What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

আমাদের মেহমানখানা (1 Viewer)

পবিত্র রমজান মাসে নিরন্ন ও অসহায় মানুষের ঠিকানা হয়ে উঠেছিল রাজধানী লালমাটিয়ার ডি-ব্লক এলাকা। রোজ হাজারো মানুষ ইফতারের সুযোগ পেয়েছেন সেখানে। ঈদের দিনেও ছিল বিশেষ খাবার আয়োজন। কয়েকজন তরুণের উদ্যোগটির নাম মেহমানখানা। অসহায় মানুষকে খাওয়ানোর এ উদ্যোগ এক বছরের বেশি সময় আগে চালু হয়েছে। মেহমানখানার কথা লিখেছেন অন্যতম উদ্যোক্তা সৈয়দ সাইফুল আলম।

mkTRVd0.jpg


সবকিছু বন্ধ থাকলে শ্রমজীবী মানুষ খাবে কী?

মনের ভেতর এ প্রশ্ন উঁকি দিয়েছিল গত বছর করোনার প্রকোপ বাড়লে যখন সরকারি ছুটি ঘোষণা করল, সেই সময়। মনে মনে ভাবি, শহরে যে মানুষেরা আমাদের সহযোগিতা করে গেছেন, তাঁদের কাজ দিয়ে, সংকটের সময় তাঁদের পাশে থাকতে হবে। এই ভাবনা থেকেই সংগ্রহের অল্প কিছু অর্থ নিয়ে তাঁদের সহযোগিতা শুরু করলাম। একসময় আয়োজন করলাম রান্না করা খাবার খাওয়ানোর। ধর্ম, বর্ণ, পেশা কিছুই আমাদের কাছে গৌণ বিষয় হলো না, যাঁরা এলেন, সবাই হলেন আমাদের মেহমান।

এভাবেই শুরু হলো মেহমানখানার। রাজধানীর লালমাটিয়া ডি–ব্লকের সেই মেহমানখানা শুরুতে নিবু নিবু হয়ে চলছিল। নিজেদের অর্থ থেকে চাল, ডাল, তেল, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর ১০ কেজি প্যাকেট বিতরণ করা হতো আগতদের মধ্যে। কিন্তু তা ছিল ব্যয়বহুল। যে প্যাকেট একজনকে দেওয়া হতো, সেসব উপকরণ রান্না করলে অনেক মানুষ খেতে পারতেন। সে চিন্তা থেকেই ভাত, সবজি, মুরগির মাংস রান্না করা শুরু করলাম। সাধারণ ছুটিতে সবকিছু বন্ধ, মানুষ কাজ হারাচ্ছিল, কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বাড়ছিল। আশপাশে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল আছে, হাসপাতালে যাঁরা রোগীর সঙ্গে আসতেন, স্বাবলম্বী মানুষ হলেও রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় খাওয়ার দুর্ভোগে পড়লেন। তাঁদের অনেকে আমাদের এখানে আসতেন খেতে।

QRkdt7T.jpg


বিস্তৃতি বাড়তে থাকল। আমরা খিচুড়ি রান্নার সিদ্ধান্ত নিলাম। যেটুকু রান্না হতো, প্রতিদিন নতুন নতুন মেহমান যুক্ত হওয়ায় খাবারের সংকট হতো। মেহমানেরা অর্ধেক খেয়ে পাশের জনকে খাবারের থালাটা এগিয়ে দিতেন। খাবার শেষ আবার রান্না করতে হতো। চাকরি হারানো বাবা সন্তানের জন্য খাবার সংগ্রহ করতে আসতেন। হাঁড়ির শেষ খাবারটুকু মুছে নিয়ে যেতেন কোনো মা। আমরা তত দিনে জেনে গেছি, ক্ষুধার রাজ্যে এক বেলা খাবার মানেই ঈদের আনন্দ।

বেশিসংখ্যক মানুষকে খাওয়াতে পারতাম না। সামর্থ্য ছিল সীমিত। মাঝেমধ্যে এমনও হয়েছে, সিলিন্ডারে গ্যাস কেনার অর্থ থাকত না। এগিয়ে আসতেন এলাকার মানুষ। কারও বাসার পুরোনো আসবাব ভেঙে দিয়ে যেতেন রান্নার জন্য। বাসার নিচে সেসব দিয়ে রান্না হতো। আমাদের স্বেচ্ছাসেবকেরা ব্যয় সংকোচন করতে দিনের পর দিন শুধুই ডাল-ভাত খেত। সপ্তাহে একদিন গরুর ছাঁট মাংস (গরুর চামড়ার সঙ্গে যুক্ত মাংস, মাথার মাংস) কিনে এনে খেত। রায়েরবাজার থেকে লকডাউনে মাথায় করে বাজার এনেছে। একটা আলাদা রিকশা নিলে খরচ বেশি হবে বলে মেয়েরা মালামাল নিয়ে ভ্যানের ওপর চড়ে বসেছে। শহরের কোথায় সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পাওয়া যায়, তার জন্য ছুটেছে।

এর মধ্যেই গত বছর রমজান মাস এল। ইফতারির আয়োজন করলাম আমরা। শুরুর কয়েক দিন চার হাজার টাকায় ইফতার আয়োজন হতো। এরপর মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকল। আমাদের সহযোগিতাও করতে থাকলেন অনেকে। সেই সহযোগিতায় রোজ কয়েক শ মানুষ ইফতারের সুযোগ পেল।

করোনা সংক্রমণ কমলে, মানুষ যখন কাজে বেরিয়ে পড়ল তখন মেহমানখানার কাজও সীমিত হলো। তবে প্রতি শুক্রবার আমরা খাবারের আয়োজন করতাম।

DZ7zRns.jpg


এবার যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত হচ্ছিল দেশ, সরকার লকডাউন ঘোষণা করল, তখন আবার পুরোদমে কাজ শুরু করল মেহমানখানা। এরই মধ্যে এল পবিত্র রমজান মাস। রমজান মাসজুড়ে রোজ হাজারখানেক মানুষ মেহমানখানায় ইফতারের সুযোগ পেয়েছে।

মেহমানখানার গল্প সংবাদমাধ্যমে প্রচারের পর অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। অনেকে বড় বড় অনুদান নিয়ে এগিয়ে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমরা গ্রহণ করতে পারিনি। কারণ, আমরা আমাদের সংকট, সীমাবদ্ধতাকে সব সময় মনে রাখতে চাই। আমাদের সংকটগুলো সবাইকে নিয়ে মোকাবিলা করতে চেয়েছি বারবার। আর তাই অল্প অল্প করে চাল, আলু, পেঁয়াজ, চিনি, তেল, লবণ, খেজুর জমা করে দিন শেষে বড় সংগ্রহে হাজার মানুষের মেহমানদারি হতো।

আমরা যারা স্বেচ্ছাসেবক, ঢাকায় আমাদের কারও বাড়ি নেই, অনেকে শিক্ষার্থী, অনেকে চাকরিজীবী, কিন্তু চাকরিজীবীদের কারও বেতন ছয় অঙ্কেরও নয়। আমাদের পারিবারিক অবস্থাও কারও এমন কিছু নয় যে আমরা দিনের পর দিন এ আয়োজন চালু রাখতে পারবে। অসংখ্য মানুষ দায়িত্ব নিয়েছেন আর তাই মেহমানখানা চলছে। হাজার মানুষ আসেন, খাবার খেয়ে যান। মেহমানখানার সত্যিকারের নায়ক নাম না প্রকাশের পেছনের এ মানুষেরা।

আমি আর আসমা আক্তার শুরুটা করলেও, এত এত স্বেচ্ছাসেবক আর পরিচিত-অপরিচিত মানুষের শ্রমে গড়ে ওঠা 'মেহমানখানা' আমাদের দুজনের, এটা দাবি করার কোনো সুযোগ নেই। বরং তা 'আমাদের মেহমানখানা'। দেশের নানা প্রান্তের তরুণেরা এমনটাই বলেন, 'আমাদের মেহমানখানা'। এটাই আমাদের সার্থকতা।
 
A great effort by local people to help others and stand together for Nobel cause. Hats off
 

Users who are viewing this thread

Back
Top