What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected আমার প্রিয় কবিতাগুলো............ (2 Viewers)

Hashnat mahi

Member
Joined
Feb 27, 2019
Threads
1
Messages
101
Credits
3,377
[HASH=1339]#পাহাড়[/HASH] চূড়ায়:-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়#


অনেকদিন থেকেই আমার একটা পাহাড় কেনার শখ।
কিন্তু পাহাড় কে বিক্রি করে তা জানি না।
যদি তার দেখা পেতাম,
দামের জন্য আটকাতো না।
আমার নিজস্ব একটা নদী আছে,
সেটা দিয়ে দিতাম পাহাড়টার বদলে।
কে না জানে, পাহাড়ের চেয়ে নদীর দামই বেশী।
পাহাড় স্থানু, নদী বহমান।
তবু আমি নদীর বদলে পাহাড়টাই
কিনতাম।
কারণ, আমি ঠকতে চাই।
নদীটাও অবশ্য কিনেছিলামি একটা দ্বীপের বদলে।
ছেলেবেলায় আমার বেশ ছোট্টোখাট্টো,
ছিমছাম একটা দ্বীপ ছিল।
সেখানে অসংখ্য প্রজাপতি।
শৈশবে দ্বীপটি ছিল আমার বড় প্রিয়।
আমার যৌবনে দ্বীপটি আমার
কাছে মাপে ছোট লাগলো। প্রবহমান ছিপছিপে তন্বী নদীটি বেশ পছন্দ হল আমার।
বন্ধুরা বললো, ঐটুকু
একটা দ্বীপের বিনিময়ে এতবড়
একটা নদী পেয়েছিস?
খুব জিতেছিস তো মাইরি!
তখন জয়ের আনন্দে আমি বিহ্বল হতাম।
তখন সত্যিই আমি ভালবাসতাম নদীটিকে।
নদী আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর দিত।
যেমন, বলো তো, আজ
সন্ধেবেলা বৃষ্টি হবে কিনা?
সে বলতো, আজ এখানে দক্ষিণ গরম হাওয়া।
শুধু একটি ছোট্ট দ্বীপে বৃষ্টি,
সে কী প্রবল বৃষ্টি, যেন একটা উৎসব!
আমি সেই দ্বীপে আর যেতে পারি না,
সে জানতো! সবাই জানে।
শৈশবে আর ফেরা যায় না।
এখন আমি একটা পাহাড় কিনতে চাই।
সেই পাহাড়ের পায়ের
কাছে থাকবে গহন অরণ্য, আমি সেই অরণ্য পার হয়ে যাব, তারপর শুধু রুক্ষ
কঠিন পাহাড়।
একেবারে চূড়ায়, মাথার
খুব কাছে আকাশ, নিচে বিপুলা পৃথিবী,
চরাচরে তীব্র নির্জনতা।
আমার কষ্ঠস্বর সেখানে কেউ শুনতে পাবে না।
আমি ঈশ্বর মানি না, তিনি আমার মাথার কাছে ঝুঁকে দাঁড়াবেন না।
আমি শুধু দশ দিককে উদ্দেশ্য করে বলবো,
প্রত্যেক মানুষই অহঙ্কারী, এখানে আমি একা-
এখানে আমার কোন অহঙ্কার নেই।
এখানে জয়ী হবার বদলে ক্ষমা চাইতে ভালো লাগে।
হে দশ দিক, আমি কোন দোষ করিনি।
আমাকে ক্ষমা করো।
 
[HASH=1343]#হওয়া[/HASH] না হওয়ারগলপ
সে চেয়েছিলো
একটি সত্যিকারের প্রেমের কবিতা লিখতে।
তার তো
একটাই জীবন। মানুষের জীবনে প্রেমের চেয়ে নির্মল
পিপাসার জল আর কী থাকতে পারে?
সে আরও অনুভব করতো
প্রেমই কবিতার প্রাণ, তার শব্দ, তার ধ্বনি –
তার মন্ত্র।
কিন্তু তবু
তার কবিতা, একটার পর একটা তার নিজের লেখা কবিতা
কি প্রেম কি জল
এমনকি পায়ের নিচের শক্ত মাটি পর্যন্ত খুঁজে পেলো না।
কবিতার জন্য তার দিবস-রজনীর জাগরণ
যা ছিলো তার জীবনের কঠিনতম সত্য
প্রেম নয় – তাকে বারবার অপ্রেমের দারুণ আগুনে ছুঁড়ে দিয়ে
বলতোঃ ‘এখানেই তোর পরিশুদ্ধি। এই যে আগুন, মানুষের পৃথিবী
আগে তার খিদে মেটা। তোর সমস্ত কবিতা, তোদের সমস্ত কবিতা
সে তার ক্ষুধার্ত জিভ দিয়ে চেটে খাবে। তুই মুর্খ,
জীবনের পাঠ এখান থেকেই শুরু কর।‘
দেখতে দেখতে তার কৈশোর গেল, যৌবন গেল,
এখন তার মাথার সব চুল সাদা, হাতের পাঁচ আঙুলে মাঘের শীত!
মাঝেমধ্যেই রাতদুপুরে ঘুমুতে না-পারার যন্ত্রণায়
সে চিৎকার করে উঠতোঃ
‘আমি একটি প্রেমের কবিতা লিখতে চাই, মাত্র একটি প্রেমের কবিতা।‘
আর তখনই শোনা যেত তার মাথার ভিতর, তার বুকের মধ্যে
সেই কঠিন তিরস্কারঃ
‘বুড়ো হয়ে গেলি, এখনও স্বপ্ন দেখছিস!
দ্যাখ! ভাল করে দ্যাখ! তোর চারদিকে
এখন নতুন ধানের হলুদ হেমন্তের পৃথিবী। কিন্তু তারপর?
তারপর কী দেখছিস? – ধান কাটা হয়ে গেছে, চাষীরা ঘরে ফিরে যাচ্ছে…
কিন্তু মাঝখানে ও কে? ওরা কারা?’
দেখতে দেখতে তার পাকা ধানের হলুদ পৃথিবী খুনখারাপি লাল,
লাল থেকে আগুন! আবার আগুন! ‘আগুন! তুমি আমাকে
সারা জীবন ধরে পুড়িয়েছ। কিন্তু আমি তো
শুদ্ধ হলাম না। শুধু পুড়ে গেলাম। আমি সারা জীবন
শুধু হাজার হাজার মানুষের দীর্ঘশ্বাস, তাদের সর্বনাশ
আমার জটায় বেঁধে সরস্বতী-নদীর জলে ঝাঁপ দিতে গেলাম,
কোথাও তাকে খুঁজে পেলাম না। তুমি আমাকে কী জীবন শেখাও, আগুন? –
এই কি মানুষের জীবন!’
তার একটিমাত্র প্রেমের কবিতা? … ‘কবিতা! তুমি এখন
তিন ভুবনের কোন্ অতলান্ত অপ্রেমের মধ্যে ঘুমিয়ে আছ?
ঘুমাও! তুমি ঘুমাও! আর, আমি জেগে থাকি
আর এক আরম্ভের জন্য… মৃত্যুর মুখোমুখি… আমি জেগে থাকি…
 
[HASH=1347]#মিলিত[/HASH] মৃত্যু:-নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী#
বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখ দ্বিতীয় বিদ্যায়।
বরং বিক্ষত হও প্রশ্নের পাথরে।
বরং বুদ্ধির নখে শান দাও, প্রতিবাদ করো।
অন্তত আর যাই করো, সমস্ত কথায়
অনায়াসে সম্মতি দিও না।
কেননা, সমস্ত কথা যারা অনায়াসে মেনে নেয়,
তারা আর কিছুই করে না,
তারা আত্মবিনাশের পথ
পরিস্কার করে।

প্রসঙ্গত, শুভেন্দুর কথা বলা যাক।
শুভেন্দু এবং সুধা কায়মনোবাক্যে এক হতে গিয়েছিল।
তারা বেঁচে নেই।
অথবা মৃন্ময় পাকড়াশি।
মৃন্ময় এবং মায়া নিজেদের মধ্যে কোনো বিভেদ রাখেনি।
তারা বেঁচে নেই।
চিন্তায় একান্নবর্তী হতে গিয়ে কেউই বাঁচে না।

যে যার আপন রঙ্গে বেঁচে থাকা ভাল, এই জেনে-
মিলিত মৃত্যুর থেকে বেঁচে থাকা ভাল, এই জেনে-
তা হলে দ্বিমত হওঁ। আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।
তা হলে বিক্ষত হও তর্কের পাথরে।
তা হলে শানিত করো বুদ্ধির নখর।
প্রতিবাদ করো।

ঐ দ্যাখো কয়েকটি অতিবাদী স্থির
অভিন্নকল্পনাবুদ্ধি যুবক-যুবতী হেঁটে যায়।
পরস্পরের সব ইচ্ছায় সহজে ওরা দিয়েছে সম্মতি।
ওরা আর তাকাবে না ফিরে!
ওরা একমত হবে, ওরা একমত হবে, ওরা
একমত হতে-হতে কুতুবের সিঁড়ি
বেয়ে উর্ধ্বে উঠে যাবে, লাফ দেবে শূন্যের শরীরে।
 
[HASH=1351]#লাশগুলো[/HASH] আবার দাঁড়াক:-রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ#
বৃষ্টি হলে মাটি কাঁপে, লাশগুলো আবার দাঁড়াতে চায়।
হাত বাঁধা, চক্ষু বাঁধা, বেয়ানেটে ছিন্নভিন্ন দেহ-
______________লাশগুলো আবার দাঁড়াতে চায়।
আপন খুলির দিকে চেয়ে থাকে অন্ধকার চোখ,
আপন হাড়ের দিকে চেয়ে থাকে বিষন্ন সকেট্।
বৃষ্টি হলে মাটি কাঁপে,
বৃষ্টির সুগন্ধ পেয়ে জেগে ওঠে লাশের কাঠামো।
পরিচিত শেয়ালেরা সারারাত হল্লা কোরে ফেরে,
উপরে শকুন ডাকে, শকুনের এখনো সুদিন।
মাংশের ঢেকুর তুলে নেড়িকুত্তা বেঘোরে ঘুমায়-
মাটি কাঁপে, লাশগুলো আবার দাঁড়াতে চায়।
মাটি কাঁপে…
কবরের মাটি ফুঁড়ে অসনাক্ত লাশের কোরাস
সহসা খামচে ধরে চাঁদের চিবুক--
আমাকে সনাক্ত করো হে যৌবন, যুদ্ধের সন্তান
আমাকে সনাক্ত করো স্বদেশের দগ্ধ কৃষ্ণচুড়া।
এদেশের গঞ্জে গ্রামে শকুনের এখনো সুদিন-
মাটি কাঁপে, বৃষ্টি হোক, লাশগুলো আবার দাঁড়াক।
(১৮.১০.৮৩ কবি জসীম উদ্দীন হল ঢাকা)
 
[HASH=1353]#বৃষ্টি[/HASH] চিহ্নিত ভালবাসা
আবুল হাসান#

মনে আছে একবার বৃষ্টি নেমেছিল?

একবার ডাউন ট্রেনের মতো বৃষ্টি এসে থেমেছিল
আমাদের ইস্টিশনে সারাদিন জল ডাকাতের মতো
উৎপাত শুরু করে দিয়েছিল তারা;
ছোটো খাটো রাজনীতিকের মতো পাড়ায় পাড়ায়
জুড়ে দিয়েছিল অথই শ্লোগান

তবু কেউ আমাদের কাদা ভেঙে যাইনি মিটিং এ
থিয়েটার পন্ড হলো, এ বৃষ্টিতে সভা আর
তাসের আড্ডার লোক ফিরে এল ঘরে
ব্যবসার হলো ক্ষতি দারুণ দুর্দশা

সারাদিন অমুক নিপাত যাক অমুক জিন্দাবাদ
অমুকের ধ্বংস চাই বলে আর হাবিজাবি হলোনা পাড়াটা
ভদ্রশান্ত কেবল কয়েকটি গাছ বেফাঁস নারীর মতো
চুল ঝাড়ানো আঙিনায় হঠাৎ বাতাসে আর
পাশের বাড়িতে কোন হারমোনিয়ামে শুধু উঠতি এক আগ্রহী গায়িকা
স্বরচিত মেঘমালা গাইলো তিনবার।
আর কটি চা’খোর মানুষ এল
রেনকোট গায়ে চেপে চায়ের দোকানে,
তাদের স্বভাবসিদ্ধ গলা থেকে শোনা গেলো :
কী করি বলুন দেখি, দাঁত পড়ে যাচ্ছে তবু মাইনেটা বাড়ছে না
ডাক্তারের কাছে যাই তবু শুধু বাড়ছেই ক্রমাগত বাড়ছেই
হৃদরোগ, চোখের অসুখ

একজন বেরসিক তার মধ্যে বলে উঠলো:
বৃষ্টি মানে বুঝলেন তো অযথাই যানবাহন, পয়সা খরচ।
একজন বাতের রোগী গলা কাশলো
:ওহে ছোকরা, নুন চায়ে এক টুকরো বেশী লেবু দিও।
তাদের বিভিন্ন সব জীবনের খুঁটিনাটি দুঃখবোধ সমস্যায় তবু
সেদিন বৃষ্টিতে কিছু আসে যায়নি আমাদের
কেননা সেদিন সারাদিন বৃষ্টি পড়েছিল
সারাদিন আকাশের অন্ধকার বর্ষণের সানুনয় অনুরোধে
আমাদের পাশাপাশি শুয়ে থাকতে হয়েছিল সারাদিন
আমাদের হৃদয়ে অক্ষরভরা উপন্যাস পড়তে হয়েছিল।
 
[HASH=1355]#তুমি[/HASH] বলেছিলে:-
শামসুর রহমান#

দাউ দাউ পুড়ে যাচ্ছে নতুন বাজার।
পুড়ছে দোকান-পাট, কাঠ,
লোহা-লক্কড়ের স্তূপ, মসজিদ এবং মন্দির।
দাউ দাউ পুড়ে যাচ্ছে নতুন বাজার।

বিষম পুড়ছে চতুর্দিকে ঘর-বাড়ি।
পুড়ছে টিয়ের খাঁচা, রবীন্দ্র রচনাবলি, মিষ্টান্ন ভাণ্ডার,
মানচিত্র, পুরনো দলিল।
মৌচাকে আগুন দিলে যেমন সশব্দে
সাধের আশ্রয় ত্যাগী হয়
মৌমাছির ঝাঁক,
তেমনি সবাই
পালাচ্ছে শহর ছেড়ে দিগ্বিদিক। নবজাতককে
বুকে নিয়ে উদ্ভ্রান্ত জননী
বনপোড়া হরিণীর মত যাচ্ছে ছুটে।
অদূরে গুলির শব্দ, রাস্তা চষে জঙ্গী জীপ। আর্ত
শব্দ সবখানে। আমাদের দু’জনের
মুখে খরতাপ। আলিঙ্গনে থরো থরো
তুমি বলেছিলে,
’আমাকে বাঁচাও এই বর্বর আগুন থেকে, আমাকে বাঁচাও,
আমাকে লুকিয়ে ফেলো চোখের পাতায়
বুকের অতলে কিংবা একান্ত পাঁজরে
আমাকে নিমেষে শুষে নাও
চুম্বনে চুম্বনে।’

দাউ দাউ পুড়ে যাচ্ছে নতুন বাজার,
আমাদের চৌদিকে আগুন,
গুলির ইস্পাতী শিলাবৃষ্টি অবিরাম।
তুমি বলেছিলে
আমাকে বাঁচাও।
অসহায় আমি তাও বলতে পারিনি
 
[HASH=1357]#বলতে[/HASH] বলতে নেই:-
শুভ দাসগুপ্ত#

সব যায়গায় সব কথা বলতে নেই-
পরস্ত্রীর সৌন্দর্যের কথা,
আর অফিসের সঠিক মাইনের কথা ,
নিজের বৌ কে বলতে নেই ।

হিন্দুদের সামনে গোমাংসের কথা বলতে নেই,
রেলের কর্তাদের সামনে;
টাইম টেবল এর কথা বলতে নেই ।
ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যপারে-
শিক্ষককে বলতে নেই,
আর পুলিশকে সততার কথা বলতে নেই
যখনই যা ইচ্ছে হলো বলে ফেলতে নেই ।

ইচ্ছে আপনার করবে
জ্বিভটা উসখুস করবে
গলার ভেতরটা কুটকুট করে উঠবে
তবু বলতে নেই ।

আপনি ভাববেন পরিকল্পনার পাঠশালায়
সব শালাই ভাওতা মারছে
ভাবতে নিশ্চয় পারেন
কিন্তু বলতে নেই ।
আপনি ভাববেন হাসপাতাল, থানা , সরকারি দপ্তরগুলো ক্রমশ ফোঁড়ে,
আর দালালদের মৃগয়া ক্ষেত্র হয়ে উঠছে ।
ভাবতে সারাদিন ধরে পারেন কিন্তু বলতে নেই।

এমনি বাজারে ছেড়ে দিলে-
কুঁড়ি টাকা রোজের মুটেগিরিও জুটত না যে বেটার!
রাজনীতির সোনার কাঠির ছোঁয়ায়
সে বেটা গাড়ি-বাড়ি করে জনগনের মাথায় চড়ে ব্রেকড্যান্স করছে।
সেসব ভেবে আপনি তেলে- বেগুনে জ্বলে চটে উঠতে পারেন-
কিন্তু বলতে নেই ।

প্রাক্তন মন্ত্রি জেলে ঢুকছেন।
পর্দার মেগা স্টারেরা কোটি কোটি টাকার ট্যাক্স ফাঁকি দিচ্ছে ,
আর টিভিতে মেরা দেশ মহান বলে হাসছে ।
বাংলার সিনেমা বেদের মেয়ের পাল্লায় পড়ে
সিঁদুর নিও না মুছে বলে আর্তনাদ করছে ।
একশ টাকার ধাউশ পুঁজো সংখ্যার উপন্যাসে
কাহিনির চেয়ে সায়া আর ব্লাউজ এর কথা বেশি থাকছে ।

বুদ্ধিমান পরিচালক হাঁড়-হাভাতের জীবন নিয়ে সিনেমা তৈরি করে-
ফরেনে পুরস্কার হাতাচ্ছেন ,
আর পাঁচতারা হোটেলে বসে ফুর্তি মারছেন ।

খবরের কাগজে খুন, ডাকাতি আর ধর্ষণের সিরিয়াল ছাপছে-
টিভিতে মুর ঝ্যাটার বিজ্ঞাপনে উলঙ্গ মেয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে ।
সব কিছুতে আপনি বিরক্ত হতে পারেন
কিন্তু বলতে নেই ।

কারখানার পর কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে-
শ্রমিকেরা বাটি হাতে ভিক্ষে করছে ,গলায় দড়ি দিচ্ছে ।
আর ইউনিয়নের দাদারা রান্না ঘরে টাইলস বসাচ্ছেন
সাংসদ , বিধায়করা প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ খেলছে
দেখে শুনে আপনার বাপের নাম খগেন হয়ে যেতে পারে
কিন্তু বলতে নেই ।
বলেছেন কি ফেঁসেছেন
লাল বলবে এ বেটা নীলের দালাল প্রতিক্রিয়াশীল আর
নীল বলবে ও বেটা লালের দালাল দেশদ্রোহী।
মাঝখান থেকে আপনি নাকাল
আপনার ধোপা নাপিত বন্ধ হয়ে যেতে পারে
বলেছেন কি ফেঁসেছেন-
প্যাঁচে পড়ুন তখন বুঝবেন।

বাড়িতে চোর ঢুকে সব সাফ করে দিক
থানা বলবে বাড়িতে এত জিনিস রাখেন কেন !!
দিনকাল বোঝেন না খালি বড় বড় কতা ।
সুতরাং বলতে নেই ।

বোবার শত্রু নেই বোবা হয়ে থাকুন!
চোখে ছানি পড়লে কাটাবেন না-
দৃষ্টি যত ঝাপসা
বেঁচে থাকার আনন্দ ততো বেশি ।
একটা কথা সাফ বলে দেই
যে বেটা এখনও জন্মায় নি আর যে বেটা টেঁশে গেছে
এরা ছাড়া কোন মিয়াই সুখে নেই ।

আপনি ভ্যাবলা না নেতা না অভিনেতা!!
না ঘরের না ঘাটের,
আপনার মশাই চুপ করে থাকাই শ্রেয়-
চুপ করে মটকা মেরে পরে থাকুন না
আর তো ক'টা দিন।
মনে মনে গান করুন-
ঐ মহা সিন্দুর ওপার থেকে কি সঙ্গীত ভেসে আসে ।
 
প্রেমিক হতে গেলে – রুদ্র গোস্বামী

ওই যে ছেলেটাকে দেখছ, পছন্দ মতো ফুল ফুটল না বলে
মাটি থেকে উপড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলো গাছটাকে ?
ছেলেটার ভীষণ জেদ , ও কখনও প্রেমিক হতে পারবে না ।
এই তো সেদিন কাঁচের জানালা দিয়ে রোদ ঢুকছিল বলে
কাঁচওয়ালার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে কী বকা !
কাঁচওয়ালাতো থ’ !
সাদা কাঁচে রোদ ঢুকবে না এমন আবার হয় !
ছেলেটার খুব জেদ, ও শুধু দেখে আর চেনে
বুঝতে জানে না ।
প্রেমিক হতে গেলে ঋতু বুঝতে হয়
যেমন কোন ঋতুটার বুক ভরতি বিষ
কোন ঋতুটা ভীষণ একা একা, কোন ঋতুটা প্লাবন
কোন ঋতুতে খুব কৃষ্ণচূড়া ফোটে
ছেলেটা ঋতুই জানে না
ও শুধু দেখে আর চেনে, বুঝতে জানে না ।
ছেলেটা কখনো প্রেমিক হতে পারবে না
প্রেমিক হতে গেলে গাছ হতে হয় ।
ছায়ার মতো শান্ত হতে হয় ।
বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হয় ।
জেদি মানুষেরা কখনও গাছ হতে পছন্দ করে না ।
তারা শুধু আকাশ হতে চায় ।
 
খুব কাছে এসো না – রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

খুব কাছে এসো না কোন দিন
যতটা কাছে এলে কাছে আসা বলে লোকে
এ চোখ থেকে ঐ চোখের কাছে থাকা
এক পা বাড়ানো থেকে অন্য পায়ের সাথে চলা
কিংবা ধরো রেল লাইনের পাশাপাশি শুয়ে
অবিরাম বয়ে চলা ।
যে কাছাকাছির মাঝে বিন্দু খানেক দূরত্বও আছে
মেঘের মেয়ে অতো কাছে এসোনা কোন দিন
দিব্যি দিলাম মেঘের বাড়ীর, আকাশ কিংবা আলোর সারির।

তার চেয়ে বরং দূরেই থেকো
যেমন দূরে থাকে ছোঁয়া, থেকে স্পর্শ
রোদ্দুরের বু্‌ক, থেকে উত্তাপ
শীতলতা, থেকে উষ্ণতা
প্রেমে্‌র, খুব গভীর ম্যাপে যেমন লুকিয়ে থাকে ভালোবাসা
তেমন দূরেত্বেই থেকে যেও-
এক ইঞ্চিতেও কভু বলতে পারবে না কেউ
কতটা কাছা কাছি এসেছিলে বলে দূরত্বের পরিমাপ দিতে পারেনি পৃথিবী।
 
মানুষের বুকে এতো দীর্ঘশ্বাস – মহাদেব সাহা

কেউ জানেনা একেকটি মানুষ বুকের মধ্যে কী গভীর দীর্ঘশ্বাস
নিয়ে বেড়ায়-
কোনো বিষন্ন ক্যাসেটেও এতো বেদনার সংগ্রহ নেই আর,
এই বুকের মধ্যে দীর্ঘশ্বাসের পর
দীর্ঘশ্বাস যেন একখানি অন্তহীন
প্রগাঢ় এপিক!
পাতায় পাতায় চোখের জল
সেখানে লিপিবদ্ধ
আর মনোবেদনা সেই এপিকের ট্রাজিক মলাট;
মানুষের বুকে এতো দীর্ঘশ্বাস,
এতো দীর্ঘশ্বাস, কে জানতো!

দীর্ঘশ্বাসভরা এই বুকের চেয়ে শীতপ্রধান বিপন্ন অঞ্চল আর
কোথাও নেই,
এমন হলুদ, ধূসর আর তুষারবৃত!
একেকটি মানুষ বুকের মধ্যে কী গভীর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বেড়ায়,
কেউ জানে না।

হঠাৎ একসঙ্গে অসংখ্য দুঃখ
যদি কখনো কেঁদে ওঠে কিংবা যদি
প্রাচীন শিলালিপি থেকে সব শোকের গান
সশব্দে বেজে যায়,
তাহলে যেমন মধ্যাহ্নের আকাশ
সহসা দুঃখে ম্লান হয়ে যাবে
গোলাপ হবে কৃষ্ণবর্ণ,
তার চেয়েও বিষন্নতা নেমে আসবে
মানুষের বুক থেকে এই দীর্ঘশ্বাস
যদি বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ে।
তেমন সম্ভাবনা আছে বলেই
মানুষ বুকের মধ্যে দীর্ঘশ্বাস চেপে রাখে
তার চোখে নিয়তই জল ঝরে তবু
দেখা যায় না;

মানুষের ভেতর কতো যে দীর্ঘশ্বাস,
জমাট বেঁধে আছে
কতো যে ক্রন্দন, পাতা ঝরার শব্দ, মৃত্যুসংবাদ
মানুষের বুকের মধ্যে ব্যথিত ব্যাকুল ইতিহাস আর আহত সভ্যতা
মেঘের মতো ঘনীভূত
হতে হতে একেকটি মর্মান্তিক
দীর্ঘশ্বাস হয়ে আছে
মানুষ তাকে বয়ে বয়ে দগ্ধ বেঁচে থাকে।

একেকটি মানুষ বুকের মধ্যে কী গভীর দীর্ঘশ্বাস বয়ে বেড়ায়,
কেউ জানে না।
একেকটি মানুষ নিজের
মধ্যে কীভাবে নিজেই মরে যায়, হায়, কেউ জানে না!
 

Users who are viewing this thread

Back
Top