What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

*হলুদ ফিতে * (1 Viewer)

BRICK

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Dec 12, 2019
Threads
355
Messages
10,073
Credits
81,757
T-Shirt
Glasses sunglasses
Calculator
Watermelon
Pistol
Pistol
বছর কয়েক আগে আমার এক বোনঝির বিয়ে ছিল। প্রাক-বিবাহ রিসেপশন টলি ক্লাবে। এই রেওয়াজ আমাদের সময় ছিলনা। আজকাল দেখছি। বিয়ের একদিন বা দুদিন আগে এটা হয়।

আজকাল কারো বাড়ি যাওয়া হয়ে ওঠেনা। এইসব অনুষ্ঠানেই দেখা হয় সবার - মানে আত্মীয় স্বজনের সাথে। আর এই অনুষ্ঠানের কনসেপ্টটা খাসা। পুরুত বরযাত্রী দেখভাল – এসবের বালাই নেই। বিন্দাস - বেশ আনন্দ হয়।

সাজাগোজা লোকজন। পারফিউমের মৃদু সৌরভ। খাবারের ঘ্রাণ। হালকা মিউজিক। সবার খবরাখবর।


এই পার্টিতে আবশ্যিক বিসমিল্লা বাজায়নি। ক্লাসিক্যাল বা রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নয়। বাজছিল পুরনো ইংরেজি হিট গান সব।

বিটল। এলভিস। সামার হলিডে। টাকিলা। বাচ্চা হাতির হাঁটা। লিপস্টিক অন ইয়োর কলার। সেপ্টেম্বর আইয়া পরসে। সামার ওয়াইন। এই জুড, কেলো করিসনা। সুইট ক্যারোলাইন। ডিলাইলা – এইসব।

হঠাৎ কানে আসে - টাই এ ইয়েলো রিবন। বহুদিন পর শুনলাম। মনে পড়ে একটা গল্প – এই গানটার সাথে জড়ানো।



অ্যামেরিকার মিড-ওয়েস্টে চলছে এক গ্রে-হাউন্ড বাস (ও দেশের সবচাইতে বড় পাবলিক বাস কম্পানি)। বাসে জনা বিশেক স্কুলের উঁচু ক্লাসের ছাত্রী। যাচ্ছে সামার ক্যাম্পে। ওরা ছাড়া মাত্র একজনা।

বড় ওভারকোট গায়ে বছর চল্লিশের এক লোক। খোঁচা খোঁচা দাড়ি। বিষন্ন উদাস চাউনি – পলকহীন চোখে। মাথায় বিবর্ণ গল্ফ ক্যাপ।

এই বয়সে মেয়েদের কৌতুহল বড্ড বেশি। নিজেদের মধ্যে কথা শুরু হয় লোকটা কে হতে পারে!

কেউ বলে – দেখ – ট্রেন্চ কোট পরা। নিশ্চই ভিয়েতনাম ফৌজী। ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছে। কেউ বলে – না। বোধহয় আলাস্কার অয়েল রিগে কাজ করে। আরেকজন কয় – হাত দুটো দেখ কেমন এবড়ো খেবড়ো – আমার মনে হয় ও সানডিয়েগোর তামার খনিতে কাজ করে।

আলোচনা চলতেই থাকে।

একটি মেয়ে সাহস করে কাছে গিয়ে বলে – যদি কিছু না মনে করেন – প্রশ্ন করতে পারি - আপনি কোথায় যাচ্ছেন?

লোকটি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে – আমি নিজেই জানিনা। মাঝ রাস্তায় নেমে যেতে পারি। আবার শেষ অবধিও যেতে পারি।

কৌতুহল আরও বাড়ে। এবার সোজা প্রশ্ন হয় – আপনি কি করেন!

লোকটি চুপ থাকে অনেক সময় ধরে। কিছু ভাবছে যেন। তারপর শান্ত স্বরে শুরু করে সলিলকি। মনোলগ। জবানবন্দি।

আরও অনেক মেয়ে তখন চারপাশে দাঁড়িয়ে গেছে।



আমি সাত বছর পর আজ জেল থেকে ছাড়া পেয়েছি। যখন সাজা হয় আমাদের প্রথম সন্তান হবার কথা কয়েক মাস পর।

আমি স্ত্রীকে বলে গেছিলাম আমার সাথে কোনো সম্পর্ক না রাখতে।

দেখা করা নয়। ফোন নয়। চিঠি নয়। আমিও কোনো যোগাযোগ রাখবোনা।

আমি স্ত্রীকে বলেছিলাম – সাত বছর অনেক দীর্ঘ সময়। আমার জন্য অপেক্ষা তুমি করোনা। তুমি সুন্দর। তোমার বয়স কম। তুমি যদি চাও আবার বিয়ে করে নাও। আমি কিছু মনে করবোনা।

লোকটি আবার চুপ থাকে কিছুক্ষণ। জল খায়। মেয়েদের কৌতুহল তুঙ্গে।

লোকটি শুরু করে –

শুধু একটা কথা আমি বলেছিলাম। যদি সাত বছর পরেও আমাকে তুমি মনে রাখ – যদি অপেক্ষা কর আমার জন্য – তাহলে জানিও। চিঠি নয়। কথা নয়।

একটা হলুদ ফিতে বেঁধে রেখ শুধু।

বড় রাস্তা থেকেই আমাদের গ্রাম হোপসভিল যাবার ছোট পথ। আর সেই মোড়ে আছে এক প্রাচীন ওক গাছ। সেই গাছে একটা হলুদ ফিতে বেঁধে রেখ। আমি বাস থেকে নেমে যাব হলুদ ফিতে দেখলে।

নাহলে চলে যাব আমি। হারিয়ে যাব পাকাপাকি।



মেয়েদের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। এত উত্তেজনা। আর কতদূর হোপসভিল?

দৌড়ে গিয়ে ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে।

আর ন'মাইল।

মেয়েরা জানলার সাথে সেঁটে যায়। মাইল ফলকের খোঁজে। বাসের ভেতরে সবার মনের অবস্থা – দ্রুত নাড়ীর গতি হৃদস্পন্দন উৎকণ্ঠা সাসপেন্স – সব মিলিয়ে একটা সামুহিক তরঙ্গ জমাট বেঁধে গেছে। বোধহয় ফিজিকালি অনুভব করা যায়। চামচ দিয়ে কুরে নেওয়া যায়।

আট – সাত – ছয় - - -

সবাই শক্ত করে একে অপরের হাত ধরে আছে। এসি বাস। নয়তো জানলা দিয়ে অর্ধেক বাইরে চলে যেত। এত আস্তে চালায় কেন বাস?

পাঁচ – চার – তিন – দুই - -

এক।

দূরে কিছু দেখা যায় কি? হলুদ রঙের আভাস।

আরও কাছে গেলে দেখা যায় ওক গাছ। পুরো গাছটা হলদে কেন?

বাস থামে হোপসভিলের মোড়ে। ওক গাছের প্রতিটি ডাল থেকে ঝুলছে অসংখ্য হলুদ কাগজ-শেকল।

একটু দূরে দাঁড়ানো প্রায় পঞ্চাশ জন পুরুষ মহিলা শিশু। তাদের হাতে এক বিশাল হলুদ রঙের ব্যানার

– ওয়েলকাম হোম।

একদম সামনে এক মহিলা – হলুদ ড্রেস। তার হাত ধরে আছে এক বছর ছয়েকের বাচ্চা মেয়ে। হালকা হলদে - পরীদের মত ফ্রক। তাতে রূপোলী চাঁদের চুমকি।

লোকটি একবার ঘুরে বাসের মেয়েদের দিকে চেয়ে মাথা ঝোঁকায়। হাত নাড়ায়। তারপর নেমে যায় ধীরে।

সব মেয়েদের চোখ ভেজা। অনেকেই কাঁদছে ঝরঝর করে।

পর মুহূর্তে বাস ফেটে পড়ে তুমুল হাততালির শব্দে। মেয়েরা জড়িয়ে ধরে একে অপরকে।



কেউ বলে এটা সত্যি কথা। অনেকেই বলে – বাজে কথা। এরকম হয় নাকি!

সত্যি হোক মিথ্যে হোক। গল্পটা আজ অ্যামেরিকার এক লোককথা। ফোকলোর।

আমার নিজের দৃঢ় বিশ্বাস এটা সত্যি।

আমাদের সবার জন্যই বাঁধা আছে হলুদ ফিতে। কোথাও না কোথাও। হাওয়ায় দোলে সেই ফিতে। Blowin' in the wind.



বহুযুগ আগে রীডার্স ডাইজেস্টে পড়েছিলাম। মন খারাবি/ মন ভালো করা ফীল গুড লেখা। তাই হয়তো আজও মনে আছে।


*সংগৃহীত*
 

Users who are viewing this thread

Back
Top