খাদ্যরসিকদের কাছে ডায়েট এক কঠিন পরীক্ষার নাম। বিশেষ করে মুখরোচক পছন্দের খাবারগুলো ভুলে তালিকা ধরে একগাদা অপ্রিয় খাবার মুখে তুলতে হয়। একটানা সেসব খাবার খেতে খেতে অনেকে অধৈর্য হয়ে পড়েন। আবার ভুলভাল ডায়েট মেনে কেউ ওজন কমানোর চেয়ে নিজের অজান্তে ডেকে আনেন বিপদ। অথচ কড়া ডায়েটের মধ্যেও এক দিন খেতে পারেন প্রিয় খাবার, যা আপনার রোজকার ডায়েট থেকে অনেক দূরে সরিয়ে রাখা।
ডায়েটে দরকার ধৈর্য
আজকাল অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ইউটিউব দেখে ডায়েট শুরু করে দেন। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতি হয় বিস্তর। শরীরের ওজনই শুধু নয়, ডায়েট ঠিক করার সময় শরীরের বিপাক হার, অন্য কোনো অসুখ রয়েছে কি না, এমন অনেক কিছুই খেয়াল রাখতে হয়। সেসব মেনেও সহজে ওজন কমানো যায়।
ঠিকমতো মেদ না কমার যে শঙ্কা আমাদের তাড়া করে বেড়ায় তার গোড়ার দিকে রয়েছে আত্মবিশ্বাসের অভাব। কারণ, আমাদের ডায়েট করার মধ্যেই থেকে যায় নানা ভুল। এই ধরুন, পেটে মেদ জমতে যতটা সময় নেয়, গলতে সময় নেয় তার চেয়ে অনেক বেশি। তাই অল্পতেই অনেকটা ফলাফল আশা করা বোকামি। খাপছাড়া ও অবৈজ্ঞানিক ডায়েট বা অনিয়মিত শরীরচর্চা দিয়ে তাকে রোখা বেশ কঠিন।
ডায়েট শুরু করার পর ভুল ঠেকাতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ জোর দেবেন। আপনার বয়স, ওজন, শরীরের রোগব্যাধি ইত্যাদি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে তবেই আপনার পক্ষে উপযুক্ত ‘ডায়েট প্ল্যান’ নির্ধারণ করা সম্ভব। কোনো অনলাইন সাইটের পক্ষে এত কিছু জেনে আপনার ডায়েট চার্ট বানানো সম্ভব নয়। এ ছাড়া সব ডায়েট সব শরীরের ওপর কার্যকরী হয় না। তাই এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের মতামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওজন কমানো একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। কোনো ডায়েট পরিকল্পনা দ্রুত বা সহজে আপনার ওজন অনেকটা কমিয়ে আনতে পারে না। যদি কেউ সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেন তাহলে বুঝতে হবে এতে শরীরের কিছু ক্ষতি হতে পারে। তাই তেমন ডায়েট পরিকল্পনা থেকে দূরে থাকুন।
পছন্দের মাংস একদিন খেলে ডায়েটের বিশেষ ক্ষতি হবে না, যদি পরবর্তী নিয়মগুলো সঠিকভাবে মেনে চলা যায়
এক দিন খান ডায়েট ভুলে
আপনার ডায়েট পরিকল্পনায় এমন খাবার রাখুন, যা আপনি সহজে খেতে পারবেন। অতিরিক্ত খরচসাপেক্ষ হলে সেই ডায়েট মানার কোনো দরকার নেই। বাস্তবে সুস্থ শরীরে সাধারণ ডায়েট মেনে চলার পাশাপাশি যদি নিয়মিত শরীরচর্চা চালিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে ওজন কমতে বাধ্য। দরকার শুধু একটু ধৈর্যের। এমন অনেক ডায়েট চার্ট আছে, যা আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু খাদ্য একেবারেই পরিত্যাগ করতে বলে। অথচ ডায়েটে প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট সব রকম খাবারই অল্পস্বল্প হলেও শরীরে প্রয়োজন। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের ডায়েট তালিকা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করলেও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আপনাকে অনেকটা ভুগতে হতে পারে। তাই ডায়েটে সপ্তাহে এক দিন থাকতে পারে চিট মিল অর্থাৎ এক দিন আপনি আপনার পছন্দের খাবার খেতে পারেন। সেখানে কোনো নিয়ম বা তালিকা থাকবে না। সপ্তাহে এক দিন প্রিয় খাবার খাওয়া যেত। পছন্দের খাবার খাওয়া যাবে জানা থাকলে পুরো সপ্তাহ খেতে না পারায় হতাশা থাকবে না। চিট মিল পদ্ধতি কাজ করার মূল কারণ হলো এতে মন ভালো থাকে। প্রিয় খাবার খেতে না পারার মানসিক চাপ ও একঘেয়েমি কমে যায়। মানসিক চাপের কারণে সৃষ্ট হরমোন কর্টিসল ওজন বাড়াতে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। তাই ওজন কমাতে মন ভালো থাকা জরুরি। তবে নিয়ম ভেঙে পিৎজা কিংবা আইসক্রিম যে খাবারটাই খান না কেন, সেটা হতে হবে পরিমিত। এতে আপনার রোজকার নিয়মে একধরনের ধাক্কা লাগবে, তবে সেটা খারাপ কিছু না।
* ইসরাত জাহান | পুষ্টিবিদ, ঢাকা