মানুষ রহস্য ভালোবাসে। ফলে তারা ক্রমাগত ছুটে চলে অজানা রহস্যের সন্ধানে। কিন্তু প্রকৃতির বিচিত্র খেয়ালের অনেক রহস্যই এখনো উম্মোচিত করা সম্ভব হয়নি আমাদের পক্ষে। এমনই এক অদ্ভুত রহস্যেঘেরা দ্বীপ বাল্ট্রা। থ্রিলার মাস্টার এর পক্ষ থেকে আমরা নিয়মিত তুলে আনার চেষ্টা করি এই ধরনের অমীমাংসিত রহস্যগুলোকে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা অভিশপ্ত বাল্ট্রা দ্বীপ এর রহস্য সম্পর্কে জানবো।
বাল্ট্রা দ্বীপ
বাল্ট্রা দ্বীপ এর অবস্থান দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডর এ। এটি মূলত একটি মানববসতিশূন্য একটি দ্বীপ। ইকুয়েডর এর নিকটবর্তী ১৩ টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ। আর এই ১৩টি দ্বীপের একটিই হচ্ছে বাল্ট্রা। কিন্তু এই অঞ্চলের অন্য ১২টি দ্বীপ থেকে বাল্ট্রা দ্বীপ একেবারেই আলাদা, অদ্ভুত এবং রহস্যময়। মানব বসতি নেই বলে মানুষ এই দ্বীপকে “মৃত দ্বীপ” বলেও ডাকে। কিন্তু কেন? আজ আমরা সেই প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করবো।
বাল্ট্রা দ্বীপকে কেন অভিশপ্ত বলা হয়?
জানা যায় যে, বাল্ট্রা দ্বীপে এক সময় মানববসতি ছিলো। কিন্তু কয়েকশো বছর আগে এই দ্বীপে কি এক অদ্ভুত রোগ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মানুষ মরতে শুরু করে। এবং ভয় পেয়ে দ্বীপবাসীরা সবাই এই দ্বীপ ছেড়ে পালায়। তারা ফিরে গিয়ে সবাইকে জানায় এই দ্বীপটি অভিশপ্ত, কেউ যেন দ্বীপের আশে পাশে না যায়, একবার গেলে আর প্রান নিয়ে ফেরা যাবে না। তারপর থেকে দ্বীপটি অভিশপ্ত দ্বীপ নামে পরিচিতি পেয়েছে।
বাল্ট্রা দ্বীপের অমীমাংসিত রহস্য
বাল্ট্রা দ্বীপের রহস্যের কথা বিশ্ববাসীর সামনে আসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। এই সময় কৌশলগত কারণে এই দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি দ্বীপে এয়ারবেস স্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। একটি এয়ারবেসের একজন অফিসার ছিলেন ফ্রান্সিস ওয়াগনার নামে এক ব্যাক্তি। তার মাধ্যমেই বিশ্ববাসী প্রথম জানতে পারে বাল্ট্রা দ্বীপের অদ্ভুত চরিত্রের কথা। এরপর অনেকেই এই দ্বীপের রহস্যময় আচরণের কথা স্বীকার করেন।
এবার চলুন জেনে নেই কি কি রহস্যময় ঘটনা ঘটে থাকে বাল্ট্রা দ্বীপে-
রহস্য [HASH=950]#১[/HASH]
বাল্ট্রা দ্বীপ গ্রীষ্মমন্ডলীয় দ্বীপপুঞ্জ হওয়ায় এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো বৃষ্টির এক ফোঁটাও পড়েনা বাল্ট্রাতে। কী এক রহস্যজনক কারণে বাল্ট্রার অনেক উপর দিয়ে মেঘ গুলো উড়ে যায় এবং অন্যান্য দ্বীপগুলোতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। এ যেন সেখানকার এক অমোঘ নিয়ম। বৃষ্টির প্রকোপ যত বেশি হোক না কেন, বাল্ট্রাতে তার ছোঁয়া কখনোই পায় না।
রহস্য [HASH=328]#২[/HASH]
আপনারা তো জানেন, স্বাভাবিক অবস্থায় কম্পাসের কাটা সব সময় উত্তর দক্ষিণ দিক নির্দেশ করে। কিন্তু বাল্ট্রাতে এলেই অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে নাবিকদের কম্পাস। এখানে এলে কম্পাসের কাটা কখনও স্থির হয়ে থাকে, কখনও ইচ্ছেমত ঘুরতে থাকে আবার কখনও উল্টোপাল্টা ভুল দিক নির্দেশ করে। তবে সবচেয়ে রহস্যজনক ব্যাপার হলো বাল্ট্রা দ্বীপের উপর প্লেনে থাকাকালীন সময়েও এমন অদ্ভুত আচরণ করে কম্পাস। আবার দ্বীপ পার হলেই সব ঠিক।
রহস্য [HASH=330]#৩[/HASH]
বাল্ট্রা দ্বীপের আরেকটি অদ্ভুত দিক হলো- এই দ্বীপে এলে অনেকের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এই দ্বীপে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যেন মানুষের মাথা অনেক হালকা হয়ে যায়। অনেকে দেখা যায় উলটা পালটা আচরন শুরু করে। কারো কারো স্মৃতি লোপ পায়। কেউ কেউ আবার অজানা অচেনা কোন এক জায়গায় হারিয়ে জেতে চায়। তবে বেশিরভাগ মানুষ বলেছেন এখানে গেলে যাওয়ার আশ্চর্যরকম ভালো একটা অনুভূতি আচ্ছন্ন করে ফেলে মনকে। দ্বীপটি যেন চুম্বকের মত টেনে রাখে, একবার গেলে আর ফিরতে ইচ্চে করে না। দ্বীপ থেকে চলে আসার পরও কিছুদিন সেই আশ্চার্য অনুভূতি থেকে যায়।
রহস্য [HASH=2070]#৪[/HASH]
অদ্ভুত দ্বীপ বাল্ট্রায় কোন বৃক্ষ নেই। নেই কোন পশুপাখি। কোন পশুপাখি এ দ্বীপে আসতেও চায় না। দ্বীপের রহস্যময়তার আবিস্কারক ওয়েগনার একবার একটা পরিক্ষা চালিয়েছিলেন। তিনি জোর করে কিছু প্রাণীকে ধরে এনে বাল্ট্রা দ্বীপ এবং তার পাশের দ্বীপ সান্তাক্রুজের মধ্যবর্তী খালে ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা গেল বাল্ট্রাকে এড়িয়ে গিয়ে প্রানিগুলো সান্তাক্রুজ দ্বীপের দিকে এগিয়ে গেল। সব চেয়ে রহস্যজনক ব্যাপার হোল- উড়ন্ত পাখিগুলোও উড়তে উড়তে বাল্ট্রার কাছে এসেই ফিরে যেতে থাকে। দেখে মনে হয় যেন অদৃশ্য কোন দেয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে ওরা।
আজকের মত এ পর্যন্তই। ভালো থাকুন সবাই। আগামীতে এই ধরনের আরও রহস্য নিয়ে হাজির হয়ে যাব। সে পর্যন্ত ভাল থাকুন সবাই। নিয়মিত পড়তে থাকুন আমাদের প্রতিবেদন গুলো। ধন্যবাদ।