What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

কলকাতার তাজমহল (1 Viewer)

BRICK

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Dec 12, 2019
Threads
355
Messages
10,072
Credits
81,757
T-Shirt
Glasses sunglasses
Calculator
Watermelon
Pistol
Pistol
সন ১৯২১, ডিসেম্বর মাসের এক রৌদ্রজ্জ্বল শনিবার। কলকাতার রেসকোর্স ময়দানে তিলধারণের জায়গা নেই। মহার্ঘ 'প্রিন্স অফ ওয়েলস' কাপের ঘোড়দৌড় দেখতে সেদিন হাজির হয়েছে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। বুকি এবং জুয়াড়িরা ছটফট করছে উত্তেজনায়। আর উত্তেজিত ঝলমলে পোষাকে RCTC প্যাভিলিয়নে বসে থাকা ঘোড়ার মালিকেরা। কার হাতে উঠবে আজ ট্রফি? স্বয়ং রাজকুমার যে আজ হাজির হয়েছেন বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দিতে।

একটু পরেই শেষ হলো দৌড়, আর বুকিদের প্রত্যাশা মতোই প্রিন্স অফ ওয়েলস এর হাত থেকে ট্রফি নিতে মঞ্চে উঠলেন সেসময়ে কলকাতার সবচেয়ে বর্ণাঢ্য মানুষটি। দশ বছর আগেও তার ঘোড়া বিজয়ী হতে এই পুরস্কার তিনি নিয়েছিলেন বর্তমান রাজকুমারের বাবা রাজা পঞ্চম জর্জের হাত থেকে। ট্রফি নেবার সময় এবার রাজকীয় অতিথিকে শুধু মৃদু স্বরে বললেন, পুরস্কারের পুরো টাকাটাই তিনি দান করবেন! চেনেন নাকি.....?

পুরো নাম জোহান্স ক্যারাপিয়েট গালস্টৌন (Johannes Carapiet Galstaun), ১৮৫৯ সালে ইরানে জন্ম এই আর্মেনিয়ান যুবক উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতায় আসেন। ভর্তি হন এখানকার আর্মেনিয়ান কলেজে। কিন্তু পড়াশোনার চেয়ে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠলেন কাকার নির্মাণ ব্যাবসায়। প্রথমে সহকারী হয়ে কাজ করলেও একসময়ে নিজেই স্বাধীন ভাবে নেমে পড়লেন। শূন্য থেকে শুরু করে উল্কার গতিতে তাঁর উত্থান, আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের কথা মনে পড়িয়ে দেয়। কলকাতার মোট সাড়ে তিনশো বাড়ির স্থপতি মানুষটির হাতে গড়ার মধ্যে রয়েছে হ্যারিংটন ম্যানসন ও কুইন্স ম্যানশন। প্রিটোরিয়া স্ট্রীট এবং ল্যান্সডাউন রোড তাঁরই হাতে তৈরী। একসময়ে কলকাতার ধনী ও বিলাসীদের তালিকায় সবচেয়ে ওপর দিকে থাকতো এই আর্মেনিয়ান যুবকের নাম। দানধ্যানও করতেন প্রচুর। আলঙ্কারিক ভাবে বলতে গেলে, "It was the old rags-to-riches fantasy."

স্থাপত্য শিল্প ছাড়াও ওনার ঝোঁক ছিল ঘোড়া এবং ঘোড়দৌড়ের ওপর। তাঁর আস্তাবলের বেশ কয়েকটি ঘোড়া বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছিল। নিজেও ছিলেন ভালো জকি বা ঘোড়সওয়ার। এমন একজন সুপাত্রের জন্য নগরীর কুমারী কুল যে ঝাঁপিয়ে পড়বে তা বলাই বাহুল্য। তবে মন জিতে নিলো এক আর্মেনিয়ান ধনকুবেরের অষ্টাদশী কন্যা, রোজ ক্যাথারিন।
বয়সের যথেষ্ট ফারাক থাকলেও ওরকম ধূমধাম করে বিয়ে আগে কখনো দেখেনি কলকাতার ইউরোপীয় সমাজ। মেমসাহেবের দাবি মেনে এবার হাত দিলেন নিজের স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণে।‌‌🍂

জায়গা পছন্দ করলেন রেসকোর্স থেকে কাছেই লোয়ার সার্কুলার রোডে। উনিশ শতকের গোড়াতে ভারতীয় ও গ্রীক স্থাপত্যের মিশ্রনে সেখানে গড়ে তুললেন এক অনবদ্য ভবন। বিস্তীর্ণ সবুজ লন পেরিয়ে বিশাল এক পোর্টিকো, মার্বেল পিলার যুক্ত হলঘর, আর ব্যালকনি সহ Attic এর মতো টপ ফ্লোর, রঙিন কাঁচের জানালা বাড়িটির সৌন্দর্য বহুগুন বাড়িয়ে তুলেছিল। একপ্রান্তে ছিল আস্তাবল এবং আউট হাউস। সব মিলিয়ে স্থাপত্য ও শিল্পকলার এক অনবদ্য নিদর্শন ছিল বাড়িটি যার নাম রেখেছিলেন #গালস্টৌন_পার্ক। গৃহস্বামীর ঢালাও খরচের বহর দেখে কলকাতার অভিজাত সমাজ ওই বাড়িতে আমন্ত্রণ পাবার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকতো। উপরি পাওনা রোজে'র অপরূপ সৌন্দর্য। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বাড়িটিকে সাময়িক ভাবে হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।‌🔶

১৯৩০ সাল থেকেই ব্যাবসায় ভাঁটা পড়তে থাকে জোহান্সের। অত্যধিক ঝুঁকি নেওয়ায় বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয় তাঁর রিয়েল এস্টেট ব্যাবসা। এমনই সময়ে তাঁর সাধের বাড়ি নজরে পড়ে সেই আমলের এক বিখ্যাত ধনকুবেরের, আর তার কাছেই বাড়ি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। যদিও সেই হস্তান্তরের দলিল খুঁজে পাওয়া যায়নি আজও। কয়েকবছর পর স্ত্রীর সাথেও ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় । শোনা যায় ১৯৪৬ সালে যখন দুনিয়া ছাড়েন তখন তিনি একরকম কপর্দকহীন, গোর দেবার টাকাও ছিল না। আর তাঁর সেই স্বপ্নের তাজমহল.....?‌🏵️

হায়দ্রাবাদের সপ্তম নিজাম মীর ওসমান আলী খান ১৯৩৩ সালে কেনেন বাড়িটি। প্রথমে উনি নাম রাখেন সাবা প্যালেস, পরে অবশ্য এটি #নিজাম_প্যালেস নামেই বিখ্যাত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকার বাড়িটি অধিগ্রহণ করে এবং বাড়ির সমস্ত আসবাবপত্র নীলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সেখানে এখন বহু রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের অফিস এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (CBI) এর পূর্বাঞ্চলীয় সদর দপ্তর।

অসংখ্য অফিস আর সামনের ফুটপাতে জবরদখল খাবারের দোকানের স্টোভের ধোঁয়ায় কবেই হারিয়ে গেছে সুদূর ইরান থেকে আসা এক আর্মেনিয়ান যুবকের স্বপ্নের সৌধ। একসময়ে নানান পাখীর কলকাকলিতে ও মরশুমী ফুলের গন্ধে সুরভিত হয়ে থাকতো যেখানকার আকাশ- বাতাস। আজ সেখানে শুধুই ঘুষখোর, কয়লা চোর আর গরু পাচারকারীদের ভীড়। তাদের বিষাক্ত নিঃশ্বাসে দমবন্ধ কলকাতার তাজমহলের।‌‌🛑
কলমে ✍🏻© স্বপন সেন
তথ্যসূত্র: Calcutta Chronicles
 

Users who are viewing this thread

Back
Top