What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ঈদের ছুটিতে হঠাৎ অসুস্থতা (1 Viewer)

TLx4Idv.jpg


করোনাকালের এই ঈদের ছুটিতে পরিবার, পরিজন ও স্বজনদের সঙ্গে কে না আনন্দঘন মুহূর্ত কাটাতে চান। তবে অসুখ-বিসুখ তো আর উৎসব বোঝে না। এ সময়ে নিজের বা পরিবারের জরুরি স্বাস্থ্য সমস্যা হলে কী করব, তা ভেবে আমরা প্রায়ই দিশেহারা হয়ে যাই। আসুন জেনে নিই জরুরি কিছু স্বাস্থ্য সমস্যায় করণীয় সম্পর্কে।

বুকে ব্যথা

নানা কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে। যেমন, পেপটিক আলসার ডিজিজ (অম্লতা বা অ্যাসিডিটি), হার্ট অ্যাটাক, বুকের মাংসপেশির প্রদাহ, নিউমোনিয়া ইত্যাদি। তবে প্রতিটি রোগেই বুকে ব্যথার নির্দিষ্ট ধরন থাকে। রোজার পর হঠাৎ অনেক খাওয়াদাওয়া করলে অ্যাসিডিটির সমস্যা হতেই পারে। অ্যাসিডিটির সমস্যা হলে বুকে জ্বালাপোড়া, সঙ্গে গলায় টক ঢেকুর হতে পারে। এ ক্ষেত্রে অমিপ্রাজল বা অ্যান্টাসিড–জাতীয় ওষুধ দ্রুত কার্যকরী। মাংসপেশির প্রদাহ হলে নড়াচড়ায় ব্যথা লাগে। ঈদের কাজকর্ম রান্নাবান্নার পর পাঁজরের মাংসপেশির টান লাগা বা ব্যথা হলে ঘাবড়াবেন না। এ ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল বা চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।

নিউমোনিয়া হলে বুকের ব্যথার সঙ্গে জ্বর, কাশি ও কোনো ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট থাকবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। সবচেয়ে জরুরি অবস্থা হলো হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা। যদি বুকে চাপ ধরনের ব্যথা (বিশেষ করে মাঝখানে) হয় এবং তা পাঁচ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়, কাঁধ বা বাহুতে ছড়াতে শুরু করে, সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, ঘাম, অস্থিরতা অনুভূত হয়, বমি হতে পারে, তবে সময়ক্ষেপণ না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ, হার্ট অ্যাটাকের পর যত সময় যেতে থাকে, তত মৃত্যুহার বাড়ে। সঙ্গে সঙ্গে রোগী যদি বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি হয়, তবে জীবন রক্ষাকারী প্রাইমারি অ্যানজিওপ্লাস্টি করাসহ অন্যান্য চিকিৎসা করা সম্ভব।
মনে রাখবেন, ঈদ ও অন্যান্য ছুটিতেও ঢাকার জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, সব সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগ এবং বেসরকারি হাসপাতালের কার্ডিয়াক ইমার্জেন্সি ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে।

হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া

এ ক্ষেত্রে প্রথম কাজ হবে অচেতন ব্যক্তিকে ভালোভাবে নিরাপদ স্থানে শুইয়ে দেওয়া। রোগীর চেতনা আছে কি না, বুকের শ্বাসের উঠানামা হচ্ছে কি না, তা লক্ষ করুন। সম্ভব হলে রক্তচাপ পরীক্ষা করতে হবে। হঠাৎ খিঁচুনি শুরু হলে আতঙ্কিত না হয়ে রোগীকে একপাশ করে শুইয়ে দিতে হবে, যতক্ষণ খিঁচুনি না থামে।
ডায়াবেটিসের রোগী হলে গ্লুকোমিটার দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে রক্তে শর্করা কমে গেছে কি না। শর্করা কমে গেলে শিরায় গ্লুকোজ দেওয়ার জন্য কাছাকাছি যেকোনো হাসপাতালে নেওয়া যায় বা অভিজ্ঞ লোক ডেকে বাড়িতেই দেওয়া যাবে। অনেক সময় রক্তে ইলেকট্রোলাইট কমে যাওয়ার কারণে অজ্ঞান হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
বয়স্ক ব্যক্তি বিশেষ করে যাঁদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগ বা এই ধরনের জটিলতা আছে, তাঁদের স্ট্রোকের কারণে হঠাৎ অজ্ঞান হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এসব ক্ষেত্রে শরীরের একাংশ অবশ বা দুর্বল মনে হবে, মুখ বেঁকে যাওয়া বা খিঁচুনি হতে পারে। তা হলে অতি দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া উচিত। অচেতন হওয়ার সঙ্গে জ্বর থাকলেও জরুরি বিভাগে নিতে হবে।

দুর্ঘটনা

দুর্ঘটনা যেকোনো জায়গায় হতে পারে, সড়কে বা বাড়িতে। সাধারণ দুর্ঘটনার মধ্যে রয়েছে শরীরে কাটা, ছেঁড়া, মাংসপেশিতে আঘাত পাওয়া ইত্যাদি। এ ছাড়া গুরুতর দুর্ঘটনায় জটিল শারীরিক সমস্যা হতেই পারে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই কালক্ষেপণ না করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া জরুরি। বাড়িতে সাধারণ কাটা–ছেঁড়া হলে পরিষ্কার ঠান্ডা পানিতে জায়গাটা ধুয়ে ফেলতে হবে।

রাস্তাঘাটে আঘাত পেলে বা কেটে গেলে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা বেশি। সে ক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহার করা আবশ্যক। ধোয়ার পরে দেখতে হবে, ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে কি না। রক্তপাত হতে থাকলে কাটা জায়গায় হাত দিয়ে এক টুকরো পরিষ্কার গজ দিয়ে চেপে ধরতে হবে। সাধারণত কয়েক মিনিটের মধ্যেই রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়, তা না হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। মাংসপেশিতে ব্যথা থাকলে প্যারাসিটামল বা চিকিৎসকের পরামর্শে স্বল্পমাত্রায় বেদনানাশক ওষুধ সেবন করতে পারেন। তবে তীব্র ব্যথায় বা ব্যথা স্থানে ফুলে যাওয়া বা অস্বাভাবিক কিছু পরিলক্ষিত হলে অচিরেই হাসপাতালে যাওয়া উত্তম। মাথায় আঘাত পেলে অবশ্যই হাসপাতালে নিতে হবে।

আগুনে পুড়ে যাওয়া

নারীদের শরীরে আগুন লাগার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে রান্নাঘরে। পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনায়, গ্যাস সিলিন্ডার, বিদ্যুতায়িত হয়ে শরীরের অনেক জায়গা পুড়ে যায়। পোড়া জায়গায় পরিষ্কার ঠান্ডা পানি ঢালতে হবে ২০ থেকে ৩০ মিনিট। কোনো ধরনের টুথপেস্ট, গাছের বাকল, মসলা বা ডিম লাগানো যাবে না। যদি পোড়ার জায়গাটা অল্প হয়, তবে পরিষ্কার করার পর বার্না, বার্নল বা সিলক্রিম লাগিয়ে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঢেকে হাসপাতালে নিতে হবে। শরীরের বেশি জায়গা বা শ্বাসনালি আক্রান্ত হলে দেরি না করে হাসপাতালে আনতে হবে।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকলে

করোনা অতিমারির এই সময়ে অনেকেই বাসায় করোনার চিকিৎসা নিচ্ছেন। কোভিড রোগীকে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। নিয়মিত জ্বর ও শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের (বয়স্ক রোগী, ফুসফুসের জটিলতা, হার্টের বা কিডনির সমস্যা) ক্ষেত্রে বাসায় অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর বা সিলিন্ডারের সরবরাহ রাখা যেতে পারে। শরীরে অক্সিজেন ৯৪ শতাংশের কম হলে দ্রুত কোভিড হাসপাতালে যেতে হবে। কোনো কারণে হাসপাতালে যেতে না পারলে ওই সময়ের জন্য বাসায় অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সঠিক সময়ে যথোপযুক্ত চিকিৎসাই দিতে পারে কোভিড রোগীর সম্পূর্ণ সুস্থতা।

* ডা. দেবাশীষ কুমার সাহা | সহকারী অধ্যাপক, ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা
 

Users who are viewing this thread

Back
Top