নারীদের মূত্র সংক্রমণ (ইউরিন ইনফেকশন) পরিচিত একটা সমস্যা। প্রতি দুজন নারীর একজন কখনো না কখনো এই সংক্রমণে ভোগেন। মূত্রতন্ত্রের কোনো অংশে জীবাণুর সংক্রমণ হলে এই সমস্যা হয়, যাকে সংক্ষেপে ইউটিআই বলে।
মূত্র সংক্রমণের লক্ষণ হচ্ছে, জ্বালাপোড়া, ঘন ঘন মূত্র বেগ, হঠাৎ তীব্র বেগ, মূত্র ঠিকমতো না হওয়া, মূত্রের লালচে ভাব অথবা রক্ত পড়া, তলপেট ও কোমরের মাঝামাঝিতে ব্যথা অনুভব, শীত শীত ভাব, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা, বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া। আবার কারও কারও তীব্র উপসর্গ না–ও থাকতে পারে; বিশেষ করে বয়স্ক নারী কিংবা দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস থাকলে।
প্রতিরোধের উপায়
১. প্রচুর পানি পান মূত্র সংক্রমণ প্রতিরোধের সেরা উপায়। নিয়মিত ২-৩ লিটার পানি খান।
২. ক্র্যানবেরি জুসও এই ক্ষেত্রে উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, এই জুস নিয়মিত সেবনে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। দেশে ক্র্যানবেরি জুস সব জায়গায় পাওয়া না গেলেও এখন ক্র্যানবেরি কনসেনট্রেট অথবা ট্যাবলেট পাওয়া যাচ্ছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেগুলো খেতে পারেন।
৩. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবু, জাম্বুরা অথবা টকজাতীয় ফল নিয়মিত খান। গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন সি ইউরিনকে অ্যাসিডিক করে রাখে। ফলে জীবাণু ছড়াতে হতে পারে না।
৪. প্রবায়োটিকের খুব ভালো উৎস হলো টক দই। এই দইয়ে অনেক ভালো ব্যাকটেরিয়া থাকে, যেগুলো মানবদেহে খারাপ জীবাণু প্রতিরোধ করে।
৫. মূত্র আটকে না রাখা। দীর্ঘক্ষণ মূত্র আটকে রাখলে এই সংক্রমণ হতে পারে। মূত্র যদি মূত্রাশয়ে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখা হয়, তাহলে তাতে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকে।
৬. একবার মূত্রত্যাগের কিছুক্ষণ পর আবার মূত্রত্যাগ করা এবং মূত্রথলি পুরোপুরি খালি করা। যৌনমিলনের আগে ও পরে মূত্রত্যাগ করা। যেসব নারী বারবার মূত্র সংক্রমণে ভুগছেন, তাঁদের জন্য এটা ভালো কাজ করে।
৭. স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান, সুতি কাপড়ের অন্তর্বাস ব্যবহার, নিয়মিত গোসল করা, মূত্রপথ পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখা, মাসিকের সময় নিয়মিত স্যানিটারি প্যাড পরিবর্তন করা খুবই জরুরি। সুতির অন্তর্বাস প্রতিদিন পরিবর্তন করতে হবে। নারীদের মূত্রত্যাগ বা অন্য কারণে পরিষ্কারের সময় সামনে থেকে পেছনের দিকে পরিষ্কার করা।
মূত্র সংক্রমণের সঠিক চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ খুবই জরুরি। এ থেকে নানা ধরনের জটিলতা, এমনকি রক্তে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় কিডনিও অকেজো হয়ে যেতে পারে।
তাই উপসর্গ বুঝে রোগীকে কিছু পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়, যা সংক্রমণের মাত্রা, জটিলতা অথবা জীবাণু শনাক্তকরণের জন্য সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের জন্য সাহায্য করে। যেমন সিবিসি, সিআরপি, ক্রিয়েটিনিন, ইউরিন আরএমই ও কালচার, ক্ষেত্রবিশেষে আলট্রাসনোগ্রাম।
লেখক: ডা. নওসাবাহ্ নূর, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, পপুলার মেডিকেল কলেজ