শিশুকে মোটা নয়, সঠিক ওজন নিয়ে বেড়ে উঠতে সহায়তা করা উচিত। প্রয়োজনে শিশুকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখান।
অনেকের বিশ্বাস, শিশু নাদুস-নুদুস বা স্থূল হলে ভালো। অনেকেই মা–বাবাকে কথা শোনান, বাচ্চারা কেন দেখতে রোগা–পাতলা হবে! তাই বাচ্চাদের 'স্বাস্থ্য ভালো' করতে তাকে বিভিন্ন ধরনের হাইক্যালরি খাবার খেতে দেওয়া হয়। এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে খেতে আর বসে বসে গেমস খেলতে খেলতে শিশুর ওজন বেড়ে যায়। তারপর দেখা যায়, তার ঘাড়ের চারদিকে কালো হয়ে যাচ্ছে। পেটও মোটা হয়ে যায়। দেখতেও খারাপ লাগে। শরীরে ইনসুলিন হরমোনের কার্যক্ষমতা কমে যায়। ফলে পরে ডায়াবেটিসের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
এ ছাড়া স্থূল ছেলেশিশুর কখনো কখনো স্তন বড় হয়ে যায়, যা তার শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা নির্দেশ করে। ফলে বিলম্বিত হতে পারে বয়ঃসন্ধি। অনেকের কাছে শিশুর পুরুষাঙ্গ ছোট মনে হওয়ায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। তখন শিশুকে ওজন কমানোর কথা বলেন চিকিৎসক। স্থূল হওয়ার কারণে শিশুর শরীরে আরও অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, যা বাইরে থেকে বোঝা যায় না। অনেকে অতি অল্প বয়সেই উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভোগে। কারও কারও শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা খুব বেশি বেড়ে গিয়ে ধীরে ধীরে যকৃত, পিত্ত কিংবা হৃদ্যন্ত্রের জটিল সমস্যা দেখা দেয়।
অতিরিক্ত স্থূলতার কারণে ঘুমের সময় অনেকের শরীরে অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। অল্প বয়সে হতে পারে হাঁপানি। পায়ের হাড়ে বা সন্ধির সমস্যা থেকে হাঁটতে কষ্ট হয়। অনেকে লেখাপড়ায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলতে পারে। এমনকি মানসিক সমস্যায়ও (বিষণ্নতা) ভুগতে পারে।
স্থূলতার কারণে অনেক মেয়ের আগে মাসিক হওয়া, দেরিতে বা অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা, কারও মুখমণ্ডলে অবাঞ্ছিত লোম, চুল পড়ে যাওয়াসহ শরীরে বিভিন্ন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুকালে যাদের ওজন বেশি থাকে, বড় হলেও তারা স্থূলতার সমস্যায় ভোগে। এমনকি কেউ কেউ অকালে প্রাণ হারাতে পারে। তাই অল্প বয়স থেকেই নিয়মিত শিশুর ওজন পরীক্ষা করা এবং ওজন বেশি হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে তার কারণ অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। যত আগে এর চিকিৎসা করা যায়, আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা তত বেশি। পাশাপাশি ছোটবেলা থেকে স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করে এবং পর্যাপ্ত কায়িক পরিশ্রমের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
তাই শিশুকে মোটা নয়, সঠিক ওজন নিয়ে বেড়ে উঠতে সহায়তা করা উচিত। প্রয়োজনে শিশুকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখান। শিশু যদি সুস্থ–সবল হয়, শারীরিক ও মানসিকভাবে কর্মক্ষম ও চঞ্চল থাকে, তাহলে তার স্বাস্থ্য নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।
লেখক: ডা. রবি বিশ্বাস, শিশু হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা শিশু হাসপাতাল