দিন কাটত কোণের ঘরে দেয়াল দিয়ে ঘেরা
কাছের দিকে সর্বদা মুখ ফেরা
তাই সুদূরের পিপাসাতে অতৃপ্ত মন তপ্ত ছিল
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'আকাশ' কবিতার এই তিনটি চরণের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায় আমদের এখনকার দিনকাল। বাইরের ছুটে চলা জীবনের গতি কমে এখন অনেকটাই ঘরকুনো আমরা। তাই তো সুদূরের পিপাসা থাকলেও অতৃপ্ত মন নিয়ে বেশির ভাগ সময় অন্দরের মধ্যেই বসবাস।
এমন ছোটখাটো অনুষঙ্গ যোগেও চলে আসবে বড় ভিন্নতা
তাই তো গৃহের ভূষণে আলাদা কিছু যোগ–বিয়োগ করে বদলে ফেলা যায় ঘরে থাকা আগের আসবাব। আবার যুক্ত করা যায় প্রয়োজনীয় নতুন কিছু সরঞ্জাম। পরিবর্তনশীল এ সময়ের সঙ্গে মিল রেখে অন্দরসজ্জার সামান্য অদলবদলই নিয়ে আসবে প্রশান্তি আর স্বস্তি।
আলো–বাতাসের খেলা
করোনাকালে আমরা নতুন করে বুঝতে পেরেছি সুস্থ মন ও শরীরের জন্য পর্যাপ্ত আলো–বাতাস কতটুকু প্রয়োজন। ঘরে থাকা আসবাব নিজে নিজেই একটু বিন্যাস করে নেওয়া যায়। খেয়াল করে দরজা ও জানালার সামনে অবশ্যই খালি জায়গা রাখতে হবে, যেন আলো–বাতাস বন্ধ না হয়ে যায়। ঘর ঠান্ডা রাখতে ক্রস ভ্যান্টিলেশনকে গুরুত্ব দিয়েছেন ডিজাইন কোড ইন্টেরিয়রের পরামর্শক ও প্রধান নকশাবিদ আবদুল্লাহ আল মিরাজ। তাঁর পরামর্শ, ঘরে বাতাস এক দরজা-জানালা থেকে ঢুকে যেন অন্য দরজা-জানালা দিয়ে বেরিয়ে যায়। এতে ঘরের গরম বাতাস দূর হবে। এ ছাড়া জানালার সামনে উঁচু আসবাব সরিয়ে মাঝারি বা ছোট আকারের আসবাব রাখুন। এভাবে ঘরের আসবাব সাজালেই দীর্ঘ সময় স্বাচ্ছন্দ্যে ঘরে থাকা যাবে।
বারান্দার সঙ্গে ঘরের লাগোয়া দরজা খোলা রাখুন
ঘরেই অফিসের জায়গা
সুবিধা হবে এমন স্থান বেছে নিন াফিসের কাজের জন্য
ঘরে বসে অফিস করা আমাদের জন্য একেবারেই নতুন একটি ধারণা। অভ্যস্ত হয়েও যেন অভ্যস্ত হয়ে ওঠা হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে ঘরের রিডিং কর্নার বা বই পড়ার স্থানে টেবিল বসিয়ে দিব্যি কাজ করতে পারেন। চারপাশে কিছু গাছ রাখলে মন থাকবে প্রফুল্ল। কিন্তু ঘরে এমন স্থান না থাকলে শোয়ার ঘরেই অফিসের জন্য একটি জায়গা করে নেওয়ার পরামর্শ দেন নকশাবিদ আবদুল্লাহ আল মিরাজ।
একটু বিশ্রাম
বারান্দায় দোল খেয়ে মন ভালো করার জন্য বসিয়ে নিতে পারেন ছোট বা মাঝারি দোলনা। ঘর ছোট হলে রয়েছে বিকল্প ব্যবস্থা, রাখতে পারেন দোল দেওয়া ছোট চেয়ার। বারান্দায় গাছ থাকলে সেটার পাশে মেঝেতে একটু বসায় আয়োজনও মন্দ নয়। বিকেলের চা আর গল্পের বইয়ের সঙ্গে কাজের ফাঁকে হয়ে যাবে একটু বিশ্রাম।
হাঁটাহাঁটির ব্যবস্থা
বাড়িতেই করুন হালকা ব্যায়াম
সুস্থ থাকতে শুধু ঘরে থাকলেই চলবে না, হালকা ব্যায়াম আর হাঁটাহাঁটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘরের মধ্যে বা বারান্দায় কিছুটা জায়গা বের করতে হবে এ কাজের জন্য। যদি ট্রেডমিল বা সাইক্লিং করার ব্যবস্থা থাকে, তবে তো কথাই নেই। যদি সকাল সকাল ইয়োগার অভ্যাস থাকে, তবে বারান্দার থেকে ঘরে ভালো স্থান আর হবে না।
উপযুক্ত উপকরণ
নিয়মিত কুশনের কাভার বদলান
করোনার সময় ঘরের আসবাবের পাশাপাশি অন্দরে অন্যান্য উপকরণেও দিতে হবে সজাগ দৃষ্টি। পর্দা, কুশন, পাপোশ, চাদর, টেবিল ক্লথ, টেবিল রানার—এসব হতে হবে সুতি, লিনেন বা এই রকম কাপড়, যা সহজে ধোয়া যায়। কারণ, এ সময়ে যতটা সম্ভব পরিষ্কার ও ধুলাবালুমুক্ত থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।
গাছ–বাগান
গাছ রাখুন অন্দরেও
বেশি বেশি গাছ লাগালে মন থাকবে ফুরফুরে। এ ছাড়া গাছের সতেজ ফল বা সবজি শরীরের জন্যও উপকারী। চাইলেই রান্নাঘরে বা বারান্দায় ছোট গাছ–বাগানের আয়োজন করা যায়।
লেখক: রিফাত পারভীন, ঢাকা