What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

সৌন্দর্যবর্ধক গাছ যখন বিপজ্জনক (1 Viewer)

LeJfxE3.jpg


নান্দনিক রুচিবোধের বহিঃপ্রকাশে কিংবা গৃহসজ্জায় একটু প্রাণের ছোঁয়ার জন্য গাছের বিকল্প নেই। কংক্রিটের এই শহরে মাথা গুঁজে বাঁচার তাগিদে ইট-কাঠ-পাথরের কুঠুরিতেই আমরা খুঁজে নিই আপন আবাস। তবে বাসা তো শুধু অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই নয়, নিবিড় স্বস্তি আর একান্ত নিজের মতো থাকতেই চাওয়া–পাওয়ার প্রতিফলনে সাজিয়ে–গুছিয়ে বাসাকে আমরা বাড়িতে রূপান্তরিত করি। কর্মব্যস্ত জীবনের ব্যর্থতা সফলতাগুলো বাইরে রেখে বাড়ি ফেরার এই প্রণোদনা বাড়িয়ে তোলে সবুজের ছোঁয়া।

প্রকৃতির পরশ পেতে ছাদ, বারান্দা, সিঁড়িঘর এবং প্রবেশদ্বারে গাছ রাখি আমরা। আর অন্দরসজ্জায় ব্যবহৃত গাছের বাহার দেখা যায় ড্রয়িংরুমে, বেডরুমে, লিভিংরুমে কিংবা যেকোনো মানানসই জায়গায়। কিন্তু জানেন কি, সঠিক জ্ঞান না থাকলে প্রাণের প্রতিচ্ছবি ঘরে রাখা আপাতনিরীহ গাছ হতে পারে আপনার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতির কারণ! মানতে কষ্ট হলেও এটাই সত্যি। বিশেষ করে বাড়িতে ছোট শিশু এবং পোষা প্রাণী থাকলে সৌন্দর্যবর্ধনে জনপ্রিয় অনেক গাছ হতে পারে মৃত্যুর কারণ। তাই জেনে নেওয়া ভালো কোন গাছগুলো হতে পারে স্বাস্থ্যের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হুমকি।

ক্রোটন বা পাতাবাহার

HskUFHC.jpg


ক্রোটন বা পাতাবাহারের রূপে সব প্রকৃতিপ্রেমী মুগ্ধ। ফুল না ফুটলে কী হবে, পাতাতেই যে রং রূপের কারসাজি! আর তাই ঘরে-বাইরে বিভিন্ন জাতের পাতাবাহারের জনপ্রিয়তা। কিন্তু ক্ষতিকর গাছের তালিকায় পাতাবাহারের নাম দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই। পাতাবাহারের বিষাক্ত রস ও বীজ অ্যালার্জি বা ত্বকের জ্বালাপোড়ার কারণ হতে পারে। আর কোনোভাবে পেটে চলে গেলে মন খারাপ, বিরক্তি, বমি বমি ভাব, বমি, মাথাব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা হতে পারে। শুধু তাই নয়, ত্বকের কাটাছেঁড়ার মাধ্যমে রক্তে মিশে গেলে যদি দ্রুত চিকিৎসা না করা হয় তবে মৃত্যুও হতে পারে।

অ্যাগলোনিমা

dzziTrJ.jpg


পাতাবাহারের মতোই পাতার রং, নকশা, বৈচিত্র্য আর আকৃতির জন্য বিভিন্ন রকমের অ্যাগলোনিমার গ্রহণযোগ্যতা তুঙ্গে। যত্ন এবং আলো-বাতাস কম লাগে বলে ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে জনপ্রিয়। তবে দর্শনধারী হলেও গুণবিচারে অ্যাগলোনিমার রস বিপজ্জনক। কাজের সময় এই রস চামড়ায় লাগলে জ্বালাপোড়া তো হবেই, চোখে লাগলে ডাক্তারের কাছে দৌড়াতে হবে।

অ্যাডেনিয়াম

lUGogtL.jpg


শৌখিন ইনডোর প্ল্যান্টের মধ্যে অ্যাডেনিয়ামের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই গাছের মনোমুগ্ধকর ফুলের রংবাহারে চোখ ফেরানো মুশকিল, ফুলদানি নয়—ঘরের কোণে অ্যাডেনিয়াম অন্দরসজ্জায় যোগ করে আভিজাত্য। ফুল ছাড়াও অ্যাডেনিয়ামগাছের আকৃতির আকর্ষণ এড়ানো মুশকিল। তবে জানেন কি, আফ্রিকান বেশ কিছু ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী তাদের তিরের মাথায় বিষ দিতে অ্যাডেনিয়াম রস ব্যবহার করে! হ্যাঁ। এই গাছের মূল, কাণ্ড ও শাখা-প্রশাখা থেকে দুধের মতো বিষাক্ত রস নিঃসৃত হয়, যা ত্বক ও মিউকাস টিস্যুর মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে মারাত্মক নেশা হয়। মাত্রা কমবেশি হলে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। তাই যথাযথ সতর্কতা ছাড়া অ্যাডেনিয়াম হতে সাবধান।

মন্সটেরা

x4FpOU8.jpg


বড় বড় সবুজ পাতার লতানো গাছ—ঘরে বা বাইরে যেখানেই হোক না কেন, খুব সহজেই প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে যায় মন্সটেরা। প্রতিকূল আলো-বাতাসে যত্ন ছাড়াই বাড়ে বলে সবুজপ্রেমী প্রায় প্রতি ঘরেই দেখা মেলে এই গাছের। জানার বিষয়, মন্সটেরা পাতার রস সংবেদনশীল ত্বক বা চোখে গেলে তীব্র প্রতিক্রিয়া করে। আর ভুল করে এই পাতা চিবিয়ে ফেললে তো কথাই নেই—মুখ ও গলা ফুলে যাওয়া, কণ্ঠস্বর বিকৃতি, ঠোঁট ও মুখ অবশ হয়ে যাওয়ার মতো ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

আজালিয়া

sCrILNd.jpg


ছবিতে, পোস্টারে কিংবা স্ক্রিনসেভারে প্রায়ই দেখা যায়, নানা রঙে রঙিন ফুলের ভূমিসজ্জায় সেজেছে প্রকৃতি। যার প্রধান কৃতিত্ব আজালিয়া ফুলের। এই ফুল যেমন রোদহীন স্থানেও চমৎকার ল্যান্ডস্কেপ তৈরি করে, তেমন অন্দরসজ্জায় যোগ করে অনন্য বসন্ত। শুধু ফুল নয়, আজালিয়া বনসাইশিল্পের জন্যও আদর্শ। তবে এই সৌন্দর্যের রয়েছে অ্যান্ড্রোমডোটক্সিন, যা নেশায় আচ্ছন্ন করে এবং শরীর অবশ করে দেয়। আজালিয়া পাতা পেটে গেলে বিষক্রিয়ায় বমি, খিঁচুনি, পেটে ব্যথা এবং ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত অজ্ঞান হয়ে থাকতে পারে পূর্ণবয়স্ক মানুষ।

অ্যালোকেসিয়া

SPX3XFk.jpg


অ্যালোকেসিয়া। বাংলায় যাকে বলি কচু। গ্রামে হাটে-মাঠে-ঘাটে বা বাড়ির আনাচকানাচে গজিয়ে ওঠা অ্যালোকেসিয়াকে আগাছাজ্ঞান করলেও শহরে কিন্তু বেশ জনপ্রিয় সেমি–ইনডোর গাছ। অনেক জাতের মধ্যে সবুজ রঙের মখমলে তৈরি বড় বড় পাতার মতো দেখতে অ্যালোকেসিয়ার দামটাও নার্সারিতে নিতান্ত কম নয়। তবে এই গাছের রাইজোম বিশেষত বিপজ্জনক। তবু অ্যালোকেসিয়া ভোজ্য—মানে বাঙালির ভাতে ভর্তা, ভাজি, ঘন্ট বা ইলিশের মাথা দিয়ে চচ্চড়িতে কচুর কথা বলছি। কিন্তু এর কিছু প্রজাতিতে বিষাক্ত স্ফটিক রয়েছে, যা গলা চুলকানো, জিহ্বা অবশ হয়ে যাওয়া, জ্বলুনি এমনকি জিহ্বা ও গলা ফুলে গিয়ে শ্বাসরোধে মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

ডাম্বকেন

lrRkShJ.jpg


এই গাছের আরেক নাম ডাইফেনব্যাকিয়া। এর সৌন্দর্য নিয়ে যেমন নতুন করে কিছু বলার নেই, তেমন দ্বিরুক্তি নেই বিষাক্ত প্রতিক্রিয়ায়। ডাম্বকেনের পাতার এবং কাণ্ডের রস অত্যন্ত বিষাক্ত, যা ত্বকে জ্বালাপোড়া বা ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে সংস্পর্শে গেলেই। উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের মতে, এই গাছ হাত দিয়ে ধরলে এবং ওই হাত দিয়ে চোখ ছুঁলে চোখে ভয়ানক অস্বস্তি বা জ্বলুনি হয়। চোখের এই প্রদাহ বেড়ে গেলে অন্ধত্বের আশঙ্কাও থাকে। এই গাছের যেকোনো অংশ খাওয়ার পর বা গলায় যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে একটি শিশুর মৃত্যু হতে পারে, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জীবনও খুব বেশি সময় থাকবে না।
এ ছাড়া স্পার্জ, সাইক্লেমন, ক্লিভিয়া, ব্রোভালিয়া, শ্যাফলার, ডেফোডিল, ইংলিশ আইভি, ক্যালাডিয়াম, টিউলিপ ইত্যাদি গাছেরও কমবেশি ক্ষতিকর দিক রয়েছে। তবে সঠিক তথ্য এবং যত্ন করার নিয়ম জানলে সব গাছই বাড়িকে সতেজ করে তুলবে। গাছের যত্নআত্তি করার সময় হাতে গ্লাভস ও চোখে চশমা ব্যবহার করলে অনেক দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। আর গাছ ক্ষতিকর হোক বা না হোক—অবুঝ শিশুদের নাগালের বাইরে রাখাই ভালো। অনেক গাছ আবার বিড়াল ও কুকুরের জন্য ক্ষতিকর, তাই গাছ বাছাই এবং বাড়িতে আনার আগে পোষা প্রাণীদের কথা মাথায় রাখা উচিত।

* দীপান্বিতা ইতি
 

Users who are viewing this thread

Back
Top