আমাদের আধুনিক সমাজব্যবস্থায় বসে কাজ অনেক বেশি। তা ছাড়া ডিভাইস ব্যবহারের কারণে আমাদের বসে সময় ব্যয় করার প্রবণতাও বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস। যাঁরা এই সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরাই জানেন ব্যথা কী। ব্যথা দূর করার জন্য ওষুধ খেলে ব্যথা কিছুটা কমে, কিন্তু আবার নতুন করে ব্যথাটা ফিরে আসে। তবে এই ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে আকুপ্রেশার। নিয়মিত আকুপ্রেশার করলে ওষুধ ছাড়াই ব্যথা কমবে, সেই সঙ্গে অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসের সমস্যার প্রকোপও কমবে।
নিয়মিত আকুপ্রেশার করলে কোমরের সমস্যা দূর হবে, হাঁটাচলা ব্যথামুক্ত থাকবে
অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসের লক্ষণ
• একটু বেশি হাঁটাহাঁটি করলে কোমরে ব্যথা করে।
• অনেকক্ষণ চেয়ারে বসে থাকার পর উঠতে গেলে যেন সোজা হতে কষ্ট হয়।
• শুয়ে কাত হওয়া কষ্ট হয়ে যায়।
• উপুড় হয়ে কাজ করা যায় না।
• নামাজ পড়তে কষ্ট হয়।
বেশির ভাগ সময় কোমরের এই ব্যথাকে আমরা গুরুত্ব দিই না, হয়তো বুঝে উঠতেও পারি না; কিংবা ব্যথার কারণ বোঝার জন্য সঠিক চিকিৎসা নেওয়া হয় না। অত্যধিক পরিশ্রম এবং শৃঙ্খলাহীন জীবনযাত্রার কারণে কোমরের কাছে ব্যথা হতে পারে। আর এই ধরনের ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে আপনি অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসের শিকার হতে পারেন। এখন তো, বিশেষ করে ২০ বছর বয়স পার করেই এই সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। যদি ঠিকমতো চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে বয়স বাড়লে স্থায়ী অক্ষমতা দেখা দিতে পারে। তাই সাবধান হতে হবে এখনই।
সম্প্রতি এক গবেষণায় শতাধিক রোগীর ওপর পরীক্ষা করা হয়, তাতে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ রোগীর সঠিক চিকিৎসাই হয়নি, ফলে বছর তিনেকের মধ্যে তাঁদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। চিকিৎসা না হওয়ার কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, ব্যাকপেইনকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গুরুত্বই দেননি রোগীরা। মাত্র ১২ শতাংশ মানুষ অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসের চিকিৎসা করাতে গেছেন। তাই কী রোগ হয়েছে আপনার, সেটা বোঝা জরুরি। সে জন্য আকুপ্রেশার আপনাকে সাহায্য করবে।
এই সমস্যা হলে যেসব উপসর্গ আপনাকে ভোগাবে
• অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসের লক্ষণ কোমরের নিচের অংশে যন্ত্রণা।
• কোমর শক্ত হয়ে যাওয়া, নড়াচড়া করতে না পারা।
• সকালের দিকে যন্ত্রণা বেশি অনুভব হওয়া।
• অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসে ঘাড়ের যন্ত্রণা।
• ক্লান্তি আসা, কোনো কাজ করতে ইচ্ছা না করা।
• যত সময় যাবে, সমস্যা বাড়তে থাকবে।
• হালকা জ্বর, ওজন কমে যাওয়া—এসবও অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসের লক্ষণ।
যে কারণে এই সমস্যা হয়ে থাকে
• বিশেষ করে দীর্ঘসময় এক ভঙ্গিতে বসে থাকা।
• ভারী কাজ করা।
• অ্যানিমিয়া বা শরীরে আয়রনের পরিমাণ কমে গেলেও এই রোগ হতে পারে।
• ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া।
• মেরুদণ্ড ও পেলভিসের জয়েন্ট, অর্থাৎ কোমরের নিচের অংশ টেন্ডন ও লিগামেন্ট যেখানে হাড়ের সঙ্গে জুড়েছে, মূলত মেরুদণ্ডের জায়গায় আপনার ব্রেস্টবোন এবং পাঁজরের মাঝের কার্টিলেজে নিতম্ব ও কাঁধের জয়েন্টে অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসের কারণ। আবার জিনগত কারণে হতে পারে এই রোগ।
• যাঁদের শরীরে এইচএলএ-বি ২৭ নামের জিন আছে, তাঁদের অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে সব থেকে বেশি।
• রিস্ক ফ্যাক্টর নারীদের থেকে পুরুষদের বেশি, কারণ অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসের শিকার তাঁরা হন বেশি। এই রোগে ২০-৪০ বছরের মানুষ সব থেকে বেশি আক্রান্ত হন।
• জিনগত কারণে সব থেকে বেশি এই রোগ হয়।
অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসের চিকিৎসা
এই রোগের কোনো নিরাময় না থাকলেও আকুপ্রেশারের মাধ্যমে যন্ত্রণা কমানো যায়, ধীরে ধীরে মেরুদণ্ডের শক্তি সঞ্চারিত হতে থাকে, মেরুদণ্ড সোজা হয়ে শরীরে নিউরো সমস্যাগুলো দূর করতে থাকে।
আকুপ্রেশার করার নিয়ম
এভাবেই করতে হবে আকুপ্রেশার
আকুপ্রেশারের সুবিধা হচ্ছে, আপনি আপনার নিজের হাতে ছবিতে দেখানো স্থানে চাপ দিলেই বুঝতে পারবেন আপনার শরীরে অবস্থা কেমন। যাঁরা এই স্থানে চাপ দিলে তীব্র ব্যথা অনুভব করবেন, তখন বুঝে নেবেন আপনার মেরুদণ্ডে সমস্যা রয়েছে। তাই এখানে চাপ দিয়েই আকুপ্রেশার করতে হবে।
প্রথমে আপনার দুই হাতে তালুতে ঘষা দিন, এমনভাবে ঘষা দেবেন, যেন দুই হাত গরম হয়ে ওঠে, তারপর ছবিতে দেওয়া হাতের ওপরিভাগে ইনডেক্স ফিঙ্গারের ওপরের হাড়ে অন্য হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে লম্বালম্বিভাবে চাপ দিতে থাকুন। প্রতি হাতে দুই মিনিট করে দুই হাতে চার মিনিট চাপ দিন।
তারপর প্রতিটি আঙুলের ফাঁকে আঙুলের মধ্যে চামড়ার অংশে চাপ দিতে হবে। প্রতিটি ফাঁকে ৫০ বার করে চাপ দিতে হবে, চাপ হবে অনেকটা পাম্প করার মতো। দুই হাতেই এই চাপ দিতে হবে। দিনের বেলা আকুপ্রেশার করতে হবে। সপ্তাহে ৬ দিন আকুপ্রেশার করে এক দিন বিরতি দিতে হবে। আকুপ্রেশার থেরাপির সঠিক ম্যাসাজ হাড়ের একাধিক সমস্যা দূর করে, মেরুদণ্ড ও জয়েন্টগুলোকে সচল রাখতে আকুপ্রেশার উপকারী।
বিকল্প টিপস
আকুপ্রেশার করা ছাড়াও বিকল্প কিছু নিয়ম মেনে চলতে পারলে উপকার পাওয়া যাবে। যেমন প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট সূর্যের আলো গ্রহণ করতে হবে, এতে ব্যথাসহ শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে ভিটামিন ডি পূর্ণ সহয়তা করবে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা করালে উপসর্গ কমতে শুরু করে, হাড়ের বিকৃতির মতো জটিল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এ ছাড়া খাওয়াদাওয়া, ব্যায়ামের মাধ্যমেও এই রোগ থেকে উপকার পাওয়া যায়। মোশন এক্সারসাইজ, স্ট্রেন্থ ট্রেনিং এক্সারসাইজ জয়েন্টের শক্তি বাড়ায়। গরম ও ঠান্ডা থেরাপি—গরম পানি দিয়ে গোসল ও সেঁক দিলে হাড়ের ব্যথা কমে।
ডায়েট ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার, যেমন সামুদ্রিক মাছ, বাদাম অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইসিসের সমস্যা মেটাতে সাহায্য করে। ফল, শাকসবজি, শস্যদানা, দইয়ের মতো খাবার খান। অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস থাকলে এসব খাওয়ার উপদেশ দেওয়া হয়।
দুশ্চিন্তা না করে শুরু করে দিন আজ থেকেই। এক মাসের মধ্যে উপকার পাওয়া শুরু হবে।
* লেখক: আলমগীর আলম | খাদ্যপথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ