What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

শুভ জন্মদিন মারিয়া থেরেসা (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
আজ ১৩ মে, অস্ট্রীয় সম্রাজ্ঞী মারিয়া থেরেসার জন্মদিন। ভ্রমণ উপলক্ষে মারিয়া থেরেসার গ্রীষ্মকালীন আবাস ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা বর্ণনার ফাঁকে সানন্দ পায়চারি ইতিহাসের অলিন্দে।

lpNlV8e.jpg


মার্টিন ভ্যান মেইটেনসের আঁকা অস্ট্রীয় সম্রাজ্ঞী মারিয়া থেরেসার প্রতিকৃতি, ছবি: উইকিপিডিয়া

রাত সাড়ে নয়টার মতো। ব্রাসেলস এয়ারলাইনসের এসএন ২৯০৭ ফ্লাইটটি বেলজিয়ামের ব্রাসেলস এয়ারপোর্ট থেকে ভিয়েনা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমেছে। ঘণ্টা দুয়েক সময় লেগেছে পৌঁছাতে। বিমানবন্দরের নিচেই এয়ারপোর্ট ট্রেন। ইউরোপের দেশগুলোর এই এক সুবিধে—এয়ারপোর্টে বাক্সপ্যাটরা নিয়ে এদিক-ওদিক খুব একটা ছুটতে হয় না। চার ইউরো দিয়ে একটা ট্রেনের টিকিট কাটলাম; এয়ারপোর্ট থেকে ওয়াইনমিট্টি, ষোলো মিনিটের পথ। ওয়াইনমিট্টি থেকে অন্য ট্রেন ধরে গেসোমিটারে নামলাম।

d6akBtl.jpg


ভিয়েনা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিতরে, ছবি: উইকিপিডিয়া

ইউরোপের ফেব্রুয়ারির ঠান্ডা। ঠান্ডাটা সর্বক্ষণ ওভারকোট, হাতমোজা আর টুপি পরার মতো। আমি ট্রেন থেকে নেমে স্টেশন থেকে বেরোলাম। হাঁটছি। কোনো দিকে জনমানব নেই। গন্তব্য আইবিআইএস হোটেল। আমার সহকর্মী ফাতেমা আপা আছেন ওখানে। উদ্দেশ্য তাঁকে সঙ্গে নিয়ে প্রাগ ও অস্ট্রিয়া ভ্রমণ। হোটেলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। কাচের দেয়ালে ঘেরা রিসেপশন। ফাতেমা আপা পত্রিকা পড়ছেন একমনে। বুঝলাম, এ কেবল পত্রিকা পড়া নয়, আমার জন্য অপেক্ষাও। ফাতেমা আপা সে রাতে আমার জন্য খিচুড়ি রাঁধলেন। আহ! ইউরোপে দেশের খিচুড়ি! দারুণ তারিয়ে উপভোগ!

পরদিন সকালে নাশতা সেরেই বেরিয়ে পড়লাম ভিয়েনা শহর দেখতে। প্রথমে গিয়ে থামলাম রিংস্ট্রিতে; ভিয়েনার একটি বিশাল পাবলিক স্কোয়ার—মারিয়া-থেরেসিয়েন-প্ল্যাৎজের সামনে। দুই পাশে দুটি মিউজিয়াম—ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম ও আর্ট হিস্ট্রি মিউজিয়াম। সামনে সম্রাজ্ঞী মারিয়া থেরেসার ভাস্কর্য। পর্যটকেরা মারিয়ার ভাস্কর্যের সঙ্গে ছবি তুলতে এতটাই ব্যস্ত যে আমার সুযোগ পেতে বিলম্ব হবে বুঝতে পেরেছি। এ এক বৃহৎ স্মৃতিসৌধ। হাবসবার্গ রাজবংশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিসৌধ। তেরো বছর ধরে এই স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে।

ydN3hik.jpg


ব্রোঞ্জের ভাষ্কর্যের সামনে লেখক

ব্রোঞ্জের তৈরি ভাস্কর্যটি দেখে মনে হলো তিনি তাঁর ডান হাতে জনগণকে স্বাগত জানাচ্ছেন আর বাঁ হাতে ধরে আছেন প্রাগম্যাটিক স্যাংশন (Pragmatic Sanction) এবং একটি রাজদণ্ডের নথি। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছি! এখানেই শেষ নয়, ভাস্কর্যের আরও কিছু অংশ আছে। তাঁকে ঘিরে আছে চারদিক থেকে চার অশ্বারোহী।

সাম্রাজ্ঞী মারিয়া থেরেসা। ইতিহাসের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারীদের একজন। হাবসবার্গ রাজবংশের সাম্রাজ্ঞী। যে রাজবংশের রাজারা প্রায় ৭৫০ বছর অস্ট্রিয়া শাসন করেছেন। আর অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে ৪০ বছর অস্ট্রিয়া শাসন করেছেন মারিয়া। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারক হিসেবেও যথেষ্ট খ্যাতি পেয়েছেন। সে সময় 'স্যালিক আইন' অনুসারে অস্ট্রিয়ার সিংহাসনে সম্রাট হিসেবে কোনো নারীর আরোহণের অধিকার ছিল না। পবিত্র রোমান সম্রাট পদে অধিষ্ঠিত হতে না পারলেও রানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে এটি নিশ্চিত ছিল। কিন্তু তিনি সিংহাসনে আরোহণ করতে পেরেছেন; এ জন্য অবশ্য তাঁকে বেশ রাজনৈতিক বিপত্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে।

'স্যালিক আইন' অনুসারে অস্ট্রিয়ার সিংহাসনে সম্রাট হিসেবে নারীর আরোহণ করার অধিকার ছিল না বলে পিতা ষষ্ঠ চার্লস এই আইনগত সীমাবদ্ধতা কাটানোর উদ্যোগ নেন। ষষ্ঠ চার্লস প্রাগম্যাটিক স্যাংশন বা রাষ্ট্রীয় অনুমোদন নামে একটি স্বীকৃতিপত্র ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রাজাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর করিয়ে তাঁর কন্যা মারিয়াকে সিংহাসনে উত্তরাধিকার হিসেবে অধিষ্ঠিত করার অধিকার আদায় করে নিয়েছিলেন।

l8qVAE7.jpg


প্রাগম্যাটিক স্যাংশন, ছবি: উইকিপিডিয়া

তবে বেশির ভাগ ইউরোপীয় রাষ্ট্র যেমন রাশিয়া, ফ্রান্স, সার্বিয়া, ইতালি, স্পেন সে সময় এই অনুমোদনকে স্বীকৃতি দেননি। সম্রাট ষষ্ঠ চার্লসের মৃত্যুর পর ১৭৪০ সালে তাঁর একমাত্র কন্যা মারিয়াকে রাষ্ট্রীয় অনুমোদন অনুযায়ী অস্ট্রিয়ার শাসক হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। সিংহাসনে আরোহণের পরপরই মারিয়া অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। ইউরোপের একাধিক রাষ্ট্রের অধিপতিরা তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে।

বিভিন্ন নথি পড়ে জেনেছি, পিতার মৃত্যুর পর অর্থ, সেনাবাহিনী, নিজের অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান ছাড়াই থেরেসা রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেন। তিনি নিজেকে সে সময় কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি করেন। তিনি রাষ্ট্রের বিষয়গুলো সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন না। তার পিতার মন্ত্রীদের দক্ষতার ঘাটতি সম্পর্কে তিনি অজ্ঞ ছিলেন। পিতার উপদেশমতো তিনি পিতার পরামর্শদাতাদের রাষ্ট্রের কাজে সম্পৃক্ত রাখতেন এবং স্বামীকে রাষ্ট্রীয় বিষয়ে দূরে রাখতেন। মারিয়া রাষ্ট্রক্ষমতা নেওয়ার আগেই তুর্কিদের সঙ্গে যুদ্ধ এবং পোলিশ উত্তরাধিকার যুদ্ধের কারণে অস্ট্রিয়া আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। কোষাগারে তখন ছিল মাত্র এক লোখ গুল্ডেন (জার্মান মুদ্রা)।

L27pxtI.jpg


প্রাসাদের একাংশে ধংসাবশেষ, ছবি: উইকিপিডিয়া

এই যুদ্ধগুলোর কারণে সেনাবাহিনীও দুর্বল হয়ে পড়েছিল, সেনাবাহিনীতে সদস্যসংখ্যা ১৬০০০০ কমে হয় ১০8০০০ । সেনাবাহিনী অপেক্ষাকৃত কম প্রশিক্ষিত ছিল এবং অনুশাসনের অভাব ছিল। এ রকম দুর্বল পরিস্থিতিকে নিয়েই মারিয়াকে সিংহাসনে আরোহণ করতে হয়।

অস্ট্রিয়ার সিংহাসনে মারিয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় 'উত্তরাধিকার যুদ্ধ' সংঘটিত হয়। তবে মারিয়া অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম হন। প্রুশিয়ার ফ্রেডরিখ যখন সমগ্র সাইলেশিয়া দখল করেত, তখন অস্ট্রিয়ার উত্তরাধিকার যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ফ্রান্স সে সময় তার দীর্ঘদিনের শত্রু হাবসবুর্গকে পরাজিত করতে উদ্যত। মারিয়া সাহসের সঙ্গে এই জোটের বিরুদ্ধে দাঁড়ান, সাহায্যের হাত বাড়ায় ইংল্যান্ড, হল্যান্ড।

vLVRib5.jpg


আন্দ্রেয়া মোয়েলারের আঁকা তরুণ থেরেসার প্রতিকৃতি, ছবি: উইকিপিডিয়া

সে সময় ইউরোপীয় রাজারা তাদের পুরোনো মিত্রকে ত্যাগ করে নতুন মৈত্রীজোট গড়ে তোলেন, যা সে সময়ের 'কূটনৈতিক বিপ্লব' নামে পরিচিত। অস্ট্রিয়ার পক্ষে এবং বিপক্ষে ইউরোপীয় শক্তিগুলোকে বিভক্ত করার মাধ্যমে নিজের স্বার্থ রক্ষা করেছিলেন এই বিদুষী। অস্ট্রিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারে মারিয়ার অবদান অপরিসীম।

কেমন ছিল মারিয়ার পারিবারিক জীবন? বিয়ের প্রথম কুড়ি বছরে মারিয়া থেরেসা ষোলোটি সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে তেরো জন শৈশবকাল পার করেছিল। পুত্রসন্তান তাঁর আরাধ্য ছিল, গর্ভাবস্থায় বারবার একটি পুত্রসন্তানের জন্য প্রার্থনা করতেন। তবে সে ভাগ্য তাঁর মন্দই ছিল। মারিয়া থেরেসার সবচেয়ে প্রিয় সন্তান মারিয়া ক্রিস্টিনা মায়ের ২৫তম জন্মদিনে ছতুসিজে অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনীর পরাজয়ের চার দিন আগে জন্মেছিল। এই সময়ে গর্ভাবস্থায় বা জন্মের পরও মারিয়া থেরেসার কোনো বিশ্রামের অবকাশ ছিল না। যুদ্ধ পরিচালনা এবং সন্তান জন্মদান চলেছিল সমান্তরালে।

cjzyFPP.jpg


সন্তানদের সঙ্গে মারিয়া থেরেসা; ছবিটি এঁকেছেন মার্টিন ভ্যান মেইটেনইনস, ছবি: উইকিপিডিয়া

শুধু বিভিন্ন যুদ্ধের সময় যেমন 'অস্ট্রিয়ান উত্তরাধিকার যুদ্ধ' এবং 'সাত বছরের যুদ্ধে'র মধ্যে মারিয়া থেরেসার পাঁচটি শিশু জন্মগ্রহণ করে। তিনি তাঁর শেষ সন্তান ম্যাক্সিমিলিয়ান ফ্রান্সিসকে সাত বছরের যুদ্ধের সময় ৩৯ বছর বয়সে প্রসব করেছিলেন। মারিয়া থেরেসা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতেন, তিনি যদি প্রায় সব সময় গর্ভবতী না হতেন, তবে তিনি নিজেই যুদ্ধে নেমে যেতেন। তিনি বুদ্ধিমান ছিলেন। কথিত আছে, নিজের ১১ জন কন্যাকে ইউরোপের বিভিন্ন রাজা বা রাজপরিবারের সদস্যের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে রাজাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। মারিয়াকে কেউ কেউ 'ইউরোপের শাশুড়ি'ও বলেছেন। কন্যাসন্তানদের বিয়ের বিষয়টাকে তিনি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখতেন।

মারিয়া থেরেসাকে ছেড়ে তাঁর গ্রীষ্মকালীন বাসভবন শনব্রুন প্রাসাদের (Schönbrunn Palace) দিকে এগোচ্ছি আমি আর ফাতেমা আপা। কেউ কেউ বলেন, স্কনব্রান বা শ্যোনবর্ন । সঠিক অস্ট্রীয় উচ্চারণ কী আমি জানি না। ভিয়েনার রাস্তাঘাটে বেশ অভিজাত্যের ছাপ। নগরের সব উপাদানের মধ্যে শৃঙ্খলা প্রকাশমান। অসাধারণ প্রকৃতির দেশ অস্ট্রিয়া। মোৎসার্ট আর সংগীতের দেশ।

pFNkVl9.jpg


গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদা বা শনব্রুন প্রাসাদের সামনে লেখক

১৯১৮ সাল পর্যন্ত শনব্রুন প্রাসাদ ছিল হাবসবার্গ শাসকদের গ্রীষ্মকালীন আবাস। সে সময়ের পর থেকে এটি জাদুঘর আর পর্যটকদের জন্য উম্মুক্ত। এককথায় সম্পূর্ণ পর্যটকবান্ধব শহর। এই গ্রীষ্মকালীন রাজপ্রাসাদ আমি দেখতে গিয়েছি শীতকালে, ফলে প্রাসাদ বাগিচায় যে সবুজের সমারোহ, তার অনুপস্থিতি ছিল অনুমেয়। প্রাসাদটি গড়ে তোলা হয় ১৭০০ সালের প্রথম দিকে এবং ১৭০০ সালের শেষ দিক থেকে এটি সম্রাজ্ঞী মারিয়া থেরেসার গ্রীষ্মকালীন বাসভবন। রাজকীয় কক্ষ, দুর্দান্ত গ্যালারি সঙ্গে প্রাসাদের সিলিংজুড়ে আঁকা অসাধারণ সব চিত্রকর্ম পর্যটকদের বিমোহিত করে।

প্রায় ৫০০ একর জমির ওপর স্থাপিত বিশাল এই প্রাসাদের অন্যতম আকর্ষণ রানি মারিয়া থেরেসার সুসজ্জিত প্রদর্শনী কক্ষ। ভিয়েনায় শনব্রুন প্যালেসটি অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের সবচেয়ে বড় প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এই ইতিহাস, স্থাপত্য ও সংস্কৃতির তুলনা নেই। কারুকার্যময় নান্দনিক প্রাসাদের চতুর্দিকে শ্বেত মর্মরের অসংখ্য ভাস্কর্য। আশ্চর্য!

Q2V6CIw.jpg


সহকর্মী ফাতেমার সঙ্গে লেখকের সেলফি

সারা দিনের ক্লান্তি নিয়ে রাতে হোটেলে ফিরলাম। ফাতেমা আপা আবার খিচুড়ি চাপালেন। এত ছোট একটা রাইস কুকার ভদ্রমহিলা ঢাকা থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন ভিয়েনায়, তাতে কেবল কায়দা করে দুজনের জন্যই রাঁধা যায়। আহ খিচুড়ি! আমার প্রবাসজীবনে আমার দেশের খিচুড়ি!
আজ ১৩ মে, সম্রাজ্ঞী মারিয়া থেরেসার জন্মদিন। শুভ জন্মদিন মারিয়া! এখনো তোমায় স্মরি!

* লেখক: মহুয়া রউফ | গবেষক ও পরিব্রাজক এবং সদস্য, বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন
 

Users who are viewing this thread

Back
Top