শুভর বাবার কলকাতায় ফার্নিচারের ব্যবসা।শুভরা দুই ভাই।তার ছোট ভাই রাহুল এখন হাতে খড়ি দিচ্ছে।আর সে পড়ে ক্লাস এইট।তার মায়ের নাম অর্চনা মিশ্র আর তার বাবার নাম দেবজিৎ মিশ্র।ব্যবসার কাজে তার বাবাকে কলকাতায় থাকতে হয়।সপ্তাহের শেষ দুই দিন বাড়ী আসে।শুভদের বেশ বড় পুরোন বাড়ী।এটা তার দাদু অর্থাৎ ঠাকুর্দার বানানো।তার দাদু অনাদি মিশ্র গ্রামের নাম করা হোমিওপ্যাথি ডাক্তার ছিলেন।এখন বয়স হয়েছে আটাত্তর।বয়সের ভারে লাঠি হাতে ওঠা চলা করতে কষ্ট বলে বেশীর ভাগ সময় শুয়ে কাটান।তার দিদা গত হয়েছে।অনাদি মিশ্রের বড় মেয়ে অর্থাৎ শুভর রীতা পিসি রাঁচিতে থাকতেন।এখন তিনি মৃত।তার স্বামী ওখানকার চিকিৎসক।রীতা পিসির মৃত্যুর আগে পিসে যোগাযোগ রাখতেন নিয়মিত।এখন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া যোগাযোগ রাখেন না বললেই চলে।শুভর বাবার আরেক ভাই অভিজিৎ মিশ্র নর্থ বেঙ্গলে বিয়ে করে থাকে।সে আবার পুজোর সময় ছাড়া আসে না।
কাজেই শুভর বাড়িটা বেশ ফাঁকা ফাঁকা।এই বাড়ীতে বিরাট প্রাচীর দিয়ে গাছ গাছালি আম,জামের বাগান আছে।তবে সেসব এখন আগাছায় ভরে গেছে।একটা পুকুরও আছে।এখন ওটা পানা পুকুর।
শুভর মা অর্চনাই এই বাড়ীর সব সামলায়।ছেলেদের পড়াশোনা, টিউশন, শ্বশুর মশাইয়ের সেবাযত্ন, এত বড় বাড়ীর যাবতীয় কাজ কর্ম সে নিজে হাতেই করে।শুভর বাবা দেবজিৎ খুব শান্ত স্বভাবের লোক।ব্যবসা তার রমরমিয়ে চললেও লোকের ক্ষতি করে না।বরং উপকার করে।তার বয়স চুয়াল্লিশ।গায়ের রঙ ফর্সা,মাথায় পরিষ্কার টাক পড়েছে।চেহারা ভালো,মেদ জমেছে পেটে।গ্রাজুয়েশন করেই ব্যবসায় লেগে পরে সে।তারপর নিজের হাতে ব্যবসাটা দাঁড় করায়।এর জন্য সে তার স্ত্রী অর্চনাকেই কৃতিত্ব দেয়।স্বামী কর্তব্যপরায়ণা স্ত্রী অর্চনা বাড়ীর সমস্ত কাজ কোমর বেঁধে না সামলালে সে হয়তো সফল হত না।
অর্চনা পরিশ্রমী মহিলা।সারাদিন বাড়ীর নানা কাজ করেও তার শরীরে স্বাস্থ্য আছে।বাঙালি দু বাচ্চার মায়েদের শরীরে যেমন একটু মেদ জমে যায় তেমন।তার বয়স এখন আটত্রিশ।সেও ফর্সা।তার মুখে একটা শ্রী আছে।আঠারোতে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করবার পর সবে কলেজে উঠেছিল অর্চনা।তখনই অনাদি বাবু পছন্দ করে ছেলের বউ করে আনেন।তারপর সংসারের কাজ করতে করতে আর পড়াশোনা এগোয়নি।বাড়ীতে অর্চনা নাইটি কিংবা শাড়ি পরলেও বাইরে কেবল শাড়িই পরে।পেটে হাল্কা মেদে থলথলে ধরেছে তার।তবে বিশ্রী রকম মোটাও নয় সে।শশুর মশাইএর একমাত্র ভরসা অর্চনাই।
এবার আসা যাক লালির গল্পে।শুভ আর তার ভাই রাহুল বাগানে খেলা করছিল প্রতিদিনের মত।অর্চনা দু হাঁটুর উপরে নাইটিটা তুলে কাপড় কাচছে।সাবানের ফেনা মাখা হাত দিয়ে সে বাথরুমে কাপড় ধুইছে।তার হাতের শাঁখা পোলা আর দুখানা সোনার চুড়ির শব্দ কাপড় কাছড়ানোর সঙ্গে তাল দিচ্ছে ।দেবজিৎ ছুটির দিনে বাড়ী থাকলে বসে থাকে না।বাড়ীর এটাওটা কাজে লেগে পড়ে।তাদের বাড়ীর গাছগাছালি এলাকাটি ভীষন ছায়াশীতল।কয়েকটা আগাছা কেটে পরিষ্কার করছিল দেবজিৎ।আচমকা ছোট ছেলে রাহুলের চিৎকার শুনে অর্চনা বাথরুম থেকে চেঁচিয়ে ওঠে---কি হল রে? এই শুভ তুই আবার ভায়ের গায়ে হাত তুললি?
দেবজিৎ বেরিয়ে এসে দেখলো শুভ দাঁড়িয়ে আছে মেইন গেটের কাছে।বকুনি দিয়ে বলল---কি রে? ভাই কোথায়?
শুভ ভয় পেয়ে বলল---বাবা কুকুর! কুকুর!
দেবজিৎ বেরিয়ে এসে দেখলো একটা কুকুরকে ঘিরে রেখেছে গোটা চার পাঁচ নেড়ি।দেবজিৎ ঢিল ছুড়তেই সবকটা পালালো।শুধু লাল রঙা মাদী কুকুরটা কুঁই কুঁই করতে করতে এবাড়ির পেছনের ঝোপের দিকে পালালো।
সেই থেকে সেই কুকুরটি হয়ে গেল এই বাড়ীর পোষ্য।দেবজিৎই নাম দিয়ে ছিল লালি।
লালি এখন এ বাড়ীতে অবাধ চলাফেরা করে।শুভ আর রাহুল কখনো ওর কান মুড়ে দেয়, কখনো আদর করে দেয়।সে কিচ্ছু বলে না।বাড়ীর ভালোমন্দ খাবারে তার শরীরও হয়েছে বেশ,তবু তার ভয় কাটলো না।
এই বাড়ীর উত্তর দিকে ভাঙ্গা প্রাচীরের দিকে কুচুরিপানায় দীর্ঘ জলা জমি।যা শেষ হয়েছে এনএইচ এর দিকে।
প্রাচীরের ওপাশে একটা পাগল এসে জুটেছে কদ্দিন হল।রাহুল এখন ছোট তাকে চোখে চোখে নজর রাখে অর্চনা।কিন্তু শুভ স্কূল থেকে ফিরবার সময় কত কি দেখতে থাকে।জলাজমির পানার মধ্যে সাপের ব্যাঙ ধরা।তাদের বাগানে দুটো বেজির খেলা।এছাড়া সম্প্রতি আমদানি হওয়া পাগলটার আচরণ সব লক্ষ্য রাখে সে।
দুপুর বেলা ছুটির দিনে বাড়িটা খাঁ খাঁ করে।তখন সে কখনো তিনতলার খোলা ছাদে গিয়ে ঘুড়ি ওড়ায়।বাগানের পেছনে গিয়ে শান্ত পাগলটার শুয়ে শুয়ে আকাশের দিকে হাত নাড়তে থাকা দেখে।কখনো কখনো তার এসব ঘোরাফেরার সঙ্গী কেবল লালি।
[Hidden content][Hidden content][Hidden content]
[Hidden content]