প্রাচীনকালে সুপেয় পানির ব্যবস্থা হতো ঝরনা বা ফোয়ারা থেকে। বহু বছর পর যখন মানবসভ্যতা কিছুটা উন্নত হলো, তখন আবার ঝরনা থেকে প্রাকৃতিক পানি জমিয়ে রাখা হতো কৃত্রিমভাবে।
ইতিহাস বলে, প্রায় তিন হাজার বছর আগে এমন ফোয়ারা তৈরি হয়েছিল। আর সে সময়টি ছিল প্রাচীন মেসোপটেমিয়া সভ্যতা। এ ছাড়া গ্রিক সভ্যতার সময়েও এমন ফোয়ারার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় বিভিন্ন গবেষণায়।
তবে এখন চাইলেই ঘরের মধ্যে কৃত্রিমভাবেই ঝরনা তৈরি করে নেওয়া যায়। তীব্র গরম কমাতে এমন ফোয়ারা বেশ সহায়ক বটে। ঘর আকারে বড় হলে অনেকখানি জায়গা নিয়েই তৈরি করা যায় বড় ফোয়ারা। তবে ছোট ঘরের জন্য ছোট ছোট ফোয়ারাই ঠিক থাকবে। এমনকি বাজারেও ছোট আকারের সম্পূর্ণ তৈরি করা ফোয়ারা পেয়ে যাবেন।
এ ছাড়া ফোয়ারা নিজ হাতে তৈরি করে নেওয়ার আছে সহজ উপায়। ইউটিউব দেখে রপ্ত করাও কঠিন কিছু নয়। আবার চাইলে ঘরের গরম কমাতে ফরমাশ দিয়ে ফোয়ারা তৈরি করে নেওয়া সম্ভব। সে ক্ষেত্রে ঘরের আকার ও পছন্দ দুটোকে প্রাধান্য দিয়েই ফোয়ারা বসানো উচিত।
অন্যদিকে সৌন্দর্যের পাশাপাশি অন্দরের ভেতরকার তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে ফোয়ারা। কারণ, পানি বাতাসের আর্দ্রতা বাড়ায়। যে কারণেই অন্দরে ফোয়ারা রাখলে ঘর অনেকটাই ঠান্ডা হয়ে যায়।
তবে এসব কৃত্রিম ফোয়ারা ঘরের এমন স্থানে রাখা উচিত, যেখানে বাতাসের আনাগোনা বেশি। যাতে সহজেই আর্দ্রতা বাতাসের সঙ্গে সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়ে।
ভেতরের পাশাপাশি চাইলে ঘরের প্রবেশদ্বারে, বারান্দায়, ছাদে বা ঘরের সামনে খোলা কোনো জায়গায় করা যায় কৃত্রিম ফোয়ারা। আর এর চারদিকে গাছ রাখলে এক টুকরা জলধারা ও বাগান দুই-ই আমেজ পাবেন।
ঘর ছোট হলে টেবিলের ওপর বসানো যায় ডেস্কটপ ফোয়ারা। এ ছাড়া ঘরের মেঝেতে মাঝারি আকারের ফ্লোর টপ বেশি জায়গা নেয় না। কিন্তু বড় ঘরে দেয়ালে বা কোনায় ফোয়ারা করলে ঘরের তাপমাত্রার পার্থক্য সহজেই বোঝা যাবে। তবে গরম কমাতে ছোট বা মাঝারি ফোয়ারা দরকার হবে কয়েকটি।
র্যাস্টিক গার্ডেন একটি অনলাইনভিত্তিক পেজ, যারা মূলত ফরমাশে ফ্লোর টপ ফোয়ারা তৈরি করে থাকে। এই পেজের স্বত্বাধিকারী সাব্বির আহমেদ চার মাস আগে অনলাইনের মাধ্যমে এর বিপণন শুরু করেন। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই ইউটিউব দেখে ফোয়ারা তৈরির কাজ শেখেন তিনি। সাব্বির আহমেদ বললেন, সাধারণত সিমেন্ট ও পাতের তন্তু মিশিয়ে ফোয়ারা তৈরি করেন তাঁরা। এতে করে ফোয়ারা আরও মজবুত হয়। তাঁদের তৈরি ফোয়ারাতে ৫০ লিটারের মতো পানির দরকার হয়।
ফ্লোর টপজাতীয় ফোয়ারার নিচের পুলটি সাধারণত ৮ থকে ১০ ইঞ্চি গভীর হয়। তাই চাইলেই গাপ্পি মাছ বা পদ্ম ফুল রাখা যায় সহজেই। এর আরেকটি সুবিধা, ফোয়ারায় মশা তৈরি হবে না। এ ছাড়া পানি যেহেতু সব সময়েই সচল থাকে, তাই অক্সিজেন তৈরি হয় এবং পরিষ্কারেরও দরকার পড়ে না। তবে মাসে একবার পানি শুকিয়ে নতুন করে পানি দিলে স্বচ্ছতা থাকবে। এ ছাড়া সপ্তাহে একবার দুই কাপ করে পানি দিলে প্রবাহ সচল থাকবে।
* রিফাত পারভীন, ঢাকা