What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

আকুপ্রেশার করে লিভারকে ভালো রাখুন (1 Viewer)

z5b6VCD.jpg


আমাদের বর্তমান সমাজে খাদ্যে একধরনের মোডিফিকেশন চলছে, যা আমাদের পূ্র্বপুরুষদের ছিল না। আমরা এখন ফাস্ট ফুড কালচারে অভ্যস্ত; সেই সঙ্গে খাদ্যে নানা মডিফায়েড খাদ্য, প্যাকেটজাত খাদ্যে নানান রাসায়নিকের উপস্থিতির কারণে আমাদের যে সমস্যাটা প্রথমে শরীরে স্থান করে নিচ্ছে, তা হলো লিভারজনিত নানা সমস্যা। লিভারের একটি সাধারণ সমস্যা হলো ফ্যাটি লিভার, যা সঠিক চিকিৎসা না করলে মারণব্যাধিতে রূপ নেয়।

মানুষের রক্তের মধ্যে কোয়াগুলেশন ফ্যাক্টর হিসেবে আছে অসংখ্য কেমিক্যালস, যা রক্তকে সঞ্চালন অব্যাহত রাখে। সব কটি কোয়াগুলেশন ফ্যাক্টর শুধু লিভার থেকে তৈরি হয়। রক্তের সঞ্চালন এবং জমাট বাঁধার ক্ষমতা একমাত্র লিভারের কার্যক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল। আমরা যা কিছু খাই, সেই খাবারগুলো পরিপাকতন্ত্রে প্রাথমিক হজমের জন্য পিত্তরস অপরিহার্য। পিত্তরস ছাড়া খাদ্যবস্তু হজম সম্ভব নয়। এই পিত্তরস শুধু লিভার কোষ তৈরি করে।

হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের পর ফ্যাটি লিভারই এখন এ দেশে ক্রনিক লিভার ডিজিজের প্রধান কারণ। পাশাপাশি ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত রোগীদের হার্ট ডিজিজ বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও অনেক বেশি থাকে। তবে আমাদের দেশে অ্যাকিউট হেপাটাইটিসের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস ই, এ এবং বি ভাইরাস। এর মধ্যে পানি ও খাদ্যবাহিত আর তৃতীয়টি ছড়ায় মূলত রক্তের মাধ্যমে। হেপাটাইটিস এ ভাইরাস প্রধানত শিশুদের জন্ডিসের কারণ, তবে যেকোনো বয়সের মানুষই হেপাটাইটিস ই ও বি ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।

লিভার ঠিক রাখার প্রধানত শর্ত হচ্ছে বিশুদ্ধ খাদ্য ও পানি গ্রহণ, সেই সঙ্গে নিয়মিত আকুপ্রেশার করা হলে লিভার ভালো থাকবে, সেই সঙ্গে লিভারে আক্রান্ত প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো সমস্যা থাকলে সেটাও সেরে যাবে। এই প্রচীন চিকিৎসা পদ্ধতি আকুপ্রেশারচর্চা নিজে নিজের চিকিৎসা করে জটিল সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।

e3gcSKK.jpg


লিভার ঠিক রাখতে ও ফ্যাটি লিভার ঠিক করতে এই পয়েন্টগুলোতে আকুপ্রেশার করতে হবে।

আমাদের দেশে লিভারের যে রোগগুলো হয়ে থাকে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলো:

• ফ্যাটি লিভার
• ভাইরাল হেপাটাইটিস (যা জন্ডিস নামে পরিচিত)
• লিভার সিরোসিস
• লিভার ক্যানসার
• লিভারের ফোড়া
• পিত্তথলির বা পিত্তনালির রোগ
• লিভারের জন্মগত ও মেটাবলিক রোগ ইত্যাদি

এই সব রোগ হলেও আজ আমরা শুধু ফ্যাটি লিভারের জন্য কীভাবে আকুপ্রেশার করব এবং সুস্থ মানুষ কী করে লিভারকে রোগমুক্ত রাখতে পারব, সেটাই জানানো হচ্ছে।

যেভাবে বুঝবেন ফ্যাটি লিভার হচ্ছে

• হজমের সমস্যা ও অ্যাসিডিটি সমস্যা হতে পারে
• লিভারে চর্বি জমলে স্বাভাবিক কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়
• খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায়, খাবারে অরুচি হয়
• দ্রুত ওজন কমা
• বমি বমি ভাব, বমিও হওয়া, খুব দুর্বল লাগা ও কোনো কাজ করতে ইচ্ছা করে না
• কখনো কখনো বিলিরুবিন বেড়ে যায়
• ফ্যাটি লিভারের সব থেকে বড় লক্ষণ স্বাভাবিকের থেকে বেশি কোমরের মাপ বেড়ে যায় তথা ভুঁড়ি বেড়ে যায়
• ফ্যাটি লিভার হলে মাথাব্যথা, মন খারাপ ও ডিপ্রেশন, আচমকা কাঁপুনিসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়

ফ্যাটি লিভারের জন্য আকুপ্রেশার কীভাবে করবেন

ফ্যাটি লিভারের আকুপ্রেশার শুরু করতে হলে প্রথমে যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে তা হলো যে কারণে আপনি আক্রান্ত হয়েছেন, সেই ছিদ্রটা প্রথমে বন্ধ করতে হবে। অর্থাৎ খাদ্যে শৃঙ্খলা আনতে হবে। লিভারের বিভিন্ন রোগের খাবারের ব্যাপারে বিভিন্ন রকম বাছ-বিচার আর সতর্ক থাকা, এসব রোগীকে ভালো থাকতে যেমন অনেকখানি সাহায্য করে তেমনি অজ্ঞতা বা ভুল ধারণার কারণে অনেক সময়েই লিভারের রোগীরা বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন। এ ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান খুবই জরুরি।

PpMfUXI.jpg


ডান হাতের এই পয়েন্ট লিভারের, এখানে চাপ দিন ১০০ বার করে।

আকুপ্রেশার শুরু করার প্রথম ধাপটি হচ্ছে দুই হাতের তালুতে ঘষতে হবে দুই মিনিট, এমনভাবে ঘষতে হবে যেন দুই হাতের তালু গরম হয়ে যায়।

তারপর ডান হাতে কড়ে আঙুলের নিচের রেখা যে পয়েন্টটি দেখানো হয়েছে, তাতে প্রথম পয়েন্ট ১০০ বার করে চাপ দিন, চাপ এমনভাবে দেবেন যেন খুব বেশি জোরেও না আবার আস্তেও না। সঠিক স্থানে চাপ দিলে হাতের পয়েন্টে মৃদু ব্যথা অনুভূত হবে। তারপর আরেকটু নিচের পয়েন্ট চাপ দিন, এটা আমাদের গলব্লাডারের পয়েন্ট, গলব্লাডার লিভারের পরম বন্ধু, তাই লিভার সমস্যায় গলব্লাডারও ভালো রাখতে হবে।

7jEEUE5.jpg


লিভার ঠিক রাখার জন্য গলব্লাডার ঠিক করতে হলে এখানে ১০০ চাপ দিন।

এরপরে এর নিচে অ্যাপেন্ডিক্স পয়েন্টে ও ঠিক একইভাবে চাপ দিতে হবে। প্রতিটি পয়েন্টে ১০০ করে চাপ দিয়ে এবার স্টমাক পয়েন্ট লম্বালম্বিভাবে বুড়ো আঙুলের নিচের রেখা থেকে কবজির মাঝ বরাবর স্থানে চাপ দিতে হবে, এখানে লম্বালম্বিভাবে তিনটা স্থানে চাপ দিতে হবে, যাতে ওপর–নিচ থেকে মাঝেও একটি চাপ পড়ে। খেয়াল করবেন যে এখান আপনি তীব্র ব্যথা অনুভব করতে পারেন। যদি ব্যথা পান তাহলে বুঝতে হবে আপনার হজমে গন্ডগোল আছে।

এরপর আপনি বাঁ হাতের স্টমাক পয়েন্টে (প্রথম ছবিতে দেওয়া পয়েন্ট) চাপ দিন; এখানেও ১০০ বার করে চাপ দিন, এখানে চাপ শেষ হলেই কবজির নিচে পয়েন্ট দুই হাতেই একশবার করে করে চাপ দিন।

7XioEBD.jpg


পেটের সমস্যা থাকলে এখানে চাপ দিলে পেটের সমস্যা কমবে।

মনে রাখতে হবে সব কটি পয়েন্টেই ১০০ করে চাপ দিতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেই আকুপ্রেশার করা উত্তম। তারপর রাতে শোয়ার আগে রাতের খাবারের অন্তত এক ঘণ্টা পর আকুপ্রেশার করা উত্তম। সপ্তাহে ছয় দিন নিয়মিত আকুপ্রেশার করবেন, সপ্তাহে এক দিন বিরতি দেবেন। এভাবে এক মাস আকুপ্রেশার করেই দেখুন, এতে আপনি কী কী উপকার পান। নিয়মিত ও সঠিক উপায়ে আকুপ্রেশার করা গেলে আপনি এই ফ্যাটি লিভারসংক্রান্ত সমস্যায় উপকার পাবেন।

t41wI3Q.jpg


লিম্ফ গ্রন্থি আমাদের শরীরে জমে থাকা বর্জ্য বের করতে সাহায্য করে, এটাই লিম্ফ পয়েন্ট।

ফ্যাটি লিভারে কী খাবেন, কী খাবেন না

ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসার প্রধান দিকটাই হচ্ছে লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনা। নিয়মিত হাঁটা, ব্যায়াম করা এবং পাশাপাশি খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া। শুধু যে রেড মিট যেমন খাসি বা গরুর মাংস, ডিমের কুসুম, চিংড়ি মাছ, পনির, মাখন, বিরিয়ানি ইত্যাদি হাই-ফ্যাট খাবার পরিহার করতে হবে তা–ই নয়, পাশাপাশি অতিরিক্ত শর্করা যেমন ভাতের ব্যাপারেও খুব সাবধান থাকতে হবে।

কারণ, অতিরিক্ত শর্করাযুক্ত খাবার খেলে তা লিভারে গিয়ে চর্বি হিসেবেই জমা হতে থাকে। একইভাবে সাবধান থাকতে হবে বাইরের খাবার, প্যাকেট খাবার, ফাস্ট ফুড এবং জাঙ্ক ফুডের ব্যাপারেও। পাশ্চাত্যের মতো ফাস্ট ফুড কালচারের ব্যাপক প্রসারের ফলে এ দেশেও এখন বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে ফ্যাটি লিভারের প্রাদুর্ভাব খুব বেশি, শিশুদের অবিসিটি বেড়ে গেছে।

* লেখক: আলমগীর আলম | খাদ্য, পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top