What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

অভিশপ্ত ডায়েরী (Completed) (3 Viewers)

[HIDE]পর্ব ১৩- সাইদুলের ভুলঃ [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE]

ভেতরে ঢুকে দরজাটা প্রচণ্ড জোরে বন্ধ করে চোখ বন্ধ করে হাঁপাতে থাকে সাইদুল। দরজার ওপর ই ওর পিঠটা স্পর্শ করে আছে, আর কানে রাজুর সেই কথাগুলো এমনভাবে বিদ্ধ হচ্ছে যেন রাজু ঠিক দরজার ই পেছনে দাঁড়িয়ে ওকে ক্রমাগত বলে চলেছে “সাইদুল সসসসস পাঁচিলের ওপাশ থেকে দেখছিলাম, শালা এতদিন সত্যি ই বুঝিনি, এতো মা বোনকেও ছাপিয়ে যাবেরে একদম বুনো মুরগি, এর টেস্ট এ আলাদা” সাইদুল খেয়াল ও করেনি প্যান্টের ওপর দিয়ে ওর লিঙ্গ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে, কোনও রকমে নিজের নিম্নদেশে হাত দিয়ে স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করে। কিন্তু পারেনা। কারন ওর নজর সোজা ভেজানো দরজার ফাঁকের দিকে। সাদা মসৃণ পিঠটা তখন বিন্দু বিন্দু জলে চিকচিক করছে। কোমরে একটা লালচে সায়া আছে বটে, কিন্তু কোমল ছোট নিতম্বগুলো যথেষ্ট দৃশ্যমান। সাইদুলের মনে তখন রূপসার এই অর্ধনগ্ন অবয়ব নয়, রাজুর সেই পাঁচিলের ওপর ঝুঁকে ভেতরের দিকে দেখাই বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে। সাইদুল রাজুকে চেনে, রাজু কিছুতেই হার মানেনা, তাহলে কি ও রাজুর কাছে রূপসাকে হারাবে। রাজু এখন কোথায়? ওকি এখনো পাঁচিলের ওপর ঝুঁকে রূপসার শরীরের প্রতিটি খাঁজকে নিজের মনের মতন করে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে এবং তার ই সমান্তরালে কি রাজুর শক্ত অতিকায় লিঙ্গটা ওপর নীচে ওঠানামা করে চলেছে? একের পর এক প্রশ্ন সাইদুলের হৃদয়কে জর্জরিত করে তোলে।
সাইদুল আর পারেনা, কিছুতেই নিজের প্রিয়তমাকে রাজুর নোংরা নজরের সামনে আসতে ও দেবেনা। প্রায় দৌড়ে গিয়ে ভেজানো দরজাটা ঠেলে খুলে দেয় সাইদুল। রূপসার পরনে তখন শুধুই একটা লালচে সায়া, দুহাতে নিজের বুককে চাপা দিয়ে পেছন ঘুরেই থাকে রূপসা। সাইদুল আর নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারেনা, দ্রুত ওর পেছনে গিয়ে গা ঘেঁসে দাঁড়ায়। “অসভ্য কোথাকার! আমি কি এতই সুন্দরী যে এরকমভাবে আমাকে পাওয়ার জন্য...” রূপসাকে নিজের কথা সম্পূর্ণ করতে দেয়না সাইদুল। পেছন থেকেই ওর কোমরটা জড়িয়ে ধরে ওকে শুন্যে তুলে ধরে। “এই এই কি করছ, এই এখন কোনও অসভ্যতামি নয়, আমাদের বিয়ে হয়নি এখনো” সাইদুলের মুখ দিয়ে কোনও উত্তর আসেনা, ওকে ওই অবস্থায় ই জড়িয়ে ধরে সাইদুল ভেতরের ঘরে নিয়ে আসে। পেছনদিকে হাত দিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দেয়। লজ্জায় রূপসার দুই কান লাল হয়ে ওঠে, মাথা নিচু করে সাইদুলের দিকে পেছন করে দাঁড়িয়ে থাকে রূপসা।
সাইদুলঃ (রূপসার কাঁধে নিজের হাতটা রেখে) রূপসা তুমি সত্যি ই আমায় ভালোবাসতো? আমায় কোনোদিন ঠকাবে না তো?
রূপসার মুখ দিয়ে কোনও উত্তর আসেনা, শুধুই দুহাতে নিজের বুক ঢাকা দিয়ে কাঁপতে থাকে। সাইদুল নিজের দুহাত দিয়ে রূপসার কাঁধে একটা মোচড় দেয়, প্রায় ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে রূপসা সাইদুলের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায়। দুই হাতের ফাঁকদিয়ে রূপসার বুকের সম্পূর্ণ আকারটা এতক্ষনে বোঝা যায়। তিলোত্তমার গড়ন কিছুটা মালতীর মত হলেও রূপসা অন্তত স্তনের আকারে তিলোত্তমাকে টেক্কা দিয়েছে। একদম মালতীর ই মত, ঠিক গলার কিছুটা নিচ থেকেই বুকের খাঁজ শুরু হয়েছে। সাইদুল জানে মায়ের ই মত ওর ও বোঁটাগুলো বৃত্তাকার পরিধিতে অনেকটা প্রশস্ত। প্রচণ্ড জোরে রূপসার দুহাত চেপে ধরে সাইদুল। মুখটা ওপর দিকে তুলে এতক্ষনে রূপসা বলে ওঠে
রূপসাঃ এরকম কেন করছে সাইদুল। তুমি তো এরকম আমার সাথে কোনোদিন করনি। আমার তোমাকে খুব ভয় করছে। আমি তো তোমার হাতে নিজেকে অর্পণ করতেই এসেছি।
সাইদুলঃ কাল রাতে তুমি আমাকে রাগানোর জন্য বারবার রাজুর নামটা বলছিলে না? আমি সব ই বুঝি সোনা সব ই বুঝি। উম্মম আহ উফ কি নরম তোমার শরীরটা।
রূপসার দুহাত দুদিকে প্রশস্ত করে সাইদুল রূপসাকে নিজের বুকে টেনে নেয়। নরম ও সূচালো দুইস্তন সাইদুলের তপ্ত পুরুষবক্ষে গিয়ে আঘাত করে। রূপসার শরীরে ধিকিধিকি করে আগুন জ্বলতে শুরু করে। প্রচণ্ড জোরে নিজের দুই হাত দিয়ে সাইদুলের পিঠটা জড়িয়ে ধরে রুপ্সা। লজ্জা নিবারন ও পুরুষ শরীরের আগুন এ নিজের ঠাণ্ডা শরীরকে উত্তপ্ত করে নেওয়া কোনটা যে রূপসার উদ্দেশ্য ছিল তা স্বয়ং ভগবান ও বুঝবেন না।
সাইদুলঃ এবার বল কে বেশি বলবান আমি না রাজু। কই বল (প্রচন্ড জোরে রূপসাকে নিজের শরীরের ভেতর চাপ দিয়ে) কি হোল বল, রাজু কি এতো জোরে তোমায় ভালবাসতে পারবে? কি হোল উত্তর দাও।
খিলখিল করে হেঁসে ওঠে রূপসা “রাজু, রাজু, রাজু। ওই বেশি সুন্দর। তুমি একটা পচা ছেলে। মোটেও তুমি পারবেনা। রাজুরাই জানে কি করে মেয়েদের...”
রূপসাকে আবার নিজের কথা শেষ করতে দেয়না সাইদুল। কোমরের কাছে হাত দিয়ে ওপরের দিকে তোলে, এতক্ষন রূপসার মাথাটা রাজুর বুকের উচ্চতায় ছিল, কিন্তু এখন দুজন সমানে সমানে। সাইদুলের তপ্ত নিঃশ্বাস রূপসার মুখের ওপর পড়তে থাকে, ইচ্ছে করেই মুখটা সরিয়ে নিতে চেষ্টা করে রূপসা। কিন্তু সাইদুল এখন বাঘ, বাঘ না বলে রাজুর চেয়েও হিংস্র বাঘ বলাই ভালো। রূপসাও কম বুদ্ধিমান নয়। খিলখিল করে হেঁসে উঠে বলে “আমি জানি তুমি রাজুকে হিংসা কর” সাইদুল আর পারেনা, নিজের মুখটা দিয়ে রূপসার কপাল থেকে থুতনি অবধি সব জায়গায় পাগলের মত চুমু খেতে থাকে। অস্থিরতায় রূপসার দুই কান লাল হয়ে যায়, উগ্র যৌনতার হাতছানিতে চোখদুটো লাল হয়ে যায়।
“উফ সাইদুল, তুমি পারবেনা, তুমি কখনো রাজু হতে পারবে না। ওর জন্য এখনো পাড়ার মেয়েরা পাগল”
সাইদুল নিজের মুখটা সরিয়ে একবার রূপসার দিকে তাকায়। আবার রূপসা খিলখিল করে হেঁসে ওঠে। সাইদুলের উত্তেজনা এতো বেড়ে গেছে যে ও মুখটা সম্পূর্ণভাবে হ্যাঁ না করে নিঃশ্বাস ও নিতে পারছেনা। ওর এই অবস্থা দেখে রূপসা প্রচণ্ড জোরে হেঁসে ওঠে। পেছন থেকে প্রতিবিম্বর মত ভেসে আসে রাজুরে সেই কথাগুলো “চলনা আজ দুজন মিলে...” প্রায় পাগলের মত রূপসার শরীরটা খাটের ওপর ছুঁড়ে ফেলে সাইদুল। হিংস্র বাঘের মত ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর ওপর। দুহাত দিয়ে রূপসার মুখটা চেপে ধরে নিজের ঠোঁটদুটোর মধ্যে রূপসার পাতলা নিচের রসালো ঠোঁটটা গুঁজে দেয়। গায়ের সমস্ত জোর একত্রিত করে রূপসার মুখ থেকে সমস্ত রস শুষে নেয়। “উম উম আম আম” করে রূপসার গোঙানি শুরু হয়।
“উহ আহ আহ ওমা, তুমি যতই চেষ্টা কর তুমি পারবে না। উম অম উউ আ পারবে না ওর মত পারবে না”
“তুমি দেখো রূপসা, আজকের পর তুমি শুধু আমাকে একবার বিয়ে করার জন্য কাঁদতে থাকবে”
“তাই নাকি? আমিও রূপসা। আমাকে পেতে গেলে তোমায় লড়তে হবে। আমি কখনো কাদিনা সাইদুল”
আজকের দিনটা যেন সাইদুলের কাছে পরাজয়ের দিন। এতো চেষ্টা করছে, নিজের অন্তর থেকে হিংস্র বাঘটা বার করে নিয়ে আসছে তাও ওর বাঘিনী কিছুতেই হার মানছে না। রূপসার কোমরটা ধরে নিচের দিকে টান মারে সাইদুল। রূপসার অর্ধেকটা শরীর সাইদুলের তলদেশের ভেতরে ঢুকে যায়। এবার রূপসা সত্যি ই অসহায়, শুধু মাত্র দুহাত দিয়ে ও সাইদুলের সাথে লড়তে পারবে না। রূপসার দুহাত দুপাশে জোরে চিপে রেখে সাইদুল ওর কপাল থেকে চুমু খাওয়া শুরু করে। নিজের জিভটা চুল আর কপালের মাঝের অংশে ভালো করে বোলাতে শুরু করে।
“এই না জিভ নয়। আমার ঘেন্না লাগে। জিভ নয় সাইদুল”
সাইদুল বোঝে ওর পৌরুষের কাছে হার মেনেছে রূপসা। নিজের জিভটা প্রায় ঝাড়ুর মত কপাল থেকে চেটে চেটে দুই কাজলহরিন নয়নের দিকে নিয়ে আসতে শুরু করে। রূপসা প্রচণ্ড জোরে নিজের মাথাটা একবার এদিক একবার ওদিক করে। সাইদুল বোঝে ওর বাঘিনী এখনো হার মানেনি তাই আরও জোরে ওর দুই হাতকে টেনে দুপাশে করে দেয়। রূপসা জানে শরীরের জোরে ও আর কিছুতেই পেরে উঠবে না। কিন্তু ও যে রূপসা, একগুঁয়ে, জেদি, বদমাশ মেয়ে রূপসা, শরীর দিয়ে না পারলে কি হবে মুখের কথাগুলোই সাইদুলকে হারিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। “এখনো তুমি নিজেকে প্রমান করতে পারনি, রাজুর মত...” সাইদুল আর পারেনা, প্রায় ওর ওপর ই চড়ে যায়, সমস্ত শরীরটায় জিভ আর ঠোঁট দিয়ে নিজের ভালোবাসার প্রমান দিতে শুরু করে। দ্রুত নিজের শরীরটা নিচু করে রূপসার একদিকের স্তনকে সম্পূর্ণ নিজের মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে নেয়। জিভ দিয়ে বোঁটার চারপাশের ঘন বাদামী বৃত্তাকার অংশে নিজের সিক্ত ভালোবাসা জানিয়ে দিতে শুরু করে। নিজের স্তনের ওপর সাইদুলের এই ভালোবাসায় রূপসার শরীরটায় মোচড় দিতে শুরু করে। ওর মুখের কথাগুলো জড়িয়ে যেতে শুরু করে। তাহলেও একটাই শব্দ বারবার করে ওর কানে আসছিল তা হোল “রাজু”।
আজ সারাদিন কম পরিশ্রম হয়নি সাইদুলের। একমুঠো ভাত ও পেটে পড়েনি। তারওপর রূপসার শরীরটা নিয়ে এই পাশবিক লড়াই- চোখের সামনে অন্ধকার দেখতে শুরু করে সাইদুল। আর সেই অন্ধকার ভেদ করে এগিয়ে আসে এক সুপুরুষ। এতো ওর অতি পরিচিত, ওর ই বাল্যবন্ধু রাজু। সাইদুলের শরীরের তলা থেকে ও জোরে রূপসাকে টেনে বার করে নিচ্ছে। না এটা হতে পারেনা, ও রূপসাকে নিয়ে যাওয়ার আগেই রূপসার শরীরের মধ্যে নিজের ভালোবাসার চিহ্নকে প্রবেশ করাতে হবে। রূপসার দুই হাত ছেড়ে দিয়ে ওর ভিজে সায়াটা একটানে কোমরের ওপর তুলে দেয় সাইদুল। অন্য সময় হলে নিজের প্রেয়সীর এই শরীরটা উলটে পালটে অনেক আয়েশ করে ভোগ করত সাইদুল। কিন্তু ওর কাছে সময় ধৈর্য কোনটাই নেই। কি যেন একটা তাড়া আর ভয় ওকে ভেতর থেকে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। রূপসা কাতর কণ্ঠে বলে ওঠে “ন সাইদুল এখন নয় প্লিস, এখন নয় বিয়ের পর” ততক্ষনে সাইদুলের নিজের প্যান্টটা খুলে প্রায় গোড়ালির কাছে পাঠানো হয়ে গেছে। রূপসা ভয়ার্ত চোখে একবার নিচের দিকে তাকায়। কালো কুচকুচে একটা লম্বা মোটা লিঙ্গ ওর কুমারিত্ব হরন করতে ওর দুই জাঙ এর মাঝে ঘোরাফেরা করছে। রূপসা জানে ওর পক্ষে এই যুদ্ধে আর জেতা সম্ভব নয়। ভয়ে ও আশঙ্কায় দুচোখ বন্ধ করে দেয় রূপসা। এদিকে রাজুকে হারানোর আনন্দে সাইদুল প্রচণ্ড জোরে নিজের উদ্ধত যৌবনকে এক থাপে রূপসার শক্ত উত্তপ্ত যোনির অন্তরে প্রবেশ করায়।
“ওমা ওহ ওহ মা মাগো। আ আ আ না ওমা ওমা আআ মা”
প্রচণ্ড জোরে চেঁচিয়ে ওঠে রূপসা। সাইদুলের কানে তখন রূপসার আর্তনাদ নয় রাজুর সেই উক্তি “চল না দুজন মিলে...” আর মনে রাজুকে হারানোর আনন্দ। কিন্তু সাইদুল এই কথাটা ভুলে গিয়েছিল যে সঙ্গম কালে কখনো নিজেকে হারিয়ে ফেলতে নেই। আর যা হওয়ার তাই হোল। মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে রূপসার বুকের ওপর নেতিয়ে পড়ে যায় সাইদুল। হাঁফ ছেড়ে বাঁচে রূপসাও তার সাথে মুখে একরাশ বিরক্তিও। যতই কষ্ট হোক মনের মানুষের সাথে প্রথম মিলনকে প্রত্যেকেই স্মরণীয় করে রাখতে চায়। আর তার বদলে সাইদুল যা করল তা কিছুটা হাস্যস্পদ আর কিছুটা বিরক্তিকর। ক্লান্ত শরীরে নিজের নেতিয়ে যাওয়া লিঙ্গটা টেনে বার করে সাইদুল। ভিজে নরম হয়ে যাওয়া লিঙ্গটার দিকে তাকিয়ে দেখে ওটা লাল রক্তে ভিজে গেছে। কোনরকমে টলতে টলতে সাইদুল বিছানা থেকে ওঠে। দ্রুত বাইরের দিকে গিয়ে একটা ভেজা গামছা নিয়ে আসে।
“রূপসা একটু পাটা ফাঁক কর। রক্ত বেরোচ্ছে তোমার ওখান দিয়ে। প্লিস একটু পাটা ফাঁক কর”
চোখ বোজা অবস্থায় ই রূপসা দুপা ফাঁক করে। সাইদুল ভিজে গামছাটা দিয়ে রক্তে ভিজে যাওয়া যোনিটা আসতে আসতে মুছে দিতে থাকে। এতক্ষনে হুঁশ ফেরে সাইদুলের। মনে মনে বুঝতে পারে বিশাল একটা ভুল করে দিয়েছে। “আমায় ক্ষমা কর রূপসা, কি যে হয়ে গেছিল আমার জানিনা” মুখ বাঁকিয়ে চরম অবজ্ঞার স্বরে রূপসা উত্তর দেয় “আর ন্যাকামো করতে হবেনা। তোমার দ্বারা কিছুই হবেনা” রূপসা যন্ত্রণা ও ক্লান্তিতে চোখ দুটো বুজে নেয়। সাইদুল ও যথেষ্ট ক্লান্ত ছিল। রূপসার একপাশে সাইদুল ও আসতে করে নিজের শরীরটা ফেলে দেয়। কখন যে ঘুম এসে গেছিল ও জানেনা। যখন ঘুম ভাঙে দেখে পাশে রূপসা নেই। কিছুটা ধরে যাওয়া গলায় সাইদুল চেঁচিয়ে ওঠে “রূপসা, কোথায় তুমি” বাইরে থেকে আওয়াজ আসে “আমি এখানে” সাইদুল উঠে বসে। ওদের দুজনের তো কিছুই খাওয়া হয়নি। সমস্ত ঘটনা মনে পড়তে শুরু করে সাইদুলের। কি করে ও রূপসার সামনে মুখ দেখাবে তাই ভেবে মাথা খারাপ হয়ে যেতে শুরু করে। তাও কোনরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে এগিয়ে যায়, বাইরের দিকে। রূপসা তখন সাড়িটা সবে গায়ে জড়াচ্ছে। সাইদুলের মুখে সেই মিষ্টি হাঁসিটা আবার ফিরে আসে কারন এই লাল শাড়িটা তো সাইদুল ওর জন্যই কিনেছিল।
সাইদুলঃ রূপসা, সাড়িটা কোথায় পেলে, আমি তো তোমায় দেবো বলে তুলে রেখেছিলাম। তুমি পেলে কি করে?
রূপসা কোনও উত্তর দেয়না। সাইদুলের প্রচণ্ড খারাপ লাগে, ও জানে রূপসা দুপুরের ঘটনাটা কিছুতেই ভুলতে পারছেনা। কিন্তু সাইদুলকে যেভাবে হোক রূপসার মন আবার জয় করতে হবে। সাইদুল আসতে আসতে রূপসার দিকে এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে ওর কোমরটা জড়িয়ে ধরে।
রূপসাঃ আর ন্যাকামো করোনা সাইদুল। তুমি যদি আমায় ভালবাসতে তাহলে এরকম কখনো করতে না। আকমি কত স্বপ্ন দেখেছিলাম, আমাদের প্রথম রাতে কতকিছু ভেবে রেখেছিলাম। কাল সারারাত এই ভেবে ঘুমায়নি। তুমি সব মাটি করে দিলে। আমি আবার হোস্টেলে ফিরে যাবো। এখানে আমার ভালো লাগছেনা।
সাইদুলঃ (রূপসার কাঁধে নিজের মুখটা রেখে) আমায় ক্ষমা কর সোনা। তুমি আমায় ক্ষমা না করে দিলে আমার কি হবে বল। আমার আজ একদম মন ভালো ছিলনা। সত্যি বলছি আজ কি যে হয়েছিল আমি নিজেও জানিনা। তুমি আমায় ক্ষমা না করলে না আমি মরেই যাবো।
রূপসা পেছন ঘুরে সাইদুলের দুই ঠোঁটকে নিজের বাঁ হাত দিয়ে চাপা দেয়। সাইদুল স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রূপসার দিকে।
রূপসাঃ এরকম কথা আর একবার বললে না সত্যি মার খাবে। আরে আমি কি সত্যি সত্যি চলে যাচ্ছি নাকি। আমি খুব খুশি হয়েছি সাইদুল। সত্যি তুমি আনকোরা। তুমি যে কখনো কোনও মেয়ের দিকে চোখ তুলেও তাকাওনি আমি সত্যি আজ ই প্রথমবার তা বুঝতে পেরেছি।
সাইদুলঃ (সাইদুল, রূপসাকে জড়িয়ে ধরে) কিন্তু সোনা আমি তোমার ওপর সত্যি ই অভিমান করেছি।
রূপসাঃ জানি কেন করেছ। বারবার রাজু রাজু বলছিলাম বলে তাই তো? আরে বাবা আমি তো ইয়ার্কি করছিলাম। কাল রাতেও আমি ইয়ার্কি ই করেছি। আর রাজু তো আমার দাদার মত। সকালে ওর সাথে কথা বলা হয়নি ঠিক করে, ওকে বিকেলে ডেকো একবার কথা বলব ওর সাথে ভালো করে।
সাইদুলের মুখটা আবার ফ্যাকাসে হয়ে যায়। রুপ্সা সেটা বেশ ভালো ভাবে বুঝতেও পারে।
রূপসাঃ আবার রাগ করছ। আরে আমি তোমায় তো প্রথম দিন ই বলেছি যে আমি একটা দস্যি মেয়ে। আমার সাথে তুমি যত থাকবে একদম গা পিত্তি জ্বলে যাবে তোমার। বল থাকবে আমার সাথে? কি হোল বল।
সাইদুল শুধুই হাসে কোনও উত্তর দেয়না।
রূপসাঃ ঠিক আছে এই তোমায় ছুঁয়ে আমি কথা দিলাম আমি আর কোনোদিন ভালোবাসার সময় রাজুর নাম মুখেও নেবো না। ওহ যা আমি তো বলতেই ভুলে গেছি আজ জানতো আমি তোমার জন্য রান্না করেছি। সেরকম কিছুই ছিলনা বাড়িতে ভাত, ডাল, আলুভাতে আর বাঁধাকপি। সত্যি পেটে ছুঁচো দউরাচ্ছে। চলনা প্লিস আগে খেয়ে নি। আরও তো দুটো দিন থাকবো। আজকের না পাওয়াটা কিন্তু একদম সুদে আসলে আমি পুষিয়ে নেবো।
সাইদুলঃ নিশ্চয়ই সোনা। আজ রাতেই দেখনা তোমায় ঠিক কিকরে ভালবাসতে হবে তা শেখাবো।
রূপসা মুচকি হেঁসে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো আর সাইদুল খাটের ওপর উঠে বসে পড়ল। কিছুক্ষনের মধ্যেই দরজায় একটা ঠক ঠক করে শব্দ। সাইদুল কিছুটা চমকেই যায়। কারন ঘরে যে মেয়ে এনে তুলেছে এটা বেশি কেউ না জানলেই ভালো। সাইদুল রান্নাঘরে রূপসার দিকে ইশারা করে বলে “তুমি বেরোবে না এখন” রূপসাও মাথা নেড়ে সায় জানায়।
দরজাটা অল্প খুলে সাইদুল দেখে বিমল বাবু। সন্ধ্যেবেলা সাইদুল বিমলবাবুর দোকানে বসে। কিন্তু আজ তো ও আগে থেকেই ছুটি নিয়েছিল তাহলে...
বিমল বাবুঃ বাবা সাইদুল, বউটার খুব শরীর খারাপ রে। ছুটির দিনে তোকে বিরক্ত করতাম না। কিন্তু একটা মাল ডেলিভারির ব্যাপার আছে, তুই প্লিস একটু ১ ঘণ্টার জন্য দোকানে গিয়ে বস।
কিন্তু কিন্তু করেও সাইদুল বিমল বাবুকে না বলতে পারলো না। ভেতরে রূপসা সব ই শুনছিল। বিমল বাবু চলে যান। দরজা বন্ধ করে সাইদুল আবার ভেতরে ফিরে আসে।
রূপসাঃ তুমি কোনও চিন্তা করোনা, আমি একটা ঘণ্টা কাটিয়ে দেবো। কিন্তু কাজে ফাঁকি দিয়না। তোমাকে নিজের পায়ে তাড়াতাড়ি দাঁড়াতে হবে সাইদুল। নয়ত পরে প্রবলেম হবে। তুমি যাও।
সাইদুল কোনও উত্তর দেয়না, চুপ করে খেতে বসে যায়। যে ভয়টা ওর মনে একসময় ঢুকেছিল সেটা তো অনেকটাই কেটে গেছে। আর সারারাত তো পরে আছে। আজ ও যেভাবে হোক রূপসাকে নতুন বউ এর মত করে আদর করবে।
সাইদুলঃ রূপসা ওই নীল সাড়িটা পড়ে তুমি তৈরি হয়ে থাকবে। আজ আমাদের ফুলসজ্জা। আমি ফেরার পথে বাজার থেকে ফুল নিয়ে আসব। আগে আমরা ভালো করে বিছানাটা সাজাবো তারপর...

রূপসা হাতটা মুঠো করে সাইদুলকে কিল মারতে যায়। সাইদুল ও জানে ওর এই প্ল্যানে রূপসা মনে মনে খুব আনন্দ পেয়েছে। [/HIDE]
 
[HIDE]পর্ব ১৪- পরাজিত সৈনিকঃ [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
দোকানে মাল ডেলিভারি করতে করতে প্রায় রাত ৮ টা বেজে যায়। এতো যে দেরি হবে তা সত্যি ই সাইদুল ভাবতে পারেনি। মনে মনে বলে ১ ঘণ্টা বলেছিলাম তার বদলে ৩ ঘণ্টা লেগেছে, কিন্তু রূপসার ও নিশ্চয়ই সেরকম কোনও অসুবিধা হয়নি। তারকারন রূপসার তো কোনও ফোন ই আসেনি। দোকানের শাটার টা জোরে নামিয়ে লক করে বাজারের মধ্যে দিয়ে সামনে এগোতে থাকে সাইদুল। কিছুটা গেলেই বাজারের মাঝে দুদিকে সার দিয়ে ফুলওয়ালিরা বসে। বেশ কিছু রজনীগন্ধার ও গোলাপের মালা কিনে নেয় সাইদুল। আর একটা কাজ পড়ে থাকে তা হোল বাজার করা। বাড়িতে প্রায় কিছুই পড়ে নেই। সবজি বাজারে গিয়ে রাতের রান্নার জন্য দরকারি সবজি কিনে নিয়ে বেরিয়ে আসে সাইদুল। হাসিহাসি মুখে বস্তির রাস্তার দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করে। দুপুরের সব ঘটনা ওর মনে পড়ে যেতে শুরু করে। হাতের আঙ্গুলটায় একটা কামড় দিয়ে বলে ওঠে “ধুস শালা, কেন যে এতো উত্তেজিত হয়ে গেছিলাম। প্রথম বারেই ক্লিন বোল্ড। আর রূপসাটাও ভীষণ বদমাশ। বারবার রাজুর নাম বলে আমায় রাগিয়ে দিচ্ছিল। আজ আর আমি ওর কোনও ফাঁদেই পা দেবনা” এইসব বিড়বিড় করতে করতে কখন যে সাইদুল নিজের বাড়ির সামনেই চলে এসেছে তা ওর খেয়াল ও নেই। দরজাটা ভেজানো আছে। সাইদুল একটু জোরে থেলা দেয়।
প্রায় ঘাবড়ে গিয়ে রূপসা খাটের ওপর থেকে দৌড়ে বাইরের উঠোনের দিকে চলে যায়। সাইদুল কিছুটা অবাক ই হয়ে যায়। হথাত রুপ্সা এতো ভয় কেন পেয়ে গেলো?
“রূপসা আমি সাইদুল, এতো ভয় কেন পেয়ে গেলে”
আবার উঠোন থেকে সামনের দিকে এগিয়ে আসে রূপসা। রূপসার মুখের সেই পুরনো দুষ্টু হাঁসিটা নেই। কালো মেঘের মত গুরুগম্ভীর ওই মুখটার দিকে তাকাতে সাইদুলের খুব ভয় করে। সাইদুল খুব অবাক হয়ে যায়, রূপসার হয়েছে টা কি।
সাইদুলঃ কি হয়েছে রূপসা? আমি দেরি করে এলাম বলে রাগ করেছ? আরে বলনা যে পার্টিকে মাল ডেলিভারি করার কথা তারা এতো দেরি করে এলো। সত্যি সময়জ্ঞান যদি মানুষের একটু থাকতো তো...
রূপসাঃ ঘরে তো শাকসবজি কিছুই নেই। রান্না করতে হবে তো? বাজার থেকে কিছু এনেছ তুমি?
সাইদুলঃ (সাইদুল গুটি গুটি পায়ে রূপসার দিকে এগিয়ে যায়, দুহাতে রূপসার মুখকে চেপে ধরে) কি হয়েছে সোনা। আমার ওপর রাগ করেছ না? আরে আমি কি করব...
রূপসা কোনও কথা না বলে রাজুর হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে ভেতরের দিকে যেতে শুরু করে। সাইদুলের ও মেজাজ কিছুটা বিগড়ে যায়।
সাইদুলঃ আরে এতে এতো রাগ করার কি আছে? আমি তো তোমায় বলে গেছিলাম। আর যদি একা থাকতে খারাপ ই লাগত তাহলে আমায় একবার ফোন করতে পারতে। আমি দোকানে কাউকে বসিয়ে চলে আসতাম।
রূপসা কোনও উত্তর দেয়না। হতাশ সাইদুল ও চুপ করে খাটের ওপর বসে যায়। প্রেমে তো পড়ে গেছে, প্রেমিকার মন ও জয় করেছে কিন্তু সাইদুল এটা বোঝেনা মেয়ে সামলানো এর চেয়ে অনেক অনেক কঠিন। প্রথম পরিচয়ের সেই আবেগগুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেছে আর টার বদলে ক্ষনে ক্ষনে শুধুই ভুল বোঝাবুঝির ঘনঘটা। মনে মনে ভাবে সাইদুল, একবার রূপসার কাছে যাই ওকে জিজ্ঞেস করি কি হয়েছে। মুখ তুলে ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখে রূপসা ওর সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। হয়ত কিছু বলতে যাচ্ছিল সাইদুল। কিন্তু শুকনো মুখে রূপসা বলে ওঠে
রূপসাঃ তুমি কাকে ভালোবাসো সাইদুল? মানুষ রূপসাকে? নাকি সুন্দর দেহের অধিকারী সদ্য অষ্টাদশী রূপসাকে?
কিছুটা অপ্রস্তুত অবস্থার মধ্যে পড়ে যায় সাইদুল। ক্লাস ৮ পর্যন্ত পড়াশুনা শেখা এক ছেলে এতো কঠিন এক প্রশ্নের কি জবাব দেবে? কিন্তু এটাও সত্যি যে ভালবাসতে গেলে স্বাক্ষর হতে হয়না। হয়ত উত্তরটা সাইদুল নয় সাইদুলের হৃদয় ই দিয়েছিল।
সাইদুলঃ তুমি এতো সুন্দরী না হলেও আমি তোমায় ই ভালবাসতাম। তুমি আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা রূপসা। তোমায় আমি কখনোই ভুলতে পারবোনা।
নিজের দুহাত দিয়ে আলতো করে সাইদুলের দুগাল কে স্পর্শ করে রূপসা। রূপসার দুই নয়নে যেন হাজারো যন্ত্রণা কষ্ট ঠিকরে বেরিয়ে আসে।
রূপসাঃ তুমি সত্যি বলছ সাইদুল? আমার এই শরীরটা যদি কোনও ভুল করে তাহলে তুমি শরীরটাকে ক্ষমা করে দেবে তো? এটা বিশ্বাস করবে তো যে এই পাপটা আমার মন করেনি, শরীর করেছে।
অশিক্ষিত সাইদুল এর অর্থ কি বুঝল তা ওই জানে। কিন্তু ওর দুদিকে মাথা নাড়ানো যে রূপসার প্রশ্নের উত্তর তা রূপসা খুব ভালো করেই বুঝতে পারে।
রুপ্সাঃ (মুখে আবার সেই পুরনো হাঁসিটা ফিরিয়ে এনে) তুমি সত্যি ই আমায় ভালোবাসো সাইদুল। দাঁড়াও আজ আমি তোমায় আলুপোস্ত করে খাওয়াবো। জানতো বাবাকে যতবার আমি আলুপোস্ত রেঁধে খাওয়াই বাবা ততবার ই আমায় একটা চকলেট গিফট করে।
সাইদুলঃ (প্রচণ্ড তৃপ্তিতে হেঁসে উঠে) আমি না বাজার থেকে ফুল আর ফুলের মালা এনেছি।
রূপসাঃ (কিছুটা ভেংচি কেটে) ওহ ছেলের ন্যাকামো দেখলে গা জ্বলে যায়। ওসব হবেনা। আগে বিয়ে হোক তারপর।
হাঁসতে হাঁসতে রূপসা আবার রান্নাঘরের দিকে যেতে শুরু করে। হথাত সাইদুল বলে ওঠে “রূপসা তোমার ঘাড়ে ওটা কিসের দাগ?” রূপসা থমকে দাঁড়ায়, মুখে সেই কালো মেঘের ঘনঘটাটা আবার ফিরে আসে। সাইদুল সামনে এগিয়ে যায়। “এটা তো কোনও পোকায় বা জন্তুতে কামড়ানোর ক্ষত। কি হয়েছে রূপসা”
রূপসাঃ আর বলনা, তোমার বাড়িতে যা ইঁদুরের উপদ্রব। বাথরুম এ গেছিলাম বুঝতেই পারিনি। হথাত একটা ইঁদুর কোথা থেকে কিজানি আমার ঘাড়ে এসে উঠল।
সাইদুলঃ ওষুধ লাগাতে হবে তো। আর একটা ইঞ্জেক্সান ও নিতে হবে।
রূপসাঃ ও কাল সকালে দেখা যাবে। আজ আগে রান্না করি।
সাইদুল ও আর বাধা দেয়না। রূপসার রান্না করতে বেশ কিছুক্ষন সময় লাগবে বলে সাইদুল বাইরে বেরোয়। রূপসার ভয়ে সেই কোন সকাল থেকে একটা বিড়িও মুখে দেওয়া হয়নি। হাসিহাসি মুখে বস্তির ভেতর দিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। রাস্তাতেই আব্দুল চাচার সাথে দেখা। আব্দুল চাচা ওর আব্বার পুরনো বন্ধু। দেখা হলেই আম্মির ব্যাপারে সংসারের ব্যাপারে হাজার গণ্ডা প্রশ্ন শুরু করে দেন। কিন্তু সাইদুল কখনো ওনাকে উপেক্ষা করতে পারেনা। যতই হোক ওর পরিবারের শুভাকাঙ্ক্ষী বলে কথা। আজও পারলনা প্রায় ১০ টা মিনিট সময় আব্দুল চাচাই নিয়ে নিল। আব্দুল চাচা চলে যাওয়ার পর দোকানের কাছে গিয়ে একটা সিগারেট নিয়ে মুখে দেয় সাইদুল। ভালো করে শেষ টান টা অবধি আয়েশ করে টেনে আবার বাড়ির দিকে চলতে শুরু করে।
বাড়ির কাছে এসে দেখে দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ। সাইদুল তো কিছুটা অবাক ই হয়ে যায়। এতটুকু সময়ের জন্য ও বাইরে গেলো আর রূপসা দরজাটা লাগিয়ে দিলো? সাইদুল দু তিনবার দরজায় টোকা দেয় কিন্তু ভেতর থেকে কোনও শব্দ আসেনা। জোরে চেঁচাতেও ভয় লাগে ওর, কারন তাহলে বস্তির সবার নজরে পড়ে যাবে। এবার বেশ ৩-৪ বার জোরে জোরে দরজায় ধাক্কা মারে সাইদুল। তাও ভেতর থেকে কোনও উত্তর আসেনা। ১ মিনিট মত অপেক্ষা করে আবার ধাক্কা দিতে যায় সাইদুল কিন্তু তার আগেই ভেতর থেকে দরজাটা খুলে যায়। ওকে প্রায় অবাক করে দিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ায় রাজু।
হ্যাঁ করে কিছুটা আশঙ্কা ও কিছুটা রাগে রাজুর মুখের দিকে তাকায় সাইদুল।
রাজুঃ কি রে সাইদুল, এভাবে দরজা খুলে রেখে কেউ চলে যায়। বস্তিতে যদি জানাজানি হয়ে যায় কম কেলেঙ্কারি হবে বল তো।
সাইদুল কোনও উত্তর দেয়না, হনহন করে ভেতরে ঢুকে যায়। খাটের কাছে গিয়ে রান্নাঘরের দিকে তাকায়। ওখানে নিরুত্তাপের সাথে রূপসা দাঁড়িয়ে রান্না করে চলেছে।
রাজুঃ আর কখনো এভাবে দরজা খুলে বাইরে চলে যাবিনা, ভাগ্যিস আমি দেখতে এসেছিলাম তোকে। রূপসা আমি চলি গো অনেক কাজ পড়ে আছে।
রূপসাঃ না একটু দাঁড়িয়েই যাও রাজুদা, আমি চা বসিয়েছি। চা খেয়ে যেও।
কথাটা বলার জন্য রূপসা অনেকটাই বাইরে বেরিয়ে এসে, রূপসার নজর সাইদুলের সাথে মেলে। কিন্তু রূপসা নিজের নজর সরিয়ে নেয়। মনেমনে বলতে থাকে সাইদুল কেন রূপসা নিজের নজর সরিয়ে নিল, ওর মুখটা কেন আবার আগের মত বিষণ্ণ হয়ে গেছে? রাজু এতক্ষন এখানে এসেছে, অথচ আমি ৪-৫ বার দরজায় ধাক্কা দিয়েছি ও খুলল না কেন? হাজারো প্রশ্ন সাইদুলের মনে ঘুরপাক খেতে থাকে। এর উত্তর হয়ত সঠিক সময়েই সাইদুল পেয়ে যাবে।
রাজুঃ কিরে আম্মিকে ছেড়ে দিয়ে এলি। আম্মি ঠিকথাক পৌঁছেছে কিনা একবারও খোঁজ নিয়েছিস? জানি নিসনি। তোকে আমি চিনিনা আবার।
সাইদুলের পক্ষে আর ধৈর্য পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব ছিলনা। প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে বলে ওঠে সাইদুল “তুই এক্ষুনি আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যা”
ততক্ষনে রূপসাও সামনে এগিয়ে এসেছে। ক্ষোভে অপমানে রাজু থরথর করে কাঁপতে শুরু করে দেয়। সাইদুলকে প্রচণ্ড অবাক করে রূপসা বলে ওঠে
রূপসাঃ না রাজুদা, আমি চা বানিয়েছি তুমি চা খেয়েই তারপর যেও।
প্রচণ্ড ক্রোধে সাইদুল রূপসার দিকে তাকায়। কিন্তু এবার আর আগের বারের মত রূপসা নিজের নজর সরিয়ে নেয়না। রূপসার দৃপ্ত চোখের দিকে সাইদুল তাকাতে পারেনা। লজ্জায় ও পরাজয়ের গ্লানিতে কিছুটা দৌড়েই নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। দৌড়াতে দৌড়াতে আবার সেই সিগারেট দোকানের সামনেই এসে পৌছায়। নতুন একটা সিগারেট- ৫ টা মিনিট সময়, ৫ টা টাকা দুটোই অপচয় হয়। কিন্তু মাথাটাও ঠাণ্ডা হয় সাইদুলের। “রূপসা হয়ত ভদ্রতার খাতিরেই এইরকম ব্যাবহার করেছিল” আবার নিজের বাড়ির দিকে চলতে শুরু করে সাইদুল। মনের মধ্যে আবার একটা হতাশা গ্রাস করে সাইদুলকে। বারবার ভাবতে থাকে এরকম না করলেই ভালো হত। রূপসা হয়ত আমাকে খারাপ ই ভেবেছে। আর ওই নোংরা ছেলেটার কাছে রূপসাকে ছেড়ে চলে আসা সত্যি ই আমার উচিত হয়নি। হন্তদন্ত করে নিজের বাড়ির দিকে ছুটে যায় সাইদুল। দরজাটা ভেজানোই ছিল। ভেতরে ঢুকে দেখে রূপসা চুপ করে খাটের ওপর বসে আছে। সাইদুল প্রথমে নিজের মাথাটা নিচু করে বেশ কিছুক্ষনের জন্য। তারপর রূপসার দিকে আবার তাকায়, রূপসার করুন মুখটা দেখে ওর খুব মায়া হয়। ধীরেধীরে সামনে এগিয়ে রূপসার পায়ের কাছে বসে পরে।
সাইদুলঃ রূপসা, তুমি রাগ করেছ আমার ওপর না? বিশ্বাস কর সোনা, আমি এরকম করতে চাইনি। কেন যে মাথাটা...
রূপসাঃ (মাঝপথে সাইদুলের কথা আটকে, মুখে কিছুটা স্ফীত হাঁসি নিয়ে এসে) তুমি কোনও ভুল করনি সোনা। তোমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও হয়ত এটাই করত। কিন্তু কি করবে, মানুষকে তো নিজের ভবিতব্য মেনেই নিতে হবে।
রূপসার এই কথার মধ্যে যে কি ভয়ঙ্কর রহস্য লুকিয়ে আছে, তা সত্যি সাইদুলের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। রূপসার দুগালে স্নেহের স্পর্শ দিয়ে সাইদুল হথাত ই ওর নিচের রসালো ঠোঁটটা নিজের মুখের মধ্যে পুরে নেয়। কিন্তু রূপসার একটা নিস্প্রীহ ভাব সাইদুলকে অবাক করে। যেন কোনও মৃতদেহের সাথে ও চুম্বন করছে। দ্রুত নিজের দুই ঠোঁট বার করে বলে ওঠে “কি হয়েছে রূপসা? তুমি কি এখনো আমার ওপর রেগে আছে। সাইদুলের দুকাঁধ শক্ত করে ধরে ওর দুটি অসহায় চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে রূপসা। সাইদুল পারেনা ওই দুই নয়নে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে। এ রূপসা একদম অচেনা, মুখের সেই মিষ্টতা, দুষ্টুমি কোথায় যেন হারিয়ে গেছে, তার বদলে পরিনত শান্ত এক নারী।
রূপসাঃ সাইদুল তোমার কি এখনো আমায় আদর করতে ইচ্ছে করে। আমার মুখটা কি এখনো আগের মত মিষ্টি? একবার ও মনে হোলনা এই রূপসা সেই রূপসা নয়, যাকে তুমি ভালোবেসেছিলে? আমায় কি এখনো তুমি ভালবাসতে পারবে সাইদুল? আমি তো হেরে গেছি, নিজের শরীরের লোভের কাছে পরাজিত হয়ে নিজেই নিজেকে হারিয়ে দিয়েছি।
সাইদুলের বুকটা কেঁপে ওঠে। এ কোন কথা বলছে রূপসা? কিসের এই বিরহ? সাইদুল কিছুই বোঝেনা, শুধু আবেগের বশে নিজের মুখটা আবার রূপসার দিকে নিয়ে যেতে শুরু করে। “না সাইদুল, আগে আমার প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। রূপসা কি এখনো তোমার কাছে সেই আগের ই মত?” কিছুই বুঝতে পারেনা সাইদুল শুধু বোকার মত হুম বলে একটা শব্দ করে। “ওহ সাইদুল, আমার সাইদুল” বলে রূপসা জড়িয়ে ধরে সাইদুলকে। নিজের নিচের ঠোঁটটা সাইদুলের মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। এই ১০ টা মিনিটের চরম মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে সাইদুল ও পাগলের মত রূপসার ঠোঁটকে আস্বাদন করতে শুরু করে।
রূপসার ঠোঁটের কনা বেয়ে গড়িয়ে পড়ে মিষ্টি রস, সাইদুলের জিভ, ঠোঁট দুই ই পাগলের মত সেই মিষ্টি মধুকে আস্বাদন করতে শুরু করে। নিজের নাকটা দিয়ে রূপসার নাককে ভালো করে ঘষে দিয়ে সাইদুল গাল বরাবর চুমু খেতে খেতে গলায় নেমে আসে।
রূপসাঃ না সাইদুল এখন ই নয়। আজ যে আমাদের ফুলশয্যা এতো সহজে আমি নিজের স্মৃতিকে নষ্ট করে দিতে চাইনা। আগে খাওয়া দাওয়া হোক তুমি তোমার মনের মত করে বিছানাটা সাজাও তারপর আমি একদম নতুন বউ এর মত তোমার কাছে আসব।
সাইদুলঃ (মনের আনন্দে হেঁসে ওঠে সাইদুল) ঠিক আছে সোনা ঠিক আছে। আমি ফুল দিয়ে এমনভাবে বিছানাটা সাজিয়ে দেবো যে তুমি পাগল হয়ে যাবে।
রূপসা মুচকি হাঁসতে হাঁসতে আবার রান্নাঘরের দিকে চলে যায়। সাইদুল বিছানার চাদরটা পালটে নতুন চাদর পেতে দেয়। বালিশের ওয়াড় পালটে নতুন ওয়াড় পড়িয়ে দেয়। প্যাকেট থেকে মুঠো করে ফুল বার করে বিছানায় ছড়িয়ে দেয়। আর রয়ে যায় একটা রজনিগন্ধার মালা। ওটা হাতে নিয়ে চুপিসারে রান্নাঘরের দিকে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে রূপসাকে। রূপসা হয়ত বুঝতেও পারেনি সাইদুল এভাবে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরবে। রূপসার ঘাড়ে মুখ গুঁজে হয়ত সাইদুল এটাই বলতে যাচ্ছিল “সোনা এই মালাটা তোমার জন্য” কিন্তু তার আগেই যন্ত্রণায় ককিয়ে ওঠে রূপসা। সাইদুল কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে লক্ষ্য করে সেই ক্ষতটায় ও মুখ দিয়ে দিয়েছে। রূপসার দুচোখ বেয়ে জল টপটপ করে বেয়ে চলেছে।
সাইদুলঃ সরি রূপসা, আমি আসলে বুঝতে পারিনি। কাল ই তোমায় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো সোনা।
পেছনঘুরে প্রচণ্ড করুনভাবে সাইদুলের দিকে তাকায় রূপসা। সাইদুলের বুকটা হথাত ই যন্ত্রণায় টুকরো টুকরো হয়ে যেতে থাকে। কোনও এক অশুভ ঘটনা যে ঘটতে চলেছে তা সাইদুল খুব ভালোভাবেই বুঝে যায়। সাইদুলের দুহাত শক্ত করে চেপে ধরে রূপসা। ওর দুচোখ বেয়ে জল পড়েই চলেছে।
রূপসাঃ আমি তোমায় কখনো ভালবাসিনি সাইদুল। সত্যি কখনো ভালবাসিনি। আমাদের মধ্যে কখনো সম্পর্ক হতেই পারেনা। আমরা যে দুই ভিন্ন মেরুর। একটা মেয়ে এতো সহজে কাউকে নিজের হৃদয় দেয়না। এক রাতের মধ্যে যে আমি তোমার বাড়িতে এসে উথেছি এটাও আমার ভালোবাসা নয় সাইদুল। আজ সত্যি আমার প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমি সত্যি ই তোমায় কখনো একমুহূর্তের জন্য ও ভালবাসিনি।
নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারেনা সাইদুল। হ্যাঁ করে তাকিয়ে থাকে রূপসার মুখের দিকে। অস্পষ্টভাবে সাইদুলের মুখ দিয়ে কয়েকটা শব্দ বেরিয়ে আসে “কি বলছ তুমি? তুমি আমার ওপর রাগ করেছ? আমি তো অনেক স্বপ্ন দেখে ফেলেছি রূপসা” সাইদুলের কথাগুলো রূপসার কানে পৌঁছেছে কিনা জানিনা। তবে রূপসার পরবর্তী কথাগুলো সাইদুলের কানে ভীষণভাবে পৌঁছে যায়।
রূপসাঃ এটা গত মঙ্গলবারের কথা। আমি যে কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছি তা মা জানত না। কি কারনে জানিনা মা, বাইরের দরজাটা বন্ধ করতে ভুলে গেছিল। আমি ভেতরে ঢুকে যাই। ঘরের মধ্যে থেকে অদ্ভুত কিছু শব্দ আসছিল। জানলা ফাঁক করে অত্যন্ত আপত্তিকর অবস্থায় মা ও রাজুদাকে দেখে ফেলেছিলাম। রাগে অপমানে আমার মাথা ঘোরাচ্ছিল, মনে হয়েছিল বাবাকে তক্ষুনি ফোন করে সব বলি। আমি পাশের ঘরেই লুকিয়ে থাকি। কিছুক্ষন বাদে রাজু বেরিয়ে যায়। আমি মায়ের সামনে যাই। মা আমায় দেখে ভেঙে পড়ে। মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম “তুমি কেন এরকম করলে?” মায়ের উত্তর ছিল “রাজুর শরীরে জাদু আছে” সেদিন মায়ের ওই উত্তর আমার জীবনটাই পালটে দেয়। বাথরুমে স্নান করতে গিয়ে, রাতে বিছানায় প্রায় প্রতি মুহূর্তে আমি রাজুর ওই নগ্ন শরীরটা কল্পনা করতাম। রাজু ঠিক চুম্বকের মত আমায় তোমার কাছে টেনে আনল। সাইদুল, আমার পিঠের এই ক্ষতটা রাজুর ই দাঁতে সৃষ্টি হয়েছে।
সাইদুলের হাত কিছুতেই রূপসার ওই নরম গালে আছড়ে পড়তে পারলো না। ক্ষনিকের জন্য ও ওর মনে হয়েছিল রূপসার ওই নোংরা মুখটায় সজোরে একটা চড় মারতে। কিন্তু পারলনা, ও যে রূপসাকে ভালবেসেছিল। সাইদুল রূপসার কাঁধে মাথা দিয়ে নিজের কষ্টগুলো ভুলতে চেয়েছিল। কিন্তু বেচারা ছেলেটা জানত না, ভালোবাসা বিত্ত, জাত, ধর্মের ঘেরাটোপ ছাড়া কখনো বাইরে বেরোয় না। ভালোবাসা মাটির কুঁড়ে ঘরে কখনোই আসেনা। ভালোবাসা বড়লোকের প্রসাধনী সামগ্রী।
পরাজিত সৈনিক, অলস পদচালনায় টলতে টলতে ঘরের বাইরে বেরিয়ে যায়। রূপসা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সাইদুলের দিকে।
[/HIDE]
 
[HIDE]পর্ব ১৫- প্রথম টুইস্টঃ [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE]

কোনরকমে দুহাত দিয়ে দরজাটা ঠেলে বাইরে বেরিয়ে যায় সাইদুল। দরজার বাইরেই রাজু, মুখে সেই বিশ্রী রকম হাঁসিটা। একবার রাজুর দিকে তাকায় সাইদুল, কিন্তু পারেনা সেই বিজয়ীর উল্লাস মেনে নিতে। মাথা নিচু করে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে চলে সাইদুল।
রাজুঃ শোন সাইদুল, তুই আমায় ভুল ভেবেছিস। প্লিস যাসনা আমার কথাটা মন দিয়ে শোন তুই।
কোনও উত্তর দেয়না সাইদুল, চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
রাজুঃ তোকে কখনো বলিনি। কিন্তু এটা সত্যি সাইকেল নিয়ে যতবার রাস্তায় রূপসার সাথে আমি মুখোমুখি হয়েছি, রূপসা ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো। আমি জানতাম ও কি চায়। আমি কমবছর হলনা মেয়ে চড়াচ্ছি। আমি মেয়েদের...
রাজুর কথা সম্পূর্ণ হয়না, সাইদুল ফুঁপিয়ে ওঠে। রাজু হয়ত আশাও করেনি যে সাইদুল এতটা ভেঙে পড়বে।
সাইদুলঃ কেন এরকম করলি আমার সাথে রাজু। আমি তো রূপসাকে সত্যি ই ভালোবেসে ফেলেছিলাম।
রাজুঃ এক রাতে কি কখনো কেউ কাউকে ভালোবাসে রে! জীবনটা সত্যি ই হিন্দি সিনেমা নয় রে। রোমান্স ওখানেই হয়। আরে পাগল তুই, জীবনে মেয়ে দেখিস নি তাই এতো তাড়াতাড়ি ভেঙে পড়লি। এটা কিছু নয়রে মানুষের ২০ বছরের বিয়ে করা বউ পালিয়ে যায়।
চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে সাইদুল। চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে থাকে।
রাজুঃ সাইদুল, আমি যতই খারাপ হইনা কেন, আমি কখনো নিজের থেকে রূপসার কাছে যেতাম না। রূপসাই তুই দোকানে চলে যাওয়ার পর আমার ঘরে এসেছিল, আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল...
রাজুর কথা শেষ হওয়ার আগেই সাইদুল পেছনঘুরে প্রচণ্ড জোরে একটা চড় মারে রাজুকে। এর আগেও ওদের মধ্যে বহুবার লড়াই হয়েছে, গায়ের জোরে হয়ত সাইদুলের চেয়ে রাজু অনেক অনেক এগিয়ে। কিন্তু আজ সত্যি ই এই পরাজিত প্রেমিকের কাছে রাজু নেহাত ই বাচ্চা। প্রায় ঝড়ের বেগে নিজের ডান পা টা দিয়ে রাজুর পেটে কষে একটা লাথি মারে সাইদুল। প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে রাজু মাটিতে গোঙাতে শুরু করে। সাইদুল কোথাও যায়না, ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। কোনরকমে উঠে দাঁড়ায় রাজু। আজ আর নিজের প্রিয় বন্ধুর ওপর হাত ওঠানোর কোনও ইচ্ছেই ওর নেই। প্রায় আকুতি মিনতি করার মত করে সাইদলুকে বলে
রাজুঃ শোন ভাই, আমি এতটাও খারাপ নই। একটা সুন্দরী মেয়ে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে আমি কি করতে পারি বল। আমিও তো মানুষ রে। আমারও শরীরে উত্তেজনা রয়েছে। তুই যাসনা সাইদুল। আমার কথাটা শোন। আমি তোকে কাল রাতেই বোঝাতে চেয়েছিলাম যে এই সম্পর্ক হয়না। তুই একটা বস্তির ছেলে আর ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রী। হয়না সাইদুল এটা। এর আগে একবার ও কোনও মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়ালে হয়ত তোর এতটা কষ্ট হতনা। আমার কথা শোন সাইদুল। আয় আজ দুজনে মিলে...
রাজুর পুরো কথা সাইদুল শুনেছিল কিনা জানা নেই। কারন তার আগেই সাইদুল হনহন করে হাঁটতে শুরু করে দিয়েছিল। ওর গন্তব্য কোথায়? কোথায় আবার এই সময় বস্তির আর ১০ টা ছেলে যেখানে যায় সেখানেই। বস্তির স্বর্গ অর্থাৎ চুল্লুখানা এখন ওটাই তো সাইদুলের ঠিকানা।
সেই বিখ্যাত রিংটোনের সাথে সুবীর বাবুর ফোন আবার বেজে ওঠে। গল্পের মাঝে এই ধরনের বাধা সত্যি ই অস্বস্তিকর। অপ্রিয় এই গল্পের মধ্যে সুবীর বাবুও প্রায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিলেন। নিজের ই এক মেয়ের এই লম্পট কীর্তি শুনে ঠিক কত জল ওনার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়েছে তার কোনও ইয়ত্তা নেই। হাতে মোবাইলটা নিয়ে দেখেন “রূপসা” হয়ত তীব্র এক যন্ত্রণা ও ঘৃণায় ওনার গা গুলিয়ে উঠেছিল। যাই হোক সুবীর বাবু বহুকষ্টে ফোনটা রিসিভ করেন। হ্যালো বলার মত মানসিক অবস্থায় উনি ছিলেন না। তাই ওপাশ থেকে প্রথমে রূপসার ই গলাটা ভেসে আসে। গলাটা প্রচণ্ড ধরা, অনেকক্ষণ ধরে কান্নাকাটি করলে গলার অবস্থা যেমন হয় ঠিক তেমন।
রূপসাঃ হ্যালো, বাবা প্লিস আমার কথাটা মন দিয়ে শোন। তোমার পাশে কে আছে এখন? আমি কারুর একটা গলা পেয়েছিলাম ফোন করার সময়। কে আছে বাবা? বাবা প্লিস উত্তর দাও। কি হোল বাবা উত্তর দাও।
কোনও উত্তর দিতে পারেন না সুবীর বাবু। ডায়েরীর অভিশাপ যে এভাবে ওনার জীবনে আসবে তা উনি ভাবতেও পারেননি। দুই মেয়েকে ছোট থেকে নীতি আদর্শের শিক্ষা দিয়েছেন উনি আর সেই মেয়েরাই কিনা... ভাবতেও পারেননা সুবীর বাবু, কথা বলা তো অনেক দুরের ব্যাপার।
রূপসাঃ বাবা, মন দিয়ে আমার কথা শোন। মা, পাগল হয়ে গেছে। উল্টোপাল্টা কথা বলছে। আমার কিছুই মাথায় ঢুকছেনা। এই কথাগুলো মা যে কি করে বলে ছি ছি... বাবা আমার আর তিলোত্তমার লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। তিলোত্তমা প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছে।
ওপাশ থেকে ফিসফিস করে বলে ওঠে সত্য বাবু। “মালতী ভয় পেয়েছে সুবীর বাবু। এবার মেয়েদের দিয়ে নিজেকে বাঁচাতে চাইছে”
সুবীর বাবুর মাথায় হয়ত সত্য বাবু বা রূপসা কারুর ই কোনও কথাই আর প্রবেশ করছিল না।
রূপসাঃ বাবা, তুমি কি বুঝতে পারছ কেউ একটা চাইছে তোমায় আর মাকে আলাদা করে দিতে, বাবা বিশাল বড় একটা চক্রান্ত হচ্ছে। হ্যালো হ্যালো হ্যালো বাবা, তুমি উত্তর দাও বাবা।
বেশ কিছুক্ষন দুপাশ ই নিস্তব্ধ। একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে ওঠেন সুবীর বাবু।
সুবীর বাবুঃ তোদের বাবা মারা গেছে। আর বাবা বলে ডাকিস না আমায়।
ফোনটা কেটে দেন সুবীর বাবু। দুচোখ বেয়ে তখন ও জল পড়ে চলেছে ওনার।
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু শান্ত হন। ডায়েরীর নাম হয়ত অভিশপ্ত ডায়েরী। কিন্তু এটা মানুষের জীবনের না জানা সত্যগুলোকেই শুধু প্রকাশ করে। ডায়েরীর জন্য অভিশাপ নেমে আসেনা। যে সাংসারিক কলহের মুখ আপনি দেখলেন তা হয়ত আজ নয় তো কাল হওয়ার ই ছিল। আমাকে গল্পটা শেষ করতে দিন দেখবেন সবকিছু আপনি নিজে থেকেই বুঝে যাবেন।
সুবীর বাবুঃ হ্যাঁ সত্য বাবু, আপনি আপনার গল্প চালিয়ে যান। আমিও নিজের জীবনের অন্তরালের সত্যকে জানতে চাই।
সত্য বাবুঃ দেশী মদের সত্যি ই দম আছে। প্রতিটা বিন্দুতে যেন মাদকতার ছোঁয়া। এক একটা বিন্দু সাইদুলের পাকস্থলিতে যায় ও তার সাথে সাথে কাম, অপমান, লজ্জা জীবনের প্রতিটি রিপুই ভীষণভাবে উত্তেজিত হতে থাকে। বারবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে রূপসার ঘাড়ের সেই ক্ষতটা। আর সেই ক্ষতর সৃষ্টিকর্তা নিজের অপকর্মের কাহিনী বারবার করে সাইদুলের চোখের সামনে মরীচিকার মত ফুটিয়ে তোলে। ঝাপসা হয়ে ওঠে সাইদুলের চোখ। চোখের সামনেই এক হিংস্র বাঘ ও ততোধিক হিংস্র এক বাঘিনী। নিজেদের মধ্যে কামড়া কামড়ি করে একে অপরকে নিয়ন্ত্রন করার অব্যর্থ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। একি সেই রূপসা যার দুচোখে একদিন সাইদুল হারিয়ে যেতে চেয়েছিল, যার কাঁধে মাথা রেখে একটিবার বলতে চেয়েছিল “রূপসা আমিও হয়ত জীবনে কিছু করতে পারতাম। যদি একটু অর্থ থাকতো আর আব্বুটা এতো কমবয়সে মারা না যেত” হয়ত কাঁদতে কাঁদতে বলতে চেয়েছিল “রূপসা অনেক অনেক ভুল করেছি জীবনে, জানিনা এর শাস্তি কবে পাবো। কিন্তু আমি তোমার সাথে সবভুলে নতুন এক পৃথিবী গড়তে চাই। রূপসা বস্তির এই নোংরা অন্ধকারের জীবন থেকে আমার মুক্তি চাই”
না এই কথাগুলো আর বলা হলনা সাইদুলের। আদর্শবান বাবার মেধাবী কন্যা সমস্ত স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দিয়ে ওকে শেষ করে দিলো। চোখের সামনে দেখতে পায় সাইদুল এক নতুন কামুকি রূপসাকে। বিছানার ওপর বসে, পায়ের সাড়ি সায়া প্রায় ঠাই পেরিয়ে জাঙের কাছাকাছি, বুকের ওপর নীল রঙের একটা ফিনফিনে সাড়ি, লম্বা সূচালো বোঁটাগুলো সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। ঠোঁটে ঘন লাল রঙের লিপস্টিক। কেউ হয়ত নিজের নোংরা আঙুল দিয়ে ওগুলোকে ঘেঁটে দিয়েছে বেশ করে। কামনার দংশনে মাঝেমধ্যেই লকলকে জিভটা দুই ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসছে। নাকের উত্তপ্ত নিঃশ্বাস কিছুটা আবেশক্রিয়ার মত নিজের বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করে চলেছে। দরজার ঠিক কাছে দাঁড়িয়ে খালি গায়ে ওই ছেলেটি কে? ও তো রাজু। হয়ত ওই সুপুরুষটির জন্যই অপেক্ষা করে আছে রূপসা।
আর পারেনা সাইদুল। প্রচণ্ডভাবে গা টা গুলিয়ে ওঠে। চুল্লুখানার জানলার কাছে গিয়ে কোনরকমে মুখটা বাড়িয়ে বের করে দেয় সমস্ত বিষ। আসলে মদ নয় বাইরে এলো মানুষ হয়ে জন্মানোর তীব্র দ্বেষ ও যন্ত্রণা। কেউ একজন বলে ওঠে “আরে ওটা সাইদুল না, শালা ও তো মদ খেত না, কি হয়েছে বল তো?” ফিসফিস করে অপরজন উত্তর দেয় “আরে একটা মাগীকে কোথা থেকে নিয়ে এসেছে। বিকেলে দেখলাম ও বাড়িতে নেই আর রাজু ঢুকছে” সবাই প্রচণ্ড জোরে হেঁসে ওঠে। “সে আর বলতে। মদ তো খাবেই রে। শালা ওই হারামি রাজুর নজর যার ওপর পড়ে তাকে কি কখনো রাজু ছাড়ে” প্রচণ্ড জোরে অট্টহাস্যে ফেটে পড়ে ওখানে উপস্থিত সকলে। কোনরকমে টলতে টলতে বাইরে বেরোয় সাইদুল। শরীর মন দুই ই যেন অবশ হয়ে এসেছে। হৃদয়ে আর এক বিন্দু ভালোবাসাও মজুত নেই। মনে মনে পন করে সাইদুল “ঘরে ধুকেই চুলের মুটি ধরে সবার আগে রূপসাকে বার করবে। সোজা টানতে টানতে রাজুর ঘরে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিয়ে আসবে। ও গরীব, অতো হাইফাই মেয়ে ওর চাইনা। আম্মি একটা সাধারন মেয়ে দেখে ঠিক ই বিয়ে দিয়ে দেবে”
সারা শরীর দিয়ে ঘামের দুর্গন্ধ আর মুখ দিয়ে তীব্র মদের দুর্গন্ধ- এ ওর থেকে ১০ হাত দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষকেও জানান দেয় “ওই দেখ আজ সাইদুল মদ খেয়ে ঘরে ঢুকছে। ওর আম্মির কত বড় বড় কথা ছিল, দেখ কি অবস্থা ওর” দুপাশে তাকায় সাইদুল, সবাই ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। লজ্জায় অপমানে ওর মাথা নিচু হয়ে যায়। মনে মনে বলে ওঠে “সব হয়েছে ওই বেশ্যাটার জন্য। আজ ই ওকে ঘর থেকে তাড়াবো”
বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে যায় সাইদুল। বুকের মধ্যে তখন আগুন জ্বলছে। দরজাটার সামনে দাঁড়িয়ে আগে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে নেয়। মনে মনে পন করে “অনেক হয়েছে ভালোমানুষি আর নয়। এই শেষ। এবার ওই বেশ্যাটাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করব” প্রচণ্ড জোরে দরজায় ধাক্কা দেয় সাইদুল। দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ ছিলনা, শুধুই ভেজানো ছিল। বিকট একটা আওয়াজ হয়ে দরজাটা খুলে যায়। ভেতরের দৃশ্য সাইদুলের ভেতরের সমস্ত রাগ আক্রোশকে শতগুন বাড়িয়ে দিলেও এক অদ্ভুত বিস্ময় ওকে গ্রাস করে।
একটা নীল সাড়ি পড়ে রূপসা। খাটের ওপর চারপাশে ফুল ছড়ানো। মালাগুলো ছিঁড়ে বিছানার ওপর ই পড়ে আছে। হয়ত কিছুক্ষণ আগে এগুলোই রূপসার চুলের খোঁপায় শোভা পাচ্ছিল। আবার সাইদুলের হৃদয়টা ব্যাকুল হয়ে যায়, ঠিক এইভাবেই আজ রাতে ও রূপসার সাথে ফুলশয্যা করতে চেয়েছিল। রূপসাকে নিজের বুকের সমস্ত ভালোবাসা উজাড় করে পাগল করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এই বাসর শয্যায় ওর কোনও স্থান নেই। ওর জায়গায় রয়েছে রাজু। রূপসার কোমরকে পেছন থেকে এক হাতে জড়িয়ে, ওর মুখকে নিজের দিকে করে ঠোঁটের লিপস্টিক গুলো প্রায় রাবারের মত করে মুছে দিয়ে নিজের মুখে লাগিয়ে নিয়েছে রাজু। দরজাটা খোলার আগের মুহূর্ত অবধি যে রূপসার রসালো ঠোঁটটা রাজুর ই মুখের মধ্যে ছিল তা সাইদুলের বুঝতে কোনও অসুবিধা থাকেনা। সাইদুলকে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে যায় রূপসা, কিন্তু সামান্য বিচলিত না হয়ে রাজু বলে ওঠে
রাজুঃ তোর জন্যই দরজাটা বন্ধ করিনি রে। তুই দরজাটা বন্ধ করে চলে আয়। আজ আমাদের তিনজনের ফুলশয্যা।
রাজুর কথায় হয়ত সাইদুল এতটাও রাগ করেনি, যতটা রাগ ওর হয় রাজুর কথার প্রত্যুত্তরে রূপসার ওই অদ্ভুত হাঁসিটায়। অবাক দৃষ্টিতে সাইদুল তাকিয়ে থাকে রূপসার দিকে। রূপসা একবার সাইদুলের দিকে তাকায়, কিন্তু পরক্ষনেই আবার রাজুর ঘাড়ের ওপর নিজের দুহাত ছড়িয়ে দিয়ে ওর মুখের দিকে অগ্রসর হয়। নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলনা সাইদুল। প্রচণ্ড উত্তেজনা ও তীব্রতার সাথে রাজু ও রূপসা দুজন দুজনকে কিস করতে শুরু করে। এই তীব্রতায় হয়ত মাঝে মধ্যেই রূপসার ঠোঁটটা ফস্কে যাচ্ছিল রাজুর মুখের ভেতর থেকে, কিন্তু রূপসাই আবার স্বেচ্ছায় নিজের ঠোঁট রাজুর মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়। দুজনের ই মুখের ভেতর থেকে উম উম্ম করে শব্দ বাইরে বেরিয়ে আসতে শুরু হয়। রাজু দুহাত দিয়ে রূপসাকে বিছানার ওপর ফেলে দেয়। প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর ওপর, কাঁধের দুদিকে হাত দিয়ে নীল ব্লাউজটায় দুপাশ থেকে একটা চাপ দেয়। সাইদুলের ছখেরে ই সামনে ওর প্রেয়সীর ব্লাউজটা দুপাশ থেকে ছিঁড়ে ফেটে যায়। নিজেকে আর শান্ত রাখতে পারেনা সাইদুল। কিকরেই বা রাখবে। প্রেম তো অনেক আগেই ফুড়ুৎ করে উড়ে গেছে। কিন্তু মাতাল চোখের সামনে যে সুস্বাদু নারীর শরীরটা দেখতে পাচ্ছে তা তো আর অস্বীকার করা যায়না। জিভটা লকলক করে ওঠে সাইদুলের। নিজের অজান্তেই বিড়বিড় করে ওঠে সাইদুল “তুই একা খাবিনা রাজু আমিও খাবো। ওই বেশ্যাটা আমায় অনেক কাঁদিয়েছে, ওকে আমিও খাবো” দ্রুত নিজের জামাটা খুলে ছুঁড়ে ফেলে সাইদুল। রাজু রূপসার গলা থেকে নিজের মুখটা তুলে সাইদুলের দিকে তাকিয়ে হেঁসে ফেলে। দুই ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে জিভটা বার করে সাইদুলকে অঙ্গভঙ্গি করে। যেন এটাই বলতে চায় যে “উম হেবি খেতে রে তোর বউকে” রাজুর এই ইঙ্গিতকেও ছাপিয়ে যায় যখন রূপসা পেছন থেকে উঠে এসে জিভটা বার করে রাজুর বুকটা চাঁটতে শুরু করে। সাইদুলের ভেতর থেকে কে একটা বলে ওঠে “জেগে ওঠ সাইদুল। চোখের সামনে যে খাবার পাচ্ছিস তাকে আর ফেরত দিস না”
রুদ্ধশ্বাসে দৌড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাইদুল.................................


প্রায় সাইক্লোনের বেগে একটা ভারী হাত নেমে আসে, ঠিক সুবীর বাবু আর সত্য বাবুর মাঝে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সত্য বাবুর গালে অন্তত একনাগাড়ে ৪-৫ টা চড়। হুমড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ে যান সত্য বাবু। কোনরকমে উঠে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে দেখেন। ঠিক যেভাবে কোনও মাছকে জল থেকে ডাঙায় তুললে ছটপট করতে শুরু করে ঠিক সেরকম ই পাগলের মত ছটপট করতে শুরু করে দেয় সত্য বাবু। গলা কাঁপতে শুরু করে, মুখ দিয়ে বিড়বিড় করে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছিলেন কিন্তু তা সুবীর বাবুর কান অবধি পৌছায় না। চোখদুটো প্রায় ওপরের দিকে উঠে যায়। হথাত সংজ্ঞাহীন হয়ে মাটিতেই লুটিয়ে পড়েন সত্যবাবু।
“যা শালা মালটা কি টেঁসে গেলো নাকি? শালা এই মালটা পটল তুললে তো সব বিগড়ে যাবে”
চোখের সামনে যেন একটা উচ্চপ্রযুক্তির হলিউড ফিল্ম দেখলেন সুবীরবাবু। কিছুতেই ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারছিলেন না। কে যে এই কাণ্ডটা ঘটিয়ে দিলো তাও একবার চোখ তুলে দেখার সাহস হলনা।
“হ্যাঁ রে সুবীর, তোর বাড়িতে দড়ি আছে। মালটাকে ভালো করে দড়ি দিয়ে বাঁধি। এই তো কুয়োর দড়িতে কিন্তু ব্যাপক হবে, আরে এতো শালা তোর আসল গুপ্তধন রে। ভালো করে সামলে রাখ একে”
চোখের সামনে যে মানুষটা সুবীর বাবু দেখলেন তাকে দেখে সত্যি ওনার ও হার্টফেল হওয়ার ই কথা। অ্যাঁ করে ভয়ে প্রচণ্ড জোরে চেঁচিয়ে উঠলেন সুবীর বাবু।
“আরে তুই কাকে ভয় পাচ্ছিস সুবীর? আমি তো তোর বাল্যবন্ধু মানব”
হ্যাঁ করে তাকিয়ে থাকেন সুবীর বাবু।
মানবঃ তুই কবে থেকে ভুতে বিশ্বাস করতে শুরু করলি রে? আচ্ছা বাবা এই দেখ। (সত্য বাবুর মুখটা এক হাতে কিছুটা ওপরে তুলে) আচ্ছা ভুতের ঠোঁট ফেটে কি রক্ত পড়ে?
এতক্ষনে শান্ত হন সুবীর বাবু। “কিন্তু তুই...”
মানবঃ শোন সুবীর, হাতে একদম সময় নেই। একটা বিশাল চক্রান্ত হয়েছে শেষ কয়েকমাস ধরে...
মানব বাবুর কথা শেষ হয়না। তার আগেই সুবীর বাবু কিছুটা উত্তেজিত হয়েই বলে ওঠেন
সুবীর বাবুঃ জানি রে। বর্ণালীর আমি কোনও ক্ষতি করতে চাইনি। ওটা শুধুই একটা ভুল ছিল। কিন্তু তার বদলে তুই আমার যা ক্ষতি করলি...
মানব বাবুঃ বিশ্বাস কর সুবীর আমি তোর কোনও ক্ষতি ই করিনি। করেছে অন্য একজন। বিশাল এক চক্রান্ত হয়েছে তোর সাথে। তুই মাথা ঠাণ্ডা রাখ, যেকোনো সময় পুলিশ বাড়িতে আসবে, তোর হাতে একটাই প্রমান তা হোল সত্য বাবু। আমার কথাগুলো মন দিয়ে শোন তবেই তুই বাঁচবি নয়ত নিজেকে কিছুতেই মুক্ত করতে পারবি না তুই।
সুবীর বাবুর মাথা প্রায় খারাপ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মানব বাবুর দিকে।
সুবীর বাবুঃ তাহলে কি সত্য বাবু শুধু এতো চালাকি করে আমায় মিথ্যে কথা বলে গেলেন। আর আমি সব সত্য ভেবে বিশ্বাস করে গেলাম।
মানব বাবুঃ না সত্য বাবু সব মিথ্যে কথা বলেন নি, অনেকটাই ধ্রুব সত্য। শোন সুবীর তুই নিজেকে শান্ত কর, বিশাল একটা চক্রান্ত হয়েছে তোর সাথে। তোকে আমি ছাড়া কেউ ই এই মায়াজাল থেকে বার করতে পারবে না।
চুপ করে মাথা নিচু করে বসে থাকেন সুবীর বাবু।
মানব বাবুঃ সত্য বাবু তোকে এপ্রিল ফুল বানায়নি সুবীর। ওর গল্পে অধিকাংশই সত্য। কিন্তু তোর মেয়েরা। ছি ছি সুবীর, তুই তো আমার চেয়েও অধম রে। ওই দুটো নিষ্পাপ ফুলের কুঁড়ির সম্বন্ধে এতো নোংরা কথা বাবা হয়ে শুনতে পারলি তুই? ছি ছি, আমার ই লজ্জা করছে। তোর মেয়েরা কোনও অন্যায় করেনি। বিশাল একটা চক্রান্ত হয়েছে তোর সাথে।
মাথা নিচু করে থাকে সুবীর বাবু। বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থাকে মানব।
মানব বাবুঃ হ্যাঁ, তুই ভালো মানুষ তাই হয়ত এই ফাঁদগুলো বুঝতে পারিস নি। আসলে আমি তো সত্য বাবুর আসল পরিচয় জানি তাই... হয়ত। যাই হোক, তোর সম্পূর্ণ ব্যাপারটা বিশ্বাস করার একটাই কারন ওই চাওয়ালা। তুই সত্যি ই ভুত দেখেছিস সুবীর। আর তার ওপর একের পর এক টুইস্ট। কখনো বংশী ভিলেন, কখনো বংশী আবার সম্পূর্ণ পালটি খেয়ে হিরো। একের পর এক টুইস্ট, লোকটা যতই বদ হোক, সাইকোলজি সাবজেক্ট টা প্রচণ্ড ভালোই বোঝে।
কিন্তু সুবীর ডায়েরীর আসল টুইস্ট তো এবার থেকে আমি দেবো রে। আজ হোল প্রথম টুইস্ট। এরপর একের পর এক টুইস্ট আসবে আর তোর চোখের সামনে সব পরিস্কার হবে।
সুবীর বাবুঃ ডায়েরীটা কি সত্যি ই অভিশপ্ত?

মানব বাবুঃ (প্রচণ্ড জোরে হেঁসে) এই ডায়েরীটা আমি ই কিনেছিলাম রে, পাড়ার দোকান থেকে। ২০ টাকা দাম নিয়েছিল। কিন্তু সত্যি ই কি অভিশপ্ত ডায়েরী বলে কিছু আছে? জমিদারবাড়ির অভিশাপ কি ভুয়ো? এর উত্তর তো অভিশপ্ত ডায়েরী শেষ হলেই পাবো। আপাতত ডায়েরীর গল্প বলার দায়িত্ব আমি নিলাম। দেখ কেমন একের পর এক টুইস্ট দি। [/HIDE]
 
[HIDE]পর্ব ১৬- দ্বিতীয় টুইস্টঃ[/HIDE][HIDE][/hide][HIDE]

সুবীর বাবুঃ অনুরাধা, দেবেন্দ্র, সত্যেন্দ্র, মৃত্যুঞ্জয় অর্থাৎ ঠাকুর ডাকাত, সুপ্রতীক, বংশী, মালা আরও কত চরিত্র। এদের কি কোনও অস্তিত্বই নেই? হথাত এদের কথা আমায় জানিয়ে কি লাভ মানব?
মানব বাবুঃ লাভ ক্ষতি আমিও জানিনা। কিন্তু এই গল্পটা একেবারে সত্যি। ডায়েরীর দুটো খণ্ড অর্থাৎ সুপ্রতীকের গল্প ও সত্যেন্দ্রের গল্প এটা হুবহু এক। কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে এতটা সত্য এক ঘটনা এই লোকটা বলল বা কি করে। যতক্ষণ না মালটার হুঁশ ফিরছে ততক্ষন সত্যি এই রহস্যটা কিছুতেই ফাঁস হবেনা। যদিও এই গল্পের মধ্যে হাজারো ত্রুটি ছিল। যেমন ধর, কলকাতা শহরে কি আবার কোনও নীলকুঠি ছিল নাকি। নীলের চাষ তো হত জেলা অঞ্চলে। তো গল্পে এই নীলকুঠীর অস্তিত্ব এটা সত্যি ই সত্যবাবুর নিজমনে তৈরি। আবার ধর, জঙ্গল ও ডাকাত। ১৬০০ সালের দিকে কলকাতার আশেপাশে কোনও জঙ্গল ও ছিলনা ডাকাত ও ছিলনা।
সুবীর বাবুঃ হ্যাঁ একদম ঠিক বলেছিস তুই। আমি ইতিহাসের লোক হয়েই বুঝতে পারলাম না। সত্যি কিকরে যে এরকম হোল?
মানব বাবুঃ সব তুই বিশ্বাস করেছিস তার কারন একটাই। ওই চাওয়ালার ভূত। ওই ভূতটাই এই গল্পের একমাত্র ভূত...
সুবীর বাবুঃ না রে আরও কতগুলো ভূত আমি দেখেছি। জমিদার বাড়িতে আমি নিজের চোখে অনুরাধা, সত্যেন্দ্র এদের আত্মা দেখেছি। যখন ভেতরে ঢুকেছিলাম বাড়িটা ছিল সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ। হথাত দেখি প্রচুর দাসী ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমনকি এই সত্য বাবুও যে ভূত তাও আমি বিশ্বাস করেছিলাম কারন...
মানব বাবুঃ (প্রচণ্ড জোরে হেঁসে উঠে) আরে পাগল, ভুতেদের কি কাজ নেই তোর মত একটা গোবেচারা লোকের ক্ষতি করবে। যদি কোনও ভুতকে সামনে কখনো দেখিস, মনে রাখিস সে হয় তোর ওপর বদলা নিতে নয় তোকে উপকার করতেই এসেছে। এই যেমন ওই চাওয়ালার ভূতটাই ধর। তুই চা খেলি, চলে যাওয়ার সময় উনি কি বললেন “দাদা ওখানে যাবেন না, জমিদারবাড়ি থেকে কেউ বেঁচে ফেরেনা” (একদম ওই চাওয়ালার মতই গলার স্বরে) কেন বলেছিল তুই এখন কিছু বুঝলি?
সুবীর বাবু কিছুটা চমকেই যান। মানব যে এতো ভালো অন্যের গলা নকল করতে পারে তা সত্যি ই ওনার জানা ছিলনা।
সুবীর বাবুঃ তুই এতো কিছু কিকরে জানলি রে মানব?
মানবের থেকে সমস্ত কিছু ধীরে ধীরে বুঝতে পেরে সুবীর বাবুও নিজের সেই পুরনো মেজাজটা ধীরে ধীরে ফিরে পাচ্ছিলেন।
মানব বাবুঃ এটা তো একটা টুইস্ট বন্ধু। বললাম না একের পর এক টুইস্ট দেবো। সবার আগে তোকে বলি সত্য বাবু আসলে কে? ও না তার আগে তোকে একটা গল্প বলি, তুই অনেককিছুই বুঝে যাবি তাহলে।
সুবীর বাবু চুপ করে মানবের কথা শুনতে থাকেন।
মানব বাবুঃ ছোটবেলায় বাবার থেকে গল্প শুনেছিলাম সিনিয়ার পিসি সরকার নাকি তাজমহলকেই ভ্যানিস করে দিয়েছিলেন। আচ্ছা সুবীর আদৌ কি তাজমহলের মত এক অট্টালিকাকে ভ্যানিস করা যায়? উত্তরটা হোল না করা যায়না। তাহলে? উনি আসলে একটা কেমিক্যাল ব্যাবহার করেছিলেন। সবাই চোখের সামনে একটা ইলুশন দেখেছিল। এটাই ওনার ম্যাজিকের ভাষায় ভ্যানিশ। আর সাইকোলজিতে একেই বলে মাইন্ড ক্যাপচারিং। সত্য বাবুর কাছে অন্তত ৩টে ডায়েরী ছিল, প্রত্যেকটায় অনেক আগে থেকেই গল্প লেখা ছিল। আর গল্প গুলো তৈরি হয়েছিল মোট তিনজন মানুষের মতামত নিয়ে তাদের মধ্যে আমি একজন। যদিও তোর জীবনের ঘটনাগুলো গল্প হলেও জমিদার বাড়ির কথাগুলো একেবারেই গল্প নয়। কিন্তু কিকরে এতটা সত্য উনি লিখে ফেললেন এটাই একটা টুইস্ট।
সুবীর বাবুঃ আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। আমার সবকিছু কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। আমাকে বুঝিয়ে বল ভালো করে।
মানব বাবুঃ নিশ্চয়ই বলব বন্ধু। তুই সত্য বাবুকে খুব ভালো করে চিনিস। ওর নাম কলেজে বেশ কয়েকবার শুনেছিস। এমনকি একটি বইতেও পড়েছিস ওর ব্যাপারে। সত্য বাবুর আসল নাম সত্যব্রত দত্ত, কুখ্যাত...
“the brain study of a serial killer” আরে মানব এভাবে আমি ক্লিন বোল্ড হয়ে গেলাম। তাহলে কি সবকিছুর পেছনে আসলে...
সুবীর বাবু প্রচণ্ড উত্তেজনায় প্রায় ঝড়ের বেগে সমস্ত কথা বলে ফেললেন। কিন্তু ওনাকে নিজের কথা সম্পূর্ণ করতে দিলেন না মানব বাবু।
মানব বাবুঃ না বন্ধু, কোনও সন্দেহের বশে নাম প্রকাশ করে আমার টুইস্টগুলো নষ্ট করা চলবে না। এখনো অনেক অনেক টুইস্ট বাকি রয়েছে বন্ধু। অপেক্ষায় থাকো। তবে তুই কিছুটা ঠিক ই অনুমান করেছিস। যাই হোক। এই সেই কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার সত্যব্রত দত্ত। আমেরিকার এক বিখ্যাত ইউনিভার্সিটির পিএইচডি স্কলার, সেখানেই নিজের গাইড এর স্ত্রীর সাথে প্রনয়ে জড়িয়ে পড়া। তারপর সাইকোলজিরই একের পর এক কনসেপ্ট লাগিয়ে গাইড, তার বাড়ির চাকর এমনকি বলতে লজ্জা হচ্ছে তাও ছোট্ট মেয়েটাকেও হত্যা করে। এমন ভয়ঙ্কর খুনির অপরাধ গোটা পৃথিবীর কেউ প্রমান করতে পারেনি। লোকের চোখে ধুলো দেওয়াই যে এর কাজ। সত্যি লোকটা জিনিয়াস। কিন্তু এইসব করতে গিয়ে একদিন সর্বস্বান্ত হয়ে যায়। আর তারপর ই সেই বিখ্যাত প্রোজেক্ট “the brain study of a serial killer” কি অদ্ভুত না! বিজ্ঞান আর আইন একে অপরের বিপরীত হয়ে যায়। না লোকটা বেকসুর খালাস হয়ে যায়। কোনও শাস্তি ই পায়নি। তা এরকম এক লোক তোকে বোকা বানাবে না তো কাকে বানাবে?
জানি কিছুটা মাথায় ঢুকলেও এখনো পুরোটা তুই বুঝতে পারিসনি। আসতে আসতে হবে। কম জটিল ব্যাপার তো নয় এটা। একের পর এক টুইস্ট আসবে।
সুবীর বাবুঃ কিন্তু এই সত্য বাবু, হথাত আমার পেছনেই বা লাগতে গেলো কেন। আর আমার বাড়িতে ঘটে যাওয়া এতোগুলো ঘটনাও বা জানল কি করে। যেমন ধর মালতীকে সত্যি ই কোনও এক অশরীরী উত্তক্ত করত, সেকথা আমায় ও বলেওছিল। আর ধর, বর্ণালীর ব্যাপারটা। এটা তো আমি তুই আর মালতী ছাড়া আর কেউ জানেনা।
মানব বাবুঃ বর্ণালীর ঘটনাটা সত্য বাবুকে আমিই বলেছিলাম। আরে এই প্ল্যানটার সাথে আমিও তো জড়িয়ে ছিলাম রে। কিন্তু শালা... থাক। আর অশরীরীটার সৃষ্টিকর্তা কে? এটা এক বিশাল বড় টুইস্ট। সব বলব আগে বলে দি বর্ণালীর ব্যাপারটা। বর্ণালীকে কেন অতটা কষ্ট দিয়েছিলি সুবীর? আমিও তো ওকে ভালবাসতাম, কোনোদিন বলতে পারিনি। তারওপর ক্লাসের ফাস্ট বয়ের সাথে প্রেম বলে কথা। মেয়েটা ট্রেনের নীচে আত্মহত্যার চেষ্টা করেও বেঁচে গেলো। ওইভাবে না বাঁচলেই ভালো হত। কি অসুবিধে ছিল তোর?
লজ্জায় মাথা নিচু করে নেন সুবীর বাবু।
সুবীর বাবুঃ বাড়িতে জানাজানি হয়ে যায়। একদম নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে ছিলাম। বাবা প্রচণ্ড অশান্তি করেছিলেন। ভেবেছিলাম, জীবনে কিছু হয়ে যাই তারপর ওকে আবার নতুন করে সব বলব। শুধু এটাই বলেছিলাম “বর্ণালী আমি আর সম্পর্ক রাখতে পারব না। আমার পড়াশুনায় প্রচণ্ড ক্ষতি হচ্ছে” কিন্তু ভাবিনি এর জন্য...
মানব বাবুঃ তুই ভালবাসতে জানিস না সুবীর। আর ঠিক সেই কারনেই তুই ও প্রকৃত ভালোবাসা পেলিনা। তোর আমি কোনও ক্ষতি করতে চাইনি। বর্ণালী শেষ দিন অবধি আমার কাছেই ছিল। আমি ওকে দগ্ধে দগ্ধে মরতে দেখেছি রে। হয়ত সেই কারনেই আমার ও আর জীবনে কিছুই ছিলনা, শুধুই একটা প্রতিশোধ চেয়েছিলাম। কিন্তু আমিও পারলাম না। আসলে কি জানিস তো আমরা না নিজের না অন্যের ভাগ্য লিখে দিতে পারি। সব ই ওপরওয়ালার খেল। আমি শেষদিন অবধি বর্ণালীকে বলে গেছি আমি ওকে বিয়ে করতে চাই, কিন্তু মেয়েটা তোকে ছাড়া কাউকেই... আমারও সংসার হলনা, বর্ণালীর হলনা তোর ও হলনা। মানুষ নিজের পাপের ফল ঠিক ই পায়রে।
মাথা নিচু করে নেয় সুবীর বাবু। চোখ দিয়ে টপ টপ করে ফোঁটা ফোঁটা জল নীচে পড়তে থাকে।
মানব বাবুঃ আমি তোকে একদম শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম। তোর সর্বনাশ দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই... যাই হোক। তোর সাথে যা হয়েছে তাতে হয়ত একটা ছোট্ট ভুমিকা আমার আছে। কিন্তু আসল মাথা অন্য কেউ। তুই ও তা আসতে আসতে বুঝতে পারছিস।
এই গুরুগম্ভীর অবস্থাকে ভঙ্গ করে আবার সুবীর বাবুর মোবাইলটা বেজে ওঠে। হথাত মানব বাবু ইশারায় ওনাকে বিরত করেন। সুবীর বাবু বোঝেন মানব ওকে ফোনটা রিসিভ করতে নিষেধ করছে। তাও একবার ফোনটা হাতে নিয়ে সুবীর বাবু দেখেন এটা রূপসার ফোন।
মানব বাবুঃ সুবীর, আর হাতে সময় নেই। হয়ত এতক্ষনে পুলিশের বিশাল বাহিনী তোর বাড়ির দিকে রওনা হয়ে গেছে। আর সামান্য কোনও ভুল করা চলবে না। তুই এই মুহূর্তে খুনের আসামী। তোর কাছে কোনও প্রমান নেই। ডায়েরীর গল্পটা কেন ঠিক আজকেই তোকে বলা হোল তা তুই কিছুক্ষনের মধ্যেই বুঝতে পারবি। তুই বেশকিছু ভুল করে ফেলেছিস। তার মধ্যে অন্যতম, রূপসার কাছে বৌদিকে বেশ্যা বলা। রূপসাকে তুই নিজে ফোন কর, আর ও কিছু বলার আগেই ওকে বল যে বৌদিকে এরকম বলে তুই ঠিক করিস নি। আসলে একজন লোক বৌদির নামে কিছু কথা বানিয়ে বলেছে তাই তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছিল। এবং তুই রাগের মাথায় ওই কথা বলে ফেলেছিস। যা বললাম ঠিক তাই কর নয়ত তোর বিপদ আরও বাড়বে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তুই একটা বিশাল রহস্য বুঝতে পারবি।
সুবীর বাবু অসহায়ের মতন মানব বাবুর কথা শুনে গেলেন। রূপসার কলটা ততক্ষনে কেটে গেছে। সুবীর বাবু নিজেই আবার রূপসার মোবাইলে কল করেন। রূপসা কিছু বলার আগেই উনি বলে ওঠেন
সুবীর বাবুঃ মা রূপসা, বিশাল ভুল হয়ে গেছে। আসলে একটা বদ লোক তোর মায়ের নামে বানিয়ে বানিয়ে কিছু কথা বলল তাই আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছিল। কি করে যে এতো বাজে কথা আমার মুখ দিয়ে বেরোল আমি নিজেই জানিনা।
ফোনের অপর প্রান্ত থেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে রূপসার কান্নার আওয়াজ আসতে থাকে। সুবীর বাবু যথেষ্ট বিচলিত হয়ে পড়েন।
সুবীর বাবুঃ কি হয়েছে মা, তুই কাঁদছিস কেন। আর তিলোত্তমা কই।
ফোনটা তিলোত্তমা রূপসার হাত থেকে নিয়ে নেয়।
তিলোত্তমাঃ বাবা, মা যে এরকম করবে আমরা কখনো ভাবিনি। অথচ কিছুক্ষন আগে তোমাকেই আমরা কি কি ভেবে বসেছি। জানো মা আমাদের তোমার সম্বন্ধে কি বলেছে? তুমি সন্দেহবাতিক, তুমি মানসিক রুগী, তুমি...
ফোনটা রূপসা কেড়ে নেয় তিলোত্তমার থেকে।
রূপসাঃ বাবা, এক্ষুনি একবার টিভিটা খোল। তুমি সব বুঝে যাবে। মা কেন এরকম করল বাবা। মা তো তোমায় প্রচুর ভালোবাসতো। তুমি চিন্তা করোনা বাবা, আমরা দুবোন তোমার পাশেই আছি। মায়ের পাশে নয়।
ফোনটা কেটে দেয় সুবীর বাবু। ওনার সামনে সত্যি ই যে বিশাল এক বিপদ তা এবার উনি খুব ভালো করেই বুঝতে পারেন। মানব বাবু ওনার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন
মানব বাবুঃ সুবীর যা হচ্ছে, তা মেনে নিবি। ঘাবড়ে যাবি না। কারন দুটো মেয়ের দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে তোর ওপর। চল টিভিটা খোল। এবার তুই সম্পূর্ণ ব্যাপারটাই প্রায় বুঝে যাবি।
মানব বাবু ও সুবীর বাবু দুজনেই টিভির ঘরের দিকে যেতে শুরু করেন।
সুবীর বাবু সাধারনত নিউজ ই দেখতে ভালবাসেন তাই টিভি তে নিউজের চ্যানেলটাই অন ছিল। টিভি অন হওয়া মাত্র নিউজ চ্যানেল ও সাথেসাথে প্রায় পাগল করে দেওয়া এক দৃশ্য। মানবের আগমন, সত্য বাবুর চাতুরি প্রকাশ পাওয়া এ যেন সুবীর বাবুর হৃদয়ে এক নতুন রক্ত সঞ্চালন ঘটিয়েছিল। যে স্ত্রীর জন্য উনি গর্ব বোধ করেন, সহকর্মীদের কাছে যার নামে এতো বড়াই করেন সে আর যাই হোক বেশ্যা নয়। মানুষের হৃদয় ও কি অদ্ভুত। ভাঙাগড়ার এক অদ্ভুত সমুদ্রে বারবার হারিয়ে যায়।
“ম্যাডাম, আপনি জানেন আপনি ঠিক কতবড় অভিযোগ করছেন? আপনার কাছে কোনও প্রমান আছে এর? আর কেন এতদিন পরে আপনি পুলিশে ডায়েরী করলেন। আপনি যদি সন্দেহ করেই থাকেন তো ৩ মাস আগে কেন পুলিশের কাছে এলেন না”
টিভির ক্যামেরা তখন তরুন সাংবাদিকের দিকে। অপর প্রান্তে কে বসে আছে তার অনুমান হয়ত মানব ও সুবীর বাবুর হুবহু এক। তরুন সাংবাদিক একের পর এক প্রশ্নবানে জর্জরিত করে চলেছেন কোনও এক অজানা মহিলাকে। ধীরেধীরে ক্যামেরার মুখ অন্যদিকে ঘোরে। সুবীর বাবুর আশঙ্কা যে এভাবে সত্যি হবে তা উনি কল্পনাও করতে পারেন নি। টিভি ক্যামেরায় ভেসে ওঠে ওনার ২০ বছরের বিবাহিত স্ত্রী মালতী দেবী।
মালতী দেবীঃ আপনারা কেন বুঝতে পারছেন না, আমার মানসিক অবস্থা একদম ভালো নয়। (শাড়ির আঁচল দিয়ে নিজের চোখটা মুছতে মুছতে) আমি অনেকদিন আগেই বুঝে গেছিলাম। কিন্তু ওনাকে খুব ভয় করে। উনি মানসিকভাবে সুস্থ নন, সবসময় কি এক অভিশপ্ত ডায়েরীর কথা বলে যান। কিসব জমিদার বাড়ির কথা বলেন। যতবার জিজ্ঞেস করি মানব দা কই, উত্তর দেন ওর ওপর ডায়েরীর অভিশাপ রয়েছে। আজ ৩ মাস হয়ে গেলো মানবদার কোনও খোঁজ নেই।
সাংবাদিকঃ তার মানে আপনি বলতে চান আপনার স্বামী, মানসিক উন্মাদ? এর আগে কখনো এটা আপনার মনে হয়নি? মানে শেষ কবে থেকে মনে হচ্ছে?
মালতী দেবীঃ (শাড়ির আঁচলে চোখের জল মুছতে মুছতে) দেখুন, আমি নিজের স্বামীকে দোষারোপ করতে থানায় যাইনি। আমি তো শুধু মানবদাকে পাওয়া যাচ্ছেনা সেই অভিযোগ করতেই থানায় গিয়েছিলাম। এরপর যা হয়েছে তা তো পুলিশ ই করেছে। আমি শুধু ওনাদের বলেছি একটা প্রোজেক্ট এর কাজে জমিদার বাড়িতে যাওয়ার পর থেকেই আমার স্বামীর মাথায় গণ্ডগোল শুরু হয়েছে। কখনো মানব দা কখনো বা পাড়ার ছেলেদের সাথে আমার অবৈধ সম্পর্ক চলছে বলে দাবী করে। আমার পাশে কেউ নেই, আমার মেয়েরাও আমার পাশে নেই। আমি একা মহিলা। আমায় যেতে দিন।
“ওকে ওকে ম্যাডাম। আর আপনাকে বিরক্ত করব না। আপনি এবার আসতে পারেন। এতক্ষন আপনারা দেখছিলেন বিখ্যাত গবেষক সুবীর সেনের স্ত্রী মালতী দেবী ঠিক কি ভয়ঙ্কর অভিযোগ এনেছেন নিজের স্বামীর নামে। পুলিশ ১ ঘণ্টার তল্লাশির পর ই জমিদারবাড়ির পেছনের মাঠ থেকে মাটি চাপা দেওয়া এক পচাগলা মৃতদেহ আবিস্কার করেছে। পরনের পোশাক দেখে মনে করা হচ্ছে, এই মৃতদেহ মানব বাবুর। এবং সন্দেহের বশে এই খুন......”
শেষ কয়েকটা কথা আর সত্যি ই সুবীর বাবুর মাথায় ঢুকল না। ভুতের ভয় ঠিক কি জিনিষ এর আগে সত্য বাবুর আবির্ভাবে উনি বুঝেছেন, কিন্তু ওনার গায়ের এই কাঁটা দেওয়া এটাই প্রমান করে যে উনি এতোবড় একটা টুইস্ট এর জন্য সত্যি ই প্রস্তুত ছিলেন না। একটা বরফের মত ঠাণ্ডা হাত সুবীর বাবুর কাঁধে এসে স্পর্শ করে। মনে সাহসের সঞ্চার করে কোনওরকমে সুবীর বাবু পেছন ফিরে তাকান। পেছনের দৃশ্য যেকোনো সাধারন মানুষের হার্টফেল করিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু ভুতের অভিজ্ঞতা তো সুবীর বাবুর কম হলনা। তাই উনি শুধুই আঁতকে উঠলেন।
ওনার পেছনে দাঁড়িয়ে একটা পচা গলা মৃতদেহ। চোখ বলে কিছুই নেই, শুধু দুটো গহ্বর। ভয়ে দুচোখ বন্ধ করে নেন সুবীর বাবু। ওনার কানে ভেসে আসে একটা ভারী গলা “ভূত দেখলে মানুষ ভয় পাবেই রে। আর ভূত মানুষের কাছে মোট দুটো কারনে আসে। হয় উপকার করতে নয় ক্ষতি করতে। তোর জন্য আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেছে। তাও আমি তোকে বাঁচাতে চাই, কারন তুই আমার বাল্যবন্ধু। চোখ খোল সুবীর, দেখ যাকে এতো ঘেন্না করতিস আজ সেই তোর জন্য এখানে উপস্থিত”
চোখ খোলেন সুবীর বাবু। মানব নিজের পুরনো রূপটা আবার ফিরে পেয়েছে। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে সুবীর বাবু নিজেকে কোনরকমে নিয়ন্ত্রন করেন। কিন্তু আবারও একটা চোখ ধাঁধানো জিনিষ। মানবের হাতে লাল রঙের অতি পুরনো একটা ডায়েরী। সুবীর বাবুর চোখ একদম সেই ডায়েরীর ই দিকে। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন সুবীর বাবু।
মানব বাবুঃ (মুচকি হেঁসে) হ্যাঁ রে সুবীর, অভিশপ্ত ডায়েরী সত্যি ই আছে। জমিদারবাড়ির নবীনতম সদস্য আমি। যাওয়ার আগে তোর সাথে বংশী, সুপ্রতীক, মালা, অনুরাধা, মৃত্যুঞ্জয় সবার পরিচয় করিয়ে দেবো। এখন থেকে তো ডায়েরীর গল্পটা বলার দায়িত্ব আমার ওপর। আমি যে নবীনতম। এরপর কোন সুখী দম্পতির জীবনে এই ডায়েরীর অভিশাপ নেমে আসে কি জানি।
হ্যাঁ করে মানবের কথা শুনতে থাকেন সুবীর বাবু।
মানব বাবুঃ অবৈধ সম্পর্ক, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক বা তোদের মত শিক্ষিত লোকের ভাষায় adultery relation যতদিন থাকবে, মালতীরা যতদিন সুবীরদের ছেড়ে নতুন এক সঙ্গীর দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকাবে ততদিন এই ডায়েরী থাকবে।
সুবীর বাবুঃ কে সে?

মানব বাবুঃ একসাথে এতো টুইস্ট। সব এক এক করে বলব। ডায়েরীটা নিয়ে এখানে আসার কথা ছিল আমার। কিন্তু শালা সত্য বাবু নিজেই কেন কিভেবে যে এখানে চলে এলো। ঠিক আছে কোনও ব্যাপার নয়, পরের টুইস্ট গুলো তো আরও ভয়ঙ্কর। কিন্তু বন্ধু একটা কথা মনে রেখো ভগবানের ও সাধ্য নেই মানুষের ইতিহাস লেখা। তাই ডায়েরী তোর জীবন থেকেই লেখা হয়, ডায়েরী মেনে তোর জীবন নয়। তাই এটা অভিশপ্ত কিনা সেটা তো একেবারেই তোদের মত গবেষকদের ব্যাপার। (ডায়েরীটার একদম শেষদিকে পাতা উলটে) এই দেখ, পর্ব ১৬- দ্বিতীয় টুইস্ট লেখা হয়ে গেছে কিন্তু পর্ব ১৭ এর কোনও উল্লেখ নেই। আমার গল্প শেষ হবে আর ডায়েরী ও লেখা হয়ে যাবে। [/HIDE]
 
[HIDE]শেষ পর্বঃ জীবন (সবচেয়ে বড় টুইস্ট) পার্ট ১ [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
“the brain study of a serial killer” সত্যি নামটার মধ্যেই কেমন একটা টুইস্ট এর গন্ধ রয়েছে। সত্যি ই একটা টুইস্ট হয়েছিল, ঠিক আজ থেকে ১০ বছর আগে। কোনও এক পিএইচডি স্কলার তার গাইডের কাছে একটা পেপার ডাউনলোড করে নিয়ে যায় ও বলে “স্যার অসাধারন একটা কাজ ইউরোপে শুরু হয়েছে। আমি এর ওপরেই গবেষণা করতে চাই” প্রথমে তো গাইড প্রচণ্ড বকাবকি করেন নিজের সবচেয়ে প্রিয় ছাত্রটিকে, কিন্তু পরবর্তীকালে সেই ছাত্রের একগুঁয়েমির কাছে শিক্ষক হার মানেন। সব ই তো ঠিক ছিল, মুশকিল ছিল একটা জায়গায়। এতো নতুন একটা কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গেলে তার যথাযোগ্য গিনিপিগ চাই। গিনিপিগ, অর্থাৎ যার ওপর এই পরীক্ষা চলবে। এতো কঠিন একটা কাজ তো আর ২-৩ বছরে হয়না। ধীরে ধীরে একটার পর একটা পদক্ষেপের মাধ্যমে নতুন কিছু তথ্য খুঁজে পাওয়া। সত্যব্রত দত্তই হোল সেই গিনিপিগ। আমেরিকায় সবকিছু খুইয়ে সেই এই পোড়াদেশেই ওকে ফিরে আসতে হত। কিন্তু ফিরে এসে যে এইভাবে গিনিপিগ হতে হবে তা হয়ত ওর জানা ছিলনা।
গবেষকের বয়স তখন এই ২৫। সেই বয়সেই সত্যব্রত বাবুর মত এক ঘোড়েল মালকে কিকরে যে কব্জা করে নিলেন তা সত্যি ই আশ্চর্যজনক। বিজ্ঞান এর আগে বহুবার বহু গিনিপিগ তৈরি করেছে। কিন্তু এভাবে বোধ হয় নিজের গিনিপিগকে কেউ ই ব্যাবহার করেনি। সত্যি ওনার থেকে এই জিনিষটা প্রতিটি গবেষকের ই শেখার আছে। কি সুবীর আর কিছু বলতে হবে?
সুবীর বাবুঃ সুব্রতকে তো আমি নিজের ভাইএর মত স্নেহ করতাম। এই মুহূর্তে ওর মত ব্রিলিয়ানট গবেষক আর একজন ও নেই। আর ওই কিনা...
মানব বাবুঃ কেন রে তুই কি মালতী দেবীকেও কম ভালবাসতিস নাকি? এগুলো হয়রে। সত্যি হয়। কেন হয় তার কোনও কারন নেই।
সুবীর বাবুঃ আমি সত্যি নিজেকে এখনো বিশ্বাস করাতে পারছিনা। সুব্রত... আমার কলেজের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহকর্মী, যাকে আমি মেয়েদের কাছে গুরুর মর্যাদা দিলাম, সেই সুব্রত। আর মালতী কি করে এটা করল? সুব্রত যে আমার ছোট ভাইএর মত...
মানব বাবুঃ তোর সব প্রশ্নের উত্তর আমি হয়ত দিতে পারব না। কিন্তু বেশ কিছু রহস্য এবার আসতে আসতে সামনে আসবে। মনে কর সেইদিনের কথা, আমি তোদের বাড়ি থেকে অপমানিত হয়ে সবে মাত্র বেরিয়ে আসছি। আর ঠিক তার কয়েকঘণ্টা পর তোর একটা ফোন, “মানব ১৫ লাখ টাকা তোর বাড়ির...” সমস্ত রহস্য লুকিয়ে আছে এই কয়েকটা ঘণ্টার অন্তরালে।
সেদিনের তোর ওই অপমান আমি সত্যি ই ভালোভাবে নিইনি। তুই কি জানিস সত্যি ই বৌদি সেদিন আমার সাথে শুতে চেয়েছিল। আমি যখন লুকিয়ে বৌদির সাড়ি পড়া দেখছিলাম তখন পেছন ঘুরে বৌদি আমার দিকে তাকিয়েছিল। কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমাদের নজর মেলে। আমি ওখান থেকে চলে আসি। তার কিছুক্ষন পর ই দেখি বৌদি হাঁসতে হাঁসতে আমার কাছে আসে। এমনকি রাতে শোয়ার সময় ও বৌদি খুব ভালো করেই বুঝেছিল তোর ঘরে আমি আর আমার ঘরে তুই। সেদিন কোনও কামনার বশে পড়ে বৌদি আসেনি। এটা ছিল একটা চক্রান্ত। আসতে আসতে সব ই বুঝবি।
সেদিন তুই আমায় ওভাবে অপমান করলি, আমার চোখের সামনে বর্ণালীর সেই মৃত্যু যন্ত্রণাটা ভেসে উঠেছিল। ওফ, কি কষ্ট পেয়ে মেয়েটা মরেছিল। বর্ণালী চলে যাওয়ার পর মদ ছাড়া আমার জীবনে আর কিছুই ছিলনা। কিন্তু সত্যি বলছি সুবীর, সেদিনের অপমানটার আগে অবধি আমি তোকে ক্ষমাই করে দিয়েছিলাম। কিন্তু পুরনো ক্ষতটায় আবার নতুন করে নুনের ছিটে দিয়ে তুই আমাকে আবার জাগিয়ে দিলি।
তোর বাড়ি থেকে বেরোনোর পর শরীরটা কিছুতেই সামনের দিকে এগচ্ছিল না। বারবার মনে হচ্ছিল ফিরে যাই, তোর গালে একটা চড় মারি আর বলি, “তুই ও বা কোন সাধুপুরুষ শুনি, তুই ও তো একটা নিষ্পাপ মেয়ের জীবন নষ্ট করেছিস। আর তোর বউ ও কম যায়না” হথাত পেছন থেকে আমার কাঁধে কেউ একটা হাত রাখে। আমি চমকে গিয়ে পেছন ফিরে দেখি সুব্রত বাবু।
সুব্রত বাবুঃ কি বন্ধু, খুব চিন্তায় লাগছে আপনাকে। বন্ধু বলছি কেন জানেন, আমি আড়াল থেকে সব ই শুনেছি। আমরা বন্ধু না হলে কারা বন্ধু হবে।
আমিঃ কেন হথাত আমরা কেন বন্ধু হতে যাবো? আর আপনার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।
সুব্রত বাবুঃ পারবেন পারবেন সব পারবেন। আমি বর্ণালীর ব্যাপারেও জানি আবার কালরাতে আপনার আর মালতীর ব্যাপারেও জানি। আমি সব ই জানি আমার কাছে কিছুই লুকানোর নেই।
আমিঃ না এব্যাপারে আমি আপনার সাথে কেন আলোচনা করতে যাবো। আমি আপনাকে চিনিনা, জানিনা।
সুব্রত বাবুঃ আচ্ছা ৫টা মিনিট দাঁড়িয়ে কথা তো বলতে পারেন। একটা সিগারেট তো খেতে পারেন। এতে আর ক্ষতি কি। নিন একটা সিগারেট খান।
তখনও বুঝিনি আসলে গিনিপিগটা আমি, অন্য কেউ নয়। সিগারেট হাতে নিয়ে আমরা দুজনে একটু নিরিবিলি এক স্থানে গিয়ে দাঁড়াই। সুখটান দিতে দিতে সুব্রত বাবু বলেন
সুব্রত বাবুঃ আপনাকে একবার বন্ধু যখন বলে ফেলেছি, তখন আর কিছুই লুকাবনা। মালতী, উফ কি ফিগার। দু তিন বার স্নানরত অবস্থায় আমি দেখেছি। দাদা চলুন আমরা দুজনেই ভাগাভাগি করে নি।
আমি তো অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। এতো ভদ্র শিক্ষিত মার্জিত এক মানুষ হথাত আমার মত অচেনা এক লোককে কিকরে এই কথা বলে ফেলে। আমি কিছু বলার আগেই সুব্রত বাবু বলেন
সুব্রত বাবুঃ সুবীর সেনকে আপনি হয়ত এখনো ভালোই মনে করছেন। ও এক নম্বরের বিষমাল। কলেজে আমার রেপুটেশন খারাপ করার জন্য অনেক চেষ্টা ও করেছে। অনেক কিছু করেছে। প্রোমোশন আটকে দিয়েছে, আরও কতকিছু।
সত্যি বলছি সুবীর, রক্ত গরম ছিল তাই হয়ত আমার মত রাজনীতিক ও ক্লিন বোল্ড হয়ে গেলো। সত্যি বলতে সুব্রতর প্ল্যানটা যে কি ছিল তা আমি জানতাম না, আমায় শুধু এটাই বলা হয়েছিল যে কোনও এক রবিবার তোর জমিদারবাড়িতে গবেষণার জন্য যাওয়ার কথা। একটা ডায়েরী ওখানে রেখে দেওয়া হবে, সেই ডায়েরীটা দিয়ে তোকে এমনভাবে ভয় দেখানো হবে যে তুই মানসিক উন্মাদ হয়ে যাবি। এই কাজের দায়িত্বে থাকবে সত্য বাবু। আমি কিছু না বুঝলেও, একটা জিনিষ ই বুঝেছিলাম বৌদিকে ভোগ করার ও তোর ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছেটা আমার মত সুব্রতর ও আছে। তাই ও হয়ে গেলো আমার সহজাত বন্ধু। এরপর শনিবার অর্থাৎ তোর জমিদার বাড়িতে যাওয়ার আগের দিন আমি আর সত্যবাবু ওখানে যাই, ভেতরে একটা ডায়েরী রেখে আসার জন্য। আমি ছিলাম সামনে, সত্য বাবু পেছনে। তখন আমরা মুল দরজা ঠেলে অনেকটাই প্রবেশ করেছি। পিঠের ওপর প্রচণ্ড জোরে একটা আঘাত, কিছু বোঝার আগেই দেখি পেট চিরে একটা ভোজালি সামনের দিকে বেরিয়ে আসছে। আমার শরীরের সমস্ত জোর আসতে আসতে শেষ হয়ে আসছিল। এভাবে যে কতবার ভোজালিটা ঢোকাল আর বার করল খেয়াল নেই। আসতে আসতে চোখ দুটো বুজে আসছিল, দেখি কিছুটা দূর থেকে সুব্রত বাবু এগিয়ে আসছে। মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম আমি। সত্য বাবু কিছুক্ষন পর আমার বুকে হাত দিয়ে পরখ করে নিল আমি বেঁচে আছি কিনা। না ততক্ষনে আমার দেহটা মৃত। কিন্তু আত্মা তো আর মরেনা, ওটা বেঁচেই ছিল। আমি দেখতে পাচ্ছিলাম সুব্রত বাবু পকেট থেকে মোবাইলটা বার করলেন কাউকে ফোন করলেন। জায়গাটা জনশূন্য, তাই ফোনের ওপাশের আওয়াজটাও স্পষ্ট ভাবে আসছিল। সুব্রত বাবু বললেন “কাজ হয়ে গেছে” ওপাশ থেকে আমার অতি পরিচিত এক মহিলার কণ্ঠ ভেসে এলো “সুব্রত দেখো কোনও বিপদ হবেনা তো আমাদের” নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না, গলাটা ছিল বৌদির। আমার প্রচণ্ড আফসোস হচ্ছিল, আমার একটা সামান্য ভুলে আমার সাথে সাথে তুই ও শেষ হয়ে গেলি। কিন্তু আমিও পন করেছিলাম তোকে বাঁচাবই। যদিও সুব্রতর কুকীর্তির এখানেই শেষ নয়। হথাত চেঁচিয়ে ওঠে “কে? কে ওখানে?”
ওরা দুজনেই প্রানপন দৌড়ায়। এক চাওয়ালা হয়ত কোনও বিশেষ কাজে জমিদারবাড়ির ভেতরে এসেছিল। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওকে ধরে ফেলে। সামান্য ধ্বস্তাধস্তি ও গলায় জোরে কিছুক্ষন চাপ দেওয়া। ব্যাস আরেকটা জীবন ও শেষ। সুবীর, ওই চাওয়ালাই তোর জীবনে দেখা প্রথম ভূত। ও তোকে সত্যি জমিদারবাড়িতে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে চেয়েছিল। আমি জানতাম ডায়েরী একটা লেখা হয়েছে, এবং তার লেখক ৩ জন আমি, সত্য বাবু ও সুব্রত বাবু। কিন্তু ভুল, ডায়েরীর লেখক আসলে ৪ জন আমি, বৌদি, সত্য বাবু ও সুব্রত বাবু। সবচেয়ে মজার ব্যাপার ভূত হওয়ার পর কখনোই আমি বৌদিকে স্পর্শ করার চেষ্টা করিনি। ওই যে অশরীরীর কথা বৌদি তোকে বলেছিল ওটা শুধুই ডায়েরীর গল্পকে প্রমান করার জন্য। সুব্রত বাবু এরকম করতেই পারেন, কিন্তু বৌদি... আমি আজও মানতে পারিনা এটা। যাই হোক হাতে সময় খুব কম। তোকে আরও একটা গল্প শুনতে হবে তবেই তুই নিজেকে প্রমান করতে সক্ষম হবি। ধরে নে আমি আসিনি, সত্য বাবু গল্প বললেন ও বেরিয়ে চলে গেলেন তাহলে কি হত? একটু ভেবে দেখ কি হত?
সত্য বাবু বেরিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুলিশ এসে উপস্থিত হত। প্রথম প্রশ্ন হত “মানব বাবুকে কেন খুন করলেন?” তোর উত্তর হত “আমি তো খুন করিনি, খুন করেছে সত্য বাবু” “সত্য বাবু কে?” “সত্য বাবু হলেন সত্যেন্দ্র” “সত্যেন্দ্র কে?” “জমিদারবাড়ি, ডায়েরী এইসব থেকে আমি সত্য বাবুকে জেনেছি” হয়ত বা নিজের স্ত্রী, মেয়েদের বেশ্যা বলতিস সর্বসমক্ষে।
ব্যাস ওদের পরিকল্পনা সফল। তোকে আদালতে তোলা হত। মহামান্য আদালত রায় দিত “সুবীর বাবু, মানসিক উন্মাদ। শুধু নিজের স্ত্রীর সাথে পরকীয়া সম্পর্কের সন্দেহে নিজের ই প্রিয় বন্ধু মানবকে হত্যা করেছে” তুই হয় জেল নয় মানসিক হসপিটালে। প্রথমে রূপসা ও তিলোত্তমা কিছুতেই মেনে নিতে পারতো না কিন্তু তারপর ঠিক ই মনে করে নিত ওদের বাবা একজন উন্মাদ। তারপর মায়ের ই সুখের জন্য সুব্রত ও মালতীর নতুন করে ঘর বাঁধা- এটাও হয়ত মেনে নিত।
সুবীর বাবুঃ মালতী কেন এরকম করল? আমাকে ডিভোর্স চাইলে আমি ই স্বেচ্ছায় ওকে দিয়ে দিতাম। ও এতো বড় একটা অপরাধ কেন করল?
মানব বাবুঃ আমিও জানিনা রে। হয়ত এর উত্তর আমি কিছুটা ভেবে নিজের যুক্তি তক্ক দিয়ে বলতে পারতাম। কিন্তু সত্যি একটা টুইস্ট রয়েছে জানিস সেটা কি? সেটা হোল জীবন। জীবনের চেয়ে বড় টুইস্ট বোধ হয় আর কিছুই হয়না। সত্যি রে সুবীর বৌদির ঠিক কিসের অভাব ছিল? সুব্রতকে শুধু ভালো লেগে গেলো, তোকে আর ভালো লাগছিলনা, মেয়েদের কাছেও অপরাধী সাজা যায়না, অতএব এতো বড় একটা অপরাধ করা, এটাই কি। মনে হয় নয়, কারন জীবন সত্যি ই একটা টুইস্ট। এর উত্তর আমার ও জানা নেই।
[/HIDE]
 
[HIDE]শেষ পর্বঃ জীবন (সবচেয়ে বড় টুইস্ট) পার্ট ২ [/HIDE][HIDE][/hide][HIDE][/hide]​
[HIDE]
“এর উত্তর আমরা দেবো”
অবাক হয়ে পেছন ঘুরে দেখেন সুবীর বাবু। প্রায় লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কিছু মানুষ, না এদের পোশাক আর রুপ দেখে ততক্ষনে সুবীর বাবু বুঝে গেছেন এরা মানুষ নয়।
“নমস্কার সুবীর বাবু, আমি ই হলাম সেই বংশী। যাকে নিয়ে ডায়েরী তে এতো বিতর্ক। আর ইনি হলেন মালা”
হাঁসতে হাঁসতে এক সুন্দরী মহিলা সামনে এগিয়ে আসেন। “সুবীর বাবু, যে মানুষটা একদিন আমার শরীরটাকে ভোগ করার জন্য পাগল ছিল, জীবনযুদ্ধে সব খুইয়ে সত্যি ই সে আমায় মা বলেই ডেকেছিল”
“হ্যাঁ সুবীর বাবু, সেদিন আমার কি হয়েছিল জানিনা, তবে রানীমাই ছিলেন ওই সময়ের একমাত্র নিষ্পাপ চরিত্র। সত্যি ই আমি ওনার মধ্যে নিজের মাকে দেখতে পেয়েছিলাম। সত্যি ই এর উত্তর আমি জানিনা, কেন এটা হোল আমি জানিনা”
মানব বাবুঃ এর উত্তর আমি দিচ্ছি। সুবীর, আমাদের হৃদয়ে অনেকগুলো স্তর আছে। প্রত্যেকটা স্তরে আমরা একেক ধরনের। কখনো অন্যকে কাঁদাই, কখনো নিজেই কাঁদি, কখনো অন্যকে হাঁসাই, কখনো নিজেই হাঁসি। হয়ত বিজ্ঞানের পক্ষে মানুষের মনকে কোনোদিন বিশ্লেশন করা সম্ভব নয়। বৌদি কেন এরকম করল? হয়ত বৌদির মনে ঠিক বংশীর উল্টো কোনও স্তর থেকে সবকিছু হয়েছে। ছাড় সত্যি ই মন খুব জটিল। তাই তোর জীবনের এই টুইস্টটা আন্সল্ভড ই থাকুক। সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজাও উচিত নয়।
এতক্ষন নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রেখেছিলেন সুবীর বাবু। হথাত ওনার ভেতর থেকে চাপা একটা কান্না বাইরে বেরিয়ে আসে। “আমি কি করব রে মানব? কাকে নিজের মনের কথা বলব। আমি তো এই পৃথিবীতে একা হয়ে গেলাম রে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে তো এক কাপ চাও পাবনা রে? আমি কি করব রে মানব। সমাজের কাছে কি মুখ দেখাবো। কি বলব আমার বউ আমায় বিপদে ফেলার জন্য খুনের ষড়যন্ত্র করেছে। প্রতিবেশীরা তো কথা শুনিয়ে শুনিয়েই আমায় শেষ করে দেবে। আমি আর বাঁচতে চাইনা মানব” দুহাতে নিজের মুখটা চাপা দিয়ে মাটিতেই বসে পড়েন সুবীর বাবু। মানব বাবু সত্যি ই ওনাকে স্বান্তনা দেওয়ার কোনও ভাষা খুঁজে পাননা। ভুতেদের মধ্যে থেকে একজন আবার সামনে এগিয়ে আসেন।
“নমস্কার সুবীর বাবু। আমি মৃত্যুঞ্জয় অর্থাৎ আমি ই সেই ঠাকুর ডাকাত। আপনি নিজের মন শক্ত করুন। আমরা কিছু কথা বলতে চাই। অভিশপ্ত ডায়েরী কেন? কিসের অভিশাপ? কোথাকার অভিশাপ সব আপনাকে শুনতে হবে। মাথা তুলুন সুবীর বাবু” কোনরকমে নিজের চোখের জল মুছে মাথা তুলে তাকান সুবীর বাবু।
মৃত্যুঞ্জয়ঃ মশাই, ভূত হয়ে যাওয়ার পর এক অদ্ভুত বিরক্তিকর জীবন বটে। প্রথম প্রথম অন্যদের ভয় দেখিয়ে ফিরতাম। কিন্তু কলকাতা শহরে যা দূষণ আর যা লোকের ভিড় আমাদের ই ভয় লেগে যেত। সারাদিন ওই পোড়োবাড়িতে বসে থেকে আমাদের অদৃশ্য শরীরে একদম মরচে ধরে গেছিল। আমরা ঠিক করলাম এমন একটা কিছু করা যাক যাতে আমাদের থেকে মানে এই ভুতেদের থেকে সমাজ কিছু শেখে। তো অনেক ভাবনা চিন্তা গবেষণার পর আমরা বুঝলাম, এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমস্যা হোল সম্পর্কে সঙ্কট। তো আমরা ঠিক করে ফেললাম যখন কোনও মানুষ তার সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে হারিয়ে ফেলেন তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াবো তাদের শেখাবো জীবন আর কিছুই নয় শুধুই একটা টুইস্ট। সবকিছুই মেনে নিতে হয়। আবার নতুন করে লড়াই করতে হয়। আসলে জীবন শুধুই একটা লড়াই আর কিছুই নয়।
মানব বাবুঃ একদম হক কথা! তুই কাল থেকে পাড়ার চা দোকানেই চা খাবি। কথা বলার ইচ্ছে হলে কোনও বন্ধুকে ফোন করবি। একা লাগলে রূপসা তিলোত্তমাদের কলেজে চলে যাবি। কিন্তু কখনো এই প্রশ্নটা মনেও আনবি না যে কেন মালতী আমায় ছেড়ে চলে গেলো? জীবনের এই টুইস্টটা তুই আন্সল্ভড ই রেখে দে। কারন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় টুইস্ট তো জীবন নিজেই। কক্ষনো আর মালতীকে চিন্তাও করবি না।
মৃত্যুঞ্জয়ঃ হ্যাঁ সুবীর বাবু, আপনি শক্ত হন। সেই কারনেই আমাদের এখানে আসা। আর এই ডায়েরী লেখা। না সত্য বাবুর ডায়েরিটা আসল নয়। আপনি বা মানব বাবুর আসার অনেক আগেই উনি এসেছিলেন ও ডায়েরী পড়া শুরু করেছিলেন। হয়ত যে স্থানে কুকর্মটা করবেন তা একটিবার দেখার জন্যই এসেছিলেন। কিছুই পাননি শুধু এই ডায়েরীটা ছাড়া। উনি জানতেন ও না যে এই ডায়েরীটা শুধুই কোনও ইতিহাসের গল্প নয়, এর নাম অভিশপ্ত ডায়েরী। তারপর উনি নিজের মত করে, মালতী দেবীর, মানব বাবুর ও সুব্রত বাবুর কথা মিলিয়ে একটা চক্রান্ত করে নিজে একটা ডায়েরী লিখে ফেললেন। এবার বলি কেন অভিশপ্ত? আরে মশাই, ডায়েরী তো ক্ষুদ্র জিনিষ, ভগবানের ও ক্ষমতা নেই কারুর জীবনকে অভিশপ্ত করে তোলার। এই ডায়েরী সেদিন থেকে লেখা শুরু হয়েছে যেদিন থেকে সুব্রতকে মালতীর মনে ধরে। কিছু ভুল আপনার ও আছে, আপনিও নিজের স্ত্রীকে যথেষ্ট সময় দেননি। আপনারাই নিজেদের জীবনে অভিশাপ নিয়ে এসেছেন ডায়েরীটা নয়। তবে মেয়েদের কথা ভেবে আপনাকে শক্ত হতে হবে।
মানব বাবুঃ সুবীর, টিম অভিশপ্ত ডায়েরীর কাজ তো সমাপ্ত। আর হ্যাঁ গুপ্তধন? সত্য বাবুই তোর গুপ্তধন, ওই তোকে বাঁচাবে ওই একমাত্র প্রমান। ভালো থাকিস সুবীর। ওই দেখ পুলিশের ভ্যানের শব্দ। আর তো আমরা এখানে থাকবো না। ডায়েরীর চতুর্থ খণ্ড শেষ, জানিনা আবার কোন অভাগা বা অভাগিনীর জীবন নিয়ে ডায়েরী লেখা শুরু হবে। তবে যাওয়ার আগে টিম অভিশপ্ত ডায়েরী একসাথে নিজেদের স্লোগান দিয়েই তবে ভ্যানিস হবে।
সবাই একসাথে “যতদিন সমাজে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক থাকবে ততদিন অভিশপ্ত ডায়েরী ও থাকবে”
ভ্যানিস! হ্যাঁ করে তাকিয়ে থাকে সুবীর বাবু। ওর চোখের সামনে সবাই হথাত ই অদৃশ্য হয়ে যায়। কিন্তু এতকিছুর পরেও সুবীর বাবুর মুখে দৃপ্ত একটা হাঁসি, ওকে যে লড়তে হবে, গবেষণা করতে হবে, নিজের মেয়েদের জন্য বাঁচতে হবে।
[/HIDE]
 
এবং অবশিষ্ট সমাজ-
১০ বছর পরঃ “আরে গুরু আজ একটু তাড়াতাড়ি চলে এলি মনে হয়। কি হয়েছে রাজু বলনা, প্লিস বলনা কি হয়েছে। মুখটা এতো শুকনো লাগছে কেন তোর?”
রাজুঃ (বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর) শালা আজ সত্যি সত্যি তিলোত্তমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে রে। আমি মনে হয় সত্যি ই মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। নয়ত এতো মুড অফ কেন হবে বলত।
সাইদুলঃ আরে ইয়ার একটা চেষ্টা তো করতে পারতিস। আমার ও মনে হত ওর ও না তোর ওপর কিছু একটা রয়েছে।
রাজুঃ নারে ভাই পারলাম না। যার মা এভাবে দুই মেয়ের সাথে বেইমানি করে, এতো কষ্ট দেয়... ভাবতো যখন ও ভাবে যে ওর মা জেলে আছে কেমন লাগে? আর ওর মত একটা ডাক্তার কি এই বস্তিতে থাকবে নাকি? ভালো হয়েছে চেষ্টা করিনি। দেখবি মেয়েটা খুব সুখী হবে।
সাইদুলঃ ঠিক বলেছিস রাজু, শালা ভালোবাসা হেব্বি ফালতু জিনিষ। শালা আমাদের জন্য নয় এগুলো। আরে শালা সুবীর বাবুর মত ভালো লোক ই সুখী হলনা আর আমরা কোন বাল। বলনা রাজু তোর কষ্ট হচ্ছে বলনা?
রাজুঃ বালের কষ্ট। শালা সকাল থেকে টিফিন করা হয়না। ১২ টায় দোকান বন্ধ করার সময় পেটে ছুঁচো দৌড়ায়। বারবার মনে হয় সেই তো আমাকেই আবার গিয়ে রান্নাটা করতে হবে। সময় কোথায় ভাই, পুরনো প্রেমের কথা ভেবে কষ্ট পাওয়ার।
সাইদুলঃ শোন না গুরু, জম্পেস একখান বৌদি এসেছে। উফ কি সাইজ মাইরি। আজ রিক্সা থেকে নাবছিল, শালা টান লেগে সাড়িটা হাঁটুর ওপরে উঠে যায়। উফ কি থাই রে, সসসসস আহ...
রাজুঃ শালা, কোথায় রে? কার বাড়িতে? বল শালা নয়ত আজ ফাটাবো তোর।
সাইদুলঃ আরে ওই মিত্ররা বাড়ি বিক্রি করল না। নতুন লোক কিনেছে। লোকটার নাম মৃন্ময় গুপ্ত। আর বৌদি হোল সুমনা, সুমনা বৌদি। উফ আমি তো বস আগেই ওদের বাড়িতে দুধ দেওয়ার কথা বলে চলে এসেছি।
রাজুঃ সাইদুল ওই সাইদুল, হবে নাকি আবার...
সেলিমতলা থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে সুতানুটি জমিদারবাড়িতেঃ
“নমস্কার মৃন্ময় বাবু। কতটা পড়লেন? ওরে বাবা আপনি তো একদম দেবেন্দ্রর পর্বে প্রবেশ করে গেছেন। না আর একা একা ডায়েরী পড়া নয়, এবার ডায়েরীর গল্প বলার দায়িত্ব আমি নিজেই নিলাম”
“আপনি? আপনি কে? আমি তো যখন এখানে এলাম কাউকে দেখিনি? পুরো ফাঁকা ছিল”
“আপনি তো মৃন্ময়, মৃন্ময় গুপ্ত। সেলিমতলায় নতুন এসেছেন। জানেন প্রায় ১০ বছর আগে আমিও ওখানে যেতাম। ওহ নিজের পরিচয় ই দেওয়া হয়নি। আমি মানব। এই জমিদারবাড়ির সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য”
“নমস্কার মানব বাবু! আসলে বলতে লজ্জা লাগছে, তাও বলছি। আমার না আবার ওই একটু অ্যাডভেঞ্চারের রোগ আছে। বহুদিন আগে শুনেছিলাম এই জমিদারবাড়িতে নাকি গুপ্তধন আছে। আর লোভ সামলাতে না পেরে, রবিবার দেখে আজ ই চলে এলাম। (একটু ফিসফিস করে) আচ্ছা সত্যি ই কি গুপ্তধন আছে?
মানব বাবুঃ আছে বইকি। এই ডায়েরীটাই হোল আসল গুপ্তধন। এটা পড়লে আপনি এমন এক গুপ্তধনের সন্ধান পাবেন যা আপনি জীবনে কখনো ভুলবেন না।
মৃন্ময় বাবুঃ সত্যি তাই নাকি! তাহলে মশাই আপনার মুখ থেকে পুরো গল্পটা না শুনে আমি কোথাও জাচ্ছিনা।
মানব বাবুঃ মৃন্ময় বাবু, ডায়েরীতে মোট ৪টে খণ্ড রয়েছে। প্রথম খণ্ড জমিদারবাড়িতে আসার আগে আপনার ও সুমনা দেবীর গল্প(যথারীতি যথেষ্ট ঘাবড়ে যান মৃন্ময় বাবু) দ্বিতীয় খণ্ড এই ১৬০০ সালের সময়কার এই জমিদারবাড়ির কিছু চরিত্র যেমন দেবেন্দ্র, সত্যেন্দ্র, ম্রিত্তুঞ্জয়দের গল্প, তৃতীয় খণ্ড সিপাহী বিদ্রোহের সময়কালের জমিদারবাড়ির কিছু চরিত্র যেমন সুপ্রতীক, মালা, বংশী এদের গল্প আর চতুর্থ খণ্ড হোল ডায়েরী পড়ার পর আপনার অবশিষ্ট জীবন। তাহলে শুরু করা যাক আমাদের ডায়েরী পর্ব।
লেখকের অতিচর্চিত, অতিসমালোচিত ও অতিনিন্দিত তত্বকথা(বকবক)-
আসলে লড়াইটা একটা রুটির জন্য
একটা রুটি সমান করে মাঝ বরাবর
অর্ধেক তুমি আর অর্ধেক আমি
এই রুটির লড়াই দৈনিক আট ঘণ্টার মজুরি
আসলে ওটা রুটি নয়, আমার রক্তবমি
মজুরি তো তুমিও কর মানসী
কখনো রান্নাঘরে কখনো বা মাঝরাতে
নগ্ন শরীরের যৌনতায় আমায় শ্রান্ত করে
তুমিও মজুর আমিও মজুর
প্রিয়তমা তাহলে কিসের এতো লোভ
কি পেলে সোনার থালায় মুখ দিয়ে
জানিনা সত্যি কিছুই জানিনা।
প্রিয়তমা, আসলে প্রেম সত্যিই একখানা রুটি
একটা রুটি সমান করে মাঝ বরাবর
অর্ধেক তুমি আর অর্ধেক আমি।
আসলে জীবন সত্যি ই একখানা রুটি
অর্ধেক তুমি, আর অর্ধেক আমি।
অবৈধ সম্পর্ক বা adultery ধর্ষণের চেয়েও ঘৃণ্য। নিজের জীবন সঙ্গী বা সঙ্গিনীর মধ্যে ঠিক যতটাই খুঁত থাকুক না কেন, তাকে নিজের মত করে ভালবাসুন। কারন জীবন সত্যি ই একখানা রুটি/ অর্ধেক তুমি আর অর্ধেক আমি।
সমাপ্ত
 
প্রথম খণ্ড
পর্ব ১- সাইদুলের নজরঃ
মালতী দেবীঃ ওহ হতচ্ছাড়া ঝুমা টা আজও এলনা। একা হাতে আর যে কত করব সত্যি ই আর এভাবে চলেনা। কতবার তোমায় বললাম কাজের মেয়েটাকে বদলাতে। তোমার তো আর আমার কষ্ট চোখে পড়েনা।
এটা সুবীর বাবুর বাড়ীর অতি পরিচিত একটা কথা। ২-৩ দিন ছাড়াই কাজের মেয়ে ঝুমা কামাই করে আর একা হাতে সমস্ত কাজ ই মালতী দেবীকে করতে হয়। আর এর প্রত্তুত্তর তাও খুব পরিচিত।
সুবীর বাবুঃ আরে মালতী কলকাতায় কি এত সহজে কাজের মেয়ে পাওয়া যায়। যাকে পেয়েছ তাকেই ঠিক করে নিজের মত করে নাও।
মালতী দেবীঃ হা তাই তো করে ফেলেছি। নিজের লোক বানিয়ে ফেলেছি বলেই তো এই অবস্থা। তুমি দেখে নিয়ো ও আরও ২ দিন আসবেনা। নির্ঘাত দাদার বাড়ী গিয়ে বসে আছে।
সুবীর বাবুঃ তুমি জানো কাল মনিশ বাবুদের বাড়ীতে সর্বস্ব লুট হয়ে গেছে। পুলিশ সন্ধান নিয়ে দেখেছে যে পেছনে সেই কাজের মেয়ে। তোমার তো আর সেই প্রবলেম টা নেই। ঝুমাকে আমরা জন্ম থেকেই দেখছি। আর যাই হোক মেয়েটা বিশ্বস্ত।
মালতী দেবীঃ কি বলছ চুরি হয়েছে। দেখলে তো কতদিন ধরে তোমায় বলছি এই জায়গাটা ভালো নয়। আমার কথা তো তুমি কানেই দাওনা। সাউথ এর দিকে কত নতুন নতুন ফ্ল্যাট হচ্ছে, একটা কি নিতে পারনা তুমি। কি যে মধু তুমি পেয়েছ এখানে। বাসের আওয়াজ এ রাতে ঘুম আসেনা। লোকজন কেমন টাইপ এর যেন।
তিলত্তমাঃ আবার মা তুমি শুরু করেছ। সাউথ এ যেতে হলে আমাদের জন্মের পর পর ই যেতে হত। আমাদের বন্ধুবান্ধব সব এখানে এখন আর যাওয়ার কোনও মানেই হয়না।
মালতী দেবীঃ বন্ধু না ছাই। ওই তো রিম্পি না কি যেন যা ড্রেস পরে। ছি ছি। ওর বাবা মা কেন যে এগুলো মেনে নেয় কিজানি।
রূপসাঃ ওহ মা তুমি বড্ড সেকেলে। আমাদের তো সালোয়ার ছাড়া কিছুই পড়তে দিলেনা। ওরা মডার্ন তো ওদের ওভাবে থাকতেই দাও তোমার তো আর কোনও অসুবিধা হচ্ছেনা।
মালতী দেবীঃ ব্যাস বাপ বেটি মিলে শুরু হোল আবার। দাড়া ২ দিনের জন্য যদি বাপের বাড়ী চলে যাই তাহলে বুঝবি মা কি করে তোদের জন্য।
সুবীর বাবুঃ আমি আবার কি করলাম। আমি তো পেপার পরছি।
তিলত্তমাঃ ওহ মা আর ঘ্যান ঘ্যান করোনা। ৮তার সময় সুব্রত কাকু আসবেন। আমার খুব খিদে পাচ্ছে আমায় আগে জলখাবার বানিয়ে দাও।
মালতী দেবীঃ এখন কি জলখাবার বানাব রে। এখনো তো ঘরদোর পরিষ্কার করা হয়নি। আগে পরিষ্কার করে নি তারপর না হয় বানাব।
তিলত্তমাঃ না আগে খাবার বানাও, আমার খুব খিদে পেয়েছে।
মালতী দেবীঃ তোরা বাবার আদরে একদম বাঁদর হয়ে গেছিস। ঠিক আছে আমি জলখাবার বানিয়ে দিচ্ছি।
সুবীর বাবুঃ তিলোত্তমা আজ কি সুব্রত আসবে নাকি, আগে বলিস নি তো।
তিলত্তমাঃ আরে না বলা হয়নি। পরের মাসে পিএমটি আছে। কিছু ডাউট রয়ে গেছে। তাই আজ সকালে একবার ফোন করেছিলাম।
রূপসাঃ তুই সত্যি। এই তো জয়েন্ট এ র*্যাঙ্ক হয়ে গেলো। আবার পিএমটি টা সিরিয়াসলি দেওয়ার কি দরকার শুনি।
তিলত্তমাঃ ওহ তারমানে তুই বুঝি আইআইটি জয়েন্ট এ বসবি না।
রূপসাঃ না সেরকম নয়, কিন্তু পরছিও তো না।
তিলত্তমাঃ তো আমি কোথায় পরছি।
মালতী দেবীঃ এই রূপসা, তিলোত্তমা তোমরা নাইটি পরে থাকবেনা সুব্রতদার সামনে। আগে সালোয়ার পরে নাও।
সুবীর বাবুঃ এই তুমি কি বলত। সুব্রত ওদের পিতৃতুল্য।
মালতী দেবীঃ তুমি মেয়ে গুলোকে আরও নষ্ট করো। সামর্থ্য মেয়ে সামান্য ওড়না টুকুও ইউস করেনা।
[Hidden content][Hidden content][Hidden content]
[Hidden content]
পুরো গল্প পড়তে চাই। আশা করি গল্পটি মজার আর কাম উত্তেজক হবে
 

Users who are viewing this thread

Back
Top