর, সবাই স্টেশন দাঁড়িয়ে রয়েছে। শুধু দুজনের পাত্তা নেই। রাহুল আর ইশিকা।

কুবের,"এরা দুজন আবার কোথায় রয়ে গেল?"

"আমি ফোন করেছিলাম। ওরা রাস্তায় আছে।" সোনিয়া বলতে বলতে ইশিকা আর রাহুলকে স্টেশনের ভিতরে ঢুকতে দেখা যায়। রাহুলের হাতে একটা ব্যাগ আর কাঁধে একটা। ইশিকা খালি হাতে, না মানে ইশিকার ব্যাগ রাহুলের ক্যাঁধে। বাকি সবাইকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দুজনে এদিকে এগিয়ে আসে।

রাহুল ওদের কাছে পোঁছে বলে,"সবাই এসে গেছে? চলো তাহলে.."

"একটু দাঁড়াও আরও দুজন আসবে।" সোনিয়া বলে।

"আবার কারা?" সবাই সোনিয়ার দিকে জিজ্ঞাস্য দৃষ্টিতে তাকায়।

"ওই তো ওরা এসে গেছে।" সোনিয়ার কথায় সবাই সামনের দিকে তাকায়।

[/HIDE]
 
[HIDE]সামনেই দিকে তাকাতেই সবাই থ হয়ে যায়। দুটি মেয়ে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে। এরা আবার সোনিয়ার থেকে এককাঠি বাড়া। ওপরে শুধু একটা ফিনফিনে টপ আর নিতে মিনিস্কার্ট। চোখেতে কালো চশমা। সবাই হাঁ করে গিলতে থাকে মেয়েদুটিকে। শুধু রাহুল স্বাভাবিক ছিল। কারন রাহুল ওদের আগে থেকেই চেনে।

"আমরা সবাই খুব খুশি ছিলাম বেড়াতে যাবো বলে। কিন্তু তখন কী জানতাম ওই ট্রিপটা আমার জীবনটাকেই পালটে দেবে, তছনছ করে দেবে আমার জীবনটাকে।" বলতে বলতে একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রাহুল থামলো। চোখের কোনায় ফুটে উঠেছিল একফোঁটা জলের কণা। বুকের মধ্যে দলা পাকিয়ে থাকা দুঃখগুলো আজ যেন ফেটে বেড়িয়ে আসতে চাইছে। এত বছর ধরে জমে থাকা সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতিগুলো আজ মন চিরে বেরিয়ে আসতে চাইছে।

কথা বলতে বলতে রাহুল নিজের মনেই একটু হাঁসলো। কিন্তু এই হাঁসিতে কোনো প্রান নেই। প্রান খুলে হাঁসতে যে কবেই ভুলে গেছে সেটা রাহুল নিজেই জানে না। রাহুল জানালার সামনে দাঁড়িয়ে ওর অতীত জীবনের কথা বলছিল।

"কিন্তু কী হয়েছিল ওই ট্রিপে?" মেয়েটি একটা অদ্ভুত বাংলায় রাহুলকে জিজ্ঞেস করল।

মেয়েটির নাম সারা। মাতৃভূমি জার্মানি। কর্মসূত্রে লন্ডনে আসে। আর তারপরেই দেখ হয় রাহুলের সাথে। দুজনেই চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসেছিল এবং দুজনেই সিলেক্ট হয়ে যায়। প্রথম সাক্ষাতের দিন থেকেই রাহুলের মেয়েটিকে মনে ধরে। মেয়েটির বন্ধুসুলভ আচরণে রাহুল মেয়েটির সাথে ফ্রি হয়ে যায়। আর তারপর থেকেই দুজনে মিলে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করে একসাথে থাকে। রাহুলের সাথে থাকতে থাকতে বাংলা ভাষাটাকে কিছুটা রপ্ত করেছে। মেয়েটি আর পাঁচটা ইউরোপীয়দের থেকে আলাদা। ভদ্র মার্জিত স্বভাব। সুন্দর গোলগাল ধবধবে ফর্সা মুখখানায় সর্বদা বিচরণ করে একটা মিষ্টি হাঁসি। কিন্তু আজ রাহুলের মুখ থেকে ওর অতীত জীবনের কথা শুনে সেই হাঁসিটা উড়ে গেছে। বরং তার বদলে মুখের উপর ফুটে উঠেছে অজানাকে জানার এক অফুরন্ত কৌতুহল। উত্*সুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাহুলকে পর্যবেক্ষন করছে।

"এরপর আমি আর মুখে বলতে পারবো না সারা।" রাহুল সারার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।

সারা বুঝতে রাহুলের অবস্থা। কিন্তু ওর কৌতুহলী মন নিজেকে আটকে রাখতে অক্ষম হয়। আবার সেই অদ্ভুত বাংলায় বলে,"আচ্ছা অন্তত ইশিকার কথা বলো। ইশিকার কী হল আমি জানতে চাই।"

রাহুল জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল। আজ আকাশে রোদ ঝলমল করছে। মেঘের চিহ্নমাত্র নেই। শীতপ্রধান গাছগুলো নিজেদের জড়তা কাটিয়ে বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সামনের বাগানে ফুটে রয়েছে বিভিন্ন রঙের ফুল। নাম না জানা পাখিগুলো কিচিরমিচির করে চলেছে। আজ যেন ওদের সবচেয়ে খুশির দিন। সত্যি এতসুন্দর আবহাওয়া লন্ডনের মতো জায়গায় পাওয়া খুবই ভাগ্যের বিষয়। ঝড়, বৃষ্টি, মেঘলা আকাশ আর তুষারপাত দমিয়ে রাখে প্রকৃতির এই সৌন্দর্যকে। আজ প্রকৃতি মেলে ধরেছে নিজেকে পৃথিবীর বুকে। দূরে রাস্তার উপর একটি ছেলে স্কেটবোর্ড চালাচ্ছে। নিচে রাস্তার দুধারে সারি সারি দোকানগুলোতে তৈরি হচ্ছে ওখানকার নিত্য খাবার হট ডগ।



এইসব দৃশ্যগুলোই পর্যবেক্ষন করছিল রাহুল আর ভাবছিল ওর নিজের জীবনেও কি কখনও এই আনন্দমুখর দিন আসবে?

সারার উত্*সুকতা দমন করার জন্য রাহুল আবার বলতে শুরু করে ইশিকার সাথে কাটানো স্মৃতির কথা।"ট্রিপ থেকে ফিরে তো এসেছিলাম। কিন্তু ততদিনে যা ঘটবার ঘটে গিয়েছিল।"

ট্রিপ থেকে ফিরে আসার পরের দিন, রাহুল কলেজে ঢুকে দেখে সবাই এসে উপস্থিত। রাহুল ওদের কাছে এগিয়ে যায়। সবাই মুখ তুলে দেখে রাহুল এসেছে। কিন্তু কেউ কোনো কথা বলে না। আবার মুখ নামিয়ে নিজেদের কাজে মন দেয়। সবার মুখে বিষ্ময়ের ছাপ স্পষ্ট। রাহুল জানতো এরকম কিছু একটা হবে। তবুও এগিয়ে গিয়ে অজিতের কাছে বসে পড়ে।

"সবাই কেমন আছো?" রাহুল এতোটুকুই বল।

"চলো সবাই চলো, ক্যান্টিনে যাওয়া যাক।" বলে অজিত সবাইকে ঠেলা দিয়ে সিট থেকে তুলে দেয়।

রাহুলের খুব খারাপ লাগে ওদের এই ব্যবহার। মাথায় হাত দিয়ে বেঞ্চের উপর হেলান দিয় বসে পড়ে। সবাই ক্লাস থেকে বেড়িয়ে ক্যান্টিনের দিকে অগ্রসর হয়। ইশিকার রাহুলকে দেখে দুঃখ হয়। পিছন ঘুরে আবার ক্লাসের মধ্যে ফিরে আসতে যায়। কিন্তু,"চলো ইশিকা" বলে অজিত ইশিকার হাত ধরে টেনে টেনে নিয়ে যায় ক্যান্টিনের দিকে।

রাহুল কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকে ক্লাসের মধ্যে। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে যায় ক্যান্টিনের দিকে। ক্যান্টিনে সবাই চুপচাপ বসেছিল। সবাইয়ের সামনে কিছু খাবার রাখা ছিল। কিন্তু শুধু রাখাই ছিল। খাবারে কেউ হাত দেয়নি। শুধু একজন ছাড়া।

"খাও খাও, এরকম বসে আছো কেন?" আজিত খাবার খেতে খেতে বলে।

"রাহুল এদিকেই আসছে।" কুবেরের কথায় সবাই মুখ তুলে সামনের দিকে তাকায়। রাহুল সবার সামনে এসে দাঁড়ায়।

"তোমরা এরকম কেন করছো? আমি কী করেছি?"রাহুল বলে।

"বাঃ বা চমত্*কার, কী করেছি? তুই কী করেছিস তুই জানিস না? তোর জন্য আমরা মরতে বসেছিলাম। আর তুই জিজ্ঞেস করছিস তুই কী করেছিল।" অজিত রাগে ফুঁসে উঠে চেঁচিয়ে ওঠে।

সোনিয়া,"অজিত চুপ করো।"

রক্তিম,"চুপ করবে কেন? বলতে দাও ওকে। অজিত ঠিকই তো বলছে।"

অজিত,"সালা ফুলি সাইকো..."

রাহুল এতোকিছু শোনার পরেও শান্ত গলায় বলে,"আরে তোমরা আমার কথা বোঝবার চেষ্টা করো। আমি কি ইচ্ছে করে তোমাদের মারতে চেয়েছি? আমি নিজেই জানিনা আমার সাথে কী হচ্ছে। কিন্তু তোমরা বুঝবে না। কারন তোমাদের সাথে এটা হচ্ছে না..."বলতে বলতে রাহুলের গলা ভারী হয়ে আসে।



অজিত,"ওসব নাকে কান্না রাখ, তুই একটা খুনি, বুঝলি, ইউ আর এ ব্লডি মাডারার।"

এতক্ষন রাহুল চুপ করে ছিল। কিন্তু ওর পরিবারের কথা তোলায় রাহুলের মাথা গরম হয়ে যায়। "অজিত" ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে রাহুল চেঁচিয়ে উঠে অজিতের দিকে তেড়ে যায়। ইশিকা দ্রুত গিয়ে ওর হাত ধরে ফেলে।

"তোমরা সব চুপ করো। অজিত তুমি কী বলছো একবার ভেবে দেখেছো? রাহুলের জন্যই তুমি আর দিক্ষা আজ প্রানে বেঁচে আছো। আর তুমি ওকে দোষারোপ করছো?" ইশিকা চেঁচিয়ে ওঠে।

রাহুলের চোখ জলে ভরে উঠেছিল। জল ভরা চোখ নিয়ে ক্যান্টিন থেকে বেড়িয়ে যায়। ইশিকা ওকে বারবার ডাকে। কিন্তু রাহুল কারো কথায় কান না দিয়ে সোজা কলেজ থেকে বেড়িয়ে যায়।

"ইশিকা ঠিকই বলেছে।" সোনিয়া ইশিকার সাথ দেয়।,"রাহুল নিজে থেকে তো কিছু করেনি। যা হয়েছে সেটা একটা দূর্ঘটনা মাত্র।"

"হুঁ রাহুল খারাপ ছেলে তো নয়। ওর জন্যই তো আমরা এখনও বেঁচে আছি।" কুবেরও সায় দেয়।

"তোমরা ঠিকই বলেছো। রাহুলের কোনো দোষ নেই।" কোমল বলে। আস্তে আস্তে ইশিকার দল ভারী হয়ে যায়।

"যা কিছু হয়েছে সব ভুলে গিয়ে আমাদের আবার আগের মতো বন্ধু হয়ে যাওয়া উচিত।" সোনিয়া আবার বলে।

ইশিকার এই সোনিয়ার আচরন ভালো লাগে। খুশি হয়ে সোনিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে,"ফ্রেন্ডস্?"

সোনিয়া ইশিকার হাতের ওপর হাত চেপে ধরে বলে,"হ্যাঁ, কেন নয়?"

"ওয়াও, সোনিয়া ইশিকা বন্ধু।" কোমল এই প্রথম লজ্জ্বা ভুলে চেঁচিয়ে ওঠে। কারন এটা ছিল অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপার।

"সোনিয়া ইশিকা বন্ধু। অবাক হচ্ছো না। আমিও অবাক হয়েছিলাম যখন প্রথম শুনেছিলাম। কিন্তু....." রাহুল জানালার ধারে একজন ইংরেজ মহিলার দিকে তাকিয়ে থেকে বলছিল। যার কোলে ছিল একটি ফুটফুটে বাচ্ছা। মহিলা তার বাচ্ছাকে নিয়ে খেলা করছিল ফুলের বাগানে। আর বাচ্ছাটির বাবা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল মা-সন্তানের আজগুবি খেলা। বিভিন্ন দেশের নারী পুরুষদের স্বভাব, আচার আচরন, চেহারা বিভিন্ন ধরনের হয়। কিন্তু মা সবদেশেই সমান। মা-সন্তানের সম্পর্ককে টলাতে পারেনি সৃষ্টিকর্তা।

রাহুলও চেয়েছিল ওর প্রেয়সি ঠিক ওই মহিলার মতো তার বাচ্ছাকে নিয়ে খেলা করবে। আর রাহুল তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করবে সেই দৃশ্য। কিন্তু....

"কিন্তু...তারপর কী হল?" রাহুল সারার উত্*সুকতা কমাতে পারেনি। বরং বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুনে। তাই প্রশ্নের পর প্রশ্ন ছুঁড়ে যাচ্ছে সারা।

[/HIDE]
 
[HIDE]রাহুল আবার একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলো,"তারপর ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হতে লাগল। বন্ধুত্ব আবার আগের অবস্থায় ফিরে এলো। কলেজে হইহুল্লোড়, হাঁসাহাঁসি চলতো। ইশিকার সাথে আমার ঘনিষ্টতা আরও বাড়তে লাগল। কিন্তু তখনও 'আই লাভ ইউ' কথাটা বলতে পারিনি। তবে অজিত আমার সাথে সরাসরি কথা বলতো না।"

তারপর এলো সেই রাত...

সেদিন রাতে রাহুল বিছানায় শুয়ে শুয়ে ইশিকার কথাই ভাবছিল।

"কাল ১৪ই ফেব্রুরারী, কালই বলে দেবো ইশিকাকে আমার মনের কথা। কালকের মতো সুযোগ আর পাবো না। এই সুযোগটা হাতছাড়া করলে চলবে না। ইশিকাকে ছাড়া বাঁচা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু....আমি কি ইশিকাকে সত্যিই ভালোবাসি? আমার আর সোনিয়ার মধ্যে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনার কথা এখনও ইশিকাকে বলা হয়নি। কাল বলে দেবো সব কথা। কিন্তু বলে দিলে যদি ইশিকা আমাকে ভুল বোঝে? যদি আমাকে ছেড়ে চলে যায়? তাহলে আমি বাঁচবো কী নিয়? কিন্তু যদি না বলি, আর অন্যকোনো ভাবে জানতে পেরে যায় তাহলে আরো বড়ো কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। কীভাবো বলবো আমি এইসব কথা? মুখে তো বলতে পারবো না। হ্যাঁ লিখে জানাতে পারি। তারপর না হয় বোঝাবো ওকে, আর সোনিয়াকে বলবো ওকে সাহায্য করতে। সোনিয়ার সাথে কথা বলতে হবে। তার আগে লিখে ফেলি চিঠিটা...."

পরের দিন, ১৪ই ফেব্রুয়ারী, ক্লাস খালি পড়েছিল। শুধু রাহুল আর সোনিয়ার ক্লাসে বলে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল।

"সোনিয়া তোমাকে আমার একটা সাহায্য করতে হবে।" সোনিয়ার হাত ধরে রাহুল বলে।

"হ্যাঁ, অবস্যই সাহায্য করবো। তুমি এত চিন্ত করছো কেন? আমি বুঝতে পারছি, তুমি ইশিকাকে ভালোবাসো এটা আমি আগে থেকেই জানি।" সোনিয়া রাহুলকে আশ্বাস দিয়ে বলে।

"হ্যাঁ, আমি ওকে পাগলের মতো ভালোবাসি। ওকে ছাড়া আমার বাঁচা সম্ভব নয়। জানি না কখন ভালোবাসা হয়ে গেল, সব সময় ওর কথাই ভাবি, ওর চিন্তাতেই ডুবে থাকি। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে, তোমার আর আমার মধ্যে যে ভুলটা ঘটে গিয়েছিল সেটা যদি ইশিকা কোনো ভাবে জানতে পারে তাহলে বড়ো সমস্য হয়ে দাঁড়াবে।"

সোনিয়া"ওটা নিয়ে কিছু ভেবেছো?"

"হুঁ, আমি একটা চিঠি লিখেছি। কিন্তু তুমি যদি ওকে বোঝাও যে সেরকম কিছু হয়নি, ভুলবসত ঘটে গিয়েছিল, তাহলে হয়তো ইশিকা সহজে মেনে নেবে ব্যাপারটা।" বলে রাহুল পকেটে হাত গলিয়ে চিঠিটা বের করে।



সোনিয়া,"হ্যাঁ, অবস্যই আমি ওকে বুঝিয়ে বলবো যে যা কিছু হয়েছে সেটা ভুলবসত ঘটে গেছে। ওতে তোমার কোনো দোষ নেই, সব দোষ আমার।" বলে চিঠিটা রাহুলের হাত থেকে নিয়ে নেয়।

এদিকে ইশিকা সিঁড়ি চড়তে চড়তে ক্লাসের দিকেই যাচ্ছিল। ও খবর পেয়েছিলত যে রাহুল ক্লাসের মধ্যে আছে। তাই ও মনের মধ্যে একটা উত্তেজনা নিয়ে ক্লাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। ও আজ বেশ খুশি ছিল আর বেশ উত্তেজিতও ছিল, সেটা ওর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল।

এদিকে ক্লাসের মধ্যে... "রাহুল তুমি কিচ্ছু চিন্তা কোরো না। কিন্তু কীভাবে প্রপোস করবে ওকে কিছু ঠিক করেছ?

"জানিনা কীভাবে প্রোপোজ করবো। তবে তোমাকে অমার এই সাহায্যটা করে দিতেই হবে। ওকে বুঝিয়ে বলতে হবে তোমাকে।"

"হ্যাঁ হ্যাঁ, চিন্তা করার কিছু নেই।"

"ধন্যবাদ সোনিয়া..." বলে রাহুল সোনিয়ার গলা জড়িয়ে ধরে।

সবকিছু দেখা বা শোনার বদলে ইশিকা শুধু শেষের দৃশ্যটা দেখে ফেলে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। নিজের চোখের ওপর বিশ্বাস হয় না ইশিকার। মুখ যে খুশির ভাবটা বিচরন করছিল একটু আগে, সেটা এক ঝটকায় বদলে যায় দুঃখে। ক্লাসে না ঢুকে সোজা ওখান থেকে চলে যায়।

ক্লাসে রাহুল আর সোনিয়া নিজেদের গলা ছাড়িয়ে আলাদা হয়ে যায়। রাহুল পকেট থেকে মোবাইল বের করে ইশিকার ফোনে কল করে। রিং বাজে...

রাহুল-"হ্যালো ইশিকা? কোথায় আছো?

-"আমি কোমল বলছি। ইশিকার ফোন আমার কাছে। আমি নিচে মাঠে দাঁড়িয়ে আছি। আর ইশিকা তো তোমার কাছেই গেছে।

-"আচ্ছা, কিন্তু এখনও তো এলো না। কতক্ষন আগে গেছে?"

-"পাঁচ মিনিটের মতো হবে। কিন্তু এতক্ষনে তো পৌঁছে যাওয়ার কথা।"

রাহুল ক্লাস থেকে বারান্দার চারিদিকে খুঁজে দেখে। কিন্তু ইশিকাকে দেখতে পায় না।

রাহুল-"কই এখানে তো দেখতে পেলাম না। ওকি আমার কাছেই আসবে বলেছিল?"

-"ওতো আমাকে বলে গিয়েছিল যে... আরে.."

-"কী হল?"

-"ওতো এখানেই ফিরে আসছে।"

-"আচ্ছা, তোমরা ওখানেই থাকো। আমি এখুনি আসছি। আর ওকে এখনই কিছু বলবে না.." একটু হেঁসে বলে।

কোমল-"ঠিক আছে"বলে ফোন কেটে দেয়।



রাহুল সোনিয়াকে আরও একবার সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে পড়ে। সোনিয়া একটা অদ্ভুত হাঁসি দিয়ে রাহুলের পিছনে পিছনে এগিয়ে যায়। রাহুল মাঠের দিকে যেতে যেতে দেখে কোমল আর ইশিকা দাঁড়িয়ে রয়েছে। ইশিকা ওর দিকে পিছন করে দাঁড়িয়ে আছে। রাহুল চলতে চলতে ওদের কাছে পৌঁছে যায়। রাহুলের হৃতপিন্ড অজানা এক আশঙ্কায় ধুকপুক করছিল।

"ইশি" খুব আস্তে করে ডেকে রাহুল পিছন থেকে ইশিকার হাতের উপর হাত রাখে। কিন্তু ইশিকা কোনো উত্তর দেয় না। রাহুলের মন শঙ্কায় ভরে ওঠে। কিন্তু ও ভাবে হয়তো ইশিকাও ওর মতো ঘাবড়ে রয়েছে। তাই রাহুল ইশিকার হাত ধরে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। তারপর যেই ইশিকার দিকে তাকায়, রাহুল মুখে লেগে থাকা হাঁসি এক মুহুর্তে মিলিয়ে যায়।

ইশিকার চোখ লাল হয়ে গিয়েছিল আর চোখ থেকে টপ টপ করে গড়িয়ে পড়ছিল ফোঁটা ফোঁটা অশ্রুকণা।

"কী হয়েছে ইশি? তুমি কাঁদছো কেন?" রাহুল একটু ভয় পেয়ে গিয়ে বলে। কিন্তু ইশিকা কোনো উত্তর দেয় না।

রাহুল আবার জিজ্ঞেস করে। কিন্তু আবারও চুপ করে থাকে ইশিকা, শুধু রাহুলের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা দেখতে থাকে।

এবার রাহুল কোমলকে জিজ্ঞেস করে। কোমলও কোনো কথা বলে না। ওর চোখ দিয়েও জল গড়াচ্ছিল।

রাহুল বুঝতে পারে না কেন এরকম করছে। হাতে দিয়ে ইশিকার কাঁধ চেপে ধরে জোরে জোরে নাড়াতে নাড়াতে বলে,"প্লিজ ইশি বলো আমাকে, তোমরা কাঁধছো কেন?"

"ছাড়ো আমাকে.." ইশিকা রেগে গিয়ে তেড়ে আসে। রাহুলের কিছু মাথায় ঢোকে না। ইশিকা এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় রাহুলের কাছ থেকে।

"কী হল ইশিকা?"

ইশিকা কোনো জবাব দেয় না। চুপচাপ ওখান থেকে চলে যেতে যায়। কিন্তু রাহুল ওর হাত ধরে নেয়।

"তোমার কী হয়েছে আমাকে বলো ইশিকা। তুমি এরকম করছো কেন?" রাহুল আবার শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে।

ইশিকা এবার রেগে বলে,"তুমি জান না? জানবে কীকরে, ভালোবাসায় ডুবে গিয়েছিলে যে..."ভালোবাসায় ডুবে গিয়েছিলাম! এসব কী বলছো ইশি? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।" রাহুল অবাক হয়ে বলে।

"বুঝতে পারছো না! যেন কতো অবুঝ, কিচ্ছূটি জানে না, দেখেছো কোমল....এতক্ষন ক্লাসের মধ্যে



"বুঝতে পারছো না! যেন কতো অবুঝ, কিচ্ছূটি জানে না, দেখেছো কোমল....এতক্ষন ক্লাসের মধ্যে সোনিয়ার সাথে যখন ওইসব করছিলে, তখন অবুঝ হওনি.."ইশিকা আবার চেঁচিয়ে ওঠে।

"সোনিয়ার সাথে? ওহ.." রাহুল হো হো করে হেঁসে ফেলে।"তো এই কথা, আমি ওকে একটা কাজ করতে দিয়েছিলাম আর ও করবে বলেছিল। তাই আমি ওরকম করেছিলাম, বন্ধুর মতো।"

ইশিকা কিছুটা অবাক হয়। রাহুলের চোখের দিকে তাকিয়ে বোঝবার চেষ্টা করে রাহুল ঠিক বলছে কিনা।

"তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না? আচ্ছা দাঁড়াও, সোনিয়ার মুখ থেকেই শোনো তাহলে..." বলে রাহুল পিছন ঘুরে দেখে সোনিয়া ওর পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। "দেখো সোনিয়া এখুনি সোনিয়া এখুনি তোমার ভুল ভেঙে দেবে.." সোনিয়ার দিকে তাকিয়ে "সোনিয়া তুমি ওকে বলে দাও তো যে আমি তোমার গলা কেন জড়িয়ে ধরেছিলাম। ও শুধু শুধু আমাদের সন্দেহ করছে।"

"ইশিকা ও আমাকে জড়িয়ে ধরেছে কারন.... ও আমাকে খুব ভালোবাসে, আর আমিও ওকে খুব ভালোবাসি।" রাহুল চমকে ওঠে সোনিয়ার কথায়। মুখের হাঁসি উধাও হয়ে যায়। মাথা শুন্য হয়ে যায়। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না রাহুল।

"সোনিয়া এই সময় দয়া করে মজা কোরো না প্লিস.." রাহুল রেগে গিয়ে বলে।

"মজা! কেন রাহুল? তুমি ইশিকাকে বলতে ভয় কেন পাচ্ছ যে আমরা একে অপর ভালোবাসি আর খুব সুখে আছি।" সোনিয়া জোর দিয়ে বলে।

রাহুল ইশিকার দিকে তাকায়। ওর চোখ থেকে অশ্রুধারা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে নিচে।

রাহুল ইশিকার দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে বলে,"ইশি বিশ্বাস করো আমাকে, আমি তোমাকেই ভালোবাসি, I LOVE YOU , আর শুধু আজকে থেকে নয়, যেদিন তোমার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল, সেদিনই আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম।

ইশিকা,"ব্যাস রাহুল, আর কত মিথ্যে কথা বলবে?" অশ্রুসিক্ত গলায় বলে।

"বিশ্বাস করো ইশি। আমি তোমাকে মিথ্যে বলছি না। আমি তোমার জন্য একটা চিঠিও লিখেছিলাম। যাতে সব সত্যি লেখা ছিল। এই দ্যাখো..." বলে রাহুল পকেটের ভিতর হাত ঢোকায়। কিন্তু চিঠিটা পায় না। তখন ওর মনে পড়ে যে ক্লাসে ও চিঠিটা সোনিয়াকে দিয়েছিল। "সোনিয়া আমার চিঠিটা আমাকে ফেরত দাও।" রাহুল ধমকিয়ে বলে সোনিয়াকে।

"কোন চিঠিটা রাহুল? তুমি তো আমাকে অনেক দিন হলো কোনো লাভ লেটার দাওনি।" বলে বাঁকা হাঁসি হাঁসে।

রাহুল প্রচন্ড রেগে যায় সোনিয়ার উপর। মনে হয় যেন গলা টিপে শেষ করে দেয় সোনিয়াকে। কিন্তু এখন মাথা গরম করার সময় নয়। ইশিকাকে যেকরে হোক বোঝাতে হবে।

রাহুল,"আমার কথা শোনো ইশি..."

[/HIDE]
 
[HIDE]সোনিয়া,"না ইশিকা, আমি সব সত্যি বলে দেব তোমাকে। যেদিন রাহুল আমাকে পড়া বোঝাতে আমাদের বাড়ি গিয়েছিল, সেদিন আমরা দুজনে খুব মজা করেছিলাম। ওহ্ সেদিনের কথা মনে করে আমার..." বলতে বলতে নির্লজ্জের মতো হাঁসতে থাকে।

সোনিয়ার কথা শুনে ইশিকার মুখের উপর হাত চলে যায়। ঘৃণা ধরে যায় রাহুলের ওপর। চোখ দিয়ে অবিরাম গড়িয়ে চলেছে অশ্রুধারা। চোখ ফুলে লাল টকটকে হয়ে গিয়েছিল। একই অবস্থা কোমলেরও।

ওফ গড সোনিয়া, হোয়াই সি ডিড দ্যাট?" মেয়েটি এবার আবেগের বসে নিজের মাতৃভাষাতেই চেঁচিয়ে উঠল।

"জানি না, কেন ও আমার সাথে এরকম করেছিল।" রাহুলের চোখের পাতা ভিজে গিয়েছিল। ও এখনও জানালা দিয়ে বাইরের দিকেই তাকিয়ে ছিল।

"তারপর কী হল?" মেয়েটি সেই অদ্ভুত বাংলাতেই বললো।

"তারপর যা হল, তাতে আমার জীবনটা তছনছ হয়ে গেল।" রাহুল একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার বলতে শুরু করল।

তারপর রাহুল ইশিকার কাঁধ চেপে ধরে বলে,"ইশি আমার কথা শোনো, এরকম কিছুই হয়নি। সোনিয়া..."

ইশিকা রাহুলের কথা শেষ করতে দেয় না। ঝটকা মেরে কাঁধ থেকে রাহুলের হাত সরিয়ে দিয়ে বলে,"সাট আপ রাহুল, যাস্ট সাটাপ.."

কোমলের দিকে তাকিয়ে ওর কাঁধ ধরে জোরে জোরে নাড়াতে নাড়াতে বলে,"নে দেখে নে কোমল, দেখে নে, কী বলেছিলিস তুই যে তোরা মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকেরা গরীব হতে পারিস, কিন্তু তোদের ভালোবাসায় কোনো খাদ নেই। এটাই বলেছিলিস না তুই? দেখে নে, তোরা কীরকম ভালোবাসতে পারিস দেখে নে নিজের চোখে.." বলে আবার কোমলের কাঁধ ধরে জোরে জোরে ঝাঁকাতে থাকে।

পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা রাহুলের মাথা নত হয়ে ছিল। কিন্তু যেভাবে হোক ওর ভালোবাসাকে আবার ফিরিয়ে আনতেই হবে। এই ভেবে রাহুল আবার ইশিকার কাঁধ ধরে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নিয়ে বলে,"ইশিকা আমার কথা তো শোনো, একবার অন্তত..."

ইশিকা,"রাহুল আমার হাত ছাড়ো।" চেঁচিয়ে বলে আর নিজের হাতটাকে ঝটকাতে থাকে রাহুলের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু রাহুল এবারে জোরে চেপে ধরে থাকে ইশিকার হাত।

ইশিকা জোরে জোরে চেঁচাতে চেঁচাতে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু রাহুলের বলিষ্ঠ হাতের সাথে পেরে ওঠে না। রাহুল বারবার শান্ত করার চেষ্টা করে ইশিকাকে। কিন্তু তারপরেও ইশিকা শান্ত হয় না।



"ইশিকা.." রাহুল এবার জোরে চেঁচিয়ে উঠে ইশিকাকে নিজের আরও কাছে টেনে নেয়। এবারে ইশিকা একটু শান্ত হয় আর রাহুলের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।

রাহুল,"আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি ইশিকা, আই লাভ ইউ ওনলি.." খুব শান্ত গলায় বলে,"আমি তোমাকে... শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখ, কী দেখতে পাও? আমি তোমাকে সব বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এভাবে নয়। সোনিয়া সত্যি বলেছে। কিন্তু ওর সব কথা সত্যি নয়। প্লিজ আমার কথা শোনো.."

ইশিকা,"আমি যদি কোনো ছেলের সাথে এরকম করে আসতাম, আর তোমাকে বোঝাতাম যে আমি কিছু করিনি, তুমি মেনে নিতে? দুঃখ হতো না তোমার? তুমি আমাকে ঠকিয়েছে রাহুল, তুমি আমাকে ঠকিয়েছ.." শেষের কথা গুলো কান্নার রেসে জড়িয়ে যায়।

রাহুল কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। প্রতিবাদ করার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে রাহুল।

ইশিকা,"তোমরা সব ছেলেরাই সমান... ইউ অল মেন আর সেম.."বলতে বলতে বলতে ফুঁপিয়ে কাঁদে ওঠে।

রাহুল চাইলেও কিছু করতে পারছিল না। আবার প্রেয়সিকে নিজের চোখের সামনে কাঁদতেও দেখতে পারছিল না। রাহুল ইশিকা নিজের কাছে টেনে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এসে হাত দিয়ে ইশিকার চোখের জল মুছিয়ে দেয়।

রাহুল,"তুমি কেঁদো না ইশি, প্লিজ। আমি সরি, আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি যা খুশি শাস্তি দাও আমাকে, আমি মাথা পেতে নেব। কিন্তু দয়া করে আর কেঁদো না। আমি তোমার কান্না সহ্য করতে পারবো না। আই লাভ ইউ ইশি। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। প্লিজ একবার আমাকে বিশ্বাস করো, প্লিজ..." রাহুল শুধু এটুকুই বলতে পারে।

"ঠাসস্" ইশিকা ঠাস করে একটা চড় মারে রাহুলের গালে। "বিশ্বাস! মানে বোঝো তুমি কথাটার?"

রাহুল,"আরও মারো ইশিকা, যতখুশি মারো। কিন্তু আমাকে ভুল বুঝো না, আমি সত্যি বলছি...

দেখো আজ তোমাকে পড়াবার জন্য এই রিংটাও এনেছিলাম।" বলে রাহুল জ্যাকেটের পকেট থেকে একটা ছোট্টো রিং বের করে।

ইশিকা রিংটার দিকে তাকায়। তারপর রাহুলের মুখের দিকে। রাহুলের জলভরা চোখের দিকে তাকিয়ে যেন দেখবার চেষ্টা করে রাহুল কি ঠিক বলছে? ইশিকা পরিষ্কার দেখতে পায় রাহুলের চোখ বলছে... একবার ক্ষমা করে দাও ইশিকা। সত্যি আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।

ইশিকার চোখেও অশ্রুকণা ভরে উঠেছিল। ওর বিশ্বাস যে ভেঙে গিয়েছিল। রাহুলের চোখের দিকে তাকিয়ে ইশিকার মনে হয় রাহুল হয়তো ভুল করে করে ফেলেছে, ওকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। কিন্তু ইশিকা জোরে জোরে মাথা নাড়াতে থাকে। যেন বলতে চাইছে,"করতে পারছিনা বিশ্বাস রাহুল। আমাকে ক্ষমা করে দিও"



মনের বিপরীতে ইশিকরা মুখ বলে ওঠে,"না.." বলে রাহুলের হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করে ইশিকা পিছনে সরে যায়। কোমলের হাত চেপে ধরে ওকে টানতে টানতে নিয়ে চলে যায় রাহুলের থেকে দূরে।

"আমার সামনে আর কোনোদিনও আসবে না রাহুল। তোমাকে আমার দিব্যি রইল।" দূর থেকে ভেসে আসা ইশিকার কন্ঠ রাহুলের কানে বেজে ওঠে।

রাহুল অসহায়ের মতো দেখতে থাকে ইশিকার চলে যাওয়া। আটকাবার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে রাহুল। শুধু দুচোখ ভরা জল নিয়ে তাকিয়ে থাকে ইশিকার চলে যাওয়ার দিকে।

তবুও শেষবারের মতো চেষ্টা করে রাহুল ইশিকাকে আটকাবার। কিন্তু মাঝখানে অজিত এসে ওকে ধাক্কা দেয়। যাতে ধুলোয় লুটিয়ে পড়ে নিস্তেজ রাহুল, রিং হাত থেকে ছিকটে পড়ে যায় অন্যত্র। রাহুল ধুলোয় লুটিয়ে পড়েও দেখতে থাকে ইশিকার চলে যাওয়া।

"ইশিকা.." জোরে চেঁচিয়ে উঠে আটকাবার চেষ্টা করে ইশিকাকে আটকাবার। কিন্তু আওয়াজ বের হয় না গলা থেকে। ভলকে ভলকে অশ্রু বেড়িয়ে আসে চোখ থেকে। রাহুলের চোখ পড়ে মাটিতে পরে থাকা রিংটার ওপর। চকচক করছে সূর্যের আলো পড়ে। ধীরে ধীরে রিংটাও অদৃশ্য হয়ে আসে রাহুলের চোখের জলে।...

রাহুলের কথা শুনতে শুনতে সারার চোখে জল চলে এসেছিল, ফর্সা নাক লাল হয়ে গিয়েছিল। ইউরোপীয়দের কাঁদতে সাধারনত খুব কমই দেখা যায়।

রাহুলের হাতের মুঠোর মধ্যে এখনও সেই রিংটা ছিল। যেটা একদিন ইশিকাকে পড়াতে চেয়েছিল,কিন্তু পারেনি। রিংটা রাহুল সবসময় নিজের কাছে রাখে, রিংটা বুকে চেপে ধরে অনুভব করে ইশিকার উপস্থিতি। রাহুলের চোখের পাতাও কিছুটা ভিজে গিয়েছিল।

"ওই একটি ঘটনা আমার একমাত্র ভালোবাসাকে কেড়ে নিয়েছিল আমার কাছ থেকে, যেটা আমি মন থেকে বেসেছিলাম।" রাহুল ভারি গলায় বলে,"বোধ হয় ওতে আমারও ভুল ছিল। আর সেই ভুলের সাজা আমি এইভাবে পেয়েছি।"বলে রাহুল বাঁ হাতের তালু দিয়ে দুচোখ রগরে মুছে নেয়।

"তারপর কী হল ইশিকার?" সারা আবার উত্*সুক হয়ে জিজ্ঞেস করে।

রাহুল একটুখানি চুপ করে থেকে তারপর বলে," তারপর ইশিকার সাথে আমার আর কোনোদিন দেখা হয়নি। ওই ঘটনার পর ইশিকা অন্য কলেজে সিফ্ট করেছিল। প্রথম প্রথম পাপ বোধ আমাকে জ্বালিয়ে খেত। রাতের পর রাত কেটে যেত নির্ঘুম। কলেজে চুপচাপ যেতাম আর ক্লাস করে বাড়ি ফিরে আসতাম। তারপর কলেজ পাশ করলাম। হঠাত্*ই এখানে একটা চাকরির ইন্টার ভিউয়ের সুযোগ পেয়ে গেলাম। সুযোগটা হাতছাড়া করলাম না। দেশে থাকতে আমার আর ভালো লাগছিল না। চাকরিও পেয়ে গেলাম। তারপরেই তোমার সাথে সাক্ষাত হল। তারপরের কথা তো তুমি জানোই। মাঝে মাঝে দেখতে ইচ্ছে করে বাবা মাকে, আত্মিয় স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের। কিন্তু দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে না।"

"আই এম সরি রাহুল.." সারা রাহুলের কাধের উপর হাত রেখে বলে।



রাহুল জানালা থেকে মুখ সরিয়ে সারার দিকে তাকিয়ে মুখে একটু হাঁসি ফুটিয়ে বলে,"সরি বলবার দরকার নেই, আমার পাপের শাস্তি ভগবান আমাকে দিয়েছেন।"

সারা প্রচন্ড আবেগের বশে রাহুলের গলা জরিয়ে ধরে বলে,"ইশিকা যদি জানতে পারতো যে তুমি ওকে কতোটা ভালোবাসো।"

রাহুল নীরব থাকে। সারার আলিঙ্গনে আবদ্ধ থেকেই আবার জানালার বাইরে তাকায়। কখন যে সূর্যিমামা ডুবতে বসেছে ওদের কোনো খেয়াল ছিল না। নাম না জানা পাখিগুলো দল বেঁধে কিচির মিচির ঝগড়া করতে করতে বাসায় ফিরে যাচ্ছে। শীতের ছোঁয়ায় আকাশচুম্বি গাছগুলো আবার গুটিয়ে নিয়েছে নিজেদেরকে। যেন অপেক্ষা করছে নতুন ভোরের, নতুন আলোর। রাস্তায় জ্বলে উঠেছে উজ্জ্বল ইলেক্ট্রিকের বাতি। রাস্তার দুধারে সারি সারি দোকানগুলোতে, তৈরি হচ্ছে রকমারি গরম গরম খাবার। কাজ সেরে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার তাড়ায় লোকারন্যে জ্যাম হয়ে রয়েছে রাস্তাঘাট। যেন সবাই বাড়ি গিয়ে আত্মিয়-স্বজন, ভাই-বোন, মা-বাবা, প্রেয়সিকে কাছে টেনে নিয়ে জুড়িয়ে নিতে চায় সারাদিনের ধকল। সব মিলিয়ে একটা আনন্দ, দুঃখ, শোক, খুশি মিশ্রিত কলরবে ভরে উঠেছে সারা পরিবেশ।

রাহুল একমনে এইগুলোই দেখে যাচ্ছিল। হঠাং খেয়াল হল সন্ধে হয়ে গেছে। ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখল সাড়ে পাঁচটা বাজে। এতটা সময় পার হয়ে গেছে ওদের খেয়ালই ছিল না, আর এও খেয়াল ছিল না যে ওরা সকাল থেকে কিছুই খায়নি।

খাবার কথা মনে পড়তেই পেটে ছুঁচোয় ডন মারতে শুরু করে। রাহুল সারার আলিঙ্গনমুক্ত হয়ে বাইরে বেড়িয়ে হোটেল থেকে কিছু গরম গরম খাবার কিনে নিয়ে এসে খেয়ে নেয় দুজনে মিলে।

রাত্রে রাহুলের ঘুম আসে না। বার বার সপ্নের মধ্যে ভেসে ওঠে ইশিকার মুখ। বিছানায় শুয়ে ছটফট করতে থাকে সারারাত। অবশেষে ভোর রাতে চোখ বোজে।

"ক্রিং ক্রিং ..ক্রিং ক্রিং.." টেলিফোনে বাজার শব্দে রাহুলের ঘুম ভাঙে। রাহুল চোখ রগড়াতে রগড়াতে ফোন তোলে।

-হ্যালো, রাহুল স্পিকিং..

-ইয়েস, ওকে..

-ইজ ইট রিয়েলি ইম্প্রটেন্ট?

-ওকে, আই উইল গো..

রিসিভার নামিয়ে রেখে রাহুল কিছুক্ষন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর টেবিলের উপর রাখা ইশিকার ফটোটার দিকে তাকায়, যেটা ট্রিপে গিয়ে তুলেছিল। খুব সুন্দর দেখতে লাগছিল তখন ইশিকাকে।[/HIDE]
 

Users who are viewing this thread

Back
Top